Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Monday, May 16, 2011

গ্রামে গ্রামে হামলা, মারধর

গ্রামে গ্রামে হামলা, মারধর
পার্টিনেত্রীর বাড়িতে আগুন

নিজস্ব সংবাদদাতা: তমলুক, ১৪ই মে — ঠিক যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবার পূর্ব মেদিনীপুরে শুরু হয়েছে তৃণমূলের আক্রমণ। সি পি আই (এম) অফিস, শ্রমিকদের ইউনিয়নের কার্যালয়ের দখলই শুধু নয়, আক্রান্ত হয়েছেন মহিলারাও। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় সি পি আই(এম)-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্যা সুজাতা মাইতির বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। গত কয়েক বছর যারা কিছুটা সংগোপনে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের সাহায্য করেছে, সেই পুলিসের একাংশ শুক্রবার থেকেই খোলাখুলি ঘাসফুলের হামলাবাজদের সহায়তার দায়িত্ব পালনে নেমে পড়েছে।



শনিবার পটাশপুরের বিভিন্ন গ্রামে হামলায় ১০জন আহত হয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বামফ্রন্টের কর্মী, সমর্থকদের ঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ বড়হাট এলাকার পুরুলিয়া গ্রামে শঙ্কর মাঝি এবং মানস দাসকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে তৃণমূলের বাহিনী। তাঁদের তৃণমূলের কার্যালয়ে নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ১০ টাকার খালি স্ট্যাম্প পেপারে জোর করে সইও করিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের। তারপরও চলে মারধর। তাঁরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, রাস্তায় ফেলে চলে যায় তৃণমূলীরা। পার্টিকর্মীরাই আহতদের প্রথমে পটাশপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বড়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শম্ভুনাথ মান্নার ছেলে নন্দদুলাল মান্না, চিস্তিপুর ১ নং পঞ্চায়েতের গোনাড়া গ্রামের প্রতাপ শীট, আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষতিবাড় ও হরিপুর গ্রামের সুনীল জানা সহ মোট ৭ জন পার্টিকর্মীকেও ব্যাপক মারধর করে তৃণমূলীরা। ইছাবাড়ি গ্রামের বেহুলা গায়েন এক গৃহবধূও আক্রান্ত হয়েছেন।



শনিবার দুপুরে মহম্মদপুরের ১টি ও মংলামাড়োর দুটি সি আই টি ইউ অফিসে লুঠপাট চালায় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। অফিস জোর করে দখল করে তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দেয়। লাগিয়ে দেয় তালাও। আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের টনিয়াবিলা, জব্দা, বামনবাড়, মদনমোহনপুর, চন্দনখালি, মথুরা, বাল্যগোবিন্দপুর, লায়া, মল্লিকপুর, সুকাখোলা, হিংচিবাড় প্রভৃতি এলাকাতেও মারধর, ঘরে লুট, ভাঙচুর — এক সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেছে তৃণমূল। অচিন্ত্য পাত্র, বিপ্লব পাত্র, গোপাল দলুই, সুবল প্রধানদের মত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়েছে। 



হামলা হয়েছে খেজুরি-নন্দীগ্রামে। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬৫ জন ঘরছাড়া হয়েছেন তৃণমূলের খুনের হুমকিতে। রেয়াপাড়ায় পার্টি কার্যালয়ে হামলা হয়েছিল শুক্রবারই। শুক্রবার গভীর রাতে পার্টিনেত্রী সুজাতা মাইতির বাড়ির একাংশে আগুন লাগিয়ে দেয় তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। খেজুরিতে হরিজন পল্লীর প্রায় ৮ জনকে মারধর করা হয়েছে।তাঁদের মধ্যে আঘাত গুরুতর পবন ঘোরুইয়ের। হামলা হয়েছে গড়রং গ্রামেও। শুক্রবারই শেরখানচক, কুঞ্জপুর, বারাতলা পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে।



পাঁশকুড়ার মাইশোরাতে শুক্রবার শামসেদ আলি এবং কিশোর পাণ্ডে আক্রান্ত হন। মারাত্মক আঘাত নিয়ে তাঁরা দু'জনেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার ঐ মাইশোরাতে সন্ত্রাস আরো বেড়েছে। পার্টি সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হুমকি, হামলা চলছে। কাঁথি উত্তর এলাকার এগরা-২ নং অঞ্চলের বাথুয়াড়ির বারভাগিয়া সহ বেশ কয়েকটি বুথে একই রকম সন্ত্রাস জারি হয়েছে। ভগবানপুরের অর্জুননগরের আক্রান্ত বেশ কয়েকজন পার্টিকর্মী ঘরছাড়া। বিভীষণপুরের জাগাতিতলায় পার্টির একটি কার্যালয় দখল করেছে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা। তমলুকে সি পি আই(এম)-র গ্রামীণ জোনাল কমিটি, নিমতৌড়ির গৌরাঙ্গপুর শাখা কমিটির অফিস ভাঙচুর করেছে সশস্ত্র তৃণমূলীরা। 



দীঘাতে পার্টির দুটি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে, তালগাছাড়িতে পার্টি নেতা অরবিন্দ পাত্রকে বেধড়ক মারধর করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।



হামলা হয়েছে হলদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন অফিসে। পার্টির দুটি শাখা অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে।

আক্রান্ত পার্টিনেতারা, চলছে লুট,
ঘরছাড়া শত শত

নিজস্ব প্রতিনিধি

পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া 

========================



কলকাতা, ১৫ই মে— যেকোন ধরনের হিংসা বন্ধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। ভোটের ফল বেরনোর ঠিক আগের দিনই গত ১২ই মে জেলা প্রশাসনের ডাকে সর্বসম্মত বৈঠকের এই সিদ্ধান্তকেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল আর একবার। আর তারপর ১৩ই মে-র বিকেল থেকে একে একে হিংস্র আক্রমণের চেহারা, সন্ত্রাসের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেই জেলাপুলিস, জেলাশাসকের কাছে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানানো হল আর একবার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে বামফ্রন্টের নির্বাচিত সাংসদ ও বিধায়কদের ১০সদস্যের প্রতিনিধিদল এই শান্তির দাবি জানালো সংগঠিত উদ্যোগে। এই ৬দফা দাবিতেই উল্লেখ রয়েছে গড়বেতা-১, গড়বেতা-২, গড়বেতা-৩, কেশপুর, চন্দ্রকোনা-২, পিংলা প্রভৃতি ব্লক এলাকায় কেন্দ্র–রাজ্য যৌথ বাহিনী নিয়োগের। মাওবাদী তৎপরতার এলাকা মেদিনীপুর সদর, শালবনী, বিনপুর-১ প্রভৃতি ব্লকে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রয়েছে। আক্রান্ত এলাকাগুলিতে ধারাবাহিক পুলিস টহল ও দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবি রয়েছে।

রবিবার সন্ত্রাস বন্ধের এই দাবি পেশের কর্মসূচীতে ছিলেন সাংসদ প্রবোধ পাণ্ডা, পুলিনবিহারী বাস্কে, সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক প্রবোধচন্দ্র সিংহ, সুশান্ত ঘোষ, নাজমূল হক, রামেশ্বর দোলুই, দিবাকর হাঁসদা, বিরাম মান্ডি এবং ছায়া দোলুই। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সন্ত্রাসের অভিযোগগুলির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সন্ত্রাসের, আক্রমণের ঘটনাগুলিতে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের। জেলা প্রশাসনের এমন আশ্বাসের সঙ্গেই গড়বেতা, চন্দ্রকোনা-২, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড, কেশপুর ব্লকগুলি ছাড়া জেলার অন্যান্য ব্লকে একতরফাভাবে চলছে তৃণমূলী সন্ত্রাস, মারধর, লুঠপাট।

এমন হামলা, আক্রমণের সঙ্গেই এবার জমি দখলের রাজনীতিতে নেমে পড়লো হিংস্র তৃণমূলীরা। পিংলা, কেশিয়ারি, সাঁকরাইল প্রভৃতি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ভীতিপ্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে জমি দখলের কাজ। লাউদহ, দহবাড় গ্রামগুলোতে বর্গা জমিগুলিতে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ঝাণ্ডা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের বনপুরাতে হাসিবুল হোসেনকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলীরা। বেশ কিছু জায়গায় নতুন কায়দায় পার্টির কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা চলছে। তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মারধর করে তারপর তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুলিসের হাতে। এরপরই শুরু হচ্ছে মিথ্যা সাজানো অজুহাত খাড়া করে পুলিসী আক্রমণ।

শালবনী ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় চলেছে একতরফা তৃণমূলী হামলা। পার্টির বিষ্ণুপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক কিঙ্কর ঘোষের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। রায়গড়ে নিতাই খামরুই, মন্তেশ্বর ফৌজদারের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পার্টিকর্মী সুধীর সিং, গুরুপদ সিংকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। সৈয়দপুরে আনন্দ ঘোড়ুইকে এবং সুন্দরাতে আনোয়ার আলিকে মারা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তোতাবুল হোসেনের বাড়ি। গোদাপিয়াশাল কাছারিতে ভাঙা হয়েছে প্রফুল্ল ঘোষের দোকান, নোটা ঘোষের দোকান। সিজুয়াতে হাজি ইব্রাহিম হাসেন মল্লিককে মারধর করেছে তৃণমূলী দুষ্কৃতী কাশেম খান, জয়নাল আবেদিন।

এদিকে তৃণমূলের জয়ের উল্লাস পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের চেহারা নিয়েছে। মাত্র দুদিনেই ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েকশো পার্টিকর্মী। তৃণমূলী আক্রমণে খেজুড়ি, নন্দীগ্রাম, মুগবেড়িয়া, পটাশপুর, মারিশদা, পাঁশকুড়া ব্লকের নানা জায়গায় আহত পার্টিকর্মীর সংখ্যা আড়াইশো ছাড়িয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এই মুহূর্তেই হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ৪০জন পার্টিকর্মী। কারোর হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ভেঙেছে বুকের পাঁজর, কারোর মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। তৃণমূলের জয়ের উল্লাসে কয়েকশো পার্টিকর্মীর ঘর ভাঙা হয়েছে। অপহৃত হয়েছেন সি পি আই (এম)-র কর্মী সংগঠকরা। এই মুহূর্তে সন্ত্রাসের এটাই ছবি গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে।

রবিবারই নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় তৃণমূলী আক্রমণে আহত হলেন পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক গুড়িয়া এবং নন্দীগ্রামে বামফ্রন্টের সি পি আই প্রার্থী পরমানন্দ ভারতী। এদিন সকালে রেয়াপাড়া বি এড কলেজে একটি সভা চলাকালীন হামলা চালায় তৃণমূলীরা। অশোক গুড়িয়া ও পরমানন্দ ভারতীকে মারধর করে কলেজ থেকে বের করে দেয় তৃণমূলীরা। পার্টিনেতা অশোক গুড়িয়া এদিন এই সন্ত্রাসের অভিযোগে জানিয়েছেন, রবিবার সকালে কলেজ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই ডাইরেক্টর বোর্ডের একটি সভা ছিল। সভা চলাকলীনই তৃণমূলীরা হামলা চালায়। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে যেভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নানা জায়গায় একের পর এক স্কুল, কলেজ দখল করেছে তৃণমূলীরা, সেই ঢঙেই এদিনের হামলা ছিল। তৃণমূলীদের যথেচ্ছ মারধরে আক্রান্ত হন পার্টিনেতারা।

রবিবার সন্ত্রাসের তীব্রতা বেড়েছে খেজুরি, মুগবেড়িয়া, পটাশপুর, ভগবানপুরে। খেজুড়ির পার্টিনেতা হিমাংশু দাস জানিয়েছেন, ১৯০টা বুথে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে তৃণমূলীরা। ইতোমধ্যেই ১৫৫জন ঘরছাড়া হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১৪৫জন। স্থানীয় জনকা গ্রামীণ হাসপাতাল, তমলুক হাসপাতাল ও কলকাতায় এস এস কে এম হাসপাতালে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ২০জন। শতাধিক ঘরবাড়ি লুট হয়েছে এই সময়ে। এই সামগ্রিক হামলার ঘটনাগুলোতে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে পুলিস প্রশাসন। এরসঙ্গেই আক্রান্ত সি পি আই (এম) কর্মীদের নামে সাজানো মিথ্যা অভিযোগে এফ আই আর দায়ের করা হচ্ছে।

এদিকে মুগবেড়িয়াতে রবিবার আক্রমণের মাত্রা আরও বেড়েছে। পার্টির জোনাল সম্পাদক বিষ্ণুপদ মান্না জানিয়েছেন, এই ব্লকের দেড়শো মানুষ ঘরছাড়া। অর্জুননগর গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তৃণমূলীরা। ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে সরোজ দাস, জয়দেব দাস, শ্যামল মণ্ডলদের। কারোর বাড়ি লুট হয়েছে, কারোও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ধানভাঙা মেশিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জুলুমে। এমনকি আক্রান্ত, আহত পার্টিকর্মীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে দিচ্ছেনা উন্মত্ত তৃণমূলীরা।

এদিনই আক্রমণ চলেছে পটাশপুরের আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের মঙ্গলচক গ্রামের বিড়ি কারখানায়। কারখানার মালিক শঙ্কর মিশ্রকে মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলচকের পাশের গ্রাম সিয়াড়িতে গৌতম দাসকে আহত করার পরে তাঁকে হাসপাতালেও যেতে দেয়নি তৃণমূলীরা। পটাশপুরেই আহত হয়েছেন ২০জন। এঁদের মধ্যে মাত্র ২/৩জন পার্টিকর্মী হাসপাতালে পৌঁছতে পেরেছেন। মনসাপুর হাট থেকে এদিন নয়ন দাস নামে এক পার্টিকর্মীকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় তৃণমূলীরা। বেপরোয়া মারধরের পরে তাঁকে পীতপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই সামগ্রিক আক্রমণের প্রতিবাদেই এদিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে পাঁশকুড়া থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এই ডেপুটেশনে ছিলেন বামফ্রন্টের পক্ষে তরুণ সামন্ত, নির্মল বেরা, অমল দে, প্রশান্ত দাস ও কালিপদ মণ্ডল প্রমুখ।

এদিকে নদীয়া জেলাতেও জয়ের উল্লাসে তৃণমূলীরা আক্রমণের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করছে। আর এই বেপরোয়া আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে জেলার বামপন্থী কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মহিলারাও প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। নদীয়ার তাহেরপুরে সি পি আই (এম)-র হাঁসখালি জোনাল কমিটির সদস্য সঞ্জয় গোস্বামীর বাড়িতে আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূলীরা। হাঁসখালি থানা এলাকার জয়পুর গ্রামের মহিলাদের ওপরেও আক্রমণ চালায় তৃণমূলীরা। এই আক্রমণের মোকাবিলায় গ্রামের মহিলারাই রুখে দাঁড়ালে পালিয়ে যায় তৃণমূলীরা। এদিকে চাকদহে বিষ্ণুপুরে নারায়ণ দে-র বাড়িতেও আগুন লাগানোর চেষ্টা চালায় তৃণমূলীরা। চাকদহ পৌরসভার ২০নং ওয়ার্ড এলাকায় জয়ের আনন্দে বামপন্থী কর্মীদের মারধর করেছে তৃণমূলীরা। শুক্রবার ভোটের ফলপ্রকাশের পরপরই বীরনগর পালিতপাড়ায় সি পি আই (এম)-র অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় তৃণমূলীরা। শুধু তাই নয়, সারা রাত ধরে ঐ পার্টি অফিস সবুজ রঙ করে তৃণমূলকর্মীরা। এখানে পুলিসকে খবর দেওয়া হলেও এবং থানায় ডায়রি করা হলেও ঘটনার পর দুদিন কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিস প্রশাসন।

এদিকে গতকাল দুপুরেই বগুলায় সি আই টি ইউ দপ্তরে তালা লাগিয়ে দেয় তৃণমূলীরা। ভেতরে তখনও পার্টিকর্মীরা ছিল। শুক্রবার গয়েশপুরে ২নং লোকাল পার্টি দপ্তরও ভাঙচুর করেছে তৃণমূলীরা। গয়েশপুর পৌরসভাতেও পৌরকর্মীদের আক্রমণ করে। আক্রান্ত অস্থায়ী পৌরকর্মী নাড়ু সরকারকে কল্যাণী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তৃণমূলীদের জয়ের আনন্দে ভাঙচুর চলেছে কল্যাণী পাবলিক লাইব্রেরিতেও। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের কাছে সি আই টি ইউ-র পরিবহন শ্রমিকদের অফিসও ভাঙচুর করেছে তৃণমূলীরা। দখল নিয়েছে ঐ ইউনিয়নের অফিস। ধানতলা এলাকায় বহিরাগাছি গ্রামে তৃণমূলী আক্রমণে আহত হয়েছেন পার্টিকর্মী সমীর শিকদার। এই থানা এলাকাতেই পার্টির পানিখালি লোকাল অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে তৃণমূলীরা। এদিকে শনিবার এস এফ আই পরিচালিত হরিণঘাটা কলেজের ছাত্র সংসদে হামলা চালালো তৃণমূলী বাহিনী। ছাত্র সংসদের ঘর, আসবাবপত্র তছনছ করেছে তৃণমূলী বাহিনী। প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ায় ছাত্রছাত্রীরা। শনিবার সন্ধ্যায় ধুবুলিয়া থানার নতুন ন'পাড়া গ্রামে বাংলাদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতী ছাপেত শেখ দেওয়ানের নেতৃত্বে আক্রমণ চালায় তৃণমূলীরা। এই হামলায় আহত হয়েছেন পার্টিকর্মী আকবর মণ্ডল, আখের আলি, সাদ্দাম হোসেন, বিলকিস বিবি এবং নিকার আহমেদ। এঁদের মধ্যে বিলকিস বিবির আঘাত গুরুতর। অন্য এক ঘটনায় তৃণমূলী আক্রমণে গুরুতর জখম হয়েছেন পার্টিকর্মী মফিজুল শেখ ও ফজরালী শেখ। নদীয়া জেলাজুড়ে এই সামগ্রিক আক্রমণের ঘটনায় পার্টির জেলা সম্পাদক আশু ঘোষ পার্টিকর্মীদের সজাগ, সতর্ক থেকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

রায়নার পিঙ্কি এখনও আশঙ্কাজনক,
বর্ধমানের নানা প্রান্তে পরপর হামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান, ১৫ই মে — 'পরিবর্তন' কী, তা যেমন বর্ধমান জেলার রায়নার হিজলনার ছোট্ট শিশু পিঙ্কি মাঝি ও তাঁর মা ছবি মাঝি হাসপাতালে শুয়ে অনুভব করছেন, তেমনই বর্ধমানের নানা প্রান্তে পরপর আক্রমণে টের পাচ্ছেন মানুষ। শনিবার সকালে ফুল তোলার অজুহাতে তৃণমূলের কর্মীরা পিঙ্কির দিদিমা পূর্ণিমা ঘড়ুইকে মরণমার মারে। সেদিন বিকালেই কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে মারা যান পিঙ্কির দিদিমা। মারাত্মক আঘাত নিয়ে পিঙ্কি এবং তার মা ছবি মাঝি এখন বর্ধমানের একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।

আই সি ইউ'র বেডে শুয়ে পিঙ্কি শুধুই জানতে চেয়েছে তার দিদিমা পূর্ণিমা ঘড়ুইয়ের কথা। রবিবার কাগজপত্রে কিছু ভুল থাকার জন্য পূর্ণিমা ঘড়ুইয়ের মৃতদেহ মর্গ থেকে গ্রামে আসেনি। সোমবার সি পি আই (এম)-র সমর্থক পূর্ণিমা ঘড়ুইয়ের মরদেহ গ্রামে আনা হবে।

শনিবার সকালে ছোট্ট পিঙ্কি প্রতিবেশীর বাড়িতে ফুল তুললে তাকে এবং তাঁর মা ও দিদিমাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করে। এই হামলায় মারাত্মক জখম হয় তিনজনই। শনিবার বিকালেই মারা যান পূর্ণিমা ঘড়ুই। ছোট্ট পিঙ্কি ও ছবি মাঝিও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। প্রতিবেশীরা অভি‍‌যোগ করেছেন, গাছ থেকে ফুল তোলার অজুহাত মাত্র। বর্ধমানের হিজলনা গ্রামে বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের চাপা সন্ত্রাস চলছে। পূর্বপাড়ায় পূর্ণিমা ঘড়ুই ও তাঁর পরিবার সি পি আই (এম)-র সমর্থক। ভোটের আগে তাঁদেরকে বুথে যেতে নিষেধ করেছিল তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু নিষেধ না মেনে তারা সকলেই ভোট দিয়েছেন। পূর্ণিমা ঘড়ুইদের বাড়ির পাশেই বাড়ি তৃণমূল নেতা ও পোলিং এজেন্ট বৈদ্যনাথ মাঝি এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘৃণা, রোষ ছড়িয়েছে।

রবিবার বর্ধমান সদর থানার পালিতপুরের শ্যাম সেল কারখানায় ৩০-৪০জন তৃণমূলী গিয়ে হুমকি দেয়। এখানে কোনো শ্রমিক সি আই টি ইউ ইউনিয়নের সদস্য থাকতে পারবেন না। এই তৃণমূলী ফতোয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা তখনই প্রতিবাদ করেন। এই খবর পেয়েই সি আই টি ইউ নেতা প্রদীপ তা যান এবং শ্রমিকদের নিয়ে সভা করেন। সেই সময় তৃণমূলীরা প্রদীপ তা-কে আক্রমণ ও হেনস্তা করার চেষ্টা করে। শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিস যায়, সাংসদ সাইদুল হক, গণেশ চৌধুরী, কমল গায়েনরাও উপস্থিত হন। প্রতিবাদের মুখে তৃণমূলীরা পিছু হটে। এছাড়াও বর্ধমান সদরের হাট গোবিন্দপুর, গঞ্জ বৈকুণ্ঠপুর, সরাইটেকর গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পার্টিকর্মীদের ভীতিপ্রদর্শন করা হয়। কামনাড়া পীরতলায় খাগড়াগড়িয়া গ্রামে সি পি আই (এম) কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও মারধর করেছে। ভাতার থানার কামারপাড়ায় প্রাক্তন মুখ্যসচেতক-এর সি এ চন্দ্রমোহন রায়কে হেনস্তা, মারধর ও তার সাইকেল কেড়ে নেয় তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই গ্রামেই এ বি পি টি এ নেতা বিমল ধারার মোটরসাইকেল কেড়ে তার কাছ থেকে জরিমানা করেছে। এছাড়াও মোহনপুর, শিলাকোট, এরুয়ার গ্রামে সি পি আই (এ‌ম) কর্মীদের বাড়ি‍‌তে ঢুকে প্রাণনাশের হুমকি, পার্টি না করার জন্য ভয় দেখিয়ে মুচলেকা লেখানো এবং এরাচিয়ার গ্রামে গরিব খেতমজুর হাসনে জামান চৌধুরীকে তার বাস্তুভিটে থেকে উচ্ছেদ করেছে তৃণমূলীরা।

বর্ধমান শহরে রাজকলেজ, বিবেকানন্দ কলেজে হামলা করে ছাত্রসংসদ অফিস ভাঙচুর ও সংসদ হস্টেলের দখল গায়ের জোরে ভয় দেখিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের বাহিনী। শহরের রাজগঞ্জ, বোরহাট, গোদা, লক্ষ্মীপুর মাঠ, জোড়ামন্দির, পাঞ্জাবী পাড়া এলাকায় সি পি আই (এম) কর্মীদের বাড়ি বাড়ি চড়াও হয়ে মারধর, পার্টি অফিস ভাঙচুর, দখল নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

খণ্ড‍‌ঘোষের কামালপুর, পুরিহা, বামুন পুকুরে, লারিচা, রায়নায় ছোটশিমূল, লোহায়, পোলে, গোতাল এলাকায় সি পি আই (এ‌ম) কর্মীদের বাড়িতে হামলা, লুট, মারধর করেছে তৃণমূলের গুণ্ডারা। লরিচা গ্রামে পার্টি অফিস দখল করেছে দুষ্কৃতীরা।

কর্ণাটকে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ
করে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও বাঙ্গালোর, ১৫‍ই মে — কর্ণাটকে বি জে পি সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করলেন রাজ্যপাল এইচ আর ভরদ্বাজ। রবিবার রাতে এই মর্মে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। এর ফলে, কর্ণাটকে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মাত্রা নিল। 

এদিনই, এর আগে, কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা সরকারের অস্তিত্বের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। কারণ যে ১১ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজ করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে 'নিঃশর্তে সমর্থন' জানানোর কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু, কেন্দ্রকে পাঠানো রিপোর্টে রাজ্যপাল লিখেছেন যে গত বছর আস্থা ভোটের সময় সাংবিধানিক সংস্থান পালন করেননি ইয়েদুরাপ্পা এবং স্পিকার কে জি বোপাইয়া। ফলে, ওই ১১জন বিধায়কের সমর্থন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। সেই সূত্রে রিপোর্টে সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল।

এই বিধায়করা গত কয়েকদিন ধরে নয়াদিল্লিতে রয়েছেন। তাঁরা কর্ণাটকের রাজ্যপাল এইচ আর ভরদ্বাজকে লেখা একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, তাঁরা কর্ণাটকের বি জে পি সরকারকে সমর্থন করছেন। বিক্ষুব্ধ বিধায়করা ঐ চিঠিতে জানিয়েছেন, 'আমরা সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাতে চাই। তাই আমরা বি জে পি-র বিধায়ক হিসাবেই থাকতে চাই। আমরা বি এস ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বাধীন সরকারকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন জানাচ্ছি।

রবিবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কর্ণাটক সরকারের প্রতিনিধি ধনঞ্জয় কুমার ঐ চিঠির প্রতিলিপি সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন, ইয়েদুরাপ্পা সরকারের সামনে এখন কোনো বিপদ নেই। বি জে পি সূত্রে জানা গেছে, ঐ বিধায়করা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ইয়েদুরাপ্পা সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আলাদা আলাদাভাবে তাঁর হাতে চিঠি দিতে চাইছেন।

২০১০ সালের অক্টোবরে ১১ জন বিক্ষুব্ধ বি জে পি সদস্য এবং ৫ জন নির্দল সদস্যের বিধায়ক পদ কর্ণাটক বিধানসভায় অধ্যক্ষ খারিজ করে দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট গত শুক্রবার বাতিল করে দিলে বি জে পি সরকার সঙ্কটে পড়ে যায়।

রবিবার সকালে রাজ্যপাল এইচ আর ভরদ্বাজ চাপ বজায় রাখার জন্য বলেছিলেন, তিনি বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি শনিবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কর্ণাটকের বি জে পি সরকার ২০১০ সালের ১৪ই অক্টোবর দ্বিতীয়বার অল্পের জন্য আস্থাভোটে জয়ী হয়। সেবারে ১১ জন বিক্ষুব্ধ বি জে পি বিধায়ক এবং ৫ জন নির্দলকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।

রবিবার বাঙ্গালোরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা বলেছিলেন, 'এখন আস্থাভোট নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তবে রাজ্যপাল চাইলে তিনি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে বাধ্য।' এখানে উল্লেখ করা যায় ভরদ্বাজ রবিবার বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকারের সমালোচনা করা হয়েছে। এদিকে বাঙ্গালোরে বিধানসভায় স্পিকার কে জি বোপাইয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ঐ দশজন বিক্ষুব্ধ বি জে পি বিধায়ক রবিবার বাঙ্গালোরে ফিরেছেন। ফেরার পর তাঁদের সংবর্ধনা জানান সমর্থকরা। কিন্তু, রাজ্যপালের রিপোর্টের পর সেই হিসেব পুরোটাই বদলে গিয়েছে।

জানালেন প্রণব, পেট্রোলের পর এবার
বাড়ছে ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ১৫ই মে- প্রত্যাশিত পথেই চড়া হারে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর দায়িত্ব তেল সংস্থাগুলির ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এই সপ্তাহেই এবার ডিজেল, কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে আলোচনায় বসছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিগোষ্ঠী, জানিয়েছেন তিনি। ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৪টাকা এবং রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ২৫টাকা বাড়তে পারে।

নির্বাচন থাকা পাঁচ রাজ্যের মধ্যে কেরালা ও আসামে সরকার গড়ছে কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ছে জোট শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেই রবিবার কলকাতায় কংগ্রেসের নবনির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখার্জি। ভোটের ফল বের হতেই লিটার প্রতি পাঁচ টাকা দাম বেড়েছে পেট্রোলের। যেন পুরস্কার জনগণকে। এদিন তা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে।

একদিকে তেল সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক বাজারে দামবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে, ডিজেল থেকে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর আরজি জানাচ্ছে। অন্যদিকে, তারাই দাম কমিয়েছে বিমানের জ্বালানির। বিমানের জ্বালানি এ টি এফ'র দাম প্রতি কিলোলিটারে কমানো হয়েছে ১হাজর ৭শো ৬৬টাকা। আম-জনতার আর্জি প্রত্যাখ্যান করলেও বিমান সংস্থাগুলির আর্জিতে যথেষ্ট সংবেদনশীল তেল সংস্থাগুলি। বাস্তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না থাকলে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর মুখে আশঙ্কা বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। গত কয়েকমাস সেই হার সামন্য কমলেও, বেশ কয়েক মাস ধরেই খাদ্যদ্রব্যে মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই অঙ্কে। সামনের কয়েকমাসে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টেও। ফলে, আরেক দফায় জনগণের ওপর চাপ বাড়তে চলেছে, তা নিশ্চিত।

কেন্দ্রে সরকারের দায় ঝেড়ে ফেলতে মুখার্জি বলেন, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তেল সংস্থাগুলির। এই দায় ঝেড়ে ফেলার রাস্তা নেওয়ার জন্যই ২০১০'র জুনে পেট্রোলের দামে বিনিয়ন্ত্রণ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউ পি এ-২ সরকার। যে বিনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি ইউ পি এ-১ সরকারের গোটা পাঁচ বছরে, বামপন্থীদের বাধায়। তারপর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাতবার দাম বেড়েছে পেট্রোলের। যদিও নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার মত দেয়নি বলেই, গত জানুয়ারি থেকে পেট্রোলের দাম বাড়ায়নি তেল সংস্থাগুলি।

এদিন মুখার্জি পরিষ্কার বুঝিয়েছেন যে এই সপ্তাহেই দাম বাড়ার পালা ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিগোষ্ঠী। এই সপ্তাহেই হবে বৈঠক। উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম স্থির করার দায়িত্ব বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ইউ পি এ-২ সরকার। কিন্তু, এখনো তা চালু করা হয়নি। তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য, প্রতি লিটার ডিজেলের জন্য কম আয় হচ্ছে ১৮টাকা ১৯পয়সা। রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি সিলিন্ডার প্রতি ৩২৯টাকা ৭৩পয়সা, কেরোসিনের ক্ষেত্রে লিটার প্রতি ২৯টাকা ৬৯পয়সা। মনে করা হচ্ছে, এই যুক্তি মেনে নিয়ে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি অন্তত ৪টাকা এবং রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ২৫টাকা বাড়াবে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, ইউ পি এ-১ সরকারের সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি হলেও বাড়েনি রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিনের দাম। দু'বছরের মধ্যেই যেক্ষেত্রে দাম বাড়িয়েছে ইউ পি এ-২ সরকার।

দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ২০১১-১২বাজেটে পেট্রোপণ্যে ভরতুকি ব্যাপকভাবে কমানোর সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় বাজেটে আগের বছরের ৩৮হাজার ৩৮৬কোটি টাকা থেকে ভরতুকির জন্য এবার বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩হাজার ৬৪০কোটি টাকা। ভরতুকির অঙ্ক কমানো হয়েছে ১৪হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ সেই বাজেটেই কর্পোরেট কর ছাড়া দেওয়ার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৮০হাজার কোটি টাকা।

দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০১০'র জুনে দাম বাড়ানো হয় ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের। তখন ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৬৮ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ১১০মার্কিন ডলার। উল্লেখ্য, এক ব্যারেল সমান ১৫৮.৯৮লিটার এবং এক মার্কিন ডলার সমান ৫০টাকা ধরলে, লিটার প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম হয় ৩৪টাকা ৬০ পয়সা। পরিশোধন খরচ ছাড়া বিপুল পরিমাণ কর বসে তেলের ওপর। বামপন্থীরা যে কর তুলে নেওয়ার জন্য বারেবার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার বর্ধিত দামের ওপর করে ছাড় দিয়েছিল। কেন্দ্র নিজের করে ছাড় না দিয়ে একাধিকবার পেট্রোপণ্যের দামের বোঝা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে রাজ্যগুলিকে কর ছাড় দেওয়ার চিঠি দিয়েছে। এখন দেখার, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালায় নিজেদের সরকারের বেলায় কী ভূমিকা নেয় কেন্দ্র।

ডিক্সন লেন, এন আর এসে
চিকিৎসকদের উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৫ই মে— জয়ের আনন্দে আত্মহারা তৃণমূলীরা রবিবার সকাল থেকে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালালো চিকিৎসকদের ওপর। এদিন সকাল থেকে শিয়ালদহের প্রাচী সিনেমার পাশে ডিক্সন লেনে চিকিৎসকদের হস্টেলে হামলা চালানো হয়। ডিক্সন লেনের ডিক্সন হোস্টেল বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে এন আর এস হাসপাতালের চিকিৎসকরা থাকেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের আর এম ও থেকে নানা স্তরের চিকিৎসক-ছাত্র। 

সকাল থেকে মুচিপাড়া এলাকার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলীরা ডিক্সন হোস্টেল গিয়ে চিকিৎসকদের হুমকি দিতে থাকে। কারণের তোয়াক্কা না করে তারা চিকিৎসকদের দুই ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল খালি করার হুমকি দেয়। হঠাৎ করে হস্টেল ছেড়ে চলে গেলে হাসপাতালের জরুরী ডিউটির ক্ষতি হবে, এমনকি তাঁদের বরখাস্তও করা হতে পারে একথা জানার পর কুৎসিত ভাষায় চিকিৎসকদের আক্রমণ করতে থাকে তারা। ঘটনাটি চিকিৎসকরা মুচিপাড়া থানায় জানালে পুলিস সেখানে যায় ঠিকই, কিন্তু কোনোভাবে সেই দুষ্কৃতীদের রোখা সম্ভব হয়নি। 

এই ঘটনায় প্রায় ২০জন চিকিৎসক প্রাণ ভয়ে হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এরপরেও যাঁরা দুরবর্তী জেলায় বাড়ি বলে চলে যাওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁদের রাতে দেখে নেওয়ার ধারাবাহিক হুমকি দিয়ে যায় তারা। মুচিপাড়া থানার পুলিস এলাকায় পিকেট বসালেও ছাত্র সেজে তারা ছোট্ট ডিক্সন লেনে ঢুকে বারংবার চিকিৎসকদের ভয় দেখিয়ে যায়। যত দিন গড়িয়েছে, ততই তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের আক্রমণ আরো শানিত হয়েছে। বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে বর্ষীয়ান চিকিৎসকদের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। 

এদিকে ডিক্সন হোস্টেলের সঙ্গে কলকাতার এন আর এস হাসপাতালের ভিতরে ঢুকেও এদিন তাণ্ডব চালায় তৃণমূলীরা। তারা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে সেখানকার বয়েজ হস্টেলে হামলা চালায়। দু-দু'বার চালানো হয় সেই আক্রমণ। এই ঘটনায় একজন জুনিয়ার চিকিৎসক আহত হয়েছেন। রাতের দিকে এই আক্রমণ রুখতে সেখানেও বসানো হয়েছে পুলিস পিকেট।

মিথ্যা রটনা করে আক্রমণের
কৌশল পশ্চিম মেদিনীপুরে

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর, ১৫ই মে— পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় পার্টি অফিস দখল এবং সি পি আই (এম) কর্মীদের আক্রমণের জন্য একই কায়দার পরিকল্পিত কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। কুৎসা প্রচার করে পার্টি অফিসগুলি দখল করার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা। শনিবার দুপুরে সি পি আই (এম)-র পিংলা জোনাল কমিটির অফিসে হামলা করে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা পার্টিকর্মীদের অফিস থেকে বের করে দেয় এবং তারপর পার্টি অফিসটি ঘিরে রাখে। পার্টির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে রবিবার পার্টি অফিসটির সামনে থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিস। উল্লেখ্য, সি পি আই (এম)-র পার্টি অফিস সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে পার্টি অফিস থেকে 'অস্ত্র উদ্ধারের' নামে বিভিন্ন পার্টি অফিস দখল করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিভিন্ন জায়গায় সি পি আই (এম) কর্মীদের ধরে ব্যাপক মারধর করে তাদের কাছে অস্ত্র রয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ জানিয়ে পুলিসের কাছে তুলে দিচ্ছে, এমন ঘটনাও ঘটছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এইভাবে মারধর এবং কুৎসার নতুন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy


বদলার লড়াইয়ে নিহত তিন

নিজস্ব প্রতিবেদন

ভোটের ফল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন আশা প্রকাশ করেছিলেন, সব রাজনৈতিক দল মানুষের রায় মেনে নেবে এবং শান্তি বজায় রাখতে বলবে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের।

'ঐতিহাসিক' জয়ের দিন দলীয় কর্মীদের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

জেলায় জেলায় সর্বদল বৈঠক করে শান্তি রাখার আর্জি জানিয়েছিল প্রশাসন। সর্বদল বৈঠক করে একই আবেদন করেছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার।

কিন্তু বাস্তব বলছে, এত সব আবেদনের পরেও শান্তি দূর অস্ত্‌, ফল প্রকাশের পরে পরেই রক্তাক্ত বাংলার মাটি। এক দিকে, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে আক্রান্ত হচ্ছে সিপিএম। শনি ও রবিবারে খুন হয়েছেন দুই দলীয় নেতা। এটা মুদ্রার একটা দিক। অন্য পিঠের ছবি হল, রাজ্য জুড়ে বিপর্যয়ের মধ্যেও যে-সব এলাকায় তারা এখনও প্রভাব ধরে রেখেছে, সেখানে পাল্টা মারের রাস্তায় হাঁটছে সিপিএম-ও। যার জেরে মারা যাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। রাজ্য শাসনে বদল' এলেও 'প্রতিশোধের' রাজনীতির মানসিকতা বদলায়নি। দলের শীর্ষ স্তর থেকে শান্তির আবেদন করা হলেও নিচু তলা যে কার্যত 'বল্গাহীন' তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরের পর হিংসাত্মক ঘটনায়।

গড়বেতায় নিহত সিপিএম নেতা জিতেন নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন
মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সুশান্ত ঘোষ। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার, ফল বেরোনোর রাত থেকেই যে রক্ত ঝরার শুরু, তা অব্যাহত রবিবারও। এ দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায়। যেখানে এ দিন বিকেলে সিপিএমের স্থানীয় শালতোড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অজিত লোহারকে (৫৫) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও টাঙ্গির কোপে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন তালড্যাংরা জোনাল কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য সমীর নাগ। দু'জনেই মামড়া খড়খড়ি গ্রামের বাসিন্দা। সমীরবাবু আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সন্ধ্যায় গড়বেতা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম-সহ প্রতিনিধিদল।

অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় খুন হয়েছেন দুই তৃণমূল কর্মী। শনিবার রাতে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার চকমারিচা গ্রামে গুলি করে মারা হয় ছায়েদ আলিকে (২৮)। এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার ভাঙর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। এ দিনই ক্যানিংয়ের জীবনতলায় গুলিবিদ্ধ হন মোবারক মোল্লা। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাজারহাট লাগোয়া 'অ্যাকোয়াটিকা' এলাকাতেও গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল সমর্থক। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় বিশ্বনাথ দাস নামে এক তৃণমূল সমর্থককে ভোজালি দিয়ে কোপানো হয়। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে।

এ দিনই ভরসন্ধ্যায় বহরমপুর শহরে জনবহুল এলাকায় কামাল শেখ (৪৮) নামে এক ব্যক্তিকে বোমা মেরে ও গুলি করে খুন করা হয়। নিহতকে নিজেদের সমর্থক বলে দাবি করে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেন, "কামালকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। ওর পুরো পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। আমি শোকস্তব্ধ।"

রাজনৈতিক হিংসায় তেতে আছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। শনিবার দুপুরেই গড়বেতায় সিপিএমের জোনাল সদস্য জিতেন নন্দীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল হয়েছে। অস্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগে এ দিন সকালে গোয়ালতোড়ে সিপিএমের কার্যালয়ে দলের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলেকে ঘণ্টা তিনেক ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল। এমনকী পুলিশকে ফোন করা হলে জবাব মিলেছে, 'এটা আমাদের কাজ নয়'। শেষে কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। তবে অস্ত্রের হদিস মেলেনি। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড, চন্দ্রকোনা টাউন, কেশপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ১৫টিরও বেশি পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়েছে তৃণমূল।

পরিস্থিতি বুঝে এ দিন থেকে গড়বেতা ও গোয়ালতোড় থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেছেন, "এই ধরনের পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত। সামান্য গোলমালের আশঙ্কায় উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। প্রয়োজনে জঙ্গলমহল থেকে কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ওই সব অঞ্চলে পাঠানো হবে। মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, প্রশাসনের উপর আস্থা রাখুন।"

এই 'আস্থা' রাখা নিয়েই প্রশ্ন। দফায় দফায় হিংসার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন আইনশৃঙ্খলার এতটা অবনতি? ছয় দফার ভোট এতটা শান্তিতে মেটার পরে কী এমন হল, যার জন্য রাতারাতি উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেল? পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, একটা কারণ অবশ্যই বাম-জমানার অবসান। যার ফলে বিরোধী কর্মী-সমর্থকেরা এ বার মারের রাস্তায় নেমেছেন অনেক জায়গায়। নিজেদের জোর যেখানে, সেখানে পাল্টা মার দিচ্ছে সিপিএম-ও। তা ছাড়া, এখন তদারকি সরকার। নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়নি। এই অবস্থায় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনও অনেক ক্ষেত্রে গা লাগাচ্ছে না।

এই অবস্থায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন ফের করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ দিন বলেন, "ফল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ঘটনা ঘটছে। আমার আবেদন, এই সব বন্ধ হোক।" তবে তাঁর কাছে খবর আসে, বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, আগুন লাগানো, শহিদ বেদি ভাঙার মতো ঘটনা ঘটছে। মহারাষ্ট্র নিবাস হলে তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেন, "সিপিএম আমাকে মেরেছে বলে আমি পাল্টা মারতে যাব না। দলীয় কর্মীরা মনে রাখবেন, মানুষ ওদের শাস্তি দিয়েছেন। পাল্টা হিংসায় যাবেন না।"

বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজনৈতিক অশান্তি সামালানোর কাজটা যে তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ হবে, তা বিলক্ষণ জানেন তৃণমূল নেত্রী। সে জন্য দিল্লি যাওয়ার আগেও এ দিন কালীঘাটের বাড়িতেও মমতা শান্তি রক্ষার আবেদন করেছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "শান্তি রক্ষায় সকলকেই চেষ্টা চালাতে হবে। আমি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অনুরোধ করেছি, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে তিনি যেন এ ব্যাপারে সচেষ্ট হন।"

অন্য দিকে, ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস বন্ধের আর্জি নিয়ে আজ, সোমবার রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন এ কথা জানিয়ে বলেন, "নির্বাচন কমিশন হাত গুটিয়ে নিয়েছে। তারা কিছু করতে পারবে না বলেছে। তারা যদি এখন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকে, তা হলে তাদের বলে আর কী হবে?" পিডিএসের রাজ্য সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরীও শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন।

ছাড়তে চান কেন্দ্রীয় কমিটিও

বুদ্ধ নারাজই, 'আড়াল' করার চেষ্টায় বিমান

সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা

জিরবিহীন নির্বাচনী বিপর্যয়ের মধ্যেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে নতুন সঙ্কটে সিপিএম।

দলের পলিটব্যুরোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিতেও থাকতে চাইছেন না বুদ্ধবাবু। পলিটব্যুরোর তরফে তাঁকে প্রাথমিক ভাবে ইস্তফা দিতে 'নিরস্ত' করা হয়েছিল। সিপিএম সূত্রের খবর, আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি কোনও পদত্যাগপত্র পাঠাননি ঠিকই। আবার নিজের মনোভাবও 'পরিবর্তন' করেননি। বুদ্ধবাবুর এই 'অনড়' অবস্থানে একই সঙ্গে প্রবল 'অস্বস্তি'তে সিপিএমের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব। দলের 'অস্বস্তি' আরও বাড়িয়ে আজ, সোমবার পলিটব্যুরো বৈঠকে যোগ দিতে শেষ পর্যন্ত দিল্লি যাননি বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী।

বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের ছবি স্পষ্ট হতে শুরু করতেই দিল্লির এ কে জি ভবনে বুদ্ধবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনি আর থাকতে চান না। নির্বাচনে ভরাডুবির 'নৈতিক দায়' নিয়েই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। পলিটব্যুরোর তরফে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়, এখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নয়। সেই যাত্রায় প্রাথমিক ভাবে তাঁকে 'নিরস্ত' করা গেলেও বুদ্ধবাবু তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাননি। সেই বার্তা দেওয়ার জন্যই পলিটব্যুরো বৈঠকে তিনি গেলেন না বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। এখনও পর্যন্ত দলীয় সহকর্মীরা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ব্যর্থতার 'দায়' তিনি 'ব্যক্তিগত স্তরে' না-নেন। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধবাবু তাঁর অবস্থানে অটল থাকলে এমন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যেখানে তিনি থেকে যাবেন শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়ে। পলিটব্যুরোয় আর যাবেন না।

বস্তুত, দলীয় সূত্রের মতে, বুদ্ধবাবুর সামনে এখন তিনটি পথ রয়েছে। প্রথমত, দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শে ইস্তফার ইচ্ছা থেকে সরে এসে যেমন ছিলেন, তেমন ভাবেই নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যে ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই। দ্বিতীয়ত, দলের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে নিজের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তেই অনড় থাকা। তৃতীয়ত, এই দুই সম্ভাবনার মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে পলিটব্যুরো থেকে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ানো কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে রয়ে যাওয়া। যে ঘটনা ঘটেছিল সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত পি সুন্দরাইয়ার ক্ষেত্রে। দলের এক নেতার কথায়, "সশস্ত্র বিপ্লব নিয়ে তাত্ত্বিক বিরোধে সুন্দরাইয়া সাধারণ সম্পাদকের পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পরে আর পলিটব্যুরোয় যাননি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। সরোজ মুখোপাধ্যায় এক বার তাঁকে পলিটব্যুরোয় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা কার্যকর হয়নি। শেষ জীবনে অবশ্য অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য নেতৃত্বে তাঁকে ফেরানো হয়েছিল।"

বুদ্ধবাবুর এমন মনোভাবে সঙ্কট আরও গভীর হচ্ছে সিপিএমের। সাংবিধানিক রীতি মেনে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। এ বার দলের উচ্চতর কমিটির পদও তিনি ছেড়ে দিলে প্রশ্ন উঠবে, এমন সাংগঠনিক বিপর্যয়ের পরে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কেন পদে থেকে যাবেন? বিমানবাবু ইস্তফা দিতে চাইলে প্রশ্ন উঠবে, লোকসভা ভোটে ভরাডুবি এবং দুই রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পরে প্রকাশ কারাট কেন সাধারণ সম্পাদক থেকে যাবেন? সিপিএমে আশঙ্কা, বুদ্ধবাবুর ওই 'কাঙ্খিত' সিদ্ধান্ত দলে 'প্যাণ্ডোরার বাক্স' খুলে দেবে। এই সঙ্কট মুহূর্তে যা একেবারেই 'অনভিপ্রেত'। তার চেয়ে 'স্থিতাবস্থা' থাকা ভাল। পলিটব্যুরো সূত্রের ইঙ্গিত, সে জন্য কারাট এখন নিজের 'স্বার্থে'ই বুদ্ধবাবুকে 'নিরস্ত' করতে চান।

তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোটের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের জেরে সিপিএম এমনিতেই সার্বিক ভাবে বিপর্যস্ত। হারের কারণ নিয়ে যথাযথ ময়নাতদন্তে নামার আগেই দলে দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুদ্ধবাবুকে কার্যত 'আড়াল' করতে নামতে হয়েছে বিমানবাবুকে। বুদ্ধবাবুর পলিটব্যুরো ছাড়তে চাওয়ার খবরকে 'গুজব' বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন বিমানবাবু। পলিটব্যুরো বৈঠকে যোগ দিতে রবিবার দিল্লি যাওয়ার আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, "আমার এই রকম কিছু জানা নেই।" তা হলে বুদ্ধবাবু পলিটব্যুরো বৈঠকে গেলেন না কেন? বিমানবাবু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, "বুদ্ধবাবু গেলেন না এই কারণে যে, রাজ্যে নির্বাচন-উত্তর সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। উনি জেলা থেকে রিপোর্ট নিয়ে সমন্বয়ের কাজ করছেন। প্রত্যেকটা জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলীয় কার্যালয়ে আসছেন, পরিস্থিতির উপরে নজরদারি চালাচ্ছেন। আমি আর নিরুপম (সেন) পলিটব্যুরো বৈঠকে যাচ্ছি।" রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ দিনই পলিটব্যুরোয় পেশ করার জন্য বিমানবাবুর রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যে 'পরিবর্তনে'র ডাক মানুষ গ্রহণ করেছেন, তার বিপরীতে তাঁদের কথা গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং এই সম্ভাবনার আগাম আন্দাজও তাঁরা করে উঠতে পারেননি— প্রাথমিক ভাবে এই বিশ্লেষণই রাজ্য নেতৃত্বের তরফে পলিটব্যুরোয় পেশ করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

এর আগে একাধিক বার পলিটব্যুরোর বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন বুদ্ধবাবু। তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবির অব্যবহিত পরেই পলিটব্যুরো বৈঠকে যখন তিনি যাননি, সেই সময় যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে নির্বাচন-পরবর্তী সন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যই তিনি কলকাতা ছাড়তে পারছেন না। এখন আর বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী নন। 'তত্ত্বাবধায়ক' মুখ্যমন্ত্রী হলেও প্রশাসন তাঁর হাতে নেই। তাই এ বার বিমানবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, 'দলের নেতা' হি েসবে বুদ্ধবাবু সন্ত্রাস-পরিস্থিতির উপরে 'নজর' রাখছেন। প্রসঙ্গত, গড়বেতায় ভোট-পরবর্তী 'সন্ত্রাসে' দলের এক কর্মী খুন হওয়ার পরে এ দিন ঘটনাস্থলে বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে গিয়েছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। বুদ্ধবাবু কিন্তু দলের নেতা হিসাবেও ঘটনাস্থলে গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করেননি। স্বভাবতই, বিমানবাবুর ব্যাখ্যা দলের অন্দরেই খুব 'গ্রহণযোগ্য' হচ্ছে না।

সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, গোটা রাজ্যে দলের বেনজির বিপর্যয় এবং যাদবপুরে নিজের বড় ব্যবধানে পরাজয় সহজে মানতে পারছেন না স্বভাবে 'সংবেদনশীল' বুদ্ধবাবু। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রফুল্ল সেন ভোটে হেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরাজয় হয়েছিল তাঁর মন্ত্রিসভার এককালীন সহকর্মী এবং রাজনৈতিক ভাবে 'ওজনদার' প্রার্থী অজয় মুখোপাধ্যায়ের কাছে, তা-ও মাত্রই ৮৮১ ভোটে। সেখানে বুদ্ধবাবুকে হার স্বীকার করতে হয়েছে তাঁরই প্রশাসনে এক সময় কাজ-করা এক প্রাক্তন আমলার কাছে, বিপুল ব্যবধানে। এই 'ধাক্কা' মানতে পারছেন না বুদ্ধবাবু। একই সঙ্গে তিনি আরও 'ব্যথিত' তাঁর দল এবং বিদায়ী মন্ত্রিসভার কিছু সহকর্মীর 'আক্রমণে'। এক মন্ত্রী যেমন "হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গিয়েছে" বলে প্রবল কটাক্ষ করেছেন, তেমনই আর এক নেতা হার নিয়ে কথা বলতে গেলেই শুরু করছেন "বুদ্ধদা'ই তো হেরে গেল" বলে। এর পরে বুদ্ধবাবুর মনে হচ্ছে, দলে এখন তাঁকেই কাঠগড়ায় তোলার পালা চলবে। তার চেয়ে 'দায়' স্বীকার করে দলের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিও ছেড়ে দেওয়াই ভাল।

তৃণমূল এবং কংগ্রেস শিবির এই পরিস্থিতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, "উনি (বুদ্ধবাবু) অনেক কিছুই বলেন। কিন্তু করেন না!" প্রদেশ কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, "নির্বাচনী ময়দানে হার-জিত যা-ই হোক, সামনে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই উচিত। তবে এটাও তো ঠিক, ঘটনাটা ঘটছে ৩৪ বছর পরে! এত দিন সব যেমন চলছিল, তার কিছুই চলবে না! এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বুদ্ধবাবুর পক্ষেও তো সহজ নয়!"

তাঁর এবং তাঁর দলের এখন সত্যিই ঘোর 'দুঃসময়'!

'সিএমও' গড়তে চান মমতা

সব স্তরের প্রতিনিধি থাকবেন মন্ত্রিসভায়

অনিন্দ্য জানা  কলকাতা

ক দিকে সমস্ত জাতি-ধর্ম সমন্বয় এবং অন্য দিকে সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তফসিলি জাতি-উপজাতি, জঙ্গলমহল, বিশিষ্ট জন ও মহিলা— সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের নিয়েই তাঁর মন্ত্রিসভা গঠন করতে চান রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আকারে ছোট হলেও সেখানে তিনি স্থান দিতে চান একাধিক 'জায়ান্ট-কিলার'কেও।

'জায়ান্ট-কিলার'-এর তালিকায় অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীকে হারানো মণীশ গুপ্তের নাম থাকার প্রবল সম্ভাবনা। তাঁর সঙ্গেই থাকার সম্ভাবনা ডাকসাইটে মন্ত্রীদের হারিয়ে জয়ীদের। রবিবার পরিষদীয় দলের বৈঠকেই মমতা উদাহরণ হিসেবে তাঁর সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় উত্তরবঙ্গ থেকে জয়ী সংখ্যালঘু নেতা করিম চৌধুরী এবং মতুয়া (তফসিলি জাতি) সম্প্রদায়ের জয়ী বিধায়ক মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন। তবে তার ভিত্তিতেই দলের নেতারা বা ওই দু'জনেও ভাবছেন না যে, তাঁরাই মন্ত্রী হবেন। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, "দলনেত্রী জাতিগত বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গিয়ে হাতের কাছে উদাহরণ হিসেবে ওঁদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে, ওঁরাই মন্ত্রী হচ্ছেন!"

কংগ্রেসকে তো মমতা মন্ত্রিসভায় চাইছেনই! চান জোটসঙ্গী এসইউসি-কেও। তারা রাজ্যে মাত্র একটি আসন জিতলেও! এবং আগে থেকেই মন্ত্রিসভায় যোগ না-দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাখলেও। কিন্তু 'জোটধর্ম' বজায় রেখে মমতা তাদেরও মন্ত্রিসভায় চান। যদিও তাঁর 'জোটসঙ্গী' রবিবারই জানিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে তাদের 'আনুষ্ঠানিক' জোট ভেঙে গিয়েছে!

প্রত্যাশিত ভাবেই, মন্ত্রিসভায় রাজ্যের সমস্ত জেলারই 'প্রতিনিধিত্ব' রাখতে চান মমতা। রাখতে চান 'প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা' সম্পন্ন বিধায়কদেরও। যাতে দীর্ঘ ৩৪ বছর বিরোধী পক্ষে থাকলেও ক্ষমতায় আসার পর তাঁর মন্ত্রিসভা একেবারে 'আনকোরা' মনে না-হয়।

বস্তুত, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের 'পিএমও'-র ধাঁচে রাজ্যেও 'সিএমও' গঠন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে মমতার। যেখানে তিনি নিয়ে আসতে চান কেন্দ্রীয় স্তরে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন 'দক্ষ এবং অভিজ্ঞ' বঙ্গজ অফিসারদের। একাধিক অফিসারের নাম মাথায় রয়েছে মমতার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এমনকী, 'পিএমও'-তে কর্মরত অফিসাররাও। কিন্তু পাশাপাশিই মমতা মনে করছেন, 'পিএমও'-তে কোনও বাঙালি অফিসার থাকলে তিনি ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর তরফে রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করতে পারবেন। বিশেষত, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিষয়ে। ফলে মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই 'সিএমও' এবং ওই অফিসারদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা।

রাজ্যে নতুন হলেও মন্ত্রী হিসেবে মমতার কেন্দ্রীয় স্তরে অভিজ্ঞতা যথেষ্ট। লোকসভা সাংসদ হিসেবে মোট ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা তো বটেই, তিন বার পূর্ণমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রে চার-চার বার মন্ত্রী হয়েছেন তিনি! প্রথম ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন নরসিংহ রাওয়ের আমলে ১৯৯১ সালে। দ্বিতীয় বার অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী। তৃতীয় বার বাজপেয়ী মন্ত্রিসভাতেই কয়েক মাসের জন্য কয়লা দফতরের মন্ত্রী। তার পর ২০০৯ থেকে মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী।

লোকসভার সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ার জন্য এখনও ছ'মাস রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রিত্বে শপথ নেওয়ার আগে মমতাকে অবশ্যই রেলমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিতে হবে। কিন্তু তার আগে তিনি পরবর্তী রেলমন্ত্রী নিয়ে মনমোহন এবং সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আলোচনা সেরে নিতে চান। কারণ, যিনিই রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে যান না কেন, তাঁকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হবে। মমতা ইস্তফা দিলে দফতরটি সাময়িক ভাবে যাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। পারলে আজ, সোমবার রাতেই কলকাতায় ফিরতে চান মমতা। এ দিন দিল্লি রওনা হওয়ার আগে মমতা জানান, এই সফরে নয়। তবে কলকাতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রিত্বে শপথ নেওয়ার অব্যবহিত আগে তিনি ফ্যাক্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর ইস্তফা পাঠিয়ে দেবেন। মমতা জানান, আজ, সোমবার সকালে তিনি প্রণববাবুর সঙ্গে গিয়ে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। দুপুরের পর দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।

দিনের বৃত্তান্ত

4_6e চতুর্দশ বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি।
4_6e তৃণমূল পরিষদীয় দলের নেত্রী নির্বাচিত মমতা।
4_6e তৃণমূল পরিষদীয় দলের সহকারী নেতা পার্থ।
4_6e মুখ্য সচেতক শোভনদেব।
4_6e কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিপ্রিয়।
4_6e সরকার গড়তে চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি ।
4_6e শপথ রাজভবনেই। ২১ জুলাই ব্রিগেডে বিজয়োৎসব।
4_6e প্রণবের সঙ্গে বিশেষ বিমানে দিল্লি গেলেন মমতা।
4_6e কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক। অধিকাংশ বিধায়কই সরকারে যেতে চান।
4_6e রাজ্যপালের কাছে কংগ্রেসও।

নিজের এবং তাঁর মন্ত্রিসভার শপথের জন্য মমতা ২০ তারিখ, শুক্রবার দিনটিই প্রাথমিক ভাবে পছন্দ করেছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য

নির্ভর করছে সনিয়া-মনমোহনের উপরই। ২০০৬-এর ১৮ মে শপথ নিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার। মমতার তা নিয়ে কোনও 'বক্তব্য' না-থাকলেও তাঁর দলের নেতাদের সিংহভাগ সেই দিনের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চান। ১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার। আম-বাঙালির মতো মমতারও 'বৃহস্পতিবারের বারবেলা' নিয়ে সংস্কার রয়েছে। এমনিতে খুব জরুরি না-হলে সাধারণত মমতা ওই বারে দুপুরের আগে কোনও কর্মসূচি রাখেন না। ফলে, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার আগে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হলে হতে পারে। তার পরে নয়।

২১ মে রাজীব গাঁধীর মৃত্যুদিবস। সে দিন সনিয়ার পক্ষে কলকাতায় আসা সম্ভব নয়। তার পর দিন, ২২ মে ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। বস্তুত, সে দিন টানা দু'বারের ইউপিএ সরকারের সপ্তম বর্ষপূর্তি। ২০০৪ সালে ওই দিনেই শপথ নিয়েছিল মনমোহন-সরকার। এ বছরও সেই দিনটি 'পালন' করার কথা। বিশেষত, পাঁচ রাজ্যের মধ্যে তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরি ছাড়া তিনটি রাজ্যেই কংগ্রেসের জয়ের পর। সে দিনও সনিয়া-মনমোহনের পক্ষে কলকাতায় আসা সম্ভব নয়।

ফলে বাকি রইল ২০ তারিখ, শুক্রবার।

শুক্রবার মমতারও যথেষ্ট 'পছন্দের' দিন। এক দিকে জুম্মাবার। অন্য দিকে খ্রিস্টানদের 'গুড-ফ্রাইডে'। মমতা নিজেও শুক্রবার ব্রত পালন করেন। সারা দিন কার্যত উপবাসেই থাকেন। 'ঐতিহাসিক' ভোটে জয়ের দিনটাও শুক্রবার হওয়ায় সেই বারের 'মাহাত্ম্য' মমতার কাছে আরও বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত অন্য রকম কিছু না-হলে ওই দিনই শপথ নিতে চলেছেন মমতা।

পূর্ণমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নিয়ে প্রাথমিক ভাবে ছোট মন্ত্রিসভাই করবেন মমতা। কংগ্রেসকে তিনি মন্ত্রিসভায় চান। কিন্তু তাদের ক'টি দফতর দেওয়া হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, "হতে পারে কংগ্রেসকে একটি পূর্ণমন্ত্রী এবং দু'টি প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হল। অথবা দু'টি পূর্ণমন্ত্রী এবং তিনটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করছে মমতাদির সঙ্গে প্রণববাবু এবং সনিয়া গাঁধীর আলোচনার উপর।"

প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা অবশ্য জানাচ্ছেন, মন্ত্রিত্ব নিয়ে 'দর-কষাকষি'র জায়গায় তাঁরা নেই। ওই নেতার কথায়, "তৃণমূল একাই অনায়াসে সরকার গঠনের গরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে। আমাদের অবস্থা জোট গড়ার সময়ের মতোই! যা দেওয়া হবে, তা-ই মেনে নিতে হবে।" তবে কংগ্রেসকে মন্ত্রিসভায় রাখার মধ্যে মমতাও 'রাজনৈতিক মাস্টারষ্ট্রোক' দিতে চান। কারণ, তিনি কোনও ভাবেই চাইবেন না, আগামী দিনে বাম-বিরোধী ভোট ভাগ হোক। যে কারণে একটি আসন পেলেও তিনি এসইউসি-কেও মন্ত্রিসভায় চেয়েছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় ওই 'অতি-বাম' দলের প্রভাবের কথা মমতা নিজেও ঘনিষ্ঠমহলে একাধিক বার বলেছেন। মমতা-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, "এখন থেকেই কিন্তু নেত্রীর চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে ২০১৬-র বিধানসভা ভোট নিয়ে। কারণ, তিনি পরিকল্পনায় বিশ্বাসী। রাজ্যের বাম-বিরোধী মানুষ আমাদের যে ভাবে আশীর্বাদ করেছেন, তাতে আমাদেরও দায়িত্ব তাঁদের ইচ্ছার মর্যাদা দেওয়া।"

পূর্ণমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে মমতার মন্ত্রিসভায় কোনওমতেই ৪৪ জনের বেশি সদস্য থাকবেন না। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী যে কোনও রাজ্য বিধানসভায় মোট বিধায়ক সংখ্যার (এ রাজ্যের ক্ষেত্রে ২৯৪) ১৫ শতাংশের বেশি মন্ত্রী করা যাবে না (এ রাজ্যের ক্ষেত্রে যে সংখ্যাটা ৪৪)। বস্তুত, সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ের পর বামফ্রন্টের চার মন্ত্রীকে ইস্তফা দেওয়ানো হয়েছিল। তার পর থেকে বাম-মন্ত্রিসভার আয়তন সর্বোচ্চ ৪৪-ই থেকেছে। কিন্তু মমতা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি ছোট মন্ত্রিসভা করতে এবং কয়েকটি 'গুরুত্বপূর্ণ' দফতর প্রাথমিক ভাবে নিজের হাতেই রাখতে চান।

তৃণমূলে আপাতত শুরু হয়েছে প্রতীক্ষার প্রহর। কে কী পাবেন! বা আদৌ পাবেন তো! ১৮৪ জন বিধায়ককে বেদম উদ্বেগে রেখে (কাউকে মন্ত্রিত্ব নিয়ে। কাউকে দফতর) দিল্লি উড়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাম বাংলা: স্মৃতি ও কাহিনি

মন্ত্রী হঠাৎ কেন বেঁকে
বসলেন, আজও বুঝিনি
পঙ্কজ পারেখ

চৌত্রিশ বছর বাদে বাম শাসনের অবসান। প্রায় তিনটে যুগ। কেমন ছিল সাধারণের জীবন?
স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার আগে সেই সময়ের কিছু খণ্ডচিত্র প্রকাশ করা হচ্ছে।
 আজ দ্বিতীয় পর্ব।

রে! তা হলে কলকাতাতেই বা নয় কেন?

২০০৬ সালে নেপলসে পা রেখে প্রথমেই মাথা চাড়া দিয়েছিল প্রশ্নটা। ইতালির ওই শহরে স্বর্ণকারদের কাজকর্ম আর তার পরিকাঠামো তখন ঘুরে দেখছি আমরা। বারবার মনে হয়েছিল, আমাদের রাজ্যেও ওই রকম 'ক্লাস্টার' (গুচ্ছ ভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প) তৈরি কী অসম্ভব জরুরি! স্বর্ণশিল্পে নিযুক্ত কর্মীদের জন্য মনের মতো কাজের জায়গা নির্মাণ কত গুরুত্বপূর্ণ!

সোনার গয়না তৈরি কিংবা তার পালিশ। বা হয়তো হাতে গড়া হুক, ক্লাস্পের মতো ছোট ছোট গয়নার অংশ। এই সব কাজের সঙ্গে খাস কলকাতাতেই তো যুক্ত রয়েছেন অসংখ্য কর্মী। মূলত বৌবাজার এলাকায় যাঁরা কাজ করেন এক-একটি চিলতে ঘরে। গাদাগাদি ভিড়ে। আর কাজ করার পক্ষে প্রায় অনুপযুক্ত পরিবেশে। সংসারের হাঁড়ি ঠেলতে গিয়ে বাধ্য হয়েই রোজ 'বুক ভরে' বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নেন তাঁরা। এঁদের জন্য এক টুকরো 'নেপলস' কলকাতায় নিয়ে যেতে পারলে মন্দ কী?

শহরে ফিরেই শুরু করলাম বিকল্প জায়গার খোঁজ। বেলঘরিয়ায় তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে মোহিনী মিল। পড়ে আছে তার ৭৬ বিঘা জমি। দেখে মনে হল, পর্যাপ্ত জায়গা। 'ক্লাস্টার' তৈরির উপযুক্ত পরিবেশও।

জায়গাটা মনে ধরার অবশ্য বেশ কতগুলো কারণ ছিল। যেমন মনে হয়েছিল, এখানে ৪ হাজার কারখানায় কাজ করবেন প্রায় ৮০ হাজার কর্মী। তাই কারখানা গড়তে প্রয়োজনীয় জমির পাশাপাশি অবশ্যই দরকার স্বর্ণকারদের থাকা-খাওয়ার উপযুক্ত জায়গা। তাই এক সঙ্গে অনেকটা জমি হাতে না-পেলে, তা করা বেশ শক্ত। আবার শুধু জমির পরিমাণই তো সব নয়। মাথায় রাখতে হবে তার নিরাপত্তার বিষয়টিও। কারণ, গয়নার ব্যবসায় অনেক সময়ই যাতায়াতের সময় স্বর্ণকারদের থলিতে থাকে বহু টাকার সোনা। তাই জমি নেওয়া উচিত এমন জায়গায়, যা লোকালয়ের মধ্যে। যেখানে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

মোহিনী মিলের পড়ে থাকা জমিতে প্রকল্প গড়তে শিল্প দফতরের দ্বারস্থ হলাম। উৎসাহ দেখালেন খোদ মন্ত্রী। কিন্তু একই সঙ্গে ঝুলিয়ে দিলেন প্রশ্নচিহ্নও। জানালেন, বন্ধ কারখানার জমি না ছাড়িয়ে কাজ এগোনো সম্ভব নয়। তা ছাড়া, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিলেন তিনি। বলেও দিলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির কোন নেতার সঙ্গে দেখা করতে হবে আমাকে। বুঝলাম, দলের লোক চটতে পারে, এমন কোনও কাজ ভুলেও করবেন না 'আগ্রহী' মন্ত্রী। 'পার্টি'র সবুজ সংকেত না-পেলে ফাইল পড়ে থাকবে টেবিলেই।

এ বার ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকল চাহিদার তালিকা। প্রথমে ওই জমিতে বসবাসকারী মোহিনী মিলের পুরনো কর্মীদের পুনর্বাসন। বিনীত ভাবে জানালাম, আমরা রাজি। প্রতিশ্রুতি দিলাম, পাঁচ বিঘা জমিতে তৈরি হবে তাঁদের জন্য বাড়ি। পরবর্তী দাবি, ওই প্রকল্পে তাঁদের কর্মসংস্থানের। জানাতে বাধ্য হলাম, "সম্ভব নয়।" কারণ এ কাজে প্রয়োজন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের দক্ষতা।

তব এ সব ঝক্কি সামাল দিয়েই কাজ এগিয়েছিল বেশ কিছুটা। হয়তো সহজেই মিলত কেন্দ্রীয় অনুদানও। অনেকটাই এগিয়েছিল জমি ছাড়ানোর কাজ। এ কথা ঠিকই যে, সব জায়গাতেই হত্যে দিয়েছি বিস্তর। সরকারি দফতরে অনেক সময়ই এমন ব্যবহার পেয়েছি, যেন মস্ত অপরাধ করছি আমরা। কিন্তু তা-ও শেষ পর্যন্ত প্রধান পাওনাদার ব্যাঙ্ককে বোঝানো গেল যে, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের তো বাধ্যবাধকতা রয়েইছে। ফলে তা পেতে পারেন স্বর্ণকাররা। আর প্রকল্প চালু হলে, সেই ঋণ শোধের সম্ভাবনাও বেশি। নইলে স্রেফ অনুৎপাদক সম্পদ (নন পারফর্মিং অ্যাসেট) হিসেবে পড়ে থাকবে বন্ধ হওয়া মোহিনী মিল।

রাজি ছিলেন স্বর্ণকারেরাও। অমন দম বন্ধ করা পরিবেশ ছেড়ে সুস্থ বাতাবরণে কাজ করার সুযোগ কে-ই বা হাতছাড়া করতে চায়?

সব দিক যথাসম্ভব রক্ষা করেই প্রকল্প তৈরির পথে এগোচ্ছিলাম আমরা। শিল্পমন্ত্রীর পরামর্শ মেনেই আলোচনায় বসেছিলাম স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে। আলোচনা জারি ছিল রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের সঙ্গেও। কারণ দায়মুক্ত জমির তো তারাই মালিক। নিগমের আমলা অবশ্য প্রায় পাখি-পড়ার মতো করে মনে করাতেন, মন্ত্রীর ইচ্ছাই শেষ কথা।

আমরা অবশ্য তখনও বেশ নিশ্চিন্ত ছিলাম। কারণ, গোড়া থেকেই পুরো বিষয়টি জানতেন ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী। কিন্তু মাঝে তিন-তিনটি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ২০০৯-এর শেষে একেবারে হঠাৎই বেঁকে বসলেন তিনি! জেদ ধরলেন, নতুন করে বস্ত্রশিল্পই গড়তে হবে বন্ধ কাপড় কলের জমিতে। যুক্তি ছিল, না হলে কী করে ওই প্রকল্পে কাজ পাবেন মোহিনী মিলের কর্মীরা? অথচ স্বর্ণকারের কাজে যে নির্দিষ্ট ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, তা তো গোড়া থেকেই বহু বার বলে এসেছি আমরা! এত দিন পর, এত দূর এগিয়ে কেন হঠাৎ ওই প্রশ্ন উঠল, তা আমার মাথায় ঢোকেনি আজও।

মাথায় প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ফের দৌড়লাম শিল্পমন্ত্রীর কাছে। এবং এ বার দেখলাম কার্যত অসহায় তিনিও! বললেন, "কী আর করব? জমি তো আর আমার নয়।" পরামর্শ দিলেন নতুন জমি দেখার। মন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই তাঁর দরজা থেকে এ বার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের চৌকাঠে। নয়া এক প্রস্তাবিত শিল্পতালুকে জমি দেখাল তারা।

কিন্তু এ বার পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলাম আমরাই। কারণ, ওই জনমানবশূন্য জায়গায় সোনার গয়নার ব্যবসা করা অসম্ভব। অবাস্তব। নিরাপত্তার কারণেই। ফলে বন্ধ মোহিনী মিলের জমিতে স্বর্ণকারদের প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনার সেখানেই ইতি। সেটা ২০১০ -এর শেষ। মাঝে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আরও কয়েকটা মাস।

আর হ্যাঁঁ, যত দূর জানি, বস্ত্রশিল্পের কোনও প্রকল্পও ওখানে তৈরি হয়নি এখনও।

পরে ভেবেছি, কলকাতার 'সিস্টার সিটি' নেপলস পারলে আমরা পারি না কেন? ওখানকার 'নাপোলি'-তেই ক্লাব ফুটবলে প্রতিভার বিস্ফোরণ দেখিয়ে গিয়েছেন মারাদোনা। অথচ তার শিল্প-মডেলের কানাকড়িও নিতে কেন ব্যর্থ আর এক ফুটবল-পাগল শহর?

আসলে হয়তো এক জায়গাতেই হেরে গিয়েছিলাম আমরা— শিল্পের বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা ও স্বচ্ছতায়। এ বিষয়ে দুই শহরের ফারাক? সম্ভবত মারাদোনার সঙ্গে ময়দানের ফুটবলের। বা হয়তো তারও বেশি।

লেখক জেম অ্যাণ্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল (পূর্বাঞ্চল)-এর চেয়ারম্যান

সরকারে যাচ্ছে কংগ্রেস

সেই মহারাষ্ট্র নিবাস থেকেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের পথে

সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা

মতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রবিবার বিকালে দক্ষিণ কলকাতার মহারাষ্ট্র নিবাস থেকে শুরু হয়ে গেল।

এর সঙ্গেই সম্পূর্ণ হল রাজ্য-রাজনীতিতে আরও একটি বৃত্ত।

প্রায় ১৯ বছর আগে মহারাষ্ট্র নিবাসেই 'অসদুপায়ে' মমতাকে কংগ্রেস থেকে বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সে দিন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতাকে কংগ্রেস-ছাড়া করতে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন, এ দিন সেখানেই দেখা গেল তাঁদের এক জন সোমেন মিত্রকে। যিনি অধুনা তৃণমূলের সাংসদ। সোমেনবাবুর উপস্থিতিতেই মমতা 'সর্বসম্মত ভাবে' তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেত্রী নির্বাচিত হলেন। সেই সঙ্গেই তাঁর নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও 'আনুষ্ঠানিক ভাবে' শুরু হল। 'তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে' অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্রও।

মমতার নাম তৃণমূলের পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে প্রস্তাবের জন্য সভার সভাপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ ডাকেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। সুব্রতবাবুর প্রস্তাব সমর্থন করেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "এটা আমাদের সকলের কাছে গর্বের বিষয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের পরিষদীয় দলের নেত্রী হেেচ্ছন।" দলের সহকারী নেতা হিসেবে পার্থবাবু, মুখ্য সচেতক হিসেবে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে মনোনীত করা হয়েছে।

৮ এপ্রিল ১৯৯২। মহারাষ্ট্র নিবাস হলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দিন
মমতা ও সোমেনপন্থী কংগ্রেস কর্মীদের মারামারি। — ফাইল চিত্র ।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই প্রথম কোনও পরিষদীয় দলের সভা হল একেবারে খোলামেলা ভাবে। কোনও রুদ্ধদ্বার কক্ষে নয়। ওই বৈঠকের পরেই সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক দাবিপত্র নিয়ে রাজভবনে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী, সুলতান আহমেদ। পার্থবাবু জানান, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা নিয়ে এ দিন দুপুরে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে তাঁর আলোচনাও হয়েছে।

পুরভোটের পরে এই মহারাষ্ট্র নিবাস হলে যে ভাবে সর্বজনসমক্ষে মেয়র থেকে বিভিন্ন পদাধিকারীর নাম ঘোষণা করেছিলেন, এ দিন সেই খোলামেলা পরিবেশেই তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক হয়। তবে বৈঠক শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগেই বিধান ভবনে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক হয় রুদ্ধদ্বারে। সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা দলের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতেই দলের সদ্য নিবাচিত বিধায়করা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা মমতার নেতৃত্বে সরকারের প্রতি 'পূর্ণ সমর্থন ও সমস্ত রকম সহযোগিতা' করার সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকের পরে প্রণববাবু বলেন, "আমরা সর্বতো ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারকে আমরা সর্বস্তরে সহযোগিতা করব। আমরা তো জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়েছি সরকার গঠন করার জন্যেই।" কিন্তু কংগ্রেস সেই সরকারে যোগদান করবে কি না, তা নিয়ে প্রণববাবু বলেন, "মমতা আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শাকিল আমাদের সদ্যজয়ী বিধায়কদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিয়েছেন। আমরা সমস্ত বিষয়টি আমাদের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে জানাব।" কংগ্রেস সূত্রের খবর, অধিকাংশ বিধায়কই মন্ত্রিসভায় যোগদানের ব্যাপারেই মত দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বকে।

১৫ মে ২০১১। সেই মহারাষ্ট্র নিবাসেই তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে শুরু
হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া।

মমতার নেতৃত্বে সরকারকে তাঁরা সমর্থন করবেন জানিয়ে একটি চিঠি মুকুলবাবুকে লিখেছেন ওমপ্রকাশবাবুূ। সেই চিঠিই তিনি মহারাষ্ট্র নিবাস হলে পৌঁছতে গিয়েছিলেন। তা জানতে পেরে মমতা প্রকাশ্যেই ওমপ্রকাশবাবুকে ধন্যবাদ দেন। তাঁরা যে মমতার নেতৃত্বে সরকারকে 'পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা' করবেন তা জানিয়ে সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যপালের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আবু হেনা, অসিত মালের সঙ্গে দলের চার সাধারণ সম্পাদক রাজভবনে গিয়ে চিঠি দিয়ে আসেন বলে জানান ওমপ্রকাশবাবু।

এ দিনই লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন মমতা। তৃণমূলের জয়ের পরে অভিনন্দন জানিয়ে মমতাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিন মমতা ফোন করে ধন্যবাদ জানান সোমনাথবাবুকে— ১৯৮৪ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে যাঁকে হারিয়ে মমতার রাজনৈতিক যাত্রার সূত্রপাত।

নেত্রী বরণ

মহারাষ্ট্র নিবাসে তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে।

আগামী শুক্রবার তাঁর মন্ত্রিসভা শপথ নিক, চাইছেন মমতা। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সনিয়া গাঁধী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আমন্ত্রণ জানাতে এ দিন সন্ধ্যাতেই দিল্লি গিয়েছেন তিনি। প্রণববাবুর সঙ্গে 'বিশেষ বিমানে' মমতা এ দিন দিল্লি যান। মনমোহনকে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়াও রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বর্তমান রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের কাজটিও সেরে আসবেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর জায়গায় কে রেলমন্ত্রী হবেন, তারও ফয়সালা করে আসবেন বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। তবে শপথগ্রহণ যে রাজভবনেই হবে, তা মমতার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, "আপাতত আমাদের ছোট মন্ত্রিসভা হবে। আমরা সেই মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান ব্রিগেডে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্রিগেডে করলে বুথ, ব্লক স্তর থেকে বহু মানুষ সেখানে যাবেন। এখন এলাকা খালি করে মানুষ বিগ্রেডে আসুক আমি চাই না, সিপিএম নতুন করে হামলা করতে পারে।" বরং প্রায় দেড় মাস বাদে ২১ জুলাই দলের 'শহিদ দিবস' এ বার বিগেডে 'বিজয় দিবস' হিসেবে পালন করা হবে বলে তিনি জানান। রাজভবনে সকলকে যে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না তা বুঝেই এ দিন মমতা জানান, তাঁরা যখন শপথ নেবেন তখন ব্লকে ব্লকে তৃণমূল কর্মীরা হাত জোড় করে শপথ নেবেন। মমতা বলেন, "রাস্তা বন্ধ করে নয়। রাস্তার এক দিকে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে আপনারাও মা-মাটি-মানুষের কাজ করার জন্য শপথ নেবেন।"

সাফল্যের উচ্ছ্বাস। মহারাষ্ট্র নিবাস হলে তাপস রায় ও সোনালি গুহ।

পরিষদীয় দলের বৈঠকে মমতা যেমন তৃণমূলের বিধায়ক থেকে নেতাদের 'দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল' করার জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেন, বিধান ভবনে প্রণববাবুও কংগ্রেস বিধায়কদেরও নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূল যেমন সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের 'লাভজনক পদে' থাকা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল, এখন শাসক দলে রূপান্তরিত হওয়ায় মমতা দলীয় বিধায়কদের 'সতর্ক' করে বলেছেন, "লাভজনক পদে যাঁরা পড়ছেন তাঁরা নিয়মকানুন জেনে নেবেন। মুকুল আপনাদের এ বিষয়ে বলে দেবে। তার পর সবাইকে পদ ছাড়তে হবে কিন্তু।" সেই সঙ্গে সিপিএমের মতো বড় বড় চার-পাঁচ তলা পার্টি অপিস বানানো যে চলবে না, তা জানিয়ে দলনেত্রী বলেন, "বাঁশের ঘর, টালির চালায়, মাটির রঙে ছোট্ট, সুন্দর পার্টি অফিস করবেন। সিপিএমের মতো চার-পাঁচ তলা বড় বড় অফিস বানাবেন না।"

সাফল্যের উচ্ছ্বাস। রুকবানুর রহমান ও দেবশ্রী রায়। রবিবার।

অন্য দিকে প্রণববাবু দলীয় বিধায়কদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন তাঁদের উপস্থিত থাকতে হবে। এ দিন পরিষদীয় দলের বৈঠকের পরে প্রণববাবু বলেন, "আমি বিধায়কদের বলেছি, বক্তৃতা করুন বা না-করুন, অধিবেশনে উপস্থিত থাকাটা জরুরি। নোট নেওয়া, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব, কোনও মন্ত্রী ভুল বললে পয়েন্ট অফ অর্ডার তুলে ভুল ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। কেউ যদি মনে করেন, জরুরি কাজ আছে, তবে বিধায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিন। কেউ বলতে পারেন, আমার আদালতে মামলা লড়তে যেতে হবে বা আমি ডাক্তার রোগী দেখতে যেতে হবে। মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের জোর করে টিকিট দিইনি। আপনারা নিজেরাই মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। দু'লক্ষ ভোটারের কাছে হাত জোড় করে ভোট চেয়েছেন। ফলে কাজের অজুহাত দিয়ে বিধানসভায় অনুপস্থিত থাকবেন না।" অধিবেশন চলাকালীন তিনি বিধায়কদের 'ক্লাস' নেবেন বলেও প্রণববাবু এ দিন জানান।

— অশোক মজুমদার

previous story

rajya

next story


No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk