আসামের বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে উলফার হুমকি
অনলাইন ডেস্ক, ৩০ জুলাই:
প্রকাশ : ৩০ জুলাই, ২০১৪
আসামের বাংলাভাষী মুসলমানরা আগেও বোড়ো বা অহমিয়া সংগঠনের জঙ্গিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে। ভারতের আসাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার হুমকি দিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফার যে অংশ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার বিরোধিতা করছে, তাদের মুখপত্রের সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় এই হুমকি দেয়া হয়েছে। সম্পাদকীয় কলমে লেখা হয়েছে যে হিন্দু বা মুসলমান, কোন ‘অনুপ্রবেশকারীকেই’ উলফা মেনে নেবে না, আর রক্তপাতের জন্য দায়ী থাকবে বিজেপি আর কংগ্রেস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন আলফার শক্তি অনেকটাই কমে গেলেও এধরনের হুমকি বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা এখনও তাদের রয়েছে। পরেশ বড়ুয়ার হামলা চালানোর ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে, এটা ধরে নেওয়া সঠিক হবে না
আলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন অংশের মুখপত্র স্বাধীনতা-র সর্বশেষ সংখ্যায় লেখা হয়েছে, সমস্ত কথিত অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র ধরবে আলফা।
ওই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে একদিকে বিজেপি যেমন বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুদের শরণার্থী বলে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে আসামের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমানদের নিয়ে রাজনীতি করছেন।
দুটি দলই নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভেবে এটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে স্বাধীনতা-র সম্পাদকীয়তে অভিযোগ করা হয়।
আলফার মতে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান বা মায়ানমার– সব দেশে থেকেই আসামে আসা ‘অবৈধ’ বসবাসকারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়ার সময় এসে গেছে।
আলফার কর্মকাণ্ডের ওপরে দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখেন প্রাক্তন সাংবাদিক ও লেখক রাজীব ভট্টাচার্যি। তিনি বলছিলেন, আলফার জনসমর্থন হারানোর একটা বড় কারণ হল কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তারা স্পষ্ট কোনও অবস্থান কখনই নেয়নি। তিনি বলেন, কর্মী, অর্থের যোগান আর অস্ত্র, সব দিক থেকেই পরেশ বড়ুয়া যথেষ্ট শক্তি হারিয়েছেন। আলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া এখন সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি আসাম সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে, যে বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে চলে এসেছেন, তাঁদের যেন আশ্রয় দেয়া হয়। এই সুযোগটাকেই আলফা কাজে লাগাতে চাইছে সমর্থন বাড়ানোর জন্য। এ বিষয়ে রাজীব ভট্টাচার্যি বলেন, আমাদের আশা আসামের সাধারণ মানুষ, যারা আইনের শাসন মেনে চলেন, তাঁরা আমাদের পাশেই দাঁড়াবেন।
মি: ভট্টাচার্যি প্রায় চার মাস ধরে মায়ানমারে আলফার শিবিরগুলিতে ঘুরে এসেছেন, পরেশ বড়ুয়ার সাক্ষাতকারও নিয়েছেন। তিনি বলেন, দশ বছর আগেও আলফার সঙ্গে যত কর্মী বা অস্ত্র ছিল, তা এখন নেই ঠিকই, কিন্তু এটা ধরে নিলে ভুল হবে যে সশস্ত্র হামলা করার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ থেকে আসামে চলে আসা হিন্দু ও মুসলমানদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি নামের একটি সংগঠন। তারা বলছে, আলফার শক্তিক্ষয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের এই সর্বশেষ হুমকির ফলে আসামের হিন্দু আর মুসলমান, উভয় ধর্মের মানুষই ভয় পাচ্ছেন। ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছেন, আসামে বাংলাভাষী মুসলমানরা দলবদ্ধভাবে থাকে, কিন্তু বাঙালী হিন্দুরা বিভিন্ন জেলাতেই বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন। তাই আলফার এই হুমকির পরে তাঁদের ভীত হওয়ার কারণ আছে।
No comments:
Post a Comment