Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Thursday, May 19, 2011

তাণ্ডবের মধ্যেও পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিরোধে গ্রামের মহিলারা !গণবণ্টন ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করার বদলে গুড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশ করলো বিশ্বব্যাঙ্ক !

''পরিবর্তন''  
তৃণমূলী ঘাতকদের হাতে নিহত পূর্ণিমা ঘড়ুই-র মরদেহ ঘিরে স্বজনদের কান্না। রায়নার হিজলনা গ্রামে তোলা শঙ্কর ঘোষালের ছবি।

তাণ্ডবের মধ্যেও পশ্চিমাঞ্চলে
প্রতিরোধে গ্রামের মহিলারা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা,১৮ই মে- রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তৃণমূলী সন্ত্রাস অব্যাহত। দেওয়ালে পিস্তলের ছবি এঁকে 'বদলা নয়,বদল চাই'-স্লোগানের তাৎপর্য স্পষ্ট হচ্ছে প্রতিমুহর্তেই। একদিকে সি পি আই (এম) বিরোধী অবিরাম কুৎসার স্রোত, অন্যদিকে 'জনরোষ' নামের সি পি আই (এম) কর্মীদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ,পার্টি অফিসে হামলা—তৃণমূলী বিজয়োৎসবের এই চেহারাই প্রত্যক্ষ করছেন পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন। 

নিজের সন্তানকে খুন করার তৃণমূলী হুমকি এবং তাণ্ডবের মুখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বুধবার আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন সি পি আই (এম)-র গোয়ালতোড় জোনের আমলাশুলি শাখার সদস্য কমরেড কার্তিক চ্যাটার্জি। তাঁর ছেলে সমরেশধ চ্যাটার্জিও সি পি আই (এম)-র সদস্য। তৃণমূলী সন্ত্রাসের মুখেও গ্রাম ছেড়ে যাননি, মানুষকে সংগঠিত করছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। হিংস্র তৃণমূলীরা তাই সমরেশকে খুন করবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে শুরু করে। তৃণমূলীদের এই হুমকি, নিজের ছেলের জীবন সংশয় মানসিক ভাবে মেনে নিতে পারেননি। চূড়ান্ত বির্পযস্ত অবস্থায় এদিন তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহননের পথই বেছে নেন। 

তবুও এই নিদারুণ হামলা ,জরিমানা, সশস্ত্র তৃণমূলী তাণ্ডবের মাঝেও কোন কোন জায়গায় মহিলারা নিজেদের জীবন,সম্ভ্রম রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েই প্রতিরোধে নামছেন। বেলদার সরবেড়িয়াতে সি পি আই (এম)-র কার্যালয়, গ্রামবাসীদের ঘরদোর ভেঙে লুঠপাট চালাতে এলে সর্বস্ব বাজি রেখেই তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অসম প্রতিরোধে নামে গ্রামের মহিলারা। শেষমেষ পিছু হটতেও বাধ্য হন মহিলারা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের সংখ্যালঘু প্রধান দেলুয়া গ্রামে সশস্ত্র আক্রমণ চালাতে এলে গোটা গ্রামের প্রায় ২০০জন মহিলা রুখে দাঁড়ান তৃণমূলী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। গোপগড়েও দুটি জায়গায় হামলার আগে তৃণমূলী সশস্ত্র অবস্থায় জমায়েত করছে, খবর পেয়েই মহিলা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মহিলাদের এই সাহসী প্রতিরোধ আক্রান্ত প্রতিটি জনপদেই ভরসা যোগাচ্ছে। 

এদিকে বাকুঁড়ার তালডাংরার শালতোড়ায় সি পি আই (এম) নেতা কমরেড অজিত লোহারকে নৃশংসভাবে খুন করার পর প্রশানের তরফে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। কিন্তু এরই মাঝে মঙ্গলবার রাতে পার্টির পাঁচমুড়া আঞ্চলিক কমিটির কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা চালালো তৃণমূলীরা। পার্টি অফিসের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে রীতিমতো তান্ডব চালায় তৃণমূলীরা। আক্রমনে একেবারে শেষে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ৬জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়, যদিও বাকি দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এই হামলার পরে বুধবার সকালেও গোটা এলাকা রীতিমতো শুনসান ছিলো। আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোটা এলাকাকে। 

অন্যদিকে, মেদিনীপুর সদর ব্লকে পরিকল্পিতভাবে মাওবাদীদের নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূলীরা। সদর ব্লকের নেপুরায় ডি ওয়াই এফ আই-এর জেলা কমিটির এক সদস্যের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলীরা। চূড়ান্ত হিংস্রতারও নজির রাখলো তৃণমূলীরা। হামলা চালানো সময়ে এমনকি মায়ের কোল থেকে বাচ্চাকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূলী বাহিনী। তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে নিজের বাচ্চাকে কোনমতে রক্ষা করতে পেরেছেন ঐ অসহায় জননী। এরপর গোপগড়ে দামু জানাসহ তিনজন পার্টিকর্মীকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলী সশস্ত্র বাহিনী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দামু জানাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

সদর ব্লকে দ্বিতীয় দফায় আক্রমন শুরু হয় মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ। প্রায় ৫০টি বাইক চেপে সশস্ত্র তৃণমূলীরা গোটা কঙ্কাবতী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। এরপর কঙ্কাবতী পার্টি অফিসে ঢুকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দাউদাউ করে জ্বলে গোটা পার্টি অফিস। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ডাঃ জগন্নাথ সিংহের বাড়িতে। ভেতরে আটকে পড়েন যায় বাড়ির মহিলা, বাচ্চারা। কোনমতে এঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষ। এরপরে ঘটনাস্থলে যায় দমকল, রাত প্রায় দুটো নাগাদ আসে র‌্যাফ। অন্যদিকে ঘাটালের রাধাবল্লভপুরে মাওবাদীদের শেখানো কায়দাতেই পার্টি কর্মী পূর্নচন্দ্র মন্ডলকে মারধর করে প্রায় ১লক্ষ টাকা জরিমানা করে তৃণমূলীরা। এছাড়াও একাধিক পার্টি কর্মীকে হুমকি, মারধরের ঘটনা ঘটেছে গত তিনদিনে। পার্টির চন্দ্রকোনা-২নম্বর জোনাল কমিটির সদস্য কানাই ঘোষ, চিত্ত চৌধুরিকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলদায় পার্টির আঞ্চলিক কমিটির সদস্য হরেকৃষ্ণ মাইতিকে তৃণমূল অফিসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্র খোঁজার গল্প ফেঁদে বেধড়ক মারধর করা হয় পার্টি নেতা জীবন জানা, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের প্রতিবন্ধি শিক্ষক বিমল আঢ্যসহ বেশ কয়েকজনের উপর অত্যাচার চালানো হয়। এসবই চলছে তৃণমূলী পরিবর্তনের উৎসবের নামে। 

তৃণমূলী ও সংবাদমাধ্যমের যৌথ উদ্যোগে অস্ত্র উদ্ধারের আরো একটি নাটক হলো কঙ্কাবতীতে। গত সোমবার বিকেলে কঙ্কাবতী পার্টি অফিসে ঢুকে তল্লাশি চালায় তৃণমূলীরা। মেলেনি কিছুই। এরপর ফের মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ পছন্দের সাংবাদিকদের নিয়ে জঙ্গলের এক পরিত্যক্ত কুয়ে থেকে কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে অস্ত্র মিলেছে বলে প্রচার চালাতে থাকে তৃণমূলীরা। স্থানীয় মানুষজনই জানিয়েছেন সোমবার রাতেই দুটি চার চাকার গাড়ি রাতে ঢোকে এলাকায়। অপরিচিত কিছু লোক এরপর গাড়ি থেকে কয়েকটি বস্তা নামিয়ে ফের চলে যায়। ষড়যন্ত্র যে কতটা গভীর তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। 

পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের মত বাঁকুড়াতেও চলছে 'অস্ত্র তল্লাশি'র নামে তৃণমূলী সন্ত্রাসের নতুন নাটক। এদিনই বাঁকুড়ার কোতলপুরে মদনমোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে অস্ত্র খোঁজার গল্প ফেঁদে হামলা চালায় তৃণমূলীরা। যদিও পুলিস তৃণমূলীদের কথা শুনে পঞ্চায়েতে অফিসে ঢুকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন অস্ত্রের সন্ধান পায়নি। একই নাটক মঞ্চস্থ হয় জয়পুর থানার কুচিয়া কোল এলাকায় সি পি আই (এম) নেতা শঙ্কর দিগরের বাড়িতে। যদিও সেখানে কোন অস্ত্র না পেলেও পার্টিনেতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুলিস থানায় নিয়ে যেতে চাইলে গ্রামাবসীদের প্রতিবাদে শেষমেষ পুলিস ও তৃণমূলীরা পিছু হটে। জয়পুরে হেতিয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাকর সাঁতরাকে এদিন প্রচণ্ড মারধর করে তৃণমূলীরা, মারধর করা হয় একাধিক পার্টি কর্মীকেও। মঙ্গলবার রাতেই ইন্দাসের আমরুল এলাকার সাহিসনাড়া গ্রামে পার্টি কর্মী হারাধন মাঝি ও সুকুমার রায়কে বেধড়ক মারধর করা হয়। হারাধন মাঝিকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে শালবনী, গোয়ালতোড়ে পরিকল্পিতভাবে হামলার মাত্রা তীব্র করছে তৃণমূলীরা। শালবনীর কর্নগড়ে। পারুলিয়া,কাছারি কুলিপাড়ায় একাধিক পার্টি কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে তৃণমূলীরা। ভাঙচুর চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পার্টি অফিস। লাল ঝাণ্ডা নামিয়ে ভৈরব বাহিনী টাঙিয়ে দিচ্ছে তৃণমূলী পতাকা। 

গণবণ্টন ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করার বদলে
গুড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশ করলো বিশ্বব্যাঙ্ক

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, ১৮ই মে — গণবণ্টন ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করার পরিবর্তে কার্যত একে গুড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশ করল বিশ্বব্যাঙ্ক। গণবণ্টন ব্যবস্থাকে গরিব মানুষের মধ্যে 'সীমাবদ্ধ' রেখে বিশ্বব্যাঙ্কের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ, দীর্ঘমেয়াদের কথা মনে রেখে খাদ্যশস্যের বদলে বিবেচনা করা যেতে পারে নগদ লেনদেনের কথা। বিবেচনা করা যেতে পারে 'স্মার্ট কার্ড', অথবা ফুড কুপনের কথা। যা আসলে ডেকে আনবে বেসরকারী সংস্থাকে। 

যথারীতি বিশ্বব্যাঙ্ক তার এই সুপারিশের নেপথ্যে গণবণ্টন ব্যবস্থার 'ফাঁকফোকর'সহ কীভাবে এই ব্যবস্থায় খাদ্যশস্য প্রকৃত গরিবের কাছে না পৌছে অন্যত্র চালান হয়ে যাচ্ছে, তার দোহাই টেনেছে। কিন্তু, একবারের জন্যও কীভাবে এই ফাঁকফোকরগুলি ভরাট করা যায়, তা বলেনি। জানিয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জি ডি পি) ২শতাংশ ভারত খরচ করা সত্ত্বেও, দারিদ্র্য দূরীকরণে তার লক্ষ্যে পৌছতে তারা ব্যর্থ। কারণ হলো, এই ব্যবস্থার 'ফাঁকফোকর'সহ এর 'অসম রূপায়ণ'। বলেছেন ভারতে সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ জন ব্লমকুইস্ট। তার পেশ করা প্রতিবেদন 'পরিবর্তনশীল ভারতের জন্য সামাজিক সুরক্ষা'য়। 'সরকার থেকে বণ্টন করা খাদ্যশস্যের মাত্র ৪১শতাংশ পৌছয় মানুষের কাছে, অন্তত ২০০৪-০৫সালের জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য তেমনই বলছে।' জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বিহারের মতো রাজ্যে 'ফুড স্ট্যাম্প', অথবা খাদ্য কুপন চালু করা যেতে পারে, আবার তামিলনাডু ও ছত্তিশগড়ের মধ্যে রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধানের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি কি গণবণ্টন ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার কথা বলছেন? জবাবে তিনি জানান, বহু দেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় 'নগদ লেনদেন' কীভাবে 'মৌলিক ভিতের' কাজ করছে।

সামাজিক সুরক্ষায় বেসরকারী ক্ষেত্রের সম্ভাবনার কথা সবিস্তারে তুলে ধরে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। তাঁর কথায়, বিতর্ক একটাই, নির্দিষ্ট প্রকল্প-ভিত্তিক, না কি সর্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা। 

জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে তফসীলি জাতি (৩১শতাংশ), তফসীলি উপজাতি (২৫শতাংশ) এবং মহিলাদের (৫০শতাংশ) নজরকাড়া উপস্থিতির কথা প্রতিবেদনে বলা হলেও, এর 'অসম রূপায়ণের' কথাও বলা হয়েছে। রাজস্থানে যেমন ৯০শতাংশ গ্রামীণ পরিবার এই প্রকল্প থেকে উপকৃত, তেমনই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, কেরলায় উপকৃতের সংখ্যা সাকুল্যে ২০শতাংশ।

আজ পাহাড়ে বন্‌ধ
ডাকলো মোর্চা

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি, ১৮ই মে – দার্জিলিঙ পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বৃহস্পতিবার ২৪ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে। প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাতে সোনাদাতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জি এন এল এফ-র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ৫জন মোর্চা সমর্থক জখম হন। এঁদের মধ্যে রবীন রাই নামে এক মোর্চা সমর্থককে সঙ্কটজনক অবস্থায় শিলিগুড়িতে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। বুধবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর পাহাড়ে পৌঁছাতেই কার্শিয়াঙ ও সোনাদাতে অঘোষিত বন্‌ধ শুরু হয়ে যায়। প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়। এদিন বিকেলেই মোর্চা নেতৃত্ব দার্জিলিঙে এক জরুরী বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে মোর্চার সচিব রেশন গিরি জানান, তাদের কর্মী খুনের প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার পাহাড়জুড়ে বন্‌ধ ডাকা হয়েছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, বন্‌ধের আওতা থেকে যানবাহন, চা ও সিঙ্কোনা বাগানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যানবাহন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হলেও ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় ও সমতলের মধ্যে কতটা যানবাহন চলাচল করবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বুধবার বিকেলেই নিহত রবীন রাইয়ের মরদেহ পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকায় নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে ঘটনার পরেই ৫জন জি এন এল এফ সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। ইতোমধ্যেই মোর্চার হুমকির জেরে জি এন এল এফ নেতা সুভাষ ঘিষিং সোমবার রাতে দার্জিলিঙের নিজস্ব ভবন ছেড়ে শিলিগুড়িতে চলে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি জলপাইগুড়িতে তার পুরানো ভাড়া করা বাসভবনে চলে যান। ঘিষিং পাহাড়ে ওঠার পর থেকেই জি এন এল এফ কর্মীরা নতুন করে সংগঠিত হতে থাকেন। সেটা উপলব্ধি করেই সুভাষ ঘিষিং-কে পাহাড় ছাড়ার হুমকি দেওয়া হতে থাকে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করেই সুভাষ ঘিষিং পাহাড় ছাড়তে বাধ্য হন। জানা গেছে, বেশ কিছু জি এন এল এফ সমর্থক ইতোমধ্যেই পাহাড় ছেড়ে সমতলে নেমে এসেছেন।

এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় পার্বত্য অঞ্চলের দিলারামে জি এন এল এফ-র এক নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো মোর্চার বিরুদ্ধে। বাড়িটি ভস্মীভূত হয়ে গেছে বলে খবর।


বীরভূমে পার্টির
জেলা দপ্তরে হামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা: সিউড়ি, ১৪ই মে— সি পি আই (এম)-র বীরভূম জেলা কমিটির দপ্তরে হামলা চালালো তৃণমূল। শুক্রবার রাত ১২টার পর তিনটি বাইকে চেপে ৯জন দুষ্কৃতী এলাকায় ঢোকে। তারা ঢিল মেরে জেলা দপ্তরের জানলার কাচ ভাঙে, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে হামলারও চেষ্টা চালায়। সেখান থেকে ঐ উন্মত্ত বাহিনী জেলা কৃষকসভার দপ্তরে গিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা চালায়। ভাঙচুর করা হয়। বোলপুরের বিভিন্ন গ্রামে হামলায় আহত হয়েছেন একাধিক সি পি আই (এম) কর্মী। বাহিরী গ্রামে হামলা হয়েছে। মহিলা কর্মীদের বাড়িতে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে তৃণমূলীরা। একজন পার্টিকর্মী জখম হয়ে সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হামলার ঘটনা ঘটেছে লাভপুর এবং নানুরের বিভিন্ন গ্রামেও।

নয়ডার গ্রামে দমনপীড়নের অভিযোগ
করলো কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, ১৮ই মে— ভাট্টা পারাসুল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন রাহুল গান্ধী। বুধবার এমনই অভিযোগে সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন ভাট্টা পারাসুল গ্রামে ধর্ষণ এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিভিন্ন টি ভি চ্যানেলে দাবি করা হয়, রাহুল গান্ধীর অভিযোগের সপক্ষে ভাট্টা পারাসুল গ্রামে কোনো প্রমাণ মেলেনি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই বি এস পি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল রাহুল গান্ধীর অভিযোগ অসত্য। এদিন টিভি চ্যানেলে ভাট্টা পারাসুল নিয়ে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী এবং দেশবাসীকে ভুল বুঝিয়েছেন এই অভিযোগের পর রাজধানীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস রাহুল গান্ধীকে আড়াল করতে নেমে পড়ে। পরে রাহুল ফের উত্তর প্রদেশ সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এদিকে গ্রেটার নয়ডার ভাট্টা পারাসুল গ্রামে কৃষক আন্দোলন দমনে ব্যাপক দমনপীড়ন চলছে বলে জানিয়েছে সারা ভারত কিষানসভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। কৃষক এবং খেতমজুরদের এই দুই শীর্ষ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখতে ভাট্টা পারাসুল গ্রামে একটি প্রতিনিধি দল যায়। ঐ প্রতিনিধি দলে সারা ভারত কিষানসভার সভাপতি এস আর পিল্লাই, নুরুল হুদা, বিজু কৃষাণ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সহসম্পাদক সুনীত চোপড়া, উত্তর প্রদেশের সভাপতি ধরমপাল সিং এবং গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার সি পি আই (এম) সম্পাদক চন্দ্রপাল সিং ঘটনাস্থলে যান। ঐ জেলায় জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছে তার আহ্বায়ক সদারাম ভাটিসহ স্থানীয় কৃষকনেতারাও ভাট্টা পারাসুল গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। 

স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় উত্তর প্রদেশ সরকার কৃষকদের ওপর ব্যাপক দমন পীড়ন চালাচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য। তাঁরা হয় পুলিসী নির্যাতনের শিকার অথবা সেই নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। এমনকি শিশুদেরও ছাড়া হয়নি। বহু মানুষ জানিয়েছেন তাঁরা জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী এই আন্দোলনে যোগ না দিলেও পুলিস তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়েছে, তছনছ করেছে ঘরবাড়ি। প্রতিনিধি দল এরকম দমন পীড়নের বহু চিহ্ন দেখেছে বলে জানিয়েছে। প্রতিনিধি দল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো গ্রামের যুবকরা অধিকাংশই নিখোঁজ অথবা তাঁরা পালিয়ে গেছেন। পুলিসী জুলুমের কারণেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা। নিখোঁজ যুবকদের সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সত্তর বছরের এক বৃদ্ধের কথা উল্লেখ করে প্রতিনিধি দল জানিয়েছে পুলিসী নির্যাতনে রাজিন্দার সিং নামে এই ব্যক্তি পঙ্গু এবং অন্ধ হয়ে গেছেন। আশি বছরের বেশি বয়স্কা দুই মহিলাকে বেধড়ক মেরেছে পুলিস। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। 

উত্তর প্রদেশ এক্সপ্রেসওয়ের জন্য গ্রেটার নয়ডায় জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে কৃষকরা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে রাজ্যের গৌতম বুদ্ধ নগরের ভাট্টা পারাসুল গ্রাম। অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে সেখানে কৃষক আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলন দমন করার জন্য ব্যাপক পুলিসী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে উত্তর প্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। এরমধ্যেই রাহুল গান্ধী সেখানে চলে যান, গ্রেপ্তার হন। পরে গত সোমবার ভাট্টা পারাসুলের এক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে রাহুল গান্ধী দাবি করেন ৭৪জন কৃষককে খুন করা হয়েছে। তাঁদের ছাইয়ের গাদার নিচে চাপা দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। 

রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে মঙ্গলবারই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বি এস পি বিধায়ক সৈয়দ কাজিম আলি খান বলেন, রাহুল গান্ধী যেসব পোড়া দেহের ছবি দেখিয়েছেন সেগুলি ভাট্টা পারাসুল গ্রামের বাসিন্দাদের কিনা তা প্রমাণ করার জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। এরমধ্যেই এদিন একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হয়, রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধর্ষণ এবং খুনের যে তথ্য দিয়েছেন তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। ঐ চ্যানেলের পক্ষ থেকে ভাট্টা পারাসুল গ্রামে অনুসন্ধান চালানোর পর দাবি করা হয়, গ্রামে পুলিসী দমন পীড়ন হয়েছে, পুরুষরা গ্রামে নেই, মহিলারা আতঙ্কে আছেন কিন্তু পুড়িয়ে মারা বা ধর্ষণের কোনো প্রমাণ নেই।

এই খবর সম্প্রচারের পরেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। বি জে পি রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে। বেকায়দায় পড়ে কংগ্রেস রাহুল গান্ধীকে বাঁচাতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দ্বিবেদী বলেন মিডিয়ায় যা বলা হচ্ছে তা দুঃখজনক। রাহুল গান্ধী কখনো ৭৪টি মৃতদেহের কথা বলেননি। তিনি বলেছেন একটি জায়গায় ৭০ফুট উঁচু ছাইয়ের স্তূপ রয়েছে, যেখানে হাড় পাওয়া গেছে। মহিলাদের ধর্ষণের বিষয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য সম্পর্কে দ্বিবেদী জানান, এটা অনুসন্ধান করার বিষয়। অবশ্যই এর তদন্ত করতে হবে। হাড় যখন পাওয়া গেছে, তখন সেই হাড় কাদের তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। যদি মহিলাদের ওপর অত্যাচার হয়ে থাকে, যদি তাঁদের কেবলমাত্র মারধরও করা হয়, কেন তা হবে? এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী ঐসব অভিযোগ করেননি। এলাকার মানুষ তাঁকে যা জানিয়েছেন তিনি সেকথাই প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন। 

এদিকে ভাট্টা পারাসুল গ্রামে পুলিসী দমন পীড়নের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন রাষ্ট্রীয় লোকদলের সভাপতি অজিত সিং। তিনি বলেন এই বিষয়ে কংগ্রেস যে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তা সঠিক। দমন পীড়নের যে তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই সরকারের উচিত বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। আজিত সিংয়ের এই অবস্থানে কংগ্রেস এদিন খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থায় এসেছে। মায়াবতী সরকার এদিন ৭ই মে ভাট্টা পারাসুল গ্রামে জনতা-পুলিস সংঘর্ষের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুরিন্দর রাম তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন। 

জমি অধিগ্রহণ সংশোধনী বিল সংসদে না আনায় যথেষ্টই বেকায়দায় রয়েছে কংগ্রেস। রাজ্য বিধানসভা ভোটের মুখে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভের ফল কংগ্রসকেও নিতে হবে বুঝেই রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে আসরে নেমেছে কংগ্রেস। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো দায় নেই বোঝাতেই উত্তর প্রদেশ সরকারকে টানা আক্রমণের কৌশল নিয়েছে রাহুল গান্ধী। এদিনও বারাণসীতে উত্তর প্রদেশ রাজ্য কংগ্রেসের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন তিনি রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি কোনায় যাবেন এবং কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে উত্তর প্রদেশ সরকারকে উৎখাত করবেন। 

সারা ভারত কিষানসভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন বলেছে এই পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশ সরকার দায়ি নয়। বেসরকারী সংস্থা এবং ধনী রিয়েল এস্টেট সংস্থার স্বার্থবাহী কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কারণেই ভাট্টা পারাসুলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এরফলে নামমাত্র মূল্যে গরিব কৃষকের জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা না করেই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এরফলে দেশের খাদ্য সুরক্ষাও বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশই নয়, এভাবে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটকসহ দেশের বহু রাজ্যেই কৃষকদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নয়া উদারবাদী অর্থনীতি যা নরসিমা রাও সরকারের আমলে গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীকালে বাজপেয়ী সরকারও তার নীতিগুলি কার্যকর করে। এখন মনমোহন সিং সরকারের আমলেও সেই নীতির ফলেই আক্রান্ত হচ্ছেন গরিব কৃষকরা। 

তৃণমূলের জয়ে সহকর্মীদের ওপর
তাণ্ডব একাংশের দমকলকর্মীর

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৮ই মে — ঝাণ্ডা দখলের লড়াই নয়। নিজেদের সহকর্মীদের হাতেই নির্যাতিত হতে হলো একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ার জন্য। বুধবার সকাল থেকে মানিকতলার ফায়ার স্টেশনের ভিতর তৃণমূলী কর্মীদের হামলার জন্য দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো দমকলের মতো জরুরী বিভাগের কাজ।

এদিন সকালে মদ্যপ অবস্থায় তৃণমূল সমর্থিত এক শ্রেণীর কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হতে হলো বাম মনোভাবাপন্ন অপর দমকল কর্মীদের। উর্দি পরে ডিউটি করার ফাঁকে তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে মানিকতলার থানার পুলিস আসলেও তারা হস্তক্ষেপ না করায় গণ্ডগোল আরো বড় আকার নেয়। 

নির্বাচনে জয়ে আত্মহারারা রাজ্য সরকারী কর্মচারী সমিতি সমূহের কো-অর্ডিনেশন কমিটির কর্মীদের অফিসে না আসার ফতোয়া জারি করে। কিন্তু সেই হুমকি উপেক্ষা করে কর্মীরা যথারীতি সকাল আটটায় কাজে যোগ দিলে প্রথমে তাঁদের ভয় দেখানো এবং পরে অফিস ঘরের ভিতর ঐ দমকল কর্মীকে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়। কোনমতেই যাতে তাঁরা বাইরে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন তারজন্য আক্রান্তদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এইভাবে লাগাতার অত্যাচার চালানোর পরে ঐ দমকল কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

আগুন নেভানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মীদের মধ্যে যেখানে সমন্বয় থাকাটা অত্যন্ত জরুরী সেখানে 'ফায়ার অপারেটর'দের মধ্যে এধরনের একপেশে মারধরের ঘটনা বিরলতম ঘটনা। হুমকির কথা কর্মীদের অনেকের বাড়ির লোকেরা জানতেন বলে তারা অফিসে ফোন করলেও কোন উত্তর পাওয়া যায় না। উলটে বাড়ির লোকদের মিথ্যা কথা বলা হয়। দমকল বাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় দীর্ঘসময় ধরে তাঁদের লাঞ্ছিত হতে হয় তৃণমূলীদের হাতে। বিষয়টি মানিকতলা থানায় জানালেও রাত পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

এদিকে, বুধবার সকালে বড়বাজারের কটন স্ট্রিটের একটি ক্যুরিয়ারের অফিসের ভিতরে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করলো পুলিস। পরে জানাযায় ঐ মৃতের নাম ভীম সিং (৩০)। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ভীম সিং বর্তমানে উত্তর ২৪পরগনার আগরপাড়ায় থাকতেন বলে জানা গেছে। 

এই ঘটনায় পুলিস ভীম সিংয়ের দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জানা গেছে, ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতার ব্যবসার কাজে এসেছিলেন ভীম সিং। গত রাতে বড়বাজারের ক্যুরিয়ার অফিসে ছিলেন। সঙ্গে দুই বন্ধু ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে গত রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বারংবার ফোন করে কোন উত্তর না আসায় ভীম সিংয়ের আত্মীয়রা বড়বাজার থানায় অভিযোগ জানায়। পুলিস গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। 

তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু: বুধবার দুপুরে ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানে ইলেকট্রিকের কাজ করতে গিয়ে তড়িদাহত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ৭০নম্বর বাবুবাগান লেনের বাড়িতে জলের মোটর সারাতে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিস বিষয়টি অস্বাভাবিক মৃত্যু ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

মুম্বাই পুলিসকে কাঠগড়ায় তুলে 'ওয়ান্টেড'
তালিকার ভুল কবুল চিদাম্বরমের

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ১৮ই মে— মুম্বাই পুলিসের ঘাড়ে বন্দুক রেখেই পাকিস্তানকে দেওয়া 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ফেরারের তালিকা নিয়ে ভুল কবুল করলেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। মুখে যদিও বলছেন, 'ভুল', আবার সেই ভুলের 'দায়'ও স্বীকার করছেন, কিন্তু গোটা ঘটনার জন্য চিদাম্বরম অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মুম্বাই পুলিসের দিকেই। তাঁর কথায়, পাকিস্তানকে দেওয়া তালিকায় মহারাষ্ট্রের থানের বাসিন্দা ওয়াজুস কামার খানের নাম থাকা মুম্বাই পুলিসের 'প্রকৃত ত্রুটি'। সঙ্গে অবশ্য চিদাম্বরম জুড়ে দিয়েছেন গোয়েন্দা ব্যুরোর 'অসাবধানতা'র কথাও। 

ওসামা হত্যার পর পাকিস্তানকে চাপে রাখতে তড়িঘড়ি ৫০জন 'মোস্ট ওয়ান্টেড' সন্ত্রাসবাদীর তালিকা পাঠিয়েছিল ভারত। আর তাতেই বেধেছে বিপত্তি। এই তালিকায় রয়েছে ওয়াজুস কামার খানের নাম, যিনি মুম্বইয়ের নিকটবর্তী থানে জেলার বাসিন্দা। ২০০৩সালে মুলুন্দে বাস বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। পরে তিনি জামিনে ছাড়াও পান। সেই থেকে মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তিনি থানের ওয়াঘলে এস্টেটে থাকেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুখ পুড়েছে ভারতের। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপানউতোর। 

চিদাম্বরম এদিন মুম্বাই পুলিসকেই দায়ী করলেও গতকাল রাতেই এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়ে বলেন, 'এর মধ্যে মুম্বাই পুলিসের কোনও দোষ নেই। আমরা ওদের ঘাড়ে দোষ চাপাতেও যাইনি। ভুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। কী ভাবে ভুল হলো সেটা পরে খতিয়ে দেখা হবে।' আজ যদিও চিদাম্বরম তেমন কিছু শোনাননি। বরং সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছেন, এটা এমন 'দুর্দশাজনক পরিণতি'র 'পাহাড়প্রমাণ ভুল' নয়। কিন্তু মুম্বাই পুলিস ভুল করলেও কূটনৈতিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে এমন একটা তালিকা তুলে দেবার আগে তাঁর মন্ত্রক কীভাবে ভালো করে পরীক্ষা না করেই তা পাঠিয়ে দিলো, তার কোনো সদুত্তর দেননি চিদাম্বরম।

ভুলের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম বলছেন, ২০১০সালের ২১শে মে খানকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিস। যদিও তাঁর সেই গ্রেপ্তার হওয়ার কথা এবং তাঁর বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস নিয়ে সি বি আই-কে কিছুই জানায়নি মুম্বাই পুলিস। এবছরের ২৭শে জানুয়ারি মুম্বাই পুলিসকে আবার এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে সি বি আই। মাত্র গতকালই মুম্বাই পুলিস সি বি আই-কে জানায় যে, এখন আর ঐ রেড কর্নার নোটিসের প্রয়োজন নেই। কেননা গতবছরই কানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

খোদ চিদাম্বরমেরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের খবর যদিও জানুয়ারিতেই মুম্বাইয়ের আই বি অফিসকে খানের গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল মুম্বাই পুলিস। 

সেই তথ্য যে ঠিকঠাক জায়গায় পৌঁছায়নি এটা এতদিনে স্পষ্ট। পাকিস্তানকে দেওয়ার জন্য এবছরের মার্চে ঐ তালিকা তৈরির সময়েও বিষয়টি তাই নজরের বাইরে থেকে গেছে। গত বুধবার পাকিস্তানের হাতে সেই ৫০জন শীর্ষ-সন্ত্রাসবাদীর একটি তালিকাই তুলে দেয় ভারত। তাতে দাউদ ইব্রাহিম থেকে শুরু করে লস্কর-ই-তৈবা'র প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ মহম্মদ সইদ, জাকি-উর-রহমান লকভির নাম রয়েছে। তালিকায় এদের সঙ্গেই ৪১ নম্বরে জায়গা হয়েছে ওয়াজুস কামার খানের। 

সি বি আই অবশ্য আজই ঐ ওয়ান্টেড তালিকা থেকে কামার খানের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।

আমডাঙায় একটি পার্টি অফিস ভেঙে,
আর একটি পুড়িয়ে দিলো তৃণমূলীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমডাঙা, ১৮ই মে — উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় পার্টি অফিসগুলি এখন তৃণমূলের হামলার অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। বিজয় মিছিলের নামে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে পার্টি অফিসের উপর। বুধবারও আমডাঙার রামপুর এবং রফিকুল এলাকায় সি পি আই (এম)-র দু'টি পার্টি অফিস তৃণমূলের হামলার শিকার হয়েছে। একটি পার্টি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েতে আর একটি পার্টি অফিস।

আমডাঙা বিডিও অফিস থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে সানিপুরে রামপুর বাজার। বাজারের সামনে বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সি পি আই (এম) রামপুর শাখার অফিস। দেখে মনে হবে হয়তো টর্নেডো বয়ে গেছে অফিসটার উপর দিয়ে। জানলা, দরজা কিছুই নেই। ছাদের টিন ভেঙে তা নিয়ে গেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। চেয়ার ছিল। আসবাবপত্র সমস্ত লুট হয়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে এই আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়।

একইভাবে এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ আমডাঙার রফিকুল গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অপর একটি পার্টির শাখা অফিস। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একের পর এক বোমা মারা হয়েছে পার্টির এই অফিসটার উপর। বিজয় মিছিল থেকে এই ধরনের উল্লাসের সাক্ষী হয়ে আছেন ঐ গ্রামের মানুষ। পার্টি অফিসের পেছনেই থাকা গ্রামের মহিলারা জানালেন, শুধু পার্টি দপ্তরেই বোমা ছোঁড়া নয় তাঁদের লক্ষ্য করেও বোমা ছোঁড়া হয়। ভয়েতে গ্রামের মহিলারা দরজা বন্ধ করে দিলে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা চিৎকার করতে থাকে, 'বাড়ি থেকে বেরিয়ে আয় পুড়িয়ে মারব। কোথায় তোদের মরদরা।' এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন হামিদা বিবি, রাবিয়া বিবিসহ প্রায় ৮০ বছরের আবদুল হামিদ। লাঠি নিয়ে চলেন চোখে ঠিক মতো দেখতে পান না তবু এঁকে তাড়া করে দুষ্কৃতীরা। প্রাণভয়ে বাড়ির পেছনে কোন মতে লুকিয়ে পড়েন তিনি।

ঘটনাস্থলে থাকা নাসিরুদ্দিন ও জিয়ারুল জানালেন বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল। মুখে অস্রাব্য ভাষায় গালাগাল, হাতে লোহার রড ও লা‍‌ঠি এবং ব্যাগে বোমা। রফিকুর গ্রামে ৪টি সিমেন্টের পিলারের উপর দরমা দিয়ে ঘেরা পার্টি অফিসের সামনে আসতেই শুরু হলো ব্যাপক ভাঙচুর। একের পর এক বোমা মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয় দরমার ঘরটি। নিচে পড়ে আছে পোড়া লালপতাকা। পার্টি অফিসের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র কিছুই নেই। গ্রামবাসীরা জানালেন তৃণমূল নেতা মুস্তাকের নেতৃত্বে ওসমান মাঝের সহ অন্যান্যরা এই আক্রমণ করেছে। বোমার আঘাতে গ্রামের এক কিশোরীর হাতে আঘাত লেগেছে।

এদিন বিজয় মিছিলের নামে পরিকল্পিত হামলা করেছে তৃণমূল। দুপুরে বাড়ির পুরুষরা ছিলেন চাষের মাঠে। ধান কাটার সময়। প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের কেউ ছিল না। এই সুযোগে দুষ্কৃতীর দল এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে।

রামপুর শাখা দপ্তরে যখন আক্রমণ করেছে তখন বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। দুপুরের চড়া রোদ। স্বাভাবিকভাবে মানুষজন রাস্তায় কম ছিল। এই সুযোগে বিজয় মিছিলের নামে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরপর দুটি সি পি আই (এম) দপ্তর ভাঙচুর করে। তৃণমূলের বদলা নয় বদল চাই এই স্লেগান যে কতখানি অসাড় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন গ্রামের মহিলারা। বিজয় মিছিল এখন হবে না নেত্রীর এই আশ্বাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামস্তরে তৃণমূলের বিজয় মিছিল হচ্ছে। এবং সেই সব বিজয় মিছিল থেকে এলোপাথাড়ি মারধর ভাঙচুর করা চলছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন আমডাঙার প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তার।

এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল পুলিস আছে। আছে ১০/১২ জন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান। তারা নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে প্রায় শতাধিক তৃণমূল কর্মী দাঁড়িয়ে আছে পার্টি অফিস সংলগ্ন রামপুর বাজারে। এলাকা থমথমে। কোন গ্রেপ্তার নেই। পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে। এদিন আমডাঙা থানায় দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্মারকলিপি দেন বামফ্রন্টের পক্ষে সুরেন মুলা, জনাব আলি, সাহারাব মণ্ডল, বিনয় ঘোষ, নৃপেন দাস ও আয়ুব মণ্ডল।

এদিন বনগাঁর সি পি আই (এম) নেতা পঙ্কজ ঘোষ জানিয়েছেন, সি পি আই (এম) কর্মী মাখন মালাকার আশঙ্কাজনক অবস্থায় বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মঙ্গলবার রাতে মাঝের গ্রাম থেকে চামটা গ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পথে গামছা দিয়ে তাঁর মুখ বেধে আনুমানিক রাত ১০টা নাগাদ তাঁকে ভোজালি দিয়ে আঘাত করে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা। এদিন তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান পার্টির নেতৃবৃন্দ।

গ্রামে গ্রামে হামলা, মারধর
পার্টিনেত্রীর বাড়িতে আগুন

নিজস্ব সংবাদদাতা: তমলুক, ১৪ই মে — ঠিক যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবার পূর্ব মেদিনীপুরে শুরু হয়েছে তৃণমূলের আক্রমণ। সি পি আই (এম) অফিস, শ্রমিকদের ইউনিয়নের কার্যালয়ের দখলই শুধু নয়, আক্রান্ত হয়েছেন মহিলারাও। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় সি পি আই(এম)-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্যা সুজাতা মাইতির বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। গত কয়েক বছর যারা কিছুটা সংগোপনে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের সাহায্য করেছে, সেই পুলিসের একাংশ শুক্রবার থেকেই খোলাখুলি ঘাসফুলের হামলাবাজদের সহায়তার দায়িত্ব পালনে নেমে পড়েছে।



শনিবার পটাশপুরের বিভিন্ন গ্রামে হামলায় ১০জন আহত হয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বামফ্রন্টের কর্মী, সমর্থকদের ঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ বড়হাট এলাকার পুরুলিয়া গ্রামে শঙ্কর মাঝি এবং মানস দাসকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে তৃণমূলের বাহিনী। তাঁদের তৃণমূলের কার্যালয়ে নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ১০ টাকার খালি স্ট্যাম্প পেপারে জোর করে সইও করিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের। তারপরও চলে মারধর। তাঁরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, রাস্তায় ফেলে চলে যায় তৃণমূলীরা। পার্টিকর্মীরাই আহতদের প্রথমে পটাশপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বড়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শম্ভুনাথ মান্নার ছেলে নন্দদুলাল মান্না, চিস্তিপুর ১ নং পঞ্চায়েতের গোনাড়া গ্রামের প্রতাপ শীট, আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষতিবাড় ও হরিপুর গ্রামের সুনীল জানা সহ মোট ৭ জন পার্টিকর্মীকেও ব্যাপক মারধর করে তৃণমূলীরা। ইছাবাড়ি গ্রামের বেহুলা গায়েন এক গৃহবধূও আক্রান্ত হয়েছেন।



শনিবার দুপুরে মহম্মদপুরের ১টি ও মংলামাড়োর দুটি সি আই টি ইউ অফিসে লুঠপাট চালায় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। অফিস জোর করে দখল করে তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দেয়। লাগিয়ে দেয় তালাও। আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের টনিয়াবিলা, জব্দা, বামনবাড়, মদনমোহনপুর, চন্দনখালি, মথুরা, বাল্যগোবিন্দপুর, লায়া, মল্লিকপুর, সুকাখোলা, হিংচিবাড় প্রভৃতি এলাকাতেও মারধর, ঘরে লুট, ভাঙচুর — এক সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেছে তৃণমূল। অচিন্ত্য পাত্র, বিপ্লব পাত্র, গোপাল দলুই, সুবল প্রধানদের মত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়েছে। 



হামলা হয়েছে খেজুরি-নন্দীগ্রামে। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬৫ জন ঘরছাড়া হয়েছেন তৃণমূলের খুনের হুমকিতে। রেয়াপাড়ায় পার্টি কার্যালয়ে হামলা হয়েছিল শুক্রবারই। শুক্রবার গভীর রাতে পার্টিনেত্রী সুজাতা মাইতির বাড়ির একাংশে আগুন লাগিয়ে দেয় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। খেজুরিতে হরিজন পল্লীর প্রায় ৮ জনকে মারধর করা হয়েছে।তাঁদের মধ্যে আঘাত গুরুতর পবন ঘোরুইয়ের। হামলা হয়েছে গড়রং গ্রামেও। শুক্রবারই শেরখানচক, কুঞ্জপুর, বারাতলা পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে।



পাঁশকুড়ার মাইশোরাতে শুক্রবার শামসেদ আলি এবং কিশোর পাণ্ডে আক্রান্ত হন। মারাত্মক আঘাত নিয়ে তাঁরা দু'জনেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার ঐ মাইশোরাতে সন্ত্রাস আরো বেড়েছে। পার্টি সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হুমকি, হামলা চলছে। কাঁথি উত্তর এলাকার এগরা-২ নং অঞ্চলের বাথুয়াড়ির বারভাগিয়া সহ বেশ কয়েকটি বুথে একই রকম সন্ত্রাস জারি হয়েছে। ভগবানপুরের অর্জুননগরের আক্রান্ত বেশ কয়েকজন পার্টিকর্মী ঘরছাড়া। বিভীষণপুরের জাগাতিতলায় পার্টির একটি কার্যালয় দখল করেছে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। তমলুকে সি পি আই(এম)-র গ্রামীণ জোনাল কমিটি, নিমতৌড়ির গৌরাঙ্গপুর শাখা কমিটির অফিস ভাঙচুর করেছে সশস্ত্র তৃণমূলীরা। 



দীঘাতে পার্টির দুটি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে, তালগাছাড়িতে পার্টি নেতা অরবিন্দ পাত্রকে বেধড়ক মারধর করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।



হামলা হয়েছে হলদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন অফিসে। পার্টির দুটি শাখা অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে।

তিন দশকে অর্জিত জনগণের সাফল্যগুলিকে
রক্ষা করবে সি পি আই (এম),বললেন প্রকাশ কারাত

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ১৮ই মে- পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের তিন দশকে অর্জিত জনগণের সাফল্যগুলিকে রক্ষা করবে সি পি আই (এম)। শাসক জোটের শ্রেণী চরিত্রের কারণেই ভূমিসংস্কার বানচাল করা ও শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হবে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী শক্তি তা প্রতিহত করবে। সি পি আই (এম)-র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত দৃঢ়তার সঙ্গে এই কথা বলেছেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পর বামপন্থীদের বিরুদ্ধে কুৎসার বন্যার জবাব দিয়ে কারাত বলেছেন, নির্বাচনী ফলাফল ভালো করে পর্যালোচনার পরে সি পি আই (এম) শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে লড়াইয়ের লক্ষ্যে নিজেকে আরো প্রস্তুত করবে। 

পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র 'পিপলস ডেমোক্র্যাসি'-র আসন্ন সংখ্যায় প্রকাশিতব্য নিবন্ধেই কারাত তাঁর বিশ্লেষণ পেশ করেছেন। 

কারাত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বামফ্রন্টের বড় পরাজয় দেশের বামপন্থী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল মানুষের কাছে বড় রকমের হতাশার কারণ। এই নির্বাচনী ফলাফলের কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। মানুষ নির্ণায়ক ভাবেই পরিবর্তন চেয়েছেন বলে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট বিপুল জয় পেয়েছে। দক্ষিণপন্থী থেকে মাওবাদীদের মতো চরম বামপন্থী সমস্ত বামবিরোধী শক্তির পূর্ণাঙ্গ সংহতি ঘটেছে। এটাও স্পষ্ট যে গত দু'বছরে আমরা যতটা আশা করেছিলাম ততোটা হারানো জমি বামফ্রন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। 

কারাত বলেছেন, পার্টি ফলাফলের সামগ্রিক পর্যালোচনা করবে। বামফ্রন্টের সমর্থন হ্রাস এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের থেকে ১১লক্ষ ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও বামফ্রন্টের ভোটের হার ২.২শতাংশ কমে গেছে। তিন দশকের সরকার বিপুল সাফল্য অর্জন করা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন সরকারে থাকার ফলে কিছু নেতিবাচক উপাদানের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনী ফলাফলের পর্যালোচনা এবং পার্টির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাজের প্রেক্ষাপটে তাকে বুঝে নিয়ে আমাদের ত্রুটিগুলি সংশোধন করার লক্ষ্যে এগোনো হবে। 

কারাত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে পরাজয়ের পরে কর্পোরেট মিডিয়ায় সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারের ঝড় উঠেছে। দেখানো হচ্ছে, এ এমন এক বিপর্যয় যা থেকে সি পি আই (এম) আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। আরো এক ধরনের প্রচার হলো কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শই ভ্রান্ত এবং এই ফলাফল পৃথিবীব্যাপী সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতার চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে দিলো। এই সব মতামত মূলগতভাবে ভ্রান্ত। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয় সি পি আই (এম)-র শক্তিক্ষয় ঘটায়নি, ১৯৯০-র দশকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় পার্টির আরো বিকাশ ঘটেছিল। সি পি আই (এম) মার্কসবাদের তত্ত্ব ও প্রয়োগকে ভারতীয় পরিস্থিতিতে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করে। এটি কোনো গতিহীন অবস্থান নয়, বরং ক্রমাগতই বিকাশমান। 

কারাত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্ট চার দশকের বেশি সময়ের অসংখ্য সংগ্রাম ও জনগণের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে। এই আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যে গণভিত্তি তৈরি হয়েছে, বামফ্রন্টের নির্বাচনী সাফল্য তারই ফসল। বামফ্রন্ট নিছক নির্বাচনী জোট নয়, কেবল নির্বাচনী কাজের মধ্যে দিয়েই শক্তিশালী গণভিত্তির পার্টি হিসেবে সি পি আই (এম) বেড়ে ওঠেনি। 

কারাত বলেছেন, যারা পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্টের বিদায়গাথা লিখছেন, তারা একটি বাস্তব সত্য এড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই পরাজয়েও বামফ্রন্ট ৪১শতাংশ ভোট পেয়েছে, ১কোটি ৯৫লক্ষ মানুষ বামফ্রন্টকে সমর্থন করেছেন, ভোট দিয়েছেন। এই গণভিত্তি বিপুল এবং গত দু'বছর ধরে সি পি আই (এম) ও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে আক্রমণ সহ্য করেই এই গণভিত্তি রয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের শ্রেণীভিত্তির ওপরেই এই গণভিত্তি। চরম কমিউনিস্ট-বিদ্বেষী এবং নয়া উদারনীতির সওয়ালকারীরা ভ্রান্ত প্রমাণিত হবেন। যে অংশের মানুষ দূরে সরে গেছেন, তাঁদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রাম করে, তাঁদের জন্য লড়াই করেই তাঁদের পুনরায় জয় করে আনার লক্ষ্যে সি পি আই (এম) ও বামপন্থীরা ধৈর্যশীল সংগ্রাম চালাবে। 

কারাত বলেছেন, আক্রমণের আরেকটি ধরন হলো বামফ্রন্টের সমগ্র নজিরকেই নস্যাৎ করতে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে সি পি আই (এম)-কে স্বৈরতন্ত্রী শক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে যেন তারা জনগণকে দমন করে রেখেছিলো। কেউ কেউ তো এতদূর বলছেন যে বামফ্রন্ট অতীতে যে সমস্ত জয় অর্জন করেছে তার সবই সি পি আই (এম)- বিরোধীদের দমনপীড়ন করে রেখে। এই সব সমালোচকরা সুবিধামতো বিস্মৃত হচ্ছেন যে ১৯৭৭থেকে সবক'টি বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট-বিরোধী শক্তি যে কোনো পরিস্থিতিতে চল্লিশ শতাংশের কম ভোট পায়নি। সি পি আই (এম) ও বামফ্রন্ট আগের সমস্ত বিধানসভা নির্বাচন জিতেছে ৪৫থেকে ৫০শতাংশ ভোট পেয়ে। এই নজরকাড়া সাফল্য এসেছিল জনগণের মধ্যে গভীর শিকড়ের জন্য, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে জনসমর্থনের জন্য। সি পি আই (এম)-র কর্মীদের স্বৈরাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিত্রায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার এই প্রয়াস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পার্টিকে দুর্বল করতেই এই কাজ করা হচ্ছে। কেননা পার্টির সংগঠনের মেরুদণ্ড হলো নিষ্ঠাবান, স্বার্থহীন কর্মীরাই। 

কারাত বলেছেন, আরেকটি কথাও এইসঙ্গে ছড়ানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার যেন অন্তর্নিহিত ভাবেই গণতন্ত্র-বিরোধী এবং স্বৈরাচারী একটি কাঠামো ছিলো। তারা সমস্ত বিরোধিতাকে নির্মূল করে দিয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের সমাজে একটি ধাঁচ চাপিয়ে দিয়েছে। বামফ্রন্ট সরকার চালিয়েছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাছে ক্রমাগত পরীক্ষা দিতে দিতে। সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীরা দেখিয়েছে তারাই গণতন্ত্রের সপক্ষে সবচেয়ে ধারাবাহিক ও দৃঢ় শক্তি। ১৯৫৭সালে কেরালায় যেদিন কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম নির্বাচনে জেতে এবং মন্ত্রিসভা তৈরি করে সেদিন থেকেই পার্টি বিপুল পরিমাণ মানুষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টেনে এনে গণতন্ত্রকে সজীব করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, ত্রিপুরায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটদানের হার কোনো সমাপতনের ঘটনা নয়। এই তিন রাজ্যে ভূমিসংস্কার পুরানো জমিদারতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে দিয়ে গণতন্ত্রকে বিকশিত করেছে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রাণবন্ত হয়েছে। বামপন্থীদের গণতান্ত্রিক নজিরকে নস্যাৎ করতে চাইছে আধিপত্যকারী শ্রেণীগুলি ও কায়েমী স্বার্থের দালালরা। 

কারাত বলেছেন, রাজ্য সরকার পরিচালনা সম্পর্কে সি পি আই (এম)-র নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। এমন ভাবে বাম সরকারগুলি পরিচালনা করতে হবে যাতে বামও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন শক্তিশালী হয়। পার্টির কর্মসূচীতে বলা হয়েছে, এই সরকারগুলি জনগণকে রিলিফ দেবার কর্মসূচী নেবে এবং বর্তমান সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিকল্প নীতি তুলে ধরা ও প্রয়োগের চেষ্টা করবে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের অভিনব নজির দেখিয়েছে এই লক্ষ্যের অভিমুখে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এই রকম একটি বামপন্থী সরকারের পরাজয় বড় আঘাত, কিন্তু তাকে স্থায়ী বা মৌলিক ক্ষতি বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। সি পি আই (এম) সব সময়েই শ্রমজীবী মানুষের নিজস্ব শ্রেণী ও গণ-সংগঠনের মাধ্যমে তাদের সংগঠিত করা এবং জনগণের সংগ্রাম-আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা উন্নত করার কাজেও পার্টি জোর দেয়। এই প্রক্রিয়ারই ফসল হলো বামপন্থী সরকারগুলি। 

কারাত বলেছেন, নির্বাচনী ফলাফলের পর্যালোচনার পরে সি পি আই (এম) মৌলিক শ্রেণীগুলির সমস্যা নিয়ে এবং শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে লড়াইয়ের লক্ষ্যে নিজেকে আরো প্রস্তুত করবে। বামপন্থীদের রাজনৈতিক অবস্থান, যার মধ্যে আছে নয়া উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিগুলির বিরুদ্ধে লড়াই, জনগণের জীবনজীবিকা রক্ষার সংগ্রাম, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই— কংগ্রেস ও বি জে পি'র মতো শাসক শ্রেণীর দলগুলির বিপরীতে দেশের কাছে একমাত্র বিকল্প রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে। 

কারাত বলেছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের তিন দশকে অর্জিত জনগণের সাফল্যগুলিকে রক্ষা করবে সি পি আই (এম)। শাসক জোটের শ্রেণী চরিত্রের কারণেই ভূমি সংস্কার বানচাল করা ও শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হবে। আমরা ভূমিসংস্কার এবং বর্গাদার ও খেতমজুরদের অধিকার রক্ষা করবোই। অধিকার রক্ষায় এবং জীবিকা রক্ষায় সমস্ত অংশের শ্রমজীবী মানুষকে আরো ভালো করে সংগঠিত করবে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের ঐক্য এবং রাজ্যের সংহতি ভাঙার জন্য বিভেদকামী শক্তির চেষ্টাকে প্রতিহত করা হবে। বামপন্থী ঐক্যকে শক্তিশালী করেই এই কাজে আমরা অগ্রসর হবো। 

কারাত বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের পরেই পার্টি, বামফ্রন্ট এবং আন্দোলনের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। আশু কাজ এই আক্রমণের হাত থেকে পার্টিকে রক্ষা করা। নির্বাচনে জয়কে ব্যবহার করে অনেক জায়গায় সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীদের শারীরিক ভাবেই খতম করতে চাইছে তৃণমূল। এর প্রতিরোধ করতে হবে, এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এমন হিংসার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের গণতান্ত্রিক মনোভাবকে জাগ্রত করতে হবে। এই আক্রমণের মোকাবিলায় গোটা দেশের পার্টি, বামপন্থীরা, গণতান্ত্রিক শক্তি পশ্চিমবঙ্গের সি পি আই (এম) ও বামফ্রন্টের পাশে দৃঢ়তার সঙ্গেই দাঁড়াচ্ছে।

'অস্ত্র উদ্ধারের' নামে হামলা চলছেই

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৮ই মে — রাজ্যে তৃণমূল কর্মীদের উদ্যোগে 'সি পি আই(এম)-র অস্ত্র' উদ্ধার পর্ব বুধবারও জারি ছিল। একইসঙ্গে সংগ্রামী মানুষের অন্যতম হাতিয়ার 'গণশক্তি'-র প্রচার, বিক্রি বন্ধ করতে রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় শুরু হয়েছে তৃণমূলী অভিযান। তবে 'সি পি এম-র অস্ত্র উদ্ধার' পর্বে এদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে। সেখানে পুলিসের অফিসের কর্মচারী এক তৃণমূল কর্মীর পুকুর থেকে পাওয়া গেছে তথাকথিত 'সি পি আই(এম)-র' বস্তাবন্দী কার্তুজ!

'অস্ত্র উদ্ধার পর্ব'-র আর একটি তাক লাগানো ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এই পূর্ব মেদিনীপুরেরই মারিশদা এলাকার ভাজাচাউলির কৌশল্যা এলাকা। নির্বাচনের আগে ঐ কৌশল্যা এলাকায় বামফ্রন্টের কর্মীরা প্রচার করতে পারেননি। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই কৌশল্যা ছিল তৃণমূলের একাধিপত্যের আওতাও। সেই সি পি আই (এম) কর্মী-শূন্য অঞ্চলে বুধবার একটি পুকুর থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের কর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে তুলে আনে একটি জলে ভেজা, জঙ ধরা ওয়ান শটার বন্দুক। বলাবাহুল্য, যা থেকে গুলি ছোঁড়ার কথা কেউ ভাবতে পারে না। যে গ্রামে সি পি আই(এম) প্রচারই করতে পারেনি, সেই গ্রামের পুকুরে সি পি আই(এম) কর্মীরা অস্ত্র ডুবিয়ে রাখবে, এক আশ্চর্য ঘটনা। গ্রামবাসীরা কেউই এই উদ্ধার বিশ্বাস করছেন না। পুলিসের একাংশও বিরক্ত। কিন্তু নিজেদের অস্ত্র যেখানে সেখানে রেখে সি পি আই(এম)-র বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানোর কাজ চালাচ্ছে তৃণমূল।

খেজুরির ঘটনাটিও এদিন দুপুরের। জায়গাটি কলাগেছিয়ার কাছে। ঐ এলাকায় তৃণমূলের নেতা শৈলজা পাল। তার দাদা বিবেক পালও একজন তৃণমূল কর্মী। তিনি আবার কাঁথির এস ডি পি ও অফিসে কাজ করেন। ঐ বিবেক পালের পুকুর থেকেই একটি বস্তা তুলে আনে তৃণমূলীরা। জলের মধ্যে যে ক্ষিপ্রতায়, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তারা বন্দুক, কার্তুজ খুঁজে পাচ্ছেন সাম্প্রতিক কালে, তা রীতিমত প্রশ্ন জাগাচ্ছে মানুষের মনে। এদিন তেমন ভাবেই বিবেক পালের পুকুর থেকে ঐ বস্তা তুলে আনেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। তাতে ছিল ১১৫টি কার্তুজ। যথারীতি তারা দাবি করে—এই কার্তুজ সি পি আই(এম)-র। এদিন অস্ত্র উদ্ধারকে অজুহাত করে তৃণমূলীরা কামদেবনগরে গ্রামবাসী ভরত গিরির বাড়িতে লুট করে। তাদের আক্রমণে বুদ্ধদেব মাইতি, বাটুল বেরা, নকুল বেরা, ভগীরথ গিরি, ঝন্টু মাইতি সহ ৬জন আহত হয়েছেন। আঘাত গুরুতর হওয়ায় বুদ্ধদেব মাইতিকে তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন অস্ত্র খোঁজার অজুহাতে হলদিয়ার হাতিবেড়িয়ার স্টেশন সংলগ্ন পার্টি অফিস, টাউনশিপের বিষ্ণুরামচকের পার্টি অফিস, ব্রজনাথচকের দুটি অফিস এবং গণনাট্য সঙ্ঘের কার্যালয় 'সুচেতনা'-য় হামলা চালায়।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই এমন অস্ত্র উদ্ধার কাণ্ডের সময় তৃণমূলের চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেছিল হলদিয়ায়। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের ১নং গেটের কাছে সি আই টি ইউ অফিসে 'অস্ত্র উদ্ধার' করার তল্লাশি চালায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন কর্মী। প্রথমে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তৃণমূলীরা তাই শ্রমিকদের বেধড়ক মারে। পুলিসের সামনেও মারধর চলে। তখনই ঐ ইউনিয়ন অফিসের পিছনে, প্রায় ৫০মিটার দূরে প্লাস্টিকে মোড়া একটি পিস্তল ও কার্তুজ পাওয়া যায়। পিস্তলটি সেখানে ফেলেছিল রঞ্জন নামে দুর্গাচকের বাসিন্দা এক তৃণমূল কর্মী। পুলিস জেনেছে রঞ্জনকে ঐ অস্ত্রটি দিয়েছিল হলদিয়ার তৃণমূল নেতা শ্যামল আদকের ঘনিষ্ঠ নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মী শেখ আলি। বর্তমানে দুর্গাচকের ৫নং ওয়ার্ডে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করা শেখ আলি পুলিসকে জানায়, ইউনিয়ন অফিসে অস্ত্র, কার্তুজ রেখে আসার জন্য রঞ্জনকে শ্রমিকদের উপর হামলার সময়ে সে-ই দিয়েছিল। 

গত কয়েকদিনের মত এদিনও একই কায়দায় হামলা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। খড়গপুর-২ নং ব্লক এলাকায় সুলতানপুর আঞ্চলিক কমিটির অফিসেও তাদের সাজিয়ে রাখা অস্ত্র নিজেরাই উদ্ধার করে দেখিয়েছে তৃণমূল কর্মীরা। একতলা পাকা বাড়িতে ঐ কার্যালয়টি। ছাদে ওঠা যায় মই লাগিয়ে। অফিসে গতরাতে কেউ ছিলেন না। এদিন সকালে সেই অফিসে তৃণমূলীরা হাজির হয়। দাবি করে অস্ত্র আছে। খবর পেয়ে সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক নাজমূল হক, পার্টিনেতা অসীম দাস সহ অন্যান্য পার্টিনেতারাও উপস্থিত হন। তাঁরাই পুলিসকে খবর দেন। পুলিস এসে তল্লাশি শুরু করলে উৎসাহী তৃণমূল কর্মীরা বলে তারাও তল্লাশি করবে। তারাই ছাদে উঠে খুঁজে পায় নতুন রঙ করা একটি পুরানো বন্দুক ও কয়েকটি বোমা। কেন যে পুরানো বন্দুক রঙ করে, কয়েকটি বোমার সঙ্গে পার্টি অফিসের ছাদে সি পি আই(এম) নেতা, কর্মীরা সাজিয়ে রেখেছিলেন, সে প্রশ্নের অনুসন্ধান অবশ্য পুলিস করেনি। তারা তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির অভিযোগের ভিত্তিতে অসীম দাস, কামের আলি, স্বদেশ মিদ্যা, একজন মহিলা সহ ৯জনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রসঙ্গত, স্বদেশ মিদ্যা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ।

একদিকে যখন অস্ত্র উদ্ধারের এই নাটক চলছে, ঠিক সেই সময়েই সি পি আই (এম) মুখপত্র 'গণশক্তি' বণ্টন, বিক্রি আটকাতে শুরু হয়েছে তৃণমূলী হুমকি। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলীসহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে 'গণশক্তি'র উপর প্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তৃণমূলের কর্মীরা। গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, কেশপুর, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মতো বহু জায়গায় 'গণশক্তি' বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন যাঁরা, তাঁদের হুমকি দিয়েছে তৃণমূল কর্মীরা। কথা একটিই—'গণশক্তি বিলি করা যাবে না।' যাঁদের এজেন্সি আছে, অর্থাৎ গণশক্তির প্রচার, বণ্টনের মাধ্যমে যাঁরা কিছু টাকা আয় করেন, তাঁদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে একই কথা। যথারীতি অবশ্য এই ক্ষেত্রেও পুলিসকে অভিযোগ জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি।

সর্বদলীয় শান্তি বৈঠক থেকে বেরিয়েই
রায়নায় তৃণমূলীদের হাতে আক্রান্ত দুই পার্টিনেতা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৮ই মে—'পরিবর্তনের' উল্লাসে রাজ্যের জেলায় জেলায় সি পি আই (এম)-র কর্মী, সমর্থকদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে তৃণমূল। পার্টি অফিসগুলিতে হামলা করা হচ্ছে, ভাঙচুর করা হচ্ছে। তৃণমূলের হামলায় আক্রান্ত, রক্তাক্ত হচ্ছেন সি পি আই (এম)-র নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। গরিব শ্রমজীবী মানুষ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। তৃণমূলী হামলার শিকার হচ্ছেন গরিব কৃষক, খেতমজুররাও। অনেক জায়গায় জমির ফসলও লুট করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে তৃণমূল নেতারা মুখে সন্ত্রাস বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও তা কথার কথাই থেকে যাচ্ছে। এমনকি বুধবার সর্বদলীয় শান্তি বৈঠক থেকে বেরিয়েই তৃণমূলের হামলার মুখে পড়েছেন রায়নার বিজয়ী সি পি আই (এম) প্রার্থী বাসুদেব খাঁ এবং রায়না-২পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবদুস সবুর। একই রকমভাবে হুগলী জেলায় সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূল নেতৃত্ব সন্ত্রাস বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও ওই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সি পি আই (এম) কর্মীরা তৃণমূলের হামলার শিকার হচ্ছেন। এদিন ধনিয়াখালির গুড়াপ থানায় শান্তি বৈঠক থেকে ফেরার পথে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন পার্টির ধনিয়াখালি জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখার্জি। তাঁকে কংসারীপুর মোড়ের কাছে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে মারধর করা হয়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর মধ্যেই অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের কর্মীরা পথে নামছেন। বুধবার যেমন কর্মী, সমর্থকদের উপর তৃণমূলের আক্রমণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জেলাশাসক এবং জেলার পুলিসসুপারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। সি পি আই (এম) দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীসহ বামফ্রন্টের ৭সদস্যের এক প্রতিনিধিদল এই ডেপুটেশনে অংশ নেন। বর্ধমানের মেমারি থানাতেও তৃণমূলের সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে ডেপুটেশন দিয়েছে সি পি আই (এম)-র এক প্রতিনিধি দল। এদিনই তৃণমূলের সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে মিছিল হয় কসবায় কলকাতা পৌরসভার ৯১নম্বর ওয়ার্ডে। একই দাবিতে বেনিয়াপুকুর থানায় ডেপুটেশন দেয় সি পি আই (এম)-র এক প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবারও কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল বেলেঘাটায় তৃণমূলের সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় যাবে। তাঁরা কথা বলবেন, ওই এলাকার মানুষজনের সাথে। 

বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল যে সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে তা বন্ধের লক্ষ্যে এদিন রায়নার মাধবডিহি থানায় সর্বদলীয় শান্তি বৈঠকের পর সি পি আই (এম) নেতা বাসুদের খাঁ এবং আবদুস সবুর যখন বাড়ি ফিরছিলেন সেই সময় আলমপুরের কাছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর হামলা চালায়। তৃণমূলের মদতপুষ্ট কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাবলুর নেতৃত্বে এই হামলা হয়। অল্পের জন্য এই হামলার থেকে রক্ষা পেয়ে কাছেই নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়েন বাসুদেব খাঁ। আবদুস সবুরও তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বর্ধমানের মেমারিতেও সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। পার্টিকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে। চকদিঘি এলাকায় গণশক্তির দু'টি বোর্ডও ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল। বর্ধমান সদর থানার দেওয়ানদিঘি এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন, তুষের তেল, কাগজ কলের যে শ্রমিকরা সি আই টি ইউ-র সদস্য তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। তাঁদের ছাঁটাই করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে মালিকদের উপর। শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে সি আই টি ইউ ছাড়ার মুচলেকা লেখানো হচ্ছে। খণ্ডঘোষে তৃণমূলের সন্ত্রাসে ঘরছাড়া হয়েছেন ৫০জন সি পি আই (এম) কর্মী। 

অন্যদিকে, বুধবার দুপুরে দমদম জংশন স্টেশনে তৃণমূলের কাউন্সিলরের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মিছিল করে দুষ্কৃতীরা হকার্স ইউনিয়নের ঘর দখল করে। দমদম স্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের কলকাতা জেলা কমিটির দমদম ইউনিটের একটি ছোট্ট ঘর রয়েছে। এদিন দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ যখন অধিকাংশ হকারই খেতে গেছেন বা এদিক-ওদিক বিশ্রাম নিচ্ছেন, সেই সময়ই উত্তর দমদম পৌরসভার ২৫নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর পাল ওরফে কেটি'র নেতৃত্বে প্রায় শ'খানেক তৃণমূলী দুষ্কৃতী রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সশস্ত্র অবস্থায় লাঠিসোটা নিয়ে ঢুকে পড়ে। জি আর পি এবং আর পি এফ থাকা সত্ত্বেও কেউই এদের বাধা দেয়নি। তৃণমূলের কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এই বিশাল দুষ্কৃতী দল ১নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের ঘরটি দখল করে ভাঙচুর শুরু করে। এই সময় ইউনিয়ন রুমের ভেতরে বিশ্রাম করছিলেন সাধারণ হকার শিবু সাহা। দুষ্কৃতীর দল তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে। দুষ্কৃতীর দল ইউনিয়নের ঝাণ্ডা খুলে ফেলে তৃণমূলের ঝাণ্ডা লাগিয়ে দেয়। পাইকপাড়ায় তৃণমূলের হামলায় জখম হয়েছেন পার্টি সমর্থক মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। সেখানে পার্টিকর্মীদের বাড়িতেও হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল। 

কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকাতেও পার্টিকর্মীরা তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সি পি আই (এম) সমর্থক হকারদের দোকান। বেনিয়াপুকুর (উত্তর) আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক মিহিরকান্তি দাসের বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের ইমতিয়াজ আলমের নেতৃত্বে বুধবার রাতে হামলা চালায় ৮-১০ জনের এক দুষ্কৃতী দল। এলাকায় তৃণমূলের এই সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে এদিন সন্ধায় বেনিয়াপুকুর থানায় সি পি আই (এম)-র একটি প্রতিনিধি দল ডেপুটেশন দেয়। ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহম্মদ নিজামুদ্দিন, বাদল কর, মণি রায়, আবু সুফিয়ান, বাবুন ঘোষ, দীপক মজুমদার, মিহিরকান্তি দাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। 

এদিন সন্ধ্যেয় কসবা ৯১ওয়ার্ড কলকাতা বস্তি ফেডারেশনের উদ্যোগে এলাকায় সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে এক মিছিল হয়। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই এই ওয়ার্ডের বৈকুন্ঠ ঘোষ রোডে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা সি পি আই (এম) ঢাকুরিয়া-কসবা উত্তর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সুফল পুরকাইতকে আক্রমণ করেছে। এই ঘটনার পাশাপাশি এলাকা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে দফায় দফায় বামপন্থী কর্মী সংগঠকদের হুমকি ও বাড়িতে আক্রমণের ঘটনা চলছে। এর প্রতিবাদেই এই মিছিল। মিছিল চিত্তরঞ্জন গার্লস স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে বি বি চ্যাটার্জি রোড, বৈকুন্ঠ ঘোষ রোড, জগন্নাথ ঘোষ রোডসহ ৯১নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বস্তি আন্দোলনের নেতা দীপঙ্কর দে, বাদল গুহসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 

এদিন হুগলীর ধনিয়াখালির গুড়াপ থানায় শান্তি বৈঠক থেকে ফেরার পথে সি পি আই (এম) নেতা দিলীপ মুখার্জির উপর তৃণমূলের হামলায় ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সি পি আই (এম) নেতা রূপচাঁদ পাল। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারই চুঁচুড়ায় সর্বদলীয় বৈঠকে ঠিক হয়েছিলো শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় শান্তি বৈঠক হবে। তৃণমূল নেতারাও এতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু এদিন গুড়াপ থানার সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূলের কোনো নেতা যাননি। উলটে বৈঠকে যাওয়ার জন্য পার্টি নেতা দিলীপ মুখার্জির উপরে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। এ'রকম চলতে থাকলে সর্বদলীয় বৈঠকের কি অর্থ থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রূপচাঁদ পাল। মঙ্গলবার রাতে হুগলীর সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি অঞ্চলে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাষ ঘোষসহ সি পি আই (এম)-র আরো চার কর্মীকে তৃণমূলীরা বেধরক মারধর করে। পুড়শুড়ার মুন্সিগঞ্জে ভয় দেখিয়ে পার্টি সমর্থকদের ১০টি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল। বড়দঙ্গল অঞ্চলে মারধর করা হয় পার্টিকর্মীদের। আরামবাগের দুলে পাড়ায় পার্টি ৭জন পার্টি সমর্থক গরিব মানুষের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল। তারকেশ্বরের সন্তোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের পাণ্ডারা। তারকেশ্বর পৌরসভার কর্মী বাপী ঘোষকে বাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়েছে। রিষড়ার জনপথ পরিবহন ইউনিয়নের অফিস দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। 

ভাঙড়, সোনারপুর, বারুইপুর, ক্যানিং, বিষ্ণুপুর, ডায়মন্ডহারবার, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও নির্বাচনের পর সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে তৃণমূল। বামফ্রন্টের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুড় করা হচ্ছে, দোকান বন্ধ করা হচ্ছে, লুট করা হচ্ছে। তৃণমূলের এই হামলার প্রতিবাদে এদিন জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং পুলিসসুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মীনার কাছে জেলা বামফ্রন্টের যে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয় সেই প্রতিনিধি দলে সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও সি পি আই (এম)-র শমীক লাহিড়ী, সি পি আই নেতা মলয় দাশগুপ্ত, তড়িৎ চক্রবর্তী, আর এস পি নেতা চন্দ্রশেখর দেবনাথ, ফরওয়ার্ড ব্লকের আসমত আলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিন এই ডেপুটেশনের পর সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে তৃণমূল 'বদলা নয়, বদল চাই' বলে যে স্লোগান দিয়েছিল তা যে কতটা মেকি তা নির্বাচনের পর বামফ্রন্টের কর্মীদের উপর তৃণমূলের এই হামলার ঘটনার মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট।

ছ'দিনেও মমতার সরকারে যাওয়ার
সিদ্ধান্ত জানালেন না সোনিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ১৮ই মে— পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার প্রশ্নে ঘোর দ্বিধায় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বুধবার তাঁর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে দেখা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের মধ্যে কথা হয়। বৈঠকে মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের আরো কয়েকজন নেতাও। কিন্তু ঐ বৈঠকে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের যোগদানে সম্মতি জানাননি সোনিয়া গান্ধী। পরে মানস ভুঁইয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের মন্ত্রিসভায় কংগ্রেস যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড (পড়ুন সোনিয়া গান্ধী)। দলের সভানেত্রী তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রী হওয়ার অনুমতি দেবেন, এমন আশাই যে করছেন, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য খবর, মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য সোনিয়া গান্ধীর কাছে প্রদেশ নেতাদের এদিনের দরবার প্রাথমিকভাবে সফল হ‌য়নি। তাই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কথা ভেবেছিলেন মানস ভুঁইয়া। তবে তা হয়নি। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকালে কলকাতায় পরিষদীয় নেতা নির্বাচন করতে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাজ্যের নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়করা। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের। বৈঠকে দলের তরফে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। থাকবেন প্রণব মুখার্জিও। মানস ভুঁইয়ারা চাইছেন, অন্তত সেই বৈঠকের আগেই যেন পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেস সভানেত্রী আরো একটু সময় নি‍‌লেও নিতে পারেন। ২১ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন মমতা ব্যানার্জি। সেদিক থেকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁর হাতে ২০ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার পর্যন্ত সময় আছে। আরো জানা গেছে, সোনিয়া গান্ধীর এই দোনামনার কারণ, মমতার সরকারে যোগ দিলে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হবে না কি পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দল তৃণমূলের হাতের পুতুলে পরিণত হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন কংগ্রেসের শীর্ষনেত্রী। তবে জোট গড়ে নির্বাচনে লড়ার পরে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যদি তৃণমূল ও কংগ্রেসের বিচ্ছেদ হয়, তাহলে নতুন সরকারের যাত্রাপথের সূচনাতেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ভুল রাজনৈতিক বার্তা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে তৃণমূল শিবিরও তা মনে করছে। সেই কারণে মমতা ব্যানার্জি ইতোমধ্যেই সোনিয়া গান্ধী ও প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেসকে তাঁর মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন একটাই, তৃণমূল নেত্রী নিজে আমন্ত্রণ জানানোর পরেও কংগ্রেস সভানেত্রী দ্বিধাগ্রস্ত কেন! যেখানে জোট গড়ে দু'দল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলো, সেখানে মন্ত্রিসভাতেও দু'দলই থাকবে, এমনই তো স্বাভাবিক। অথচ এ যেন উলট পুরাণ। ভোটের আগে আসন সংখ্যা নিয়ে জোট গড়ার প্রশ্নে বেঁকে বসেছিলেন মানস ভুঁইয়ারা। তখন সোনিয়া গান্ধী একরকম চাপ দিয়ে তাঁদের বাধ্য করেছিলেন কম আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে ও তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যেতে। এখন সেই মানস ভুঁইয়ারা চাইছেন জোটের পথে হেঁটে তৃণমূলের সঙ্গে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আর সোনিয়া গান্ধী ভোটের ফল ঘোষণার দিন থেকে ছ'দিনের মধ্যে সে বিষয়ে মনস্থির করে উঠতে পারলেন না। কংগ্রেসের অন্দরমহলের খবর, মানস ভুঁইয়া যেমন মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার পক্ষে, তেমনই প্রণব মুখার্জিও রাজ্য সরকারে কংগ্রেসের যোগদান চাইছেন। অবশ্য প্রণব মুখার্জির এই চাওয়ার পিছনে নিজের একটি অঙ্ক আছে বলে খবর। কংগ্রেস মমতা ব্যানার্জির সরকারে যোগ দিলে তাঁর ছেলে সম্ভবত মন্ত্রিত্ব পাবেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী ভাবছেন অন্যরকম। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের তুলনায় কংগ্রেস অনেক বড় দল। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের অধীনে রাজ্য সরকারে যোগ দিলে তা কংগ্রেসের ভাবমূর্তির পক্ষে কতটা সহায়ক হবে, সোনিয়াকে ভাবাচ্ছে সেকথা। সোনিয়া না কি আরো ভাবছেন, তৃণমূল যেখানে একাই গরিষ্ঠতা পেয়েছে, সেখানে মমতা ব্যানার্জি তাঁর শতাব্দী প্রাচীন দলকে হয়তো বেশি মন্ত্রিত্ব দেবেন না। যে ক'টি দেবেন, সেগুলিও হয়তো খুবই কম গুরুত্বের দপ্তর। তা নিয়ে দর কষাকষি কংগ্রেসকে মানাবে না। বেশি রাতের খবর, অন্তত কংগ্রেস ক'টি দপ্তর ও কী কী দপ্তর পেতে পারে, মমতার কাছ থেকে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানতে না পারা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় যোগদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না সোনিয়া। ২১ তারিখ মমতার শপথেও তিনি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই আসছেন না। প্রণব মুখার্জি ও শাকিল আহমেদের সঙ্গে প্রতিনিধি হিসাবে তিনি সম্ভবত পাঠাতে চলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে।

আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে
প্রকাশ্যে নিন্দা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৮ই মে- পার্টি নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করলো সি পি আই(এম)। পার্টি গঠনতন্ত্র ও বিধিমতের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি। সি পি আই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু বুধবার এখবর জানিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ই মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর পার্টি নেতৃত্ব সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিরূপ মন্তব্য করেন সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। মঙ্গলবার সি পি আই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিমান বসু জানান, পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে এই মন্তব্যের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তরে রেজ্জাক মোল্লা স্বীকার করেন যে, এধরনের মন্তব্য করা তাঁর ভুল হয়েছে। বিমান বসু জানান, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী রেজ্জাক মোল্লার উত্তরে সন্তুষ্ট নয়। কারণ তাঁর স্বীকারোক্তিতে কোনো অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায়নি। সেজন্য রাজ্য কমিটির সভায় পূর্বাপর তাঁর এই ধরনের আচরণের গুরুত্ব বিবেচনা করে পার্টি গঠনতন্ত্র নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি।

আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে
প্রকাশ্যে নিন্দা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৮ই মে- পার্টি নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করলো সি পি আই(এম)। পার্টি গঠনতন্ত্র ও বিধিমতের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি। সি পি আই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু বুধবার এখবর জানিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ই মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর পার্টি নেতৃত্ব সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিরূপ মন্তব্য করেন সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। মঙ্গলবার সি পি আই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিমান বসু জানান, পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে এই মন্তব্যের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তরে রেজ্জাক মোল্লা স্বীকার করেন যে, এধরনের মন্তব্য করা তাঁর ভুল হয়েছে। বিমান বসু জানান, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী রেজ্জাক মোল্লার উত্তরে সন্তুষ্ট নয়। কারণ তাঁর স্বীকারোক্তিতে কোনো অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায়নি। সেজন্য রাজ্য কমিটির সভায় পূর্বাপর তাঁর এই ধরনের আচরণের গুরুত্ব বিবেচনা করে পার্টি গঠনতন্ত্র নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি।

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy

পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় আর্থিক পরিকাঠামোর সংস্কার চাইছে কেন্দ্র

রাজ্যকে চাঙ্গা করতে মনমোহনের 'বঙ্গ-টিম'

জয়ন্ত ঘোষাল • কলকাতা

মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আসরে নামলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গের ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মনমোহন। তার পরে গত কাল থেকেই তিনি দফায় দফায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলির মূল লক্ষ্য, কী ভাবে রাজ্যের বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়, সেই পথ খোঁজা। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটাতে রাজ্যকে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দিতেও প্রস্তুত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি মনে করেন, শুধু টাকা দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামোর সংস্কার ঘটানো দরকার। পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনাও প্রয়োজন। যেখানে প্রতি বছর কিস্তিতে রাজ্যকে টাকা দেওয়া হবে। সেই টাকাটা এমন ভাবে কাজে লাগাতে হবে, যাতে রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়ে। লোকসানের বহর কমে। আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে আসে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়। সর্বোপরি সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্যের কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। এর কাজের জন্য একটি 'বঙ্গ-টিম'ও গড়েছেন মনমোহন সিংহ।

শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, কেরল এবং পঞ্জাব নিয়েও চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী। তিনটি রাজ্যেরই বেহাল দশা। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, রাজ্যের অর্থনীতি চাঙ্গা না হলে কেন্দ্রের অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়। এই তিন রাজ্যের জন্যই আর্থিক প্রস্তাবগুচ্ছ তৈরি করতে চাইছেন তিনি। খালিস্তানি আন্দোলনে পঞ্জাবের যে ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে ইন্দ্রকুমার গুজরাল প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই একটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ দেওয়া কথা হয়েছিল। আজও সেটি দেওয়া হয়নি। মনমোহন আবার এ-ও জানিয়েছেন, শুধু আর্থিক সাহায্য দিয়ে লাভ হবে না। এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু কোটি কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাতে সে রাজ্য বা সামগ্রিক ভাবে দেশের কোনও আর্থিক সুরাহা হয়নি। চন্দ্রবাবু হায়দরাবাদকে সাইবারাবাদ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাকি অন্ধ্র রয়ে গিয়েছে আগের অবস্থাতেই। একটি বিষয়ে তাই প্রধানমন্ত্রী এবং মমতা, দু'জনেই একমত। তা হল, এককালীন আর্থিক অনুদানে কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে কিছু পূর্ব শর্ত থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। মমতাও তা-ই চান।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির দশা সম্পর্কে প্রণববাবুও অবহিত। কারণ, অসীম দাশগুপ্ত যখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রত্যেক মাসে প্রণববাবুর কাছ থেকেই বামফ্রন্ট সরকার ওভারড্রাফটের জন্য দরবার করতেন। রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা এমনই যে, চলতি আর্থিক বছরে যতটা ঋণ নেওয়া সম্ভব, প্রথম দেড় মাসের মধ্যেই তার অর্ধেক তুলে নিতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারকে। চূড়ান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রণববাবু নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই নির্দেশ মেনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও পশ্চিমবঙ্গকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য করে গিয়েছে। এ বার ওভারড্রাফট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ করা হবে, কেন্দ্রের পরামর্শমতো তা নিয়ে মমতা কথা বলবেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের সঙ্গে।


রাজ্য সরকারের বেতন ও সুদ বাবদ মাসিক খরচ

 সরকারি কর্মী

৮৫৫*

 স্কুল-কলেজের শিক্ষক

৯০০*

 স্থানীয় প্রশাসন

৩৪৭*

 সরকারি কর্মীদের পেনশন

৪০০*

 অন্যদের পেনশন

৩১০*

 বৃত্তি ও জলপানি

৪২*

 সুদ

১৫০০*

*কোটি টাকা

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির হাল ফেরাতে প্রণববাবু তো গোটা বিষয়টির উপর নজর রেখেছেনই। প্রধানমন্ত্রী একটি 'বঙ্গ-টিমও' গঠন করেছেন। এই দলে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের যুগ্মসচিব সঞ্জয় মিত্র, রাজস্ব সচিব সুনীল মিত্র, প্রণববাবুর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। মনমোহন সিংহের ব্যক্তিগত সচিব জয়দীপ সরকারও উৎসাহী। পশ্চিমবঙ্গের এই উদ্যোগে তিনিও অন্যতম কারিগর। পাশাপাশি, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কৌশিকবাবুকে কলকাতা গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মমতাও পশ্চিমবঙ্গে সুশাসন দিতে চাইছেন। রাজ্যের আর্থিক হাল বদল করা এখন তাঁর আশু লক্ষ্য। সে ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলেও মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। রাজ্যপালের থেকেও একই রিপোর্ট গিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার মতে, মমতা প্রথমে ব্রিগেডে শপথ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যপাল তাঁকে পরামর্শ দেন, যে হেতু এটি সরকার গঠন ও প্রশাসনিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, তাই রাজভবনেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করা ভাল। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, মমতা সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কথা মেনে নেন। রাজভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করে বরং ২১ জুলাই বিজয় উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মতে, এটি একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। কিন্তু এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে দক্ষ হাতে সরকার ও প্রশাসন চালাতে মমতা আগ্রহী।

মনমোহন সিংহ, প্রণব মুখোপাধ্যায়, মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া— সকলেই মনে করেন, এই নতুন পশ্চিমবঙ্গের এখন যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাকে পুনরুজ্জীবিত করা দরকার। সেই লক্ষ্যে যে আর্থিক প্রস্তাবগুচ্ছ ঘোষণা করা হবে, সেগুলি কী ভাবে দেওয়া হবে, কতখানি দেওয়া হবে এবং এ ব্যাপারে কী কী পূর্ব শর্ত থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় প্রাথমিক ভাবে এখন সেগুলি চূড়ান্ত করতে চায়। সচিবালয়ের যুগ্মসচিব সঞ্জয় মিত্রকে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এই আমলার যুগ্মসচিব হিসেবে কার্যকালের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ বার তাঁর এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গেই ফিরে যাওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে ফিরলে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের সমন্বয়ের অন্যতম সেতু হবেন এই দক্ষ আমলাটি।

আর্থিক প্রস্তাবগুচ্ছ কেন্দ্র তখনই তৈরি করতে পারে, যখন রাজ্য কী করতে চাইছে, সে সম্পর্কে রাজ্য একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা পেশ করে। প্রণববাবু বারবার অসীমবাবুকে এই রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন। এ ধরনের রিপোর্টে রাজ্যকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাপত্র দিতে হয়। যেমন, রাজস্ব ও কর আদায় কত হবে, ভর্তুকি কত কমানো হবে, কৃষি উৎপাদন কত বাড়বে ইত্যাদি। বামফ্রন্ট সেটি কখনওই করেনি। এ বার মমতা যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন, তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি নিজেও শুধু টাকা নেওয়ার জন্য টাকা নেওয়াতে বিশ্বাস করেন না। বরং রাজ্য রেলের মতো একটি 'ভিশন ডকুমেন্ট' তৈরি করবে। অমিত মিত্র ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করেছেন।

মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া অবশ্য মনে করছেন, রাজ্যের যোজনা পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়। রাজ্যের যোজনা বরাদ্দে দেখা যাচ্ছে, ৯৩ শতাংশ খরচই পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে হয়। মাত্র ৭ শতাংশ দিয়ে উন্নয়নের কাজ হয়।

পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ সরকারি ও পুর-কর্মচারীদের বেতন, ভর্তুকি আর ঋণের সুদে মেটাতেই চলে যায়। তা সত্ত্বেও 'কাল্পনিক' কিছু প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে যোজনা বরাদ্দকে প্রত্যেকবার বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার।

তার মধ্যে স্বল্প সঞ্চয় থেকে পাওয়া অর্থকেও আয় হিসেবে ধরা হয়েছে। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই প্রণববাবু বারবার রাজ্যকে বলেছেন, "স্বল্প সঞ্চয় আসলে ধার, তাকে আয় হিসেবে দেখাবেন না।" কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। মন্টেক বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির গোটা ভিত্তিটাই ছিল আগে থেকে ধরে নেওয়া। পরের বার যখন তারা ফিরে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে আগের বছরের প্রত্যাশাগুলি বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ আবার নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

মনমোহন সিংহ, প্রণববাবু, মন্টেক সকলেই মনে করছেন, সরকারের বাড়তি খরচ কমাতে হবে। রাজ্যের পনেরো আনারও বেশি স্কুল এবং কলেজই অনুদানপ্রাপ্ত, যাদের ভার বহন করছে রাজ্য সরকার। এগুলি চালানো রাজ্যের দায়িত্ব হতে পারে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও বন্ধ করতে হবে। এটা একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। এ ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্র ধরে ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে নতুন সরকারকে। শুধু অর্থ দিয়েই যে সব সমস্যা সমাধান করা যাবে, এমন নয়। রাজ্যের আর্থিক হাল ফেরাতে প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। তার ভিত্তিতেই রাজ্যের প্রস্তাবগুচ্ছ পর্যালোচনা করে দেখবে কেন্দ্র।

কোষাগার শূন্য, পেনশনের ফাইল জমে পাহাড়

শ্যামলেন্দু মিত্র • কলকাতা

হাজার হাজার পেনশনের ফাইল বস্তাবন্দি। দিনের পর দিন হন্যে হয়ে ঘুরছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু পেনশনের দেখা নেই। কেননা, সরকারের কোষাগারের হাঁড়ির হাল।

সরকারি সূত্রে খবর, সল্টলেকের পেনশন দফতরে ৫০ হাজারেরও বেশি ফাইল তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন জেলার সরকারি অফিসে রয়েছে আরও প্রায় ৮০ হাজার ফাইল। কিন্তু তৈরি হচ্ছে না পেনশন পাওয়ার আদেশনামা পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (পিপিও)। ফলে হা-পিত্যেশ করে বসে রয়েছেন অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, পঞ্চায়েত ও পুরকর্মী। এমনকী পিপিও হাতে পেয়েও পেনশন পাচ্ছেন না বহু অবসরপ্রাপ্ত।

পেনশন দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বকেয়া মেটাতে এখনই ১৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তার উপর প্রতিদিনই অবসর নিচ্ছেন বেশ কিছু সরকারি কর্মী। তাঁদের পেনশন ও অবসরকালীন সুযোগসুবিধা দিতে আরও টাকা লাগবে। সেই বোঝা বহন করতে হবে নতুন সরকারকে। রাজ্যের পেনশন অধিকর্তা অতনু মণ্ডল অবশ্য প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। তাঁর কথায়, "পেনশন দফতরের কাজ হল পিপিও তৈরি করা। টাকার সংস্থান করার দায়িত্ব সরকারের। ট্রেজারিগুলিকেই টাকার সংস্থান করতে হয়।"

অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাঁদের শেষ বেতনের অর্ধেক টাকা পেনশন হিসেবে পান। আবার চাইলে সেই পেনশনের একাংশ বিক্রি করে এককালীন নগদ টাকাও নিতে পারেন তাঁরা। এ ছাড়া রয়েছে গ্র্যাচুইটি। পেনশন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, অবসর নেওয়ার সময় এক জন শিক্ষক বা পঞ্চায়েত ও পুরকর্মী মাসিক পেনশনের সঙ্গে গ্র্যাচুইটি ও পেনশন বিক্রি বাবদ ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতে পান। অর্থাৎ দশ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পেনশন চালু করতে প্রয়োজন অন্তত ১ কোটি টাকা। পেনশন অধিকর্তা নিজে কিছু বলতে না-চাইলেও তাঁর দফতর সূত্রে স্পষ্টই জানানো হচ্ছে যে, এই টাকা সংস্থান করতে না-পারাই পেনশনের ফাইল জমে থাকার একমাত্র কারণ।

পেনশন অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেজারিতে টাকার সংস্থান অনুযায়ী পিপিও ছাড়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার একটা রীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন অসীম দাশগুপ্ত মাঝেমধ্যেই ট্রেজারিগুলিকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন। সেই অনুযায়ী বন্ধ থাকত পিপিও ছাড়ার কাজ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ এপ্রিল সল্টলেকের পেনশন দফতরে একটি বৈঠক হয়। তাতেই জানা যায়, ৩৫ হাজার ৩০৪ জনের ফাইল পড়ে রয়েছে পিপিও ছাড়ার মুখে। তা ছাড়া, গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু পিপিও ছাড়ার পরেও প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান ট্রেজারি করতে পারেনি। এরই মধ্যে আরও ২০ হাজার পেনশন ফাইল এসে গিয়েছে।

অর্থ দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, বেতন ও পেনশন খাতে সরকারের প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্যের কোষাগারের যা হাল, তাতে এই টাকা জোগাড় করতে প্রায় প্রতি মাসেই নাভিশ্বাস ওঠে। এর উপর 'কঠিনতম' ভোটে জিততে মরিয়া বাম সরকার 'কল্পতরু' হয়ে রাজকোষ আরও শূন্য করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্য প্রশাসনের একাংশের। ফলে এখন লক্ষাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পেনশন ও অবসরকালীন সুবিধার ব্যবস্থা করতে জেরবার হতে হবে নতুন সরকারকে।

তবে অবসরপ্রাপ্তদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে অন্তত তাঁদের মাসিক পেনশন জরুরি ভিত্তিতে চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার।

কেন্দ্রীয় সাহায্যের সঙ্গে বাড়াতে হবে আয়ও

সুব্রত বসু • কলকাতা

মদানি আঠান্নি, খরচা রুপাইয়া!

রাজ্যের কোষাগারের হাল এখন ঠিক এ রকমই।

অর্থ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের মাসিক আয় গড়ে ২৩০০ কোটি টাকা। খরচ গড়ে ৪৮০০ কোটি। ঘাটতি ২৫০০ কোটি। (সূত্র: অর্থ দফতর।) অর্থাৎ, আয়-ব্যয়ের হিসেব কষতে স্লেট নিয়ে বসলে হাতে শেষ পর্যন্ত পেন্সিলও থাকছে না!

খরচের খাতার দিকে তাকালে চোখ কপালে উঠবে। খরচের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মী ও অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ও পেনশন জোগাতে। এই খাতে প্রতি মাসে সরকারের খরচ প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা। তা ছাড়া মাসে ১৫০০ কোটি চলে যায় সুদ মেটাতে। (সূত্র: অর্থ দফতর।) এখানেই শেষ নয়। এখনই রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসনের বকেয়া পাওনা প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। ওই টাকার 'বিল' কোষাগারে আটকে রাখা রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগও যে সব কাজ করে ফেলেছে তার জন্য পাওনা হয়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। (এর সঠিক হিসেব এখনও করে উঠতে পারেননি অর্থ দফতরের কর্তারা।) এই টাকাও মেটাতে হবে অবিলম্বে।

মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কার্যত এই রকম 'পঙ্গু' একটি কোষাগার হাতে পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতা হাতে নিয়েই তাই গোড়াতেই তাঁকে ভাবতে হবে বেতন, পেনশন, ধার এবং সুদ মেটানোর জন্য ফি-মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা জোগাড়ের কথা। এই টাকার ব্যবস্থা করে তবে তো উন্নয়ন!


রাজ্যের আয় ও ব্যয়

(২০১০-১১ আর্থিক বছরে)

আয়

ব্যয়

২৮,০৮৬*

৫৭,৪৩০*

গড় মাসিক হিসাব

আয়

ব্যয়

২,৩৩৭*

৪,৭৮৫*

*কোটি টাকা


ঋণং কৃত্বা

এ রাজ্যে ধারের উপর ধার চেপেছে ক্রমাগত। সেই অঙ্ক এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় দু'লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থনীতিবিদরা এ নিয়ে বহু বার নানা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বার বারই পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, ঋণ তো ভারত সরকারেরও রয়েছে। রয়েছে অন্য অনেক রাজ্যেরও। তা নিয়ে তো কথা উঠছে না?

অর্থনীতিবিদের একাংশ অবশ্য সম্পূর্ণ অন্য ভাবে বিষয়টিকে দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ রকম বিরাট অঙ্কের ধার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আরও অন্তত গোটা চারেক রাজ্যের— উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র ও গুজরাত। কিন্তু ওই রাজ্যগুলির অবস্থা এ রাজ্যের মতো নয়।

কেন?

ওই অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, ধার বেশি থাকাটা কোষাগারের খারাপ স্বাস্থ্যের মাপকাঠি নয়। এ ক্ষেত্রে ধরতে হবে ধার শোধ করার ক্ষমতা কার কী রকম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক জন অতি সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছে ২০ লক্ষ টাকার ঋণ বিরাট বোঝা। কিন্তু এক জন বড় শিল্পপতির কাছে কি ২০ লক্ষ টাকা ঋণ একই রকম বোঝা বলে মনে হবে? হবে না, কারণ দু'জনের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা এক নয়।

ওই অর্থনীতিবিদদের মতে, এ রাজ্যের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কম। তাই ২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ তার কেন্দ্রীয় সাহায্যের সঙ্গে ঘাড়ে বোঝার মতো। সেই ঋণের সুদ দিতেই জেরবার হতে হচ্ছে রাজ্যকে। টান পড়ছে উন্নয়নের কাজেও (মূলধনী খাতে ব্যয় কম বলে)। এটি একটি 'দুষ্টচক্র'-র মতো কাজ করছে। উন্নয়ন হচ্ছে না বলে আয় বাড়ছে না। আয় না-বাড়ায়, দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ও ঋণ শোধ করতে ফের ঋণ নিতে হচ্ছে। এ ভাবে কোষাগার ক্রমশ পঙ্গু হয়ে পড়ছে।

কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? এ নিয়ে কী ভাবছেন অর্থনীতিবিদরা?


দাওয়াই কী?

দাওয়াই-১: এই পরিস্থিতি প্রাথমিক ভাবে সামলানোর জন্য যে বাইরে থেকে বড়সড় একটি ধাক্কা দেওয়া (বিগ পুশ) দরকার, সে ব্যাপারে মোটামুটি এক মত অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে একটি বড়সড় সাহায্যের প্যাকেজ না পেলে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া শক্ত।

তবে সেই সাহায্যও যাতে বেতন, সুদ দিতে গিয়ে খরচ হয়ে না যায়, সে দিকেও নজর রাখা দরকার। কারণ, তা হলে রাজ্যের নিজস্ব আয় বাড়বে না। তাই ওই সাহায্যের টাকা শুধুমাত্র উন্নয়নের জন্যই ব্যয় করা হবে, এমন শর্ত করে নিতে হবে। এই টাকা রাজ্যকে এক বারে না দিয়ে, কয়েক বছর ধরে কিস্তিতে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।

দাওয়াই-২: রাজ্যের আয় বাড়ানোর জন্য দরকার শিল্প। রাজ্যের 'শিল্পবান্ধব' পরিবেশ ফিরিয়ে আনাটাই তাই নতুন সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর জন্যও দরকার পরিকাঠামো উন্নয়ন।

দাওয়াই-৩: রাজ্যের আয় বৃদ্ধির একটি প্রধান জায়গা বিক্রয়কর। সরকারি কর্তা ও অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, বর্তমানে কর আদায়ের যে ব্যবস্থা চালু আছে, তাতে দুর্নীতি এতটাই বেশি যে আদায় মারাত্মক কম হচ্ছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে আয় অনেকটাই বাড়বে।

দাওয়াই-৪: রাজ্যকে আয় বাড়নোর নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বার করতে হবে। সরকারি কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, অনেক নতুন ক্ষেত্র থেকেই আয় বাড়তে পারে। যেমন, পঞ্চায়েত এলাকায় এখন বড় মাপের সারের গুদাম থেকে শুরু করে মাঝারি, ছোট নানা রকমের ব্যবসা হয়। লক্ষ লক্ষ এই ধরনের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্থানীয় প্রশাসন নামমাত্র টাকা (বছরে ৫ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত) পেয়ে থাকে। এর সামান্য অদলবদল ঘটালেও পঞ্চায়েতগুলির রোজগার অনেকটাই বাড়তে পারে। তাতে বিভিন্ন খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও অনেকটাই কমে।

দাওয়াই-৫: সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন দিতে রাজ্য সরকারের ফি মাসে খরচ হয় ৯০০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি না-দিয়ে, সরকারের বিকল্প পথের সন্ধান করার সময় এসেছে। তাঁরা মনে করছেন, যে সব ছাত্রদের পরিবারের ক্ষমতা রয়েছে, তারা কেন বিনা বেতনে বা নামমাত্র বেতনে পড়বে? অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যে এ বছর ১০ লক্ষ ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সেই হিসেবে রাজ্যে দু'কোটির কাছাকাছি স্কুল ছাত্র রয়েছে। রয়েছে কয়েক লক্ষ কলেজ ছাত্রও। এর একটি অংশের কাছ থেকে (বিপিএল বাদে) সামান্য কিছু টাকা আদায় করলেই আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। পঠনপাঠনের মান বৃদ্ধি করা হলে ছাত্রদের পরিবারও এই সামান্য টাকা দিতে আপত্তি করবে না। (যেমন সরকারি হাসপাতালে ২ টাকা দিয়ে 'কার্ড' করাতে রোগীদের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি আসেনি)।

তবে এর বিরুদ্ধ যুক্তিও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, শিক্ষাক্ষেত্র যেমন অবৈতনিক রয়েছে, তেমনই থাকা উচিত। না হলে শিক্ষা অনেকের কাছেই অধরা থেকে যেতে পারে। তাতে কোষাগারের উপর চাপ এলেও, তা সামলাতে হবে সরকারকেই।

এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কোষাগারের বেহাল অবস্থা ফেরানোর কাজ কী ভাবে করবেন, সেটাই দেখার।

বদলের ছোঁয়ায় সাজছে 'পরিবর্তনের' শপথ

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

'পরিবর্তনের' সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পরতে পরতে মিশে থাকবে 'পরিবর্তন'।

এই প্রথম শহিদ মিনার ময়দান ঘিরে চার জায়গায় বসছে জায়ান্ট স্ক্রিন। যাতে সরাসরি রাজভবনের অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন মানুষ। শুধু তা-ই নয়, এ বারই প্রথম শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে প্রথামাফিক জাতীয় সঙ্গীতের আগে আলাদা ভাবে পরিবেশিত হবে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত।

এক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান ব্রিগেড ময়দানে করা যেতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তিনি সেই ভাবনা বদলান এবং রাজভবনের লনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে বলে স্থির হয়। আমন্ত্রিতের সংখ্যা অবশ্য ২০০৬ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যা ছিল, তেমনই থাকছে— ৩২০০-র মতো। তবে 'পরিবর্তন' যা, তা হল আমন্ত্রণপত্রের জন্য হাহাকার। কার্ডের জন্য তৃণমূলের নেতা থেকে শুরু করে বিধায়কদের রীতিমতো ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন তাঁদের পরিচিত জনেরা। এমনকী, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এসএমএস করে কার্ড চাওয়া হয়েছে।

শপথ নেবে নতুন মন্ত্রিসভা। রাজভবনে চলছে সেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। বুধবার। — সুদীপ আচার্য

আমন্ত্রিতদের প্রাথমিক তালিকা নিয়ে বুধবার দুপুরে কালীঘাটে তৃণমূল পরিষদীয় দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে আলোচনাও করেন ভাবী মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের 'টেলিফোন বিপ্লবের পুরোধা' স্যাম পিত্রোদার নাম আমন্ত্রিতদের তালিকায় রাখার কথা বলেন মমতা। পরে রাজ্য বিধানসভায় গিয়েও এ নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেন পার্থ-মুকুল-সুব্রত। আমন্ত্রণের প্রাথমিক তালিকা অনুসারে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পার্থবাবুর কাছে কার্ডের বাণ্ডিলও এসে যায়। যার মধ্যে দলীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ চিত্রতারকা, গায়ক, শিল্পীদের নামে নামে কার্ডও আছে।

ইতিমধ্যে অবশ্য বিধায়ক ও পরিচিত জনেরা বাড়তি কার্ডের জন্য পার্থবাবুদের কাছে বায়না শুরু করে দিয়েছেন। এসএমএসেও আসতে থাকে আবদার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, অসহায় পার্থবাবু বলে ফেলেন, "আইপিএলের টিকিট চাইলে দিতে পারি। কিন্তু শপথের কার্ড দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমার কাছে তো ন'কোটি কার্ড নেই। আর ন'কোটি লোক রাজভবনে ধরবেও না!'' এ দিনই বিধানসভায় পার্থবাবুর ঘরে এসে অভিনেতা, পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পীদের জন্য কার্ড নিয়ে যান পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। পার্থবাবু ও মুকুলবাবু প্রত্যেক বিধায়ককে জানিয়ে দেন, আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভা থেকে কার্ড পাবেন তাঁরা।

বিধানসভায় যখন কার্ডের বিলি ব্যবস্থা নিয়ে পার্থবাবুরা হিমশিম, কালীঘাটে মমতার বাড়িতে তখন শপথগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষেরা। তার মধ্যেই অবশ্য আমন্ত্রণের কার্ড কাকে কাকে বিলি করা হয়েছে, জানতে এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর ফোন করে খবর নিচ্ছিলেন মমতা নিজেই। কার্ড নেওয়ার ভিড়ের পাশাপাশি ছিল রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর ঢল।

'পরিবর্তনের' সরকারের শপথগ্রহণ নিয়ে মানুষের এই উন্মাদনা বুঝে নিতে ভুল হয়নি রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের। এত মানুষকে রাজভবনে ঢুকতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে শহিদ মিনার ঘিরে চার জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন বসাতে তড়িঘড়ি নির্দেশ দেন তিনি।

মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্যপালের নির্দেশে ঠিক হয়েছে, শহিদ মিনারের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম কোণে ওই চারটি স্ক্রিন টাঙানো থাকবে। সব ক'টিরই মুখ থাকবে শহিদ মিনার ময়দানের দিকে। একটি সংস্থাকে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ওই স্ক্রিন বসানোর ভার দিয়েছে রাজ্য। ময়দান থানার ওসি এবং অন্য অফিসারদের সঙ্গে মঙ্গলবার শহিদ মিনার ও সংলগ্ন মাঠ পরিদর্শন করেন বরাত পাওয়া সংস্থার কর্তারা। পুলিশ জানায়, মাঠের উত্তরে শহিদ মিনারের নীচে, দক্ষিণে ফ্রেণ্ডস ক্লাবের সামনে, পূর্বে নিউ রোডের সামনে ও পশ্চিমে স্পোর্টিং ইউনিয়নের সামনে জায়ান্ট স্ক্রিনগুলি টাঙানো হবে।

দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট

মঞ্চে উঠবেন রাজ্যপাল
প্রথমেই জাতীয় সঙ্গীত

রাজ্যপালের অনুমতিক্রমে অনুষ্ঠান শুরু

দুপুর ১টা ১ মিনিট

মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার শপথ
অন্য মন্ত্রীদের শপথ-সহ অনুষ্ঠান

আনুমানিক ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের

কী ভাবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ছবি সরাসরি ফুটে উঠবে জায়ান্ট স্ক্রিনে? যে সংস্থা সরাসরি ওই সম্প্রচার দেখাবে, তাদের তরফে রথীন আঢ্য জানান, মূলত 'ডিটিএইচ' পদ্ধতি ব্যবহার হবে। শহিদ মিনারের একটি জায়গায় থাকবে ডিশ অ্যান্টেনা। সেখান থেকে চারটি পৃথক সংযোগ যাবে চারটি স্ক্রিনে। অনুষ্ঠানের ছবি ক্যামেরাবন্দি করবে দূরদর্শন। দূরদর্শনের পাঠানো ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। তবে অনুষ্ঠানের ছবি আলাদা করে কেব্‌ল টেলিভিশনেও তুলে রাখা হবে বলে রথীনবাবু জানিয়েছেন।

এ দিন সরকারের কাছ থেকে কাজের বরাত পাওয়ার পরে নিয়মমাফিক ফোর্ট উইলিয়ামে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে শহিদ মিনার ব্যবহারের অনুমতি নেয় ওই সংস্থাটি। প্রতিটি স্ক্রিনের মাপ ৯ ফুট বাই ১২ ফুট বা ১০৮ বর্গফুট। মাটি থেকে প্রতিটি স্ক্রিনের উচ্চতা হবে ৮ ফুট।

শহিদ মিনারে কত লোক দেখতে পাবেন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, শহিদ মিনারে একসঙ্গে হাজার কুড়ি মানুষের বেশি লোক জমায়েত হতে পারেন না। তত সংখ্যক মানুষ শুক্রবার খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে দেখবেন এই অনুষ্ঠান। ভিড় সামলাতে পর্যাপ্ত পুলিশ তো রাখা হবেই, এমনকী পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীকেও মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। ময়দানে বড় খেলা থাকলে যে পুলিশি ব্যবস্থা থাকে, তেমনই থাকবে শুক্রবার। অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শুভাপ্রসন্ন।


জায়ান্ট স্ক্রি

মঞ্চসজ্জাতেও রাখা হচ্ছে শৈল্পিক বৈচিত্র। মূলমঞ্চে ওঠার পথে বিশাল তামার পাত্রে ভরা রাশি রাশি জুঁইফুল। তার সামনে মঙ্গলঘট। মূলমঞ্চের সামনে ফুলের সজ্জা। সিঁড়িও ফুলে মোড়া। সবুজ-সাদা কাপড়ের মূল মঞ্চের দেওয়ালও সাজানো হচ্ছে সাদা শোলার কদমফুল দিয়ে। সেই সঙ্গেই স্থির হয়েছে, সব মন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরে জাতীয় সঙ্গীতের আগে 'নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়' রবীন্দ্রসঙ্গীতটি পরিবেশন করবেন শমীক পাল। তার জন্য শপথগ্রহণের মূল মঞ্চের বাঁ দিকে থাকছে আর একটি ছোট মঞ্চ, টেবিলের উপরে হারমোনিয়াম।

বিরল সৌজন্য মমতার

'অসৌজন্য'ই বাংলার সিপিএমের ঐতিহ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

বিরল 'রাজনৈতিক সৌজন্য' দেখিয়ে শুভেচ্ছা-বিনিময়ের জন্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দনটুকু জানিয়ে উঠতে পারল না সিপিএম!

ভোটে জয়ের পর সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গে ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "উনি ভাল থাকুন। হাসিমুখে থাকুন। দীর্ঘজীবী হোন। ওঁর পরিবারও ভাল থাকুক।"

আর সে দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বললেন, "কেউ হারলে যেমন তাকে সমবেদনা জানানোর কিছু নেই। তেমনই জিতলে তাকে নিয়ে উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করারও কিছু নেই!"

স্বাভাবিক। রাজনীতিতে 'অসৌজন্যের' এই ঐতিহ্য সিপিএম বহন করে আসছে দীর্ঘকাল। সে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের শেষকৃত্যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর যোগ না-দেওয়াই হোক বা অতুল্য ঘোষের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে তাঁকে 'কানা অতুল্য' বলে সম্বোধন করাই হোক। এমনকী, অতুল্যবাবুকে আক্রমণ করতে গিয়ে এমনও বলা হয়েছিল, "একটা চোখ নাই। আরেকটাও দিমু!"

প্রফুল্ল সেন

অতুল্য ঘোষ

জ্যোতি বসু

বিরোধী দলনেতা থাকার সময় জ্যোতিবাবু কংগ্রেস সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কালীপদ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় থাকতে চাননি। বলেছিলেন, ''যে 'জল্লাদ', মৃত্যুর পরেও সে 'জল্লাদ'ই থাকে!'' আবার যুক্তফ্রন্ট ভোটে জেতার পর অতুল্যবাবুকে কটাক্ষ করতে ল্যাম্প পোস্টে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেগুন (কানা বেগুনের প্রতি ইঙ্গিত করে)। যে অজয় মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু, পরে বাম জমানায় সেই অজয়বাবুকেও চরম অবহেলায় মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। ক'দিন আগেও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর সত্তর দশকের রাজনীতিকেই বড় করে দেখেছিল সিপিএম। জ্যোতিবাবুর জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা করা হলেও সিদ্ধার্থবাবুর জন্য বামফ্রন্ট সরকার সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি চরম 'অসৌজন্য' দেখানোর মানসিকতার বীজ বঙ্গ সিপিএম বপন করেছিল ছয়ের দশকেই। রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে তিন দশকে তা ক্রমে মহীরূহে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পরে সিপিএম-তৃণমূলের সম্পর্ক যখন অহি-নকুল, তখন প্রধান বিরোধী দলও মুখ্যমন্ত্রীকে 'খুনি বুদ্ধ' বলে সম্বোধন করেছে। কিন্তু তা সাধারণত রাজনীতির সীমানা ছাড়ায়নি। তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বুদ্ধবাবুর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। সিপিএমের তরফে তার পাল্টা জবাবে কল্যাণবাবুর 'জন্ম' নিয়ে কটূক্তি করেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও।

ভোটের প্রচারে নেমে মমতার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসু বা মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। ভোটের বাজারে মুখ্যমন্ত্রী তার সমালোচনা করলেও আগে কিন্তু আগাগোড়াই নিশ্চুপ থেকেছেন। যেমন থাকতেন জ্যোতিবাবুও।

বিরোধী থেকে শাসকের ভূমিকায় পর্বান্তরের পরে মমতা উদারতা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভূমিকা বদলের পরেও জ্যোতিবাবু শাসক হিসেবে কখনও তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের কথায় রাশ টানেননি। যার ফলে অসৌজন্যকারীরা আরও 'প্রশ্রয়' পেয়েছে। বাম শিবিরের একাংশের মতে, কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের পর শিক্ষিত এবং সহবতসম্পন্ন বড় অংশটা থেকে গিয়েছিল সিপিআইয়ের সঙ্গে। সেদিক দিয়ে সিপিএমের অসৌজন্যের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহু প্রাচীন। এবং সে 'অধিকার' একেবারেই বঙ্গ-সিপিএমের নিজস্ব। যার সূচনা সে কালে প্রমোদ দাশগুপ্তের হাত ধরে। যে উত্তরাধিকার এখনও বাহিত হচ্ছে 'সফল ভাবে'।

সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতা প্রকাশ কারাট বা সীতারাম ইয়েচুরি কিন্তু কখনইও তাঁদের আচরণে এমন অশালীনতা অনুশীলন করেননি। প্রতিপক্ষকে তীব্র সমালোচনা করেছেন, কঠোর রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন। কিন্তু তা কখনওই শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেনি। সেদিক দিয়ে ওই 'অধিকার' সিপিএমের 'বঙ্গ-ব্রিগেডে'র একচেটিয়া। আরও ভাল করে বললে, দলের 'এলিট' শ্রেণির নেতাদের। যাঁরা চিরকাল 'আমজনতা'র থেকে নিজেদের 'সম্ভ্রমসূচক' দূরত্ব রচনাতেই ব্যস্ত থেকেছেন। বিনয় কোঙার বা অনিলবাবু যে সব মন্তব্য করে বিতর্ক বাধিয়েছেন, তা এক ধরনের 'গ্রাম্যতা' থেকে 'অসংসদীয়' শব্দ ব্যবহারের ফল। খানিকটা অসতর্কতারও। কিন্তু তার সঙ্গে সিপিএমের 'সংস্কৃতি-মনস্ক' নেতাদের কিছু কিছু মন্তব্যের সত্যিই তুলনা চলে না। তুলনা চলে না, যখন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার অন্দরে বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রকারান্তরে 'অমেরুদণ্ডী' বলেন!

সরাসরি 'অসৌজন্য' যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে 'তির্যক' রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যে 'তির্যক' উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতায় হ্যারিংটন ষ্ট্রিটের নাম বদলে রাখা হয়েছিল হো চি মিন সরণি। যে রাস্তা মার্কিন বাণিজ্যিক দূতাবাসের ঠিকানা। বলা বাহুল্য যে, 'মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ'কে চিমটি কাটতেই আমেরিকার প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থিতির রাস্তা হো চি মিনের নামাঙ্কিত করা হয়েছিল। যা থেকে প্রশ্ন ধেয়ে আসছে, কলকাতা পুরসভা এবং মহাকরণের অধিকারী তৃণমূলের নেত্রী মমতা যদি আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটের নাম পাল্টে দীনদয়াল উপাধ্যায় সরণি বা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার সরণি (দু'জনের আরএসএসের পূজ্য নেতা। যে সংগঠনের নামটুকুও সিপিএমের কাছে সংক্রামক রোগের মতো পরিত্যাজ্য) করে দেন, তা হলে কি সিপিএমের ভাল লাগবে?

লাগবে না। প্রশ্ন শুনেই কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম, "তৃণমূল নেত্রী চাইলে আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটের নাম দীনদয়াল উপাধ্যায় সরণি কেন, জর্জ বুশ ষ্ট্রিটও দিতে পারেন! তাতে প্রমাণিত হবে, কাদের ধারা উনি বহন করেন!"

পাশাপাশিই সেলিমের বক্তব্য, "যুক্তির তো একটা ভিত্তি থাকা উচিত! যুক্তফ্রন্ট আমলে হো চি মিনের নামে যখন রাস্তার নাম হয়, তখন গোটা দেশ ভিয়েতনামের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। স্রেফ ঘটনাচক্রে সেই রাস্তায় মার্কিন বাণিজ্যিক দূতাবাসের দফতর। কিন্তু কলকাতারই পার্কে হো চি মিনের চেয়ে বড় আকারে ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তি বসানো হয়েছে (ওই মূর্তি অবশ্য কার্যত ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলকাতার মেয়র থাকাকালীন বসিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়)। আর হো চি মিন সরণি নাম যদি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চিমটি কাটতে রাখা হয়ে থাকে, তা হলে খিদিরপুরে কার্ল মার্ক্স সরণি বা ধর্মতলায় লেনিন সরণি কাকে চিমটি কাটতে হয়েছে?" বরং সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, তাঁরা এমন নীতিতে বিশ্বাসী হলে ৩৪ বছরের বাম জমানায় কলকাতায় অবধারিত ভাবে প্রমোদ দাশগুপ্তের নামে কোনও রাস্তা হত!

তবে আপাতত তির্যক প্রসঙ্গ এড়িয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে 'বিরল' সৌজন্যের পরিচয় দিয়েই শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন মমতা-সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, যাঁকে প্রথম হারিয়ে লোকসভায় গিয়েছিলেন মমতা। বিপুল জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে তাঁকে চিঠি দিয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার। মমতা জবাবি ফোনে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও তাঁর বাড়ি গিয়েছেন। আগেও যেমন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর জ্যোতিবাবুর সঙ্গে দেখা করে প্রণাম করেছিলেন মমতা।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, "স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত মানুষের বেশির ভাগ পরবর্তী কালে সিপিআই, সিপিএম, আরএসপি-তে ছড়িয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক সৌজন্যই এ রাজ্যের ঐতিহ্য। তাই যে ঘটনাকে (মমতা-সোমনাথ সৌহার্দ্য) বিরল বলা হচ্ছে, সেটাই বরং স্বাভাবিক হওয়া উচিত। মাঝে যেগুলো ঘটেছে, সেগুলো নিন্দনীয় ব্যতিক্রম।" বামফ্রন্টের এক নেতাও বললেন, "আমরা সব কাজ ঠিক করিনি, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রফুল্লবাবুর শবানুগমনে কে গেলেন বা গেলেন না, তা দিয়ে কোনও উপসংহার টানা যায় না। মমতাও শৈলেন দাশগুপ্তের মরদেহে মালা দেননি! " কেন্দ্রে যোগ না-দেওয়াকে জ্যোতিবাবু বলতে পেরেছিলেন 'ঐতিহাসিক ভুল'। সেটা একান্তই 'রাজনৈতিক'। বঙ্গ-সিপিএমের ইতিহাস বলছে, তার চেয়েও বড় বড় সব 'ত্রুটি' করে এসেছে তারা। যা 'ব্যক্তিগত অশালীনতা'র পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু সেই ত্রুটি স্বীকারের উদ্যোগ এখনও দেখা যাচ্ছে না। সে সব ইতিমধ্যেই 'ক্লোজ্‌ড-চ্যাপ্টার'। অবশ্য আগে অভিনন্দন জানানোর 'উদারতা' আসুক। তার পর তো ভুল-স্বীকার!

শপথে আসছেন চিদম্বরম

মন্ত্রিত্বে কংগ্রেসের যোগ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজই

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারে কংগ্রেসের যোগদান প্রায় নিশ্চিত। আগামী কাল কলকাতায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকের পরেই ওই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে। সর্বভারতীয় কংগ্রেস সূত্রে আজ এ খবর জানানো হয়েছে।

দলীয় হাইকম্যাণ্ডের তরফে কলকাতায় ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি এবং এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ।

মমতার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কংগ্রেস মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি হলেও শুক্রবার শপথগ্রহণ অনুুষ্ঠানে সম্ভবত আসছেন না সনিয়া গাঁধী। আজ কেরল ও অসমের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাননি সনিয়া। কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, পশ্চিমবঙ্গেও সম্ভবত তিনি যাবেন না। তবে হাইকম্যাণ্ডের তরফে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। চিদম্বরমের আসা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে জোট শিবির।

গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের চিত্র স্পষ্ট হওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই তৃণমূল নেত্রী ধারাবাহিক ভাবে বলেছেন, তিনি কংগ্রেসকে সরকারে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এমনকী দিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মমতা সাংবাদিকদের জানিয়েই দেন যে, কংগ্রেস মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও যোগদানের বিষয়টি ঘোষণা হয়নি। মন্ত্রিসভায় সামিল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে সনিয়ার সঙ্গে প্রণববাবুর এক প্রস্ত বৈঠক হয়। পরে রাতে প্রণববাবু ও সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া। আজ সকালে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেন মানসবাবু। তার পর রাতে ফের প্রণববাবুর বাসভবনে গিয়ে শাকিল ও মানসবাবু মন্ত্রিসভার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন।

সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন মানসবাবু বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকারকে সার্বিক ভাবে সমর্থন জানাবে কংগ্রেস।" সরকারে যোগদানের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কংগ্রেস সভানেত্রী জানিয়েছেন, তিনি যথাসময়ে বিষয়টি জানাবেন।" তাঁর কথায়, "কংগ্রেস একটি জাতীয় দল। কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রয়েছে। সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও ঘোষণা না করা হলেও দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলছে কংগ্রেস। হিসাব অনুযায়ী প্রতি সাত জন বিধায়ক পিছু কংগ্রেসের এক জন মন্ত্রী হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী রাজ্য মন্ত্রিসভায় মোট ৪৪ জন মন্ত্রী থাকতে পারেন। এর মধ্যে ৬ টি দফতর পেতে পারে কংগ্রেস। তবে যেহেতু মমতা আপাতত ছোট মন্ত্রিসভা গড়বেন, তাই সমানুপাতে কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। দলের এক নেতার কথায়, সম্ভবত ৩০ জনের মন্ত্রিসভা গড়বেন তৃণমূল নেত্রী। এর মধ্যে তিন জন কংগ্রেসের মন্ত্রী থাকবেন। এক জন পূর্ণ মন্ত্রী, বাকি দু'জন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের সম্ভাব্য সদস্য তালিকায় রয়েছেন অসিত মাল, দেবপ্রসাদ রায়, মহম্মদ সোহরাব, অজয় দে, আবু হেনা এবং মানস ভুঁইয়া প্রমুখ। যদিও মানসবাবুর দাবি, দলের সাংগঠনিক দায়িত্বেই তিনি থাকতে চান বলে কংগ্রেস সভানেত্রীকে জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে মানসবাবু অবশ্য বলেন, "কংগ্রেস সভানেত্রী যদি কোনও নির্দেশ দেন তা পালন করতে আমি বাধ্য।"

কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়েছে, প্রথম বার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম দফাতেই প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রী হিসাবে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে তাঁকে কোনও উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হতে পারে। তা সে হিডকো হোক বা শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদও হতে পারে।

এ দিকে দিল্লি এসে আজ মানসবাবু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি বলেন, "বাম শাসনে পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের বিষয়টি অবহেলিত হয়েছে। রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর কেন্দ্র যাতে সব রকম উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য করে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে যথাসাধ্য করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও।"

ব্যবধান বেড়ে ৩৬ লক্ষ

কাজের প্রশ্নেই নতুনদের ভোট ফ্রন্টের বিরুদ্ধে

প্রসূন আচার্য • কলকাতা

উদাহরণ এক: সিপিএমের 'তরুণতম' প্রার্থী কসবায় শতরূপ ঘোষ। যিনি হেরেছেন ২০ হাজার ভোটে।

উদাহরণ দুই: সিপিএমের 'যুব সংগঠন' ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক বর্ধমানের বরাবনি কেন্দ্রে আভাস রায়চৌধুরী। তিনিও হেরেছেন ২০ হাজার ভোটে।

উদাহরণ তিন: কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে সিপিএমের 'যুবনেত্রী' কনীনিকা ঘোষ। হেরেছেন ৪০ হাজার ভোটে!

তরুণ এবং সুদর্শন শতরূপের হয়ে শুধু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, প্রচারে নেমেছিলেন অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা, শ্যামল চক্রবর্তীর কন্যা উষসী, গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষিরা। তাঁদের সঙ্গেই যুবক-যুবতীদের ঢল দেখে সিপিএম নেতারা ভেবেছিলেন, শতরূপ জিতে গিয়েছেন! যেমন তাঁরা ভেবেছিলেন আভাস এবং কনীনিকার ক্ষেত্রেও। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে আভাসের কেন্দ্রে সিপিএম পিছিয়ে ছিল মাত্রই দু'হাজার ভোটে। শতরূপের কেন্দ্রে ১৫ হাজার এবং কনীনিকার কেন্দ্রে ১৭ হাজারে। জেতা তো দূরস্থান, ব্যবধান বেড়ে গিয়েছে এক লাফে!

রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে এসএফআইয়ের ছাত্র সংসদ দখল করায় 'উদ্বেল' বাম যুবরা মুখ থুবড়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক যে, শতরূপের মনে হয়েছে, ''যারা এসএফআই করে, তারা আমাকে ভোট দিলেও নতুন ভোটারদের অধিকাংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।" কনীনিকার স্বীকারোক্তি, "নতুন ভোটারদের বড় অংশের ভোট আমি পাইনি।" যুব-নেতা আভাস একটু আভাসে বলেছেন, "বয়স্কদের একাংশের পাশাপাশি ছাত্র-যুবরাও আমার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।"

কাজে লাগল না নতুন মুখও। (বাঁ দিক থেকে) শতরূপ ঘোষ, আভাস রায়চৌধুরী ও কনীনিকা ঘোষ।

রাজ্যে মোট ৪১৯টি কলেজের মধ্যে এসএফআইয়ের দখলে ২৯২টি। প্রায় ৭০%। কিন্তু এসএফআইয়ে 'সাফল্য' যে তরুণ-প্রজন্মের সমর্থনের মাপকাঠি হতে পারে না, তা স্বীকার করছেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের চেয়ে বামফ্রন্ট পিছিয়ে ছিল প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ ভোটে। বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে প্রায় ৩৩ লক্ষ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছিলেন তালিকায়। যে ভোটের ফলাফলে বামেরা লোকসভার চেয়ে প্রায় ১০ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের ভোট বেড়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ। লোকসভায় বিরোধী জোট পেয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ভোট। এ বার প্রায় ২ কোটি ৩১ লক্ষ। ফলে বামেদের ভোট বাড়লেও তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বিরোধীদের চেয়ে।

এই ভোটের অধিকাংশই নতুন ভোটারদের। তরুণ প্রজন্মের। যাঁদের কাছে ১৯৭২-১৯৭৭ সালের কংগ্রেসি শাসন নেহাতই 'গল্পকথা'। ৩৩ লক্ষ নতুন ভোটারের মধ্যে ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০%-এরও কম কলেজে পড়ার সুযোগ পান। যে বিপুল অংশ উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তাঁরাই নতুন ভোটারদের সিংহভাগ। যাঁদের অধিকাংশই বেকার বা দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেব বা শতরূপের নির্বাচনী প্রচারে যে কলেজ-পড়ুয়াদের দেখা গিয়েছিল, শতাংশের হিসেবে তাঁরা নেহাতই কম। অথচ, তাঁদের নিয়েই নেতাদের মধ্যে বাড়তি 'উচ্ছ্বাস' সৃষ্টি হয়েছিল।

ফল দেখে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, তরুণ-প্রজন্ম বামেদের 'প্রত্যাখ্যান' করেছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব, মহম্মদ সেলিম, রবীন দেবরা মনে করছেন, নতুন ভোটারদের সিংহভাগই তাঁদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। একই অভিমত সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বা আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্যেরও। তাঁদের কথায়, বামেরা 'নিজস্ব' ভোট ধরে রাখতে পারলেও নতুন ভোটাররা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে পরাজয়ের ব্যবধান 'অস্বাভাবিক' বেড়েছে। বাম নেতাদের মতে, মূলত কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই নতুন ভোটাররা ফ্রন্টকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য কমিটির সদস্য তথা অধুনা প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা 'গরিব ঘরের কালো চুলের মদ্দ ছেলেদের' নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় সংগঠন করার কথা বলেছিলেন। যাদের সঙ্গে এসএফআইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। রেজ্জাকও মনে করেন, "গ্রামের গরিব ঘরের জোয়ান ছেলেদের বড় অংশ এ বার তৃণমূল জোটকে ভোট দিয়েছে।" সিপিএমের কৃষক নেতাদের একাংশের মতে, কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই গ্রামের যুবকরা বামফ্রন্টকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেননি। এঁদের অধিকাংশেরই জীবিকা চাষ-আবাদ, ভ্যান রিকশা চালানো, জন-মজুর খাটা বা মিস্ত্রির কাজ। সিপিএমের এক কৃষক নেতার কথায়, "বাম জমানার প্রথম পর্বে ভূমি-সংস্কারকে কেন্দ্র করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ ছিল। কিন্তু ৩৪ বছরে পরিবার বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমাণ কমেছে। ভূমি থেকে আয়ও কমে গিয়েছে। বিকল্পও কিছু নেই। সামগ্রিক ভাবেই গ্রামের যুবকদের বড় অংশ হতাশ। ভোটে তার প্রভাব পড়েছে।" ঠিক একই ভাবে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে জঙ্গলমহলের আদিবাসী যুবকদের বড় অংশও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বলে মনে করছেন ফ্রন্টের নেতারা। দু'বছর আগে তাদের যে অংশ মাওবাদীদের সমর্থন করত, তারাই এ বার তৃণমূল জোটকে ভোট দিয়েছে।

এমনকী, শহরের নতুন ভোটাররাও বামেদের বিরুদ্ধেই গিয়েছেন বলে ফলাফলে মনে করছে সিপিএম। একাধিক রাজ্য কমিটির সদস্যের মতে, মূলত কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই নতুন ভোটাররা বামফ্রন্টকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেননি। এক দিকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম (বিশেষত, সিঙ্গুর) রূপায়ণ করতে না-পারার ব্যর্থতা। অন্য দিকে, দিল্লি-গুজরাত-মহারাষ্ট্র-কর্নাটক-অন্ধ্রপ্রদেশের মতো চাকরির সুযোগ এ রাজ্যে না থাকায় শহরের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মনেও বাম-সরকারকে ঘিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। শহরের অল্প-শিক্ষিত যুবকদের সামনে অটো চালানো বা ফুটপাথে হকারি করার বিকল্প কিছু নেই। ফলে তারাও বামেদের উপরে আস্থা রাখতে পারেনি।

শতরূপ-আভাস-কনীনিকারা প্রচারে এগিয়ে থাকতে পেরেছেন। প্রভাবে 'পাশ' করতে পারেননি।

বিরোধী ভূমিকা

গোড়াতেই আদা-জল খেয়ে নামা নয়, সিদ্ধান্ত সিপিএমে

সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা

নির্বাচনী যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে এ বার ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে বসছে বামফ্রন্ট তথা সিপিএম! বিরোধী আসনে গিয়ে নতুন সরকারের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই 'হঠকারী আন্দোলনে' না-যাওয়ার জন্য রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বকে 'পরামর্শ' দিয়েছে পলিটব্যুরো। সেইমতো বামফ্রন্ট শরিকদের কাছেও একই পরামর্শ পৌঁছে দিয়েছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসা মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে আদা জল খেয়ে নামতে যাওয়া উচিত হবে না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিধানসভা ভোটের ফলে এ রাজ্যে বামেদের 'জনবিচ্ছিন্নতা' প্রকট হয়ে গিয়েছে। এখন নতুন সরকার কাজ শুরু করা মাত্র তাদের বিরোধিতা করতে গেলে 'জনবিচ্ছিন্নতা' আরও বাড়তে পারে। জনতার রায়ে 'প্রত্যাখ্যাত' বামেদের সেই ভূমিকা মানুষ ভাল করে নেবেন না। তাই শুধু 'গঠনমূলক' বিরোধিতাই নয়, 'সহনশীল' ভূমিকা পালন করতে রাজ্য সিপিএমকে পরামর্শ দিয়েছে পলিটব্যুরো। সহনশীলতা দেখাতে হবে অন্তত এক বছর। যদি না তার মধ্যে মমতা 'হঠকারী' কিছু করে বসেন!


গৌতম দেব

পরামর্শ শুনে নিজেদের নীতি নির্ধারণ করছে আলিমুদ্দিনও। দলের রাজ্য কমিটি এবং বামফ্রন্টের কাছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তাঁদের বিরোধিতার নীতি ব্যাখ্যা করেছেন। ভোটের আগে যে গৌতম দেব বলতেন, মমতার শপথ নেওয়ার দিন বন্‌ধ ডাকলে কেমন হবে, তিনিও এখন ওই রাস্তায় হাঁটছেন না। এখন সেই গৌতমবাবুরই কথায়, "একটা শিশু ভুল করতে করতে শেখে। এই সরকারকে সে ভাবেই কাজ শিখতে হবে। আমাদের তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।" তাই বলে কি সিপিএম একেবারে ঘরে বসে থাকবে? নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরেও তারা যে

রাস্তায় আছে, তা বোঝাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা 'জনবিরোধী নীতি'র বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি থেকে শুরু করে পেট্রো-পণ্যের দাম বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন পড়বে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে তারা অপেক্ষা করে থাকবে মমতা কেমন পদক্ষেপ করেন দেখতে।

একই সঙ্গে দু'টি রাজ্যে এ বার ক্ষমতা হারিয়েছে সিপিএম। কিন্তু কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, "কেরলে বামেরা ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করছে কিছু দিন ধরে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী ভূমিকা নতুন। গঠনমূলক বিরোধিতার উপরেই জোর দেবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট। প্রথম দিন থেকেই অহেতুক সরকার-বিরোধিতার দরকার নেই।" এখনই বিরোধিতা করতে গেলে জনরোষ আরও বাড়ার আশঙ্কার সঙ্গে আরও একটি যুক্তি রয়েছে। রাজ্যের মানুষের বিপুল প্রত্যাশা যেমন মমতার উপরে রয়েছে, তেমনই নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে যে সব কাজে হাত দিতে হবে, তার বেশির ভাগই বাম জমানার অসম্পূর্ণ কাজ। মমতা পারছেন না বলে গোড়াতেই সমালোচনা করতে গেলে প্রশ্ন উঠবে, বামেরা তাদের বকেয়া কাজ এত বছরেও শেষ করতে পারেনি কেন! যার পরিণাম ভাল হবে না।

প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবুর মতে, "এত বছর বাদে সরকার বদলেছে। নতুন সরকারকে সব কিছুই নতুন করে শিখতে হবে। তাদের কাজ করার জন্য অন্তত এক বছর সময় দিতে হবে। অমুক কাজটা সরকার করতে পারছে না, এটা আমরা ১০ দিন পরেই বলতে শুরু করলে লোকে শুনবে না। কিন্তু এক বছর বাদে বললে তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।" গৌতমবাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার, 'জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা এ বার হারমোনিয়াম নিয়ে বেরোবে' বা 'পাহাড়ে গুরুঙ্গেরা সাদা পতাকা তুলবেন' জাতীয় তির্যক মন্তব্য আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে একই সঙ্গে গৌতমবাবু বলছেন, "আমাদের ভূমিকা ঠিক কেমন হবে, সেটা কিন্তু পরিস্থিতির উপরেও অনেকটা নির্ভর করবে। এখন প্রথম কাজ মারামারি বন্ধ করা। সেটা না-হলে কোনও কাজই হবে না।"

বিরোধিতার কৌশল ঠিক করতে গিয়ে আরও একটি আশঙ্কা ভাবাচ্ছে বাম নেতৃত্বকে। জমানা বদলের সুযোগ নিয়ে বাম নেতা-কর্মীদের উপরে 'আক্রমণ' হচ্ছে। বামেরা গোড়াতেই উগ্র সরকার বিরোধিতায় নামলে তা আরও বাড়তে পারে। বামেদের লক্ষ্য জনরোষ প্রশমিত করা। ফ্রন্ট শরিক আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোজ ভট্টাচার্যের কথায়, "কোচবিহার থেকে রায়না, কাকদ্বীপ থেকে ছাতনা, সিপিএম আর না— এই স্লোগানের উপর তো ভোট হল! মানুষ যেখানে আমাদের 'না' বলেছেন, সেখানে সতর্ক পা ফেলতে হবে। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আরও হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি নেওয়া যায় না।"

পাঁচ বছর আগে বামফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল এবং কংগ্রেস প্রথম আন্দোলনে নামার সুযোগ পেয়েছিল, রক্তদানের জাল কিট-কাণ্ড নিয়ে। সিপিএম তথা ফ্রন্টকেও এখন তেমনই 'সুযোগে'র অপেক্ষায় থাকতে হবে। সঙ্গে বাড়তি মাথায় রাখতে হবে 'জনবিচ্ছিন্নতা' বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকেও।

'দায়' নিতেই হবে, মত 'নাগরিক' সোমনাথের

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রাজ্যে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করে বাম নেতৃত্বকে গুরুত্ব সহকারে আত্মসমীক্ষায় নামতে হবে বলে মত দিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ভুল করে থাকলে তার দায় নিয়ে প্রয়োজনে নেতৃত্বের সরে দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি। তবে সোমনাথবাবুর মতে, কী ভাবে আত্মসমীক্ষা হবে এবং কী ভাবে দায় স্বীকার করা হবে, তা সিপিএম তথা ফ্রন্টের উপরে নির্ভর করছে। সিপিএমের উপরে তাঁর মতামত 'চাপিয়ে' দেওয়ার প্রশ্নই নেই বলেও জানিয়েছেন সোমনাথবাবু।

পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে ক্ষমতা হারানোর পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বেসরকারি চ্যানেলগুলিকে বলেছেন, তিনি একক ভাবে এই বিপর্যয়ের দায় নেবেন না। কমিউনিস্ট পার্টিতে 'ব্যক্তিগত' ভাবে কাউকে দায়ী করার রীতিও নেই। ইতিমধ্যেই সিপিএমের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা জানিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু কারাট বুঝিয়েছেন, ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা নেতাদের ভাবা উচিত নয়। কারাটের বক্তব্যের পরের দিনই নিজের মত ব্যক্ত করেছেন সোমনাথবাবু। তবে তাঁর কথায়, "আমি তো দলের (সিপিএম) কেউ নই। নাগরিক হিসেবে যা মনে হয়েছে, তা-ই বলছি।"

সোমনাথবাবু বুধবার বলেন, "এই বিপর্যয়ের পরে আন্তরিক ভাবে এবং গুরুত্ব সহকারে আত্মসমীক্ষা করতে হবে। ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে হবে। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুল হয়েছিল, নাকি নীতি রূপায়ণে ভুল ছিল, সেগুলো ভাবতে হবে। বাম নেতাদের এগিয়ে এসে এই বিরাট বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে।" তিনি কি নির্দিষ্ট কারও সরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন? সরাসরি জবাব না-দিয়ে সোমনাথবাবু বলেন, "সেটা ওদেরই ঠিক করতে হবে।" তবে আত্মসমীক্ষা রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, সব স্তরেই হওয়া

উচিত বলে প্রাক্তন স্পিকারের মত। তিনি এ-ও মনে করেন, দায় স্বীকার করে প্রয়োজনে সরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরই শুরু হওয়া উচিত ছিল।

পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে সিপিএম কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার পরেও সোমনাথবাবু আস্থা ভোটের সময় লোকসভার স্পিকার-পদ ছাড়তে না-চাওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। সেই ঘটনায় মুখ্য ভূমিকা ছিল সাধারণ সম্পাদক কারাটেরই। তাঁর বক্তব্যের পরেই সোমনাথবাবুর মতামতকে রাজনৈতিক শিবির কারাটের প্রতি ইঙ্গিত বলে ব্যাখ্যা করবে। সেটা বুঝেই সোমনাথবাবু বলেছেন, বাম দলগুলি যে ভাবে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল এবং তার জেরে ভোটে এমন ধুয়ে-মুছে যেতে হল, সেই ঘটনার 'অসহনীয় ব্যথা' থেকেই তিনি তাঁর মতামত ব্যক্ত করছেন। 'রাজনৈতিক সন্ন্যাসে' যাওয়ার কথা এক সময় মনস্থ করে ফেললেও ভোটের আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও তাঁর 'ভ্রাতৃপ্রতিম' গৌতম দেবের ডাকে সাড়া দিয়ে সিপিএমের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। ভোটের ফল বেরোতে সিপিএমের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন না-জানালেও সোমনাথবাবুই প্রথম সেই পদক্ষেপ করেছিলেন।

ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা সোমনাথবাবুর কলকাতার বাড়িতে দেখা করে এলেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত হননি বলেই জানান বর্ষীয়ান বাম নেতা। সোমনাথবাবু বলেন, "বিভিন্ন মহল থেকে এ সব বলা হচ্ছে! আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি।"

৪৪ বাম মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবদের সরাতে নির্দেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

তুন সরকার শপথ নেবে শুক্রবার। তার এক দিন আগে, বুধবার তিন লাইনের চাঁছাছোলা বয়ানে বিদায়ী বামফ্রন্ট সরকারের ৪৪ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ৪৪ জন ব্যক্তিগত সচিব (পিএস)-কেই একযোগে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করল রাজ্য প্রশাসন।

নতুন জমানায় রাজ্য প্রশাসনে যে ঢালাও পরিবর্তনের সূচনা হবে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে রাজ্যের কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার (পার) দফতরের জারি করা ওই নির্দেশে। এই নির্দেশের অর্থ, নতুন সরকারের মন্ত্রীরা আর বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সচিবদের নিয়ে কাজ শুরু করবেন না। তাঁরা পছন্দমতো ব্যক্তিগত সচিব বেছে নেবেন। সেটা একান্ত ভাবে মন্ত্রীদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভরশীল। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় মন্ত্রীদের কার্যালয়ে যে-সব ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) কাজ করতেন, তাঁদের সকলকেই মন্ত্রীদের দফতর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পিএ-রা আদতে অর্থ দফতরের অধীন। সেখান থেকেই তাঁদের বিভিন্ন মন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ করা হয়। তাই বিদায়ী মন্ত্রীদের পিএ-দের সাময়িক ভাবে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে অর্থ দফতরেই।

এ দিনের নির্দেশের জেরে দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে স্থিতাবস্থায় অভ্যস্ত রাজ্য প্রশাসনে, বিশেষত ব্যক্তিগত সচিব এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তাঁদের সঙ্গে সুর মেলান পদস্থ দু'-এক জন আইএএস অফিসারও। অন্য দিকে, প্রবীণ ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের অনেকে ওই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে 'দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রশাসনিক বিচক্ষণতা'র দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেন।

মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সচিবদের বেশির ভাগই ডব্লিউবিসিএস অফিসার। তাঁদের মধ্যে কেউ টানা ২০ বছর, কেউ বা এক যুগ ধরে একই মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করছিলেন। এ দিন দুপুর থেকেই মহাকরণের বিদায়ী মন্ত্রীদের ঘরে ঘরে তাঁদের ব্যক্তিগত সচিবদের কাল, শুক্রবার অপরাহ্ণ থেকে 'কম্পালসরি ওয়েটিং'-এ যাওয়ার নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রত্যেককে সে-দিন দুপুরের পরে 'পার' দফতরে বাধ্যতামূলক ভাবে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। মহাকরণের বাইরে যে-সব বিদায়ী মন্ত্রীর কার্যালয় ছিল, তাঁদের ব্যক্তিগত সচিবদের কাছে এই নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয় ফ্যাক্সবার্তার মাধ্যমে। সব দফতরের সচিবদের তাঁদের বিদায়ী মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবকে শুক্রবার অপরাহ্ণে 'পার' দফতরে রিপোর্ট করার জন্য অবশ্যই 'রিলিজ' করে দিতে বলা হয়েছে।

রাজ্য সরকারের 'পার' দফতরের সচিব ইন্দীবর পাণ্ডে এ দিন বলেন, ব্যক্তিগত সচিবদের কাজের মেয়াদ মন্ত্রীদের মেয়াদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাই মন্ত্রীরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত সচিবেরাও সরে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সরকারি নির্দেশে সেটা স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ে মন্ত্রীরা বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত সচিবেরা এমনিতেই সরে যান। তার জন্য আলাদা নির্দেশ জারি করার প্রয়োজন হয় না। ব্যক্তিগত সচিবেরা না-থাকলে শুক্রবার দুপুরে শপথ নিয়ে মহাকরণে আসার পরে নতুন মন্ত্রীদের নিজের নিজের ঘরে কারা স্বাগত জানাবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পাণ্ডে জানান, মন্ত্রীদের নিজেদের ঘরে স্বাগত জানাবেন দফতরের সচিবেরাই। দিল্লিতেও তা-ই হয়। কোনও কারণে সচিব বাইরে থাকলে সেই দফতরের অন্য কোনও পদস্থ অফিসার মন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

বিদায়ী ব্যক্তিগত সচিবদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা কার হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন? পাণ্ডে বলেন, আর্থিক দায়িত্ব না-থাকলে কার্যভার বুঝিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। তবে ব্যক্তিগত সচিবেরা যে-মন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করতেন, চাইলে সেই দফতরের কোনও পদস্থ আধিকারিকের কাছে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে পারেন।

নিয়োগ থমকে পূর্ব মেদিনীপুরেও

প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা বিপাকে, অনশন হাওড়ায়

নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া ও তমলুক

রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে যাওয়ায় হাওড়া জেলায় বিপাকে পড়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক পদের চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের। সংসদটি বামফ্রন্ট শাসিত। বর্তমানে সংসদের ৩৪ জন সদস্যের মধ্যে ছয় জন বিধায়ক প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রত্যেকেই ছিলেন বামফ্রন্টের। কিন্তু তাঁরা নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। ফলে সংসদ থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সভাপতির কাছে চাপ আসতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সংসদের বৈঠকই ডাকতে পারছেন না সভাপতি।

জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের প্যানেল তৈরি করে তারা সেটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে। প্যানেলটি অনুমোদন করে নিয়োগপত্র ছাড়ার জন্য সংসদকে যে কোনও মুহূর্তে নির্দেশ দিতে পারে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। কিন্তু সেই নির্দেশ মেনে বর্তমান সংসদ আদৌ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগপত্র দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের একাংশের মধ্যেই। এ কথা স্বীকার করে হাওড়া জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি স্মৃতীশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পরাজিত বিধায়কদের যাতে আর বৈঠকে না-ডাকা হয়, সেই জন্য আমার কাছে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছে। সংসদের দৈনন্দিন কাজকর্মও প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় কী করণীয় জানতে চেয়ে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে চিঠি লিখেছি।"

হাওড়া জেলায় প্রায় ১৭০০ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০৯ সালে বিজ্ঞাপন দেয় সংসদ। ২০১০ সালের গোড়ায় হয় লিখিত পরীক্ষা। তার পরে সফল প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়। কিন্তু প্যানেল তৈরির সময়ে ত্রুটি ধরা পড়ায় আরও ৬৫ জন প্রার্থীকে নতুন করে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়। তার পরে প্যানেল চূড়ান্ত করে তা পাঠানো হয় রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে অনুমোদন আসার আগেই ১ মার্চ নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যায়। ফলে পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিতে হয়।

নিয়োগপত্র না-পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ফলপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা সংসদের কার্যালয়ের সামনে গত চার দিন ধরে অনশন করছেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ ছাত্র ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক পিন্টু পাড়ুই বলেন, "সংসদের সভাপতি আমাদের বলেছিলেন ১৩ মে নির্বাচনী আচরণবিধি উঠে যাবে। তার পরেই সফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু আচরণবিধি উঠে যাওয়ার পরেও সভাপতির দেখা মিলছে না। তিনি আমাদের টেলিফোন পর্যন্ত ধরছেন না।" স্মৃতীশবাবু বলেন, "স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত কোনও কাজ করা যাবে না।"

পূর্ব মেদিনীপুরেও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের 'দখল' নিয়ে বিরোধের জেরে প্রায় দু'বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ থমকে রয়েছে। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা এই জেলায়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না-হওয়ায় বামফ্রন্ট নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ 'অবৈধ'—এমন অভিযোগ তুলে ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের পরে আন্দোলনে নামে তৃণমূল। সংসদের চেয়ারম্যান ওঙ্কারপ্রসাদ রায়কে দীর্ঘ দিন অফিসে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষক নিযোগের পরীক্ষার দিন ঘোষণা হওয়ার পরেও তিন দফায় তা বাতিল হয়ে যায়।

পরে অবশ্য সংসদের নির্বাচন হয়। তাতে বামেরাই সামান্য এগিয়ে থাকে। নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে তমলুক কলেজের অধ্যাপক অশোক মিশ্রের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। কিন্তু কলেজের তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পরিচালন সমিতি অশোকবাবুকে কলেজ থেকে ছাড়তে রাজি হয়নি। সেই সঙ্গে সওয়া দু'লক্ষ আবেদনকারীর প্রত্যেককে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট লিখিত পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিও নতুন করে তোলে তৃণমূল প্রভাবিত 'শিক্ষা বাঁচাও কমিটি'। সংসদের বক্তব্য ছিল, অন্য সব জেলার মতোই নির্দিষ্ট যোগ্যতামান থাকা আবেদনকারীদের বেছে নিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৯২৪টি শূন্যপদের জন্য ১৫ গুণ আবেদনকারীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। ফলে পরীক্ষা হয়নি দু'বছরেও।

ভাঙা হল পরিকল্পনা পর্ষদ

অপসারণের ঝুঁকি এড়াতে ইস্তফার ঢল

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রিবর্তনের ধাক্কায় এ বার পদত্যাগের ঢল। এবং তার পাশাপাশি কিছু সরকারি সংস্থা ভাঙার কাজও শুরু।

যেমন ভেঙে দেওয়া হয়েছে রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদ। রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী নিরুপম সেন। বুদ্ধবাবু যে-হেতু পদত্যাগ করেছেন এবং নিরুপমবাবুও আর মন্ত্রী নেই, তাই তাঁদের নেতৃত্বে ওই পর্ষদও আর রাখা যায় না। নতুন সরকার এসে নতুন করে ওই পর্ষদ গঠন করবে।

তৃণমূলের নেতৃত্বে নতুন সরকার এলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁদের সরিয়ে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় বিভিন্ন সরকারি ও স্বশাসিত সংস্থার মনোনীত প্রধানেরা আগেভাগেই ইস্তফা দিতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, প্রায় সব জায়গায় অনুগামীদের বসিয়ে সিপিএম ওই সব সংস্থাতেও এক ধরনের দলতন্ত্র কায়েম করেছিল। তাই অপসারিত হওয়ার ঝুঁকি না-নিয়ে ওই সব সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পদত্যাগ করছেন। প্রকাশ্যে কিছু না-বললেও তাঁদের কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, এ বার ওই সব পদের দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে, তা ঠিক করার অধিকার নতুন সরকারেরই।

ওই সব সংস্থার কর্তাদের উদ্দেশে বুধবার আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিট থেকে এই সংক্রান্ত বার্তা দেওয়া হয়। তবে তার আগেই, মঙ্গলবার থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থা থেকে অনেক মনোনীত সদস্যই সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে ইস্তফা দিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ওই সংস্থারই সহ-সভাপতির পদ থেকে পবিত্র সরকার এবং সচিব-পদ থেকে সনৎ চট্টোপাধ্যায় সরে দাঁড়িয়েছেন। নাট্য আকাদেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও মোহিত সরকার। এর আগে, মঙ্গলবার উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সুবিমল সেন, গণমাধ্যম কেন্দ্রের কৃষ্ণ ধর, নন্দনের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান-পদে তরুণ মজুমদার ইস্তফা দিয়েছেন। নবদিগন্ত শিল্পনগরীর চেয়ারম্যানের পদে সুব্রত সেন এবং ওয়েবলের চেয়ারম্যানের পদে ইস্তফা দিয়েছেন নিখিলরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৩১ মে-র পরে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের অধিকর্তা অতীশ দাশগুপ্ত।

মঙ্গলবারেই রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যানের পদে ইস্তফা দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ সুধাংশু শীল। ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন রাজদেও গোয়ালা।

বুলেটপ্রুফ দু'টি গাড়ি মমতার জন্য

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রাত পোহালেই মুখ্যমন্ত্রী-পদে শপথ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর জন্য দু'টি নতুন সাদা বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর তৈরি রাখছে রাজ্যের পরিবহণ দফতর। মমতা সাধারণত বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করতে চান না। তবু তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় রাজ্য প্রশাসন। তাই নিজেদের মতো করে তারা সব রকম প্রস্তুতি সেরে রাখছে। সেই সঙ্গে মমতার মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে ৩৫টি গাড়ি।

ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করবেন, নাকি বুলেটপ্রুফ নয় এমন গাড়িতেই চলাফেরা করবেন— কলকাতা পুলিশের কর্তারা সেই বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবহণসচিব রাজপাল সিংহ কাহালোঁর সঙ্গে বুধবার দফায় দফায় আলোচনা করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। পরে পরিবহণসচিব বলেন, "আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নই। ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নতুন দু'টি বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডর তৈরি রেখেছি। বাকি বিষয়টি স্থির করার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। এই ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।" অন্য মন্ত্রীদের জন্য অ্যাম্বাসাডর ছাড়াও স্করপিও, কোয়ালিশ, ইণ্ডিগো-সহ নানা ধরনের গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ধোঁয়ার ঘন্টি বিকল করে রেখেই
তামাকু-মৌতাত মহাকরণে

রঞ্জন সেনগুপ্ত ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

রের মধ্যে ধোঁয়া দেওয়া হল, কিন্তু কোনও ঘণ্টা বাজল না। বারবার চেষ্টা করে দেখা গেল, গোটা ব্যবস্থাটাই বিকল! বাজবে কী করে?

মহাকরণ কিংবা স্বাস্থ্য ভবন ধূমপান-নিষিদ্ধ এলাকা। কিন্তু সেখানে আগুন লাগলেও বাজবে না কোনও 'স্মোক অ্যালার্ম'। যন্ত্র আছে, কিন্তু তা বাজে না। আসলে মন্ত্রী-আমলাদের মৌতাতে বাধা দেওয়া হবে না বলেই মহাকরণ এবং স্বাস্থ্য ভবনের ওই যন্ত্রগুলিকে এত দিন ইচ্ছে করে 'বিকল' করে রাখা হয়েছিল। জমানা বদলে যাওয়ায় এখন ওই দুই ভবনকে সত্যিকার অর্থে 'ধূমপান-নিষিদ্ধ' অঞ্চল করে তুলতে গিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে পূর্ত দফতর।

আইন করে সরকারি ভবনে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে তিন বছর আগে। কিন্তু রাজ্যের যে-প্রশাসনিক সদর থেকে এই নির্দেশ জারি হয়েছিল, 'ধূমপান-নিষিদ্ধ' এলাকার তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল সেই মহাকরণকেই! আর এ ব্যাপারে যাদের উপরে নজরদারি ও জরিমানা আদায়ের ভার ন্যস্ত ছিল, সেই স্বাস্থ্য দফতরের সদর স্বাস্থ্য ভবনেও এত দিন নির্বিবাদে চলছিল ধূমপান।

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মহাকরণে নিজের ঘরে বসেই ধূমপান করতেন বলে আমলাদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। আর স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকার সময় সূর্যকান্ত মিশ্র স্বাস্থ্য ভবনে নিজের ঘরে বসে বিড়ি খেতেন। আর তাই ওই দু'টি ভবনই এত দিন বাস্তবে ছিল অবাধ ধূমপানের জায়গা। যদিও কাগজে-কলমে দু'টিই ধূমপান-মুক্ত অঞ্চল।

পালাবদলের পরে এখন মহাকরণ ও স্বাস্থ্য ভবনকে রাতারাতি ধূমপান-মুক্ত করে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। নয়া জমানায় ওই দু'টি প্রশাসনিক ভবনে 'পরিবর্তন' কতটা কার্যকর হয়, তা দেখতে পূর্ত দফতরের কর্মী-অফিসারদের পাশে এখন নিত্যদিন ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক কর্মীরা।

মহাকরণে মন্ত্রীদের ঘরে যে 'স্মোক অ্যালার্ম' আছে, সংরক্ষিত এলাকায় নিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী ভবেশ দত্ত এত দিন তা জানতেনই না। তিন বছর আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের আইন মোতাবেক 'স্মোক ডিটেক্টর' বসানো হয়েছে মহাকরণে। কিন্তু সেগুলি কস্মিনকালেও বাজেনি। ধূমপান করলে তো নয়ই, এমনকী আগুন লাগার পরেও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি ওই সব যন্ত্রের। তার থেকেও বিস্ময়কর ব্যাপার হল, মহাকরণের স্মোক অ্যালার্মগুলিকে সক্রিয় করার কোনও চেষ্টাই হয়নি এত দিন।

রাজ্যে প্রথম যে-সরকারি ভবনকে ধূমপান-বর্জিত বাড়ি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি হচ্ছে সল্টলেকের পরিবেশ ভবন। ১৯৯৪ সালে ওই বাড়িকে ধূমপান-মুক্ত রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তখনকার চেয়ারম্যান দেবকুমার বসু পদত্যাগ করেছিলেন। সেই সময়কার পরিবেশমন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় পরিবেশ ভবনে তাঁর ঘরে বসে সিগারেট খেতেন। তাঁকে নিরস্ত করতে না-পেরেই ইস্তফা দেন দেবকুমারবাবু। মানববাবুর কথায়, "আমি অ্যান্টিচেম্বারে বসে সিগারেট খেতাম। নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। কারণ, নেশাটা তো একটা দুর্বলতা। নিজেরা সচেতন না-হলে আইন করে এটা বন্ধ হবে না।" তবে আড়াই বছর হল, তিনি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন মানববাবু।

মহাকরণে মন্ত্রীদের ঘরে স্মোক অ্যালার্ম রয়েছে। সেখানে ধূমপান করলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে সেন্ট্রাল গেটে। কিন্তু সেন্ট্রাল গেটের রক্ষীরা বলছেন, গত তিন বছরে সেই অ্যালার্ম এক বারও বাজেনি। অ্যালার্ম থাকা সত্ত্বেও তা বাজে না।

কেন?

পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, "মহাকরণের ঘরগুলি উঁচু উঁচু। নিয়ম অনুযায়ী ১০-১২ ফুটের মধ্যে স্মোক ডিটেক্টর বসানোর কথা। কিন্তু সেখানে অনেক বেশি উচ্চতায় সেগুলি লাগানো হয়েছে। তাই মন্ত্রীরা একের পর এক সিগারেট খেলেও ধোঁয়ার অ্যালার্ম বাজে না। দমকল দফতরকে জানিয়েও কাজ হয়নি।" আসলে মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের ধূমপান যে নিষিদ্ধ করা যাবে না, তা বুঝেই চোখে ধুলো দেওয়ার মতো এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল মহাকরণে।

এ বার তা হলে কী হবে?

অজিতবাবু মাথা চুলকে বলেছেন, "কিছু একটা তো ভাবতেই হবে।" তবে মহাকরণেরই খবর, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এ ব্যাপারে বেশ কয়েক বার বৈঠক করেও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি পূর্তসচিব।

আর স্বাস্থ্য ভবনে এত দিন অ্যালার্ম বাজেনি কেন?

"এত দিন অ্যালার্ম বাজানো যেত না। বাজাতে গেলেই আপত্তি উঠত। তাই গোটা ব্যবস্থাটাই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল," বললেন স্বাস্থ্য ভবনের কেয়ারটেকার বিমলচন্দ্র দাস। তিন দিনের মধ্যে সেখানে অ্যালার্ম বাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে বলে নির্দেশ জারি করেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী। স্বাস্থ্য ভবনের এক পাশে তৈরি করতে হবে 'স্মোকিং জোন'। কী ভাবে তা করা সম্ভব, বুঝতে পারছেন না বিমলবাবু।

এত দিন স্বাস্থ্য ভবনকে কেন প্রকৃত অর্থে 'ধূমপান নিষিদ্ধ' অঞ্চল করে তোলা যায়নি, তার কারণ খুঁঁজতে গিয়ে অধিকাংশ কর্মীই বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দুষছেন। তবে সদ্যপ্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য অন্য রকম। বুধবার তিনি বলেন, "সবাই এটা বলে। অন্য কারও কথা বলতে পারব না। আমি কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনে সিগারেট খেতাম না।" বরং তিনি যে ধূমপান ঠেকানোর জন্য কিঞ্চিৎ চেষ্টা চালিয়েছিলেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, "অনেক অফিসারকে সিঁড়িতে সিগারেট খাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরেছি। সতর্কও করেছি। কিন্তু ওঁরা কথা শুনতেন না। অ্যালার্ম বাজানোর কথাও অনেক বার বলেছি। কিন্তু নানা প্রযুক্তিগত অসুবিধা দেখিয়ে ওঁরা আর শেষ পর্যন্ত সেটা করতেন না।"

প্রায় তিন বছর আগে, ২০০৮-এর ২ অক্টোবর থেকে 'সিগারেটস অ্যাণ্ড আদার টোবাকো প্রোডাক্টস অ্যাক্ট ২০০৩'-এর আওতায় প্রকাশ্যে ধূমপান নিষেধের আইন বলবৎ হয় সারা ভারতে।

প্রথম প্রথম অল্পস্বল্প তৎপরতা দেখিয়েছিল রাজ্য সরকার। মহাকরণ-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে নির্দেশিকাও টাঙানো হয়। কিন্তু তার পরেই সব চুপচাপ। প্রকাশ্যে দেদার সিগারেট খাওয়া চললেও তা নিয়ে কোনও 'অভিযোগ' দায়ের করা হয় না। জরিমানা করারও বালাই নেই কেন?

তামাক সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজ্যের নোডাল অফিসার গঙ্গাধর মহাপাত্রের আক্ষেপ, "২০১০-এর নভেম্বরে এই বিষয়ে চালান ছাপিয়ে সব সরকারি দফতরে বিতরণ করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ওই চালানের সাহায্যেই তাঁদের জরিমানা করার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত জরিমানা বাবদ এক টাকাও সংগ্রহ হল না!"

শাসনের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, কড়া নির্দেশ মুকুলের

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

শাসনে মজিদ মাস্টারের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নামে দলের কর্মী-সমর্থকরা যা করেছে, তা বরদাস্ত করা হবে না বলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক নির্মল ঘোষকে সাফ জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়।

বুধবার বিধানসভা ভবনে মুকুলবাবু নির্মলবাবুকে বলেন, "শাসনে একটা ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে!" নির্মলবাবু বলার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা পুলিশকে বলেছেন, কোনও রং না দেখে ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের যেন গ্রেফতার করা হয়। যা শুনে মুকুলবাবু পাল্টা বলেন, "পুলিশের কাজ পুলিশ করুক! আমাদের পুলিশকে কিছু বলার দরকার নেই। আপনি দলের ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করুন। দলনেত্রী কিন্তু এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করবেন না। স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, এমন ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে!" মুকুলবাবু ওই কথা বলার সময়ে সেখানে আরও অনেক দলীয় বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। সকলের সামনেই নির্মলবাবুকে ওই নির্দেশ দিয়ে মুকুলবাবু দলের সমস্ত বিধায়ক এবং প্রথম সারির নেতাদের কাছে 'বার্তা' পাঠাতে চেয়েছেন বলেই তৃণমূলের অন্দরের খবর। তৃণমূল সূত্রের আরও বক্তব্য, মুকুলবাবু যা বলেছেন, তা দলনেত্রী তথা ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অনুমোদন' সাপেক্ষেই। তাঁরা যে সত্যিই 'বদল' চান, 'বদলা' নয়, সেই বার্তাই মমতা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। সেই কারণেই তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের 'কড়া হাতে' নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবারই হাজারখানেক মানুষের হামলার মুখে পড়ে শাসন-ছাড়া হয়েছে মজিদের পরিবার। অভিযোগ, ওই জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই কিছু কর্মী-সমর্থক। মজিদের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি নিয়ে তাঁরা তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের উপরে চড়াও হন। হামলা হয় মজিদের ভাইয়ের বাড়িতেও। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মজিদের পরিবারকে উদ্ধার করে বারাসতের সিপিএম কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়। বস্তুত, শুধু মজিদ

মাস্টারের বাড়ি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই সিপিএম নেতাদের বাড়ি এবং দলের কার্যালয়ে হামলা হচ্ছে। বামফ্রন্ট নেতৃত্বের অভিযোগ, 'বদলা নয়, বদল চাই' স্লোগান দেওয়া তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাই ওই হামলা করছে। হামলা বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে আর্জি জানান ফ্রন্ট নেতৃত্ব।

পক্ষান্তরে, তৃণমূলের ব্যাখ্যা, ওই ঘটনাগুলি হামলা নয়, সিপিএমের মজুত করা বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে 'জনগণের' অভিযান। এত দিন সিপিএম রাজ্যের বহু জেলাতেই দলীয় কার্যালয়ে এবং নেতাদের বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র মজুত করে রেখেছিল। অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেনি। নির্বাচনের আগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান কিছুটা হলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। এখন বিপুল জনাদেশ নিয়ে মমতা ক্ষমতায় আসার ফলে জনগণই উৎসাহিত হয়ে সে সব উদ্ধারে নেমেছে। যদিও বামফ্রন্ট নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের কোনও কার্যালয় বা নেতার বাড়িতে অস্ত্র নেই। তৃণমূল অস্ত্র 'গুঁজে' দিয়ে উদ্ধারের নাটক করছে। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভাবী মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজি-কে দ্রুত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করার নির্দেশ দেন। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে কিনা, সে ব্যাপারেও তাঁকে নজর রাখতে বলেন। কোনও ব্যাপারে সমস্যা হলে তা সরাসরি তাঁকেই জানানোর নির্দেশও ডিজি-কে দিয়েছেন মমতা।

মুকুলবাবু এ দিনই দলের সদ্য নির্বাচিত বিধায়কদের শপথ নেওয়ার আগে লাভজনক প্রতিষ্ঠান (অফিস অফ প্রফিট) থেকে পদত্যাগের নির্দেশ পাঠিয়েছেন। পরিষদীয় দলের নেত্রী হওয়ার পরই মমতা জানিয়েছিলেন, শপথ নেওয়ার আগে তাঁদের বিধায়কদের লাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সেই নির্দেশই মুকুলবাবু ফের এ দিন বিধায়কদের জানিয়েছেন দলের জেলা সভাপতিদের মাধ্যমে। তিনি বলেন, "যাঁরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাঁরা বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে স্ব স্ব পদে ইস্তফা দিয়ে আসবেন।" মুকুলবাবু জানান, আগামী সোমবার বিধানসভায় বিধায়করা শপথ নেবেন। তিনি নিজে সে দিন বিধানসভায় থাকবেন এবং শপথ নেওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন, বিধায়করা ওই নির্দেশ পালন করেছেন কিনা।

নির্দল, বিজেপি কাঁটাই চারটি আসনে জয় এনে দিল বামেদের

নির্মল বসু • বসিরহাট

বামফ্রন্টের ভরাডুবির বাজারেও উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনের মধ্যে চারটি আসন ধরে রেখেছে তারা। কোথাও বিজেপি, কোথাও পিডিসিআই কিংবা কোথাও আবার নির্দল 'কাঁটা'— তাদের এই সুবিধা করে দিয়েছে। ফলাফলের অঙ্কে সে কথা স্পষ্ট।

বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যাক। অষ্টম বামফ্রন্ট গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলেও আট বার বিধানসভা ভোটে জিতে রেকর্ড করেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। বিজেপিকে নিয়ে ভোটের আগে থেকেই আশঙ্কা ছিল তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যে কারণে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তিনি বারবারই আবেদন রেখেছেন, বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য। সিপিএমই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে ভোট কাটাকাটির জন্য তাদের দাঁড় করিয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মমতা। বিজেপি এ বার রাজ্যের ২৮৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। একটি আসনে ছিল বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভোট কেটে বাম প্রার্থীকে জয়ে 'সাহায্য' করেছে তারা।

এই কেন্দ্রে বিজেপির থেকেও বড় 'ফ্যাক্টর' হয়েছেন নির্দল হিসাবে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ কংগ্রেসের প্রবীন নেতা অসিত মজুমদার। সিপিএম প্রার্থী এখানে পেয়েছেন ৬৬,৯১৪টি ভোট। তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামীর প্রাপ্ত ভোট ৫৪,৫১৪। আর অসিতবাবু পেয়েছেন ৫২,৪৮৪টি ভোট। ভোট কাটাকাটির অঙ্কে সহজ জয় এসেছে নারায়ণবাবুর পক্ষে। বামবিরোধী ভোট এক দিকে গেলে তাঁর পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী।

জয়ের রসায়ন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নারায়ণবাবু নিজেও বলছেন, "প্রথমে ডানপন্থী অর্থাৎ কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে ভোট ভাগ করে দাও। তাতেও না হলে বিজেপি কিংবা অন্য কাউকে প্রার্থী করে লড়াইয়ের ময়দানে পাঠাও।" প্রবীন সিপিএম নেতা অবশ্য এর পাশাপাশি 'বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবিড় প্রচারের' সঙ্গে 'ভুল স্বীকার'-এর বামপন্থী দাওয়াইয়ের কথাও বলেন। অতীতেও এই কেন্দ্রে ভোট কাটাকাটির সুবাদে নারায়ণবাবুর জয় সহজ হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি।

বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মোস্তাফা বিন কাসেম পেয়েছেন ৭৫,৫৭৫টি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী সর্দার আমজাদ আলির দৌড় শেষ হয়েছে ৭১,৫৩২টি ভোট পেয়ে। সিপিএম প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ৩,৯৪৩। কিন্তু বিজেপি এই কেন্দ্রে পেয়েছে ৯,৩১৪টি ভোট। পিডিসিআই প্রার্থী পেয়েছেন ৭,৩২৭টি ভোট। বামবিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সুবাদে আখেরে লাভ হয়েছে সিপিএম প্রার্থীর। বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে গৌতম দেবের নাম এক রকম ঠিক হয়েই ছিল বলে ধরে নেন এখানকার বাম নেতা-কর্মীরা। সেই মতো দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। গৌতমবাবু কয়েকটি কর্মিসভাও করেন। বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন মোস্তাফা বিন কাসেম। তা নিয়ে দলের অন্দরে কিছুটা সমস্যা হলেও দ্রুত তা মিটিয়ে প্রচারে নামে বাম শিবির। অন্য দিকে, সর্দার আমজাদ আলিকে এই কেন্দ্রে মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল এবং কংগ্রেসের একাংশ। বলাইবাহুল্য, তা থেকে বাড়তি ফায়দা তুলেছে সিপিএম।

সন্দেশখালিতেও বিজেপি-র 'ভোট কাটা'র সুবাদেই জয়ী হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দার। তিনি পেয়েছেন ৬৬,০২৩টি ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৬১,৬৪৯টি ভোট। জয়ের ব্যবধান ৪,৩৭৪। বিজেপি প্রার্থী এখানে ১৭,১৭৫টি ভোট পেয়ে সিপিএমের জয়ের পথ মসৃণ করেছেন।

হিঙ্গলগঞ্জে সিপিআই প্রার্থী তৃণমূলকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন মাত্র ১,০১৫ ভোটে। বিজেপি এই আসনে পেয়েছে ৭,৫৩৩টি ভোট।

সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ— দু'টি এলাকায় আয়লায় প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছিল। ত্রাণ এবং পুনর্বাসন নিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ এখনও আকাশছোঁয়া।

২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি গিয়েছিল বামবিরোধীদের হাতে। সন্দেশখালি এবং হিঙ্গলগঞ্জও ব্যতিক্রম নয়। ফলে, ত্রাণের টাকা বিলি বা পুনর্বাসন নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপরেই মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে। যা ভোটের আগে সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি তারা। স্বভাবতই বামশিবির প্রচারে এই বিষয়টিকে এনে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। যদিও বিরোধী শিবির প্রচারে বলেছিল, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার ফলেই ত্রাণের বিলির কাজে সমস্যা হয়েছে।

এই চারটি আসনে বামেদের জয় নিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জিতেন মণ্ডল অকপটেই বললেন, "কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট ভাগাভাগিতে আমাদের সুবিধা হয়েছে। বিজেপি ভোট কাটাতেও আমাদের লাভ হয়েছে।" একই সঙ্গে তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, প্রচারে খামতি না থাকাও বাম প্রার্থীদের জয়ের বড় কারণ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বামবিরোধী শিবিরের মন কষাকষিও বামেদের সুবিধা করে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা হাবরার নবনির্বাচিত বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, "ওই চারটি আসনে আমরা ঠিক মতো নজর দিতে পারিনি।" দলের তরফে হারের কারণ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, সাদা চোখের হিসেবে, ভোট কাটাকাটিই এর মূল কারণ বলে ডান-বাম দু'পক্ষই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে।

সংখ্যালঘু ও মতুয়া ভোটেই সাফল্য, বলছে তৃণমূল

সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ

০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন গোটা রাজ্যে বামেদের জয়জয়কার হলেও ব্যতিক্রম ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমা। মহকুমার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র বনগাং, বাগদা ও গাইঘাটায় সে বার জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে বনগাঁ এবং বাগদা কেন্দ্রটি বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। বনগাঁ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের ভূপেন শেঠ। ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক দিনক মধ্যেই তিনি মারা যান। বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে তৃণমূলকে উপ নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে জয় ছিনিয়ে আনতেই হত। শেষ পর্যন্ত উপ নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের সৌগত রায়।

এ বার বনগাঁ আসনটি ভেঙে বনগাঁ উত্তর এবং বনগাঁ দক্ষিণ দু'টি কেন্দ্র হওয়ায় আসন সংখ্যা বেড়ে হয় চার। বামেদের প্রত্যাবর্তনের স্লোগানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পুরনো আসন ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন আসনটি জিততে মরিয়া ছিল তৃণমূল। এ বার আসনগুলিতে শুধু যে তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন তাই নয়, ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এ বার বিধানসভা ভিত্তিক ফলে জয়ের ব্যবধানও বেড়েছে তাঁদের। লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী গোবিন্দ নস্কর এগিয়েছিলেন ১৭ হাজার ৯৯৪ ভোটে। এ বার ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জয়ী হয়েছেন ২৩ হাজার ৮৮২ ভোটে। বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়েছিল ১৮ হাজার ৭৯১ ভোটে। এ বার ওই কেন্দ্রে ২২ হাজার ৪১ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুরজিৎ বিশ্বাস। একইরকম ফল দেখা গিয়েছে গাইঘাটা এবং বাগদা কেন্দ্রে ক্ষেত্রেও। বাগদা কেন্দ্রে লোকসভায় তৃণমূল এগিয়েছিল ১৩ হাজার ১৯১ ভোটে। এ বার সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী উপেন বিশ্বাস জিতেছেন ২১ হাজার ৬৬ ভোটে। গাইঘাটায় লোকসভায় তৃণমূল ১৮ হাজার ৮০২ ভোটে এগিয়েছিল। এ বার বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর জিতেছেন ২৫ হাজার ৬৯৬ ভোটে।

জয়োল্লাসের সেই ছবি ।--নিজস্ব চিত্র।

বনগাঁ মহকুমার এই চারটি আসনের পাশাপাশি লোকসভার ফলের নিরিখে হাবরা ও অশোকনগর কেন্দ্র থেকেও এ বার অনেক বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং ধীমান রায়।

লোকসভা ভোটের চেয়েও এ বার বিধানসভায় ভাল ফলের কারণ?

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংখ্যালঘু এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ক তাঁদের অনুকূলে এসেছে। পাশাপাশি লোকসভায় সাফল্যের পরে লাগাতর সিপিএম বিরোধী আন্দোলন করে যাওয়া। যেখানে বামেদের সভা হয়েছে, সেখানেই পাল্টা সভা করা। জেলা পরিষৗদের 'দুর্নীতি'-র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভামঞ্চে নিয়ে আসাটাও জেলায় তৃণমূলের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব। যার প্রমাণ জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রে ফব প্রার্থী হরিপদ বিশ্বাসের পরাজয়। মতুয়া সম্প্রদায়ের ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে বামেদের যোগাযোগের মূল 'সেতু' ছিলেন হরিপদবাবু। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তাঁর পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ যে ওই কেন্দ্রের মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট নিজের অনুকূলে আনতে না পারা। অনন্ত তৃণমূল সেটাই মনে করে। বনগাঁ মহকুমার চারটি এবং হাবরা, ্‌েশাকনগর সর্বত্রই বিপুল সংখ্যক মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ছিল। এই ছ'টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, "বনগাঁ মহকুমা সহ গোটা জেলায় সংখ্যালঘু ভোট ২৪ শতাংশ এবং মতুয়া ছিল ২১ শতাংশ। সংখ্যালঘু ভোটের আড়াই শতাংশ এবং মতুয়া ভোটের মাত্র দেড় শতাংশ আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। " এর পাশপাশি কংগ্রেসকেও এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়ে তিনি জানান, বনগাঁ মহকুমায় এবং হাবরা ও অশোকনগরে কংগ্রেসের যেখানে যেটুকু শক্তি ছিল তাই নিয়েই তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীদের জেতাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

অভিযুক্ত তৃণমূল

হাড়োয়া, মিনাখাঁয় সিপিএম কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট

নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট

নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পরে তৃণমূল নেত্রী দলীয় কর্মীদের সংযত থাকতে এবং 'বদলার' মনোভাব ত্যাগ করতে বললেও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সেই মনোভাব দেখা যাচ্ছে না বলে সিপিএমের অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে জেলা সিেিপম নেতৃত্বের অভিযোগ। হাড়োয়া, মিনাখাঁ-সহ বিভিন্ন এলোকায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের উপরে অত্যাচার শুরু করেছে তৃণমূলের কর্মীরা। যদিও তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে পালাবদলের পরে বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া ও মিনাখাঁ থানা এলাকায় রাজনৈতিক হানাহানি বেড়ে যাওয়ায় সেখানে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ ইতিমধ্যেই ওই দুই এলাকায় তাদের দলের বেশ কিছ কর্মী-সমর্থকেরা বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট চালানো হয়েছে। অত্যাচারে হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না মহিলারাও। সিপিএম করার অপরাধে বহু মানুষকে মোটা টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তৃণমূলের অত্যাচারের ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালাচ্ছেন।

অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ভোটে জেতার পরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সামান্যই। সিপিএম এটাকে বড় করে দেখাতে চাইছে। দলের সব কর্মীকেই বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার তানিয়া চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যরা হাড়োয়া এবং মিনাখাঁর গ্রামে গিয়ে তৃণমূলের অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, গোলমাল বাধানোর জন্য ইতিমধ্যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোলমাল এড়াতে সর্বত্রই টহলদারি শুরু হয়েছে।

সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে হুমকির নালিশ বাদুড়িয়ায়

নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট

খুনের চেষ্টার অভিযোগ তো ছিলই, এ বার বাদুড়িয়ার এক সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুললেন তাঁর প্রতিবেশী এক তৃণমূল সমর্থক। কাটিয়াহাট-ভোজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস নামে ওই তৃণমূল সমর্থক বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ১৩ মে বিকালে গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। সেই সময়ে বিশ্বনাথবাবুকে ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সিপিএম নেতা রবীন দাসের বিরুদ্ধে। রবীনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে।

প্রসঙ্গত, বাদুড়িয়া কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী জিতেছেন। ভোটের কিছু দিন আগে সিপিএম ছেড়ে সপরিবারে তৃণমূলের যোগ দেন বিশ্বনাথবাবু। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানান, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য ওই সিপিএম নেতা সে দিন তাঁকে হুমকি দেন। প্রতিবাদ করায় তাঁর নামে মোবাইল চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ভোজালির কোপ মারেন পেটে। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, "সে দিন আমাকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন রবীনবাবু। এখন আবার অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমার পরিবারকে ফোনে হুমকি দিচ্ছেন।" এ ব্যাপরে তিনি ফের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। রবীনবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, মাস খানেক আগে তাঁর মোবাইল হারিয়ে যায়। এ নিয়ে ১৩ মে দুই পরিবারের মধ্যে বচসা বাধে। সেই সময়ে বিশ্বনাথবাবু তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেন বলে রবীনবাবুর। তিনি বলেন, "ওই ঘটনার আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম মাত্র। এর বেশি কিছু জানা নেই। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি কাউকে হুমকি দিইনি।"

কি তৃণমূল নেতা তুষার সিংহের অভিযোগ, ভোটে পরাজয়ের পরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে সিপিএম। সিপিএম এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

টুকরো খবর

জল নেওয়া নিয়ে সিপিএম-তৃণমূল মারপিট 
নিজস্ব সংবাদদাতা • নামখানা

নলকূপ থেকে জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংষর্ষে জখম হলেন ১১ জন। আহতদের মধ্যে দু'দলেরই লোকজন রয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার চন্দনপিড়ি গ্রামে। দু'পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দনপিড়ি গ্রামে সোমবার রাতে কয়েক জন মহিলা নলকুপে জল নিয়ে গিয়ছিলেন। জল নেওয়ার সময় হঠাৎই তাঁদের মধ্যে বচসা বেধে যায়। বচসা থেকে বিষয়টি গড়িয়ে যায় সিপিএম-তৃণমূলের রাজনীতিতে। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি কুমারেশ পণ্ডার দাবি, সিপিএমের কিছু সমর্থক জোর করে জল নেওয়ার সময় আমাদের দলের সমর্থকদের মারধর করে। তাতে ৬ জন জখম হন। অন্যদিকে সিপিএমের নামখানা জোনাল কমিটির সম্পাদক রামপ্রসাদ বেরার পাল্টা দাবি, ওরাই জল নিতে এসে তাঁদের দলের কিছু সমর্থককে মারধর করে। তাতে জখম হয়েছেন ৫ জন।


বসিরহাটে গ্রেফতার পাঁচ সশস্ত্র দুষ্কৃতী 
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট

ডাকাতির উদ্দেশে জড়ো হওয়া পাঁচ সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে বসিরহাটের ময়লাখোলা বাসস্ট্যাণ্ড থেকে ওই পাঁচ জনকে ধরা হয়। ধৃতদের নাম সঞ্জিত মণ্ডল, তপন দেবনাথ, রুহুল আমিন ওরফে ন্যাড়া, সুজন রায় এবং মিঠুন মণ্ডল। প্রথম তিন জনের বাড়ি বসিরহাটেই। বাকি দু'জন বাংলাদেশি। তাদের কাছ থেকে তরোয়াল, ভোজালি ও রড উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে বসিরহাটের মেরুদণ্ডী গ্রামে দু'টি বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। একটি বাড়িতে মহিলাদের উপরে অত্যাচার করে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে রুহুল আমিনের নাম। জানতে পারে, তার দলে কয়েক জন বাংলাদেশি রয়েছে। ডাকাতির পরে মালপত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালাত। সঞ্জিত এবং তপন অবশ্য দিনের বেলা সঙ্গীদের নিয়ে কখনও বসিরহাট স্টেশন চত্বর, কখনও টাউল হল চত্বর, কখনও রেজিিিষ্ট্র অফিস সংলগ্ন এলাকায় নকল পয়সাকে পুরনো দিনের মুদ্রা হিসাবে মোটা টাকায় বিক্রি করত। মঙ্গলবার গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির উদ্দেশে কয়েক জন দুষ্কৃতী ময়লাখোলা বাসস্ট্যাণ্ডে জড়ো হয়েছে। পুলিশ দেখে বাকিরা পালালেও ধরা পড়ে যায় ওই পাঁচ জন।


আধা সামরিক বাহিনী রেখে দেওয়ার আর্জি ডিএম, এসপি-র 
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

জেলার বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনোত্তর গোলমাল নিয়ন্ত্রণে আধা সামরিক বাহিনী নির্ধারিত দিনের চেয়ে আরও কিছুদিন রেখে দেওয়ার আর্জি জানাল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ-প্রশাসন। বুধবার বিকেলে জেলার সদর বারাসতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন জেলাশাসক বিনোদকুমার এবং জেলার পুলিশ সুপার রাহুল শ্রীবাস্তব। পুলিশ সুপার বলেন, "শাসন-সহ জেলার ন'টি জায়গায় ১০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। আগামী ২৩ মে তাদের চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ওই বাহিনীকে আরও কিছু দিন রেখে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।" তিনি আরও জানান, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে যে তাঁরা থানায় অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছেন। সে জন্য ই-মেল এবং ফোনে অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কেউ অভিযোগ জানালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মজিদ মাস্টারের বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানান, শাসনে মজিদ মাস্টারের বাড়িতে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।


প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ফলতায় 
নিজস্ব সংবাদদাতা • ফলতা

বুধবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ফলতার রামলকা গ্রামে এক প্রৌঢ়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁর নাম সাধন মালিক (৫০)। এ দিন সকালে রান্নাঘরে গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগানো অবস্থায় সাধনাবুকে ঝুলতে দেখেন বাড়ির লোকজন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরেই সাধনবাবু গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।


অভিযোগ, পাল্টা দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিভিন্ন এলাকার হাজার খানেক দলীয় কর্মী, সমর্থক ঘরছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের নেতারা। বুধবার আলিপুরে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে জেলা বামফ্রন্টের সাত জনের এক প্রতিনিধি দল এ নিয়ে স্মারকলিপিও জমা দেয়। জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, সোনারপুর, বিষ্ণুপুর, ভাঙর, ক্যানিং, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ-সহ বিভিন্ন এলাকার হাজার খানেক বামফ্রন্ট কর্মী, সমর্থককে তৃণমূলের লোকজন হয় পিটিয়ে, না হয় শাসিয়ে ঘরছাড়া করেছে। পাল্টা অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "জেলার ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রের ২৭টিতে তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু যেখানে সিপিএম জিতেছে সেখানেই সংঘর্ষ হচ্ছে। খুন হচ্ছেন আমাদের কর্মীরা।"


ওষুধের গুদামে চুরি চুঁচুড়ায়
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া

জানলার গ্রিল কেটে চুঁচুড়ার কাপাসডাঙার একটি গুদাম থেকে লক্ষাধিক টাকার ওষুধ এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটল। বুধবার সকালে মালিক গুদামটি খুলে চুরির ঘটনা টের পেয়ে পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনার তদন্তে আসে। তাদের অনুমান, মঙ্গলবার গভীর রাতে চুরি হয়েছে। গুদাম-মালিক জানান, দামি ওষুধ কিছুই ছাড়েনি দুষ্কৃতীরা। কিছু কম দামি ওষুধ শুধু পড়ে ছিল। তা ছাড়াও, পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, ক্যাশবাক্স খুলেও কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।


দু'টি অপমৃত্যু

বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। বুধবার দুপুরে, ঘোলার বিলকান্দা ১ পঞ্চায়েতের যুগবেড়িয়া ভাটপাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আলেয়া বিবি (৩৬) নামে ওই মহিলা এ দিন মাঠে তাঁর স্বামী শেখ খাতিব আলিকে খাবার পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। সে সময়ে বৃষ্টির সঙ্গে বাজ পড়তে থাকে। গাছের নীচে আশ্রয় নিতে ওই মহিলা ছুটতে শুরু করলে তাঁর উপর বাজ পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। অন্য দিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গঙ্গায় স্নান করতে নেমে মৃত্যু হল এক কলেজ ছাত্রের। পুলিশ জানায়, আড়িয়াদহের বাসিন্দা তন্ময় দত্ত (২০) স্থানীয় ঘাটে বন্ধুদের সঙ্গে স্নানে নেমে তলিয়ে যান। গভীর রাতে ঘাটের কাছ থেকে তন্ময়ের দেহ উদ্ধার হয়।

শান্তি বজায় রাখুন, কেতুগ্রামে ঘুরে বলছেন শেখ সাহানেওয়াজ

সৌমেন দত্ত • কেতুগ্রাম

কেতুগ্রাম-বিজয় হয়ে গিয়েছে। এখন শান্তিরক্ষাই প্রধান কাজ।

"মানুষ আমাদের উপরে ভরসা করেছেন, তাঁদের শান্তিতে রাখা এখন আমাদের দায়িত্ব," বলছেন কেতুগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের নবনির্বাচিত বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ।

২৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সাহানেওয়াজ হারিয়েছেন বাবা ও দুই ভাইকে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস মানুষের কতটা ক্ষতি করতে পারে তা তাঁর অজানা নয়। বীরভূমে নানুরের পাপুড়ি গ্রামের শহিদ পরিবারের সদস্য সেই সাহানেওয়াজকেই কেতুগ্রামে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল তৃণমূল। সেই কেতুগ্রামে, যেখানে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন অন্তত ২০-২২ জন। গ্রামছাড়া হয়েছেন অনেকে।

শেখ সাহানেওয়াজ। নিজস্ব চিত্র।

টানটান লড়াইয়ের পরে শেষমেষ ১৫৯৯ ভোটে জিতেছেন সাহানেওয়াজ। কাটোয়া কলেজের গণনাকেন্দ্রে ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার পরে তাই 'সৌজন্যের' কথাই বলেছেন তিনি। নির্বাচনী এজেন্ট তথা কেতুগ্রাম ১ কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি বিজয় মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে বসেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। পরাজিত সিপিএম প্রার্থী সৈয়দ আবুল কাদের এগিয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলালেন। বললেন, "যে কোনও ব্যাপারে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।" হাসিমুখে মাথা নাড়লেন সাহানেওয়াজ, "দলগত ভাবে আমাদের বিরোধিতা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ব্যক্তিগত সৌজন্যবোধ তো থাকতেই পারে।"

শুক্রবার ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বর্ধমান-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক হানাহানি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক'দিন আগেও সন্ত্রাসের কারণে সংবাদ শিরোনামে থাকা কেতুগ্রামে বড় কোনও অশান্তি হয়নি। সাহানেওয়াজের বিশ্বাস, রাজনৈতিক সৌজন্যই কেতুগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে সে কথা বলেও বেড়াচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার কান্দরায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে সাফ জানিয়েও দিয়েছেন, কোথাও ঝামেলা করা চলবে না। কারও কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না। শান্তি বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব তাঁদেরই।

গত বিধানসভা ভোটে তো বটেই, লোকসভা নির্বাচনেও কেতুগ্রামে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়েছিল সিপিএম। সেই ব্যবধান টপকে এ বার তৃণমূল সামান্য ভোটে জিতেছে। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তির বিচারে দুই পক্ষই কার্যত সমানে-সমানে। সে কথা তুলে সাহানেওয়াজ বলেন, "অশান্তি তো এক তরফা হয় না। আশা করব, সিপিএমও কোনও প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করবে না।" পাশাপাশি তিনি পাখির চোখ করতে চাইছেন উন্নয়নকে। তাঁর কথায়, "নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করতে গিয়ে দেখেছি, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বহু জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।"

কেতুগ্রাম থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, গণনার পর থেকে তেমন কোনও অশান্তির খবর নেই। তবে সিপিএমের অভিযোগ, স্থানীয় পালিটা, দধিয়া, বেনীনগর গ্রামে তাদের বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থককে মারধর করা হয়েছে। দলের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা বলেন, "ওঁরা মুখে শান্তির বার্তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। আর পিছন থেকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।"

বস্তুত, কয়েকটি জায়গায় দলের কর্মীরা যে গোলমালে জড়িয়েছেন, তৃণমূল নেতৃত্বের কাছেও সে খবর আছে। সে প্রসঙ্গে সাহানেওয়াজের সুরেই কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি রত্নাকর দে-ও বলেন, "সমস্ত কর্মীদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও রকম বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খল কর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই নেত্রীর নির্দেশ।"

'নির্দেশ' যথাযথ পালন করতে যে স্থানীয় নেতৃত্বের সদিচ্ছাও লাগে, তা সম্ভবত তাঁদের মাথায় রয়েছে।

ইস্তফা দিলেন সিপিএম প্রধান, দল অন্ধকারেই

নিজস্ব সংবাদদাতা • মঙ্গলকোট

মাত্র ১২৬ ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্রে জয় পেয়েছে সিপিএম। এই সামান্য ব্যবধানে জয়কে কার্যত পরাজয় বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ।

তৃণমূলও এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়ার তোড়জোড় করছে। এই অবস্থায় দলকে কার্যত অন্ধকারে রেখে হঠাৎই পদত্যাগ করলেন নিগন গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মধুমিতা সাহা। বুধবার দুপুরে মঙ্গলকোটের বিডিও-র কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিডিও বলেন, "নিগন পঞ্চায়েতের প্রধান মধুমিতা সাহা ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে শুনানিতে ডাকা হবে। তার পরে পদত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।"

অথচ বিকেলেও নিগন গ্রামের বাসিন্দা, সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের দাবি, তিনি কিছু জানেনই না! কান ঘেঁষে জেতা সিপিএম প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীও দাবি করেন, "সাংবাদিকের কাছেই প্রথম শুনলাম। আমার কিছুই জানা নেই।" অন্য দিকে কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবিরের দাবি, এই পদত্যাগের পিছনে 'অন্য কারণ' আছে।

মঙ্গলকোট বিধানসভায় গ্রাম পঞ্চায়েত মোট ১৮টি। এর মধ্যে সিপিএম পরিচালিত নিগন পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই দলের প্রার্থী শেখ শাহজাহান চৌধুরী সবচেয়ে বেশি 'লিড' পেয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে পড়েছেন ২৮০০-রও বেশি ভোটে। আশ্চর্যের নয়। কেননা ওই পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের মধ্যে ১৪টিই সিপিএমের দখলে। বাকি দু'টিতে বিজেপি এবং মাত্র একটিতে রয়েছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও ধারসোনা গ্রামের বাসিন্দা মধুমিতাদেবী কেন ইস্তফা দিলেন, তা সিপিএমের অনেকেরই 'বোধগম্য' হচ্ছে না।

পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের মঙ্গলকোট ব্লক যুব সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর দাবি, "সিপিএমের অন্যায় কাজের সঙ্গে হাত মেলাতে পারছেন না বলে সিপিএমের ওই প্রধান পদত্যাগ করেছেন।" আরও এক ধাপ এগিয়ে কৈচর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান তথা কংগ্রেসের যুব নেতা এনামুল হক বলেন, "বিধানসভা ভোটে নিগন পঞ্চায়েত এলাকা থেকে অন্যায় ভাবে জিতেছে সিপিএম। তা মানতে না পেরেই মধুমিতাদেবী পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"

বহু চেষ্টা করেও মধুমিতাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরেই দলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতান্তর চলছিল। সিপিএম অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। দলের জোনাল সম্পাদক বলেন, "আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই জানি না। ফলে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।"

'তোলাবাজি', ঘেরাও খাদ্য দফতরের অফিসার

নিজস্ব সংবাদদাতা • আউশগ্রাম

য় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে মহকুমা খাদ্য দফতরের এক ইন্সপেক্টর ও এক সার্কল ইন্সপেক্টরকে আটকে রাখলেন রেশন ডিলাররা। বুধবার ঘটনাটি ঘটে আউশগ্রামের ধারাপাড়ায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। বর্ধমান (উত্তর)-এর মহকুমাশাসক মৃনালকান্তি রানো বলেন, "ওই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। ঘটনার তদন্ত হবে।"

ধারাপাড়ার এক ডিষ্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে নিয়মিত খাদ্যদ্রব্য নিতে আসেন প্রায় ৬০ জন রেশন ডিলার। ওই ডিলারদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন সার্কল ইন্সপেক্টার ধ্রুবজ্যোতি বক্সি ও ইনস্পেক্টর স্বপন নন্দী। এ দিন ডিষ্ট্রিবিউটরের গুদামে রেশন ডিলার সমিতির নেতা গদাধর দাস অভিযোগ করেন, প্রতি সপ্তাহেই ভয় দেখিয়ে ওই দু'জন তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা আদায় করতেন। তিনি বলেন, "টাকা না দিলে ব্যবসার কাগজপত্রে গোলমাল দেখিয়ে লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাতেন ওঁরা। ফলে অনেক ডিলারই ভয় পেয়ে দাবি মানতে বাধ্য হতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। তাই আজ ওই দুই কর্মী টাকা আদায়ে এলে তাঁদের আটকে রাখা হয়।" গুসকরার ডিলার আব্দুল মজিদ মণ্ডলের অভিযোগ, "ওঁরা আমাদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করতেন। ভয়ে আমরা ওঁদের দাবি মানতে বাধ্য হতাম।" স্থানীয় দিয়াশার ডিলার মিহির কুণ্ডু বলেন, "এই টাকা চাওয়ার কোনও কারণ দেখাতে পারেননি ওই দু'জন।" ওই দুই কর্মীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন রেশন ডিলারেরা। পরে মহকুমাশাসকের (বর্ধমান উত্তর) নির্দেশে আউশগ্রাম-১ বিডিও ও গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। মহকুমা খাদ্য নিয়ামক শিবনারায়ণ পানি বলেন, "আমাদের কাছে ওই দু'জনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৩ মে অভিযোগকারীদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।"

ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স আ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক পরেশচন্দ্র হাজরা বলেন, "মহকুমা খাদ্য দফতরের ওই দুই কর্মী যে আউশগ্রাম-১ ব্লকের ডিলারদের কাছে থেকে অন্যায় ভাবে টাকা নিচ্ছেন, সেই অভিযোগ আমরা প্রথমে মৌখিক ও পরে লিখিত ভাবে জেলা ও মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের কাছে জানাই। ২২ এপ্রিল শেষ বার অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তবে তাতে ফল না হওয়ায় ডিলারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। শেষে তাঁরা দুই কর্মীকে আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।" ২৩ মে অভিযোগকারী ডিলারদের ডেকে পাঠানোর বিষয়ে এখনও চিঠি পাননি বলে জানান পরেশবাবু।

এই ঘটনা সম্পর্কে জেলা খাদ্য নিয়ামক রাজু মুখোপাধ্যায় শুধু বলেন, "দুই কর্মীকে আটকে রাখার কথা শুনেছি। বিস্তারিত কিছু জানি না।" বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) মৃনালকান্তি রানো বলেন, "বিডিও এবং গুসকরা ফাঁড়ি থেকে লোক পাঠিয়ে দু'জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত হবে।"

আটক সিপিএম নেতারা

উদ্ধার অভিযানে এ বার 'অস্ত্র কারখানা'র সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদন

রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে ক্রমান্বয়ে চলতে থাকা 'অস্ত্রাগার সন্ধান' অভিযানে এ বার আস্ত এক অস্ত্র-কারখানার-ই হদিস মিলল জঙ্গলমহলে সিপিএমের 'ঘুরে দাঁড়ানো'র আঁতুড়ঘরে।

মাওবাদী-জনগণের কমিটির বিরুদ্ধে বছর দেড়েক আগে যে এলাকা থেকে 'প্রতিরোধ' শুরু করেছিল সিপিএম, মেদিনীপুর সদর ব্লকের সেই কনকাবতী এবং শালবনির ভুরসায়, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় এবং তার লাগোয়া এলাকা থেকে একের পর এক উদ্ধার হল বন্দুক, ওয়ানশটার, বোমা কিংবা অগুন্তি কার্তুজ।

কনকাবতীর সিপিএম লোকাল কমিটির অফিস সংলগ্ন শৌচালয়ের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, প্রচুর মুখোশ, কালো কাপড়ও মিলেছে। সিপিএমের 'সশস্ত্র বাহিনী' জঙ্গলমহলে অভিযানের সময়ে পরিচয় লুকোতে মুখোশ ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ দিনের 'অস্ত্র-কারখানা' থেকে অজস্র মুখোশ উদ্ধার কার্যত সেই অভিযোগে সিলমোহর দিল। সঙ্গে মিলেছে দলীয় প্যাডে অস্ত্র তৈরির খতিয়ান ও খরচের হিসাবও। যা থেকে কনকাবতীর ওই পার্টি অফিসেই যে অস্ত্র তৈরি হত, তা-ও এক রকম স্পষ্ট। উদ্ধার হয়েছে 'শিবির' চালানোর জন্য গ্রামবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট কাজের 'রুটিন'ও। ঠিক যেমনটি মিলেছিল নেতাইয়ে।

কনকাবতীর পার্টি অফিস চত্বরে মঙ্গলবার রাতে অস্ত্র উদ্ধারের পরে বুধবার সকালে লাগোয়া কংসবতীর চর থেকে পাওয়া গিয়েছে মানুষের বেশ কিছু হাড়গোড়ও। এলাকায় সিপিএমের 'বাহিনী' বিধানসভা ভোটের মাস দু'য়েক আগে পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সেই সময়ে স্থানীয় বেশ কয়েক জন 'নিখোঁজ' হয়েছিলেন। শনাক্তকরণের এতটাই অনপুযুক্ত অবস্থায় মিলেছে সেই ভঙ্গুর কঙ্কাল যে সেগুলি ওই 'নিখোঁজ'দেরই কি না, তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। পুলিশ জানায়, স্থানীয় ওই নিখোঁজদের তালিকা ধরে তাঁদের নিকটজনের রক্তের নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে।

মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র কিলোমিটার আটেক দূরে কনকাবতী অঞ্চল। এখান থেকে কিছুটা এগোলেই এনায়েতপুর-মণিদহ। যেখানে বছর দেড়েক আগে এক রাতে মাওবাদী-সিপিএম প্রবল সংঘর্ষ হয়েছিল। এনায়েতপুরের 'প্রতিরোধ'-এর পথেই জঙ্গলমহলে 'ঘুরে দাঁড়ানো' শুরু করে সিপিএম। কনকাবতীকে 'বেস ক্যাম্প' করেই সিপিএমের বাহিনী গত বছর পুজোর আগে চাঁদড়া-ধেড়ুয়া হয়ে লালগড়ে পৌঁছয়। কনকাবতীতে 'সশস্ত্র শিবির' রয়েছে বলে আগেও অভিযোগ করেছে তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসন তেমন আমল দেয়নি। রাজ্যে পালাবদলের পরে এলাকাবাসীর একাংশকে সঙ্গে পেয়ে তৃণমূল এখন সেই অভিযানে এগিয়ে এল। পাশাপাশি এ তথ্যও মিলেছে যে, কিছু দিন আগে পর্যন্তও 'ভয়ে' যে সব গ্রামবাসী সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন, পালাবদলের পরে তাঁরাই রাতারাতি শিবির বদলে তৃণমূলের পতাকাতলে সমবেত হতে শুরু করেছেন।

সেই লোকজনের সূত্রেই একের পর এক অস্ত্র-ভাণ্ডারের হদিস মেলা সহজ হচ্ছে বলে একান্তে মানছেন তৃণমূল নেতারাও। এই ক'দিন আগেও, বাম জমানায় যাঁরা অস্ত্র নিয়ে হেঁটেছিলেন তারাই 'আত্মসমর্পণের শর্তে', শিবির বদলে এখন অস্ত্রের খোঁজ দিচ্ছেন না তো? পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ এমনই মনে করছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে একের পর এক 'অস্ত্রভাণ্ডারের' সন্ধান মিললেও পুলিশ এ নিয়ে মামলা রুজু করছে না কেন? সে ব্যাপারেও কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তবে, এত দিন বেআইনি অস্ত্র-উদ্ধারের নামে কাজের কাজ যে বিশেষ হয়নি, ক্রমশ প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে তা-ও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠির অবশ্য দাবি, "আগেও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখন অবশ্য আরও বেশি খবর মিলছে।"

খবর মিলছে, মিলছে অস্ত্রও। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিছকই হাতেগড়া বন্দুক, পাইপগান, ওয়ানশটার কিংবা হাত বোমা। সিপিএমের শিবিরে মজুত রয়েছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার, অভিযোগ ছিল এমনই। সেই আধুনিক অস্ত্রগুলি গেল কোথায়? তৃণমূল কিংবা পুলিশ, কারও কাছেই অবশ্য এর জবাব মেলেনি।

মঙ্গলবার রাতে কনকাবতীর সিপিএম লোকাল কমিটির সম্পাদক উত্তম বারিকের বাড়ির পিছন থেকে প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার হওয়ার পরে গ্রামবাসীরা পার্টি অফিসের আশপাশে তল্লাশি শুরু করেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশেও। পুলিশ এসে অফিসের পিছনের সেপটিক ট্যাঙ্কের আলগা ভাবে লাগানো ঢাকনা খোলে। তখনই উদ্ধার হয় ৪৭টি বন্দুক এবং আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম। স্থানীয় মানুষ পরে জানান, গত বছর বেশ কয়েক মাস ধরে পার্টি অফিসে নিয়মিত গণসঙ্গীত এমনকী বাজার চলতি হিন্দি গানও বাজত সাউণ্ডবক্স থেকে। মাইক বাজানোর বিরোধিতা করে সে সময়ে অনেকে সিপিএমের 'রোষে'ও পড়েছেন। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, অস্ত্র তৈরির শব্দ আড়াল করতেই ওই সাউণ্ডবক্স বাজানো হত।

অস্ত্র-ভূমি

বুধবার শালবনির ভুরসা থেকেও ১২টি বন্দুক এবং প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জঙ্গলমহলের আর এক প্রান্তে গোয়ালতোড়ের জামিরশোল, পুঁইছড়া, বনকাটি, বরাবাড়ি এলাকার ঝোপ-জঙ্গল থেকেও উদ্ধার হয়েছে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪০ রাউণ্ড গুলি এবং বেশ কয়েকটি বোমা। জঙ্গলমহলের আর এক প্রান্ত, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকেও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এ দিন। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি লব মণ্ডলের বাড়ির পিছন থেকে মাটি খুঁড়ে তিনটি ওয়ানশটার, দু'টি পাইপগান ও ৩০ রাউণ্ড কার্তুজ মিলেছে। এসডিপিও (খাতড়া) অলোক রাজোড়িয়া জানান, এখানে কী করে অস্ত্র গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে লববাবুর বাবা স্বপন মণ্ডল ও তাঁর এক ভাই তুষারকান্তিকে আটক করা হয়েছে। সভাপতি নিজে অবশ্য 'পলাতক'।

কিন্তু পালাতে পারেননি পশ্চিম মেদিনীপুরের মাদপুরের সিপিএম জোনাল সম্পাদক অসীম দাস। এ দিন দুপুরে লোকাল কমিটির অফিস থেকে ওই কমিটির সম্পাদক কামের আলি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ মিদ্যাদের সঙ্গে তাঁকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় দু'টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৪ রাউণ্ড গুলি, ১৮টি বোমা। মাদপুরের ডিওয়াইএফআই নেতা ভোম্বল ঘোষের বাড়ি থেকে আবার এ দিনই প্রায় ১ কুইন্টাল গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাতেও ভোম্বল-সহ ৩ সিপিএম কর্মী-সমর্থককে ধরেছে পুলিশ। গড়বেতার আউসাবাঁধি, কাষ্ঠগড়া-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কেশপুর থানা এলাকার কলাগ্রাম, বাজুয়াড়াচক, তুষখালি, আনন্দপুর, একড়াশোল থেকেও ৩০টিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়োকশো রাউণ্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। কেশপুর থেকে পুলিশ ৪ সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। চন্দ্রকোনার ফাঁসিডাঙা, বামুনিয়া এলাকায় ঝোপজঙ্গল থেকেও ১০টি মাস্কেট, ৩টি একনলা বন্দুক, ৪টি পাইপগান, ৩টি হাতকামান এবং ২০ রাউণ্ড কার্তুজ হয় এ দিন দুপুরে। উত্তেজনা থাকায় গোটা মেদিনীপুর সদর ব্লক, কেশপুর, শালবনিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

ক্রমাগত অস্ত্র উদ্ধারে সিপিএম নেতৃত্ব যে বিড়ম্বনায়, তা স্পষ্ট। এ দিনও রাজ্য কিংবা জেলা নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে, অস্ত্র উদ্ধার আদতে তৃণমূলের 'সাজানো গল্প।' তৃণমূলের লোকজনই অস্ত্র রেখে উদ্ধারের 'নাটক' করছে, বলেও দাবি করেছেন অনেকে। কিন্তু প্রশ্ন, বাম জমানায় পুলিশ তা উদ্ধার করতে পারেনি কেন?


কলঙ্কিত কনকাবতী

হিসেব-নিকেষ

সিপিএমের কনকাবতী লোকাল কমিটি অফিস থেকে 'ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)'- র প্যাডে লেখা কিছু হিসেব-নিকেষ উদ্ধার হয়েছে। রয়েছে কয়েকটি জায়গা এবং কয়েক জন ব্যক্তির নামও। পাশে লেখা 'বড় ক'টা', 'ছোট ক'টা'। এই বড়-ছোট বলতে বড় বন্দুক এবং ছোট বন্দুক বোঝাতে চাওয়া হয়েছে বলেই দাবি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের একাংশের। প্যাডের একটি পাতায় লেখা রয়েছে, 'মোট বড় ২১৪। আছে ৯২। গেছে ১২২। মোট ছোট ১৬৯। আছে ৫১। গেছে ১১৮।' প্যাডের কয়েকটি পাতায় গুণফল-যোগফল টাকার অঙ্কে অস্ত্র তৈরির খরচের হিসাব বলে দাবি পুলিশের। একটি পাতায় আবার লেখা হয়েছে উপরডাঙ্গার ইরফান নিয়ে গেছে বড় ৫, ছোট ০। চণ্ডীদা বড় ৪, ছোট ০। ঝাড়গ্রাম বড় ৩০, ছোট ২০। ভাদুতলা বড় ০, ছোট ৪। নয়াগ্রাম বড় ১৫, ছোট ১৫। শালবনি বড় ১০, ছোট ২। চাঁদড়া বড় ০, ছোট ১০। বড়-ছোট বন্দুক কাকে বা ক'টা কোথায় পৌঁছনো হয়েছে, তারই হিসেব।

কনকাবতীতে পাওয়া অস্ত্র ও মুখোশ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ, সৌমেশ্বর মণ্ডল

first page

ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকাতেও বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস


নতুন ট্রেন চালুর দাবি শিল্পশহরে

গত তিন বছরে ক্রমেই
কমেছে বামেদের সমর্থন
জেলাশাসক-আধিকারিক
সংঘাত পূর্ব মেদিনীপুরে

'পলাতক আসামি' সিপিএমের আট নেতা

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর
সিপিএমের জোনাল সম্পাদক ধৃত

নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: পার্টি অফিসে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে
পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের এক জোনাল সম্পাদককে গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতার

হয়েছেন লোকাল কমিটির এক সম্পাদক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও। বুধবার খড়্গপুর

লোকাল থানা এলাকার সুলতানপুর-বসন্তপুর লোকাল কমিটির অফিসে বসেছিলেন

সিপিএমের মাদপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাস।


চেয়ারম্যান পুলিনবিহারীর ইস্তফা দাবি

টুকরো খবর

... খাব পেড়ে। জৈষ্ঠ্যের দুপুরে মেদিনীপুর শহরে রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।



মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা

নিজের বাড়ি ও রাস্তায় 'পরিবর্তনে' নারাজ নেত্রী

অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কটু হলেও বদলেছিল পাম অ্যাভিনিউ। অনেকটাই সল্টলেকের 'ইন্দিরা ভবন'। কিন্তু বদলাল না হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটের প্রতিদিনের ছবিটা।

বরং ভবিষ্যতেও যে সেই ছবি একই রকম থাকবে, তারই ইঙ্গিত মিলেছে ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। বুধবারও পুলিশকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে যেন কখনওই বাড়াবাড়ি করা না হয়। আগের মতোই সাধারণ মানুষ যাতে তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন, সে ব্যাপারেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন পুলিশকে। ফলে শপথ নেওয়ার দু'দিন আগেও তাঁর হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটের বাড়ির সামনে নির্ভয়েই চলাফেরা করেছেন স্থানীয় মানুষ, দলের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে ফেরিওয়ালারাও।

অন্য দিনের মতো এ দিনও তাঁর বাড়ির সামনে আছড়ে পড়েছিল জনতার ভিড়। কেউ এসেছিলেন ধন্যবাদ জানাতে, কেউ বা আশীর্বাদ করতে, আবার কেউ শুধুই দেখতে।

ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের ঢল।

এই খোলামেলা ছবিটা অবশ্য আগের দুই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে পাওয়া যায়নি। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনে সাধারণ মানুষের চলাফেরার অনুমতি থাকলেও কড়া পুলিশি চোখ সব সময়ে তাঁদের অনুসরণ করত। প্রয়োজনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করত। ওই বাড়িকে কেন্দ্র করে এখনও নিয়ম মেনে রয়েছে একাধিক পুলিশ-চৌকি। পার্ক সার্কাসের সাত মাথার মোড়, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, মেফেয়ার রোড, পাম অ্যাভিনিউ ও ব্রড ষ্ট্রিটের মোড় পেরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ফ্ল্যাটে যাওয়া-আসার সময়ে নিয়ন্ত্রিত হত সাধারণ মানুষের যান চলাচল।

তার আগের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাসভবন ছিল কার্যত দুর্গ। বাড়ির তিন দিকের রাস্তায় লাগানো ছিল 'নো এন্ট্রি' বোর্ড। অষ্টপ্রহর পাহারা দিতেন অস্ত্রধারী ইএফআর জওয়ানেরা।

বুদ্ধবাবুর উত্তরসূরীর বাড়ি লাগোয়া এলাকা চষে ফেলেও সে রকম কোনও পুলিশি নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়েনি। বরং ওই সরু রাস্তা ধরে যানবাহনের দ্বিমুখী চলাচলের জেরে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকর্মীদের। তাই ওই রাস্তা ঘিরে স্বাভাবিক কারণেই পুলিশি তৎপরতা আগের তুলনায় বেশি। সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালীঘাট রোড থেকে ডান দিকে হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটে ঢুকেই চোখে পড়েছে গাড়ির সারি। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সাধারণ মানুষ, দলীয় কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে 'হেভিওয়েট' নেতা-নেত্রী, তারকা— গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিই ভিড় জমিয়েছেন কালীঘাটের এই গলিতে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি মানুষের ঢল সামলাতে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি ব্যস্ততা ছিল পুলিশকর্মীদের।

এ দিন 'দিদি'র অগুনতি সাক্ষাৎপ্রত্যাশীর মধ্যে যেমন ছিলেন বর্ধমানের সরকারি কর্মচারী বিমান সেন, তেমনই এসেছিলেন এক কাবুলি সংগঠনের কলকাতার প্রতিনিধিরা। 'মেটাল ডিটেক্টর' হাতে দাঁড়ানো নিরাপত্তারক্ষীরা দর্শনার্থীদের আনা উপহার পরীক্ষায় অবশ্য একটুও ক্ষান্ত হননি। অশোকনগর থেকে 'দিদি'র ক্ষীরের তৈরি মূর্তি গড়ে এনেছিলেন কমল সাহা। তল্লাশির তালিকা থেকে বাদ যায়নি সেটিও।

ভিড় সামলাতে রয়েছে ব্যারিকেড। কলকাতা পুলিশ, রেল-সুরক্ষা বাহিনী, কম্যাণ্ডো— তৎপরতা সকলেরই। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশকর্মী বললেন, "শুক্রবার থেকেই ভিড় লেগে রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে কোনও রকম বাধা না দেওয়ারই নির্দেশ রয়েছে।" কিন্তু একের পর এক ছোট-বড় গাড়ির যাওয়া-আসাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে খুচরো যানজট হচ্ছিল সরু রাস্তাটায়।

বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় সুনসান পথ। বুধবার।

কালীঘাটের ওই ঘিঞ্জি পল্লি ঘিরে যখন উৎসাহী সমাবেশ, তখনও পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে নিয়মমাফিক পুলিশি নিরাপত্তা। স্পেশাল ব্রাঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফল প্রকাশের পরে সামান্য কিছু পরিবর্তন এসেছে বুদ্ধবাবুর নিরাপত্তায়। তিনি 'বুলেটপ্রুফ' গাড়ির পরিবর্তে দলীয় গাড়িতে যাতায়াত করলেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে 'ভিভিআইপি' নিরাপত্তা-মোড়ক ঢেকে রেখেছে তাঁকে। একাধিক পুলিশ ছাউনিতে বসে থাকা পুলিশকর্মীরা এখনও বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক।

ব্রড ষ্ট্রিট-পাম অ্যাভিনিউ সংযোগস্থল থেকে কিছু এগিয়ে ডান-হাতের ফুটপাথ ঘেঁষে এ দিন দুপুরেও 'ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর' জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সেই 'বুলেটপ্রুফ' অ্যাম্বাসাডর।

ছবি: দেবাশিস রায়




No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk