Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Friday, May 8, 2015

মাসুমুর রহমান খলিলী ‘বোকো হারাম’ বানানোর রহস্য কী?

মাসুমুর রহমান খলিলী
'বোকো হারাম' বানানোর রহস্য কী?
 
জঙ্গিকাহিনী বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন নিত্য শোনা গল্পের মধ্যে একটি। প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুললেই এর ধ্বনি প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু বোকো হারামের কাহিনী বাংলাদেশের মানুষ খুব বেশি জানে না। লেখক প্রমথ চৌধুরীকে ছোটবেলায় আমরা অনেকেই যেমন প্রথম চৌধুরী পড়তাম তেমনি অনেকেই বোকো হারামকে পড়েন বোকা হারামি। তবে এই হারাম ওয়ালাদের যে সুনাম-দুর্নাম সংবাদপত্রে আসে, তাতে এ দল যে ভালো কিছু নয় তেমন ধারণা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে প্রায় সাত-আট দশক ধরে চেনা একটি দলকে আমেরিকার যখন নাইজেরিয়ার এই 'বোকো হারাম' হিসেবে দেখার কথা ওঠে, তখন বেশ খানিকটা ঔৎসুক্য সৃষ্টি হয়। বোকো হারামের একটি লম্বা নাম রয়েছে। তবে এ নামের চেয়ে ছোট বোকো হারাম নামেই এর পরিচিতি বেশি। যার অর্থ হলো 'পাশ্চাত্যের শিক্ষাদীক্ষা নিষিদ্ধ বা হারাম'। এই গোষ্ঠীটি মুসলিমদের জন্য পাশ্চাত্যের শিক্ষাদীক্ষাকে হারাম মনে করে। বোকোরা তাদের এই মনে করাকে কার্যকর করতে চায় অস্ত্রের মাধ্যমে। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় এই দলটি অস্ত্রের জোরে দখল প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। শত শত নাইজেরীয় নারি ও শিশুকে অপহরণ করে দীর্ঘ দিন আটকে রেখেছে তারা। এই সশস্ত্র গ্রুপটির তৎপরতা নাইজেরিয়া ছাড়িয়ে প্রতিবেশী ক্যামেরুন নাইজার শাদ ও বেনিনেও বিস্তৃত হয়েছে। এ দলটির হাতে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে গত কয়েক বছরে। শুধু ২০১৪ সালেই তাদের হাতে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার নাইজেরীয়ের, যাদের প্রায় সবাই উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী ও মুসলিম। একসময় আলকায়েদার সাথে দলটির সম্পর্কের কথা জানা যেত। এখন এর নেতা আবু বকর শেখাউ বোকো হারামকে ইরাক-সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা আইএসের কথিত খেলাফতের অংশ ঘোষণা করেছে। 
এই উগ্র দলটির হাতে এমন সব অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কিভাবে গেল, যা নাইজেরিয়ার সরকারি বাহিনী চোখেও দেখেনি, সে এক রহস্যের ব্যাপার। নাইজেরিয়ার বোকো হারাম উপদ্রুত অঞ্চলের কাছাকাছি ইউএন সিস্টেমে কর্মরত আমার এক বন্ধুর পর্যবেক্ষণ হলো তেলসমৃৃদ্ধ নাইজেরিয়াকে অস্থির করে রাখার জন্য এটি হতে পারে আন্তর্জাতিক তেল মাফিয়া কোম্পানিগুলোর কৌশলের একটি অংশ। 
বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের বহুল পঠিত কলামে বলা হয়েছে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার জামায়াতে ইসলামীকে আমেরিকা এখন বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করতে যাচ্ছে। কেন বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলকে আমেরিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এর নেতাকর্মীদের ওপর ভ্রমণ ও অন্যান্য বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাবে, তার জন্য এক অদ্ভুত যুক্তি হাজির করা হয়েছে। সেটি হলোÑ বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর অমেরিকার কংগ্রেশনাল শুনানিতে একটি হিন্দু সংগঠনের নেতা (হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের পরিচালক জে কানসারা) জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসের জন্য অভিযুক্ত করে বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে বলেছে। কলামে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এই হিন্দু নেতাকে দিয়ে কংগ্রেশনাল হিয়ারিংয়ে দাবিটি তোলা হয়েছে। হিন্দু নেতার দাবি কার্যকর করা হলে আরইও ১৩২৪৪-এর আওতায় এক্সিকিউটিভ অর্ডারে উল্লেখ করা বিধিনিষেধের মধ্যে জামায়াতের ব্যক্তি বা সংগঠন পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ মার্কিন এখতিয়ারে আসা তাদের সব অর্থ ও সম্পদ আটকে দিতে পারবে। 
কংগ্রেশনাল হিয়ারিং সম্পর্কে যারা সাধারণ ধারণা রাখেন, তারা এই মতলবি বক্তব্যের রহস্য ধরার চেষ্টা হয়তো করবেন। কিন্তু যারা অত খোঁজখবর রাখেন না তাদের সামনে বিএনপির এক জোট সদস্যকে 'বোকো হারাম'-এর মতো সন্ত্রাসী ঘোষণা করা হবেÑ এ বিষয়টি আতঙ্কজনক মনে হতে পারে। 
২০ দলীয় জোটের দুই প্রধান দল বিএনপি ও জামায়াত ভিন্ন আদর্শ ও প্রেক্ষাপটে সৃষ্টি হওয়া দুই রাজনৈতিক সংগঠন। এই দু'টি দলের আদর্শগত কিছু মিল যেমন রয়েছে তেমনি অমিলও কম নয়। সাধারণ কিছু ইস্যুতে দল দুটো দীর্ঘ দিন জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন ও নির্বাচন করে আসছে। তাদের মধ্যে বিরোধ-বৈরিতা কোনো সময় ছিল না তাও নয়। একসময় আওয়ামী লীগের সাথে সমান্তরালভাবে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত। এই দুই দলের মধ্যে আজীবন জোটবদ্ধতা থাকবে এমনটি কেউই হয়তো মনে করেন না। কিন্তু বোকো হারাম বানিয়ে তাদের সাথে সম্পর্কছেদ, আবার একই সাথে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়ার সন্তান ও বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মাইনাস করার অনুশাসন মার্কা পরামর্শ বেশ রহস্যজনক মনে হয়। প্রচ্ছন্ন যে ইঙ্গিত এতে রয়েছে তা হলোÑ এসব করলে বিএনপি অংশ নিতে পারে এমন একটি নির্বাচন হয়তো দেয়া হবে। কিন্তু সে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সে আরেক রহস্য। এর সাথে ৫ জানুয়ারির আগে শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়ার জন্য সুজাতা সিং বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে যে চাপ দিয়েছিলেন তার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি-না জানা যায় না। তবে এখন অনেকেই নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তেমন আরেকটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিরোধী জোটনেত্রীকে প্রলুব্ধ বা বাধ্য করতে চাইছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে বিরোধিতা করেছিল সেটি ইতিহাসের সত্য। কিন্তু সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিক্সন-কিসিঞ্জার স্বাধীনতার বিপক্ষ অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করার নীতির সাথে জামায়াতের অবস্থানের সম্পর্ক যেভাবে কলামে উল্লেখ করা হয়েছে তা একেবারে নতুন বিষয়। কিসিঞ্জারের হাজার পৃষ্ঠার এক বইয়ের (ডযরঃব ঐড়ঁংব ণবধৎং নু ঐবহৎু অ. করংংরহমবৎ, ঙপঃ ১৯৭৯) 
বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিষয়টি। এতে স্পষ্ট হয় যে, হেনরি কিসিঞ্জার বাইরে যাই বলুন না কেন ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য কাজ করেছেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বি রমন 'র'-এর কাওবয়েরা' নামে যে বই লিখেছেন তাতে সপ্তম নৌবহর কেন আমেরিকা পাঠিয়েছিল তার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে এই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। অবমুক্ত এবং ফাঁস হওয়া অনেক মার্কিন দলিলেও সম্প্রতি তেমন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমেরিকা জামায়াতকে কিভাবে দেখে সেটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি নির্ণায়ক বিষয় হলেও হতে পারে। কিন্তু এ দলটিকে আমেরিকার অনুসরণকারী হিসেবে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার প্রাসঙ্গিকতা অবান্তরই মনে হবে। এবারের যে হিন্দু সংগঠনটি আমেরিকার কংগ্রেশনাল হিয়ারিংয়ে এসেছে, সেটি আগে কোনো সময় অংশ নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতাদের নিয়মিতভাবে শুনানিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। আর সেখানে বিএনপি-জামায়াত নিয়ে তাদের অভিযোগ এবং দাবির ধরন একই রকম মনে হয়েছে। এসব শুনানিতে জামায়াতের অনেক নেতাকেও অতীতে অংশ নিয়ে তাদের বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। তবে সেখানকার কোনো পক্ষের বক্তব্যকে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হিসেবে কোনো সময় দেখা হয়নি।
ইইউ পার্লামেন্টের বক্তব্যের পর আমেরিকা জামায়াত নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব কিভাবে নেয়া হয় এবং বাংলাদেশ নিয়ে তারা আরো কী ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, সেসব প্রসঙ্গ অনেকের কাছে অজ্ঞাত থেকে যাওয়ায় তিল অনেকটা তালের গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে। ইইউ সংসদের যে প্রস্তাবটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি উত্থাপন করে একটি ছোট ককাস। তারচেয়ে বড় একটি ককাসের উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুন, গুম ও রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা এসেছে। অন্য এক প্রস্তাবে র‌্যাবকে দেয়া সব ধরনের দায়মুক্তি প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। ইইউ পার্লামেন্ট আরেক প্রস্তাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব বাঙালি নাগরিককে এবং সেখানকার সেনাবাহিনীকে সরিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সমালোচনা করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হয়েছে একাধিক প্রস্তাবে। ইইউ'র এসব প্রস্তাব বাদ দিয়ে শাসক দলের নেতাদের মতো আলোচ্য কলামে জামায়াত থেকে বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শের কথা বারবার উচ্চারণ করা হয়েছে। ইইউ'র প্রস্তাবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি মৃত্যুদে র রায়ের সমালোচনা করে সেসব দ কে লঘু করার কথা বলা হয়েছে। এমনকি মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুদ রহিত করে আজীবন কারাদ দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ। রহস্যের বিষয় হলো, এসবকে একবারেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে লেখায়। 
যুদ্ধাপরাধ বিচার এবং এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিযুক্ত বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপের বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও বিকৃতি স্থান পেয়েছে লেখায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে র‌্যাপ পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সব সময় স্পর্শকাতর এ বিষয়ে র‌্যাপ সংবাদ সম্মেলনে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যা বলেন তা ট্রান্সক্রিফট আকারে আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রকাশ করা হয়। সরকারকে দেয়া তার সুপারিশগুলোও সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়। যুদ্ধাপরাধ মামলা এবং এর বিচারপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে এ কারণে আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গিতে অস্পষ্টতা কমই দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আমেরিকা যুদ্ধাপরাধ বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করেছে এবং এর স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির জন্য সহযোগিতার কথা বলেছে। এর সাথে আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে, যেটি র‌্যাপের পঞ্চম দফা বাংলাদেশ সফরের সংবাদ সম্মেলনে রাখা বক্তব্যে রয়েছে। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমেরিকা এখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেনি। এ জন্য সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন বিধায় আইসিসির কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে মার্কিন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রে এরকম একটি ধারণা রয়েছে যে, আন্তর্জাতিক ধরনের অপরাধের জাতীয় আইনে বা স্থানীয় পর্যায়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার হতে পারলে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের প্রয়োজনের অনস্বীকার্যতা থাকবে না। এতে আইসিসি প্রতিষ্ঠার ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষর না করা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ কমে যাবে। বাংলাদেশই প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার দেশীয় আইনে দেশীয় তদন্ত ও আদালত দ্বারা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকা চেয়েছিল দেশীয় আইন দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছ বিচার হলে এটাকে তারা একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। এ কারণে শুরু থেকেই আইসিটি আইন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে র‌্যাপের বক্তব্যে সমালোচনা এবং এর সংশোধনের জন্য সুপারিশ দুটোই স্থান পেয়েছে। কিন্তু র‌্যাপের বক্তব্যে তাদের সেই আশাবাদ পূরণ হয়েছে বলে মনে হয়নি। 
কলামটিতে বলা হয়েছে, শুরুর দিকে যে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি র‌্যাপের ছিল তা শেষ দিকে থাকেনি। র‌্যাপ মৃত্যুদণ্ডাদেশের ব্যাপারেও নমনীয় হয়েছেন এবং বিচারকদের সাহসের প্রশংসা করেছেন। ২০১৪ সালের আগস্টে শেষ বার বাংলাদেশ সফরের সময় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া তার বক্তব্যের সাথে এ কথার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এ সময় পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের একজনÑ আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এই মৃত্যুদ কার্যকর করার সুনির্দিষ্টভাবে সমালোচনা করে র‌্যাপ বলেছেন, জীবন কেড়ে নেয়ার মতো দ কার্যকর করার আগে অবশ্যই এ-সংক্রান্ত রায়ের আপিল করার সুযোগ দিতে হবে। আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের মূল রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ দেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই রায় পাল্টে মৃত্যুদ দেয়ার পর অবশ্যই মৃত্যুদে র বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। এ ছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, বিচার কার্যক্রম চলা বা সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন আইনের পূর্বাপর কার্যকারিতা দিয়ে তার প্রয়োগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেটি আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে হয়েছে। র‌্যাপ এ ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বক্তব্যের কথাও (পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ কার্যকর না করতে ফোন করেছিলেন) উল্লেখ করেছেন।
স্টিফেন র‌্যাপ স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ ও আমেরিকা দুই দেশেই মৃত্যুদে র রায় রয়েছে কিন্তু আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোতে মৃত্যুদে র বিধান রহিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় সন্দেহাতীত প্রমাণ ছাড়া কোনোভাবেই মৃত্যুদ দেয়া বা কার্যকর করা উচিত নয়। র‌্যাপের দৃষ্টিভঙ্গি যারা জানতে চান তারা আমেরিকান ওয়েবসাইটে লভ্য তার ১২ পৃষ্ঠাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনের বিবরণী পড়তে পারেন। এর সাথে জামায়াতকে বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসী চিহ্নিত করা সংক্রান্ত কলামে উল্লিখিত বক্তব্যের কোনো মিল নেই। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সাহসের প্রশংসার ছিটেফোঁটাও তার কোথায়ও নেই।
এ কথা ঠিক যে, ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আমেরিকান পররাষ্ট্র দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ পরিবর্তন আনে। এরপর আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। আলকায়েদাবিরোধী যুদ্ধ জোরদার করা হয়। কিন্তু আমেরিকান নীতিতে কট্টরপন্থী আলকায়েদা আইএস বা বোকো হারাম এবং মুসলিম ব্রাদারহুড, জামায়াতে ইসলামী বা আন নাহদার মতো মধ্যপন্থী ইসলামি দলগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা না হলে আরব বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিতো না। তিউনিশিয়া বা মিসরে স্বৈরশাসকদের পতন ঘটত না। তুরস্কের মতো ন্যাটো সদস্য দেশে ইসলামিক পটভূমি থেকে গঠিত একে পার্টি এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারত না। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ াদেশ কার্যকর না করতে বলেছিলেন। নয় এগারোর পরিবর্তনের পর ইসলামিস্টদের সরকারে নেয়া যদি আমেরিকার এতটাই অপছন্দের হতো তাহলে এসব ঘটনা ঘটত না। এ ছাড়া বাংলাদেশে জেএমবির বোমাবাজি ও উত্থানের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তাদের দমন বিচার ও ফাঁসির আদেশও যে চারদলীয় জোট সরকারের সময় হয়েছে এবং যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জরুরি তত্ত্বাবধায়কের আমলে কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার আয়োজন করা হয়েছিল সেসব বিষয় ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। 
রাষ্ট্রের মূলনীতির সাথে রাজনৈতিক দলের আদর্শের বৈপরিত্যের একটি কথা এ দেশের ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপারে বলা হয়। রাষ্ট্রে যেকোনো নীতি পরিবর্তনযোগ্য বলেই সংবিধানকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পরিবর্তনের বিধান রয়েছে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপি লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে যদি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করতে চায় সেটি সম্ভব। আর ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে চূড়ান্ত সত্য এবং এর বিপরীত কোনো দল কাজ করতে পারবে না এমনটা মনে করা হয় না। এমন যুক্তি মেনে নিতে হলে সেই দেশে (বিজেপির কথা বাদ দেয়া হলেও) সঙ্ঘ পরিবারের কোনো সংগঠন অথবা শিবসেনা বৈধ দল হিসেবে কাজ করতে পারতো না। আমেরিকায় উদার গণতন্ত্র বিধ্বংসী আদর্শ নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারবে কি-না, এ মর্মে একটি মামলা দেশটির সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আর সে মামলার রায়ে বলা হয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি যে ধরনের রাষ্ট্র গঠন করতে চায় তার সাথে আমেরিকার শাসনতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো মিল নেই। কিন্তু দল গঠন ও মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা মার্কিন সংবিধান নিশ্চিত করেছে, সেটিকে বিবেচনায় এনে কমিউনিস্ট পার্টিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে। বাংলাদেশে ভারত বা আমেরিকার উদাহরণ টানা হয় বারবার। কিন্তু সেখানে কী নীতি অনুসৃত হচ্ছে তার গভীর বিশ্লেষণ কদাচিৎ করা হয়। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারার ইসলামিস্টদের নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব কোনো সময় আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন করেছে এমনটি পাওয়া যায় না তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা দলিলে। কংগ্রেস যখন ভারতে ক্ষমতায় ছিল, তখন বাংলাদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তাদের গোপন পরামর্শ ছিল বলে অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু দলটি ভারতের সংসদে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিজেপিকে নিষিদ্ধ করার কোনো কথা বলেছে বলে জানা যায় না। আরএসএসের শক্তি ও সমর্থনে ক্ষমতায় আসা বিজেপি যদি এমন কোনো কথা বাংলাদেশের ব্যাপারে বলে থাকেও তবে মানুষকে কেন তা মেনে নিতে হবে?
বিএনপি'র সবচেয়ে বড় শুভাকাক্সক্ষী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন দলটি জামায়াতের সঙ্গ পরিত্যাগ করুক আর মাইনাস করুক তারেক রহমানকে। এই চাওয়ার সাথে কলাম লেখকের পরামর্শের বেশ মিল রয়েছে। এ রকম শুভাকাক্সক্ষীদের পরামর্শ গ্রহণ করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই বিএনপিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। অন০০০০০্য দিকে, যারা আজ বিএনপির কোমর ভাঙার জন্য কাজ করছেন, তারা খুব কাছের দৃশ্যপটটি বেশি করে দেখছেন। ধর্মপ্রবণ একটি মুসলিম দেশে বিএনপির মতো লিবারেলদের যখন দৃশ্যপট থেকে বিদায় করা হয়, তখন তার সুফল প্রতিপক্ষ সেকুলারিস্টরা কখনো পায় না। তখন কি ধরনের শক্তির বিকাশ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় সেটি কয়েক দশকের তুরস্ককে অবলোকন করলে দেখা যায়। নকশালবাড়ি আন্দোলন দমনের লাইন দিয়ে সে পরিস্থিতিকে দীর্ঘকালের জন্য আটকে দেয়া কি আদৌ সম্ভব হবে? জবাব নিশ্চয়ই ইতিবাচক হবে না। 

No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk