ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়; পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি
বিশ্বায়ন
বিশ্বায়ন (globalization) পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সকল কিছুর উপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বায়ন বিষয়টি নিয়ে আক্ষরিক অর্থে গবেষণা নতুন করে শুরু হলেও এই ব্যাপরটি বেশ প্রাচীনই বলতে হবে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও তখন কোন সাধারণ নীতিমালা ছিল না। হাজার বছর পূর্বে মধ্যযুগে সিল্ক রোড ধরে ইউরোপের সাথে মধ্য এশিয়া হয়ে চীনের বাণিজ্য চলতো।
বিশ্বায়ন (globalization) মানে কি ? বিশ্বায়ন পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। যার মুল হিসেবে কাজ করে অর্থনীতি এবং নিয়মক হিসেবে কাজ করে তথ্যপ্রযুক্তি ।
হে মহাজীবন- সুকান্ত
এবার কঠিন কঠোর গদ্য আনো,
পদ্য-লালিত্য-ঝংকার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো
প্রযোজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ৷৷...
অতএব, দুজনকে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার টিকিটের দাম এক দশমিক চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে, খদ্দের ধরতে বিভিন্ন ধনী দেশ ও কোটিপতিদের টার্গেট করেছে গোল্ডেন স্পাইক।
চাঁদের মাটিতে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থের দিকেও নজর রয়েছে ওই সংস্থার।যে কোনও দিন খাদ্যের দামও ডলারে দিতে হবে। কৃষি উত্পাদন প্রণালী পরিবেশ ও মনুষত্বকে ধ্বংস করে বাজার ও পরিসেবা নির্ভর এই অর্থব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের স্থান নেই। রাষ্ট্রের হাতে শুধুই রক্তের দাগ। ঔ রক্তের গদাগই আজকের রাজনীতি, আজকের গণতন্ত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অবশ্যই আমাদের ধর্ম, পরিচিতি ও জাতীয়তাবাদ।
মার্কিন অর্থনীতির সঙ্কট এখনও বর্তমান। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশে তাই চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিলে বাধ্য হয়েছে নাসা। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতেই এগিয়ে এগিয়ে আসছে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। আপাতত পনেরো থেকে কুড়িটি উতক্ষেপণের কথা ভেবেছে বেসরকারি সংস্থা গোল্ডেন স্পাইক।। প্রথমবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে সাত থেকে আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। তাদের দাবি, টিকিট বিক্রি ছাড়াও বিজ্ঞাপন, অধিকার সত্ত্ব বিক্রি বাবদ বিভিন্ন খাতে পাওয়া অর্থে উঠে আসবে চন্দ্রাভিযানের খরচ। সম্প্রতি, বিভিন্ন সংস্থা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মহাকাশ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও, বিজ্ঞানের উন্নতি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে গৃহীত এইসব পরিকল্পনার ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো চিন্তিত। চূড়ান্ত অভিযানের আগে ব্যয়সাপেক্ষ একাধিক পরীক্ষামূলক উতক্ষেপণ, অভিযানের ঝুঁকি - এ সবের দায় কে নেবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
এমনিতে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান চাক্ষুস করতে প্রতিবারই রাইসিনা হিল-এ ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা৷ এতদিন দূর থেকে, কড়া প্রহরার আড়াল দিয়ে স্বাদ নিতে হত এই অনুষ্ঠানের৷ এ বার একেবারে সামনে থেকে, রাইসিনা হিল-এর লনে বসেই উপভোগ করা যাবে তা৷ কিন্ত্ত দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর সম্মানে অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজে জন সাধারণকে এতটা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত কেন? স্বয়ং রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাতেই, জানাচ্ছেন তাঁর জনসংযোগ সচিব ভেণু রাজামনি৷ রাষ্ট্রপতি পদে আসার পর থেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ রাইসিনা হিল তথা রাষ্ট্রপতি পদটিকেই জনসাধারণের আরও অনেক কাছের করে তুলতে চান তিনি৷ প্রহরা-বদলের চমকপ্রদ অনুষ্ঠানকে জনসাধারণের জন্য অবারিত দ্বার করে দেওয়া সেই ভাবনারই সম্প্রসারণ৷ শুধু তাই নয়, দর্শকের কাছে অনুষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার নির্দেশও দিয়েছেন প্রণব৷
শুধু ভারতীয় সেনা নয়, সমস্ত দেশের সেনা বাহিনীতেই এই প্রহরা-বদলের অনুষ্ঠানটির একটা বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে৷ বৈচিত্রে আর সৌন্দর্যে ভারতীয় সেনা বাহিনীর নিজস্ব রীতির খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়েই৷ পরম্পরা মেনে এই অনুষ্ঠানে পালিত হয় বিশেষ কুচকাওয়াজ রীতি৷ বিউগলের তালে তালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ দেহরক্ষী বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ৷ থাকে সুসজ্জিত অশ্বারোহী সেনাদলের প্যারেডও৷ এ বার সেই নিয়মরক্ষার অনুষ্ঠানও সাজতে চলেছে নতুন ভাবে৷
এ আর রহমানের 'মা তুঝে সালাম'-এর সুরে বাজবে সামরিক ব্যান্ড৷ তার তালে তালে কুচকাওয়াজ করবে বর্তমানে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২৮ নং মাদ্রাস ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা৷ ব্যান্ডে বাজবে 'সারে জাহাঁ সে অচ্ছা' সহ আরও নানা দেশাত্মবোধক গানও৷ হচ্ছে স্থান পরিবর্তনও৷ আগে কুচকাওয়াজ হত ভবন চত্তরের নর্থ ব্লকে৷ এখন থেকে ফি শনিবার ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য শৈলীতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ভবনের সামনের লনে হবে এই অনুষ্ঠান৷
ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ
ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারত সমাজতান্ত্রিকনীতি গ্রহণ করে। এই ব্যবস্থায় চালু ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ প্রথাকে উপহাস করে বলা হত "লাইসেন্স রাজ" ও ধীর বৃদ্ধির হারটির নাম ছিল "হিন্দু বৃদ্ধিহার"। ১৯৮০-এর দশকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর সরকারকে পিছু হটতে হয়। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ভারতকে দেউলিয়া রাষ্ট্র ঘোষণা করলে পি ভি নরসিমা রাও সরকার ও অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ দেশের অর্থব্যবস্থায় আমূল সংস্কারসাধনে প্রবৃত্ত হন। নতুন গৃহীত নীতিগুলির মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া, নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, বেসরকারিকরণ চালু করা, করব্যবস্থায় সংস্কার, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। এরপর থেকে দেশের সামগ্রিক উদারীকরণের গতিমুখ শাসক দল নির্বিশেষে একই প্রকার থাকে। যদিও ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষকের মতো শক্তিশালী লবি বা শ্রম আইন সংশোধন ও কৃষি ভর্তুকি হ্রাসের মতো বহু আলোচিত ক্ষেত্রে কোনো সরকারই হস্তক্ষেপ করেনি।[১]
২০০৯ সালের হিসেব অনুসারে দেশের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অতিদরিদ্রতার কবল মুক্ত হয়েছে।[২] ২০০৭ সালে উদারীকরণের চূড়ান্ত সাফল্যের নজির মেলে সর্বোচ্চ ৯% জিডিপি হার বৃদ্ধিতে।[৩] এর সঙ্গে সঙ্গেই চিনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বদ্রুত বৃদ্ধিশালী অর্থব্যবস্থায় পরিণত হয়।[৪]অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর রিপোর্ট অনুসারে, এক দশকে গড় বৃদ্ধির হার ৭.৫% গড় আয়ের দ্বিগুণ হবে এবং আরও সংস্কার প্রয়োজন হবে।[৫]
ভারতীয় সরকার সহযোগীরা উদারীকরণ এগিয়ে নিয়ে চলার প্রস্তাব রেখেছেন। কারণ, ভারতের বৃদ্ধির হার চিনের তুলনায় কম।[৬] ম্যাককিনসের মতে, প্রধান প্রধান বাধাগুলি অপসারিত করলেই, "স্বাধীন ভারতের অর্থনীতি চিনের মতো বার্ষিক ১০% হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।"[৭]
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ That old Gandhi magic. প্রকাশক: The Economist. November 27 1997.
- ↑ Nick Gillespie (2008). What Slumdog Millionaire can teach Americans about economic stimulus. প্রকাশক: Reason.
- ↑ https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/in.html#Econ
- ↑ The India Report. প্রকাশক: Astaire Research.
- ↑ Economic survey of India 2007: Policy Brief. প্রকাশক: OECD.
- ↑ India's economy: What's holding India back?. প্রকাশক: The Economist. March 6th 2008.
- ↑ The McKinsey Quarterly: India—From emerging to surging. প্রকাশক: The McKinsey Quarterly.
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- For a short educational video of the "economic history of India".
Nick Gillespie (2009). What Slumdog Millionaire can teach Americans about economic stimulus. প্রকাশক: Reason.
Economic survey of India 2007: Policy Brief. প্রকাশক: OECD. 2007.
Gurcharan Das (2006). The India Model. প্রকাশক: The Foreign Affairs.
Aditya Gupta (2006). How wrong has the Indian Left been about economic reforms?. প্রকাশক: Centre for Civil Society.
The India Report. প্রকাশক: Astaire Research. 2007.
India's Rising Growth Potential. প্রকাশক: Goldman Sachs. 2007.
শনিবার ছিল পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডক্টর অফ সায়েন্সের সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান করা হয় তাঁকে। সদ্য শুক্রবার রাজ্যসভায় খুচরো বিতর্কের ভোটাভুটিতে বিরোধীদের হারিয়ে জয় পেয়েছে সরকারপক্ষ। একদিন পরেই এফডিআই-এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সচেষ্ট হলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে এফডিআই অনুমোদন পাওয়ার পর খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের সমর্থনে সরব হওয়ার প্রথম মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কেই। কৃষিজ পণ্য উত্পাদনে দেশের মধ্যে যে রাজ্য সবচেয়ে এগিয়ে সেখান থেকেই নিজের সংস্কারমুখী পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরলেন তিনি। কারণ সংসদে রাজনীতির হিসেবে জয় পেলেও, সামনে বড় পরীক্ষা লোকসভা ভোট। তার দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আনা আর্থিক সংস্কারের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে বাড়ানো প্রয়োজন। এফডিআই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে না পারলে, আগামী লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেতে পারে ইউপিএ সরকার।
এর পাশাপাশি, কৃষিকাজে আগামী দিনে দেশ যে সব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, তারও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এইসব ক্ষেত্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কৃষিপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনমোহন সিং। কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়াতে পরিকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। এতে পচনশীল কৃষিদ্রব্য মজুত করার ব্যবস্থা আরও উন্নত হলে লোকসানের মাত্রা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দেশের কৃষিকাজে পাঞ্জাবের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা উল্লেখ করেও, এখানে যেভাবে মাটির নিচের জল অপচয় করা হয়, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পর, বিমা এবং পেনসন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিল মনমোহন সিং মন্ত্রিসভা৷ সংস্কারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী যে পিছু হটবেন না, এটা তারই প্রমাণ৷ বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৯ শতাংশ৷
পেনসন ক্ষেত্রও খুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য৷ এর পরিমাণ হবে ২৬ শতাংশ৷ পেনসন বিল সংসদে পেশ হবে৷ মোদ্দা কথা, পেনসন তহবিলে টাকা দেবে সরকার ও সরকারি কর্মচারি৷ টাকা খাটানো হবে বাজারে৷ ফেরত লাভ যেটা হবে, সেটা দেয়া হবে পেনসন আকারে৷ এতে সরকারের বাড়তি আর্থিক বোঝা অনেকটা কম হবে৷
তবে বিমা ও পেনসন বিল সংসদে পাশ করানো নিয়ে সংশয় আছে৷ কারণ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এর বিরোধী৷ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিতে আপত্তি করেনি, কিন্তু ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোতে আপত্তি তুলেছে৷ তাই রাজনৈতিক কারণে এই বিল পাশে বাধা দিতে পারে তারা৷ তবে সংসদে সরকারের ২৫২ জন সাংসদ৷ বাইরে থেকে আছে এসপ এবং বিএসপি'র সমর্থন৷
পরিকাঠামো প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন দিতে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে জাতীয় বিনিয়োগ পর্ষদ৷ নানা স্তরে অনুমোদনের জটিলতা হ্রাস পাবে৷ আজ মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয় ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল নিয়ে৷ ভবিষ্যতে কৃষিপণ্যের দাম কী হবে আন্দাজ করে আগাম লেনদেন৷
আর্থিক সংস্কারে মনমোহন সিং-এর দৃঢ়তা দেখে বাজারে সাড়া পড়ে গেছে৷ শেয়ার বাজারে তেজিভাব, ডলারের নিরিখে টাকার দাম বেড়েছে৷ সরকারের সাহসী পদক্ষেপের রাজনৈতিক পরিণাম নির্ভর করছে এর সুফল আমজনতার কাছে কবে এবং কতাটা পৌঁছাবে, তার ওপর৷
এই সংস্কারের ভালো-মন্দ দিকগুলি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাসগুপ্তের কাছে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ''এক ধাক্কায় সব দরজা খুলে না দিয়ে ধীরে ধীরে খোলা উচিত ছিল৷ কিছুটা খোলার পর যদি শুভসংকেত দেখা যায়, তাহলে দরজা আরও একটু খোলা যায়৷ ১৯৯১ সালের সংস্কারে আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়ত বেড়েছে, কিন্ত আয় বৈষম্য বেড়েছে তার থেকে বেশি৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
ভারতীয় সরকার ও সংবাদমাধ্যমে উপেক্ষা ইরম শর্মিলা চানুর ১১ বছরের অনশন
২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:২৭ |
ভারতে দুর্নীতি রোধের জন্য শক্তিশালী লোকপালের দাবিতে গান্ধীবাদী আন্না হাজারের মাস ছয়েক ধরে দফায় দফায় ১১ দিন অনশন নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সেটা শেষ হতে না হতেই প্রচারমাধ্যমে আসে আরেক অনশনের সংবাদ_২০০২ সালের সংখ্যালঘু নিধনের প্রশ্রয়দাতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনশন 'শান্তি, একতা ও সামাজিক সম্প্রীতি' বৃদ্ধির জন্য! এমন লোকদেখানো অনশনের ভিড়ে আরেক গান্ধীবাদী ইরম শর্মিলা চানু যে টানা ১১ বছর ধরে মণিপুর রাজ্যের নিরাপত্তাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে অনশন করছেন, তা কিন্তু কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের কাছে উপেক্ষিত।
এ বছর ৫ এপ্রিল থেকে জন লোকপাল আইনের দাবিতে অনশন শুরু করেন আন্না হাজারে। প্রথম দিন থেকেই গোটা ভারতের সংবাদমাধ্যমের কাছে আন্নার 'টিআরপি' তুঙ্গে। পাশে ছিলেন কিরণ বেদী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, স্বামী অগ্নিবেশ, বাবা রামদেব, স্বামী রবিশঙ্কর, মেধা পাটকর প্রমুখ সেলিব্রেটির মুখ। প্রথম দফায় ৯৮ ঘণ্টার অনশনেই ভারতজুড়ে সাড়ে ছয় লাখ অনুগামী পেয়ে যান তিনি। বিশ্বজুড়ে পান লাখ লাখ সমর্থন। প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখার বিরোধিতা করে জুন মাস থেকে ফের আন্দোলন। ১৬ আগস্ট অনশন শুরু করার পরই গ্রেপ্তার হন আন্না। সব মিলিয়ে অনশনের মেয়াদ ১১ দিন। তাতেই ভারতজোড়া সমর্থন লাভে 'টিম আন্না' ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছে। গণমাধ্যম থেকে টুইটার-ফেইসবুক ভরে যায় আন্নার সমর্থনে বলিউড তারকাদের ছবি আর মন্তব্যে।
আন্নার অনশন ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জন লোকপাল বিল সংসদে পাস করার দাবিতে। আর মোদিরটা গুজরাটি সংকীর্ণ পরিসরে সীমিত না থেকে ভারতভাগ্যবিধাতা হওয়ার রাজনৈতিক উচ্চাশায়। অনশন মোদির মতো রাজনীতিকের জন্য একটা কৌশল। আন্না হাজারের অনশনে যে নৈতিকতা ছিল, মোদির ক্ষেত্রে তা কি বিন্দুমাত্র বিদ্যমান? অনশনকে যিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি গ্রহণযোগ্য প্রকরণে পরিণত করেছিলেন, সেই মহাত্মা গান্ধী একই সঙ্গে এটাকে আত্মশুদ্ধির উপায় রূপেও প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ছিলেন। বস্তুত তিনি নিজে অনশনে বসার সময় আত্মশুদ্ধি বা চিত্তশুদ্ধির আধ্যাত্মিকতাকে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই পরিপুষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাঁরই অসহযোগ আন্দোলনে নেমে জনতা পুলিশ চৌকি আক্রমণ করে পুলিশ হত্যা করলে তিনি পত্রপাঠ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। মণিপুর-দুহিতা ইরম শর্মিলা চানু 'সশস্ত্রবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন' প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ বছর ধরে যে অনশনে অবিচল, তার মধ্যেও সেই প্রবল নৈতিকতার জোর আছে। তিনি এত দিনে জেনে গেছেন, ভারত সরকার তাঁর দাবি মানবে না। কিন্তু সে জন্য তাঁর আমরণ অনশন মাঝপথে শেষ করেননি। আন্না হাজারে ও ইরম শর্মিলা চানুর অনশনে বিভেদ কোথায়_সেই প্রশ্ন উঠছে গণতন্ত্রকামী-বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে।
২০০০ সালের ১ নভেম্বর একদল উগ্রপন্থী মণিপুরের একটি সেনা ছাউনিতে বোমা হামলা চালায়। ঘটনার পর প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত অসম রাইফেলসের (সেনাবাহিনী) একদল জোয়ান মালম বাস স্ট্যান্ডে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। হামলায় নিহত হয় ১০ নিরীহ গ্রামবাসী। এই নৃশংস ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা মণিপুর। 'আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট' (AFSPA) বা 'আফস্পা' নামের এককালে আইনের রক্ষাকবচে কিছুই হয় না দোষী ভারতীয় সেনাসদস্যদের। ভারত সরকার মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে 'আফস্পা' বলবৎ করে ১৯৮০ সালে। এই অ্যাক্টের বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেকোনো লোককে তল্লাশি, গ্রেপ্তার, কিংবা গুলি করে হত্যা করতে পারে। সেনাবাহিনীর এই সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অ্যাক্ট চালু হওয়ার পরই ভারতের উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের দোহাই দিয়ে চালু হওয়া সেনা অভিযানে নিরীহ মানুষও হামলার শিকার হয়। ১৯৫৮ সালে আইনটির জোরে মণিপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হত্যা, অত্যাচার, অপহরণ, ধর্ষণ সব কিছুকেই জায়েজ করে রাষ্ট্র নামের দৈত্য। জনরোষের সামনে পড়ে সরকার বারবার তদন্ত কমিশন বসিয়েছে। অপরাধ প্রমাণও হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো অপরাধী সেনা বা অফিসারের শাস্তি হয়নি।
১৪ মার্চ, ১৯৭২ সালে জন্ম নেওয়া ইরম চি নন্দ ও ইরম অংবি চাখির কন্যা নিজের বাড়ির কাছে বাস স্ট্যান্ডে সেনাবাহিনীর দ্বারা ১০ জন মানুষ খুন হতে দেখে চুপ থাকতে পারেন না। মণিপুরের লৌহমানবী হিসেবে পরিচিত ২৮ বছর বয়সী তরুণী ইরম শর্মিলা চানু 'আফস্পা' বাতিলের দাবিতে ২০০০ সালের ২ নভেম্বর অনশন শুরু করেন। প্রতিবাদ শুরুর পরই ৬ নভেম্বর আত্মহত্যা চেষ্টার অভিযোগে মণিপুরের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আত্মহত্যার চেষ্টা ভারতের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট ভারতীয় আইন অনুযায়ী শর্মিলাকে একবার ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়। আইনের এই প্রহসন চলছে ১১ বছর ধরে। ২০০৬ সালে ২ অক্টোবর গান্ধীর জন্মদিনে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ গোপনে দিল্লি গিয়ে রাজঘাটে গান্ধীর সমাধি পরিদর্শন করলেন। এর পরই যন্তর-মন্তরে গিয়ে ফের অনশন শুরু করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে নিয়ে যাওয়া হলো। তাঁর ভাই ইরম সিংহজিৎ সিং দিল্লি হাইকোর্টে এই গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ করেন। ২৮ নভেম্বর শর্মিলা তাঁর নাকের নল খুলে ফেলেন। কিন্তু আবার তাঁকে খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। ইরম শর্মিলা চানুকে বাঁচিয়ে রাখতে ভারত সরকার তাঁর নাকে ঢুকিয়ে রেখেছে নল। সেই নল দিয়ে তাঁকে তরল খাদ্য দেওয়া হয় জোর করে। তাঁকে জেলের হাসপাতালে পাঠিয়ে নেজাল ড্রিপের মাধ্যমে খাওয়ানো শুরু হয়। জেলে বন্দি থাকলে এটাই এখনো রুটিন বছর চল্লিশের চানুর। গত ১১ বছর এ রকমই চলছে। তখন থেকেই ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের একটি আইসোলেটেড কেবিন তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। অনশনে থাকাকালে তাঁর মুখে এক দানা খাদ্যও যায়নি, ঠোঁট, জিভ, তালু পায়নি এক বিন্দু জলের স্পর্শ। দাঁত মাজা মানে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া, শুষ্ক ঠোঁট স্পিরিট দিয়ে মোছেন, যাতে এক বিন্দু লালাও গলা দিয়ে না যায়।
শর্মিলা অনশন শুরু করার পর মণিপুরের শহরাঞ্চলের কিছু অংশে 'আফস্পা' শিথিল করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই কালো আইনকে কিছুটা সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ব্যস, ওই পর্যন্তই! ভারতীয় প্রচারমাধ্যম আর সরকারের কাছে শর্মিলার অনশন আন্দোলন নয়, শর্মিলার অনশন মানে শুধুই আত্মহত্যার চেষ্টা! 'আত্মহত্যার চেষ্টা'র অপরাধে যতবারই সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে, সরকারিভাবে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। যে কয় দিন 'মুক্ত' থাকেন, নল-টল খুলে ফেলে ফিরে যান অনশনের পুরনো ধাঁচে। ফলে দু-একদিনের মধ্যেই ফের গ্রেপ্তার। আবার হাসপাতাল। 'অনশন অপরাধ'-এর এই আবর্ত থেকে কিছুতেই আর বেরোতে পারেন না শর্মিলা। আন্নার ক্ষতির আশঙ্কায় যেমন উদ্বিগ্ন ছিল ভারত সরকার, যেভাবে চার দিনের কারাদণ্ড দিয়েও, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তেমনটা শর্মিলার ক্ষেত্রে হয় না। আন্নার দাবি মেনে নেওয়া হলেও শর্মিলার দাবি মানা হয় না।
আন্না-মোদির অনশন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক প্রচার মানবাধিকার কর্মীদের হতাশ করেছে। চানুর ভাই তথা মানবাধিকার কর্মী সিংহজিৎ সিং বলেছেন, 'আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা, মানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ সব সময় উপেক্ষিত ও বৈষম্যের শিকার। আন্নার অনশনে বাকি ভারত ও প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করেছে। আন্নার অনশন যেখানে সংবাদপত্রগুলোর শিরোনামে, তখনো উপেক্ষিত আমাদের শর্মিলার ১১ বছরের লড়াই।'
শর্মিলার এ ধরনের চোয়ালচাপা লড়াই প্রায় আড়ালে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ গোপন করেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এমনই এক সংগঠনের এক কর্মী বলেছেন, ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই চানুর লড়াইয়ের স্বীকৃতি দেয়নি। এ ব্যাপারে ভারতীয় জনগণের মনোভাব খুবই দুঃখজনক।
অরুন্ধতী রায় মনে করেন, আন্নাকে ঘিরে এই 'আন্দোলন' এক উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, যে উগ্র জাতীয়তাবাদ উত্তর-পূর্বের কোনো মহিলার আন্দোলনকে গ্রহণ করবে না। ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয় বা পোখরানে সাফল্যের পরে বা সংরক্ষণবিরোধী সমাবেশেও একই ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদের ছোঁয়া থাকে। অনশন বলতে, তার মানে, ইরম শর্মিলার অনশনকে বোঝায় না। শুধু সন্দেহের বশে মানুষ মারতে সেনাবাহিনীকে ছাড়পত্র দিয়েছে যে আইন, সেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ বছর ধরে অনশন চালাচ্ছেন তিনি।
মণিপুরের 'হিউম্যান রাইটস অ্যালার্ট'-এর অধিকর্তা বাবলু লইতংবাম বলেন, 'আমরা আন্নার আন্দোলনের বিরোধী নই। কিন্তু শর্মিলা ১১ বছর ধরে একা যে আন্দোলন ও অনশন চালিয়েছেন, তাকে গোটা দেশ সম্মান জানায়নি। সংসদও শর্মিলার আন্দোলন নিয়ে চুপ।' আন্নার আন্দোলন নিয়ে এই 'মাতামাতিতে' ক্ষুব্ধ শর্মিলার ভাইও বলেন, 'ভারত সরকার আন্নাকে মাথায় তুলেছে। তাঁর শরীরের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত সারা দেশ। তাঁর দলের লোকদের নামের ভারে বড় নেতারা হয়রান। বলিউডও আন্নার হয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু, মণিপুরের কথা গোটা দেশ মনেই রাখে না।' বাবলু অবশ্য মণিপুরের মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষ থেকে আন্নার সমর্থনে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর আবেদন, আন্নার পাশাপাশি গোটা দেশ দয়া করে মণিপুরের এই মেয়েটির দিকেও চোখ ফেরাক। লোকপাল বিল যেমন প্রয়োজন, তেমনই মানবাধিকার রক্ষায় 'আফস্পা' প্রত্যাহারও গুরুত্বপূর্ণ। অসমের ছাত্র সংগঠন 'আসু'র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের মতে, ভারতের মূল ভূখণ্ডের মানুষ উত্তর-পূর্বের কথা মনেই রাখে না। সে জন্যই শর্মিলার মতো নেত্রী ১১ বছর অনশন করার পরও গুরুত্ব পান না।
শর্মিলার এই লাগাতার আন্দোলন মূলধারার মিডিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এখন আন্না হাজারেদের আন্দোলন নিয়ে মিডিয়ার হৈচৈ সেই অভিযোগ সত্য প্রমাণ করছে। শর্মিলার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি 'জাস্ট পিস ফাউন্ডেশন'-এর ট্রাস্টি সদস্য বাবলু লয়তংবামের কথায়, 'উত্তর-পূর্বের কোনো ঘটনা মূল স্রোতের মিডিয়ার কাছে খবর হিসেবে সচরাচর গণ্য হয় না। পুরো আচরণটাই বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং হতাশাজনক।'
ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শর্মিলা বলেছেন, 'ওটা (আন্না হাজারের আন্দোলন) যেন খানিকটা লোকদেখানো। আমরা কিভাবে দুর্নীতি দূর করব? আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি সমাজটাকে বদলাতে চাওয়া এক সাধারণ মেয়ে। ওসব সোশ্যাল ওয়ার্কার, সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।'
শর্মিলার আন্দোলনকে উপেক্ষা আর তাঁর আন্দোলন নিয়ে হৈচৈয়ের অভিযোগ ওঠায় আন্না হাজারে মণিপুরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শর্মিলার কাছে যাওয়ার কথা শুনিয়েছেন আন্নার মঞ্চে হাজির হওয়া বলিউড তারকা আমির খানও। শর্মিলার কথায়, 'আশা করি, আন্নাজি মণিপুরে আসতে পারবেন, তবে আমি তো জোর করতে পারি না।'
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্পর্কে শর্মিলার মন্তব্য, 'তাঁর নেতৃত্ব আমার পছন্দ নয়। তিনি কথা রাখেন না। এটা দুর্ভাগ্যের।' ২০০৬-এ আফস্পা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। কিন্তু এখনো তা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শর্মিলার আবেদন, 'দয়া করে আন্না হাজারের মতো আমাদের দিকেও নজর দিন। ঈশ্বরের মতো সবাইকে সমান চোখে দেখুন। আমি তাঁকে শুধু বলতে চাই, আপনার মনোভাব বদলান।'
এই ১০ বছরে ভারতীয় চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর বর্বরতা, শর্মিলা বা তাঁর আন্দোলনের কথা উচ্চারিত হয়নি বললেই চলে। এ বিষয়ে সংখ্যাগুরুর দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার সঙ্গে রাষ্ট্রের ব্যাপক মিল দেখা যায়। আত্মহত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগে বারবার গ্রেপ্তার করা হয় শর্মিলাকে, আন্না হাজারের বেলায় তা হয়নি। টুপি-পাঞ্জাবি সজ্জিত ভদ্রলোক আন্নার সঙ্গে ফানেক-ইনাফি পরা শর্মিলার যে অনেক তফাত! এখানে মানুষের গুরুত্ব নির্ধারিত হয় ভোটের অঙ্কে। রাষ্ট্রে বাস করেও রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু মানুষের দুর্দশার চিত্র সবখানেই তাই একই রকম।
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ভারত, ভারতীয় সরকার, ভারতীয় সরকার ও সংবাদমাধ্যম, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, ইরম শর্মিলা চানু, অনশন ;
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
মেয়েটির বাবা খ্রিস্টান, মা হিন্দু৷ বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ছুরি মেরে স্ত্রীকে খুন করেছেন৷ এখন তিনি জেলে রয়েছেন৷ মেয়েটির পিসি কিছুদিন আগেই আদালতে আবেদন করেন, শিশুকন্যাটিকে তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া হোক৷ মেয়েটির বাবা ও পিসির যুক্তি ছিল, তাঁদের কাছে থাকলে মেয়েটি রোমান ক্যাথলিক ভাবধারায় বড় হতে পারবে৷ খ্রিস্টধর্মের মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে৷ তাকে ভর্তি করা হবে কনভেন্ট স্কুলে৷ এই যুক্তি যথেষ্ট বলে মনে করছেন না বিচারপতি রোশন ডালভি৷
ডালভি বলেন, 'স্ত্রীকে খুন করে জেলে রয়েছেন যে বাবা তিনি খ্রিস্টান কিনা সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালে খ্রিস্টধর্মকেই অপমান করা হয়৷ এমন এক বাবার থেকে মেয়েটি খ্রিস্টধর্মের উদারতা, দয়া সম্পর্কে কতখানি শিখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷'
উপরন্ত্ত কেন মেয়েটিকে তার বাবার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে মতামত দেন ডালভি৷ তাঁর বক্তব্য, একজন বাবার ধর্মই তার সন্তানকে বয়ে বেড়াতে হবে এমন কথা ভারতের সংবিধানে বলা নেই৷ তাছাড়া নিতে হলে বাবার ধর্মই নিতে হবে, মায়ের নয়, এমন কথার মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্য স্পষ্ট৷ সেটাও কাম্য নয়৷
বাবার হাতে মা খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়েটি তার দাদু-দিদার কাছেই রয়েছে৷ মেয়েকে পাওয়ার জন্য বাবার পরিবারের তরফে আদালতে আবেদন জমা পড়ার কথা শুনেই আবেদন জানান মেয়েটির দাদুও৷ যে ভাবে দাদু-দিদার কাছে মেয়েটি রয়েছে, তাতে তাঁদের কাছ থেকে শিশুটিকে নিয়ে আসা মোটেই ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন বিচারপতি৷ তাঁর মতে, শিশুটির ধর্ম কি হবে তা নিয়ে বিতর্ক বাড়ানোই অর্থহীন৷ দুটি ধর্মই যথেষ্ট উদার৷ যে কোনও একটিই শিশুটির জন্য প্রযোজ্য হতে পারে৷ কিন্ত্ত কিছুদিন ধরেই মেয়েটি একটা বাড়িতে থাকায়, সেখানকার আচার-ব্যবহার পালন করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ সেখান থেকে ধর্মের কারণে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা ঠিক নয়৷
মেয়েটির বাবা ও পিসির তরফের আইনজীবী ছিলেন উদয় ওয়ারুঞ্জকর৷ তিনি বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মেয়েটির বাবা যেহেতু রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান, তাই তাঁর মেয়েও সেই মতাদর্শে চলবে এটাই কাম্য৷ ডালভি ফের সেই যুক্তি নাকচ করে বলেন, তিন বছরের শিশুকন্যার উপর ধর্ম চাপানো চলে না৷-সংবাদসংস্থা
এজলাসে যুবকের চিত্কার, মমতাই ঠিক
বিচারপর্ব শুরু হয়েছে। হঠাত্ বছর পয়ঁত্রিশের এক যুবক হাতে একগোছা কাগজ নিয়ে চিত্কার করেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কথাই বলেছেন৷ তিনি বলেছেন ন্যায় বিক্রি হচ্ছে৷ আমি দূর্নীতির অভিযোগ এনে তথ্যসহ দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টে ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, দেশের আইনমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেও কোনও ফল পাইনি৷ আমার মামলাটি হাইকোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা টাকার খারিজ করে দিয়েছেন৷' এই কথা বলে এজলাসে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে তাঁর সমস্থ আবেদনের প্রতিলিপি ছিটিয়ে অতি দ্রুত এজলাস ছেড়ে চলে যান৷ সরকারি কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় চিত্কার করতে থাকে ওই যুবকটিকে গ্রেফতার করার জন্য৷
এজলাসের বাইরেই কর্তব্যরত পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করে হাইকোর্টের থানায় নিয়ে যায়৷ পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশ তাঁর এজলাসে পুলিশ ওই যুবককে হাজির করা হয়৷ বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তরে ওই যুবক জানান, তিনি বহু লড়াই করেও বিচার পাননি৷ যার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সে টাকার বিনিময় বিচারপতিদের কিনে মামলায় তাকে হারিয়ে দিয়েছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি বলে থাকেন টাকার বিনিময়ে রায় কেনা হচ্ছে, আমিও একই কথা বলছি৷ তাই আমার বিরুদ্ধেও আদালত স্বতোপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করুক৷ তাহলে আমি আমার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পাব৷ ডিভিশন বেঞ্চ ওই যুবককে বলে, আপনি কী জানেন আদালতে সব কিছুরই একটি পদ্ধতি আছে, সেই মত আপনি আবেদন করেননি কেন৷ যুবকটি টানটান শরীরে জানিয়ে দেন,তিনি সব পদ্মতিই ইতিমধ্যে পালন করেছেন৷ তবুও সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট কোনও কোনও কোর্টই তার কথা শুনতে চান নি৷ ডিভিশন বেঞ্চ যুবককে বলে আপনি পদ্ধতি মেনে আবেদন করুন, আমরা আপনার আবেদন শুনব৷ এবার ডিভিশন বেঞ্চের ওই যুবকের কাছে প্রশ্ন, আজকের আচরনের জন্য আপতি কী দুঃখিত৷ এবং তার জন্য কী আপতি ক্ষমা চাইছেন৷ দ্যার্থহীন গলায় তিনি জানিয়ে দেন, আজকের আচরনের জন্য তিনি কোনও দোষ করেন নি,তাই তিনি ক্ষমাও চাইবেন না৷ ডিভিশন বেঞ্চের এবার প্রশ্ন, আদালতে ভিতরে এইভাবে চিত্কার করা নিয়ম বিরুদ্ধ৷ তার জন্য কী আপনি ক্ষমাপ্রার্থী? যুবকটি জানান, এরজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী৷ এবার তিনি হাত জোর করে আদালতের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন৷ ডিভিশন বেঞ্চ তাকে ছেড়ে দেয়৷
হাইকোর্টের আটোসাঁটো নিরাপত্তার মাঝে কীভাবে ওই যুবক প্রধান বিচারপতির এজলাসে পৌঁছে গেলেন-এই প্রশ্নে হাইকোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মুকুলকুমার পালেক জানান, 'ই গেট' দিয়ে ওই ব্যক্তি গোলাপি স্লিপে মামলাকারি পরিচয় দিয়ে হাইকোর্টে প্রবেশ করেছিলেন৷ কারণ অন্য গেটে আইনজীবী এবং আদালতের কর্মীরা ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি মিথ্যা লিখে হাইকোর্টে প্রবেশ করেছিলেন৷ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
বাইরে বেরিয়ে এসে ওই যুবক জানান, তাঁব নাম ইন্দ্রজিত্ বিশ্বাস৷ বাড়ি বীরভূম জেলার সুপুরে৷ সাঁইথিয়ায় একটি এলপিজি গ্যাসের ডিলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলেন৷ কিন্ত্ত ভারত পেট্রোলিয়ামের সব কটি নির্দেশিকা মানা সত্বেও, তাকে বঞ্চিত করে এক ধনি ব্যক্তিকে ওই ডিলারশিপ দেওয়া হয়৷ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকোর্টে একাধিক এবং সু্প্রিম কোর্টে একাধিবার মামলা করেও কোনও ফল পাননি৷ প্রতিবারই তার আবেদন না শুনে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত স্বতোপ্রণদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা করবে কী না,সেই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মামলার নথি হিসাবে একটি মাত্র সিডি আদালতের কাছে পেশ করা হয়েছে৷ একটি সিডি দুই বিচারপতির দেখা এখনও সম্ভব হয় নি৷ তাছাড়া লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সু্প্রিম কোর্টের প্রাকন প্রধান বিচারপতির মত অনেকেই বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে একাধিক বক্তব্য রেখেছেন৷ বিচারপতি সৌমিত্র সেনও ইমপিচমেন্টের সময় লোকসভায় বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছিলেন৷ সরকারি কৌঁসুলি সেই সময় মনে পড়িয়ে দেন, সেন্টিনারি ভবনের উদ্ধোধনে এসে তত্কালিন দেশের রাষ্ট্রপতি জৈল সিং ও মন্তব্য করেছিলেন 'কই কই জাজ হিলতা হ্যায়৷' ডিভিশন বেঞ্চের এদিনে আরও মন্তব্য, 'বিচার ব্যবস্থা কী সমালোচনার উর্দ্ধে?' মামলাকারি আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য উত্তরে জানান, টাকা দিয়ে রায় কেনা হচ্ছে-এই ধরণের মন্তব্য করে বিচার ব্যবস্থাকে কেউ আক্রমণ করে নি, এই ঘটনা প্রথম৷ এরপরই অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি তাঁর ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে মামলার দিন পিছনো হল৷
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুজরাতে প্রায় ৪০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার মধ্যে শুধু সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের সাতটি জেলাতেই ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১০ বছরে এবার সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে সৌরাষ্ট্রে। তুলো, বাদাম, জোয়ারের চাষ করেছিলেন বহু কৃষক। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন মার খাওয়ায়, অনেকে দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেন। রাজকোট জেলার জলদন ব্লকের অন্তর্গত ফুলিহার গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী প্রেমজী ভাই দেনার দায়ে গত মাসে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর ছেলে জানালেন, "কৃষকেরা একের পর এক আত্মহত্যা করে চলেছেন। কিন্তু মোদী তা পরোয়াই করেন না"। ২০০১ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, নর্মদা নদীর জল ক্যানেলের মাধ্যমে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে নিয়ে আসা হবে। সেচের কাজে লাগানো হবে সেই জল। কৃষকদের অভিযোগ, মোদীর সেই প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিই রয়ে গিয়েছে। সেটাই এখন সৌরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জলের পাশাপাশি বিদ্যুতেরও সমস্যা রয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত তাঁরা পান না।
ভ্যাট বেশি হওয়ায় রাসায়নিক সারের দাম বেশি। তুলো, বাদামের মতো ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়নি। এমনই নানা সমস্যায় জেরবার সৌরাষ্ট্রের কৃষকরা। যদিও নরেন্দ্র মোদীর দাবি, গুজরাতে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার এগারো শতাংশ। সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে। গত ১০ বছরে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে নর্মদার ক্যানাল পৌঁছে দিতে পারেনি বিজেপি সরকার। কৃষিতে এই সঙ্কটের জন্য নরেন্দ্র মোদীকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে সাত হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আমি ৩ বছরে ১১ হাজার কিলোমিটার লম্বা ক্যানাল বানিয়েছিলাম। নরেন্দ্র মোদী ১২ বছরে মাত্র ৯ হাজার কিলোমিটার ক্যানাল বানিয়েছেন। এখনও ৬৪ হাজার লম্বা ক্যানাল বানানো বাকি রয়েছে। কেন করনেনি নরোন্দ্র মোদী? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষির এই দুরবস্থা এবার সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে ব্যাপক সমস্যায় ফেলতে পারে নরেন্দ্র মোদীকে।
গুজরাতে উন্নয়ন নিয়ে যে ঢালাও প্রচার চলছে, তা আসলে নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সব গুজরাতবাসীর কাছে মোটেও উন্নয়নের আলো পৌঁছয়নি। আমদাবাদে নির্বাচনী প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদির 'উন্নয়নের দিশারী' ভাবমুর্তির দিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "বিজেপি সরকারে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করছে।" গুজরাতবাসীকে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তেরো ডিসেম্বর গুজরাটের প্রথম দফার নির্বাচন। নির্বাচনের ঠিক আগে কেমন আছেন গুজরাটের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়? উন্নয়নের সুফলই বা কতটা পেয়েছেন তাঁরা? সরকারের কাছে তাঁদের আশাই বা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। গত দু'দশকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাল্লাই বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। গুজরাট থেকে রজতশুভ্র মুখোটির রিপোর্ট।
২০০২ থেকে ২০১২। মাঝে কেটে গেছে দশটা বছর। তবুও গুজরাট হিংসার ক্ষত এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে দুটো নির্বাচন। কেশুভাই পটেলের পর ক্ষমতায় এখন নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মোদী সরকারের আমলে কতটা উন্নয়ন হয়েছে সংখ্যালঘুদের? তের ডিসেম্বর গুজরাটে প্রথম দফার নির্বাচন। তার আগে মোদী সরকারকে উন্নয়নের মার্কশিটে কতটা নম্বর দিচ্ছেন সংখ্যালঘুরা?
গুজরাটের মোট জনসংখ্যা প্রায় ছ'কোটি। এরমধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। মোট জনসংখ্যার দশ থেকে এগারো শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হলেও ভোটবাক্সে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি বিগত দুই নির্বাচনে। দোরগোড়ায় আরও একটা নির্বাচন। মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের অভিযোগ রাজনৈতিক মেরুকরণের শিকার তাঁরা। গুজরাট নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ১৮২। এরমধ্যে এবার একটি আসনেও মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। পাশে দাঁড়ায়নি কংগ্রেসও। উন্নয়নের থেকে বঞ্চনাই বেশি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গুজরাটের সংখ্যালঘুরা।
ধর্মীয় মেরুকরণের কারণে উন্নয়নও অনেকাংশেই বিত্তশালী মানুষদের ঘিরে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন গুজরাটের সংখ্যালঘুরা। প্রসঙ্গত, ১৩ তারিখের প্রথম পর্যায়ের ভোটে ৩০ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি। কর্মসংস্থান থেকে শিক্ষা সর্বত্রই উঠে এসেছে সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ।
গুজরাট হিংসার পর মাঝে অনেকগুলো বছর কেটে গেলেও ক্ষত কিন্তু রয়েই গেছে। অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে দোষীদের শাস্তিই হয়নি। রয়েছে ইনসাফের দাবি।
http://zeenews.india.com/bengali/nation/minorities-still-in-crisis-in-gujarat_9820.html
মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মোদীগড়ে কৃষক ও গরিব উন্নয়নে লক্ষ্যই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সোনিয়া। গুজরাত নির্বাচনের প্রাক্বালে শুক্রবার দক্ষিণ গুজরাতের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্যের টাকাও নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
এদিন আগাগোড়াই মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষুরধার ছিলেন সনিয়া। তিনি বলেন, "ইউপিএ সরকার অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে গুজরাতকেও হাজার কোটি টাকার অর্থ সাহায্য করেছে। কিন্তু গুজরাতে সেই টাকা কীখাতে খরচ করা হল, তা কেউ জানে না।" রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, "তাঁরা গরিবদের বিষয়ে ভাবিত নন।" গুজরাত সরকার নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন নেত্রী।
শুক্রবার সোনিয়ার সভামঞ্চে জমায়েত হয়েছিল ভালই। তেরো ডিসেম্বর এই কেন্দ্র থেকেই মোদীর ভাগ্যপরীক্ষা শুরু হবে। সেই নিরিখে সনিয়ার আজকের জনসমাবেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে এখান থেকেই মোদীকে `মত কা সদাগর` বলে বিতর্ক উস্কেছিলেন সোনিয়া। গুজরাতের উপজাতিদের কথা মাথায় রেখে, সোনিয়া বলেন, "সমালোচকরা আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।" সেইসঙ্গে, যে কোনও পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে পাশে থাকার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সোনিয়া।
ইউপিএ প্রধান আরও অভিযোগ করেন, গুজরাত সরকারের রাজনীতির জন্যই কেন্দ্রের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পগুলি বাধা পাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী নরহরি আমীন দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঠিক পরের দিনই সনিয়া গান্ধী কংগ্রেসকেই গুজরাতের ভবিষ্যৎ রূপকার বলে বর্ণনা করেছেন। কংগ্রেস সভানেত্রীর এদিনের বক্তব্যে নির্বাচনের আগে দলীয় সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সোনিয়ার দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী প্রচারের ঠিক আগে মোদীর করা মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক সোরগোল ছড়ায়। গত বুধবার কংগ্রেস সভানেত্রীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে বলেন। ডিসেম্বরের ১৩ ও ১৭ তারিখ দু`দফায় গুজরাতে ভোটগ্রহণ হবে। ফল ঘোষণা হবে ২০ তারিখ।
লালগড়ে উন্নয়ণ নিয়ে নীরব জয়রাম
লালগড়: দলনেত্রী হিসাবে তাঁকে কুর্ণিশ করলেও, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে তাচ্ছিল্যই করলেন জয়রাম রমেশ৷ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে গেলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী নন, রাস্তার লড়াকু নেত্রী হিসেবেই বেশি দক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাই তাঁর দেড় বছরের রাজত্বে এই রাজ্যে কোনও সরকার নেই, নেই কোনও প্রশাসনও৷' এরকম চড়া সুরেই শনিবার লালগড়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীই শুধু নন, এ রাজ্য থেকে সদ্য নির্বাচিত তিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি এবং আবু হাসেম খান চৌধুরীও মমতা এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা করলেন৷ সিপিএমের চেয়েও কড়া ভাষায় প্রাক্তন জোটসঙ্গীকে আক্রমণ করতে পিছিয়ে ছিলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার মতো নেতারাও৷
কংগ্রেসের সভা কিন্ত্ত হতাশই করেছে লালগড়কে৷ গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কংগ্রেস নেতারা জয়রাম রমেশকে দিয়ে লালগড়ে উন্নয়নের বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করানোর যে চেষ্টা করেছিলেন, তাকে জল ঢেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই৷ বরং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার নানা অভিযোগের জবাব ও পাল্টা অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছেন লালগড়কে৷ মঞ্চে উপস্থিত কংগ্রেসের মন্ত্রী-নেতারা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের দেওয়া টাকায় 'ফুটানি' করছে রাজ্য সরকার৷ জয়রাম বলেন, 'গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে অঢেল টাকা দিচ্ছে৷ কিন্ত্ত রাজ্যে কোনও কাজ হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না, তার কোনও জবাব নেই৷' প্রদীপবাবু দাবি করেন, 'এই সরকার পাঁচ বছরও টিঁকবে না৷ রাজ্যে ফের পরিবর্তন আসছে৷ আগামী দিনের বাংলা হবে কংগ্রেসের৷' প্রদেশ কংগ্রেসের এই আশায় ধুয়ো দিয়ে জয়রামও বলেন, 'এক হয়ে লড়তে পারলে কংগ্রেস একাই রাজ্যে সরকার গড়তে পারবে৷' দীপার মন্তব্য, 'মমতার পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না৷' অধীর আবার কংগ্রেসকে হাতির সঙ্গে তুলনা করে তৃণমূলকে নেংটি ইঁদুর বলে কটাক্ষ করেন৷ তিনি বলেন, 'কংগ্রেসকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই৷ ওসব আমরা অনেক দেখেছি৷ এই রাজ্যে এক জনই মন্ত্রী৷ বাকি সব সান্ত্রী৷'
রাজনৈতিক তরজা যাই হোক না কেন, লালগড় কিন্ত্ত প্রত্যাখান করেছে কংগ্রেসকে৷ স্থানীয় ফুটবল ময়দানে এই সভায় খুব বেশি লোক হয়নি শনিবার৷ বিশেষ করে লক্ষ্যনীয় অনূপস্থিতি ছিল লালগড়ের মানুষের৷ মঞ্চ থেকে অধীর-মানসরা অবশ্য অভিযোগ করেন, বহু জায়গায় আগের রাতে মানুষকে হুমকি দিয়ে কংগ্রেসের সভায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ দলের পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা হুমকি দেন, এসব আর বেশি দিন বরদাস্ত করা হবে না৷ লালগড় থেকে লোক না এলেও, তিন কিমি দূরের বামাল থেকে লোক এসেছিল৷ মেদিনীপুর থেকে লালগড় ফুটবল ময়দানে যাওয়ার পথ ঢেকেছিল শুধুই তৃণমূলের পতাকায়৷ মাঝে মাঝে কংগ্রেসের দু'একটি পতাকা জানিয়ে দিয়েছে দলের অস্তিত্ব আছে এলাকায়৷ ঘাটাল, খড়গপুর, কেশপুর, বেলপাহাড়ি থেকেও লোক আনা হয়েছিল৷ সবং থেকে ২৬টি বাস বোঝাই করে লোক আনা হয়েছে৷ বাদ যায়নি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনাও৷ সেখান থেকেও বাস-ম্যাটাডর করে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসা হয়৷
লোক কম হলেও এই সভায় কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের মেজাজ ছিল অত্যন্ত চড়া৷ যে সিপিএমকে গত দেড় বছর আগে কংগ্রেস আর তৃণমূল জোট বেঁধে রাজ্য ছাড়া করেছে, সেই সিপিএমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতাদের মুখে তেমন কোনও আক্রমণাত্মক কথা শোনা যায়নি৷ বরং তাঁরা অনেক বেশি আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ রাজ্যে নতুন সরকার হওয়ার পর পরই নেতাজি ইন্ডোরে কংগ্রেসের পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ তৃণমূলকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, 'কংগ্রেস রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেয়নি যে চুপ করে বসে থাতবে৷' তখন থেকেই দুই জোটসঙ্গীর ঠোকাঠুকি লেগেছিল৷ এ দিনও তিনি বলেন, 'এ রাজ্যে কংগ্রেস সন্ন্যাস নেয়নি৷ তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে দেওয়ার পর কংগ্রেসের পুনর্জন্ম হয়েছে৷' মমতার নাম না করে জয়রাম বলেন, 'কিছু লোক কংগ্রেস থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন, কিছু সুবিধা নেন৷ তার পর কংগ্রেসকেই ধাক্কা মারেন৷ কিন্ত্ত তাতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না৷' তিনি বলেন, 'আমাদের প্রথম লড়াই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট৷ রাজ্যের মানুষ সিপিএম, তৃণমূলকে দেখেছে৷ এবার কংগ্রেসকে দেখবে৷' দীপা-অধীর-আবু হাসেমের ভাষণে মমতার আমলে নানা রেলের প্রকল্প থেকে শুরু করে ত্রিফলা কেলেঙ্কারি, রায়গঞ্জের এইমস ধাঁচের হাসপাতাল পর্যন্ত রাজ্যের অনেক প্রসঙ্গই আসে৷
রবিবার রামগড়ে তৃণমূল পাল্টা সভা করবে৷ সেই সভাকে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, 'কার বিরুদ্ধে কাল ওরা সভা করবে? ওরাই তো সরকার চালাচ্ছে৷' কংগ্রেসের অভিযোগ সম্পর্কে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, 'লালগড়ে কংগ্রেস কোথায়? ওরা বাইরে থেকে লোক এনেছে৷ আমরা তো আর ওদের লোক দিতে পারব না৷'
লালগড়ে তৃণমূলকে আক্রমণ জয়রাম রমেশের
লালগড়ের ফুটবল ময়দানে শনিবার সভা করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। ছিলেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৈধুরী ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও। কংগ্রেসের থেকে জন্ম নিয়ে, কংগ্রেসের থেকে প্রচুর উপকার নিয়ে কংগ্রেসকে আঘাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। লালগড়ে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ করেন রমেশ। তিনি বলেছেন, "যদি কেউ মনে করে কংগ্রেস এ রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়েছে, সেটা তার ভুল ধারণা। এ রাজ্যে পরিবর্তন আনতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল কংগ্রেস. এখন তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস কর্মীরা। পঞ্চায়েত ভোটেই তার প্রভাব পড়বে।" লালগড়ের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, "আপনারা সিপিএম-কেও দেখেছেন, তৃণমূলকেও দেখছেন। কিন্তু আপনারা কিছু পেলেন কি?"
সাংবাদিকদের প্রশ্নে অবধারিত ভাবে এসে পড়ে লোকসভা ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রসঙ্গ। তার উত্তরে জয়রাম রমেশ বলেন যে তৃণমূল যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর নামে কুত্সা প্রচার করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। কংগ্রেসের মন্ত্রীদেরও তৃণমূল অপমান করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, "কেন্দ্র মানেগ্রা প্রকল্পের অধীনে ২,৭০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলায় ৫,৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্যও অর্থ মঞ্জুর করেছে। কিন্তু কেন্দ্রের নামে এখানে অপপ্রচার চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। নারী উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র যে টাকা অনুদান দিয়েছে, তা রাজ্য সরকার নিজেদের 'আনন্দধারা' প্রকল্পে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেন রমেশ।
মহাকরণ অভিযানের প্রস্ত্ততি শুরু করল জমিরক্ষা কমিটি
কমিটি সূত্রে খবর, শুধু দুবরাজপুরই নয়, জেলার বিভিন্ন ব্লকেও প্রচার চালানো হবে৷ এমনকী, অন্য জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে প্রচার আন্দোলন৷ মঙ্গলবার সিউড়িতে কমিটি যে মিছিল করেছিল, তাতে গ্রামবাসীদের হাতে ছিল কোদাল, লাঙল, ঝুড়ি, বেলচা, মাছ ধরার জাল ইত্যাদি৷ ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মহাকরণ অভিযানেও মিছিলকারীদের হাতে সে সব থাকবে বলে জানান কমিটির সভাপতি ফেলারাম মন্ডল৷ এখন দেখার, রাজ্য প্রশাসন সে দিন কৃষি জমি রক্ষা কমিটিকে মহাকরণ অভিযানের অনুমতি দেয় কি না৷ ফেলারামবাবু বলেন, 'অনুমতি না দিলেও আমাদের অভিযান হবে৷'
দশটি গ্রামের ১১টি মৌজার মোট ৩৩৫৩ একর জমিতে হওয়ার কথা ছিল ডিভিসি-এমটার প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্প৷ এই ১১টি মৌজার যুবকদের নিয়েই গড়ে উঠেছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির যুব শাখা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার লোবা সফরে এসে গ্রামবাসীদের মূল সমস্যাকেই এড়িয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ সে দিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা৷ তাঁদের অভিযোগ, ডিভিসি-এমটার যৌথ সংস্থা জমির ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনও কথাই বলার প্রয়োজন মনে করেনি৷ বরং দালাল লাগিয়ে জমি কেনার চেষ্টা করছে৷ কমিটির নেতারা জানান, গ্রামবাসীরা জমি দিতে রাজি৷ কিন্ত্ত তাঁরা চান, সরকারের মাধ্যমে জমি কিনুক সংস্থাটি৷ মাঝে কোনও দালাল রাখা চলবে না৷ একে ঘিরেই যাবতীয় সমস্যার শুরু৷ গত ৬ নভেম্বর লোবায় পুলিশি তাণ্ডবের পর সরকারের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ৷ তাঁরা ভেবেছিলেন, রাজ্য সরকার ওই সংস্থার সঙ্গে গ্রামবাসীদের আলোচনার ব্যবস্থা করে দেবে৷ কিন্ত্ত সরকার সে পথে হাঁটেনি৷ উল্টে মুখ্যমন্ত্রী লোবায় এলেও, কমিটির কারও সঙ্গে কথা বলেননি, যাননি কমিটির ধরনা মঞ্চেও৷ সে দিনই ওই মঞ্চ থেকে কমিটির নেতারা জানিয়ে দেন, ১৩ ডিসেম্বর মহাকরণ অভিযান করে কলকাতা অচল করে দেওয়া হবে৷ সেই মতোই বৃহস্পতিবার থেকে গ্রামে গ্রামে প্রচার শুরু হয়েছে৷
No comments:
Post a Comment