ভন্ড রাজাকারের পরিনতি এমনই হয়---হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সংবিধান ও ইসলামবিরোধী!
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একাধিক বক্তা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দেশের সংবিধান ও ইসলামবিরোধী। হেফাজতের নাম করে এগুলো মূলত জামায়াতে ইসলামীর দাবি।
গতকাল শনিবার 'হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এ মত দেন। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে এদের প্রতিরোধে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশ ও জাতি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দাবি। জামায়াত যখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়, তখন তারা দুটি দাবি তোলে। একটি ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি, আরেকটি আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম—তা ঘোষণার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়।
সমাজকল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, জামায়াত মাঠে নেমেছে তাদের নেতারা যেন শাস্তি না পান এ জন্য।
আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের জন্য দেশে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন, এটা কেউ বলছেন না। তিনি সংবাদপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে, কোনো নৈতিকতা না মেনে ধর্মীয় উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি করেছে, পাকিস্তান আমলে তা শোনা গেছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে গড়া সম্ভব?
হেফাজতকে জামায়াতের সামাজিক সংগঠন আখ্যায়িত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা।
নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম দাবি শুধু সংবিধান পরিপন্থী নয়, এগুলো ইসলামবিরোধী। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য বিচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বিবি খাদিজা (রা.) মক্কা শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলামে নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মোটেও নিষিদ্ধ নয়।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, যাঁরা ইসলামকে হেফাজতের কথা বলছেন, তাঁরা কোরআন ও ইসলামবিরোধী কথা বলছেন। আল্লাহর দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্য সব ধর্মের মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্লাসফেমি আইন হবে না, এ জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে, এটা বলার কোনো দরকার ছিল না। দেশের সংবিধান ও আইন আছে, সে অনুসারে দেশ চালাতে হবে।'
'উগ্রবাদী গোষ্ঠীর' সঙ্গে আলাপ-আলোচনাকে নিরুৎসাহিত করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যখনই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওই গোষ্ঠীগুলোই লাভবান হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান লড়াইয়ে অংশ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্ম ব্যবসায়ী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজ।
গতকাল শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের জাতীয় সম্মেলনে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, এটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ লড়াই থেকে কারও পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অতীতের মতো এ লড়াইয়েও সবাইকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা; সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা; তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা।
'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' আহ্বানভিত্তিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ। পাঁচ দফা দাবিসংবলিত সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।
গণজাগরণ মঞ্চসহ ঢাকা ও বাইরের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে সম্মেলনে যোগ দেন। অংশগ্রহণকারীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। সম্মেলন চলাকালে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যক্তি এর লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। তিনি জামায়াত-শিবির, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এখন আর এ লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সম্মেলনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে অতীতের মতো মূল্য দিতেও আমরা প্রস্তুত।' তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে সারা দেশে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাদের সব দাবি বর্জনের ডাক দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একদিকে আদর্শিক সংগ্রাম চালাতে হবে, অন্যদিকে সরকারের কর্তব্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ দেশে যে জামায়াত-শিবিরের থাকারই কথা নয়, তারাই আজ সমাজে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের নির্মূল করা যাবে না। তাদের পালনভূমি ধ্বংস করতে হবে। ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য মুক্তির রাজনীতিকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেছে তখন আন্দোলন তো করতে হবেই। এর পাশাপাশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সেই কাজগুলো করা হয়নি বলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। এর বিরুদ্ধে শুধু রুখে দাঁড়ালে হবে না, ঘুরেও দাঁড়াতে হবে। কারণ, পেছন থেকে ছুরি মারার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ সৃষ্টির কথা বলেন। রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব অজয় রায় বলেন, 'হেরে যাওয়ার জন্য এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। আমরা হারতে পারি না।'
শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াত-শিবিরকে প্রচলিত আইনেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব উল্লেখ করে আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, 'তারা রাজনীতি করে না। সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। সহিংসতা সৃষ্টি করে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের কাজ আইনসিদ্ধ নয়।'
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে আক্রান্ত নিগৃহীত সংখ্যালঘুদের পাশে রাজনীতিকেরা যান না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস বলেন, 'সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়ে গুটিয়ে থাকলে লাভ হবে না। প্রতিরোধ করতে হবে। মরলে মেরে মরতে হবে।'
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে এবং সামাজিকভাবে হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য তাদের কর্মসূচির বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা দরকার। এম এম আকাশ বলেন, যাঁরা একাত্তরের পেছনে যেতে চান না, তাঁদের পথে নামতে হবে। এবার একটা ফয়সালা করতেই হবে। না হলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক আবেদ খান, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, কৃষিবিদ আবিদুর রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
কর্মসূচি: সম্মেলনে চারটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান (প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে); গণজাগরণ মঞ্চসহ অভিন্ন দাবিতে সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ; সব বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ এবং পাঁচ দফা দাবির সমর্থনে আলাদা আলাদা আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার ১৩ দফা মেনে না নিলে ৫ মে ঢাকা অবরোধ করা হবে। হেফাজতের আন্দোলন ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষা জন্য। দাবি আদায় না মানলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।
গতকাল শনিবার হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ে গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মহাসমাবেশ চলে। মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে মঞ্চে যান বিএনপির খুলনা মহানগরের সভাপতি সাংসদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান এবং বিএনপির নগর কমিটির সহসভাপতি শাহরুজ্জামান মোর্তজা। তবে তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দেননি। সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল নানা রকম ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিল, নাস্তিকদের বাংলাদেশে ঠাঁই নেই, ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের ফাঁসি চাই ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। এ সময় সমাবেশ থেকে স্লোগান উঠতে থাকে—'ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই।'
খুলনা জেলা ও মহানগরের আমির মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহমুদুর হাছান, হুমায়ুন কবীর ও মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, ঢাকা মহানগরের আমির আল্লামা নূর হুসাইন কাশেমী, যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা শাখাওয়াত হোছাইন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীসহ ঢাকা মহানগর ও খুলনা বিভাগের নেতারা।
সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের নেতা মাওলানা মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশে ইসলাম যায় যায় অবস্থা। রসুলের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারকে ৬ এপ্রিল হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে, ৫ মে লাল কার্ড দেখানো হবে।
মাওলানা মুজিবুর রহমান বলেন, '১৩ দফা দাবির মধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি রয়েছে। ওই ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে নারীরা সম্মানের আসনে বসবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ছেড়ে না দিলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।' মাওলানা মাইনউদ্দিন রুহী বলেন, 'সরকার নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষ নিয়েছে। আর নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। ৫ মের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হবে—তা মেনন ও মতিয়া ঠেকাতে পারবেন না।'
মাওলানা আবদুল রফিক বলেন, 'আমাদের দাবি মানলে সরকারের মঙ্গল হবে। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা চায়, বঙ্গবন্ধুর বাংলা চায় না। তাই তারা জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়।'
মাওলানা জাফরউল্লাহ খান বলেন, 'আমাদের কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দ্রুত তাঁর মুক্তি না দিলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে।'
খুলনা জেলার সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান সরকার ও তাদের দোসররা ইসলামকে নিয়ে নানা যড়যন্ত্র করছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেছে হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। হেফাজত পালিয়ে যায়নি। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রাজপথকে স্বোচ্চার করে তুলেছে। আমাদের ১৩ দফা না মানলে মসনদ থেকে আপনাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।'
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহামঞ্চদ রেজাউল করীম হেফাজতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'আমাদের বলা হয় আওয়ামী লীগের দালাল। যাঁরা আমাদের দালাল বলেন, তাঁরা কি তাঁদের অবস্থানে ঠিক আছেন? তাঁদের দালালি জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে।'
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে এক সমাবেশে চরমেনাইয়ের পীর এ কথা বলেন। যশোর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রোডমার্চপূর্ব বরিশালে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর এ জনসভার আয়োজন করে।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, 'বাংলাদেশে তিন ধারার রাজনীতি চলছে। একটি আ.লীগের ধারা, অন্যটি বিএনপির ধারা। আর একমাত্র ইসলামের ধারার রাজনীতি করে ইসলামী আন্দোলন। ইসলামের নামে অন্যান্য যে দল রয়েছে, তাদের কেবল নামে আছে, কাজে ইসলাম নাই।' তিনি আরও বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বিএনপি বা আওয়ামী লীগের দালালি করে না। কোনো ক্ষমতার রাজনীতির দালালি করে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নীতি বাস্তবায়নের দালালি করে।'
ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছাহাক মোহামঞ্চদ আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা রুহুল আমীন খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব মো. ইউনুস আহমেঞ্চদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। একই সঙ্গে 'নৈরাজ্যকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের' জন্য হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এসব দাবি করেছে সুন্নিয়ত, খানকা ও তরিকতপন্থী হিসেবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। সমাবেশ থেকে ১২ দফা দাবিতে আগামী ২৫ মে ঢাকায় সুন্নি মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ ও ১১ মে নারায়ণগঞ্জে জেলা সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সমাবেশে জঙ্গিবাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েমের চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা দাবি করেন, 'সরকার হেফাজতি ও জামায়াতিদের ওপর ভর করে চলছে, ভোটের অঙ্ক কষছে। কিন্তু ক্ষমতায় কে বসবে, তা ভবিষ্যতে সুন্নিরাই নির্ধারণ করবে।'
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইমাম-এ আহলে সুন্নাতের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী। তিনি বলেন, 'আমরা রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। আমরা আজকের সমাবেশ শুধু আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সারা দেশের জন্য পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি পাবেন ২৫ মে।'
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় বসে প্রথমেই কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সুন্নি আলেমদের সঙ্গে বসেনি। অথচ এই কওমিরা এখন সরকারের গদি নিয়ে টানাটানি করছে। তিনি বলেন, 'ফটিকছড়িতে জামায়াত ও হেফাজতের আক্রমণের পরও সরকারের লোকজন হাতে চুড়ি পরে বসে আছেন। কিন্তু আমরা সেভাবে বসে থাকব না। সুন্নি আলেমদের ওপর কোনো হামলা হলে আমরা তা প্রতিহত করব।'
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল্কাদেরী বলেন, 'ইসলামের নামে কোনো হামলা নেই, ইসলামের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তবে আমাদের জান-মালের ওপর যদি হামলা আসে, তা মোকাবিলার জন্য সুন্নি-জনতা প্রস্তুত আছে।'
হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতার প্রকাশনা তুলে ধরে কাজী মঈনুদ্দীন আশরাফী অভিযোগ করেন, এসব প্রকাশনায় আল্লাহ ও রাসুল (সা.)কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী, মু্ফতি ওবাইদুল হক নঈমী, ইদ্রিছ রেজভী, আজিজুল হক আল্কাদেরী, সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্, মুহাম্মদ নুরুল মুনাওয়ার, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ প্রমুখ।
১২ দফা দাবি: মহাসমাবেশে ১২ দফা দাবি পড়ে শোনান আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। দাবিগুলো হলো: ১. ফেসবুক ও ব্লগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে আইন সংস্কার এবং সব অভিযুক্তের বিচার নিশ্চিত করা, ২. সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন, ৩. সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ৪. হরতাল বন্ধ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, ৫. নারী উন্নয়ন নীতিমালা থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী অংশ বাদ দেওয়া, ৬. জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ওয়াহাবিবাদী কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি সিলেবাসের আওতাভুক্ত করে অভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ৭. ইসলামের নামে হেফাজত-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন, ৮. তাবলিগ জামাতের আড়ালেও জঙ্গিবাদী বিদেশি তালেবান গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে দেশীয় জঙ্গিদের যোগসাজশে নাশকতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই তাবলিগি কার্যক্রম সরকারি নজরদারিতে আনা, ৯. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত কামিল-ফাজিল পাস শিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও বিধিবিধানের বিকৃত বন্ধ করা, ১০. নাস্তিক, মওদুদী, ওয়াহাবি, কাদিয়ানিসহ সব ভ্রান্ত মতবাদের প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ১১. মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ও বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ১২. সুন্নি ওলামা-মাশায়েখ ও বিভিন্ন মাজার-খানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশসহ নিরীহ জনতার ওপর হামলা, হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচার দাবি।
প্রসঙ্গত, এ ১২ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফা হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফার মধ্যেও আছে। এ ছাড়া ৫ ও ১০ নম্বর দফার সঙ্গেও হেফাজতের দাবির আংশিক মিল রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ মতাদর্শ ইসলামী ওয়েবসাইট jamaat-e-islami.org
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ[১]বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার প্রমাণ রয়েছে।[২][৩][৪][৫]
পরিচ্ছেদসমূহ
[আড়ালে রাখো]
[সম্পাদনা]ইতিহাস
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬২ সালেআইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। [৬]সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।[৭]
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার,আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১২ই ডিসেম্বরবুধিজীবী হত্যকান্ডে জড়িত থাকা[৮] সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।[৯]
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতেরকড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। [১০]
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গোলাম আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।[১১]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কতৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ অধ্যায়
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর ভারপ্রাপ্ত আমীর পদ লাভ করেন আব্বাস আলি খান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
[সম্পাদনা]সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। [১২]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিবন্ধন বাচাঁতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৩]
[সম্পাদনা]উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।[১৪]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৫]
[সম্পাদনা]সাংগঠনিক কাঠামো
জামায়াতে ইসলামী বাঙলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
- কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলন,
- আমীরে জামায়াত,
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা;
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং
- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ।[১৬]
[সম্পাদনা]তথ্য সূত্র
- ↑ জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করেছে। দ্য ডেইলি নিউ নেশন, ২১ অক্টোবর, ২০০৮
- ↑ জনতার আদালতে জামাতে ইসলামী- দিব্য প্রকাশ, ৩৮/২ ক, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১৮
- ↑ দৈনিক পাকিস্তান, ২৮শে নভেম্বর, ১৯৭১ , সাভারে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারদের ট্রেনিং শেষে জেনারেল নিয়াজী বলেনঃ"একদিকে তাদের ভারতীয় চরদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে, অন্যদিকে বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথে আনতে হবে।"
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=16 রাজাকার ও তাদের সহযোগীরা
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=246 তারা যা বলেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep01.html#dr_a_m_malik
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep18.html#ten_member_council
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=32
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=36
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৭১
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ [নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানলে বাংলাদেশ ১৩শ বছর পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, "আমাদের একটি তরুণ সমাজ রয়েছে, যা আর কারো নেই; যারা অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই বিশাল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা '৭১ সালে ভয় পাইনি। এখনও ভয় পাবো না। আমাদের পরিষ্কার বলতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।"
জার্মানির নাৎসী বাহিনীর কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, "জার্মানিতে যেমন নাৎসী বাহিনী রাজনীতি করার অধিকার পায়নি, তেমনি বাংলাদেশেও জামায়াত থাকতে পারে না। বিশ্বাস রাখতে হবে, বিজয় আমাদের হবেই।"
সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইইবি)মিলনায়তনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
স্যালুট স্যার।
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
এবার
রাজাকারের ফাঁসি, জামাত-শিবির নিষিদ্ধ ও সফি হুজুরের বিচার চাওয়া হল চট্টগ্রামে সুন্নিদের সমাবেশে থেকে........
এছাড়াও উগ্র ইসলামপন্থী হেফাজতি ভন্ডদের শাস্তির দাবিতে ২৫ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষনা দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।
আজ চট্টগ্রামের লাল দিঘীর ময়দানের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের মহাসমাবেশ থেকে এসব ঘোষণা দেয়া হয়।
ভন্ড রাজাকারের পরিনতি এমনই হয়---হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সংবিধান ও ইসলামবিরোধী!
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একাধিক বক্তা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দেশের সংবিধান ও ইসলামবিরোধী। হেফাজতের নাম করে এগুলো মূলত জামায়াতে ইসলামীর দাবি।
গতকাল শনিবার 'হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এ মত দেন। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে এদের প্রতিরোধে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশ ও জাতি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দাবি। জামায়াত যখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়, তখন তারা দুটি দাবি তোলে। একটি ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি, আরেকটি আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম—তা ঘোষণার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়।
সমাজকল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, জামায়াত মাঠে নেমেছে তাদের নেতারা যেন শাস্তি না পান এ জন্য।
আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের জন্য দেশে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন, এটা কেউ বলছেন না। তিনি সংবাদপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে, কোনো নৈতিকতা না মেনে ধর্মীয় উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি করেছে, পাকিস্তান আমলে তা শোনা গেছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে গড়া সম্ভব?
হেফাজতকে জামায়াতের সামাজিক সংগঠন আখ্যায়িত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা।
নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম দাবি শুধু সংবিধান পরিপন্থী নয়, এগুলো ইসলামবিরোধী। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য বিচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বিবি খাদিজা (রা.) মক্কা শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলামে নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মোটেও নিষিদ্ধ নয়।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, যাঁরা ইসলামকে হেফাজতের কথা বলছেন, তাঁরা কোরআন ও ইসলামবিরোধী কথা বলছেন। আল্লাহর দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্য সব ধর্মের মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্লাসফেমি আইন হবে না, এ জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে, এটা বলার কোনো দরকার ছিল না। দেশের সংবিধান ও আইন আছে, সে অনুসারে দেশ চালাতে হবে।'
'উগ্রবাদী গোষ্ঠীর' সঙ্গে আলাপ-আলোচনাকে নিরুৎসাহিত করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যখনই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওই গোষ্ঠীগুলোই লাভবান হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান লড়াইয়ে অংশ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্ম ব্যবসায়ী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজ।
গতকাল শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের জাতীয় সম্মেলনে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, এটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ লড়াই থেকে কারও পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অতীতের মতো এ লড়াইয়েও সবাইকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা; সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা; তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা।
'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' আহ্বানভিত্তিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ। পাঁচ দফা দাবিসংবলিত সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।
গণজাগরণ মঞ্চসহ ঢাকা ও বাইরের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে সম্মেলনে যোগ দেন। অংশগ্রহণকারীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। সম্মেলন চলাকালে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যক্তি এর লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। তিনি জামায়াত-শিবির, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এখন আর এ লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সম্মেলনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে অতীতের মতো মূল্য দিতেও আমরা প্রস্তুত।' তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে সারা দেশে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাদের সব দাবি বর্জনের ডাক দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একদিকে আদর্শিক সংগ্রাম চালাতে হবে, অন্যদিকে সরকারের কর্তব্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ দেশে যে জামায়াত-শিবিরের থাকারই কথা নয়, তারাই আজ সমাজে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের নির্মূল করা যাবে না। তাদের পালনভূমি ধ্বংস করতে হবে। ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য মুক্তির রাজনীতিকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেছে তখন আন্দোলন তো করতে হবেই। এর পাশাপাশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সেই কাজগুলো করা হয়নি বলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। এর বিরুদ্ধে শুধু রুখে দাঁড়ালে হবে না, ঘুরেও দাঁড়াতে হবে। কারণ, পেছন থেকে ছুরি মারার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ সৃষ্টির কথা বলেন। রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব অজয় রায় বলেন, 'হেরে যাওয়ার জন্য এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। আমরা হারতে পারি না।'
শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াত-শিবিরকে প্রচলিত আইনেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব উল্লেখ করে আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, 'তারা রাজনীতি করে না। সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। সহিংসতা সৃষ্টি করে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের কাজ আইনসিদ্ধ নয়।'
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে আক্রান্ত নিগৃহীত সংখ্যালঘুদের পাশে রাজনীতিকেরা যান না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস বলেন, 'সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়ে গুটিয়ে থাকলে লাভ হবে না। প্রতিরোধ করতে হবে। মরলে মেরে মরতে হবে।'
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে এবং সামাজিকভাবে হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য তাদের কর্মসূচির বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা দরকার। এম এম আকাশ বলেন, যাঁরা একাত্তরের পেছনে যেতে চান না, তাঁদের পথে নামতে হবে। এবার একটা ফয়সালা করতেই হবে। না হলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক আবেদ খান, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, কৃষিবিদ আবিদুর রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
কর্মসূচি: সম্মেলনে চারটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান (প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে); গণজাগরণ মঞ্চসহ অভিন্ন দাবিতে সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ; সব বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ এবং পাঁচ দফা দাবির সমর্থনে আলাদা আলাদা আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার ১৩ দফা মেনে না নিলে ৫ মে ঢাকা অবরোধ করা হবে। হেফাজতের আন্দোলন ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষা জন্য। দাবি আদায় না মানলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।
গতকাল শনিবার হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ে গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মহাসমাবেশ চলে। মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে মঞ্চে যান বিএনপির খুলনা মহানগরের সভাপতি সাংসদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান এবং বিএনপির নগর কমিটির সহসভাপতি শাহরুজ্জামান মোর্তজা। তবে তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দেননি। সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল নানা রকম ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিল, নাস্তিকদের বাংলাদেশে ঠাঁই নেই, ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের ফাঁসি চাই ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। এ সময় সমাবেশ থেকে স্লোগান উঠতে থাকে—'ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই।'
খুলনা জেলা ও মহানগরের আমির মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহমুদুর হাছান, হুমায়ুন কবীর ও মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, ঢাকা মহানগরের আমির আল্লামা নূর হুসাইন কাশেমী, যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা শাখাওয়াত হোছাইন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীসহ ঢাকা মহানগর ও খুলনা বিভাগের নেতারা।
সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের নেতা মাওলানা মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশে ইসলাম যায় যায় অবস্থা। রসুলের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারকে ৬ এপ্রিল হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে, ৫ মে লাল কার্ড দেখানো হবে।
মাওলানা মুজিবুর রহমান বলেন, '১৩ দফা দাবির মধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি রয়েছে। ওই ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে নারীরা সম্মানের আসনে বসবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ছেড়ে না দিলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।' মাওলানা মাইনউদ্দিন রুহী বলেন, 'সরকার নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষ নিয়েছে। আর নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। ৫ মের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হবে—তা মেনন ও মতিয়া ঠেকাতে পারবেন না।'
মাওলানা আবদুল রফিক বলেন, 'আমাদের দাবি মানলে সরকারের মঙ্গল হবে। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা চায়, বঙ্গবন্ধুর বাংলা চায় না। তাই তারা জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়।'
মাওলানা জাফরউল্লাহ খান বলেন, 'আমাদের কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দ্রুত তাঁর মুক্তি না দিলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে।'
খুলনা জেলার সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান সরকার ও তাদের দোসররা ইসলামকে নিয়ে নানা যড়যন্ত্র করছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেছে হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। হেফাজত পালিয়ে যায়নি। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রাজপথকে স্বোচ্চার করে তুলেছে। আমাদের ১৩ দফা না মানলে মসনদ থেকে আপনাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।'
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহামঞ্চদ রেজাউল করীম হেফাজতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'আমাদের বলা হয় আওয়ামী লীগের দালাল। যাঁরা আমাদের দালাল বলেন, তাঁরা কি তাঁদের অবস্থানে ঠিক আছেন? তাঁদের দালালি জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে।'
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে এক সমাবেশে চরমেনাইয়ের পীর এ কথা বলেন। যশোর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রোডমার্চপূর্ব বরিশালে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর এ জনসভার আয়োজন করে।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, 'বাংলাদেশে তিন ধারার রাজনীতি চলছে। একটি আ.লীগের ধারা, অন্যটি বিএনপির ধারা। আর একমাত্র ইসলামের ধারার রাজনীতি করে ইসলামী আন্দোলন। ইসলামের নামে অন্যান্য যে দল রয়েছে, তাদের কেবল নামে আছে, কাজে ইসলাম নাই।' তিনি আরও বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বিএনপি বা আওয়ামী লীগের দালালি করে না। কোনো ক্ষমতার রাজনীতির দালালি করে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নীতি বাস্তবায়নের দালালি করে।'
ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছাহাক মোহামঞ্চদ আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা রুহুল আমীন খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব মো. ইউনুস আহমেঞ্চদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। একই সঙ্গে 'নৈরাজ্যকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের' জন্য হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এসব দাবি করেছে সুন্নিয়ত, খানকা ও তরিকতপন্থী হিসেবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। সমাবেশ থেকে ১২ দফা দাবিতে আগামী ২৫ মে ঢাকায় সুন্নি মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ ও ১১ মে নারায়ণগঞ্জে জেলা সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সমাবেশে জঙ্গিবাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েমের চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা দাবি করেন, 'সরকার হেফাজতি ও জামায়াতিদের ওপর ভর করে চলছে, ভোটের অঙ্ক কষছে। কিন্তু ক্ষমতায় কে বসবে, তা ভবিষ্যতে সুন্নিরাই নির্ধারণ করবে।'
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইমাম-এ আহলে সুন্নাতের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী। তিনি বলেন, 'আমরা রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। আমরা আজকের সমাবেশ শুধু আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সারা দেশের জন্য পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি পাবেন ২৫ মে।'
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় বসে প্রথমেই কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সুন্নি আলেমদের সঙ্গে বসেনি। অথচ এই কওমিরা এখন সরকারের গদি নিয়ে টানাটানি করছে। তিনি বলেন, 'ফটিকছড়িতে জামায়াত ও হেফাজতের আক্রমণের পরও সরকারের লোকজন হাতে চুড়ি পরে বসে আছেন। কিন্তু আমরা সেভাবে বসে থাকব না। সুন্নি আলেমদের ওপর কোনো হামলা হলে আমরা তা প্রতিহত করব।'
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল্কাদেরী বলেন, 'ইসলামের নামে কোনো হামলা নেই, ইসলামের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তবে আমাদের জান-মালের ওপর যদি হামলা আসে, তা মোকাবিলার জন্য সুন্নি-জনতা প্রস্তুত আছে।'
হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতার প্রকাশনা তুলে ধরে কাজী মঈনুদ্দীন আশরাফী অভিযোগ করেন, এসব প্রকাশনায় আল্লাহ ও রাসুল (সা.)কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী, মু্ফতি ওবাইদুল হক নঈমী, ইদ্রিছ রেজভী, আজিজুল হক আল্কাদেরী, সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্, মুহাম্মদ নুরুল মুনাওয়ার, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ প্রমুখ।
১২ দফা দাবি: মহাসমাবেশে ১২ দফা দাবি পড়ে শোনান আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। দাবিগুলো হলো: ১. ফেসবুক ও ব্লগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে আইন সংস্কার এবং সব অভিযুক্তের বিচার নিশ্চিত করা, ২. সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন, ৩. সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ৪. হরতাল বন্ধ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, ৫. নারী উন্নয়ন নীতিমালা থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী অংশ বাদ দেওয়া, ৬. জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ওয়াহাবিবাদী কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি সিলেবাসের আওতাভুক্ত করে অভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ৭. ইসলামের নামে হেফাজত-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন, ৮. তাবলিগ জামাতের আড়ালেও জঙ্গিবাদী বিদেশি তালেবান গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে দেশীয় জঙ্গিদের যোগসাজশে নাশকতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই তাবলিগি কার্যক্রম সরকারি নজরদারিতে আনা, ৯. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত কামিল-ফাজিল পাস শিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও বিধিবিধানের বিকৃত বন্ধ করা, ১০. নাস্তিক, মওদুদী, ওয়াহাবি, কাদিয়ানিসহ সব ভ্রান্ত মতবাদের প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ১১. মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ও বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ১২. সুন্নি ওলামা-মাশায়েখ ও বিভিন্ন মাজার-খানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশসহ নিরীহ জনতার ওপর হামলা, হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচার দাবি।
প্রসঙ্গত, এ ১২ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফা হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফার মধ্যেও আছে। এ ছাড়া ৫ ও ১০ নম্বর দফার সঙ্গেও হেফাজতের দাবির আংশিক মিল রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ মতাদর্শ ইসলামী ওয়েবসাইট jamaat-e-islami.org
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ[১]বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার প্রমাণ রয়েছে।[২][৩][৪][৫]
পরিচ্ছেদসমূহ
[আড়ালে রাখো]
[সম্পাদনা]ইতিহাস
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬২ সালেআইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। [৬]সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।[৭]
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার,আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১২ই ডিসেম্বরবুধিজীবী হত্যকান্ডে জড়িত থাকা[৮] সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।[৯]
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতেরকড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। [১০]
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গোলাম আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।[১১]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কতৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ অধ্যায়
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর ভারপ্রাপ্ত আমীর পদ লাভ করেন আব্বাস আলি খান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
[সম্পাদনা]সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। [১২]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিবন্ধন বাচাঁতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৩]
[সম্পাদনা]উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।[১৪]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৫]
[সম্পাদনা]সাংগঠনিক কাঠামো
জামায়াতে ইসলামী বাঙলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
- কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলন,
- আমীরে জামায়াত,
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা;
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং
- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ।[১৬]
[সম্পাদনা]তথ্য সূত্র
- ↑ জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করেছে। দ্য ডেইলি নিউ নেশন, ২১ অক্টোবর, ২০০৮
- ↑ জনতার আদালতে জামাতে ইসলামী- দিব্য প্রকাশ, ৩৮/২ ক, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১৮
- ↑ দৈনিক পাকিস্তান, ২৮শে নভেম্বর, ১৯৭১ , সাভারে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারদের ট্রেনিং শেষে জেনারেল নিয়াজী বলেনঃ"একদিকে তাদের ভারতীয় চরদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে, অন্যদিকে বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথে আনতে হবে।"
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=16 রাজাকার ও তাদের সহযোগীরা
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=246 তারা যা বলেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep01.html#dr_a_m_malik
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep18.html#ten_member_council
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=32
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=36
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৭১
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ [নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানলে বাংলাদেশ ১৩শ বছর পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, "আমাদের একটি তরুণ সমাজ রয়েছে, যা আর কারো নেই; যারা অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই বিশাল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা '৭১ সালে ভয় পাইনি। এখনও ভয় পাবো না। আমাদের পরিষ্কার বলতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।"
জার্মানির নাৎসী বাহিনীর কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, "জার্মানিতে যেমন নাৎসী বাহিনী রাজনীতি করার অধিকার পায়নি, তেমনি বাংলাদেশেও জামায়াত থাকতে পারে না। বিশ্বাস রাখতে হবে, বিজয় আমাদের হবেই।"
সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইইবি)মিলনায়তনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
স্যালুট স্যার।
ভন্ড রাজাকারের পরিনতি এমনই হয়---হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সংবিধান ও ইসলামবিরোধী!
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একাধিক বক্তা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দেশের সংবিধান ও ইসলামবিরোধী। হেফাজতের নাম করে এগুলো মূলত জামায়াতে ইসলামীর দাবি।
গতকাল শনিবার 'হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এ মত দেন। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে এদের প্রতিরোধে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশ ও জাতি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দাবি। জামায়াত যখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়, তখন তারা দুটি দাবি তোলে। একটি ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি, আরেকটি আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম—তা ঘোষণার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়।
সমাজকল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, জামায়াত মাঠে নেমেছে তাদের নেতারা যেন শাস্তি না পান এ জন্য।
আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের জন্য দেশে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন, এটা কেউ বলছেন না। তিনি সংবাদপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে, কোনো নৈতিকতা না মেনে ধর্মীয় উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি করেছে, পাকিস্তান আমলে তা শোনা গেছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে গড়া সম্ভব?
হেফাজতকে জামায়াতের সামাজিক সংগঠন আখ্যায়িত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা।
নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম দাবি শুধু সংবিধান পরিপন্থী নয়, এগুলো ইসলামবিরোধী। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য বিচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বিবি খাদিজা (রা.) মক্কা শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলামে নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মোটেও নিষিদ্ধ নয়।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, যাঁরা ইসলামকে হেফাজতের কথা বলছেন, তাঁরা কোরআন ও ইসলামবিরোধী কথা বলছেন। আল্লাহর দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্য সব ধর্মের মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্লাসফেমি আইন হবে না, এ জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে, এটা বলার কোনো দরকার ছিল না। দেশের সংবিধান ও আইন আছে, সে অনুসারে দেশ চালাতে হবে।'
'উগ্রবাদী গোষ্ঠীর' সঙ্গে আলাপ-আলোচনাকে নিরুৎসাহিত করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যখনই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওই গোষ্ঠীগুলোই লাভবান হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান লড়াইয়ে অংশ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্ম ব্যবসায়ী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজ।
গতকাল শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের জাতীয় সম্মেলনে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, এটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ লড়াই থেকে কারও পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অতীতের মতো এ লড়াইয়েও সবাইকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা; সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা; তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা।
'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' আহ্বানভিত্তিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ। পাঁচ দফা দাবিসংবলিত সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।
গণজাগরণ মঞ্চসহ ঢাকা ও বাইরের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে সম্মেলনে যোগ দেন। অংশগ্রহণকারীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। সম্মেলন চলাকালে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যক্তি এর লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। তিনি জামায়াত-শিবির, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এখন আর এ লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সম্মেলনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে অতীতের মতো মূল্য দিতেও আমরা প্রস্তুত।' তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে সারা দেশে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাদের সব দাবি বর্জনের ডাক দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একদিকে আদর্শিক সংগ্রাম চালাতে হবে, অন্যদিকে সরকারের কর্তব্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ দেশে যে জামায়াত-শিবিরের থাকারই কথা নয়, তারাই আজ সমাজে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের নির্মূল করা যাবে না। তাদের পালনভূমি ধ্বংস করতে হবে। ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য মুক্তির রাজনীতিকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেছে তখন আন্দোলন তো করতে হবেই। এর পাশাপাশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সেই কাজগুলো করা হয়নি বলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। এর বিরুদ্ধে শুধু রুখে দাঁড়ালে হবে না, ঘুরেও দাঁড়াতে হবে। কারণ, পেছন থেকে ছুরি মারার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ সৃষ্টির কথা বলেন। রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব অজয় রায় বলেন, 'হেরে যাওয়ার জন্য এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। আমরা হারতে পারি না।'
শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াত-শিবিরকে প্রচলিত আইনেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব উল্লেখ করে আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, 'তারা রাজনীতি করে না। সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। সহিংসতা সৃষ্টি করে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের কাজ আইনসিদ্ধ নয়।'
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে আক্রান্ত নিগৃহীত সংখ্যালঘুদের পাশে রাজনীতিকেরা যান না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস বলেন, 'সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়ে গুটিয়ে থাকলে লাভ হবে না। প্রতিরোধ করতে হবে। মরলে মেরে মরতে হবে।'
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে এবং সামাজিকভাবে হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য তাদের কর্মসূচির বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা দরকার। এম এম আকাশ বলেন, যাঁরা একাত্তরের পেছনে যেতে চান না, তাঁদের পথে নামতে হবে। এবার একটা ফয়সালা করতেই হবে। না হলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক আবেদ খান, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, কৃষিবিদ আবিদুর রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
কর্মসূচি: সম্মেলনে চারটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান (প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে); গণজাগরণ মঞ্চসহ অভিন্ন দাবিতে সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ; সব বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ এবং পাঁচ দফা দাবির সমর্থনে আলাদা আলাদা আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার ১৩ দফা মেনে না নিলে ৫ মে ঢাকা অবরোধ করা হবে। হেফাজতের আন্দোলন ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষা জন্য। দাবি আদায় না মানলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।
গতকাল শনিবার হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ে গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মহাসমাবেশ চলে। মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে মঞ্চে যান বিএনপির খুলনা মহানগরের সভাপতি সাংসদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান এবং বিএনপির নগর কমিটির সহসভাপতি শাহরুজ্জামান মোর্তজা। তবে তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দেননি। সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল নানা রকম ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিল, নাস্তিকদের বাংলাদেশে ঠাঁই নেই, ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের ফাঁসি চাই ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। এ সময় সমাবেশ থেকে স্লোগান উঠতে থাকে—'ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই।'
খুলনা জেলা ও মহানগরের আমির মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহমুদুর হাছান, হুমায়ুন কবীর ও মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, ঢাকা মহানগরের আমির আল্লামা নূর হুসাইন কাশেমী, যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা শাখাওয়াত হোছাইন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীসহ ঢাকা মহানগর ও খুলনা বিভাগের নেতারা।
সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের নেতা মাওলানা মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশে ইসলাম যায় যায় অবস্থা। রসুলের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারকে ৬ এপ্রিল হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে, ৫ মে লাল কার্ড দেখানো হবে।
মাওলানা মুজিবুর রহমান বলেন, '১৩ দফা দাবির মধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি রয়েছে। ওই ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে নারীরা সম্মানের আসনে বসবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ছেড়ে না দিলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।' মাওলানা মাইনউদ্দিন রুহী বলেন, 'সরকার নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষ নিয়েছে। আর নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। ৫ মের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হবে—তা মেনন ও মতিয়া ঠেকাতে পারবেন না।'
মাওলানা আবদুল রফিক বলেন, 'আমাদের দাবি মানলে সরকারের মঙ্গল হবে। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা চায়, বঙ্গবন্ধুর বাংলা চায় না। তাই তারা জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়।'
মাওলানা জাফরউল্লাহ খান বলেন, 'আমাদের কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দ্রুত তাঁর মুক্তি না দিলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে।'
খুলনা জেলার সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান সরকার ও তাদের দোসররা ইসলামকে নিয়ে নানা যড়যন্ত্র করছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেছে হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। হেফাজত পালিয়ে যায়নি। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রাজপথকে স্বোচ্চার করে তুলেছে। আমাদের ১৩ দফা না মানলে মসনদ থেকে আপনাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।'
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহামঞ্চদ রেজাউল করীম হেফাজতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'আমাদের বলা হয় আওয়ামী লীগের দালাল। যাঁরা আমাদের দালাল বলেন, তাঁরা কি তাঁদের অবস্থানে ঠিক আছেন? তাঁদের দালালি জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে।'
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে এক সমাবেশে চরমেনাইয়ের পীর এ কথা বলেন। যশোর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রোডমার্চপূর্ব বরিশালে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর এ জনসভার আয়োজন করে।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, 'বাংলাদেশে তিন ধারার রাজনীতি চলছে। একটি আ.লীগের ধারা, অন্যটি বিএনপির ধারা। আর একমাত্র ইসলামের ধারার রাজনীতি করে ইসলামী আন্দোলন। ইসলামের নামে অন্যান্য যে দল রয়েছে, তাদের কেবল নামে আছে, কাজে ইসলাম নাই।' তিনি আরও বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বিএনপি বা আওয়ামী লীগের দালালি করে না। কোনো ক্ষমতার রাজনীতির দালালি করে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নীতি বাস্তবায়নের দালালি করে।'
ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছাহাক মোহামঞ্চদ আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা রুহুল আমীন খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব মো. ইউনুস আহমেঞ্চদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। একই সঙ্গে 'নৈরাজ্যকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের' জন্য হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এসব দাবি করেছে সুন্নিয়ত, খানকা ও তরিকতপন্থী হিসেবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। সমাবেশ থেকে ১২ দফা দাবিতে আগামী ২৫ মে ঢাকায় সুন্নি মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ ও ১১ মে নারায়ণগঞ্জে জেলা সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সমাবেশে জঙ্গিবাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েমের চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা দাবি করেন, 'সরকার হেফাজতি ও জামায়াতিদের ওপর ভর করে চলছে, ভোটের অঙ্ক কষছে। কিন্তু ক্ষমতায় কে বসবে, তা ভবিষ্যতে সুন্নিরাই নির্ধারণ করবে।'
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইমাম-এ আহলে সুন্নাতের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী। তিনি বলেন, 'আমরা রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। আমরা আজকের সমাবেশ শুধু আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সারা দেশের জন্য পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি পাবেন ২৫ মে।'
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় বসে প্রথমেই কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সুন্নি আলেমদের সঙ্গে বসেনি। অথচ এই কওমিরা এখন সরকারের গদি নিয়ে টানাটানি করছে। তিনি বলেন, 'ফটিকছড়িতে জামায়াত ও হেফাজতের আক্রমণের পরও সরকারের লোকজন হাতে চুড়ি পরে বসে আছেন। কিন্তু আমরা সেভাবে বসে থাকব না। সুন্নি আলেমদের ওপর কোনো হামলা হলে আমরা তা প্রতিহত করব।'
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল্কাদেরী বলেন, 'ইসলামের নামে কোনো হামলা নেই, ইসলামের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তবে আমাদের জান-মালের ওপর যদি হামলা আসে, তা মোকাবিলার জন্য সুন্নি-জনতা প্রস্তুত আছে।'
হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতার প্রকাশনা তুলে ধরে কাজী মঈনুদ্দীন আশরাফী অভিযোগ করেন, এসব প্রকাশনায় আল্লাহ ও রাসুল (সা.)কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী, মু্ফতি ওবাইদুল হক নঈমী, ইদ্রিছ রেজভী, আজিজুল হক আল্কাদেরী, সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্, মুহাম্মদ নুরুল মুনাওয়ার, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ প্রমুখ।
১২ দফা দাবি: মহাসমাবেশে ১২ দফা দাবি পড়ে শোনান আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। দাবিগুলো হলো: ১. ফেসবুক ও ব্লগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে আইন সংস্কার এবং সব অভিযুক্তের বিচার নিশ্চিত করা, ২. সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন, ৩. সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ৪. হরতাল বন্ধ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, ৫. নারী উন্নয়ন নীতিমালা থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী অংশ বাদ দেওয়া, ৬. জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ওয়াহাবিবাদী কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি সিলেবাসের আওতাভুক্ত করে অভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ৭. ইসলামের নামে হেফাজত-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন, ৮. তাবলিগ জামাতের আড়ালেও জঙ্গিবাদী বিদেশি তালেবান গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে দেশীয় জঙ্গিদের যোগসাজশে নাশকতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই তাবলিগি কার্যক্রম সরকারি নজরদারিতে আনা, ৯. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত কামিল-ফাজিল পাস শিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও বিধিবিধানের বিকৃত বন্ধ করা, ১০. নাস্তিক, মওদুদী, ওয়াহাবি, কাদিয়ানিসহ সব ভ্রান্ত মতবাদের প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ১১. মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ও বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ১২. সুন্নি ওলামা-মাশায়েখ ও বিভিন্ন মাজার-খানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশসহ নিরীহ জনতার ওপর হামলা, হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচার দাবি।
প্রসঙ্গত, এ ১২ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফা হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফার মধ্যেও আছে। এ ছাড়া ৫ ও ১০ নম্বর দফার সঙ্গেও হেফাজতের দাবির আংশিক মিল রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ মতাদর্শ ইসলামী ওয়েবসাইট jamaat-e-islami.org
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ[১]বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার প্রমাণ রয়েছে।[২][৩][৪][৫]
পরিচ্ছেদসমূহ
[আড়ালে রাখো]
[সম্পাদনা]ইতিহাস
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬২ সালেআইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। [৬]সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।[৭]
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার,আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১২ই ডিসেম্বরবুধিজীবী হত্যকান্ডে জড়িত থাকা[৮] সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।[৯]
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতেরকড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। [১০]
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গোলাম আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।[১১]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কতৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ অধ্যায়
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর ভারপ্রাপ্ত আমীর পদ লাভ করেন আব্বাস আলি খান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
[সম্পাদনা]সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। [১২]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিবন্ধন বাচাঁতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৩]
[সম্পাদনা]উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।[১৪]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৫]
[সম্পাদনা]সাংগঠনিক কাঠামো
জামায়াতে ইসলামী বাঙলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
- কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলন,
- আমীরে জামায়াত,
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা;
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং
- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ।[১৬]
[সম্পাদনা]তথ্য সূত্র
- ↑ জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করেছে। দ্য ডেইলি নিউ নেশন, ২১ অক্টোবর, ২০০৮
- ↑ জনতার আদালতে জামাতে ইসলামী- দিব্য প্রকাশ, ৩৮/২ ক, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১৮
- ↑ দৈনিক পাকিস্তান, ২৮শে নভেম্বর, ১৯৭১ , সাভারে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারদের ট্রেনিং শেষে জেনারেল নিয়াজী বলেনঃ"একদিকে তাদের ভারতীয় চরদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে, অন্যদিকে বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথে আনতে হবে।"
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=16 রাজাকার ও তাদের সহযোগীরা
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=246 তারা যা বলেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep01.html#dr_a_m_malik
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep18.html#ten_member_council
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=32
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=36
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৭১
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ [নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
গতকাল শনিবার 'হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা এ মত দেন। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে সমন্বিত করে এদের প্রতিরোধে বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশ ও জাতি মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের দাবি। জামায়াত যখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়, তখন তারা দুটি দাবি তোলে। একটি ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি, আরেকটি আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি। কে মুসলিম আর কে অমুসলিম—তা ঘোষণার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়।
সমাজকল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, জামায়াত মাঠে নেমেছে তাদের নেতারা যেন শাস্তি না পান এ জন্য।
আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের জন্য দেশে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন, এটা কেউ বলছেন না। তিনি সংবাদপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে, কোনো নৈতিকতা না মেনে ধর্মীয় উসকানি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেসব দাবি করেছে, পাকিস্তান আমলে তা শোনা গেছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে গড়া সম্ভব?
হেফাজতকে জামায়াতের সামাজিক সংগঠন আখ্যায়িত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা।
নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা দাবির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম দাবি শুধু সংবিধান পরিপন্থী নয়, এগুলো ইসলামবিরোধী। নারী-পুরুষের প্রকাশ্য বিচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বিবি খাদিজা (রা.) মক্কা শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলামে নারীশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মোটেও নিষিদ্ধ নয়।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, যাঁরা ইসলামকে হেফাজতের কথা বলছেন, তাঁরা কোরআন ও ইসলামবিরোধী কথা বলছেন। আল্লাহর দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্য সব ধর্মের মানুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্লাসফেমি আইন হবে না, এ জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু মদিনা সনদ অনুসারে দেশ চলবে, এটা বলার কোনো দরকার ছিল না। দেশের সংবিধান ও আইন আছে, সে অনুসারে দেশ চালাতে হবে।'
'উগ্রবাদী গোষ্ঠীর' সঙ্গে আলাপ-আলোচনাকে নিরুৎসাহিত করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যখনই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওই গোষ্ঠীগুলোই লাভবান হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
গতকাল শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের জাতীয় সম্মেলনে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, এটি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ লড়াই থেকে কারও পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অতীতের মতো এ লড়াইয়েও সবাইকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা; সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা; তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা।
'বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' আহ্বানভিত্তিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। এরপর সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ। পাঁচ দফা দাবিসংবলিত সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।
গণজাগরণ মঞ্চসহ ঢাকা ও বাইরের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে সম্মেলনে যোগ দেন। অংশগ্রহণকারীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। সম্মেলন চলাকালে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যক্তি এর লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। তিনি জামায়াত-শিবির, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এখন আর এ লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সম্মেলনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে অতীতের মতো মূল্য দিতেও আমরা প্রস্তুত।' তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে সারা দেশে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাদের সব দাবি বর্জনের ডাক দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একদিকে আদর্শিক সংগ্রাম চালাতে হবে, অন্যদিকে সরকারের কর্তব্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ দেশে যে জামায়াত-শিবিরের থাকারই কথা নয়, তারাই আজ সমাজে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের নির্মূল করা যাবে না। তাদের পালনভূমি ধ্বংস করতে হবে। ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য মুক্তির রাজনীতিকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেছে তখন আন্দোলন তো করতে হবেই। এর পাশাপাশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সেই কাজগুলো করা হয়নি বলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। এর বিরুদ্ধে শুধু রুখে দাঁড়ালে হবে না, ঘুরেও দাঁড়াতে হবে। কারণ, পেছন থেকে ছুরি মারার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ সৃষ্টির কথা বলেন। রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব অজয় রায় বলেন, 'হেরে যাওয়ার জন্য এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। আমরা হারতে পারি না।'
শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াত-শিবিরকে প্রচলিত আইনেই নিষিদ্ধ করা সম্ভব উল্লেখ করে আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, 'তারা রাজনীতি করে না। সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। সহিংসতা সৃষ্টি করে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের কাজ আইনসিদ্ধ নয়।'
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে আক্রান্ত নিগৃহীত সংখ্যালঘুদের পাশে রাজনীতিকেরা যান না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস বলেন, 'সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়ে গুটিয়ে থাকলে লাভ হবে না। প্রতিরোধ করতে হবে। মরলে মেরে মরতে হবে।'
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে এবং সামাজিকভাবে হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য তাদের কর্মসূচির বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা দরকার। এম এম আকাশ বলেন, যাঁরা একাত্তরের পেছনে যেতে চান না, তাঁদের পথে নামতে হবে। এবার একটা ফয়সালা করতেই হবে। না হলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংবাদিক আবেদ খান, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, কৃষিবিদ আবিদুর রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
কর্মসূচি: সম্মেলনে চারটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান (প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া সাপেক্ষে); গণজাগরণ মঞ্চসহ অভিন্ন দাবিতে সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ; সব বিভাগীয় সদরে নাগরিক সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ এবং পাঁচ দফা দাবির সমর্থনে আলাদা আলাদা আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।
গতকাল শনিবার হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ে গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মহাসমাবেশ চলে। মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে মঞ্চে যান বিএনপির খুলনা মহানগরের সভাপতি সাংসদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান এবং বিএনপির নগর কমিটির সহসভাপতি শাহরুজ্জামান মোর্তজা। তবে তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দেননি। সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল নানা রকম ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিল, নাস্তিকদের বাংলাদেশে ঠাঁই নেই, ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের ফাঁসি চাই ও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চাই। এ সময় সমাবেশ থেকে স্লোগান উঠতে থাকে—'ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই।'
খুলনা জেলা ও মহানগরের আমির মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহমুদুর হাছান, হুমায়ুন কবীর ও মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, ঢাকা মহানগরের আমির আল্লামা নূর হুসাইন কাশেমী, যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা শাখাওয়াত হোছাইন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীসহ ঢাকা মহানগর ও খুলনা বিভাগের নেতারা।
সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের নেতা মাওলানা মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশে ইসলাম যায় যায় অবস্থা। রসুলের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারকে ৬ এপ্রিল হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে, ৫ মে লাল কার্ড দেখানো হবে।
মাওলানা মুজিবুর রহমান বলেন, '১৩ দফা দাবির মধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি রয়েছে। ওই ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে নারীরা সম্মানের আসনে বসবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ছেড়ে না দিলে ৫ মে অবস্থা হবে ভয়াবহ।' মাওলানা মাইনউদ্দিন রুহী বলেন, 'সরকার নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষ নিয়েছে। আর নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। ৫ মের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হবে—তা মেনন ও মতিয়া ঠেকাতে পারবেন না।'
মাওলানা আবদুল রফিক বলেন, 'আমাদের দাবি মানলে সরকারের মঙ্গল হবে। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা চায়, বঙ্গবন্ধুর বাংলা চায় না। তাই তারা জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়।'
মাওলানা জাফরউল্লাহ খান বলেন, 'আমাদের কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। দ্রুত তাঁর মুক্তি না দিলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে।'
খুলনা জেলার সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান সরকার ও তাদের দোসররা ইসলামকে নিয়ে নানা যড়যন্ত্র করছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেছে হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। হেফাজত পালিয়ে যায়নি। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রাজপথকে স্বোচ্চার করে তুলেছে। আমাদের ১৩ দফা না মানলে মসনদ থেকে আপনাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।'
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে এক সমাবেশে চরমেনাইয়ের পীর এ কথা বলেন। যশোর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রোডমার্চপূর্ব বরিশালে ওই জনসভার আয়োজন করা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর এ জনসভার আয়োজন করে।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, 'বাংলাদেশে তিন ধারার রাজনীতি চলছে। একটি আ.লীগের ধারা, অন্যটি বিএনপির ধারা। আর একমাত্র ইসলামের ধারার রাজনীতি করে ইসলামী আন্দোলন। ইসলামের নামে অন্যান্য যে দল রয়েছে, তাদের কেবল নামে আছে, কাজে ইসলাম নাই।' তিনি আরও বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বিএনপি বা আওয়ামী লীগের দালালি করে না। কোনো ক্ষমতার রাজনীতির দালালি করে না। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নীতি বাস্তবায়নের দালালি করে।'
ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছাহাক মোহামঞ্চদ আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা রুহুল আমীন খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব মো. ইউনুস আহমেঞ্চদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এসব দাবি করেছে সুন্নিয়ত, খানকা ও তরিকতপন্থী হিসেবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা'আত। সমাবেশ থেকে ১২ দফা দাবিতে আগামী ২৫ মে ঢাকায় সুন্নি মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ ও ১১ মে নারায়ণগঞ্জে জেলা সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সমাবেশে জঙ্গিবাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েমের চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা দাবি করেন, 'সরকার হেফাজতি ও জামায়াতিদের ওপর ভর করে চলছে, ভোটের অঙ্ক কষছে। কিন্তু ক্ষমতায় কে বসবে, তা ভবিষ্যতে সুন্নিরাই নির্ধারণ করবে।'
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইমাম-এ আহলে সুন্নাতের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী। তিনি বলেন, 'আমরা রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। আমরা আজকের সমাবেশ শুধু আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সারা দেশের জন্য পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি পাবেন ২৫ মে।'
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় বসে প্রথমেই কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সুন্নি আলেমদের সঙ্গে বসেনি। অথচ এই কওমিরা এখন সরকারের গদি নিয়ে টানাটানি করছে। তিনি বলেন, 'ফটিকছড়িতে জামায়াত ও হেফাজতের আক্রমণের পরও সরকারের লোকজন হাতে চুড়ি পরে বসে আছেন। কিন্তু আমরা সেভাবে বসে থাকব না। সুন্নি আলেমদের ওপর কোনো হামলা হলে আমরা তা প্রতিহত করব।'
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল্কাদেরী বলেন, 'ইসলামের নামে কোনো হামলা নেই, ইসলামের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তবে আমাদের জান-মালের ওপর যদি হামলা আসে, তা মোকাবিলার জন্য সুন্নি-জনতা প্রস্তুত আছে।'
হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতার প্রকাশনা তুলে ধরে কাজী মঈনুদ্দীন আশরাফী অভিযোগ করেন, এসব প্রকাশনায় আল্লাহ ও রাসুল (সা.)কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী, মু্ফতি ওবাইদুল হক নঈমী, ইদ্রিছ রেজভী, আজিজুল হক আল্কাদেরী, সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্, মুহাম্মদ নুরুল মুনাওয়ার, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ প্রমুখ।
১২ দফা দাবি: মহাসমাবেশে ১২ দফা দাবি পড়ে শোনান আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। দাবিগুলো হলো: ১. ফেসবুক ও ব্লগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে আইন সংস্কার এবং সব অভিযুক্তের বিচার নিশ্চিত করা, ২. সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন, ৩. সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ৪. হরতাল বন্ধ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, ৫. নারী উন্নয়ন নীতিমালা থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী অংশ বাদ দেওয়া, ৬. জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ওয়াহাবিবাদী কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি সিলেবাসের আওতাভুক্ত করে অভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ৭. ইসলামের নামে হেফাজত-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক ও নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন, ৮. তাবলিগ জামাতের আড়ালেও জঙ্গিবাদী বিদেশি তালেবান গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে দেশীয় জঙ্গিদের যোগসাজশে নাশকতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই তাবলিগি কার্যক্রম সরকারি নজরদারিতে আনা, ৯. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত কামিল-ফাজিল পাস শিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও বিধিবিধানের বিকৃত বন্ধ করা, ১০. নাস্তিক, মওদুদী, ওয়াহাবি, কাদিয়ানিসহ সব ভ্রান্ত মতবাদের প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ১১. মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ, বিশ্ব মুসলিম নেতাদের ও বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ১২. সুন্নি ওলামা-মাশায়েখ ও বিভিন্ন মাজার-খানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশসহ নিরীহ জনতার ওপর হামলা, হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচার দাবি।
প্রসঙ্গত, এ ১২ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফা হেফাজতের ইসলামের ১৩ দফার মধ্যেও আছে। এ ছাড়া ৫ ও ১০ নম্বর দফার সঙ্গেও হেফাজতের দাবির আংশিক মিল রয়েছে।
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী | |
---|---|
নেতা | মতিউর রহমান নিজামী |
সদর দপ্তর | ঢাকা, বাংলাদেশ |
মতাদর্শ | ইসলামী |
ওয়েবসাইট | |
jamaat-e-islami.org |
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ[১]বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার প্রমাণ রয়েছে।[২][৩][৪][৫]
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]ইতিহাস
সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬২ সালেআইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। [৬]সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।[৭]
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার,আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১২ই ডিসেম্বরবুধিজীবী হত্যকান্ডে জড়িত থাকা[৮] সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।[৯]
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতেরকড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। [১০]
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গোলাম আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।[১১]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কতৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ অধ্যায়
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর ভারপ্রাপ্ত আমীর পদ লাভ করেন আব্বাস আলি খান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
[সম্পাদনা]সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। [১২]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিবন্ধন বাচাঁতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৩]
[সম্পাদনা]উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।[১৪]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্ল্যেখ করে।[১৫]
[সম্পাদনা]সাংগঠনিক কাঠামো
জামায়াতে ইসলামী বাঙলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
- কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলন,
- আমীরে জামায়াত,
- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা;
- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং
- কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ।[১৬]
[সম্পাদনা]তথ্য সূত্র
- ↑ জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করেছে। দ্য ডেইলি নিউ নেশন, ২১ অক্টোবর, ২০০৮
- ↑ জনতার আদালতে জামাতে ইসলামী- দিব্য প্রকাশ, ৩৮/২ ক, বাংলাবাজার, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১৮
- ↑ দৈনিক পাকিস্তান, ২৮শে নভেম্বর, ১৯৭১ , সাভারে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারদের ট্রেনিং শেষে জেনারেল নিয়াজী বলেনঃ"একদিকে তাদের ভারতীয় চরদের সকল চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে, অন্যদিকে বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথে আনতে হবে।"
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=16 রাজাকার ও তাদের সহযোগীরা
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=246 তারা যা বলেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep01.html#dr_a_m_malik
- ↑ http://profile-bengal.com/mnnews/sep18.html#ten_member_council
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=32
- ↑ http://www.genocidebangladesh.org/?page_id=36
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৭১
- ↑ দৈনিক সংগ্রাম ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ [নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
- ↑ নিবন্ধন বাচাঁতে 'আল্লাহ-রসুল' বাদ দিল জামায়াত
- ↑ http://shujan.org/2009/07/20/জামায়াতে-ইসলামী-বাংলাদেশ/
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
তিনি বলেন, "আমাদের একটি তরুণ সমাজ রয়েছে, যা আর কারো নেই; যারা অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই বিশাল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা '৭১ সালে ভয় পাইনি। এখনও ভয় পাবো না। আমাদের পরিষ্কার বলতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।"
জার্মানির নাৎসী বাহিনীর কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, "জার্মানিতে যেমন নাৎসী বাহিনী রাজনীতি করার অধিকার পায়নি, তেমনি বাংলাদেশেও জামায়াত থাকতে পারে না। বিশ্বাস রাখতে হবে, বিজয় আমাদের হবেই।"
সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইইবি)মিলনায়তনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
স্যালুট স্যার।
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
রাজাকারের ফাঁসি, জামাত-শিবির নিষিদ্ধ ও সফি হুজুরের বিচার চাওয়া হল চট্টগ্রামে সুন্নিদের সমাবেশে থেকে........
এছাড়াও উগ্র ইসলামপন্থী হেফাজতি ভন্ডদের শাস্তির দাবিতে ২৫ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষনা দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।
আজ চট্টগ্রামের লাল দিঘীর ময়দানের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের মহাসমাবেশ থেকে এসব ঘোষণা দেয়া হয়।
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
বিকেল থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে হেফাজতে ইসলাম সুন্নিদের আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে তারা অনলাইনে সুন্নিদেরকেও নাস্তিক বলা শুরু করেছে। ( লেজ গোপন রাখা কঠিন)
সুন্নি আন্দলোনকারিদের দাবি গুলোর মধ্যে অন্যতম দুইটি দাবি হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এবং জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি।
এর আগে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামাত-শিবিরের নিষিদ্ধকরনের দাবি তোলা গণজাগরন মঞ্চ বন্ধ করারও দাবি তুলেছিল হেফাজতে ইসলাম।
তো হেফাজতে ইসলামের চরিত্রটা একটু মিলিয়ে দেখুন। যারাই আলোচ্য দাবি দুইটি তুলছে হেফাজতে ইসলাম তখনি তাদের বিরোধিতা করা শুরু করেছেন। এরা নিজেদের হীন স্বার্থ রক্ষায় যে কোন কিছু করতে পারে। সুন্নী মুসলমানদেরকে উস্কে দিয়ে এরা চাইবে একটা ধর্মীয় দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে। কেননা, হাতে এখন ২টা বড় যুদ্ধাপরাধীদের রায় আসন্ন। তাই সতর্ক থাকুন, শান্তির ধর্ম ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে তারা যেন সুন্নি মুসলমানদের সাথে কোনরুপ ধর্মীয় দাঙ্গা না বাজাতে পারে।
সাধু সাবধান!!!!
আফসোস.....ধর্ম নিয়ে কথা বলা একজন কে দেখছি যিনি প্রকাশ্যেই নিজের লেখনীতে নিজেকে নাস্তিক বলেছেন, তিনি সহ আরো ২ জন কে দেখছি যারা বিবাহের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী দায়ে অভিযুক্ত দেখছি যিনি কর্মীদের স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানো নিয়ে বলেছিলেন "এটা হতেই পারে"। '৭১ এ তার নেতৃত্ব এর ভয়াবহতা কে না জানে। সাবেক বানিজ্য মন্ত্রীদের দেখছি যারা '৭৫ এ বাকশালী ছিলেন আবার '৯১-'৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ দুবারই ভারতকে সর্বাধিক ১৬৮ টি শুল্ক মুক্ত পণ্য এদেশে ঢোকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন, কেউ নিশ্চয়ই ভুলে যাননি এই দুই সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের বানিজ্য ঘাটতি ছিল সর্বোচ্চ। আশ্চর্যের বিষয় দুজন সরকারি কর্মকর্তা দেখছি যারা প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে এই মিটিংয়ে এলেন কী করে!!!?????
কিন্ত, এরাই দেশের সব। মন্ত্রি হয়েছে। ফটিকছড়ির মত '৭১ এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও স্বাধীন দেশে আমার পতাকা গাড়িতে নিয়ে ঘুরেছে। একটি পত্রিকা অফিসে বসে মুক্ত চিন্তার নামে ষড়যন্ত্র করেছে।
আমরাই তো এদের নির্বাচিত করেছি। ভোট দিয়েছি। উপাচার্য বানিয়েছি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যও এখানে আছেন)।বানিজ্য ঘাটতি তৈরি করতে দিয়েছি.................
ইসলাম নাম দিয়ে খুন বন্ধ হয়েছে? ভারতের সাথে রাষ্ট্রীয় ভাবে মাখামাখি বন্ধ হয়েছে? এদেশে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো বন্ধ হয়েছে? যাকে তাকে যে কোন উছিলায় নাস্তিক মুরতাদ মুনাফিক ইত্যাদি ডাকা বন্ধ হয়েছে? রাষ্ট্রীয় খুন-খারাবি, বাংলা ভাইয়ের জন্ম, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, আবার কিছুই সামলাতে না পারলে সেনাবাহিনী ধরে ডাকাডাকি কিছুই কী বন্ধ হয়েছে? ....................... . হয়েছে কী বন্ধ???????!!!!!!!
এদের কোন একটা common স্বার্থ আপনি আমি কী দেখতে পেয়েছি?......
এত দিন পাইনি....পেলেও বুঝিনি.....এবার বুঝতে পেরেছি.....নিশ্চিত ভাবেই.......
নিজের মা কে ধর্ষণ আর ভাই কে হত্যার ৪২ বছর পরেও যে জাতি তার বিচার করতে পারে না, তারা এই নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কিছু দাবী ও করতে পারে না.......
পাশের ব্যাক্তির কথা ছাড়ুন....এবার আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময়.......
জয় বাংলা!
কার্টেসিঃ রফিকুল্লাহ রোমেল
গোলাম আযমের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত ১২ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন সাফাই সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। 'সবেধন নীলমণি' ওই সাফাই সাক্ষীও হচ্ছেন গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আযমী।
যদিও সাফাই সাক্ষ্য হাজির করার জন্য ট্রাইব্যুনাল ৬ মাসে বার বার সময় দিয়েছেন, তারপরও একজন মাত্র সাক্ষীকে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়াতে পেরেছেন 'শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী' বলে খ্যাত গোলাম আযমের আইনজীবীরা।
এই ভণ্ডটা নিজের পক্ষে নিজ পুত্র ছাড়া আর কোন চাটুকারকে খুজে পায় নি, দেখুন পাপের প্রায়শ্চিত্ত এরকমই হয়।
এ হুমকি তার দল বিএনপির নয় , তার তজ্জন
জামাতের নয় , তার সহকর্মী সাংবাদিক সমাজেরো নয় । এ হুমকি হেফাজতে ইসলামের ।
আপনি নাক সিটকে বলতেই পারেন "মার চেয়ে মাসির দরদ বেশী " ।
কিন্তু জামাত, বিএনপি, মাহমুদুর রহমানের সাথে হেফাজতের যোগাযোগ থাকার সন্দেহ করেছেন, তো এটা নিশ্চিত আপনি "নিখিল বাংলা ছাগু সংঘ কতৃক সার্টিফাইড একজন ভয়াবহ নাস্তিক " !
-বিদ্রোহী বিদ্রোহী.
No comments:
Post a Comment