আশিস নন্দী, বেশ হেয় করার সুরেই, বলছেন যে, বাংলা একশো বছর ধরে অনেকটা দুর্নীতিমুক্ত ছিল ও আছে, কারণ সেখানে এসসি, এসটি, ওবিসিরা সরকারি কাঠামোয় জায়গা পায়নি।মা মাটি মানুষের পরিবর্তন সরকার পশ্চিম বঙ্গের ওবিসিদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ করতে চলেছে, এই খবরে এখন দুনিয়া তোলপাড়।এই বাজেট বরাদ্দ কতটা হবে, কিসের মাপকাঠিতে হবে, তা নিয়ে আম জনগণের মাথাব্যথা নেই।
পলাশ বিশ্বাস
আশিস নন্দী, বেশ হেয় করার সুরেই, বলছেন যে, বাংলা একশো বছর ধরে অনেকটা দুর্নীতিমুক্ত ছিল ও আছে, কারণ সেখানে এসসি, এসটি, ওবিসিরা সরকারি কাঠামোয় জায়গা পায়নি।মা মাটি মানুষের পরিবর্তন সরকার পশ্চিম বঙ্গের ওবিসিদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ করতে চলেছে, এই খবরে এখন দুনিয়া তোলপাড়।এই বাজেট বরাদ্দ কতটা হবে, কিসের মাপকাঠিতে হবে, তা নিয়ে আম জনগণের মাথাব্যথা নেই।
বাংলায় তিন শতাংশ ব্রাহ্মণ, পাঁচ শতাংশ কায়স্থ বদ্যি, সতেরো শতাংশ তফসিলী ও সাত শতাংশ আদিবাসী বাদে সাতাইস শতাংশ মুসলমান।
বাকী একচল্লিশ শতাংশ হিন্দু ওবিসি।
মুসলমানদের জনসংখ্যার সিংহভাগও ওবিসি।
গড়পড়তা অন্ততঃ পন্চাশ শতাংশ জনগণের জন্য কি অর্দধেক বাজেট বরাদ্দ করবেন মমতা ব্যানার্জী?
না , ওবিসি ভোটব্যান্কের জাদুতে সারা দেশে যে ক্ষমতার রাজনীতি চলে তারই অনুসারী হয়ে মুখে আশ্বাসন ও কাজের বেলায় লবডন্কা নীতি অনুসরণ করবেন তিনি?
ভারত ভাগের এত বছর বাদে এই বাংলায় ওবিসিদের জন্য আলাদা বরাদ্দ ঘোষণায় তিনি কি আশিস নন্দীর বক্তব্যেরই সমর্থন করছেন না?
মন্ডল কমিশন রিপোর্ট কার্যকর করার দাবিতে সারা ভারতে জোর সওয়াল করেও কমরেড জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে সিপিএম একবারের জন্যেও বাংলায় ওবিসির অস্তিত্ব স্বীকার করেনি, এই তথ্য কি সত্য নয়?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জমি আন্দোলন বিপর্যয়ের মুখে ওবিসি ভোটব্যান্ক ধরে রাখতে সাত শতাংশ সংরক্ষণ ওবিসিদের জন্য ঘোষণা করলেন, কিন্তু চাকরি হল কত জনের?
বাংলায় মন্ডল কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ওবিসি, তাঁদের জাতি প্রমাণপত্র জারী করার ক্ষেত্রে কি করেছে এ রাজ্যের প্রশাসন?
বুদ্ধবাবূ যেতে যেতে আরও দশ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ মুসলিম ওবিসিদের জন্য ঘোষণা করলেন, কিন্তু কাজের কাজ কতটা হল?
পশ্চিমবঙ্গে আরও আটটি মুসলিম সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণীভুক্ত (ওবিসি) করা হয়েছে। এতে ওবিসি তালিকাভুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টি।
তালিকাভুক্ত মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ। নতুন করে তালিকাভুক্ত অনগ্রসর আটটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে দর্জি বা ওস্তাগার বা ইদ্রিসী, রাজমিস্ত্রি, ভাটিয়াড়া, ঢালি, তালপাখা বেনিয়া, মোল্লা, মুসলিম পেয়াদা ও বারুই। এর মধ্যে মোল্লাদের সংখ্যা বেশি। তাদের সংখ্যা ১৫ লাখ। নতুন তালিকাভুক্ত আট সম্প্রদায়ে মোট ২২ লাখ সদস্য রয়েছে।
ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজন চাকরি, শিক্ষা ও ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে আর্থিক সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে। রাজ্যে এত দিন চাকরির ক্ষেত্রে সাত শতাংশ পদ ওবিসিভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রাজ্য সরকার সম্প্রতি এই সংরক্ষণের হার আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
03 May 2012 01:36:39 PM
কলকাতা : পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে এবার রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ভোট ব্যাঙ্ক সুনিশ্চিত করতে আরও একদফা উদ্যোগ নিল সরকার ৷
সরকারি চাকরিক্ষেত্রে মুসলমান জনগোষ্ঠির আরও ৩৩টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার ৷এর পাশাপাশি মোয়াজ্জেমদেরও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা ৷
অন্যান্য অণগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণে সংখ্যালঘুদের আরও অনেকগুলো সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিলমোহর দিল বুধবার ৷আগামী বিধানসভা অধিবেশনেই এ বিষয়ে বিল আনতে চলেছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৷
রাজেন্দ্রনাথ সাচার কমিটির রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর বেহাল অবস্থার কথা প্রকাশ্যে আসার পরই অস্বস্তিতে পড়ে তৎকালীন বাম সরকার৷
এরপরই রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ মেনে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করে সংখ্যালঘুদেরও তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি চাকরির-ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের প্রায় পুরো অংশকেই ওবিসি কোটার আওতায় আনতে চলেছে রাজ্য
সরকার ৷
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে সমীক্ষা প্রায় শেষ ৷আগে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া ওবিসিদের মোট ৬৫টি সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় ছিল।
এবার আরও ৩৩টি অন্তর্ভুক্ত করা হল ৷আরও ৭/৮টি সম্প্রদায়কেও এর আওতায় আনা হবে ৷
এদিকে, ইমামদের সাম্নানিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এবার মোয়াজ্জেমদেরও ওয়াকফ বোর্ড ভাতা দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তিনি বলেন, তাদের মাসে ১ হাজার রুপি করে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। এরজন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সাহায্য করবে রাজ্য সরকার৷
সংখ্যালঘু সংরক্ষণের প্রশ্নে এদিন বিগত বাম সরকারকে সমলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম মুখে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বললেও তাদের সরকার এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি৷
অমল সরকার লিখেছেন এই সময়েঃ
উচ্চশিক্ষায় আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মানুষের উন্নয়নেও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রথম ওবিসিদের জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ সেই স্বাধীনতার পর থেকে এত কাল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন তথা পরিকল্পনা বাজেটে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ থাকছে৷ আগামী সোমবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে বাজেট পেশ করতে চলেছেন তাতে অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দফতরের বাজেটে ওবিসিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দের সংস্থান থাকছে৷ অর্থ দন্তর ইতিমধ্যেই অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দপ্তরের বাজেটে এ জন্য পৃথক খাত বা বাজেট হেড খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দন্তরের পরিকল্পনা খাতেও ওবিসিদের জন্য পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হবে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করার মতোই বাজেটে পৃথক বরাদ্দের সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক তাত্পর্য অসীম৷ এর মাধ্যমে অত্যন্ত অনগ্রসর মানুষের বসবাসের এলাকায় উন্নয়নে বাড়তি অর্থ খরচ হবে, যার সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবে গরিব মুসলিম জনতা৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত যে ১৪৪টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ৮৬টিই হল অনগ্রসর মুসলিম৷ ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ওই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বসবাসের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হতে পারে৷ এ ছাড়া রাস্তাঘাট, পানীয় জলের মতো সম্পূর্ণ পৃথক প্রকল্পও হাতে নেওয়া যেতে পারে৷ জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি মুসলিম, এমন এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ দিয়ে থাকে৷ পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ ওই প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷
বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বারের জন্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দলিতদের উন্নয়নে নয়া দিশা পেতে পারে৷ বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যও৷ সমাজের এই অংশের মানুষের হয়ে রাজনীতি করার সুবাদেই উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম-মায়াবতী, বিহারে লালু-নীতীশ, তামিলনাড়ুতে করুণানিধি-জয়ললিতা, কর্নাটকে দেবগৌড়া-ইয়েদুরাপ্পারা লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পেরেছেন৷ শ্রেণি সংগ্রামের রাজনীতিতে অভ্যস্ত সিপিএম-সিপিআইসহ বামপন্থী দলগুলি দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছে৷ এমনকী পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি বলে কিছু নেই, এমন দাবিও করা হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের তরফে৷ তাদের ঘুম ভাঙে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর৷ ঘুরে দাঁড়াতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওবিসিদের খুশি করতে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিলেও হাওয়া ঘোরেনি৷ বুদ্ধদেববাবুর দেখানো পথকেই রাজ্য রাজনীতিতে দলের ভিত মজবুত করতে হাতিয়ার করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷
মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকেই এই ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হতে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লি থেকে সাড়া না-মেলায় রাজ্য সরকার নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরের সচিব সঞ্জয় থাড়ে বৃহস্পতিবার বলেন, 'কয়েকটি রাজ্যে ওবিসি'দের জন্য পৃথক দন্তর আছে৷ আমাদের রাজ্যে ওবিসি'দের নিয়ে ভাবনাচিন্তাই শুরু হয়েছে কয়েক বছর হল৷ তাই এখনই পৃথক দন্তর খোলার সুযোগ নেই৷ তাই ওবিসি'দের উন্নয়নে জোর দিতে বিভাগীয় বাজেটেই পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হচ্ছে৷'
বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ হলে কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন ওবিসিভুক্ত মানুষেরা? অনগ্রসর কল্যাণ দন্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মতো জনসংখ্যাকে মাপকাঠি করা হলে পশ্চিমবঙ্গে বাজেটের এক-চতুর্থাংশই ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবর্ষেই উন্নয়ন খাতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে৷ চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরে ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল৷ এ বছর তা বৃদ্ধি করে ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে৷ এখন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের মাত্র ২৩ কোটি টাকা ওবিসিভুক্ত মানুষের কল্যাণে খরচ হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রি ও পোস্টম্যাট্রিক বৃত্তিপ্রদান প্রকল্পে রাজ্যের দেয় ২১ কোটি টাকা৷ এ ছাড়া বছর কয়েক হল ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ তিনটি ইতিমধ্যে হয়েও গিয়েছে৷ ন'টি নির্মীয়মাণ৷ এই খাতে বরাদ্দ আছে ২ কোটি টাকা৷ এ রাজ্যে প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ পায় ১ লাখ ওবিসি ছাত্রছাত্রী৷ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী পায় পোস্টম্যাট্রিক স্কলারশিপ৷
আশিস নন্দী মহাশয়কে একটি খোলা চিঠি
আপনাকে ধন্যবাদ আশিস নন্দী মহাশয়। ধন্যবাদ এই কারণে যে আপনি শাসক শ্রেণীর পক্ষ নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের আর্থ সামাজিক বিকাশের প্রকৃত সত্যটি উন্মোচন করে দিয়েছেন। জয়পুর করপোরেট সাহিত্য উত্সবে "সংরক্ষন বিরোধী মঞ্চে" আপনি বলেছেন যে, ভারতবর্ষে দুর্নীতির জন্য দায়ী হল এসসি, এস টি ও ওবিসি মানুষেরা । ... গত একশো বছরে এসসি/এসটি ও ওবিসিরা পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতায় নেই তাই এখানে দুর্নীতি কম। অর্থাৎ আপনি পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছেন যে,গত একশো বছর ধরে পশ্চিম বাংলায় এসসি/এসটি ও ওবিসিদের কোন আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়নি। ক্ষমতায়ন হয়েছে এই ৩ ক্যাটেগোরির বাইরের মানুষদের। আপনাকে আরো ধন্যবাদ জানানো যেত যদি আপনি এই তালিকার সাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও জুড়ে দিতেন। তবেই বাংলার বহুজনকে চিহ্নিত করতে আমাদের সুবিধা হত।
আপনার আলোচনা সূত্র ধরে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন এসে যায় যে, এই ৩ ক্যাটেগোরির বহুজন সমাজের বাইরের মানুষ কারা? এবং বাংলার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাদের পরিচয় কি? বা অবস্থান কোথায়?
সেন্সাস, ২০০১ অনুশারে পশ্চিমবঙ্গে এসসি/এসটি ও ওবিসিদের জনসংখ্যাগত অবস্থান নিম্নরূপঃ
এসসি - মোট জনসংখ্যার- ২৩%
এসটি- মোট জনসংখ্যার- ৫.৫%
ওবিসি- মোট জনসংখ্যার- ৬০ % এর বেশী।
ব্রাহ্মণ - মোট জনসংখ্যার- ২ %
কায়স্থ/বদ্দি -মোট জনসংখ্যার- ৩%
অন্যান্য- মোট জনসংখ্যার- ৬.৫%
এখানে অন্যান্য জনসংখ্যার মধ্যে আছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অবাঙ্গালী মানুষেরা। যাদের অধিকাংশই আপনার উল্লেখিত শাসক শ্রেনীর মানুষ নয়। অর্থাৎ নির্দ্বিধায় একথা বলা যায় যে,পশ্চিমবঙ্গের ৯৫% মূলনিবাসী বহুজন বাঙালীর ১০০ বছরের মধ্যে কোন ক্ষমতায়ণ হয়নি। ক্ষমতায়ণ হয়েছে মাত্র ৫% মানুষের, যারা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অবঙ্গীয়। হয় তারা আনিত,নতুবা অনুপ্রবেশকারী অথবা বহিরাগত। তাই আপনার কথিত ১০০ বছর নয়, বরং পাল যুগ অবসানের পরবর্তী কাল থেকে বাংলার মূলনিবাসী বহুজন কতিপয় অবাঙ্গালী শোষকদের কাছে পদানত,শৃঙ্খলিত অপমানিত।
এখন প্রশ্ন হল, আপনি কোন মাপক শলাকায় জরিপ করে দাবী করলেন যে,বাংলায় অবঙ্গীয় শাসকদের সুশাসনে দুর্নীতি কম। এবং এই অবঙ্গীয়দের সুশাসনে বাংলার মূলনিবাসীরা দুধে-ভাতে প্রতিপালিত হচ্ছে। তাদের সন্তানেরা অপুষ্টি নিয়ে জন্মাচ্ছে না। মহিলারা অ্যানিমিয়াতে ভুগছে না। তাদের সন্তানেরা সুশিক্ষিত উঠছে। এবং অধিকাধিক সুযোগ পেয়ে বাংলাকে শ্মশান থেকে তুলে এনে সোনার বাংলায় রূপায়িত করে ফেলেছে।
আপনি কি বোঝাতে চাইছেন যে, অবঙ্গীয় শাসকেরা যেহেতু মূলনিবাসীদের কাঙ্খিত ক্ষমতায়ানের সব কলস ভর্তি করে দিচ্ছে তাই মূলনিবাসীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ানের কোন প্রয়োজন নেই। তেলা মাথায় বেশী করে তেল ঢাললে সে তেল গড়িয়ে গড়িয়ে পায়ের তলার ধুলোকেও ভিজিয়ে দেবে। এতেই অনায়াশে ভর্তি হয়ে যাবে প্রান্তজনের পেট। কি দরকার এত কিছু বুঝে? কি দরকার এত মাথাব্যাথার। বরং তারা সুশাসনের সুবাতাস নিয়ে মিলেনিয়াম, বিলেনিয়াম, সান সিটি বা ফ্যান সিটিতে ঘুরে বেড়াক। জল-জঙ্গল -জমি বেঁচে দিক। চাষবাসের মত আদিম বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে ন্যানো,ফিয়াট বা স্কর্পিওর চাকায় হাওয়া দিক।
রাস্তার পাশে দোকান খুলে বসুক। পিঁয়াজি, ফুলুরি মায় চাউমিন বিক্রি করুক । গ্রামের মেয়েগুলো ঘুঁটে গোবরের আল্পনা ছেড়ে বিউটিপার্লার আর ম্যাসাজ সেন্টারে গিয়ে ট্রেনিং নিক। রাতের বেলা ব্রথেল গুলোতে অতিথিদের আপ্যায়ন করতে শিখুক। উন্নয়নের এটাইতো গতিমুখ। সেটাই যখন তড়িৎ গতিতে তরান্বিত হচ্ছে, তখন মুলনিবাসীদের আলাদা সংরক্ষণ আলাদা করে ক্ষমতায়ানের কোন দরকার নেই!
ধন্য আপনি আশিস নন্দী মহাশয়। ব্রাহ্মন্যবাদীদের সাথে জলচলের সহবস্থানে আপনার এ অমোঘ পরিণতিতে আমরা বিস্মিত নই। বরং এটাই কঙ্খিত। কেননা প্রসাদান্ন ভোগ করা ভৃত্যের কাছে প্রভুর মাহাত্ব কীর্তন নতুন কিছু নয়। দাসত্বের এ এক পুরাতনী বিধান। যেটা আপনি স্বভক্তি তা পালন করেছেন। আপনার মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
আমি জানিনা আপনার সমাজতত্ত্বের বিনম্র অধ্যায়নে ইতিহাসের কতটা মূল্য আছে। শোষণ শাসনের কোন নীতি শ্রম এবং উৎপাদক শ্রেণির কাছ থেকে তাদের জীবন-জীবিকা,আত্মপরিচয়,মান-মর্যাদা কেড়ে নিয়ে তাদের অপাঙ্কতেয়,অশুচি করে দেয় তা আপনার আভিধানিক শব্দ সঞ্চয়নের মধ্যে আছে কিনা।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে ১৯০৬ সালে মহাত্মা গুরুচাঁদের নেতৃত্বে বাংলা এবং আসামের লেপ্টেন্যান্ট ল্যান্সল টের কাছে একটি তালিকা দিয়ে বাংলার দলিত জাতিসমূহের জন্য ভাগিদারী দাবী করা হয়। সেই তালিকায় বাংলার চন্ডাল সহ যে ৩১ টি জাতির নাম দেওয়া হয়েছিল সেখানে আপনার জাতি তিলি-নবশাখ তালিকা ভুক্ত ছিল। ১৯০৭ সালে আসাম বাংলার জন্য এই আইন কার্যকরী হয়। নেটিভরা শিক্ষা, চাকরী ও রাজকার্যে ভাগিদারী পায়। ১৯০৯ সালের মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনে গুরচাঁদের দেখানো এই পথ সারা ভারতবর্ষের জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং ১৯১৯ সালের মন্টেগু চেমস ফোরডের ভারত শাসন আইনে সমগ্র ভারতের জন্য তা কার্যকরী হয়। অর্থাৎ আপনার পূর্ব পুরুষদের শিক্ষা সম্ভব হয়েছিল সংরক্ষণ আইনের জন্যই। আর আপনার এপর্যন্ত অর্জিত সমস্ত সুখ্যাতির প্রতিটি পালকের গোড়া ছিল সংরক্ষিত। কিন্তু,আপনি এখন সংরক্ষণ বিরোধী মঞ্চের প্রধান প্রবক্তা।
বেশ বেশ!
সমগ্র মূলনিবাসীরা আপনাকে দেখে নিয়েছে! যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। যা করবার করেছে। কিন্তু আমরা এখনো অনেক উত্তর আপনার কাছ থেকে পাইনি।
আপনি কি আমাদের বুঝিয়ে বলবেন,কোন সুশাসনের কল্যাণে মূলনিবাসীদের সমস্ত সম্পদ, স্থাবর-অস্থাবর,জল-জঙ্গল-জমি মুষ্টিমেয় অবঙ্গীয় শাসকদের হাতে পুঞ্জিভুত হয়? শ্রম এবং উৎপাদক শ্রেণীর পেটের উপর পা দিয়ে পরগাছা, পরভোগীদের স্বেচ্ছাচারের ইমারৎ ওঠে। এবং এই প্রক্রিয়াকে সুশাসন বলে মহিমান্বিত করার জন্য আপনার মত একজন জলচল শূদ্রকে ময়দানে নামানো হয়। সময় পেলে বলবেন। অন্য কোথাও। অন্যখানে। আমরা মূলনিবাসী বঙ্গবাসী এসসি/এস টি,ওবিসি সমাজ আপনাকে গৌড়ীয় সুধা পান করতে দেখে ধন্য হব।
ধন্যবাদান্তে
শরদিন্দু উদ্দীপন
সোনারপুর, কোলকাতা-৭০০১৫০
দুর্নীতি সম্বন্ধে আশিস নন্দীর ধারণায় বিভ্রান্তি আছে। দুর্নীতির দায়টা তিনি ব্যক্তি থেকে জাতিবর্গের (কাস্ট) ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। এবং ঘটনা হল, স্বাধীন ভারতেও উচ্চবর্ণের ভদ্রলোকরাই তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে সব কিছু হস্তগত করেছেন। অন্য দিকে যে বর্গের মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, স্বাধীনতার পরেও যাঁরা কিছুই পাননি, বিশেষত সরকারি কাঠামোয় কোনও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাই পাননি, আশিসবাবু তাঁদেরই দুর্নীতিগ্রস্ত বলছেন! আমরা জানি, কারও গায়ে দুর্নীতির তকমা লাগলে তার জীবনটাই বরবাদ হয়ে যায়, সে যদি সত্যিই দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়, তবুও। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনই সত্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও।আশিস নন্দীর বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে লিখেছেন কান্চা ইলাইয়া।
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি জাতি এবং তফসিলি জনজাতির লোক'জয়পুর সাহিত্য উৎসবে সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর এই মন্তব্যে এই সব বর্গের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, মর্মাহতও। তাঁদের মনে হয়েছে, আশিসবাবু তাঁদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে দুর্নীতির দায়ে দায়ী করেছেন। তিনি অবশ্য বলতে চেয়েছিলেন, একটা দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী সাম্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। কিন্তু তিনি কথাগুলো বলেছেন খুব অদ্ভুত ভাবে।
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
আশিস নন্দী শিক্ষাজগতের মানুষ, বিদ্বজ্জন হিসাবে সম্মানিত। তিনি একটি বিশেষ চিন্তাধারার শরিক। অনেকাংশে বাঙালি বিদ্যাজীবীদের নেতৃত্বে এই ধারার গবেষকরা 'জাতীয়তাবাদী' পণ্ডিতদের থেকে স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছেন এবং এক ভিন্ন ধরনের তত্ত্ব নির্মাণ করেছেন। তাঁরা সর্বদাই দাবি করেন যে, তাঁদের অবস্থান নিম্নবর্ণের পক্ষে। কিন্তু অম্বেডকরের পথ থেকে তাঁরা সর্বদা দূরে থেকেছেন এবং এটা নিশ্চিত করেছেন যে, অন্তত বাংলার নাগরিক সমাজে যেন নীচের তলা থেকে, বিশেষ করে শূদ্র, নমঃশূদ্র এবং আদিবাসীদের মধ্যে থেকে এক জনও বিদ্বৎসভায় উঠে না আসেন। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন ভদ্রলোক কমিউনিস্টদের থেকে নিজেদের আলাদা বলে জাহির করেছেন বটে, কিন্তু রাজ্যে পশ্চাৎপদ বর্গের মানুষের জন্য সংরক্ষণ যাতে কার্যকর না হয়, সেই চেষ্টায় তাঁরাও দশকের পর দশক শরিক থেকেছেন।
লিখেছেন কান্চা ইলাইয়াঃ
তিনি এবং তাঁর মতো ভদ্রলোক পণ্ডিতরা যে রাজ্য থেকে এসেছেন সেখানে রাষ্ট্রশক্তির সদর দফতরের নাম 'রাইটার্স বিল্ডিং'। তথাকথিত সাবঅল্টার্নরা যাতে সেখানে ক্ষমতার অংশী হতে পারে, সে জন্য তাঁরা তাঁদের লেখালিখিতে কতটা সত্যিকারের চেষ্টা করেছেন? কমিউনিজম এবং সেকুলারিজমের ছদ্মবেশে জাতপাতের যে প্রতিপত্তি বাংলায় চলে, তা নিয়ে তাঁদের বিস্তর লেখা উচিত ছিল। এবং আশিস নন্দীর এই ভাবে বাঙালি বিদ্যাজীবীদের এ কথা বলার দরকার ছিল না যে, 'ওবিসি, এসসি, এসটি'রা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' আর বাঙালি ভদ্রলোকরা 'সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণ', এবং ওবিসি, এসসি, এসটি'রা ক্ষমতার বলয়ে ঢুকলে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে সবচেয়ে কম দুর্নীতিপরায়ণদের মিলনের সম্ভাবনা দেখা দিত। এটা কোদালকে কোদাল বলা নয়। এটা হল, কোদালকে কুকুর বলা।
নব্বইয়ের দশকে মণ্ডল আন্দোলনের পরে অম্বেডকর গোটা ভারতে বন্দিত হয়েছেন, কেবল পূর্ব ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ওড়িশা ছাড়া। পশ্চিমবঙ্গে এখনও উচ্চবর্ণ বাঙালি ভদ্রলোকের আধিপত্য। তাঁদের ভুবনে এখনও বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের জয়জয়কার। হ্যাঁ, গাঁধী এবং নেহরুকেও তাঁরা মান্য করেন। কিন্তু চিন্তানায়ক হিসাবে অম্বেডকর তাঁদের কাছে অচ্ছুত। অথচ তিনি যখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন, তখন ক'জন বঙ্গসন্তান সেখানে পিএইচ ডি করেছেন, তা-ও আবার অর্থনীতিতে? অম্বেডকর তাঁর সময়ের বহু বাঙালি বিদ্বজ্জনের চেয়ে বড় পণ্ডিত ছিলেন, বাঙালি বিদ্যাজীবীরা তবু তাঁকে অচ্ছুত করে রাখলেন কেন? কী বাংলায়, কী ইংরেজিতে, কোনও ভাষাতেই বাঙালি তাঁকে নিয়ে চর্চা করল না; এবং পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি, এসসি, এসটি'রা ক্ষমতার বলয়ে ঢুকতে পারল না এই দুটি ঘটনার কি কোনও অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নেই?
আর উচ্চবর্ণ 'সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত' কেন? সেটা কি এই কারণে যে, তাঁরা একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে বাস করেন, যে জগৎটা ওবিসি বা এসসি এসটি'দের জগতের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রাচীন ভারতে যাঁরা খাদ্য উৎপাদন করতেন, তাঁদের শূদ্র বা চণ্ডাল বলা হত। যাঁরা উৎপন্ন পণ্য ভোগ করতেন, তাঁদের বলা হত ব্রাহ্মণ (ভূদেবতা)। কালক্রমে তাঁরা নানা নামে সম্মানিত হন। যেমন, বম্বে প্রদেশে ব্রাহ্মণদের উপাধি বা পদবি হল পণ্ডিত, দেশমুখ, সরদেশাই, দেশপাণ্ডে, ইত্যাদি। ব্রিটিশ আমলে শূদ্র এবং চণ্ডালদের অনেক অংশকে 'ক্রিমিনাল' অর্থাৎ স্বভাবত অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এখন আবার তাঁদের এক গোত্রে ফেলে 'সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' আখ্যা দেওয়া হচ্ছে!
আশিস নন্দী একটা ভাল কাজ করেছেন। ভদ্রলোকের আলোচনাসভায় তিনি জাতপাতের প্রশ্নটাকে এনে দিয়েছেন। আর্থিক, সামাজিক এবং চেতনাগত দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন জাত বা সম্প্রদায়ের দায় কতখানি, সেই বিতর্কটা শুরু হয়েছে। অনেকে অবশ্য সেই বিতর্কে যেতে চাইছেন না, আশিসবাবুর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা নিয়েই তাঁদের মাথাব্যথা। দলিত-বহুজন সমাজের বিদ্যাজীবীদের দায়িত্ব এই মামলার বিরোধিতা করা এবং জাতপাত ও দুর্নীতির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কে যোগ দেওয়া। আমরা যদি এই বিতর্কটা চালিয়ে যেতে পারি, অনেক জঞ্জাল বেরিয়ে আসবে।
হিন্দু সমাজের থাকবন্দি কাঠামোটা দানা বাঁধার পর থেকে এই বিষয়ে একটা সত্যিকারের বিতর্ক কখনও হয়নি। তার কারণ, বিদ্যাজীবীরা বরাবর এসেছেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, এই তিন বর্গ থেকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কিছু তারতম্য দেখা গেছে বটে, কিন্তু জাতপাতের সামগ্রিক ছবিটা মোটের ওপর একই। আমার 'পোস্ট-হিন্দু ইন্ডিয়া' বইতে আমি যাকে 'সামাজিক চোরাচালান' (সোশাল স্মাগ্লিং) বলেছি, সেই বাণিজ্য এবং নিয়ন্ত্রণের দ্বৈত কৌশলে কারা জাতীয় সম্পদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে? আজেবাজে মামলা করে আমাদের ঐতিহাসিক সমস্যাগুলির সমাধান করা যাবে না।
রাজ্য সরকারের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগে ৮৩৪ জনের মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন! |
|
|
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী আবদুস সাত্তার |
|
জাইদুল হক, আপনজন নিউজ এজেন্সি, কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের কিভাবে সংরক্ষণ দেওয়া যায় না নিয়ে যেমন বিস্তর আলোচনা চলছে সরকারি মহলে তেমনি সাম্প্রতিক চাকুরি নিয়োগে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক গ্রুপ ডি বিভাগে সাম্প্রতিক কর্মী নিয়োগে আবারও মুসলিমদের নগণ্য নিয়োগের দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। গত ১৬ মার্চ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সরকারি দফতরের লোয়ার ডিভিশন কর্মী নিয়োগের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মুসলিমদের হার দু শতাংশেরও কম। বিভিন্ন দফতরের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিযোগের যে দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মোট নিয়োগের সংখ্যা হল ৮৩৪ জন। এর মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন। মাস কয়েক আগে কলকাতা পুলিশে নিয়োগে মুসলিমদের স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী আবদুস সাত্তারকে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ২০০১ জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২৫.৫ % সেখানে চাকুরিতে নগণ্য উপস্থিতি কেন সে প্রশ্ন সাচার কমিটির রিপোর্টেও উঠে এসেছে। কিন্তু সরকারের তরফে বারে বারে বলা হযেছে সাচার কমিটির রিপোর্ট ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে প্রকৃত তথ্য অধরাই থেকে গেছে। এরপর রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রথমে মুসলিমদেরকে হতাশ করে দেয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। আর জাতিগতভাবে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার নানা অসুবিধার কথাও তিনি তুলে ধরেন। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হলে তিনি ঘূরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা। এবং পরবর্তীতে ওবিসি-র আওতায় কম আয়ভুক্ত মুসলিমদের সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেন। এ রাজ্যে মুসলিমদের মধ্যে ওবিসি আওতাভুক্ত হল ২ শতাংশের মতো। তাদের মধ্যে আবার বেশি আয়ের মুসলিমরা সংরক্ষণ পাবে না। শিক্ষা সহ বিভিন্ন জরুরি দফতরে আবার এই সংরক্ষণ প্রযোজ্য নয়। এ নিয়ে প্রখ্যাত আই.এ.এস নুরুল হককে অনগ্রসর জাতি হিসাবে মুসলিমদের কিভাবে চিহ্নিত করা যায় তার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকুরিতে কেন মুসলিমদের ৩ শতাংশ উপস্থিতি সে বিষয়ে বরাবরই পাশ কাটিয়ে চলেছেন কি মুখ্যমন্ত্রী কি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী। তারা বারে বারে বলার চেষ্টা করেছেন সাচার কমিটিতে উল্লেখ হওয়া চাকুরিতে মুসলিমদের নগণ্য উপস্থিতি সঠিক নয়। এর প্রত্যুত্তরে তারা সঠিক তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন নি। আসলে তারা ঠারে ঠোরে বলতে চেয়েছেন এ রাজ্যে সরকারি চাকুরিতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য রাখা হয়নি। কিন্তু তথ্য জানার আইন আসার পর এখন অনেক সরকারি তথ্যই সাধারণ জনগণের হাতে আসতে থাকায় তাদের বক্তব্য আর ধোপে টিকছে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ দু দফায় গ্রুপ-ডি লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসট্যান্ট নিয়োগ করে বিভিন্ন দফতরে। এই নিয়োগ করা হয় ২০০৬ সালে ক্লার্কশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ভিত্তিতে। এ বছর ওই পরীক্ষায় সফল হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০. নোটিশ নং: A-37- PSC (A) এই তালিকায় প্রথমে উল্লেখ করা হয় 'SECRETARIAT OF THE PUBLIC SERVICE COMMISSION, WEST BENGAL' দফতরের কথা। এই দফতরে যে ৩৬ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি। তার পর দেওয়া হয় 'P & A R DEPARTMENT,(C C WING),BLOCK-I, 2ND FLOOR, WRITERS' BUILDINGS, KOLKATA – 700 001. ' দফতরের নিয়োগ তালিকা। এই তালিকায় রয়েছে ৫২০ জনের নাম। তার মধ্যে মুসলিম স্থান পেয়েছে মাত্র ১৩ জন। অর্থাৎ পিএসসির দুই দফতর মিলিয়ে মোট নিয়োগের সংখ্যা ৫৫৬ আর মুসলিম নিয়োগ মাত্র ১৩! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার মাত্র ২.৩%। নিয়োগ তালিকায় স্থান পাওয়া ওই ১৩ মুসলিম হলেন: ১. হাসনাল হক। ২. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ৩. কায়েস আলি মিয়া। ৪. আবদুল্লাহ নিসার। ৫. সেখ মনিরুল হক। ৬. শামিম ইয়াসমিন। ৭. তানিয়া গাজি। ৮. সেখ মুহাম্মদ শফিক। ৯. মুহাম্মদ নাসিম। ১০. সৈয়দ নাসিরুদ্দিন। ১১. ফকরুদ্দিন সরদার। ১২. সেখ সাহেব আলি ১৩. মসিউর রহমান।
এরপর সম্প্রতি ২০০৬ সালের ক্লার্কশিপ পরীক্ষার ভিত্তিতে লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ মার্চ, ২০১০। নোটিশ নং: A-61/PSC (A) . এই তালিকায় রয়েছে মোট ২৭৮ জনের নাম। তার মধ্যে মুসলিম মাত্র ৩ জন! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার এক শতাংশেরও কম। প্রথমেতালিকায়স্থানপায় 'WEST BENGAL LEGISLATIVE ASSEMBLY SECRETARIAT, "ASSEMBLY HOUSE", KOLKATA –1.' বিভাগে নিয়োগকৃতদের। এই তালিকায় মোট ১০ জনের নাম থাকলেও একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি। এর পরের তালিকায় রয়েছে 'FOOD & SUPPLIES DIRECTORATE UNDER THE FOOD & SUPPLIES DEPARTMENT, "KHADYA BHABAN" (1ST FLOOR), 11/A, MIRZA GHALIB STREET, KOLKATA –87. ' বিভাগে নিয়োগকৃতদের নাম। এতে রয়েছে ২৬৮ জনের তালিকা। তার মধ্যে মাত্র তিনজন হলেন মুসলিম। এই তিনজন হলেন : ১. সেখ দীন ইসলাম। ২. মুহাম্মদ নাসিমুদ্দিন। ৩. মো. মুদাস্সার। সম্প্রতি খাদ্য সরবরাহ বিভাগে নিয়োগ নিয়ে স্বজন পোষণের অভিযোগ ওঠে। আর এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মুসলিম বৈষম্যের অভিযোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। কারণ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী মহল বারে বারে চাকুরিতে এ রাজ্যে মুসলিম বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসছিলেন। এবার সেই অভিযোগ আরও দৃঢ় হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। সেই সঙ্গে তারা দাবি তুলে আসছেন এ রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে চাকরি দিতে হবে মুসলিমদের, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে এই তালিকা বেশ ভাবিয়ে তুলতে পারে বাম সরকারকে। এমনিতেই বামফ্রন্টের বরাবরের মুসলিম ভোট ব্যাংক-এ ব্যাপক ধস নেমেছে। সামনে ২০১১ সালে বিধান সভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। কারণ রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভর করছে ২০১১ সালে কে এ রাজ্যে চালকের আসনে বসবে। ৩২ বছরের শাসন করে আসা বাম সরকার না তৃণমূল-কংগ্রেস জোট? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বামজোটের অন্তর্গত ফরোয়ার্ড ব্লক দল মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে আসছে। বিশেষ করে তাদের নেতা অশোক ঘোষ জোরালো করে মুসলিম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাম সহ বিভিন্ন মহলে ব্যক্ত করেছেন। বলে রাখা ভাল, খাদ্য মন্ত্রক ফরোয়ার্ড ব্লক-এর অধীনে রয়েছে। একদিকে যখন চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে চলেছেন শ্রী অশোক ঘোষ মহাশয় তখন তার দলের অধীনে থাকা দফতরে নিয়োগে ২৬৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন মুসলিম স্থান পেয়েছে। এর পর অশোক ঘোষের মুসলিম সংরক্ষণের বিষয়ে সওয়াল নিয়ে প্রকৃত আন্তরিকতার প্রশ্নে ঘোর সন্দেহ দেখা দিতে পারে। আগামী ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের আগে এভাবে চাকরিতে মুসলিমদের করুণ উপস্থিতি চলতে থাকলে তা ক্রমশই বাম সরকারের চিন্তা হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ রাজ্যে সার্বিক ভাবে পশ্চাদপদ ঘোষণা করে সমগ্র মুসলিমদের সংরক্ষণের আওতাভুক্ত না করলে এই চিত্রের কোন হেরফের হবে না বলে সমাজবিদ ও অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। http://www.aponzonepatrika.com/news_details_april.php
উচ্চশিক্ষায় ওবিসি তাস মুখ্যমন্ত্রীরMar 7, 2013, 09.02AM IST
এই সময়: এমএ, বিএ, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ম্যানেজমেন্ট- উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য ১৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ এই সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনেই একটি বিল পেশ করতে চলেছে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দপ্তর৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার মহাকরণে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জানান, 'আগামী শিক্ষাবর্ষেই (জুন-জুলাইয়ে শুরু) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার৷' উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও ঘোষণা করেন, ওবিসি'দের সংরক্ষণের এই সুবিধা দিলেও সাধারণ ক্যাটিগরির জন্য বরাদ্দ আসনে ভাগ বসানো হবে না৷ তাদের রক্ষাকবচ হিসাবে সমস্ত কোর্সেই আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ এ জন্য পরিকাঠামো গড়তে আগামী অর্থবর্ষে ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরের ৬ বছর প্রতি বছরে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিতান্তই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২২ মাসের শাসনে এর থেকে বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ আর একটিও নেই৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট তো বটেই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে ভবিষ্যত্ সব নির্বাচনের জন্যই তৃণমূলের যাত্রাপথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে৷ এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ বদলে যাওয়াও অসম্ভব নয়৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ১৪৪টি আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণি ওবিসি তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে অতি অনগ্রসর ৬৬টি শ্রেণির সব ক'টিই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের৷ ১৭ শতাংশ সংরক্ষণের ১০ শতাংশই এই অংশের জন্য বরাদ্দ৷ বাকি ৭৮টি শ্রেণির মধ্যেও ২০টি শ্রেণি মুসলিম৷ এই অংশের জন্য বরাদ্দ বাকি ৭ শতাংশ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এ রাজ্যে প্রথম বার ওবিসি'দের জন্য আসন সংরক্ষণ হতে চলেছে৷ এ জন্য গত বছর রাজ্যের পঞ্চায়েত দন্তর পঞ্চায়েত এলাকায় ওবিসি সুমারি করে৷ তাতে জানা গিয়েছে, গ্রাম বাংলার ২৪ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত, যার সিংহভাগই মুসলিম৷ ফলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সিদ্ধান্তের সুবাদে এই প্রথম গরিব মুসলিমরা এ রাজ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার-সহ উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে৷ একই সুবিধা পাবে অন্যান্য ধর্মের পিছিয়ে থাকা অংশ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা৷ সিপিএম তো বটেই, একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের দুর্গ মালদহ, মুর্শিদাবাদেও সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত ভোটের ময়দানে বড় হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের৷ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের আঁচ পেয়ে বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি ভোটকে হাতিয়ার করতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের মাত্রা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছিল৷ কিন্ত্ত সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উচ্চ শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করার ঘোর বিরোধী ছিলেন৷ তাঁর সময়ে অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী উপেন কিস্কু তিন বার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পেশ করলেও বুদ্ধদেববাবুর আপত্তিতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ আরও আগে, বামফ্রন্ট সরকারের জন্মলগ্নে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রের গঠিত কমিটির (বিন্দেশ্বরী প্রসাদ কমিটি) কাছে দাবি করা হয়েছিল, এ রাজ্যে ওবিসি বলে কিছু নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এত কাল অনুপস্থিত ধর্ম এবং জাতের এই মিশেলকে অবশ্য শিক্ষাঙ্গনের সকলেই বাঁকা চোখে দেখতে নারাজ৷ যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মতে, 'পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের সামাজিক ক্ষমতায়নের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত কমই আছে৷' তিনি আরও বলেন, অনেক রাজ্য আগেই এই সুবিধা দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওবিসি'দের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে আসন বৃদ্ধির একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল৷ সরকারি চাকরিতে ওবিসি'দের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ আগের সরকারই চালু করে গিয়েছে৷ যদিও বিগত কয়েক বছর যাবত্ সরকারি দপ্তরে নিয়োগ কার্যত বন্ধ৷ তবে চাকরিতে সংরক্ষণ কার্যকর করার চেয়ে শিক্ষায় তা বলবত্ করা অনেক কঠিন৷ উচ্চ শিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করতে প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আসন বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে ব্রাত্যবাবু জানিয়েছেন৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে অনুন্নত শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, সাধারণ ক্যাটিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন অক্ষুণ্ণ রাখলেই শুধু হবে না, বর্ধিত আসনেরও তফসিলি এবং তফসিলি উপজাতি ভুক্তদের জন্য সাংবিধানিক বিধান মেনে যথাক্রমে ২২ ও ৬ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে৷ স্বভাবতই শুধু ১৭ শতাংশ আসন বাড়িয়ে ওবিসি সংরক্ষণ কার্যকর করা সম্ভব নয়৷ রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে এখন ৬ লাখ ১০ হাজার আসন আছে৷ সংরক্ষণের সুবিধা দিতে তা ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার নতুন আসন সৃষ্টি করতে হবে৷ আর তার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরবাড়ি-সহ নানা পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন৷ স্বভাবতই এর সঙ্গে বিপুল আর্থিক দায় জড়িয়ে৷ বিরোধীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে একান্তে সরকারি কোষাগারের বিনিময়ে তৃণমূলের ভোট কেনার চেষ্টা বললেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি ভোট রাজনীতির কথা ভেবেই৷ আর্থিক বোঝার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও এড়িয়ে যাননি৷ তিনি বলেন, 'আগামী আর্থিক বছরে এ জন্য এক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকবে৷ পরের ৬ বছর ৬০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হবে পরিকাঠামো গড়তে৷' মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের শতাধিক প্রকল্প আছে যা থেকে শিক্ষার প্রসার-সহ সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়৷ দিল্লির এই ধরনের কোন প্রকল্প থেকে কত টাকা পাওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
কেন পিছিয়ে জানতে চায় নয়াদিল্লী পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানরা শিক্ষা ও চাকরিতে খুবই পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এত খারাপ কেন? কেন বঞ্চিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায়? সংখ্যালঘু বিষয়ক এক সম্মেলনে কথা শুরুর আগেই কেন্দ্রের কাছে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো রাজ্য কমিশনকে। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্য অবশ্য এতে অস্বস্তিবোধ করেননি। উল্টো তারাও যে কেন্দ্রের সঙ্গে অনেকটাই একমত, তা জানিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, রাজ্য কমিশনের চেয়ারম্যান সঈদ সাজিদ জাহির আদনান পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তার সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হোক। আমি ওদের (বাম সরকার) হয়ে ওকালতি করতে আসিনি। বিধিবদ্ধ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে রাজ্যে সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান, উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। তিনি জানান, আগের চেয়ে অবস্থা ভালো হলেও আরও অনেক বেশি ভালো হওয়া উচিত ছিল। সম্প্রতি সংখ্যালঘু বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লী এসেছিলেন আদনান। সঙ্গে ছিলেন কমিশনের দুই সদস্য কল্যাণ চৌধুরী ও নারায়ণ প্রসাদ জৈন। সম্মেলনে অন্য রাজ্য বলার পর পশ্চিমবঙ্গ বলতে শুরু করতেই বাম রাজত্বে সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন করেন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান মুহম্মদ সফি কুরেশী। তখনই ওই জবাব দেয় রাজ্য কমিশন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী সলমান খুরশিদ ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পরে আদনান বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলমানরা শিক্ষায় খুবই পিছিয়ে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের আরও উদ্যোগ দরকার। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী, আনসারি, মুমিন, হাজামসহ পিছিয়ে পড়া (ওবিসি) মুসলমানদের চাকরিতে যে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেছেন, তা আরও আগে হলে ভালো হতো। তবে চাকরিতে মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ও মানসিক কারণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ মুসলমানই গরীব। ফলে পড়াশোনার বদলে ছোট থেকেই জরি, বিড়ির মতো কাজে লগে পড়ে। তাছাড়া মুসলমানদের মানসিকতাই ব্যবসায়, চাকরিতে নয়। এখন অবশ্য মানসিকতা বদলাচ্ছে। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে। জনসংখ্যার ২৫.২ শতাংশ মুসলমান বলে যে তথ্য রয়েছে তা স�� িক নয়। একই অবস্থা বৌদ্ধ, শিখ, জৈনদের ক্ষেত্রেও। কমিশনের অন্যতম সদস্য কল্যাণবাবু বলেন, দার্জিলিংসহ পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে সংখ্যালঘুদের ৭০ শতাংশ বৌদ্ধ। সব মিলিয়ে রাজ্যে ০.৩ শতাংশ বৌদ্ধ। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বৌদ্ধরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সব সরকারই সংখ্যালঘুদের সঙ্গে রাজনীতি করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগায়। এর বদল হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা। -বর্তমান পত্রিকা
পশ্চিমবঙ্গ কোন পথে? পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে কিছুদিন আগে। দীর্ঘ বামপন্থী শাসনের অবসানে নতুন সরকার পেয়েছি আমরা। ভোটের আগে অনেক হিসাব করেছিলাম কি কি পেয়েছি আর কি কি পাইনি। শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে যদি ভালো করে লক্ষ করি আর তুলনা করি বাকী রাজ্যগুলির তাহলে দেখব আমরা কতটা পিছিয়ে পড়েছি। তবে আমি এখন সেই তুলনায় যাচ্ছি না। এখন যে বিষয় টা তুলে ধরতে চাইছি সেটা অন্য বিষয়। আমাদের দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোই ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে মুখে যাই বলুক না কেন। মুসলিম এলাকায় মুসলিম প্রার্থীর প্রচলন তো এরাই করেছে। আর এই রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। দীর্ঘ বামপন্থী শাসনে মুসলিম তোষণ হয়েছে। যদিও তাতে মুসলিমদের কতটা লাভ হয়েছে সেটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। তবে যেটা হয়েছে সেটা হল কট্টরপন্থীদের প্রশয় দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বিভিন্ন সময়। বুদ্ধবাবুর সময়ে তো মরিয়া চেষ্টা হয়েছিল যাতে ওবিসি কোটার আড়ালে মুসলিম সংরক্ষন করা যায় ভারতের সংবিধান কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে মুসলিম তুষ্টিকরণও হয়। কিন্তু তার ছন্দপতন হল সরকারের পতনের মাধ্যমে। কিন্তু হায়! আরও তোষণ বাড়ল নতুন সরকার এসে। মমতা দিদির সরকার তো আরও নতুন উদ্যমে মুসলিম তোষণ শুরু করলো। ইমাম, মোয়াজ্জেমদের ভাতা, শুধুমাত্র মুসলিম ছাত্রীদের জন্য সাইকেল, স্কলারশিপ, হজ করতে ভরতুকি বাড়ানো, মুসলিমদের জন্য আলাদা নগর ইত্যাদি অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ত ভাবছেন যে এতে মুসলিম মন হয়ত গদগদ হবে। কিন্তু যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটা উনি বুঝছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। চাহিদা আকাশ ছোঁয়া হচ্ছে, দাবী বাড়ছে, প্রভাব বাড়ছে, মানসিক শক্তি বাড়ছে। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ধরণের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। তাই সিঁদুরে মেঘ, আকাশ লাল। আমরা কোন পথে?
পঞ্চায়েতে মহিলাদের ৫০% সংরক্ষণ নিশ্চিত | উচ্চশিক্ষায় ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণের ঘোষণা মমতার | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | সরকারি চাকরির পরে এ বার উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র আওতায় সংরক্ষণ চালু করার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মর্মে দ্রুত বিল আনার জন্য শুক্রবার বিধানসভায় দাঁড়িয়েই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় এ দিনই সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস এবং বিরোধী সিপিএমের তরফে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রায় পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় তাঁকে 'ধন্যবাদ ও অভিনন্দন' জানিয়েছে দু'দলই। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে 'স্বস্তিদায়ক'! ওবিসি-র জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করতে বিধানসভায় এ দিনই পাশ হয়েছে 'দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (আদার দ্যান শিডিউল্ড কাস্ট্স অ্যান্ড ট্রাইব্স) (রিজার্ভেশন অফ ভ্যাকেন্সিজ ইন সার্ভিসেস অ্যান্ড পোস্ট্স) বিল, ২০১২'। এর আগে বাম সরকারের পাশ-করানো একই উদ্দেশ্যের একটি বিল প্রত্যাহার করে নেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। বিলের উপরে বিতর্কের শেষে মন্ত্রীর জবাবি ভাষণের পরে কিছু বলার জন্য স্পিকারের অনুমতি চান মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় এ দিন পেশ-হওয়া মোট পাঁচটি বিলকে একসঙ্গে ধরে একটি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটা আমি বুঝি। ব্রাত্য বসুকে বলেছি। এটা করা দরকার। পরের অধিবেশনে ওঁকে বিল আনতে বলেছি।" রাতে ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী এই দিনটিকে 'পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঐতিহাসিক দিন' বলে ব্যাখ্যা করেন। সেখানে তিনি আরও এক বার জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংরক্ষণ বিলের বিতর্কে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেছিলেন, "উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ না-থাকলে চাকরিতে সংরক্ষণ করা, না-করা সমান। উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘু বা ওবিসি-রা সুযোগ না-পেলে সংরক্ষিত পদে যোগ্য লোক মিলবে না।" বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেন, "নেপালবাবু যা বলেছেন, তা সমর্থন করি। উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ না-হলে শুধু আসন সংরক্ষণ করে কিছু হবে না। ভূমি সংস্কার ছাড়া পিছিয়ে-পড়া মানুষের প্রকৃত উপকার হয় না।" এর পর মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের ঘোষণার পাশাপাশি জানান, সংখ্যালঘুদের তাঁরা পাট্টা বিলি করছেন। তাঁদের জন্য আবাসনও গড়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্রই সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা পয়েন্ট অফ অর্ডার এনে বলেন, "উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি।" সূর্যবাবু অবশ্য পরে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মুখে বললেই অনেক জিনিস তো হয়ে যায় না!" যে ভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী না-হওয়া সত্ত্বেও 'প্রথা' ভেঙে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওবিসি সংরক্ষণ বিলের উপরে বক্তৃতা করেছেন এবং আরও চারটি বিল তার সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন, তা নিয়ে সভায় আপত্তি তুলতে চেয়েছিলেন সূর্যবাবু। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর পয়েন্ট অফ অর্ডার 'নথিভুক্ত' হবে না! তবে বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কেরা তাঁদের বক্তৃতায় বলেন, একই উদ্দেশ্যে এবং বিষয়ে বাম আমলের বিল প্রত্যাহার না-করে রাজ্য সরকার সংশোধনী আনলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সময় বাঁচত। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ওবিসি নির্ণয়ে আগের সরকারের সমীক্ষা আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। রাজ্যপালও আগের বিলটিতে সই করেননি। বিধানসভায় এ দিন মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের উপরে সংশোধনী বিলও পাশ হয়। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সভায় জানান, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণের বিল পাশ হয়েছে আগেই। আগামী পঞ্চায়েত ভোটের সময়েই রাজ্য নির্বাচন কমিশন যাতে ওই নীতি কার্যকর করতে পারে, সে জন্যই আইন সংশোধন করা হল। সুব্রতবাবুর আরও দাবি, অন্ধ্রের আইন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে সেই রাজ্যে যে ভাবে কয়েক বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন স্থগিত হয়ে গিয়েছে, বামেরাও পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণের বিল এনে এ রাজ্যে একই 'সমস্যা' ডেকে আনতে চেয়েছিলেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, "এখানকার বিরোধীরাও একই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! কিন্তু আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। মানুষ কাদের পক্ষে রায় দেবেন, তাঁদের ব্যাপার।" পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন সংশোধনের সিদ্ধান্তে 'খুশি' রাজ্য মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের (যিনি ঘটনাচক্রে বাম শরিক আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর স্ত্রী) কথায়, "এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন কাঙ্ক্ষিত ছিল। মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি জোরালো পদক্ষেপ।" http://www.anandabazar.com/archive/1120707/7raj3.html
মমতার ওবিসি তাসে বিপন্ন বামেরাMar 8, 2013, 09.16AM IST
এই সময়: রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের দু'দিন আগেই উচ্চশিক্ষায় ওবিসিদের সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করে বামেদের পালের হাওয়া অনেকটাই কেড়ে নিতে সফল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন৷ গত বিধানসভা অধিবেশনে নজিরবিহীন ভাবে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়কেরা৷ বাম শিবিরের বিধায়কদের মনোভাব থেকে স্পষ্ট কোনও বিষয়েই ট্রেজারি বেঞ্চকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না তাঁরা৷ কিন্তু বাম বিধায়কদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চশিক্ষায় ওবিসি'দের জন্য সংরক্ষণ চালুর বিল৷ নীতিগত ভাবে সংরক্ষণের বিরোধিতা করতে পারে না সিপিএম৷ আবার বিধানসভায় এই বিল সমর্থন করাও কঠিন তাদের পক্ষে৷ বেকায়দায় পড়ে তাই তৃণমূল সরকারের পেশ করা বিলের পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বিরোধীদের৷ বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, 'বহু বিষয় রয়েছে যা যৌথ তালিকাভুক্ত, ফলে রাজ্য সরকার একতরফা কিছু করলে সমস্যা তৈরি হতে পারে৷ সিঙ্গুর বিলের যা পরিণতি হয়েছিল এরও তা হবে বলে মনে হয়৷' কিন্তু ঘটনা হল, ৩৪ বছরের শাসনে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কিছুই করেনি বামেরা৷ ফলে এই মুহূর্তে এই বিলের বিরোধিতায় খুব বেশি সুর চড়ানোও সম্ভব নয় তাদের পক্ষে৷ আলিমুদ্দিল স্ট্রিটের কর্তাদের কেউ কেউ একান্তে মানছেন, ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে তাঁরা যা করেননি, সরকারে আসার ২২ মাসের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসি'দের স্বার্থপূরণে তা করে দেখিয়েছেন, যা ধর্ম নির্বিশেষে গরিব মানুষকে কাছে টানার রাস্তা মসৃণ হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষায় ওবিসি-দের জন্য ১৭% আসন সংরক্ষণের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, তাতে এখনই সাধারণ ক্যাটেগরির ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ হারানোর আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছে শিক্ষামহল৷ বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট কোর্সগুলিতে এখনও তফসিলিদের জন্য (তফসিলি জাতির জন্য ২২% ও উপজাতিদের জন্য ৬%) সংরক্ষিত আসনের পুরোটা পূরণ করার মতো কৃতী ছাত্রছাত্রী ওই দুই শ্রেণি থেকে পাওয়া যায় না৷ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাড়ে সাত হাজার আসন এই দুই শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত৷ গত বছর প্রায় ৪ হাজার আসনের জন্য যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি ওই দুই শ্রেণি থেকে৷ ওই আসনগুলিতে সাধারণ ক্যাটেগরির ছাত্রছাত্রীদেরই পরে সুযোগ দেওয়া হয়৷ মেডিক্যালেও কয়েক বছর আগে তফসিলিদের জন্য বরাদ্দ আসনের সবগুলি পূরণ হত না৷ সেখানেও সাধারণ ক্যাটেগরির পড়ুয়ারাই সুযোগ পেতেন৷ তবে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়মের গেরো৷ মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএড-বিটি এবং আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রমগুলির ক্ষেত্রে আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কার্যকর করা অসম্ভব বলেই মনে করছে শিক্ষামহল৷ কারণ ওই সব কোর্সে আসনবৃদ্ধি শুধু রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই), অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ টেকিনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই), ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিটিই) এবং বার কাউন্সিলের মতো বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থার নিয়মবিধির এক্তিয়ারভুক্ত৷ ওই সব সংস্থা পঠনপাঠনের পরিকাঠামো সরেজমিনে যাচাই করে তবেই আসনবৃদ্ধির অনুমতি দিয়ে থাকে৷ শুধু নিয়মের গেরোই নয়, রয়েছে অর্থের গেরোও৷ আসনবৃদ্ধির জন্য পরিকাঠামো গড়তে প্রথম বছর ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে ঘোষণা করেছে৷ ওই বরাদ্দ যত্সামান্য বলেই মনে করছে শিক্ষামহল৷ স্বাস্থ্য-শিক্ষায় শুধু ডাক্তারির আসন বাড়ালেই হবে না, স্নাতকস্তরে একটি আসন বাড়াতে গেলে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে তার পাঁচ গুণ বেড বাড়াতে হয়৷ এ রাজ্যে এখন এমবিবিএসে মোট আসন সংখ্যা ১৯০০৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রীতি মতো ওবিসি-দের ১৭% আসন সংরক্ষণের সুবিধা দিতে হলে অন্তত ৯০০ আসন (৪৫% বৃদ্ধি) বাড়াতে হবে৷ এর অর্থ, এমসিআই-এর সর্বভারতীয় মাপকাঠি মেনে রাজ্যের ১১টি মেডিক্যাল কলেজে মোটের উপর ৪৫০০ শয্যা বাড়াতে হবে৷ যদিও স্বাস্থ্য দন্তর সূত্র বলছে, অতিরিক্ত এই ৪৫০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি অতিরিক্ত শয্যা এখনই মজুত আছে৷ তার পরও অবশ্য যে বিপুল খরচের বোঝা বইতে হবে স্বাস্থ্য দন্তরকে, তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্যকর্তারা৷ একই সমস্যায় পড়তে চলেছে সরকারি-বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিও৷ নিয়ামক সংস্থার ছাড়পত্রের উপর নির্ভরশীল বিএড-বিটি কিংবা আইন পাঠক্রমের আসনও৷ পরিকাঠামো উন্নয়ন না করে আসনবৃদ্ধির সুযোগ আছে শুধুমাত্র কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কোর্সে৷ এ সব ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট৷
ভারতে উগ্রহিন্দুবাদী সাম্প্রদায়িকতার হিংস্র থাবা -ইবনে সাঈজ উদ্দীন সাংবিধানিকভাবে ভারত একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ভারত সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কট্টর সাম্প্রদায়িক। অপশক্তির দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত হয়ে আজও একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। যদিও ভারত বিশ্বময় দীর্ঘকাল থেকে প্রচার করে আসছে যে, ভারত হচ্ছে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যেভাবে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর চেপে বসার নজির আছে, সে বিবেচনায় ভারত নিয়মিত বিরতি ছাড়াও মধ্যবর্তী নির্বাচনের ধারায় গণতন্ত্র রক্ষা করে এসেছে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়াই যদি গণতন্ত্রের একমাত্র নির্ণায়ক হতো, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো সংকটই থাকতো না। বহুজাতি-ভাষা-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর একটি উপমহাদেশকে ভারত ঔপনিবেশিক ধারায় একটি রাষ্ট্রের কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে এক ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত তৈরি করে রেখেছে। রাজনৈতিক বিবেচনা এবং সামাজিক নৃ-তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় বিবেচনায় ভারতের জন্য এটি সত্যিকার ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামো অনিবার্যতা রয়েছে। ভারত নিজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শুরু থেকেই স্পর্শকাতর এবং সংরক্ষণবাদী। এ কারণেই ভারত শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে জাতি-গোষ্ঠীর নৃ-তাত্ত্বিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতি না দিয়ে সামরিক ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে। এরই প্রতিবাদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গত সাত রাজ্য ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিকতার বৃত্ত অতিক্রম করে সশস্ত্র লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। এরই পটভূমিতে যুদ্ধ ছাড়াই ভারত এক অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত। একমাত্র জম্মু-কাশ্মীরেই ভারত চার থেকে পাঁচ লাখ সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতসহ অন্যান্য সংঘাতময় রাজ্যে ভারত আরো কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন করে তার রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করছে। ভারতের অনেক রাজ্য শাসিত হয় সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় গবর্নরের মাধ্যমে। যা কেন্দ্রীয় শাসনেরই নামান্তর। দুনিয়ায় ভারতই ইসরাইলের পর আর একটি নিরাপত্তা রাষ্ট্র। যে দেশের নীতিনির্ধারক ও শাসকরা দেশের অধিকাংশ নাগরিকের অ-হিন্দু হবার কারণে নাগরিক ও মানসিক অধিকার তথা রাষ্ট্র শাসনে সমঅধিকার অস্বীকার করে রাষ্ট্রকে বিভক্ত করে রেখেছে। পশ্চাদপদ হরিজন-সিডিউল কাস্ট এবং সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভারত রাষ্ট্রের মূলধারায় স্বীকৃতি দিতে পারেনি। এর অর্থ দাঁড়ায় গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের সংবিধানের শোভাবর্ধন করলেও এটি রাষ্ট্র, সরকারের ব্যবহারিক নীতি-আদর্শে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও ভারতে সংখ্যালঘু ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা নিরসনে কমিশন গঠন করতে হয়। হিন্দুত্ববাদী আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দাপটে এসব কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভিপি সিং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। মন্ডল কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে শিবসেনা-হিন্দু মহাসভার উগ্রবাদী কর্মীরা গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার উদাহরণও তৈরি করেছে। ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে শিবসেনা ও সংঘ পরিবারের স্লোগান হচ্ছে : ''হয় কুরআন ছাড়ো, নয় ভারত ছাড়ো।'' মুসলমানদের উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত 'সাচার কমিটির' সুপারিশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এদিকে ভারতের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুষম রাষ্ট্র সরকারের সুষমনীতি না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র, উপেক্ষিত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠী সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের ১০-১২টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত মাওবাদী সমস্যাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিছুদিন আগে কলকাতায় চারটি রাজ্যের দায়িত্বশীলদের সাথে বৈঠক করে দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানের কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছে। এতদিন ভারত বলে আসছিল যে, পাকিস্তান থেকে ক্রসবর্ডার টেরোরিস্ট এবং বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারকারী উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গিরাই ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড়ো হুমকি। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তা হুমকি নিরসনে ভারতের সব দাবি মেনে নিয়েছে এবং পাকিস্তানও একদশক থেকে তথাকথিত ক্রসবর্ডার টেরোরিজম বন্ধ করায় ভারতের ব্লেইম গেম কূটনীতিক সুযোগ কমে গেছে। তবে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলার সূত্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নতুন করে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করার ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মার্কিন চাপে ভারত নতুন করে পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার জন্য বৈঠকে বসতে সম্মত হলেও তার ফলাফল নিয়ে সন্দেহমুক্ত হওয়া যায় না। কেননা, ভারত দুর্বল ও অস্থিতিশীল পাকিস্তান ও প্রতিবেশী দেখতে চায়। এটাকে তার নিজস্ব নিরাপত্তার অংশ করে নিয়েছে। তালেবান আল-কায়েদার নাম ব্যবহার করে ভারতীয় 'র' ইসরাইলের মোসাদের সাথে মিলে অন্তর্ঘাতী নীলনকশা বাস্তবান করে এ অঞ্চলে নকল ইসলামী জঙ্গিবাদ জিইয়ে রেখেছে। ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী সাম্প্রদায়িকতা যে কত ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে, তার কিছু নমুনা আমরা লক্ষ্য করেছি শিব সেনার আচরণে। ভারতের বিশ্বনন্দিত অভিনেতা শাহরুখ খানের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শিব সেনারা শাহরুখকে ভারত ছেড়ে পাকিস্তান চলে যাবার হুমকি দিয়েছে। তারা শাহরুখের ছবি মুক্তিতে বাধাদানের হুমকি দিয়েছে এবং শাহরুখকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বলেছে। আইপিএল ক্রিকেট খেলায শাহরুখ পাকিস্তানী ক্রিকেট টীমের অংশগ্রহণের পক্ষে কথা বলায় শিবসেনা এই হুমকি দিয়েছে। শাহরুখের বিরুদ্ধে শিবসেনাদের আরো অভিযোগ, মুম্বাইয়ে বাস করেও শাহরুখ মারাঠী ভাষায় কথা বলেন না। উল্লেখ্য, শিবসেনা এর আগে মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকায় ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত শ্রমজীবী মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে বিতাড়িত করেছে। বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে আসা ট্যাক্সিচালক ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। মারাঠী ভাষায় কথা না বললে তাদের ঐ রাজ্যে কাজ করতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী শিবসেনাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীও প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ভারতীয় ভারতের যে কোন রাজ্যে বসবাস ও কাজ-কর্ম করার অধিকার রাখেন। তিনি আঞ্চলিকতা, প্রাদেশিক কথা ও বিশেষ সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতির প্রতিবাদে মুম্বাই সফর করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। রাহুল গান্ধীর মুম্বাই সফরের প্রতিবাদে শিবসেনারা কালোপতাকা প্রদর্শনসহ বিক্ষোভ করেছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মুম্বাইয়ে কার্যত অঘোষিত কার্ফু্যব্যবস্থা বিরাজ করেছে বলে মিডিয়া খবর দিয়েছে। হিন্দুবাদ প্রতিরোধে ভারত সরকার ব্যর্থ হলে ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড হিন্দুত্ববাদের আক্রমণে স্থবির হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। এর আগে শিবসেনারা বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের চিত্রকর্ম নিয়ে সহিংস কর্মকান্ড চালিয়েছিল। আমির খানের ছবি এবং 'যোধি আকবর' ছবি নিয়েও শিবসেনারা নানা কান্ড করেছে। শাহরুখ ও আমির খানকে শিবসেনারা 'ইডিয়ট' বলে আক্রমণ করেছে। এর আগে দিলীপ কুমার, শাবানা আযমীসহ শীর্ষস্থানীয় মুসলমান সেলিব্রেটিদের মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হলেও চাকরি ও অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব মাত্র ২ শতাংশ। সরকারিভাবেই যেখানে ১০ শতাংশ সুযোগ মুসলমানদের পাবার কথা, সেখানে তারা পাচ্ছেন মাত্র ২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক এবং কংগ্রেস দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য আজাহার উদ্দিন। গোটা ভারতে মুসলমানদের জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় ২০ শতাংশ কিন্তু তারপরও তারা অবদমিত ও বঞ্চিত। সংঘ পরিবারের উগ্রবাদীরা বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পর গুজরাটে মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যে বিভীষিকার সৃষ্টি করেছে-- ভারতের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার সমাজ ও প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস ও বাম রাজনীতিকরাও। হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িকতা লালন করে ভারত অন্যকে কিভাবে সেক্যুলারিজমের দীক্ষা দিতে চায়, সেটাই তাজ্জবের ব্যাপার।
রমা মন্ডলপরাধীন ভারতে স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে আলোড়িত 'কৃষক বিদ্রোহ' ভারতের ইতিহাসবেত্তাদের কাছে এক প্রকার উপেক্ষিতই থেকে গেল। এই কৃষক বিদ্রোহকে নীলবিদ্রোহ বলেও আখ্যায়িত করেন কেউ কেউ। কেউবা এদেশে তালিকায় সবচেয়ে নিচে থাকা একটি ব্যর্থ আন্দোলন বলেও মনে করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাঙ্গলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌল্লার পরাজয়ে ভারতের স্বাধীনতা-পতাকা পুরোপুরি নামিয়ে ফেলে ইংরেজরা। তারপর ফকির বিদ্রোহ, ওয়াহাবি বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, নীলবিদ্রোহ , সিপাহী বিদ্রোহ ইংরেজ পতনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এদের মধ্যে সিপাহীবিদ্রোহ 'মহাবিদ্রোহ' নামে আখ্যায়িত। কিন্তু ইংরেজ রাজত্বে বাংলার ঘরে ঘরে যে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ধর্মঘট ডেকেছিল, সেই ইতিহাস সিপাহী বিদ্রোহের চেয়েও বড় মাপের। তথাপি সরকার, বেসরকারী সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির কাছেও নীলবিদ্রোহ গুরুত্ব হারালো কেন? কেন? এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা- সিপাহীবিদ্রোহ মহাবিদ্রোহ হিসেবে সোনার অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে ভারতের ইতিহাসবিদদের গবেষনার ছত্রে ছত্রে। তার কারন এই বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিক্ষিত মানুষ। বিদ্রোহ হয়েছিল দুটি কারনে- প্রথম কারণ সৈনিকদের বেতন বাড়ানো নিয়ে অসন্তোষ ধুমায়িত হচ্ছিল। ইংরেজ সরকার এদেশীয়দের সঙ্গে ইংরেজদের বেতনের ফারাক রেখেছিল বিস্তর। দ্বিতীয় কারন ছিল ধর্মীয়। সিপাহীতে তুলনায় শিক্ষিত মানুষেরা যুক্ত ছিলেন। আর শীর্ষপদে উচ্চ-শিক্ষিতরা থাকতেন। ধর্মকে ব্যবহার করে শিক্ষিতরা নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। তাই সিপাহি বিদ্রোহ দ্রুত রাজনৈতিকভাবে ও সামাজিক দিক থেকে উপরতলার মানুষদেরও প্রভাবিত করেছিল। যতটা প্রভাবিত হয়েছিল-তার চেয়েও প্রচারিত হয়েছিল বেশী। কিন্তু নীলবিদ্রোহ মূলত ছিল বাংলার সবচেয়ে অবহেলিত কৃষক সম্প্রদায়, জমিদারদের আশ্রিত প্রজাকুল এবং হতদরিদ্র কুলিমজুরদের বিদ্রোহ। তাদের প্রকৃত নেতারাও উঁচুতলার ছিলনা। আরও একটা বিষয় ছিল এই নীল বিদ্রোহে, তা হল এই বিদ্রোহ ছিল অসাম্প্রদায়িক এবং সদল। কে নেতা- সে হিন্দু না মুসলমান- এই বিচার করা হয়নি। মূল লক্ষ্য ছিল নীলচাষ হতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে এদেশীয় জমিদার ও ইংরেজদের যৌথ বাহিনীকে রুখে দিয়ে বাংলার কৃষকদের মুক্ত করার লক্ষ্যে অনেকাংশে সফল হয়েছিল। পাশে পেয়েছিলেন সেই সময়ের এক ঝাঁক নব্য পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবিদের। আশ্চর্য হলেও সত্য সেইসময়ের সবচেয়ে আলোড়িত বুদ্ধিজীবি এবং মনীষী বলে আখ্যায়িত রাজা রামমোহন রায় এবং দ্বারকা নাথ ঠাকুররা নীল বিদ্রোহীদের কাজকে সমর্থন করতে পারেননি। কিন্তু সমর্থনে এগিয়ে আসেন 'বেঙ্গলী' পত্রিকার সম্পাদক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, 'হিন্দু পেট্রিয়ট' পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত, 'অমৃত বাজার পত্রিকা'র শিশির কুমার ঘোষ। নীলচাষের সূচনা নীলগাছের বৈজ্ঞানিক নাম ইণ্ডিগোফেরা টিনক্টোরিস। 'আইন-ই-আকবরি' থেকে এ তথ্য জানা যায় যে মোঘল আমল থেকেই ভারতে নীলচাষ হতো-তবে সেসময়ে তেমন ব্যবসায়িক সাফল্যের তথ্য মেলেনা। কোন্ কোন্ অঞ্চলে নীল চাষ হতো তেমন স্পষ্টতাও নেই। ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে নীল সংগ্রহের কথা বলা আছে। তবে মূলত ইংরেজ রাজত্বেই নীলচাষের ব্যপকতা ছড়ায়। ১৭৭৭ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বনিক লুই বন্ড আমেরিকা থেকে নীল উৎপাদন প্রনালী নিয়ে আসেন বাংলায়। তিনিই বাংলায় সর্বপ্রথম চন্দননগরের কাছে তিলগঙ্গা ও গোন্দশ পাড়ায় দুটি নীলকুঠি স্থাপন করে নীলচাষের সুত্রপাত ঘটান। পরে মালদাতে আরও একটি নীলকুঠি খোলেন। এরপর নহাটায় আরও কুঠি স্থাপন করেন। অন্য আরও একটি মত আছে বাংলায় নীলচাষের সূচনা নিয়ে। ১৭৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী বনিক লুই বন্ড যশোরের রূপদিয়ার কাছে প্রথম নীল উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বন্ড দ্বিতীয় কুঠি খোলেন 'নিউ বেঙ্গল ইন্ডিয়া' নামে। বেসরকারিভাবে এভাবে নীলচাষের কাজ শুরু হলেও সরকারীভাবে ১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ শে অক্টোবর এক ঘোষনাপত্রে নীলচাষের কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর বহু ইংরেজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নীলকুঠি স্থাপন আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গড়ে উঠতে থাকে একটার পর একটা কুঠি। টাপটং, টেলর এন্ডারসন কুঠি স্থাপন করেন রাজশাহী, মহম্মদশাহী, নীলগঙ্গা, দৌলতপূর। ডেভারেল ব্রিসবেন, কুন্ডসন, রাজেট মেকেনজি, যশোর খুলনার বিভিন্ন স্থানে কুঠি খুলতে শুরু করেন। দেখা যায় যৌথ মালিকানাতেও কুঠি স্থাপিত হচ্ছে। যেসব নীলকর সাহেবরা নীল উৎপাদন ও অত্যাচারে অতিশয় নাম করেছিলেন তাদের মধ্যে 'বেঙ্গল ইন্ডিগো' কোম্পানী অন্যতম। এই কোম্পানীর অধীনে ১৭টি কুঠি ছিল। প্রধান অফিস ছিল মোল্লাহাটিতে। এই কোম্পানীর প্রধান ছিলেন আর.টি.লালমোর। সিন্দুরিয়াতে ১৪টি কুঠির প্রধান ছিলেন ডবলু সেরিক। ডেভারেল ঝিলাইদহের হাজরাপুর, ব্রিসবেন কোটচাঁদপুরের দাঁতিয়া হাটিতে কুঠি স্থাপন করেন। এদেশের জমিদাররাও নীলচাষে উৎসাহী হয়ে নিজেদের জমিদারীতে কুঠি স্থাপন করেন। এরফলে নীলচাষে জমির দখল নেওয়া, বাজার দখলকে কেন্দ্র করে শুরু হল তীব্র প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীতা থেকে শুরু হল বিরোধ। বিরোধ মীমাংসার শেষ পর্যন্ত গড়াল কোর্ট পর্যন্ত। সেইসময়ের জেলা কালেকটর টমাস পাউনি এক নির্দেশিকা জারি করেন। সেই নির্দেশিকায় বলা ছিল-'১০ মাইলের মধ্যে অন্য কোন কুঠি স্থাপন করা যাবে না'। এই নির্দেশিকায় কুঠিয়ালদের বিবাদ মিটিয়ে নীলচাষে বেশী মনোযোগ দেবার বন্দোবস্ত করেছিলেন। কিন্তু লর্ড মিন্টো কালেকটরের জারী করা নির্দেশ খারিজ করে দেন। এদেশের জমিদাররা-লর্ড মিন্টোর কাছে জমিদারদের ক্ষমতা খর্ব করার আশঙ্কা প্রকাশ করে দরবার করেছিলেন। জমিদাররা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এরফলে নীলকর সাহেবদের ক্ষমতা বাড়বে-জমিদারদের ক্ষমতা খর্ব হবে। জমিবিরোধ সত্ত্বেও বাংলায় সেসময় যে পরিমান নীল উৎপন্ন হত তা বিস্ময়কর। ইন্ডিগো কমিশনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৮১৫-১৮১৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রয়োজনীয় নীল বাংলা থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। নীলচাষ বছরে দুবার নীলচাষ করা হত। বর্ষা শেষে এবং ফাল্গুন চৈত্র মাসে। ভালোকরে জমি চাষ করে নীলের বীজ বুনে দেওয়া হত মাটিতে। ৪-৫ফুট উচ্চতা হত নীলগাছ। গাছকেটে চৌবাচ্চায় পচাতে দেওয়া হত মাটিতে। নীল পচানোর জন্য ২১ফুট বাই ২১ফুট ঘরের চারিপাশ দিয়ে দেড়ফুট গভীরে নালা থাকতো। লবন মুক্ত পরিস্কার জলে ভিজিয়ে নীল গাছ পচানো হত। বাংলায় নদী এত বেশী এবং মিষ্টিজলের সুপ্রাপ্যতার জন্য নীলচাষের সহায়ক পরিবেশ থাকায় নীলচাষে বাড়বাড়ন্ত ছিল। নীলগাছ পচানোর পর ওই জল নালা বেয়ে পাশের জ্বালাঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল। সেই ঘরে জ্বালিয়ে নীল বের করা হত। এই কাজ সুচারু ভাবে করার জন্য দরকার ছিল সর্বক্ষনের কর্মী। পরিশ্রমী ও বিশ্বাসী লোক ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব ছিল না। এক একটি কুঠিতে ৫০০-৬০০ লোক লাগত। যারা নীল পচানোর কাজ করত তাদের বলা হত কুলি। ইংরেজরা বীরভূম, মানভূম, সিংভূম থেকে লোক নিয়ে এসে নীল চাষ ও পচানোর কাযে লাগিয়েছিল। পুরুষরা মাসে ৩টাকা এবং স্ত্রীলোকেরা ২টাকা হারে টাকা পেতেন। অত্যচারের সুত্রপাত নীলচাষের কাজে নানা শ্রেনীর মানুষ নানা ভাবে যুক্ত থাকতেন। প্রতিটি কুঠিতে দুটি বড় পদ থাকতো। বড়সাহেব, ছোটসাহেব। তারপর ছিল দেওয়ান ও নায়েব। নায়েবের অধীনে থাকতো গোমস্তা। গোমস্তার পরেরই পদ কুলি। নীলচাষের জমি খোঁজা-নীলের মাপজোক করার জন্য যারা থাকতেন তাদের বলা হত তাগিদদার। নীলচাষ যখন তুঙ্গে, তখনই চাষীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। নীলচাষের যা লাভ তা সবই কুঠিয়ালদের-জমিদার লিজ অনুযায়ী টাকা পেয়ে গেলেও মূলচাষীরা কিছুই পাচ্ছিলেন না। চাষীরা ক্ষোভ জানাতে আরম্ভ করছিলেন। কোথাও কোথাও প্রকাশ্যেই নীলচাষ না করার কথা জানানো হলেই ইংরেজদের প্রকৃত চেহারা বেরিয়ে আসতে থাকে। চাষীদের নীলচাষে বাধ্য করার জন্য প্রথমে হুমকি দেওয়া হল। কাজ না হলে অত্যাচার নেমে এল। অত্যাচার বলতে কুঠিতে ধরে নিয়ে যাওয়া হত। কখনও বাড়ির আসবাব, গরু-ছাগল সবই নিয়ে যাওয়া হত। সেইসব জিনিস ছাড়ানোর জন্য গেলে মুচলেকা দিতে হত। কখনও বাড়ির বৌ, মেয়েকেও কুঠিতে নিয়ে যাওয়া হত। মেয়েদের সম্ভ্রম বাঁচাতে মুচলেকায় দস্তখত লিখে চাষীরা আবার নীলচাষে বাধ্য হতেন। চাষীদের দমন করার জন্য কুঠিতে কুঠিতে তৈরী হল 'গুমঘর'। এক একটা কোম্পানীতে একাধিক কুঠি থাকায় ধরে নিয়ে যাওয়া চাষীদের এক একটা গুমঘরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রেখে দেওয়া হত। এভাবে পরিজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হত আতঙ্কের পরিবেশ। শেষ পর্যন্ত অবাধ্য চাষীর দেহ নদীর জলে লাশ হয়ে ভেসে যেত। কারোর দেহ গুম করেই চিরকালের মতো গুম হয়ে যেত। ১৮১০ সাল থেকেই নীলচাষীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশ হতে থাকে। জমিদার তিতুমীর ইংরেজদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারী দিলেন অবিলম্বে অত্যচার বন্ধ করার জন্য। অত্যাচারের মাত্রা ছাড়াতে থাকে ১৮১০ সাল থেকে। কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠছে, ছড়াচ্ছে বিদ্রোহের এলাকা। এই অবস্থায় বিদ্রোহীদের রাশ টানতে ৪ জন নীলকরের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়। ছোটলাট হ্যালিডের আমলেই নীলকরদের অত্যাচারের মাত্রা তীব্র হয়। ছোটলাট কোন অভিযোগকেই গুরুত্ব না দিয়ে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালান। কুঠিয়ালরা ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিতে লাগল বাড়ি বাড়ি গিয়ে। বাগান কেটে নীলচাষ করাতে বাধ্য করানো হল এভাবে। বাধা দিলে বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হল। বিদ্রোহী কৃষকদের কুঠিতে ধরে নিয়ে গিয়ে মুগুর আইন প্রয়োগ করে টিপ/সই করিয়ে ইচ্ছামতো লিখে নিয়ে কাজ হাসিল করতে লাগল নীলকররা। অত্যাচারী নীলকরদের মধ্যে মোল্লাহাটি কুঠির লালমোর কুখ্যাত হয়ে ওঠেন। লালমোরের নৃশংসতায় বাংলার নারীর চোখের জলে ভেসে গেল রাজপথ। বহু নারী পাশবিক কামনার শিকার হলেন। নীলকর সাহেবরা 'চোদ্দ কুঠির জল খাওয়ানো আইন' তৈরী করল। সতীশ মিত্র 'যশোরের খুলনার ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, চুক্তি ভঙ্গে তাদের কয়েদ খানায় রাখা হত। চোদ্দ কুঠির জল খাওয়ানোর ভয় দেখানো হত। মুগুরের আইন পাশ হচ্ছে বলে ভয় দেখানো হত। লালমোর সাহেব ছিলেন প্রবল অত্যাচারী। নীল বুনতে না চাইলে বিদ্রোহীদের খুনও করা হত। গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হত। কৃষক কন্যাদের ধরে এনে অপমান করত। ১৫৫৮ বিদ্রোহ শুরু হল বিদ্রোহ। ছড়াতে লাগল গ্রাম থেকে গ্রাম। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান যশোরের চৌগাছার বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস। ১৮৩০ সাল থেকেই বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিচ্ছিল বিক্ষিপ্ত ভাবে। জমিদার পুলিশ এবং ইংরেজদের যৌথ আক্রমনের বিরুদ্ধে সঙ্গবদ্ধ প্রয়াস নেবার পথ খুজে বেড়াচ্ছিল বাংলার কৃষকরা। বিষ্ণুচরন দিগম্বর সেইপথের সন্ধান দিলেন। বিশ্বাস ভায়েরা কালেক্টরের কুঠির দেওয়ান ছিলেন। নীলকরের ক্রমবর্ধমান অত্যাচার ও নীলচাষীদের অপরিসীম দুঃখে বিচলিত হয়ে কাজে ইস্তফা দিয়ে প্রজাদের পক্ষ অবলম্বন করে নীলক্রদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। নীলকরদের বিরুদ্ধে ছড়া ও গান রচনা করেপ্রজাদের উত্তেজিত করে তোলেন তাঁরা। নীলকররাও প্রজাদের ঐক্যকে ভাঙার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন। বিশ্বাস ভাইরা বরিশাল থেকে লাঠিয়াল এনে প্রজাদের লাঠি ধরালেন। বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই দুই ভায়ের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অন্যদিকে মালদা এলাকায় নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এলেন রফিক মন্ডল। নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনিও ছিলেন একজন বড় নায়ক। নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে তার সমস্ত অর্থ ব্যয় হয়ে যায়, এমনকি তিনি খাজনা দেবারও সঙ্গতি হারিয়ে ফেলেন। বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ল এক কুঠি থেকে অন্য কুঠি। 'জমির শত্রু নীল,কাজের শত্রু চিল আর জাতির শত্রু পাদরি হিল'। এই শ্লোগান মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামের লাঠিয়ালরা একত্রিত হতে লাগলেন। যুবকরা শিখতে লাগলেন লাঠি চালনা। গ্রামের মেয়েরা শঙ্খ বাজিয়ে ইংরেজ বা নীলকরদের গ্রামে ঢোকার সংকেত জানিয়ে দিত। কখনও গ্রামে গ্রামে ঢাক বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সতর্ক করত। শঙ্খ বা ঢাকের শব্দ শোনা মাত্রই গ্রামের পুরুষরা লাঠি,হাতিয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। কুঠিয়ালরা এই বিদ্রোহ ভাঙ্গার জন্যে নানা ফন্দি বের করতে লাগল। হিন্দু-মুসলিম মিলিতভাবে ধর্মঘট ডাকলেন। ধর্মঘটে অভূতপুর্ব সাড়া পাওয়া গেল। ইংরেজরা দিগম্বর বিশ্বাসদের ধরার জন্যে হুলিয়া জারি করল। তাতে ইনাম পাবার লোভও দেখানো হল। ইংরেজদের চর সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের অনুগামীরা এতই তৎপর ছিল যে ইংরেজরা বিদ্রোহীদের ধরতে ব্যর্থ হল। তখন সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠল। একটা সময় কুঠিতে কর্মরত সাঁওতালরা ইংরেজদের খুবই অনুগত ছিল। কিন্তু আদিবাসী নেতা কানু সিধু কে ইংরেজরা হত্যা করে ১৮৮৫ সালে। এই ঘটনার পর আদিবাসীদের আনুগত্যে চিড় ধরে। তারা কৃষক বিদ্রোহে কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়। বিদ্রোহের ভয়ংকর রূপ দেখে ইংরেজরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে বিদ্রোহের কথা এদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রবল চাপে ইংরেজ সরকার গঠন করে ইন্ডিগো কমিশন। বিচারকরা কুঠিতে ঘুরে ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেন। বারাসাতে ম্যাজিস্ট্রেট ইডেন সাহেব ১৮৫৯ সালে ২০ শে ফেব্রুয়ারী ঘোষণা করেন নীলচাষ আর বাধ্যতামূলক নয়। আসলে এই আদেশ ঘোষণা করে বিদ্রোহীদের ছত্রভঙ্গ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। ইংরেজদের উদ্দেশ্য আংশিক সফল হলেও সম্পুর্ন হয়নি। বিদ্রোহীদের দাপটে কাঠগড়া কুঠিতে নীলচাষ বন্ধ করে দেয় বিদ্রোহীরা। এমনকি কুঠিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নীলদর্পন নীলচাষে ইংরেজদের অত্যাচার, দমনপীড়ন এবং বিদ্রোহীদের লাগাতার আন্দোলনকে নিয়ে নাটক 'নীলদর্পন' প্রকাশিত হল। জেমস লঙ সাহেব ইংরেজ হয়েও নীলদর্পনের ইংরেজী অনুবাদ(মধুসূদন কৃত) প্রকাশ করতেই ইংরেজরা রে রে করে আসেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন পার্লামেন্টে ওঠে। সুপ্রিমকোর্টেও বিচার শুরু হয় ১৫ই মে ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে।বিচারপতি লঙ সাহেবকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে কোর্টের রায় ঘোষনার পর পরই সেই জরিমানার টাকা গুনে দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। উপেক্ষিত কৃষক বিদ্রোহ নীলবিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রকৃত অর্থে বাংলার কৃষকরা। তখনকার শিক্ষিত সমাজ নীলচাষীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। বরং বাংলার হিন্দু মুসলমান দরিদ্র নিম্নশ্রেনীর মানুষরাই ছিলেন যোদ্ধা। ১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহ ছিল শিক্ষিত মানুষদের নেতৃত্বে। সিপাই বিদ্রোহের চেয়ে নীলবিদ্রোহ কোন অংশে কম ছিলনা গুরুত্বের দিক থেকে। বরং ব্যর্থ ছিল সিপাহী বিদ্রোহ। নীলবিদ্রোহ অন্য অর্থে সফল। সিপাই বিদ্রোহ শিক্ষিত মানুষের নেতৃত্বে ছিলেন বলে ১৫০ বছর পরে মহাবিদ্রোহের আকার পেয়েছে। কিন্তু নীলবিদ্রোহের সঙ্গে কৃষকরা জড়িত ছিলেন বলেই বিদ্রোহী নায়কদের কপালে জুটেছে শুধু উপেক্ষা। নীল চাষিদের মধ্যে কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন, কত নারী তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন, কত নারী ধর্ষিতা হয়েছিলেন তার পূর্নাঙ্গ চিত্র নেই। অনেক ইতিহাসবিদরা স্বীকার করেছেন ৫০-৬০ লক্ষ কৃষক নীল বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল যা কোন আন্দোলনে অংশ নেয়নি। এত মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন এবং ইংরেজদের নীলচাষ বন্ধ করতে বাধ্য করার মধ্যে জয় সূচিত হয়েছিল তার ফলশ্রুতি এদেশ থেকে ইংরেজদের চলে যাওয়ার সোপান তৈরী হয়েছিল। কিন্তু সেই বিদ্রোহের ১৫০ বছর পরেও সেভাবে মুল্যায়ন করা হল না। স্বাধীন ভারতের সরকারও খুব বেশী আগ্রহী নয়। আগ্রহী নয় ইতিহাস গবেষকরাও। ইতিহাস চিরকাল ঘুমিয়ে থাকে না। একদিন দূর্গ ভাঙবেই। এ ভাবেই নীলবিদ্রোহের পুর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা এবং দেই বিদ্রোহে অংশ নেওয়া বিদ্রোহীদের যোগ্য সন্মান দেওয়ার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে এই প্রজন্মের মানুষদেরই। সাহায্যকারী পুস্তক: ১) যশোহর খুলনার ইতিহাস, সতীশ মিত্র ২) ইতিহাসের আলোকে যশোর বনগাঁর পাঁচশো বছর, শশধর চক্রবর্তী। ৩) ইন্ডিগো কমিশন রিপোর্ট। http://www.khoyab.in/Prabandho_Rama.html | |
No comments:
Post a Comment