আড্ডার মেজাজেই গলাতে উদ্যোগী শিল্প-বরফ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আরও ছোটাতে হবে। যদিও তাতে তাঁর ওজন কমবে না! দেহের কাঠামোটাই ওই রকম। অভিষেক ডালমিয়ার বিয়ে এই সে দিন হল না? তিনি যেতে পারেননি। দুঃখিত। তিনি কিছু জানেন না। জানতে এসেছেন। শুনতে এসেছেন। কী প্রত্যাশা? খোলা মনে বলুন। নিশ্চিন্তে বলুন। তাঁরা না বললে তো তিনি জানতে পারবেন না। কোনও গেরামভারি কথা নয়। বিরাট বিরাট প্রতিশ্রুতি-টুতিও নয়। কিন্তু অল্প কথায় নিজের অভীপ্সা বুঝিয়ে দেওয়া। তা-ও একেবারে ঘরোয়া মেজাজে। আলাদা কিছু নয়। যেন কালীঘাটের টালির চালের লাগোয়া অফিসঘরটায় কোনও এক শনিবারের বিকেলে গল্পগাছা করতে বসেছেন। দৈনন্দিন মুড়ি-তেলেভাজার বদলে 'কর্পোরেট-সুলভ' হাই-টি এই-ই যা। দেশের শিল্পমহলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২০ মিনিটের বৈঠকের এই হল নির্যাস। আর 'বৈঠক'ই বা বলছি কেন? বরং বলা যাক, বৈঠকি মেজাজে আড্ডা। যার উদ্দেশ্য একান্ত ভাবেই বরফ গলানো। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম (বিশেষত, সিঙ্গুর) পরবর্তী পর্যায়ে দেশ এবং রাজ্যের শিল্পমহলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে যে শৈত্য জমাট বেঁধেছিল, তাতে উষ্ণতা নিয়ে আসা। কারণ, অতীতের 'আন্দোলনকারী' এখন 'প্রশাসকে'র ভূমিকায়। এখন তাঁর সরকার এবং তিনিই 'বাংলার মুখ'। সেই মুখের মুখোমুখি হলেন শিল্পপতিরা। |
উষ্ণ অভ্যর্থনা। বৈঠক শুরুর আগে শিল্পপতিদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায়। অশোক মজুমদার |
অধুনা বিরোধীরা বলতে পারেন, আলিপুরের বেলভেডিয়ার অফিসার্স ক্লাবে জড়ো-হওয়া শিল্পপতিদের মধ্যে যোগী দেবেশ্বর, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষবর্ধন নেওটিয়াদের মতো যাঁরা সামনের সারিতে বসেছিলেন, এই সে দিন পর্যন্তও তাঁরা ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে! রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে এই ক্লাবেই শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মমতা। কিন্তু তখনকার সঙ্গে স্বভাবতই এ দিনের তফাত অনেক! তখন মমতা ছিলেন কেন্দ্রের একটি অন্যতম বৃহৎ দফতরের মন্ত্রী। আর এখন গোটা রাজ্যের রাশ তাঁরই হাতে। শিল্পপতিদের মধ্যে কৌতূহল ছিল। প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে সম্ভবত খানিকটা উচাটনই থেকে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে হাজির শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই রকম উন্মুখ ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, দীনেশ ত্রিবেদী। বা রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু'ঘণ্টার বৈঠকের পর তাঁরা নিশ্চিন্ত। অমিতবাবু তো বলেই দিলেন, "ইতিবাচক এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এই স্পিরিটটাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।" কোন 'স্পিরিট'? না, যে স্পিরিটে আলোচনা চালিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যা শুনে দেবেশ্বর বললেন, "আপনি এক নতুন আশার জন্ম দিয়েছেন।" আদি গোদরেজ বললেন, "এক অভূতপূর্ব সতেজ দৃষ্টিভঙ্গি দেখালেন আপনি।" মুখে কিছু বললেন না কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল বেথ পেন। কিন্তু তাঁর ঘনঘন মাথা-নাড়া বোঝাচ্ছিল, মার্কিন সহ-বিদেশসচিব রবার্ট ব্লেককে নিয়ে তাঁর শুক্রবারের মহাকরণ-সফর বৃথা যায়নি। যে স্পিরিট লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু হাততালি পড়ল। স্বতঃস্ফূর্ত। কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা? দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানালেন, আগে বন্ধ-অবরোধ করলেও এখন বুঝতে পারেন, ভুল করতেন। ওতে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ হওয়া ছাড়া কিছু হয় না। মানুষ অবরোধকারীদের ক্ষমা করেন না। আরও জানালেন, কাজ দ্রুত করতে হবে। তা করতে গিয়ে হয়তো মাঝেমধ্যে ভুলও হবে। কিন্তু সেই ভুল শুধরে নিয়ে আবার কাজ করতে হবে। বস্তুত, শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন মমতা-ঘনিষ্ঠ এক শিল্পোদ্যোগী তাঁকে বলেছিলেন, ওই বৈঠক হোক শহরের কোনও পাঁচতারায়। মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন, বৈঠক হোক ঘরোয়া মেজাজে। পাঁচতারা-সুলভ আনুষ্ঠানিকতা বর্জিত। গোটা বৈঠক হলও সেই মেজাজে। যেমন বেলা চারটেয় বৈঠক শুরুর মিনিট পাঁচেক আগেই পৌঁছোলেন মমতা। এবং এসেই বললেন, "কি, আমি লেট করিনি তো? আমি কিন্তু বিফোর-টাইম!" তত ক্ষণে ভরে গিয়েছে ক্লাবের মূল হলঘর। যাঁরা পরে এসে পৌঁছেছেন, তাঁদের বসতে হয়েছে পাশের দ্বিতীয় হলে। বৈঠক যে উপচে পড়েছে, তা নজর এড়ায়নি মুখ্যমন্ত্রীরও। ফলে প্রথম নির্দেশ তিনি দিয়েছেন পার্থবাবুকে, "পিছনে আরও তিনটে রো বাড়িয়ে দিন। অনেকে বসতে পারেননি।" হাবভাব অনেকটা গৃহকর্ত্রীর মতো। যিনি বাড়িতে ডেকে এনেছেন অতিথিদের। যে অতিথিরা একবার এসে পড়ার পর যেন আর ফিরে না যান। সেই আন্তরিকতা নিয়েই তিনি ক্রিকেট-প্রশাসক তথা শিল্পপতি জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেকের সঙ্গে কথা বললেন। এক শিল্পোদ্যোগীকে হাসতে হাসতে বললেন, "আপনি কি অন্য শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে হাউসিং বানাতে চান নাকি?" অন্য এক জনকে ভ্রূ তুলে বললেন, "সরকার যদি জমির দাম ঠিক করে দেয়, তা হলে কিন্তু জীবনেও জমি কিনতে পারবেন না! যে বেশি দাম চাইছে, তার কাছ থেকে কিনবেন না। বরং পাশের জমিটা কিনে নিন না।" বললেন, "গুজরাত ইজ গুজরাত। বেঙ্গল ইজ বেঙ্গল। আমরা গুজরাতের মডেল নেব না। বাংলার মডেলেই নবজাগরণ করব।" সঞ্জীব গোয়েন্কাকে বললেন, গোটা কলকাতায় হরিশ মুখার্জি রোডের মতো আলো লাগানো হবে। যা বললেন না, ওই আলোর নকশা তাঁর নিজেরই করা। ঠিক যে ভাবে তিনি নিজের হাতে নিয়ে নিলেন গোটা বৈঠক। কখনও যখন এক শিল্পপতির কথার তোড় থামিয়ে দিচ্ছেন পাশে-বসা শিল্পমন্ত্রী, প্রকাশ্যেই মন্ত্রিসভার সতীর্থকে বারণ করছেন। কখনও শিল্পমন্ত্রীর দিকে ঝুঁকে পড়ে নির্দেশ দিচ্ছেন, প্রশ্ন বেছে নিন। যে সমস্ত প্রশ্ন সামগ্রিক ভাবে 'নীতিগত', সেগুলোই নিন। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকের সুযোগে কোনও শিল্পপতি যদি ব্যক্তিগত 'এজেন্ডা' বলতে চান, তাঁকে সুযোগ না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কখনও দর্শকাসনে বসা শিল্পসচিব, বিদ্যুৎসচিব-সহ আমলাদের নাম ধরে ডেকে ডেকে বলেছেন, "আপনারা সকলে আছেন তো? একটু বুঝিয়ে বলুন তো, তথ্য-পরিসংখ্যান কী আছে আমাদের কাছে?" কখনও শিল্পপতিদের বলছেন, "সব অফিসারকে নিয়ে এসেছি। আপনারা বলুন। অফিসাররা নোট করবেন। সমস্যার যতটা সমাধান করতে পারি, এখানে বসেই করব।" আবার কখনও প্রবীণ আমলার পদবি ভুল করে প্রকাশ্যেই দুঃখপ্রকাশ করছেন। দেশের তা-বড় শিল্পপতিদের সামনে এক মুখ্যমন্ত্রী এই ভঙ্গিতে কথা বলবেন, সম্ভবত ভাবেননি অভ্যাগতরা। অথবা হয়তো ভেবেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই। স্বভাবজ ছটফটে যিনি এসেছিলেন তাঁদের এই বার্তা দিতে 'আমি তোমাদেরও লোক'। |
বিশ্ব জুড়ে ফের দুশ্চিন্তা আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে |
মন্দার আশঙ্কা নেই, দাবি প্রণবের |
ভারতে আর্থিক উন্নয়নের ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। তাই অর্থনীতির উপর ফের মন্দার মেঘ ঘনিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যদিও, আমেরিকা-ইউরোপের উপর নতুন করে মন্দার মেঘ ঘনাচ্ছে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার তার নতুন করে দেওয়া পূর্বাভাসে আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। পাশাপাশি, ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া ইউরোপীয় দেশগুলিকে সতর্ক করে দিয়ে আইএমএফ বলেছে, রাজকোষ ঘাটতি এই মুহূর্তে কমিয়ে আনতে না-পারার অর্থ 'আগুন নিয়ে খেলা করা'। আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি ২০১১ সালে তাদের আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে মাত্র ২.৫ শতাংশ, ২০১২ সালে ২.৭ শতাংশ। মাত্র দু'মাস আগেই এই পূর্বাভাস ছিল যথাক্রমে ২.৮ শতাংশ এবং ২.৯ শতাংশ। সার্বিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার চলতি বছরে ৪.৩ শতাংশ ছোঁবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এর আগের পূর্বাভাস ছিল ৪.৪%। তবে চিনের বৃদ্ধির হার এ বার ৯.৬% স্পর্শ করবে আশাবাদী আইএমএফ। এ দিকে, অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর এক সভায় মন্দার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে ঠিকই। তবে তা গত বছরের চড়া হারের ভিত্তিতে হিসাব করার জন্যই হয়েছে। উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তিগুলি সাধারণ ভাবে অটুটই রয়েছে।" তবে বিশ্বব্যাঙ্কের 'গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্ট' রিপোর্টের জুন সংস্করণের পূর্বাভাস, ২০১১-'১২ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার কিছুটা নেমে দাঁড়াবে ৮ শতাংশে। মুদ্রাস্ফীতির চড়া হার ও চাহিদা কমে যাওয়াকেই দায়ী করেছে তারা। আগের অর্থবর্ষে ওই হার ছিল ৮.৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং প্রণববাবুও অবশ্য এর আগে আর্থিক বৃদ্ধি কিছুটা নেমে আসার ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তবে তাঁদের মতে এটা আদৌ ঘোরালো আর্থিক সঙ্কটের লক্ষণ নয়। |
বন্ধের রাজনীতি থেকে সরে এসে 'এখনই করার' প্রতিশ্রুতি মমতার |
শিল্পের পথে বাধা কাটাতে কোর গ্রুপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাড়াতাড়ি কাজ করতে হয়। না-হলে কাজ হয় না। তাড়াতাড়ি কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। কিন্তু তা শুধরেও নেওয়া যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বার শিল্প মহলের মুখোমুখি হয়ে এ ভাবেই লাল-ফিতের ফাঁস কাটার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই লক্ষ্যেই ঘোষণা করলেন ২৩ থেকে ২৫ সদস্যের 'কোর গ্রুপ' তৈরির কথা। রাজ্য প্রশাসনের প্রতিনিধি (মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সচিব) এবং বিভিন্ন বণিকসভার মনোনীত সদস্যদের নিয়ে তৈরি এই 'কোর গ্রুপ'-ই সমাধান খুঁজবে পরিকাঠামো, লগ্নি কিংবা শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় যা আদপে হবে 'শিল্প মহলের ক্যাবিনেট'। সব মিলিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিলেন যে, বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না তাঁর সরকার। ২০০৬ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে কাজে নেমেছিল বামফ্রন্ট সরকারও। সেই সরকারের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন অবশ্য নতুন সরকারের উদ্যোগ নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতো চাননি। তিনি শুধু বলেন, "আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এ ভাবে শিল্প করবেন। ভাল কথা। করুন। আমরা করতে পারিনি। কী ভাবে শিল্প হচ্ছে দেখি। যদি এ ভাবে শিল্প হয়, আমরা শিক্ষা নেব।" |
বৈঠকে হাল্কা মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র |
মমতা আলিপুরের বেলভিডিয়ার ক্লাবে শনিবার খোলামেলা আলোচনায় বসেছিলেন কর্পোরেট দুনিয়ার সঙ্গে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাশে বসিয়ে আলোচনার শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভাষণ নয়। এই বৈঠকের প্রকৃত উদ্দেশ্য পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 'ডু ইট নাও' স্লোগান তুললেও কাজে তার প্রতিফলন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। মমতাও কিন্তু এ দিন বলেছেন, "ডু ইট ইমিডিয়েটলি।" এখনই করো। তবে একই সঙ্গে জোর দিয়েছেন, না পারলে, তা-ও দ্রুত বলে দেওয়ার উপর। বুঝিয়ে দিয়েছেন, অকারণে প্রকল্প ঝুলিয়ে রাখার পক্ষপাতী নন তিনি। যে কারণে জানিয়েছেন, কোন প্রকল্প কী অবস্থায় রয়েছে, তার নিয়মিত খবর নেবেন। বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রস্তাব খতিয়ে দেখা ও প্রকল্প গড়তে বাধা হঠানোর বিষয়টি দেখবে কোর গ্রুপ। ১৫ দিন অন্তর বৈঠকে বসবে তারা। এ নিয়ে নিরুপমবাবুর প্রতিক্রিয়া, "এখন নতুন সরকার। তাঁরা যদি শিল্পের জন্য দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারেন, তা হলে ভাল কথা।" শিল্প গড়তে যাবতীয় প্রশাসনিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তাঁর সরকারের প্রস্তাবিত জমি নীতির অদলবদল হবে না বলে অবশ্য এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আইটিসি-র ওয়াই সি দেবেশ্বর থেকে বেঙ্গল পিয়ারলেসের কুমারশঙ্কর বাগচি সরাসরি জমি কেনার সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। দেবেশ্বর যেমন খোলাখুলিই বলেন, সরাসরি জমি কেনা যথেষ্ট কঠিন। লগ্নির ক্ষেত্রেও তা বাধা হিসেবে গণ্য করতে পারেন শিল্পপতিরা। কিন্তু অনড় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, জমি কেনার কাজ করতে হবে শিল্পপতিদেরই। জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না তাঁর সরকার। ঠিক করবে না জমির দামও। তবে বড় প্রকল্প তৈরির জন্য যেখানে বড় জমি লাগবে, সেখানে সরকার সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দেন, এ রাজ্যে গুজরাত মডেল অনুসরণ করে শিল্পায়ন হবে না। তাঁর বক্তব্য, "বাংলার মডেলেই বাংলায় নব জাগরণ হবে।" এ প্রসঙ্গে নিরুপমবাবু বলেন, "আমরা শিল্প তৈরির জন্য কিছু জমি নিয়েছিলাম। ৮,০০০ একর জমি আছে। সেখানে চার-পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রি পার্ক হতে পারে। শিল্পের জন্য আরও জমি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া, আমাদের সময়েও তো কেউ কেউ সরাসরি জমি কিনে শিল্প করছিলেন। যেমন বেদান্ত গোষ্ঠী, ভূষণ স্টিল, ভিডিওকন। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে জমি কিনে শিল্প গড়ার কথা বলছেন, তা যদি হয়, তা হলে ভাল হবে। আমরা চাই শিল্প হোক।" কিন্তু না-হওয়া শিল্প বা বন্ধ কারখানার জমিও রয়েছে অনেক। শিল্পমহল সেই জমির পুনর্ব্যবহারের অধিকার চান। সেই জমি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনি সমস্যার কথা তোলেন এস কে রুংতা। জমির ঊর্ধ্বসীমা নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আদি গোদরেজ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বন্ধ কারখানার জমিতে শুধু আবাসন গড়লে হবে না। তৈরি করতে হবে নয়া শিল্পও। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন এক্সাইড কর্তা এস বি গঙ্গোপাধ্যায় শিল্পের জন্য জমির মানচিত্র ও জমি-ব্যাঙ্ক তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। মমতা জানিয়ে দেন, এই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। উঠে আসে যে কোনও শিল্প-বৈঠকের অত্যন্ত চেনা প্রসঙ্গও। বন্ধ ও ধর্মঘট নিয়ে এ দিন বক্তব্য রাখেন এস কে বিড়লা। মমতা বলেন, "আমরা অবরোধ করব না। বন্ধের রাজনীতি সর্বনাশ করেছে। আমরাও এক সময় বন্ধ করেছি। পরে বুঝেছি যে, কোনও লাভ হয় না। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়।" এই বার্তার পাশাপাশি তিনি অবশ্য জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা যেতেই পারে। তবে তা কাজ বন্ধ করে নয়। শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসেও দলের 'ভিশন ডকুমেন্টের' প্রসঙ্গ তুলেছেন মমতা। সেই সূত্রেই ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক শিল্পের উপর জোর দেন তিনি। মনে করিয়ে দেন ২০০ দিনে ১৭টি ক্লাস্টার গড়ার প্রতিশ্রুতির কথাও। জরি শিল্পের কারিগর ও স্বর্ণকারদের দক্ষতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই ধরনের ক্লাস্টার গড়ার আহ্বান জানান শিল্পপতিদের। হস্তশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও পর্যটন শিল্পে লগ্নি টানার উপরেও এ দিন বার বার জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উৎপাদন ও চা শিল্পের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্যও রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, "তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়তে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দার্জিলিঙের মতো জেলাতেও এই শিল্প তৈরি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।" এ দিনের বৈঠকে হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা, গৌরব স্বরূপ, এম কে জালান, সি কে ধনুকার মতো স্থানীয় শিল্পপতিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জিন্দল গোষ্ঠীর প্রতিনিধি বিশ্বদীপ গুপ্ত, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভব্রত ভট্টাচার্য, প্রাইসওয়াটার হাউজ কুপার্সের অম্বরীশ দাশগুপ্ত, অ্যাকলারিসের কল্যাণ কর, গ্লোবসিনের বিক্রম দাশগুপ্ত, ন্যাসকমের সুপর্ণ মৈত্র-সহ আরও অনেকে। প্রায় একই সুরে সবার অভিমত, শুরুটা ভালই হয়েছে। এখন এই গতি বজায় রাখাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। |
দুর্যোগে মৃত আরও ৪ | ||||
সমুদ্র থেকে ফিরে এল ২২টি ট্রলার | ||||
নিজস্ব প্রতিবেদন | ||||
ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যাওয়ার আগে গভীর নিম্নচাপ ছিনিয়ে নিল এ রাজ্যের আরও চারটি প্রাণ। শনিবার ভোরে বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ার ধীরপাড়ায় ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয় সুশান্ত নাহা ওরফে বিষ্ণু (৩৮) নামে এক যুবকের। একই কারণে মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরের বড়াশুলি গ্রামে দ্বিজমণি সোরেন (৭৮) এবং তাঁর নাতি সাগেন সোরেন (২২) মারা যান। শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ঈদগাহ্ মহল্লার বাসিন্দা শেখ রহিম কুরেশির (৭০) বাড়ির দেওয়ালও ধসে পড়ে। ওই ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বৃদ্ধের। এর আগে উত্তাল সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হয় এক মৎস্যজীবীর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাবা বসিয়েছে গরিব মানুষদের ঘর-গেরস্থালিতেও। বহু কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। নষ্ট হয়েছে খেতের ফসল। ধসে গিয়েছে নদীবাঁধ। তবে জেলায় জেলায় যে সব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন মহাকরণে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। সকালে বঙ্গোপসাগর থেকে ২২টি ট্রলার কাকদ্বীপে ফিরে এসেছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। দু'দিন ধরে ট্রলারগুলির হদিশ মিলছিল না। জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, ৬টি ট্রলার বাংলাদেশের পটুয়াখালিতে চলে গিয়েছে। আরও ৬টি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় রয়েছে। প্রকল্পের কর্তাদের তা জানানো হয়েছে। তাঁরা ট্রলারের মাঝিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। জেলাশাসক বলেন, "সকাল থেকেই উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং প্রশাসনের তরফে সমুদ্রে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।" | ||||
নদী নয়। বৃষ্টিতে আরামবাগের সুপাড়ায় চাষের খেতের এই অবস্থা। ছবি: মোহন দাস। | ||||
দিক ভুল করে পটুয়াখালিতে চলে আসা কয়েকটি ভারতীয় ট্রলারকে বাংলাদেশের নৌ-পুলিশ কলাপাড়া থানায় নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এসেছে। ট্রলারগুলি হল এফ বি মা লক্ষ্মী, এফ বি মা আনন্দময়ী, এফ বি অন্নপূর্ণা এবং এফ বি শঙ্খদীপ। তাতে মোট ৭৯ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন বলে বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মৎস্যজীবীরা কাকদ্বীপের বাসিন্দা। এফ বি মা লক্ষ্মী ট্রলারের মৎস্যজীবী নিখিল দাস জানিয়েছেন, দিক ভুল করেই তাঁরা বাংলাদেশের জলসীমায় চলে আসেন। শুক্রবার তাঁরা পটুয়াখালির কুয়াকাটা এলাকায় এলে তাঁদের একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। শনিবার তাঁরা আসেন আলিপুরে। কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসাহাক আলি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মৎস্যজীবীদের তালিকা করার পরে তাঁদের পুলিশ হেফাজতে আনা হয়। তবে হোভারক্রাফট, জাহাজ নিয়ে উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং নৌ-বাহিনীর দিনভর তল্লাশিতেও উদ্ধার করা গেল না দিঘা মোহনা থেকে মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া ৩৫ মৎস্যজীবীকে। তাঁদের নিয়ে তিনটি ট্রলার সাগরদ্বীপ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে রয়েছে বলে খবর মিলেছিল শুক্রবার। কিন্তু শনিবারও সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং সমানে ঝোড়ো হাওয়া বওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। প্রিয়াঙ্কা এবং পঞ্চপ্রিয়া নামে দু'টি ট্রলারে ২৪ জন মৎস্যজীবী বঙ্গোপসাগরের কেন্দদ্বীপে রয়েছেন বলে এ দিন নিশ্চিত হয়েছে মৎস্য দফতর। কিন্তু ১১ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে মা বাসন্তী ট্রলারটির অবস্থান এ দিন আর নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ফলে উদ্বেগ বেড়েছে। টানা বর্ষণে বাঁকুড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিষ্ণুপুর মহকুমার ৬টি ব্লক। মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, "প্রায় ৩৫ হেক্টর জমির ফসল জলের তলায়। অন্তত ২১০টি গ্রাম কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই গ্রামগুলিতে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে।" সোনামুখী শহর লাগোয়া শালি নদীর সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় সোনামুখী-দুর্গাপুর সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাইপুরে ভৈরববাঁকি নদীর সেতুর উপর দিয়ে এ দিন সকাল থেকেই জল বইতে থাকে। ফলে ঝাড়গ্রাম-রাইপুর রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিমলাপালে শিলাবতী নদীর জলও সেতুর উপর দিয়ে বইতে থাকে। বৃষ্টিতে বহু এলাকায় গাছ ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং ছিল খাতড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ক্রমাগত বৃষ্টিতে জেলায় মোট ৭৫০টি কাঁচাবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১০২৫টি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্থ এলাকাগুলিতে ত্রিপল, পলিথিন এবং শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। | ||||
| ||||
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লকে ৭ হাজার মাটির বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বিনপুরের তারাফেনি ব্যারাজ থেকে শনিবারই সাড়ে ন'হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে বিপদসীমা না ছাড়ালেও কংসাবতীতে জল বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ব্যারাজের কাছের কাঁকো, শিয়ারকাঁটা, কাঁকোশতাল গ্রামের কিছু এলাকা। শিলদায় রাজাবাঁধে জলাশয়ের জল উপচে শিলদা-বেলপাহাড়ির পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আবার জামবনি ব্লকে ডুলুং নদীর জল কজওয়ে ছাপিয়ে বইতে শুরু করায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে চিল্কিগড়। শনিবার সকালে এলাকা পরিদর্শনে যান পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যাপ্রবণ ঘাটাল, দাসপুর-১ এবং চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে কিছু জায়গায় জল জমেছে। তবে সেটা মূলত বেহাল নিকাশির কারণেই। এ দিন দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকেও ২১৫০ কিউসেক ছাড়া হয়। পূর্ব মেদিনীপুরে রামনগরের চাঁদপুরে সমুদ্রবাঁধ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়াচর এবং মহিষাদলের মায়াচরের মতো জেলার কয়েক জায়গায় কিছু কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তমলুক, ময়না, কোলাঘাট, নন্দীগ্রাম ব্লকের কয়েক জায়গায় কৃষিজমিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আমনের বীজতলার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হুগলির আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকেল ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকাও বৃষ্টিতে কমবেশি বিধ্বস্ত। |
No comments:
Post a Comment