Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Wednesday, December 19, 2012

অথচ সারা দেশে নারী কোথাও নিরাপদ নয়, যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম ও বাজারের চোখে সে শুধু পণ্য। পলাশ বিশ্বাস

অথচ সারা দেশে নারী কোথাও নিরাপদ নয়, যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম  ও বাজারের চোখে সে শুধু পণ্য

পলাশ বিশ্বাস

মনুর বিধানে শূদ্র ও নারী সম-অবস্থানে সমাসীন- সেই বিধানে শূদ্রকে যেমন মানবরূপে চেনা যায় না, নারীকেও পাওয়া যায় না মানবীরূপে | নারী যে-জাতেরই হোক না কেন, মানুর একই বিধান | 

নারী নির্যাতন এই উপমহাদেশের পুরুষশাষিত সমাজে রোজকার শিরোনাম
।দিল্লীতে ধর্ষণের অবাধ সংস্কৃতি বিশ্বায়নেরই স্বাভাবিক পরিণতি।ধর্ষককে ফাঁসির সাজা দিলেই ভোগসর্বস্ব বাজারে রুপান্তরিত সমাজ ও দেশে নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না,এমন মনে করার কোনও কারণ দেখছি না।ধর্ম জাতীয়তাবাদ ও বিশ্বায়নের যুগলবন্দীতে নারী ভোগ্য বস্তু, এই নিযতি  "ভারত লজ্জিত। ভারত বিক্ষুব্ধ",এই রগরগে শ্লোগানে রাতারাতি পাল্টে যাবে না।নারী নির্যাতনের এই ঘটনা নূতন কিছুই না। দুই বাংলার নারী পাচার বাঙালির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য। উত্তরভারতে কন্যা ভ্রুন হত্যা সংস্কৃতির অঙ্গ। সমাজে ও দেশে নারীর অবস্থান ধর্ম গ্রন্থের অনুশাসনে সর্বত্র নিয়ন্ত্রিত, দেশের আইন যাই হোক না। সমাজের উঁচুতলায় সর্বস্তরে নারীর ভূমিকা নেতৃত্বকারি হলেও, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা এলেও সমাজের অবক্ষয় নারীর সবচেয়ে বড় শত্রু।পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে বাজারের গ্লোবাল কার্নিবাল।যা আবার দধর্ম জাতীয়তাবাদের অনুশাসনে সর্বৈব বৈধ। রাজধানীর একটি ঘটনা সারা দেশ তোলপাড় , ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ অনুযায়ী রাজনৈতিক ও মীডিয়ার অতি সক্রিয়তায়।অথচ সারা দেশে নারী কোথাও নিরাপদ নয়, যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম  ও বাজারের চোখে সে শুধু পণ্য

 
চলন্ত বাসে নৃশংস গণধর্ষণ ঘিরে দিল্লি থেকে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ধর্ষিতা। তাঁর জন্য প্রার্থনার পাশপাশি দোষীদের বিচার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে তোলপাড় গোটা দেশ। 

দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণে শিকার হওয়া তরুণীর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বুধবার সফদরজং হাসপাতালে তাঁর আরও একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, চিকিতসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়া যাচ্ছেন। দেশ জুড়ে চলছে প্রার্থণাও। 

সফদরজং হাসপাতালে তাঁকে সর্বক্ষণের জন্য ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তরুণীর তলপেট ও অন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাঁর মাথার আঘাতও গুরুতর। জ্ঞান থাকলেও রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট কমছে ক্রমাগত। মঙ্গলবার সকালে তাঁর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও সন্ধে থেকে আবারও অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসারত ডাক্তাররা। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাক্তার বি ডি আথানি সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন তরুণীর অবস্থা সঙ্কটজনক এবং অবনতি ঘটেছে। তিনি বলেন, "সকালে অবস্থার উন্নতি হলেও সন্ধে গড়াতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।"

ইতিমধ্যেই তাঁর শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে আরও একাধিক অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে তাঁরা এও জানিয়েছেন তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। তরুণীর অন্ত্রাশয় বিভৎস ভাবে যখম হয়েছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তলপেটে ও যৌনাঙ্গের আঘাত `অত্যন্ত গুরুতর`। এখনও কথা বলতে পারছেন না তিনি। ডাক্তারদের প্রশ্নের উত্তর লিখে জানাচ্ছেন।

গণধর্ষণের ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। সংসদে একবাক্যে এর বিরুদ্ধে সোচ্চায় হয় সব রাজনৈতিক দল। সংসদের বাইরেও সরব হন সাধারণ মানুষ। গণধর্ষণে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমাজের সর্বস্তরেই।

দিল্লিতে গণধর্ষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এমনই নির্দেশ দিলেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী। এ নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমারত শিন্ডেকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। ফোনে কথা বলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে নিগৃহীতা তরুণীকে দেখতে যান ইউপিএ চেয়ারপার্সন। অন্যদিকে, গণধর্ষণকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিনভর উত্তাল ছিল সংসদ। 

শীলা দীক্ষিতকে চিঠিতে সোনিয়া লেখেন, "আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে আপনাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার প্রমাণ দেওয়া উচিত। এই ভয়াবহ ঘটনা ভবিষ্যতে যেন না ঘটে তার জন্য আমি এবং আমাদের দল আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করব।"

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে শ্রীমতি গান্ধী লেখেন, "কেবলমাত্র সারা বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়ই নয়, এই নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে সরকারের জলদি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত... আমি আশা করি আপনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।" 

এর আগেই ইউপিএ চেয়ারপার্সন মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হল সংসদ। মঙ্গলবার সংসদের দুই কক্ষেই প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান বিরোধীরা। লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বের পর বিষয়টি তোলেন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ।  দিল্লি সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি, ধর্ষণে সাজা হিসেবে ফাঁসির সওয়াল করেন বিরোধী দলনেত্রী।

বুধবার দিল্লি পুলিসের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান রাজনীতিবিদ, সক্রিয় সমাজকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান ছাত্ররা। তাদের শান্ত করতে জলকামান চালায় পুলিস। শীলা দীক্ষিত সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। তারপর থেকেই বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছে ছাত্ররা। তাদের দাবি দিল্লির নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার কী করছে তাই মুখ্যমন্ত্রীকে তাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। দিল্লির ব্যস্ত রাস্তা আইটিও মোড়ের কাছে রাস্তা আটকেও প্রতিবাদ করেন সাধারণ মানুষ। তাদেরও একই দাবি, দিল্লিকে মহিলাদের জন্য নিরাপদ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক সরকার। 

শুধু রাস্তায় বিক্ষোভ নয়। এদিন সকাল থেকেই সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে সফদরজঙ হাসপাতালের বাইরেও। ওই হাসপাতালেই ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ধর্ষিতা। রবিবার রাতে অস্ত্রপচারের পর মঙ্গলবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু বিকেল হতেই ফের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁর যন্ত্রণা কমাতে আপাতত কড়া ঘুমের ওষুধের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যদি তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় তবে কিছুটা হলেও আশার আলোর সম্ভাবনা দেখছেন চিকিত্সকরা। 

রাজধানীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে একযোগে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও। ঘটনার প্রতিবাদে আজ সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি সাংসদরা। দিল্লিবাসীর জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। একইসঙ্গে, দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে বিজেপির তরফে। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ দাবি করেছেন, দোষীদের দ্রুত বিচার করে প্রাণদণ্ড দেওয়া হোক। 

এই বিক্ষোভ বিচ্ছিন্ন করছে বিশ্বায়ন বিরোধী প্রতিবাদকেও ধর্ম জাতীয়তাবাদ ও জায়নবাদী বিশ্বায়নের বিরোধিতা নারীর নিরাপত্তা প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশী জরূরী  ধর্ষণকে প্রতিষ্ঠানিক করেছে যে মনুস্মৃতি ব্যবস্থা, তা কায়েম থাকলে ধর্ষণ চলবেই 

আদালতে নিজের অপরাধ কবুল করল দিল্লি ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত আরও তিন জন, মুকেশ, ফল বিক্রেতা পবন কুমার ও জিম প্রশিক্ষক বিনয় শর্মা। এর পর পবন ও বিনয়কে ৪ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। মুকেশকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে তিহার জেলে পাঠানো হয়। সূত্রে খবর, বিনয় শর্মা অপরাধ কবুল করে এবং আদালতের কাছে তার নিজের ফাঁসির দাবি করে। তবে পবন, বিনয় এবং মুকেশ কেউই টি আই প্যারেডে সম্মতি জানায়নি। 

ধর্ষণের ওপর পলাতক অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুর এবং রাজু সন্দেহে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে আটক করা হয় দুই যুবককে। আগামিকাল তাঁদের সণাক্ত করতে ঔরঙ্গাবাদে যাচ্ছে দিল্লি পুলিস। 

গতকালই ধর্ষণ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বাসের চালক রাম সিং-কে পাঁচ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 

দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিসের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ আদালত। বাসের মধ্যে তরুণীকে ধর্ষণ এবং তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীকে চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া, দিল্লি হাইকোর্ট গোটা ঘটনাটি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। সেইমতো দিল্লির নগরপাল নীরজ কুমারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে আদালত। দু'দিনের মধ্যে নগরপালকে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার দিন কোথায় কোন পুলিসকর্মীরা দায়িত্বে ছিলেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই তরুণী এবং তাঁর সঙ্গী যেন সেরা চিকিত্সা পরিষেবা পান, সে নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। 

গণধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এবং দিল্লির নগরপাল নীরজ কুমারের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে তারা। গোটা ঘটনাটি সরকার কীভাবে দেখছে তা জানতে চেয়ে দুজনকে নোটিস দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে মহিলা সুরক্ষার হাল নিয়েও কৈফিয়ত তলব করেছে তারা। বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাবাসের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা। 

অন্যদিকে, রাস্তায় মহিলাদের নিরাপত্তা সু্নিশ্চিত করতে দিল্লির পুলিসকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আজ দিল্লি পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে। এরপর রাজ্যসভায় একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এক একনজরে দেখে নেব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সিদ্ধান্তগুলি 

  1. দিল্লির রাস্তায় গাড়িতে ঘষা কাচ, কালো কাচ ও পর্দার ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
  2. বাড়ানো হবে সিসিটিভির নজরদারি
  3. অতিরিক্ত ৩৫০টি পুলিসি নজরদারি গাড়ির টহল বাড়ানো হবে
  4. রাজধানীর প্রতিটি বাসরুটকে জিপিএস নজরদারির আওতায় আনা হবে
  5. সমস্ত রুটের বাসে রুটের নাম, বাস মালিকের নাম ও আপদকালীন যোগাযোগের নম্বর লেখা বাধ্যতামূলক করা হল
  6. কোন রুটের কোন বাসে কোন বাসকর্মী নিযুক্ত রয়েছেন সে সম্পর্কেও যাবতীয় তথ্য পরিবহণ দফতরের কাছে রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে


অন্যদিকে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লি বিধানসভাতে আজ বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আজই নারীবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। 

  বৃহস্পতিবার সারা দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্মী ও অফিসারদের বিভিন্ন সংগঠন। গত কালই সংসদে পাশ হয়েছে বাঙ্কিং সংশোধনী বিল। তার আগেই গত শুক্রবার ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেন কর্মীরা। ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে অফিসারদের সংগঠনগুলিও। ব্যাঙ্ক এম্পলয়িজ অ্যাসোসিয়েশন, অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এম্পলয়িজ  অ্যাসোসিয়েশন, অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন যৌথ ভাবে এই ধর্মঘট ডেকেছে। 

পৃথক ভাবে ধর্মঘট ডেকেছে ন্যাশলাল ইউনিয়ন অফ ব্যাঙ্ক এম্পলয়িজ। ধর্মঘটের প্রভাব এটিএম পরিষেবাতেও পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিটি সংগঠনের পক্ষে প্রতিবাদ পাঠানো হবে কেন্দ্রের কাছে। সংগঠন গুলির আশঙ্কা কেন্দ্রের এই নতুন বিলে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের প্রবাভ বাড়বে। ভারতীয় ব্যাঙ্কিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাড়বে বিদেশি সংস্থাগুলির।

ইতিমধ্যে উদার বাজারনীতির পথে আরও একধাপ এগোল কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার লোকসভায় পাস হয়ে গেল ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিলটি। এরফলে ভারতীয় ব্যাঙ্কিংক্ষেত্রে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির জন্য আরও বেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেওয়া হল। তবে বিরোধীদের দাবি মেনে জমি অধিগ্রহণ বিলটি বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর বীমা আইন সংশোধনী বিলটিও এবারের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হচ্ছে না। 

ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পথ আরও প্রশস্ত করতে ২০১১-এ সংশ্লিষ্ট বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। বিলটির বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এর ফলে পশ্চিমী আর্থিক মন্দার প্রভাবও ভারতের বাজারে প্রবলভাবে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। মঙ্গলবার বিলটি লোকসভায় পেশ হলে বামপন্থীদের তরফে কিছু সংশোধনীও আনা হয়। কিন্তু, বামেদের সংশোধনীকে অগ্রাহ্য করেই ধ্বনিভোটে বিলটি পাস করিয়ে নেয় সরকার। 

তার আগে অবশ্য প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি মেনে বিলটি থেকে দুটি অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়া হয়েছে। একটি অনুচ্ছেদে ব্যাঙ্কগুলিতে ফিউচার ট্রেডিংয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসায়িক হিসেব নিকেশ কমপিটিশন কমিশনের আওতার বাইরে রাখার কথা বলা হয়েছিল। অর্থ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলের যে খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছিল তাতে এই অনুচ্ছেদগুলি ছিল না। তাই বিলটি ফের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছিল বিজেপি। 

বিতর্ক এড়াতে বিলটি থেকে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ দুটিই বাদ দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে নতুন আর্থিক সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়ার আগে কেন্দ্রকে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার জেরেই বিলটি তৈরি করা হয়। এর ফলে, ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যেমন বিদেশি আর্থিক সংস্থা বিনিয়োগ করতে পারবে, তেমনই স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার জন্যও অনেক বিদেশি ব্যাঙ্ক লাইসেন্স পাবে। 

পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে বিনিয়োগকারীদের ভোটাধিকারও এই বিলে বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যাবতীয় লেনদেনের নিয়ামক সংস্থা হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে গেলেও, ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক প্রতিযোগিতার বিষয়গুলি দেখবে কম্পিটিশন কমিশন। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে বাজারে নগদ অর্থের যোগান বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় একে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। তবে ব্যাঙ্কিং বিল পাশ করলেও, বিরোধীদের দাবি মেনে জমি অধিগ্রহণ সংশোধনী বিল পেশের বিষয়টি পরবর্তী বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। 

সূত্রের খবর বীমাক্ষেত্রে সংশোধনী বিলটিও এবারের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ হবে না।

মনুসংহিতায় নারীঃ

[-] নারীরা মন্ত্রে অধিকারহীন, ধর্মশাস্ত্রে অধিকারহীন নির্গুন-মিথ্যাবাদী-পাপের মূল; তাহলে কি দেবীরা নারী নন? না নিচের শ্লোক/বিধান গুলো কেবলমাত্র সাধারণ নারীদের জন্য- পূণ্যবতী গুণবতী দেবীরুপী নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়ঃ

"স্বভাব এষ নারীণং নরাণামিহ দূষণম।
অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ" \\ ২১৩ \\ 

অর্থঃ "নারীদের স্বভাবই হল পুরুষদের দূষিত করা। অতএব পন্ডিতগণ স্ত্রীলোক সম্বন্ধে অনবহিত হন না।" সূত্রঃ মনুসংহিতা-২য় অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৭৯, শ্লোক-২১৩

"নাশ্নীয়াদ্ভার্যয়া সার্ধং নৈনামীক্ষেত চাশ্নতীম।
ক্ষুবতীং জৃম্ভমাণাং বা ন চাসীনাং যথাসুখম" \\ ৪৩ \\ 

অর্থঃ স্ত্রীর সঙ্গে আহার করবেন না, তার আহারকালে তাকে দেখবেন না। স্ত্রীর হাঁচবার, হাই তোলার বা আরাম করে বসে থাকার সময়ে তাকে দেখবেন না।"সূত্রঃ মনুসংহিতা-৪র্থ অধ্যায়, পৃষ্ঠা-১২১, শ্লোক-৪৩

ঋতুকালাভিগামী স্যাত্‍ স্বদারনিরতঃ সদা।
পর্ববর্জং ব্রজেচ্চৈনাং তদব্রতো রতিকাম্যয়া \\ ৪৫ \\ 

অর্থঃ (গৃহস্ত) নিজের স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে ঋতুকালে স্ত্রীসম্ভোগ করবেন; স্ত্রীর প্রতি প্রীতিমান ব্যক্তি (অমাবস্যাদি) পর্ব বাদে রতিকামনায় (অন্য সময়েও) দারগমন করবেন। সূত্রঃ মনুসংহিতা- ৩য় অধ্যায়, পৃষ্ঠাঃ ৯০, শ্লোক-৪৫, মূল সংস্কৃত-মনু, অনুবাদ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

কালেহদাতা পিতা বাচ্যো বাচ্যশ্চানুপযন পতিঃ।
মৃতে ভর্ত্তরি পুত্রসত্ত বাচ্যো মাতুররক্ষিতা \\ ৪ \\ 

অর্থঃ বিবাহযোগ্য কালে কন্যা সমপ্রদান না করলে পিতা, (ঋতুকালে) স্ত্রীগমন না করলে পতি, স্বামীর মৃত্যুর পর মাতার রক্ষনাবেক্ষণ না করলে পুত্র নিন্দনীয় হয়। সূত্রঃ মনুসংহিতা- ৯ম অধ্যায়, পৃষ্ঠাঃ ২৪৮, শ্লোক-৪, মূল সংস্কৃত-মনু, অনুবাদ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

আদি পুরুষ (মনুসংহিতা মতে-মনু) মানব জাতির পিতা তার মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ের ১৮ নং শ্লোকে বললেন-

নাস্তি স্ত্রী নাং ক্রিয়া মন্ত্রৈদিতি ধর্মে ব্যবস্থিতি।
নিবিন্দ্রিয় হামন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহ নৃতমিতি স্থিতিঃ \\ ১৮ \\

অর্থঃ  মাস্ত্রোক্ত বিধি অনুসারে নারীদের মন্ত্রে কোন অধিকার নাই, স্মৃতি ও ধর্শ শাস্ত্রে ইহাদের অধিকার নাই, এই জন্য ইহারা নিতান্ত হীন ও অপাদার্থ।" সূত্রঃ মনুসংহিতা- ৯ম অধ্যায়, পৃষ্ঠাঃ২৫০, শ্লোক-১৮, মূল সংস্কৃত-মনু, অনুবাদ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়



ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং কথিত মনুসংহিতা ও বিবিধ প্রসঙ্গ। (১)

142 বার পঠিত   |   বিভাগ: জানা-অজানাপ্রবন্ধ

মুঘলদেরও বহুকাল আগে প্রাচীন আর্যরা এই ভারতবর্ষে শুধু বহিরাগতই ছিলো না, এই আর্যরা আদিনিবাসী জনগোষ্ঠী ও তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির উপরও চালিয়েছিলো ব্যাপক আক্রমণ। আর এই আক্রমণেই একদিন ধ্বংস হয়ে যায় এসব আদিনিবাসী জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ সিন্ধু সভ্যতা। এই সিন্ধু সভ্যতাকেই কেউ কেউ হরপ্পা সভ্যতা বা দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। আক্রমণকারী আর্যরা আদিনিবাসী জনগোষ্ঠীকে দাসে পরিণত করার লক্ষ্যে যে চতুর্বরণ প্রথা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করে, শেষ পর্যন্ত এতে সফলও হয় তারা। ফলে এককালের সিন্ধু সভ্যতার আদিনিবাসী জনগণই হয়ে যায় তাদের কাছে অনার্য অর্থাৎ শাসিত অধম। আর্যরা হয়ে ওঠে মহান শাসক। আর তাদের প্রচলিত বৈদিক ধর্ম হয়ে ওঠে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক সত্তা। এই বৈদিক ধর্মের উৎস হিসেবে স্বীকৃত হয় 'স্মৃতি' বা 'বেদ' নামের মহাগ্রন'। আর এই বেদের নির্যাস নিয়েই আরোপিত এই ধর্মটির প্রচারিত সংবিধান হয়ে ওঠলো মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা। এর মাধ্যমে যে সমাজ-কাঠামোর নির্মাণ যজ্ঞ চলতে থাকলো তার ভিত্তি এক আজব চতুর্বরণ প্রথা। যেখানে আদিনিবাসী অনার্যরা হয়ে যায় নিম্নবর্ণের শূদ্র, যারা কেবলই উচ্চতর অন্য তিন বর্ণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের অনুগত সেবাদাস। কোনো সমাজ-সংগঠনে বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান যজ্ঞে অংশগ্রহণের অধিকার শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আর যারা এই ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে প্রতিবাদী-বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইলো, এদেরকেই সুকৌশলে করা হলো অচ্ছ্যুৎ, দস্যু, সমাজচ্যুত বা অস্পৃশ্য সমপ্রদায়।
পৃথিবীতে যতগুলো কথিত ধর্মগ্রন' রয়েছে তার মধ্যে মনে হয় অন্যতম বর্বর, নীতিহীন, শঠতা আর অমানবিক প্রতারণায় পরিপূর্ণ গ্রন'টির নাম হচ্ছে 'মনুস্মৃতি' (গধহঁ-ংসৎরঃর) বা 'মনুসংহিতা' (গধহঁ-ংধসযরঃধ)। ব্রাহ্মণ্যবাদের (ঐরহফঁরংস) আকর গ্রন' শ্রুতি বা 'বেদ'-এর নির্যাসকে ধারণ করে যেসব স্মৃতি বা শাস্ত্র গ্রন' রচিত হয়েছে বলে কথিত, তার শীর্ষে অবস্থান করছে মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা। তাই মনুসংহিতা ও ব্রাহ্মণ্যবাদকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই। মনুসংহিতা মানেই ব্রাহ্মণ্যবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ মানেই মনুসংহিতা। এটাকে তৎকালীন বৈদিক আর্য সমাজ ও প্রচলিত হিন্দু সমাজের অবশ্য পালনীয় পবিত্র সংবিধান বা সামগ্রিক ও সম্পূর্ণ জীবনাচরণবিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বারোটি অধ্যায়ে প্রায় দু'হাজার সাতশ' শ্লোক সংবলিত এ গ্রন'টির পাতায় পাতায় ধর্মীয় বিধানের নাম দিয়ে সংস্কৃত অক্ষরে অক্ষরে যে শ্লোকগুলো উৎকীর্ণ রয়েছে, অধিকাংশ শ্লোকের ভাবার্থকে যদি মনুষ্য সমাজে পালনীয় নীতি হিসেবে বিবেচনা করতে হয়, তাহলে মানুষের সমাজে কোন মানবিক বোধ আদৌ রয়েছে বা অবশিষ্ট থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করাটাই অবিশ্বাস্য মনে হয়। এ ব্যাপারে কোন বিস্তৃত ব্যাখ্যায় না গিয়ে বরং মনুসংহিতা থেকে অনুবাদ ও ভাবার্থসহ কিছু শ্লোকের নমুনা-উদাহরণ টানলেই বিষয়গুলো আমাদের সামনে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে।
মনুসংহিতার মত অনুযায়ী মহান স্রষ্টা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন, এ সবকিছু রক্ষার জন্য তার মানব সৃষ্টিও জরুরি হয়ে পড়ে। ফলে মানুষও সৃষ্টি হলো। কিন্তু মানব সৃষ্টি ও পরিপালনের ক্ষেত্রে এসে ব্রহ্মা বা ঈশ্বর বোধ করি নিজেকে আর সুমহান মর্যাদায় ধরে রাখতে পারেননি। যে শ্রেণীবিদ্বেষপ্রসূত তীব্র অসমতাভিত্তিক বর্ণপ্রথার আশ্রয় নেয়া হয়েছে তাতেই সন্দেহ গাঢ় হয়ে ওঠে যে এটা আদৌ কোন অতিলৌকিক পবিত্র বিধিবিধান কিনা। বরং ধর্মীয় মোড়কে এক ঘৃণ্য আর্থ-সমাজ-রাজনীতির অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক হীন প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়। তার পেছনে যে এক অতীব স্বার্থান্বেষী ভণ্ড প্রতারক গোষ্ঠীর সূক্ষ্মতম কারসাজিই কার্যকর হতে পারে, তা বুঝতে খুব বেশি যুক্তিবাদী হবার প্রয়োজন পড়ে না। বিস্তৃত পরিসরে না গিয়ে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের নমুনা-উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করে নিতে পারি। এক্ষেত্রে বঙ্গানুবাদসহ উদ্ধৃত শ্লোক ব্যবহারে স্বদেশ প্রকাশনী কলকাতা থেকে বইমেলা ১৪১২-এ প্রকাশিত মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত 'মনুসংহিতা' সুলভ সংস্করণ গ্রন'টির সহায়তা নেয়া হয়েছে।
এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করে অতঃপর স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা কি আদতে মানুষ সৃষ্টি করলেন, না কি কিছু বিভেদপূর্ণ বর্ণ (াধৎহধং) (জাতি) সৃষ্টি করলেন, মনুসংহিতা পাঠ করলে তা প্রশ্ন হিসেবেই থেকে যায়। তবে গোটা গ্রনে' যেখানে যা কিছুই বলা হয়েছে জাতি হিসেবে ব্রহ্মাসৃষ্ট বর্ণগুলোকেই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-
সর্বস্যাস্য তু সর্গস্য গুপ্ত্যর্থং স মহাদ্যুতিঃ।
মুখবাহুরুপজ্জানাং পৃথক্ কর্মাণ্যকল্পয়ৎ।। (১/৮৭)
বঙ্গানুবাদ: এই সকল সৃষ্টির অর্থাৎ ত্রিভুবনের রক্ষার জন্য মহাতেজযুক্ত প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজের মুখ, বাহু, ঊরু এবং পাদ- এই চারটি অঙ্গ থেকে জাত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের পৃথক পৃথক কার্যের ব্যবস্থা করে দিলেন।
অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।
দানং প্রতিগ্রহঞ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ।। (১/৮৮)
বঙ্গানুবাদ: অধ্যাপন, স্বয়ং অধ্যয়ন, যজন, যাজন, দান ও প্রতিগ্রহ (উপহার বা দান-সামগ্রি গ্রহণ)- এই ছয়টি কাজ ব্রহ্মা ব্রাহ্মণদের জন্য নির্দেশ করে দিলেন।
প্রজানাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বিষয়েম্বপ্রসক্তিশ্চ ক্ষত্রিয়স্য সমাসতঃ।। (১/৮৯)
বঙ্গানুবাদ: প্রজারণ, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, নৃত্যগীতবনিতাদি-বিষয়ভোগে অনাসক্তি, এই কয়েকটি কাজ ব্রহ্মা ক্ষত্রিয়গণের জন্য সংক্ষেপে নিরূপিত করলেন।
পশূনাং রক্ষণং দানমিজ্যাধ্যয়নমেব চ।
বণিক্‌পথং কুসীদঞ্চ বৈশ্যস্য কৃষিমেব চ।। (১/৯০)
বঙ্গানুবাদ: পশুদের রক্ষা, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, বাণিজ্য (স্থলপথ ও জলপথ প্রভৃতির মাধ্যমে বস্তু আদান-প্রদান করে ধন উপার্জন), কুসীদ (বৃত্তিজীবিকা- টাকা সুদে খাটানো) এবং কৃষিকাজ- ব্রহ্মা কর্তৃক বৈশ্যদের জন্য নিরূপিত হল।
অধীয়ীরংস্ত্রয়ো বর্ণাঃ স্বকর্মস্থা দ্বিজাতয়ঃ।
প্রব্রূয়াদ্ ব্রাহ্মণস্‌ত্েবষাং নেতরাবিতি নিশ্চয়ঃ।। (১০/১)
বঙ্গানুবাদ: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এই তিনবর্ণের লোকেরা দ্বিজাতি; এঁরা নিজ নিজ কর্তব্য কর্মে নিরত থেকে বেদ অধ্যয়ন করবেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে কেবল ব্রাহ্মণেরাই অধ্যাপনা করবেন, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই দুই বর্ণের পক্ষে অধ্যাপনা করা উচিত নয়। -এটাই শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত।

http://www.shobujbanglablog.net/11240.html


মহাভারত। মনুসংহিতা

         ১

 

প্রহরিষ্যন্‌ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ

        প্রহৃত্যাপি প্রিয়োত্তরম্‌ ।

অপি চাস্য শিরশ্ছিত্ত্বা

        রুদ্যাৎ শোচেৎ তথাপি চ ॥

            — মহাভারত , আদিপর্ব ১৪০ . ৫৬

 

 

মারিতে মারিতে কহিবে মিষ্ট ,

     মারিয়া কহিবে আরো ।

মাথাটা কাটিয়া কাঁদিয়া উঠিবে

     যতটা উচ্চে পারো ॥

 

          ২

 

সুখং বা যদি বা দুঃখং

     প্রিয়ং বা যদি বাপ্রিয়ম্‌ ।

প্রাপ্তং প্রাপ্তমুপাসীত

     হৃদয়েনাপরাজিতঃ ॥

          — মহাভারত , শান্তিপর্ব ১৭৪ . ৩৯

 

 

সুখ বা হোক দুখ বা হোক ,

     প্রিয় বা অপ্রিয় ,

অপরাজিত হৃদয়ে সব

     বরণ করিয়া নিয়ো ॥

 রূপান্তর

         পা ঠা ন্ত র

 

সুখ হোক দুঃখ হোক ,

     প্রিয় হোক অথবা অপ্রিয় ,

যা পাও অপরাজিত

     হৃদয়ে বহন করি নিয়ো ॥

 

         পা ঠা ন্ত র

 

আসুক সুখ বা দুঃখ ,

     প্রিয় বা অপ্রিয় ,

বিনা পরাজয়ে তারে

     বরণ করিয়ো ॥

 

                  ৩

 

নাধর্মশ্চরিতো লোকে সদ্যঃ ফলতি গৌরিব ।

শনৈরাবর্তমানস্তু কর্তুর্মূলানি কৃন্ততি ॥

যদি নাত্মনি পুত্রেষু ন চেৎ পুত্রেষু নপ্তৃষু ।

ন ত্বেব তু কৃতোহধর্মঃ কর্তুর্ভবতি নিষ্ফলঃ

অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি ।

ততঃ সপত্নাঞ্জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি ॥

             — মনুসংহিতা , ৪ . ১৭২ - ৭৪

 

গাভী দুহিলেই দুগ্ধ পাই তো সদ্যই ,

কিন্তু অধর্মের ফল মেলে না অদ্যই ।

জানি তার আবর্তন অতি ধীরে ধীরে

সমূলে ছেদন করে অধর্মকারীরে ॥

 

আপনিও ফল তার নাহি পায় যদি ,

পুত্র বা পৌত্রেও তাহা ফলে নিরবধি ।

এ কথা নিশ্চিত জেনো অধর্ম যে করে




রূপান্তর

নিষ্ফল হয় না কভু কালে কালান্তরে ॥

 

আপাতত বাড়ে লোক অধর্মের দ্বারা ,

অধর্মেই আপনার ভালো দেখে তারা ।

এ পথেই শত্রুদের পরাজয়করে ,

শেষে কিন্তু একদিন সমূলেই মরে ॥

 

টীকা :

    ১   সুভাষিতরত্নভাণ্ডাগার - ধৃত পাঠ । মহাভারতের প্রচলিত পাঠ —

                     প্রহরিষ্যন্‌ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ প্রহরন্নপি ভারত ।

                     প্রহৃত্য চ কৃপায়িত শোচেত চ রুদেত চ ॥

    ২   পাঠান্তর : পরাস্ত

    ৩   শেষ ছত্র - দুটির পাঠান্তর —

                     অধর্মেই শত্রুদের করে পরাজয়

                     শেষে কিন্তু সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হয় ।

http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/14463


রূপান্তর

         পা ঠা ন্ত র

 

সুখ হোক দুঃখ হোক ,

     প্রিয় হোক অথবা অপ্রিয় ,

যা পাও অপরাজিত

     হৃদয়ে বহন করি নিয়ো ॥

 

         পা ঠা ন্ত র

 

আসুক সুখ বা দুঃখ ,

     প্রিয় বা অপ্রিয় ,

বিনা পরাজয়ে তারে

     বরণ করিয়ো ॥

 

                  ৩

 

নাধর্মশ্চরিতো লোকে সদ্যঃ ফলতি গৌরিব ।

শনৈরাবর্তমানস্তু কর্তুর্মূলানি কৃন্ততি ॥

যদি নাত্মনি পুত্রেষু ন চেৎ পুত্রেষু নপ্তৃষু ।

ন ত্বেব তু কৃতোহধর্মঃ কর্তুর্ভবতি নিষ্ফলঃ

অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি ।

ততঃ সপত্নাঞ্জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি ॥

             — মনুসংহিতা , ৪ . ১৭২ - ৭৪

 

গাভী দুহিলেই দুগ্ধ পাই তো সদ্যই ,

কিন্তু অধর্মের ফল মেলে না অদ্যই ।

জানি তার আবর্তন অতি ধীরে ধীরে

সমূলে ছেদন করে অধর্মকারীরে ॥

 

আপনিও ফল তার নাহি পায় যদি ,

পুত্র বা পৌত্রেও তাহা ফলে নিরবধি ।

এ কথা নিশ্চিত জেনো অধর্ম যে করে

রূপান্তর

নিষ্ফল হয় না কভু কালে কালান্তরে ॥

 

আপাতত বাড়ে লোক অধর্মের দ্বারা ,

অধর্মেই আপনার ভালো দেখে তারা ।

এ পথেই শত্রুদের পরাজয়করে ,

শেষে কিন্তু একদিন সমূলেই মরে ॥

 

টীকা :

    ১   সুভাষিতরত্নভাণ্ডাগার - ধৃত পাঠ । মহাভারতের প্রচলিত পাঠ —

                     প্রহরিষ্যন্‌ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ প্রহরন্নপি ভারত ।

                     প্রহৃত্য চ কৃপায়িত শোচেত চ রুদেত চ ॥

    ২   পাঠান্তর : পরাস্ত

    ৩   শেষ ছত্র - দুটির পাঠান্তর —

                     অধর্মেই শত্রুদের করে পরাজয়

                     শেষে কিন্তু সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হয় ।

http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/14463

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|শেষপর্ব/১০|

( নবম পর্বের পর…) … করুণার ধন স্ত্রীধন পিতৃসম্পদে নারীর কোন উত্তরাধিকার নেই। কিন্তু যে ধনটুকুতে নারীর অধিকার স্বীকৃত তা হচ্ছে স্ত্রীধন। তবে এটা এমনই ধন যা নারীর প্রতি করুণার ধনই বলা যায়। মনুশাস্ত্রে ছয় ধরনের স্ত্রীধনের উল্লেখ রয়েছে, যা বণ্টনেও জটিলতা রয়েছে- 'অধ্যগ্ন্যধ্যাবাহনিকং দত্তঞ্চ প্রীতিকর্মণি। ভ্রাতৃমাতৃপিতৃপ্রাপ্তং ষড়বিধং স্ত্রীধনং স্মৃতম্।।' স্ত্রীধন ছয় প্রকার- অধ্যাগ্নি, অধ্যাবাহনিক, [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৯/..|

[ স্বীকারোক্তি : সুপ্রিয় পাঠকদের কাছে প্রথমেই মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি, গত পর্বে উল্লেখ করেছিলাম যে এটা হবে শেষ পর্ব। কিন্তু সে মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে দেখা গেলো, পর্বটা পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনের চাইতেও দীর্ঘ হয়ে যায়। তাই সবার কাছে আরেকটি পর্ব ধার চেয়ে নিচ্ছি। আগামী পর্বে নিশ্চয়ই সিরিজটা শেষ করতে পারবো। ] … (অষ্টম পর্বের পর…) [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৮/..|

(সপ্তম পর্বের পর…) … মনুশাস্ত্রে নারীর গুরুত্ব ও ব্যবহার পুরুষের দৃষ্টিতে যা কিছু নেতি বা নিকৃষ্ট তারই উৎস হিসেবে নারীকে মনুশাস্ত্রে যথেচ্ছভাবে হীন খলচরিত্রে উপস্থাপন ও চিহ্নিত করা হলেও সমাজজীবনে নারীর উপস্থিতির অবশ্যম্ভাবীতার কারণে তাকে গুরুত্ব না-দিয়েও উপায় নেই পুরুষের। কিন্তু তাও হয়েছে পুরুষের অনুকুলে, উদ্দেশ্যমূলক- 'পতির্ভার্যাং সম্প্রবিশ্য গর্ভো ভূত্বেহ জায়তে। জায়ায়াস্তদ্ধি জায়াত্বং যদস্যাং জায়তে [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৭/..|

(ষষ্ঠ পর্বের পর…) … মনুশাস্ত্রে স্ত্রীর কর্তব্য বিবাহ নামক নারী-সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত যে নারীটিকে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী পুরুষের ব্যক্তি-মালিকানায় রক্ষিতা বানানো হয়েছে, সেই নারীকে বহুমাত্রিক ভোগ-ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্ণতৃপ্তি বা সন্তোষ না পেলে পুরুষতন্ত্রের সার্থকতা থাকে না। বর্ণ-নির্বিশেষে নারী সামাজিকভাবে শূদ্রধর্মীতার কারণেই শ্রম বা উৎপাদন-যন্ত্রবিশেষ, পুরুষের উপভোগ্য দেহধারণের কারণে নারী ভোগ্যসামগ্রি এবং গর্ভধারণকারী প্রজননযন্ত্রের কারণে নারী [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৬/..|

(পঞ্চম পর্বের পর…) … মনুর দৃষ্টিতে নারীর প্রকৃতি ও সম্পত্তি বিচার প্রাকৃতিকভাবেই নারী যে পুরুষের মতোই প্রাণীজ আবেগসম্পন্ন জৈব-মানসিক সত্তা, তা পিতৃতান্ত্রিক কূটবুদ্ধিতে অজানা থাকার কথা নয়। তাই নারীকে ক্ষমতা ও অধিকারশূণ্য করে পিতৃতন্ত্রের পূর্ণ-কব্জায় নিতে গিয়ে পুরুষের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক সংকট ও জটিলতা তৈরি হয়েছিলো, শেষপর্যন্ত তা হয়তো গোপন রাখা যায় নি। আর এই [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৫/..|

(চতুর্থ পর্বের পর…) … মনুশাস্ত্রে বিয়ে ও নারীর স্থান বৈদিক শাস্ত্রে বিয়ে হচ্ছে সুনির্দিষ্ট উপভোগ্য নারীকে প্রয়োজনীয় ভোগের নিমিত্তে পুরুষের ব্যক্তি-মালিকানায় শর্তহীন হস্তান্তরের ধর্মসিদ্ধ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া যাতে কিছুতেই ব্যহত না হয় সে লক্ষ্যে 'বিবাহ-সংস্কারকেই স্ত্রীলোকদের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ উপনয়নস্থানীয় বৈদিক সংস্কার' (২/৬৭) হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 'এই সংস্কার সম্পন্ন না হলে স্ত্রীলোকদের দেহশুদ্ধি হয় না' [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৪/..|

(তৃতীয় পর্বের পর…) … মনুসংহিতায় নারী এক কথায় বলতে হলে, মনুশাস্ত্রে নারী হচ্ছে পুরুষের ইচ্ছাধীন কর্ষণযোগ্য ক্ষেত্র বা জৈবযন্ত্র, যাতে পুরুষপ্রভু তার বীর্যরূপ বীজ বপন করে পুত্ররূপ শস্য হিসেবে যোগ্য উত্তরাধিকারী উৎপাদনের মাধ্যমে ধর্মরূপ পুরুষতন্ত্রের বহমান ধারাটিকে সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। এখানে নারী কেবলই এক পুরুষোপভোগ্য জৈবসত্তা। নারীর মনস্তত্ত্ব বা কোনরূপ মানসিক সত্তাকে মনুশান্ত্রে স্বীকারই [...]

|মনু'র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৩/..|

(দ্বিতীয় পর্বের পর…) . জগতসৃষ্টির শাস্ত্রতত্ত্ব পুরুষতন্ত্রের সন্দেহাতীত ধারক ও বাহক হিসেবে প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র মনুসংহিতায় প্রায় শুরুতেই অনিবার্যভাবেই জগতসৃষ্টির হেতু পুরুষরূপী ব্রহ্মার অব্যক্ত স্বরূপের খোঁজ পেয়ে যাই আমরা- 'আসীদিদং তমোভূতমপ্রজ্ঞাতমলক্ষণম্। অপ্রতর্ক্যমবিজ্ঞেয়ং প্রসুপ্তমিব সর্বতঃ।।' এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বসংসার এককালে (সৃষ্টির পূর্বে) গাঢ় তমসাচ্ছন্ন ছিল; তখনকার অবস্থা প্রত্যক্ষের গোচরীভূত নয়; কোনও লক্ষণার দ্বারা অনুমেয় নয়; তখন ইহা তর্ক [...]

http://mukto-mona.com/bangla_blog/?tag=%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE


হিন্দু ধর্মের বিধানঃ মনুসংহিতা

আমরা অনেকেই বলি হিন্দু ধর্মের জাত-পাত এর একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যা এখনো হিন্দুরা অনুসরণ করে চলেছে। কিন্তু কেন? আর কিভাবেই বা এই জাত-পাত এই ধর্মে আসলো? প্রশ্ন গুলোর উত্তর একটু কঠিন না হলেও হিন্দুরা তা জানতেও চায় না। হিন্দুদের বিধানেই কি সেই উচু নিচু জাত বেজাত এর শ্রেণী করা আছে? হয়তো আছে। তা না থাকলে তারা জানলো কিভাবে? একটা লোকাচার দিয়ে এতদুর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে না। এবং সেই বিধানটাই বা কি? আসুন আমরা একটু আলোচনা করি।

হিন্দুদের ধারণা 'মনু' থেকে মানব আর মনুবাদ হচ্ছে 'মানবতাবাদ' বা মনুর বিধান। মনুর অনুশাসন বস্তুত হিন্দুর সংবিধান।

বহুকাল ধরে বিনা প্রতিবাদে চালু থাকায় রাষ্ট্রের আইনের চেয়ে 'মনুর' বিধান অনেক বেশী শক্ত ও দৃঢ়মূল হয়েছে। আইনী বিচারের ক্ষেত্রে একজন বিচার প্রার্থী হয়ে আদালতে যেতে আপ্রে। সন্তুষ্ট না হলে সে যেতে পারে হাই-কোর্টে। কিন্তু 'মনুর' আইনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ব্রাহ্মণ ও মনুবাদী সমাজ সদা নিয়োজিত। সময় পরিবর্তনের সাথে সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে এর সাথে দেশের আইনের পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু মনুর বিধানের আইন পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ মনুর বিধানকে বলা হয় ব্রহ্মার মুখনিঃসৃত বিধান। যেমন ইসলাম ধর্মে 'কোরাণ' হচ্ছে আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান যেমন সম্ভব নয়, তেমনি মনুর বিধানও।

ধর্মের প্রবকতারা খুব বেশী চালাক না হলেও তাদের চেয়ে চালাক এবং ধুরন্ধর হচ্ছে এই বিধান গুলো দিয়ে যারা শাসন করে এসেছে তারা। সেই শাসকরা সাধারণ জনগণকে এতটা প্রভাবিত করেছে যে এই বিধানের বাইরে যাওয়াই সৃষ্টিকর্তাকে অমান্য করা এবং তাঁর শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
মনুর বিধান বলতে আমরা যেটা বুঝি তা হচ্ছে 'মনুসংহিতা' বা 'মনুস্মৃতি'। মনু কতজন কার পুত্র ইত্যাদিতে যাচ্ছি না। কারন সেটা অনেক হিন্দুই জানে। এর চেয়ে বরং যাওয়া যাক 'মনুসংহিতা'য় কি কি আছে।

মনুস্মৃতিতে মোট ২৬৮৪ টি শ্লোক আছে। এই শ্লোকগুলোতে সন্নিবেশিত গুরুত্বপূর্ণ বিধান গুলোর হচ্ছেঃ
ক) পৃথিবীর উৎপত্তি
খ) বিভিন্ন সংস্কারের নিয়ম
গ) ব্রতাচারণ
ঘ) বিবাহের নিয়মাবলী
ঙ) অপরাধের শাস্ত্রীয় বিধি
চ) শ্রাদ্ধবিধি
ছ) খাদ্যাখাদ্য বিধি
জ) বিভিন্ন বর্ণের কর্তব্য
ঝ) বর্ণাশ্রম বিধি
ঞ) স্ত্রী-পুরুষের পারস্পরিক ধর্ম
ট) সম্পত্তি বন্টনের বিধি
ঠ) সংকর বর্ণের বিবরণ
ড) জাতিধর্ম
ঢ) কুলধর্ম
ণ) ব্রাহ্মণের অধিকার ও করণীয় এবং
ত) রাজা-প্রজার পারস্পরিক কর্তব্য ইত্যাদি।

মোটামুটি বলা যায় হিন্দুর দৈনন্দিন সামাজিক ও ধর্মীয় কর্তব্যের অলঙ্ঘনীয় বিধি-বিধান নিয়েই 'মনুস্মৃতি'। এগুলো চালু মনুর নামে।

মনুর ধর্ম চারবর্ণ ভিত্তিক ধর্ম; মনুর মোট ২৬৮৪ শ্লোকের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আর্যদের দেবতা ব্রহ্মার পুত্র মনু তাঁর ধর্মের নাম দিয়েছেন 'সনাতন ধর্ম'। এই ধর্মে তিনি মানুষকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ

১) ব্রাহ্মণ
২) ক্ষত্রিয়
৩) বৈশ্য ও
৪) শূদ্র

এর প্রথম তিনটি দ্বিজ। এই কাঠামো দ্বারা তিনি ব্রাহ্মণকে প্রকৃতপক্ষে দেবতার আসনে বসিয়ে একটি স্থায়ী বৈষম্যপূর্ণ ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেয়েছেন। প্রতিটি বিধানের কেন্দ্রবিন্দুতে ব্রাহ্মণ। তাঁর স্বার্থকে রক্ষা, সংহতকরার নিরঙ্কুশ করাই হচ্ছে মনুর একমাত্র উদ্দেশ্য। এর জন্য যত ধরণের নিষ্ঠুরতা দরকার মনু তা অনায়সেই করেছেন। শুরু করেছেন চার বর্ণের অলৌকিক ও অবিশ্বাস্য জন্ম কাহিনী দিয়ে। নিম্নে একটু দেখি কোথা থেকে এই বর্ণ গুলোর জন্ম হয়ঃ

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্রের সৃষ্টি যথারীতি মুখ, বাহু, ঊরু ও পদ থেকে। কোন মানুষের জন্ম যে মুখ বাহু ঊরু ও পদ থেকে যে হয় না এ কথা মনু কি জানতেন না, তা তো বিশ্বাস করা কঠিন। তবু এমন ধরণের একটা কাজ করলেন কেন? করেছেন, করেছেন অনেক ঠান্ডা মাথায়। শুধু ব্রাহ্মণ, শূদ্র ও নারীদের সম্পর্কে মনুর বিধানগুলো জানলেই এর ঠান্ডা মস্তিকের জটিল বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যাবে।

আসুন ব্রাহ্মণদের জন্য মনু কি কি বলেছেন তা দেখে নেওয়া যাকঃ

ক) স্রষ্টা ব্রাহ্মণদেরকে মুখ থেকে সৃষ্টি করেছেন ( ৩১ নং শ্লোক)
খ) স্থাবর জঙ্গমাদির মধ্যে প্রাণী শ্রেষ্ঠ, প্রাণীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীরা শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমানদের মধ্যে মানুষ এবং মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ (৯৬ নং শ্লোক)
গ) জাতমাত্রই ব্রাহ্মণ পৃথিবীতে সকল লোকের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হন এবং সকল সৃষ্টি পদার্থের ধর্মসমূহ রক্ষার জন্য তিনিই প্রভু (৯৯)
ঘ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তাঁর সবই ব্রাহ্মণের সম্পত্তি। শ্রেষ্ঠত্ব ও অভিজাত্য হেতু ব্রাহ্মণ সবই পাওয়ার যোগ্য (১০০)
ঙ) ব্রাহ্মণ নিজের অন্নই ভক্ষণ করেন, নিজের বস্ত্র পরিধান করেন এবং নিজের দ্রব্য দান করেন। অন্য লোকেরা যা ভোগ করে তা ব্রাহ্মণের দয়া হেতু করে (১০০)

উক্ত শ্লোক গুলো থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় ব্রাহ্মণদের মনু কোথায় রেখেছেন।

এবার দেখি শূদ্র সম্পর্কে মনু কি বলেনঃ

ক) শূদ্র বা দাসদের নিজস্ব কোন সম্পত্তি রাখার অধিকার নেই।
খ) দাস ও শূদ্রের ধন ব্রাহ্মণ অবাধে নিজের কাজে প্রয়োগ করবেন।
গ) শূদ্র অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে না। কারণ তাঁর সম্পদ থাকলে সে গর্বভরে ব্রাহ্মণের উপর অত্যাচার করতে পারে।
ঘ) প্রভু কর্তৃক পরিত্যক্ত বস্ত্র, ছত্র, পাদুকা ও তোষক প্রভৃতি শূদ্র ব্যবহার করবে।
ঙ) প্রভুর উচ্ছিষ্ট তাঁর ভক্ষ্য।
চ) দাস বৃত্তি থেকে শূদ্রের কোন মুক্তি নেই।
ছ) যজ্ঞের কোন দ্রব্য শূদ্র পাবে না।
জ) ব্রাহ্মণের পরিবাদ বা নিন্দা করলে শূদ্রের জিহব্বাছেদন বিধেয়।
ঝ) ব্রাহ্মণ শূদ্রের নিন্দা করলে যৎসামান্য জরিমানা দেয়।
ঞ) ব্রাহ্মণ কর্তৃক শূদ্র হত্যা সামান্য পাপ। এই রুপে হত্যা পেঁচা, নকুল ও বিড়াল ইত্যাদি হত্যার সমান।
ট) শূদ্র কর্তৃক ব্রাহ্মণ হত্যার বিচার মৃত্যুদণ্ড।
ঠ) শূদ্র সত্য কথা বলছে কিনা তাঁর প্রমাণ হিসেবে তাকে দিব্যের আশ্রয় নিতে হবে। এতে তাকে জলন্ত অঙ্গারের ওপর দিয়ে হাটতে হয় অথবা জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। অদগ্ধ অবস্থায় অথবা জলমগ্ন না হয়ে ফিরলে তাঁর কথা সত্য বলে বিবেচিত হবে।
ড) দ্বিজকে (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য) প্রহার করলে শূদ্রের হাত কেটে ফেলা বিধেয়।
ঢ) ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসলে তাঁর কটিদেশে তপ্তলৌহদ্বারা চিহ্ন একে তাকে নির্বাসিত করা হবে অথবা তাঁর নিতম্ব এমনভাবে ছেদন করা হবে যাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
ণ) দ্বিজের ন্যায় উপবীত বা অন্যান্য চিহ্ন ধারণ করলে শূদ্রের মৃত্যুদণ্ড বিধেয়।
ত) যে পথ দিয়ে উচ্চ বর্ণের লোকেরা যাতায়াত করেন, সেই পথ শূদ্রের মৃতদেহও বহন করা যাবে না।

আপনারা বলবেন এই সকল বিধান এখন হিন্দু ধর্মে মানা হয় না। এ ধরণের উক্তি যারা এখন বলেন তারা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বলেন তা দেখার বিষয়। কারন গ্রামে গেলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায় তাঁর রেস যে এখনো কাটেনি। হয়তো মৃত্যুদন্ডের মত শাস্তি নেই। কিন্তু সেই মানসিকতা এখনো উঠে যায় নি।

এবার দেখা যায় নারীর বিষয় কি কি বলেছেনঃ

নারী সম্পর্কেও মনুর বিধান কঠোর ও বৈষম্যমূলক। নারীর বিষয়ে কিছু গৌরবমূলক থাকলেও সাধারণভাবে মনুর দৃষ্টিতে শূদ্র এর অবস্থান থেকে কোন মতেই উচ্চ নয়।

ক) স্ত্রীলোক পতিসেবা করবে। তাঁর স্বাধীন কোন সত্তা নেই।
খ) নারীকে কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী, ও বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করবে।
গ) স্ত্রীলোকের পৃথক কোন যজ্ঞ, ব্রত বা উপবাস বিধান নেই।
ঘ) স্ত্রীলোকের সাক্ষী হওয়ার বা স্বাধীনভাবে ঋণ করার অধিকার নেই।
ঙ) বিধবা সাধ্বী নারী ব্রহ্মচর্য পালন করবে।

এই হলো মোটামুটি হিন্দু ধর্মের বৈষম্য।

http://blog.banglareport.com/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%83-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%81/bd


সোমবার, ০৫ নভেম্বর ২০১২

হিন্দু পারিবারিক আইন 'সংস্কার' এবং  প্রাসঙ্গিক ভাবনা
ডা. দিলীপ দে

প্রাক্কথনঃহিন্দু ধর্ম ও সভ্যতা  বলতে আমরা আজকে যা বুঝি তার শুরু মূলতঃ আর্য যুগ থেকে। তবে তার আগেও হিন্দু ধর্ম ভারতীয় ভূখন্ডে প্রচলিত ছিল যার বিবিধ প্রমান  আমরা অন্যূন ছয় হাজার বছর আগের মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতায় পাই। আমরা এতকাল জেনে এসেছি আজকের আফগানিস্তানে আর্যরা বিশাল বসতি স্থাপন করেছিল, বেদ সেখানে অপুরুষেয় প্রকৃতিতে আবির্ভূত হয়েছিল। তবে মাত্র  কিছুদিন আগে জানা যাচ্ছে তারও আগে হরপ্পা সভ্যতার অনুরূপ কেন্দ্র সেখানেও ছিল এবং বর্তমানের প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ সেটাই প্রমাণ করে।

হিন্দু ধর্ম বলতে আমরা মূলতঃ বেদ, বেদাঙ্গ, পুরাণ, শ্রীমদাভগবতগীতা এগুলোকেই বুঝি। এর মধ্যে আবার যুগ ভাগ হয়েছে।  প্রাচীন, মধ্য যুগ-এ ছিল হিন্দুদের ধর্ম-ভিত্তিক সমাজ। এখানে আরও একটা বিষয় লক্ষনীয়- আর্যরা এদেশে এসে তাদের ধর্ম এখানকার আদিবাসীদের উপর চাপিয়ে দেয়নি, বরং গ্রহণও করেছে। এই শেষোক্তদের মাতৃতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে আমাদের অনেক পূজিত দেবদেবীর অধিকাংশ নারীরূপে আবিভূতা। অনার্যদের যারা এই সংশ্লেষকে সহ্য করেছে তারা আর্য-অনার্যদের সম্মিলিত সমাজে থেকেছে, আর যারা তা মেনে নিতে পারেনি তারা দুরবর্তী দুর্গম কোন অঞ্চলে গিয়ে  নতুন বসত শুরু করে নিজেদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বজায় রেখেছে।যে কোন সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সামাজিক বলিষ্ঠতারই লক্ষণ। প্রাচীন যুগ থেকে হিন্দু সমাজে তার কোন অভাব ছিলনা। হিন্দু বিবাহ কোন 'চুক্তি' বা কন্ট্রাক্ট নয়, এটা হচ্ছে পবিত্র ধর্মীয় বন্ধন। যুগে যুগে এটা নারীর কোন ক্ষতি করেনি, বরং একটা কল্যাণ-কামীতা এর মধ্যে দিয়ে বহুলাংশে প্রকাশ পেয়েছে। মনু, কৌটিল্য, ভৃগু, ভরদ্বাজ থেকে শুরু সবাই হিন্দু নারীর ধর্ম ভিত্তিক অধিকার নিয়ে ভেবেছেন এবং তা নিয়ে কাজ করেছেন। হিন্দু পারিবারিক আইন 'সংস্কার'  ও বাংলাদেশের এন জি ও-কুলঃবাংলাদেশের হিন্দুরা- 'হিন্দু পারিবারিক আইন' সংস্কার কখনো চায়নি, আর এই মর্মে মাথার দিব্যি দিয়ে কখনো দাবীও জানায়নি, অথচ সরকার এই আইন 'সংস্কার' করলো। কিছু  এন জি.ও.-দের ভাষায়- এর উদ্দেশ্য নাকি হিন্দু নারীকে নাকি তার পিতৃ- সম্পত্তির অধিকার দেওয়া, যেন এতটা কাল ধরে হিন্দু নারীরা অধিকার বিহীন হয়ে একান্তে অস্পৃশ্য জীব হয়ে দিন গুনছিল আর এন.জি.ও'র ভগীরথরা এসে তাদের একেবারে উদার-মুক্ত করে দিল।  হিন্দু পরিবারে- সংসারের চাবির গোছা, সোনাদানা'র আড়ত, আর ব্যাংকের চেকবুক মেয়েদের হাতে  থাকে। বোধকরি সেটা এই কমলা লেবুর বদলে ভিটামিন সি খাওয়া ভাড়াটে এন. জি. ও. গুলো জানেনা; এ আইন এতকাল হিন্দুদের উপর একটা নিরাপত্তা বর্ম হিসেবে কাজ করেছে; অথচ বর্তমানের সংস্কারকৃত এ আইনের  মাধ্যমে এখন সেই বর্ম খুলে ফেলে দিয়ে হিন্দু সমাজটাকে বহিরাক্রমণের সহজলভ্য শিকারে পরিণত করা হলো। একেবারেই হিন্দু মতামতের তোয়াককা না করে গুটিকতেক  হিন্দু পাতি নেতা ও এন.জি.ও.-দের  কথা ধরে সরকার  নিতান্ত  এই ধর্ম-নির্ভর আইনটির উপর ছুরি কাঁচি চালালো। হিন্দুরা ধর্ম-সহিষ্ণু জাতি। কিন্তু  সম্পূর্ণ অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে এ আইন সংস্কার তার ধর্মীয়  অনুভূতিতেও  প্রবল আঘাতও হেনেছে। এটার ফলাফল এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজের  সাবির্বক কল্যাণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই ইদানিং এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়- হিন্দু জনসংখ্যা গত কয়েকবছরে কয়েক লক্ষ কমে গেছে।দুটো মোদ্দা কথা আমলে নিলেই এ দুর্ভাগ্যজনক  আইনী দুর্ঘটনা ঘটতোনাঃ  ১).প্রথমতঃ বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশ পিতৃতান্ত্রিক। এ নিয়ে আক্ষেপ বৃথা। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়ও আজকাল আর নারীর সম্পত্তির মালিক হতে বাধা নেই। তবে ধর্ম হিন্দুনারীকে বহু পূর্ব থেকেই সম্পত্তির অধিকার দিয়ে এসেছে। যেমন বৈদিক ধর্ম মতে আমরা দেখি যদি কোন পিতামাতার পুত্র ও কন্যা উভয়ই থাকে তবে ''ঔরসপুত্র (দুহিতাকে)পৈত্রিক ধন দেননা। তিনি তাকে ভর্তার প্রণয়ের আধার করেন। যদি পিতামাতা পুত্র ও কন্যা উভয়ই উৎপন্ন করেন তাহলে তাদের মধ্যে একজন উৎকৃষ্ট ক্রিয়াকর্ম করেন। এবং অন্যজন সম্মানিতা হন। ''(ঋগ্বেদ সংহিতা-৩/৩১/২)। আমরা জানি শাস্ত্রীয় বিধান মতে পুত্র বর্তমান থাকলে তিনিই শ্রাদ্ধ ও পিন্ডদানের অধিকারী হন। এটা ধর্মীয় অনুশাসন এবং এর পরিবর্তনের কোন উপায় নেই। এটা পরিবর্তন করলে খোদ ধর্মকেই পরিবর্তন করতে হয়,  ঢেলে সাজাতে হয়, অথবা ধর্মবিরাধী আইন প্রণয়ন করতে হয়। এখন দেখা যাক সম্পত্তির জন্য কি ধরণের অধিকার ধর্ম নারীকে দিয়েছে। পুত্র সম্পদের অধিকারী হলেও নারী সম্মানিতা হবার অধিকারী।  অর্থাৎ তার  বিয়েতে পুত্রের প্রাপ্ত কিছু সম্পত্তি ব্যয়ের কথা পরোক্ষ ভাবে এসে যাচ্ছে। এছাড়া একজন কন্যার বিবাহ হলে তিনি অন্য একজনের স্ত্রী, তার স্বামী তার শ্বশুরের সম্পত্তির অধিকারী। তবে কন্যার যদি বিবাহ না হয় তাহলে কি হবে। এমতাবস্থায় প্রথমতঃ তিনি পিতৃগৃহে বসবাসের অধিকারীনি। শুধু তাই নয় যাবজ্জীবন পিতামাতার  সঙ্গে বসবাস রত কন্যার সেকালে পিতৃধনে অধিকার ছিল। ঋগ্বেদের একটি সূক্তে আছে-' হে ইন্দ্র, যাবজ্জীবন পিতামাতার সঙ্গ বসবাসরত অনূঢ়া নারী যেমন  নিজের পিতৃকুল থেকে ভাগ প্রার্থনা করে , সেরূপ আমিও তোমার নিকট থেকে ধন যাচনা করি। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ৩/৩১/২)। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে যাবজ্জীবন পিতৃগৃহে অবস্থান রত অনূঢ়া কন্যার পিতৃসম্পত্তিতে অধিকার ছিল।  পরবর্তীতে কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে এবং অন্যান্য শাস্ত্রকারগণ এই বেদবাক্য মেনে নিয়ে একটা পরম্পরা প্রতিষ্ঠা করেন। মনুর বিধানে দেখি যে তিনি কন্যার সম্মানার্থে তার বিবাহকালে  যৌতুক হিসাবে পিতৃ-সম্পত্তির এক চতুর্থাংশের দাবী কন্যার নৈতিক দাবী বলে মেনে নিয়েছিলেন, মনুস্মৃতিতে আমরা সেই ধারণা পাই, (মনুস্মৃতি, ৯/১১৮)। যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতি'তে-ও আমরা অনুরূপ সমাধান পাই। ঋগ্বেদের দশম মন্ডলে  আছে ''যেরূপ জামাতাকে কন্যা দেবার সময় তাকে বসনে-ভূষণে অলংকৃত করে, তদ্রূপ এই স্তবককে আমি অলংকৃত করিতেছি'।(ঋগ্বেদ সংহিতা-১০/৩৯/১৪) ।এ মন্ডলের অন্যত্র আছে, 'পতি গৃহে যাবার সময় সূর্য- সূর্যাকে (সূর্যকন্যাকে) যে উপঢৌকন দিয়েছিলেন তা অগ্রে অগ্রে চললো'(১০/১৮/১৩)। ঋগ্বেদে সূর্যাকে 'প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে 'যেতে বলা হয়েছিল;ঋগ্বেদ সংহিতা (১০/৮৫/২০) । লক্ষনীয় যে, কোন হিন্দু গৃহে নবাগত পুত্রবধূকে অনেক উপঢৌকন দিয়ে শ্বশুড়ের ঘরে বরণ করার ধর্মীয় রেওয়াজ নেই। এটা কেবল স্বামী গৃহে যাত্রার সময় পিতৃগৃহ থেকে তার প্রাপ্য। সুতরাং  বুঝাই যাচ্ছে যে পিতৃ সম্পত্তিতে নারীর অধিকার হিন্দু ধর্মীয় মর্মমূল থেকে উৎসারিত এবং মীমাংসিতভাবে বর্তমান। তারই ধারাবাহিকতায় তারই আলোকে নারী অধিকার নিশ্চিতকরণে বহু শত বছর পূর্বে হিন্দু পারিবারিক আইনের উদ্ভব। ২). দ্বিতীয়তঃ, আচারে আচরণে নিজেকে কেউ হিন্দু বলে দাবী করলে  তাকে ধর্মটা মানতে হয়, ধর্ম মেনে বিয়ে করলে বিবাহোত্তর মেয়েদের 'গোত্রান্তর ' হয়। গোত্রান্তরিত নারী ধর্ম মেনে  পিতার সম্পত্তির মালিক হতে পারেনা। গোত্রান্তরিত নারীকে দায়বদ্ধতা ছাড়া  পিতার আবাসভূমির ভূমির অধিকার দিতে চাইলে ধর্মীয় এই ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করতে হয়। ধর্মে এটার স্বীকৃতি নেই অথচ ধর্মকে ডিঙ্গিয়ে সেটাকে বৈধ করার আবদার ও বায়না ধরা হয়েছে। সেটাই  হয়েছে। সপিন্ড, সকুল্য, সমানোদক -না হলে ধর্মীয় নিয়মে সম্পত্তি'র উত্তরাধিকারী হওয়া যায়না, বিবাহিতা  নারী যেহেতু গোত্রন্তরিতা সেহেতু এর কোনটিতেই পড়েনা। তাছাড়া পুত্রের সম্পত্তির অধিকার  একটা পারিবারিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত ।কিছু ফুট নোট বাদ দিলে হিন্দু ধর্ম নারীকে গৃহের কল্যাণী হিসেবে দেখেছে -প্রসঙ্গ রামায়ণ-মহাভারতঃ হিন্দু ধর্মে নারী মঙ্গলময়ী। মহাভারতের যুগে আমরা লক্ষ্য করি  সেদিনের ধর্ম নির্ভর সমাজে  নারীর প্রতিপত্তি। প্রকৃতপক্ষে পুরো মহাভারত মহাকাব্যেও গাঁথুনীই হচ্ছে তৎকালীন নারী সমাজ। দ্রৌপদী , কুন্তী, গান্ধারী -এদের বাদ দিলে মহাভারতের আর কিছুই থাকেনা। মাদ্রী নিশ্চুপ পার্শ্ব চরিত্র হলেও তার ভূমিকাও প্রগাঢ়। চিত্রাঙ্গদা উলুপী, সুভদ্রা -এরা কেউই বৈচিত্রে বা বর্ণাঢ্যতায় সে যুগের পুরুষের চেয়ে কম নন। রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্গদা' নৃত্যনাট্যে সে যুগের যুদ্ধে পারদর্শী এক আদর্শ স্বাধীন নারী চিত্রাঙ্গদা'কে তুলে ধরেছেন । সমাজের ধর্ম নির্ভর রীতি -নীতিকে তীর্যকভাবে ভেদ না করেও নারী মহিয়সী হতে পেরেছেন কারণ ধর্ম কিম্বা এতে বলা যায় সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম তাদের সেই স্বাধীনতা দিয়েছে। বহুক্ষেত্রে পুরুষের চরিত্র চিত্রণে এদের সম্পূরক ভূমিকাও বর্তমান। তবে তাতে নারীর মান কিছুমাত্র ক্ষুন্ন হয়নি।।  (চলবে)লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রবন্ধকার ও গবেষক

http://www.dainikpurbokone.net/index.php?option=com_content&view=article&id=54508:2012-11-04-18-45-34&catid=9:2011-05-26-03-33-23&Itemid=5


মনুস্মৃতিতে নারী

লিখেছেনঃ svsbd 
ক্যাটেগরিঃ ধর্ম জিজ্ঞাসা
 

ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারী

অনেকে অভিযোগ করেন, মনুসংহিতা সামগ্রিকরূপে একটি নারীবিরোধী শাস্ত্র। এতে মাতৃশক্তি বা নারীকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। একথা বহুজন বিদিত যে, মনুসংহিতা নামক শাস্ত্রটিতে বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। এর মানে এই যে- জাতিগত বা সময়গত কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই পবিত্র গ্রন্থটিতে অনেকে কাঁটাছেড়াঁ করা হয়েছে। তা যাই হোক, এই জাল শ্লোকগুলো আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। কেউ যদি আসল মনুসংহিতা শাস্ত্রটি অধ্যয়ন করেন তবে তিনি গর্বভরে দাবি করতে পারবেন যে, পৃথিবীতে বেদব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থে নারীদের প্রতি এত সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। আর দেয়া হয়নি এত অধিকারও। এমনকি মনুসংহিতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হলে আধুনিক নারীবাদী বইগুলোর চিন্তাধারারও উন্নয়নের প্রয়োজন।

আমরা এখন এমন একটি শ্লোক পড়ব যার অর্থ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে নারীরাই হচ্ছে কোন উন্নত সমাজের ভিত্তিস্বরূপ। এটি মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ের (ধর্মসংস্কার প্রকরণ) ৫৬তম শ্লোকঃ

"যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, দুর্দশা আর ব্যর্থতার গ্লানি তাদের বয়ে বেড়াতে হয়"।

এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। মহর্ষি মনুর এই উপদেশ অবহেলা করে আজ আমরা আমাদের সকল মহত্ত্ব সত্ত্বেও দাসে পরিণত হয়েছি।

বহিরাক্রমনের পর শত শত বছর আমরা তাঁর কথায় কর্ণপাত না করায় আমাদের অবস্থা বাজে থেকে নিকৃষ্ট পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মত মহান সমাজ সংস্কারকদের কল্যাণমুখী পদক্ষেপের কারণে আজ আমরা ধীরে ধীরে অতীতের গৌরবময় স্থানে ফিরে যাচ্ছি, যেখানে নারীদের দেবতার ন্যায় সম্মান করা হতো।

আজকের দিনেও অনেক রক্ষণশীল ইসলামিক দেশ নারীদের অর্ধ-বুদ্ধিমান, দুইজন নারী একজন পুরুষের সমান এবং নারীকে পুরুষের সমতুল্য সম্মান পাওয়ার অযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেসব স্থান নরকের চেয়েও জঘণ্য। ইউরোপীয়রাও বহুকাল যাবত্ নারীদের হেয়কারী বাইবেলের মতবাদ গ্রহণ করে আসছিল এবং এতকাল ইউরোপ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্থানগুলোর একটি। এজন্যই বোধ হয় ভারতীয়দের বিদেশযাত্রা নিষেধ করা হয়েছিল।

কিন্তু খ্রীস্টিয় সংস্কারযুগে ঘটনাচক্র পাল্টে যায়। বাইবেলকে গুরুতরভাবে গ্রহণ করা বন্ধ হয়। ফলে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এখন আবার নারীদের অবস্থান ইন্দ্রিয়ভোগের উপকরণের ন্যায়; সম্মানীয় মাতৃশক্তির মর্যাদা সেখানে নারীদের নেই। আর তাই আজও বিবিধ জাগতিক উন্নতিলাভের পরেও পাশ্চাত্য সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক শান্তির অভাব খুবই প্রবল।

চলুন, মনুসংহিতা থেকে আরও কিছু শ্লোক দেখা যাক। আর পাশাপাশি তা আমরা সমাজে প্রয়োগের চেষ্টা করি।

 

সুখী নারীর গুরুত্বঃ

"একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন"। (মনুসংহিতা ৩/৫৫)

"যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে"। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)

"যে বংশকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রীলোকেরা অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ করেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়"। (মনুসংহিতা ৩/৫৮)

"যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে"। (মনুসংহিতা ৩/৫৯)

"যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে"। (মনুসংহিতা ৩/৬২)

"স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ হয়। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী"। (মনুসংহিতা ৯/২৬)

আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের 'ঘরের লক্ষ্মী' বা 'গৃহলক্ষ্মী' বলা হয়।

"প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উত্পাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়"। (মনুসংহিতা ৯/২৮)

অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উত্স।

"নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য"। (মনুসংহিতা ৯/৯৬)

তাই যারা বেদ ও বৈদিক আচার অনুষ্ঠানে মহিলাদের অংশগ্রহণ অস্বীকার করেন তারা বৈদিক হিন্দু ধর্ম তথা মানবধর্ম বিরোধী।

"জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কখনো মাতা-পিতা, ভগিনী, পুত্রবধূ, পুত্র, স্ত্রী, কন্যা ও ভৃত্যবর্গ –এদের সাথে বিবাদ করবেন না। (মনুসংহিতা ৪/১৮০)

"যে পিতা কন্যাকে বিবাহযোগ্য সময়ে কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, যে স্বামী স্ত্রীর ন্যায্য দাবী পূরণ না করেন এবং যে সন্তান তার বিধবা মাতার রক্ষণাবেক্ষণ করেন না, তারা সকলেই নিন্দার পাত্র হন"। (মনুসংহিতা ৯/৪)

 

বহুবিবাহ পাপঃ

"পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম"। (৯/১০১)

তাই যে সব সমাজ বহুবিবাহ অথবা যৌন-দাসত্ব ও সাময়িক বিবাহের মতো জঘণ্য আচারকে অনুমোদন করে তারা ধর্মসূত্র লঙ্ঘনের দায়ে দুর্দশা ভোগ করতে বাধ্য।

 

স্ত্রীলোকের স্বাতন্ত্র্যঃ

"নারীদের টাকা-পয়সা ঠিকমত হিসাব করে জমা রাখা এবং খরচ করা, গৃহ ও গৃহস্থালী শুদ্ধ রাখা, ধর্ম-কর্ম সমূহের আয়োজন করা, অন্ন প্রস্তুত করা ও শয্যাসনাদির তত্ত্বাবধান করা –এসব কাজে স্ত্রীলোকদের স্বাতন্ত্র্য ও নেতৃত্ব দানে স্বাধীনতা প্রদান করবে। (মনুসংহিতা ৯/১১)

এই শ্লোকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীলোকের ধর্মকার্যে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীলোকেরা বরং তাতে নেতৃত্ব দেবেন। তাই যারা বলে স্ত্রীলোকদের বেদ অভ্যাস কোন প্রয়োজন নেই তারা অবশ্যই বেদ ও মনুস্মৃতির বিরোধী। এসব সংকীর্ণ মূর্খ ব্যক্তিরাই জাতির দূর্দশার কারণ। এরকম স্ত্রীজাতির মানহানিকর মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিরা অসহনীয়।

"যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে 'অরক্ষিতা' থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মরক্ষায় তত্পর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা 'সুরক্ষিতা' হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল"। (মনুসংহিতা ৯/১২)

এই শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নিরাপত্তার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখা নিষ্ফলতার সামিল। বিপরীতক্রমে তাকে নিরাপদ রাখতে হলে তাকে অধিকার দিতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে নিজেদের তারা সুরক্ষিত রাখতে পারে আর কুসঙ্গ যেন তাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে। মেয়েদের চারদেয়ালে আবদ্ধ করে রাখা মনুর মতাদর্শের বিরোধী।

 

নারীর নিরাপত্তা বিধান:

"স্ত্রীলোককে রক্ষণরূপ ধর্ম সকল বর্ণের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অর্থাত্ শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। তাই অন্ধ, পঙ্গু ও দুর্বল স্বামীরাও নিজ নিজ স্ত্রীকে যত্নপূর্বক রক্ষা করবে"। (মনুসংহিতা ৯/৬)

"স্ত্রী জাতি সবসময় নিজেদের অনাচার ও অধর্ম বা পাপ থেকে দূরে রাখবেন। কারণ স্ত্রীর চরিত্র নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হবার উপক্রম হয়"। (মনুসংহিতা ৯/৫)

"স্ত্রীলোক কখনো পিতা, স্বামী বা পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। কারণ তা পিতৃকুল ও পতিকুল উভয়কুলকেই কলঙ্কিত করে তোলে"। (মনুসংহিতা ৫/১৪৯)

একথা দ্রষ্টব্য যে, ৯/১২ নং শ্লোক হতে বোঝা যায় এই সুরক্ষা কখনোই কোন সংকীর্ণতা বা বাধানিষেধ বোঝায় না। যে জাতি বিপথগামী ব্যক্তিদের আক্রমন হতে স্ত্রীলোকদের রক্ষা করে না, তারা তাদের সর্বনাশের ভাগ্য নিজেরাই লিখে থাকে।

এই কারনেই যখন পশ্চিমা ও মধ্য এশিয়া থেকে বর্বর দস্যুরা ভারতবর্ষে হানা দিয়েছিল, আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের নারীদের সম্মান রক্ষার্থে নিজেদের জীবন পর্যন্ত উত্সর্গ করে গেছেন ।

 

কন্যাদের বিবাহ:

"কন্যা বিবাহ উপযুক্ত কাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পিতৃগৃহেই অবস্থান করবে সেও ভাল, তবুও গুণহীন বরের (অর্থাত্ বিদ্যা, শৌর্য, সুন্দর চেহারা, উপযুক্ত বয়স, মহত্ত্ব, লোক ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ দ্রব্যাদি বর্জন এবং কন্যার প্রতি অনুরাগ –এইগুলি নেই যে পাত্রের) হাতে কন্যাকে দান করবে না"। (মনুসংহিতা ৯/৮৯)

"কুমারী কন্যা ঋতুমতী হলেও তিন বত্সর পর্যন্ত গুণবান বরের অপেক্ষা করবে; ঐ সময়ের পরও যদি পিতা তার বিবাহ না দেন তাহলে এ পরিমাণ কাল অপেক্ষার পর কন্যা নিজসদৃশ পতি নিজেই বেছে নেবেন"। (মনুসংহিতা ৯/৯০)

"ঋতুমতী হওয়ার তিন বত্সর পরেও যদি ঐ কন্যা পাত্রস্থ করা না হয়, তাহলে সে যদি নিজেই পতি বরণ করে নেয়, তার জন্য সে কোন পাপের ভাগী হবে না। কিংবা সেই পতিরও কোন পাপ হবে না"। (মনুসংহিতা ৯/৯১)

 

নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার:

"কন্যা পুত্রের সমান। তার উপস্থিতিতে কেউ তার সম্পত্তিতে অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারেন না"। (মনুসংহিতা ৯/১৩০)

"মাতার যা স্ত্রীধন থাকবে, তা কুমারী কন্যারই থাকবে"। (মনুসংহিতা ৯/১৩১)

তাই মনুর মতে, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার পুত্রের সমান অধিকার থাকার কারণে, মায়ের সম্পত্তিতে তাদের একক অধিকার থাকবে। এটি করার কারণ মেয়েদের যাতে গলগ্রহ হয়ে থাকতে না হয়। কারণ, একজন মর্যাদাপূর্ণ নারীই সুখী পরিবার তথা সমাজ গঠনের মূল স্তম্ভ।

"যদি কোন ব্যক্তির রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় বা স্ত্রী না থাকে, তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের মধ্যে সমানভাগে বণ্টিত হবে। যদি জ্যেষ্ঠভ্রাতা ভগ্নিদের ধনদানে অস্বীকার করে তাহলে রাজা তাদের শাস্তি দেবেন"। (মনুসংহিতা ৯/২১২-২১৩)

"যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন"। (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯)

 

যৌতুক দানে নিষেধ:

"কন্যার আত্মীয়রা যদি কন্যার স্ত্রীধন (সম্পত্তি, ধনাদি, স্ত্রীযান বা বস্ত্রাদি) অপহরন করে তবে তারা অধোগতি প্রাপ্ত হয়। (মনুসংহিতা ৩/৫২)

তাই মনুস্মৃতিতে যে কোন যৌতুক নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই মেয়েদের সম্পত্তিতে কেউ হাত দিতে পারবে না।

পরবর্তী শ্লোকে এই বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যে কোন স্পর্শযোগ্য (tangible) সম্পত্তির সামান্যতম আদান-প্রদান মহতী বিবাহের নীতির বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে মনু বলেন যে, যৌতুকযুক্ত কোন বিবাহ হচ্ছে 'আসুরী বিবাহ'।

 

নারীদের ক্ষতিকারীদের কঠোর শাস্তি:

"নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে"। (মনুসংহিতা ৮/৩২৩)

"যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে"। (মনুসংহিতা ৯/২৩২)

"যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়"। (মনুসংহিতা ৮/৩৫২)

মজার হলেও আজকাল অনেক বিচারক নপুংসকরণকেই ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি বলে রায় দিচ্ছেন। তারা মনে করেন এতে করে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাওয়া ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব।

"যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে"। (মনুসংহিতা ৮/২৭৫)

"যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে"। (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯)

 

নারীর অগ্রাধিকার:

নারীর অগ্রস্থান দেবার প্রবাদবাক্যটিও মনে হয় মনুস্মৃতি থেকে উদ্ভব হয়েছে।

"বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য"। (মনুসংহিতা ২/১৩৮)

"নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে"। (মনুসংহিতা ৩/১১৪)

 

আমরা কি এবার মাতৃশক্তির প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক এই সত্য মনুবাদ সমাজে প্রয়োগ করতে একসাথে কাজ করতে পারি না? এছাড়া আর কিভাবে সমাজ, জাতি ও বিশ্বে উন্নতি ধরে রাখা সম্ভব?

 

তথ্যসূত্র: ড. সুরেন্দ্র কুমার, পি.টি গঙ্গাপ্রসাদ উপাধ্যায় এবং স্বামী দয়ানন্দ সারস্বত রচনাবলী


No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk