Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Tuesday, February 5, 2013

এত সাধের ভারত ভাগ, তফসিলিদের বাংলার বাইরে, ইতিহাস ভূগোলের বাইরে নির্বাসিত করা, নাগরিকত্ব আইন, আধার য়োজনা সব জলে যাবে- ঔ শুদ্র, অতি শুদ্র, অস্পৃশ্যদের ক্ষমতায়নের হিসাব দিতে হবে।আশিস নন্দী সমাজবিজ্ঞানীর ভাষায় কথা বলেননি। তিনি রাজনীতির ভাষায় সরাসরি দুর্নীতির জন্য ওবিসি এসসি ও এসটিকে দায়ী করে ফেললেন। তার চাইতে বড় কথা পরিসংখ্যান না দিয়ে প্রমাণ হিসাবে বাংলার কথা বললেন এবং আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত করেই বললেন যে বাংলায় গত একশো বছরে ওবিসি এসসি ও এসটির ক্ষমতায়ন হয়নি।হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেন।বাংলায় তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না হলেও বহুজনসমাজ আন্দোলনের মাতৃভূমিতে এই বক্তব্যের প্রভাব সুদুর প্রসারি হতে চলেছে।উত্তর ভারতের ক্ষমতায়নের লঢ়াই বাংলায় ঢুকল বলে।আমরা ত দাবি করছে,সাছ্চার আযোগের মত একটি আয়োগ গঠন করে কতটা ক্ষমতায়ণ হল, কাঁদের উন্নয়ন হল, কাঁদের হল না, জনসংখ্যা পরিসংখ্যান অনুপাতে তদন্ত করা হোক্। বাংলায় ওবিসি জাতি সমুহকে চিন্হিত করা হোক্।তাঁদের জাতিভিত্তিক গণনা হোক্। এমনি ঠ্যালা, চাচার প্রণ ওষ্ঠাগত। আস্তে াস্তে খবর হচ্চ। এই রাস্তায় লোক নামলো বলে।তাহলেই হয়েছে।এত সাধের ভারত ভাগ, তফসিলিদের বাংলার বাইরে,

এত সাধের ভারত ভাগ, তফসিলিদের বাংলার বাইরে, ইতিহাস ভূগোলের বাইরে নির্বাসিত করা, নাগরিকত্ব আইন, আধার য়োজনা সব জলে যাবে-  ঔ শুদ্র, অতি শুদ্র, অস্পৃশ্যদের ক্ষমতায়নের হিসাব দিতে হবেআশিস নন্দী সমাজবিজ্ঞানীর ভাষায় কথা বলেননি তিনি রাজনীতির ভাষায় সরাসরি দুর্নীতির জন্য ওবিসি এসসি ও এসটিকে দায়ী করে ফেললেন তার চাইতে বড় কথা পরিসংখ্যান না দিয়ে প্রমাণ হিসাবে বাংলার কথা বললেন এবং আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত করেই বললেন যে বাংলায় গত একশো বছরে ওবিসি এসসি ও এসটির ক্ষমতায়ন হয়নি।হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেন।বাংলায় তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না হলেও বহুজনসমাজ আন্দোলনের মাতৃভূমিতে এই বক্তব্যের প্রভাব সুদুর প্রসারি হতে চলেছে।উত্তর ভারতের ক্ষমতায়নের লঢ়াই বাংলায় ঢুকল বলে।আমরা ত দাবি করছে,সাছ্চার আযোগের মত একটি আয়োগ গঠন করে কতটা ক্ষমতায়ণ হল, কাঁদের উন্নয়ন হল, কাঁদের হল না, জনসংখ্যা পরিসংখ্যান অনুপাতে তদন্ত করা হোক্।  বাংলায় ওবিসি জাতি সমুহকে চিন্হিত করা হোক্।তাঁদের জাতিভিত্তিক গণনা হোক্। এমনি ঠ্যালা, চাচার প্রণ ওষ্ঠাগত। আস্তে াস্তে খবর হচ্চ। এই রাস্তায় লোক নামলো বলে।তাহলেই  হয়েছে।এত সাধের ভারত ভাগ, তফসিলিদের বাংলার বাইরে, ইতিহাস ভূগোলের বাইরে নির্বাসিত করা, নাগরিকত্ব আইন, আধার য়োজনা সব জলে যাবে- ওঁদের ক্ষমতায়নের হিসাব দিতে হবে।এই জন্যই মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণের খেলা শুরু হয়ে গেল।এই সময়ে বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত লিখেছেন, পরিবর্তনে ক্ষমতায়ণ এখন নিম্নমুখী।পন্চায়তে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ, ইত্যাদি।কিন্তু শীর্ষ পদে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে, নীতি নির্ধারণে কতটা ক্ষমতায়ন হল?

তিনি কি উগ্রতম হিন্দুত্বের পথে হন্টনরত কংগ্রেসী ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দুত্বের ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাত মনুস্মৃতি স্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম রেখে , বিধর্মী সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নাগরিক অধিকার লক্ষঘন করেও বহুলত্বের দোহাই দেনেওয়ালা হিন্দুত্বের সিমেন্ট মিশেল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন, যার সবচেয়ে তীর্থ ভূমি এই পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে বাক্ স্বাধীনতার অর্থ হল শাসক শ্রেণীর বাক্ স্বাধীনতার ও শাসিতদের অবাক্ অনুসরণ অনুকরণ বশ্যতা নাকি তিনি মুক্ত বাজারের জায়নবাদী হিন্দুত্ব ওরিয়েন্টেড করপোরেট ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন যা স্বভাবে চরিত্রে সংরক্ষন বিরোধী, ওবিসি, এসসি , এসটি বা সংখ্যালঘু বিরোধী, সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্র, সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিরোধী? 

 পলাশ বিশ্বাস

রামচন্দ্র গুহ ইতিহাসবিদ, বিশ্ববিখ্যাত পন্ডিত 
।এই কোলকাতাতেই তাংর উত্থান।তিনি জায়নবাদী ধর্মরাষ্ট্রবাদের সমাজবাস্তকে তুরন্ত খারিজ করে দিয়ে বলছেন আগামী দশ বছরে ভারতবর্ষের মানুষ নরেন্দ্র মোদীর নাম ভূলে যাবে।তাঁর মতে নরেন্দ্র মোদী বা যুবরাজ রাহুল গান্ধী ভারতের ভবিষত্ নন। ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতবর্ষের ভবিষত্

আমরা বহুজনসমাজের মানুষ, আশিস নন্দীর শৈলী না বুঝেই তাঁকে শত্রু চিন্হিত করতে আমাদের দেরী হয় নি

রামচন্দ্র আসলে কোন্ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন, বোঝা বেশ শক্ত

তিনি কি উগ্রতম হিন্দুত্বের পথে হন্টনরত কংগ্রেসী ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দুত্বের ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাত মনুস্মৃতি স্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম রেখে , বিধর্মী সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নাগরিক অধিকার লক্ষঘন করেও বহুলত্বের দোহাই দেনেওয়ালা হিন্দুত্বের সিমেন্ট মিশেল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন, যার সবচেয়ে তীর্থ ভূমি এই পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে বাক্ স্বাধীনতার অর্থ হল শাসক শ্রেণীর বাক্ স্বাধীনতার ও শাসিতদের অবাক্ অনুসরণ অনুকরণ বশ্যতা নাকি তিনি মুক্ত বাজারের জায়নবাদী হিন্দুত্ব ওরিয়েন্টেড করপোরেট ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছেন যা স্বভাবে চরিত্রে সংরক্ষন বিরোধী, ওবিসি, এসসি , এসটি বা সংখ্যালঘু বিরোধী, সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্র, সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিরোধী? 

আজকের কাগজে এই লেখাটি ছাপা হল

ঠিক কান্চা ইলাইয়ার লেখার পর।কান্চা কিন্তু হাজার হাজার বছর যাবত অস্পৃশ্যতার অভিসাপ যারা বহন করেছে, যাবতীয় বন্চনা, ্ত্যাচার, দমনের যারা শিকার, করপোরেট দুর্নীতির জন্য তাঁদেরই দায়ী করার জন্য আশিস নন্দীর সমালোচনা করেছেন

এই বর্ণ ব্যবস্থাই কায়েম রাখতে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রয়োজন

 রাহুল গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদী তাঁরই দুই ভিন্ন অভিন্ন অবতার

যে রাম সেই কৃষ্ণ

সেই হিন্দুত্বের আধিপাত্যকে অস্বীকার করে বহুজনসমাজকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন না ত মাননীয় গুহ মহাশয়?

ইতিমধ্যে উত্তম সেনগুপ্ত এই প্রসঙ্গে একটি লেখা ইংরেজিতে লিখেছেন

আশিস নন্দী প্রবাসী বাঙ্গালি, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনীতির কারোবারি নন

উনি যে কথা বলেছেন, অমর্ত্য সেনও বার বার সেই কথা বলেছেন

 কিন্তু অর্থনীতির ভাষায়, যা বহুজনসমাজের বোধগম্য নয়

 অমর্ত্য বাংলা দেশে বলেছেন বন্চিতদের ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে 

বাংলাদেশী নারীর ক্ষমতায়ন পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বেশি

শিক্ষা ক্ষেত্রে আধিপাত্যের কথা তাঁর চাইতে বেশি জোরে কখনো কেউ কোনোদিন বলেন নি

কিন্তু তিনি শাসক শ্রেণীর রণকৌশলের লক্ষমগন্ডি কখনো উলঙ্ঘন করেন নি

যেমন সলমান রুশদিকে বাংলায় আসতে াটকাতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়ে তিনি একটি কথাও বলেননি

শুধু বলেছেন, বিতর্কিত বিষয়ে মুসলমানদের আসল সমস্যাগুলির দিকে নজর যাচ্ছে না

আশিস নন্দী সমাজবিজ্ঞানীর ভাষায় কথা বলেননি তিনি রাজনীতির ভাষায় সরাসরি দুর্নীতির জন্য ওবিসি এসসি ও এসটিকে দায়ী করে ফেললেন

 তার চাইতে বড় কথা, পরিসংখ্যান না দিয়ে প্রমাণ হিসাবে বাংলার কথা বললেন এবং আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত করেই বললেন যে বাংলায় গত একশো বছরে ওবিসি এসসি ও এসটির ক্ষমতায়ন হয়নি

হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেন

বাংলায় তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না হলেও বহুজনসমাজ আন্দোলনের মাতৃভূমিতে এই বক্তব্যের প্রভাব সুদুর প্রসারি হতে চলেছে

উত্তর ভারতের ক্ষমতায়নের লডাই বাংলায় ঢুকল বলে

আমরা ত দাবি করছে,সাছ্চার আযোগের মত একটি আয়োগ গঠন করে কতটা ক্ষমতায়ণ হল, কাঁদের উন্নয়ন হল, কাঁদের হল না, জনসংখ্যা পরিসংখ্যান অনুপাতে তদন্ত করা হোক্

  বাংলায় ওবিসি জাতি সমুহকে চিন্হিত করা হোক্

তাঁদের জাতিভিত্তিক গণনা হোক্

 এমনি ঠ্যালা, চাচার প্রাণ ওষ্ঠাগত

 আস্তে আস্তে খবর হচ্ছে। 

এই রাস্তায় লোক নামলো বলে

তাহলেই  হয়েছে

এত সাধের ভারত ভাগ, তফসিলিদের বাংলার বাইরে, ইতিহাস ভূগোলের বাইরে নির্বাসিত করা, নাগরিকত্ব আইন, আধার য়োজনা সব জলে যাবে-  ঔ শুদ্র, অতি শুদ্র, অস্পৃশ্যদের ক্ষমতায়নের হিসাব দিতে হবে

এই জন্যই মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণের খেলা শুরু হয়ে গেল

`এই সময়ে' বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত লিখেছেন, পরিবর্তনে ক্ষমতায়ণ এখন নিম্নমুখী।পন্চায়তে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ, ইত্যাদি

কিন্তু শীর্ষ পদে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে, নীতি নির্ধারণে কতটা ক্ষমতায়ন হল?


১ ফেব্রুয়ারি,NTWEB: সমাজ বিজ্ঞানী আশিস নন্দীর গ্রেফতারের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিমকোর্ট। জয়পুর সাহিত্য উৎসবে দেশের দলিত শ্রেণি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এফআইআর দায়ের করা হয়। কিন্তু আশিস নন্দীকে সব জায়গায় গিয়ে মামলা লড়তে হবে না বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। এদিকে আগামী দিনে যে কোনও মন্তব্য করার আগে সতর্ক থাকবেন বলে জানিয়েছেন আশিস নন্দী।

দুর্নীতির বর্ণাশ্রম?


নির্বাচনের পর এই প্রথম মিডিয়ায় লাইভ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিআইএম-এর পলিট বুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২৪ ঘণ্টার এডিটর ইনপুট অঞ্জন বন্দ্যোপাধায়ের মুখোমুখি।

বাম শাসনের অবসানের পর কেটে গিয়েছে ২০ মাস। ২০১১-র ২০ মে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর রাজ্য রাজনীতিও থেমে নেই। পরিবর্তনের ঘোষণা নিয়ে আসা জোট সরকার ভেঙে গিয়েছে। সঙ্গত্যাগ করেছেন সেই সময় সঙ্গে থাকা অনেকেই। রাজনৈতিক চাপান উতর। শানিত প্রশ্নের মুখোমুখি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। 

২৪ ঘণ্টা
- আপনার মুখে কি দিনের শেষে হাসি ফুটল ২১শে ফেব্রুয়ারির ধর্মঘট না হওয়ায়?

বুদ্ধদেব- হাসি বা দুঃখের ব্যাপার নয়। কংগ্রেস, বিজেপি সব ট্রেড ইউনিয়নগুলো ডেকেছিল। দাবি দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইমুহূর্তে যেই প্রশ্নটা খুব বেশি করে উঠছে তা হল ঠিকা শ্রমিকদের প্রশ্ন। তাদের দাবিদাওয়া মানা হচ্ছে না। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের মনে হতে পারে তাদের কাছে 'রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি'র গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ভাষার প্রশ্নে গুরুত্ব না দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন সরকার চালিয়েছি আমরা ট্রেড ইউনিয়নদের বলেছিলাম এ রাজ্যে একদিনের ধর্মঘট হোক। অন্যদিন শিল্প ধর্মঘট হোক। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলুক। সেইভাবেই একদিন ধর্মঘট হবে। 

২৪ ঘণ্টা- ভাষা কি কোনও কারণ না অজুহাত?

বুদ্ধদেব- এটা কি অজুহাত হতে পারে? 

২৪ ঘণ্টা- মানে একদিনের ধর্মঘটের অজুহাত দিয়ে...

বুদ্ধদেব- এটা সর্বভারতীয় সিদ্ধান্ত। দিল্লিতে আমাদের লোকেরাও আছে। আমরাও সিদ্ধান্তের শরিক। যখন ২১শে ফেব্রুয়ারি দিন এগিয়ে আসছে তখন দেখলাম মানুষ আমাদের ভুল ভাবতে পারে। 

২৪ ঘণ্টা- আমরা এসএমএস-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন রাখতে বলেছিলাম। এসএমএসে আসা একটি প্রশ্ন বলছে, আপনি যে পথে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোচ্ছেন  সেখানে আপনার পথের সঙ্গে আপনার দলের কট্টরপন্থী একটা অংশের বিরোধ আছে..

বুদ্ধদেব- দলের মধ্যে মতপার্থক্য হতেই পারে। আমি রাজ্যে যখন সরকার পরিচালনা করেছি তখনও বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। এরকম অবস্থায় দলের অধিকাংশ মানুষ যা বলেন সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়। 

২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় আপনি একজন সঠিক মানুষ যিনি ভুল পার্টিতে রয়েছেন?

বুদ্ধদেব- আমি সঠিক পার্টিতে রয়েছি। সেই দলের কিছু ভুল হয়েছে। যেই ভুলগুলো শুধরোতে হবে। আমাদের দলের একটা ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থান দেখে আমাদের ভুলগুলো চিনতে হবে এবং শুধরোতে হবে। আমি এমন একটা পার্টিতে থাকতে পেরে গর্বিত। আমার পার্টির ঐতিহ্য, ইতিহাস সব কিছু আমাকে উত্‍সাহিত করে, ভাবায়।

২৪ ঘণ্টা- ক্ষমতায় আসার আগে বামপন্থীদের নিয়ে যে ধারণা ছিল, সেটা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর আর নেই। কমিউনিস্ট মানেই যে কথাগুলো মানুষ ভাবতে সেই পাঞ্জাবি, ঝোলাব্যাগ। সেসব তো আর নেই!

বুদ্ধদেব- দেখুন দুনিয়াটা পাল্টাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্টদের মধ্যেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানুষের সঙ্গে সেদিনও ছিলাম, আজও আছি।

২৪ ঘণ্টা- তাহলে কমিউনিস্টরা কি সঠিক পথেই আছেন?

বুদ্ধদেব- হ্যাঁ। 

২৪ ঘণ্টা- আর আমাদের রাজ্য?

বুদ্ধদেব- আমাদের রাজ্য পশ্চাদগতিতে হাঁটছে।

২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন 'মানুষ ভাল আছেন। পিঠে পুলি খাচ্ছেন, উত্‍সব করছেন।'

বুদ্ধদেব- রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। গ্রাম শহরের মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এর জন্য দায়ী সরকারের মনোভাব আর অপরাধ ঘটার পর মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য। কিছু হয়নি, সাজানো ঘটনা এমন সব কথা বলে অপরাধীদের উত্‍সাহ দেওয়া হচ্ছে। পুলিস কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এই তো বারাসতের ঘটনাগুলোর কথাই বলুন না। কী চলছে ওখানে? রোজ রোজ কিছু না কিছু ঘটছে। তার চেয়েও বড় কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কাল থেকে আর কোনও অপরাধ হবে না।

২৪ ঘণ্টা- আপনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তো বারাসতে অপরাধ হয়েছে। রাজীব দাসের ঘটনা তো আপনার আমলেরই ঘটনা।

বুদ্ধদেব- কিন্তু সে সময় সরকারের ভুমিকার কথা ভেবে দেখুন। আমরা একবারও ঘটনাটা মিথ্যা বলে অপরাধকে প্রশয় দিইনি। পুলিসের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। 

২৪ ঘণ্টা- হ্যাঁ ঘটনার পরদিনই আপনি ছুটে গিয়েছিলেন।

বুদ্ধদেব- তার চেয়েও বড় কথা পুলিস দ্রুত রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিল। আর এখন হয় ঠিক উল্টো। মুখ্যমন্ত্রীই বলেন সাজানো ঘটনা। আর এতে অপরাধী, দুষ্কৃতিরা উত্‍সাহিত হয়।

২৪ ঘণ্টা- কোনও মুখ্যমন্ত্রী কি চাইতে পারেন তার রাজ্যে সমাজবিরোধীরা মাথাচাড়া দিক?

২৪ ঘণ্টা- সেটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছি।  

২৪ ঘণ্টা- মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন, ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে।

বুদ্ধদেব- আমরা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার রাজ্যে কিছু বিনিয়োগ হয়নি। শিল্পপতি মহলে আমাদের রাজ্যকে নিয়ে হাসিহাসি হচ্ছে। বাইরের রাজ্যে এখন আমার ঠাট্টার পাত্র হয়ে যাচ্ছি।

২৪ ঘণ্টা- আপনাদের দল এই প্রশ্নটা তোলেন বলেই মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন?

বুদ্ধদেব- দৈনিক ভিত্তিতে কিছু মানুষকে এটাই যদি চাকরি দেওয়ার পথ হয় তাহলে সর্বনাশ।

২৪ ঘণ্টা- তার মনে আপনি মনে করেন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে শিল্প ছাড়া পথ নেই?

বুদ্ধদেব- না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কৃষির ভূমিকা কখনই অস্বীকার করতে পারি না। ক্ষমতা আসার প্রথম ১৫-২০ বছর আমরা শুধু কৃষির ওপর জোর দিয়েছি। ১৯৯০-৯২ সালে যখন শিল্প নীতির পরিবর্তন হল তখন আমাদের কাছে সুযোগ এল। সুযোগের পুরোপুরি সদব্যবহার করার জন্য আমাদের নীতি পাল্টানোর প্রয়োজন হল তখন। আমরা বিনিয়োগ আনতেও সফল হয়েছিলাম। ২০০৬ থেকে রাজ্যে সমস্য শুরু হল। তারপর ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এই পাঁচ বছর কি রাজ্যে বিনিয়োগ আসেনি? ২০১০ সালে রাজ্যে ১০,০০০  হাজার কোটির বিনিয়োগ এসেছিল। কৃষির সাফল্য অক্ষুণ্ণ রেখেই আমাদের শিল্প আনতে হবে। 

২৪ ঘণ্টা- এখন শিল্পের ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

বুদ্ধদেব- এখন সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দিশা অন্ধকার। কেন শিল্প চাই, কীভাবে চাই সেই সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, পলিটেকনিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প বললেই হয় না। রাজ্যে বড় শিল্প না হলে কখনই ছোট শিল্প হবে না। পেট্রোলিয়াম, অটোমোবাইলের মতো বড় শিল্প হলে তবেই ছোট শিল্প আসবে। আর একটা হল নলেজ ইন্ডাস্ট্রি। কৃষির সাফল্যতে আঘাত না দিয়েই সম্মতি আনতে হবে। জমির সঠিক দাম দিতে হবে ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মতি, জমির দাম ও পুনর্বাসন এই তিনটি জিনস একসঙ্গে নিয়েই দিশা ঠিক করতে হবে। বাংলায় দুটোই শিল্প রয়েছে। চারুশিল্প আর ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে এই দুটোর কোনও পার্থক্য নেই।

২৪ ঘণ্টা- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বারংবার জমিনীতি ও শিল্পপ্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান আলাদা করে দিচ্ছেন...

বুদ্ধদেব- উনি বলছেন কৃষকদের কাছে গিয়ে জমি কিনবেন। কিন্তু কীভাবে কিনবেন? ইন্ডাস্ট্রি করতে চান, কিন্তু কীভাবে জমি কিনবেন সেই বিষয়ে কোনও দিশা নেই। কেন ৪০০ একর দেওয়া যায় না, তা নিয়ে ধারনা নেই। সিঙ্গুরে টাটার সঙ্গে ৫৬টি অ্যান্সিলারি সংস্থা এসেছিল। যারা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। সেই কথা আমি যখন বলতে গেলাম উনি বলেছিলেন ওখানে শুধুই ওয়াইন শপ আর বিউটি পার্লার তৈরি হবে। কিন্তু এই ৫৬টি সংস্থা যে এসেছিল তারা থাকলে কিন্তু টাটার পরেও আরও অনেক সংস্থা আসত। গুজরাটে যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে তাই টাটার পরই ফোর্ড চলে এসেছে। আমার এ রাজ্যে শিল্পের জন্য ১০০০ একর জমি লাগলেই কৃষকের কাছে চলে যাব সেটা কখনই হয় না।

২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় যেহেতু এই জমিনীতি প্রসঙ্গেই আগের সরকারের হাত পুড়েছে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি অধিগ্রহণের ওপরই বারবার জোর দিচ্ছেন?

বুদ্ধদেব- ঠিক। সেই কারণেই আমরা পরাজিত হয়েছি। সিঙ্গুর থেকে শুরু হয়ে এমন একটা রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা হল যেখান থেকে আমাদের পরাজয় হল। 

২৪ ঘণ্টা- এই মুহূর্তে আপনি যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতেন তাহলে সবকিছু মাথায় রেখে রাজ্যে শিল্প আনতেন?

বুদ্ধদেব- আমি সিঙ্গুরে আর যাব না। কারণ ওখানে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কোর্ট, আন্দোলন সব মিলিয়ে। কিন্তু অবশ্যই শিল্প আনব। জাহাজ নির্মান শিল্প আমরাই এনেছিলাম। উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশে, গুজরাটে শিল্প হলে এখানে কেন হবে না। পেট্রোকেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমি আরও অনেক সতর্ক ভাবে কাজ করব। বড়জোড়া, রঘুনাথপুর, নৈহাটি, পানাগড়ে ৪০০০ একর জমি মানুষ স্বেচ্ছায় দিয়েছে। 

২৪ ঘণ্টা- এখন যদি ২০০৬ সালের ফিরে যান তাহলে কি সিঙ্গুর মডেল ছিঁড়ে ফেলে দেবেন?

বুদ্ধদেব- না। আমি সতর্ক ভাবে কাজ করব। এখন সারা দেশে সঙ্কট। আমাদের দেশের জিডিপিও ৮ থেকে ৫-এ নেমে এসেছে। উড়িষ্যা, অন্ধ্র, গুজরাট এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলায় হবে না কেন। সিঙ্গুরে আমি ৮৫% শতাংশ কাজ করে ফেলেছিলাম। সিঙ্গুর কৃষি থেকে কী লাভ করছে? শিল্প হলে কতটা লাভ করত? সবটাই আমরা হিসেব করে এগিয়েছিলাম। এবারেও সেভাবেই সেগুলো মাথায় রেখেই কৃষি থেকে শিল্পে রূপান্তেরর পথে হাঁটব। 

২৪ ঘণ্টা- এখন সিঙ্গুরে যা পরিস্থিতি যে সিঙ্গুর কাঁদছে। আপনি কি বলবেন সিঙ্গুর কাঁদলে আপনার দায় নেই? অনেকেই মনে করেন আপনি তো শিল্প আনতে চেয়েছিলে। তাহলে সেই সেই আন্দোলনের পর আপনি কেন কঠোর হলেন না? মানুষের কল্যাণের খাতিরে কি আপনার কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল না?

বুদ্ধদেব- আমি শুনেছি। পুরোটার একটা ঘটনা পরম্পরা রয়েছে। আমি বহুবার তৃণমূলকে সিঙ্গুরে ঢুকতে দিইনি। ডানকুনি থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছি। তারই ফলস্বরূপ কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এই কারণে বিধানসভায় লন্ডভন্ড হয়ে গেল। হাতে সংবিধান নিয়ে বিধানসভায় লন্ডভন্ড চলল। এটা তো ইতিহাস। আমি ভেবেছিলাম সিঙ্গুরে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজ করে ফেলেছি বাকিটা হয়ে যাবে। কিন্তু মাঝখানে নন্দীগ্রাম ঘটে গেল। আমরা পরিষ্কার বলেছিলাম জমি নেব না। তাও নন্দীগ্রাম ভয়ঙ্কর আকার নিল। মাওবাদীরা ছিল বলেই এত ভয়ঙ্কর আকার নিতে পেরেছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকল। আমি টাটাকে বললাম। উনি বলেছিলেন পরোয়া করেন না। কারখানা হলে ৪০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু শেষের দিকে বিক্ষোভ যখন আরও বড় আকার নিল তখন টাটা পাল্টি খেল। উনি আমাকে বললেন এই অবস্থায় থাকলে শিল্প সম্ভব নয়। আমি বললাম আপনাকে কথা দিয়েছি যখন কারখানা হবেই। কিন্তু টাটার সাহস ছিল না। হঠাত্ শারদীয়া উত্সবের আগে টাটা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন। আমি শক্ত হাতে ওনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেম। কিন্তু উনি আমাকে বলেছিলেন আমি 'আনওয়ান্টেড গেস্ট', অবাঞ্ছিত অতিথি হিসেবে থাকতে চাই না। 

২৪ ঘণ্টা- আবার সেই অবস্থায় ফিরে যান তাহলে অবস্থান মঞ্চ হতে দেবেন?

বুদ্ধদেব- যদি ভাবেন এইসব মামলা, কোর্ট কিছু নেই, তাহলে কারও সাধ্য নেই কিছু করার। কিছু আটকানোর। কারণ সাধারণ মানুষ এখন পরিস্থিতি বুঝে গেছেন।

২৪ ঘণ্টা- ২০১৬-এ যদি আপনারা ফেরেন তাহলে...

বুদ্ধদেব- ২০১৬-র বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাই না। 

২৪ ঘণ্টা- এতদিন আপনি চুপ ছিলেন কেন?

বুদ্ধদেব- দেখুন নির্বাচনে হারের পর হইহই করে রাস্তায় নেমে পড়ব এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ এসব ভালভাবে নেয় না। আমার দল ঠিক সময়ই প্রতিবাদ শুরু করেছে। তাতে আমি সামিল হয়েছি।

২৪ ঘণ্টা- যে যাদবপুরের জন্য  জন্য এত পরিশ্রম করেছিলেন সেই কেন্দ্রেই ২০১১ বিধানসভা হারটাকে আপনাকে খুব দুঃখ দিয়েছিল?

বুদ্ধদেব- দেখুন আমি নিজেকে নিয়ে এত কথা ভাবি না। আমি হারলাম কি জিতলাম সেটা বড় কথা নয়। গোটা রাজ্যে ফলাফলের প্রভাব যাদবপুরে পড়েছিল।  

২৪ ঘণ্টা- (এসএমএসে আসা প্রশ্নের ভিত্তিতে) ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কি আপনি আবার যাদবপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবেন?

বুদ্ধদেব- ২০১৬ এখন অনেক দূর। এটা এখন কোনও অ্যাজেন্ডাই নয়। 

২৪ ঘণ্টা- নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা থেকে ২১ জুলাই। সব ইস্যুতেই এখন আপনি নিশানায়। আপনাকে নাকি জেরা করা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র তো বলেই দিয়েছেন ২১ জুলাই আপনার নির্দেশে গুলি চলেছিল। এই কথাটা প্রমাণ না হলে নাকি উনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।

বুদ্ধদেব- ও মন্ত্রী না থাকলে কিছু এসে যায় না। এ সব কথার প্রতিক্রিয়া দেব না। নিশানার কথা বলছেন, ওটা তো স্বাভাবিক। আমাদের পার্টি কর্মীদের ওপর রাজ্যজুড়ে আক্রমণ চলছে, আর আমাদের মত শীর্ষ নেতৃত্বের নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে। তা ছাড়া জেরা কে কাকে করবে? নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতটা নিয়ে আগে প্রকাশ্যে জানানো হোক। কী না হয়েছে ওখানে। রাস্তা কাটা হয়েছে, গাছ ফেলে দেওয়া হয়েছে, পুলিস কর্মীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, ওসিকে মারা হয়েছিল। নন্দীগ্রামে পুলিস তো জমি নিতে যায়নি, গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে। তবে গুলিটা না চললেই ভাল হত। কারা হিংসা করল সেটা আগে দেখা হোক।

২৪ ঘণ্টা- শিল্প প্রসঙ্গ যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে আপনার মনে হয় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়েনর বিষয়টা অনেক সমবেদনশীলভাবে দেখছেন?

বুদ্ধদেব- মন্দির, মসজিদ, চার্চ চিরকাল ধর্মপ্রাণ মানুষদের দিয়ে চলেছে। উনি হঠাত্ ওখানে হাত দিতে গেলেন কেন? ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন উনি। কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। ভাতা দিয়ে হয় না। আমাদের সময় রাইটার্সে ১০০ জন চাকরি পেলে তারমধ্যে ১০ জন মুসলমান চাকরি পেতেন। উনি যা করছেন তাতে শুধু অর্ডার বাতিল হচ্ছে।

২৪ ঘণ্টা- এগুলো কথার কথা বলছেন। কিন্তু সংখ্যালঘু বিষয়টা সংবেদনশীল। উত্তরপ্রদেশ, বিহারেও আমরা দেখেছি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সভায় পোশাকের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

বুদ্ধদেব- এটা কোনও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় নয়। আমি কোনও একটা ধর্মের মানুষদের সঙ্গে এটা করছি মানে আমি অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করছি। এটা এক ধরণের বিচ্যুতি। আমাদের রাজ্যে এটা আমরা চাই না।

২৪ ঘণ্টা- এর মধ্যে কি কোনও বিপদের গন্ধ রয়েছে?

বুদ্ধদেব- অবশ্যই রয়েছে। আপনি যা নন তা আপনি করছেন। আপনি নামাজ পড়তে জানেন না আপনি নামাজ পড়ছেন। আপনি মাথায় চাদর দিতে জানি না আমি দিচ্ছি। এটা এক ধরণের ভন্ডামি, কৃত্রিমতা।

২৪ ঘণ্টা- বিজেপি আপনাদের চিরকালীন শত্রু। কিন্তু বিজেপির উত্থান, শক্তিবৃদ্ধি, কংগ্রেসের সঙ্গে মতভেদ ২০১৪-তে যাতে সেই শত্রু ক্ষমতায় না আসে তার জন্য কী এখন সময় এসেছে কংগ্রেসের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার?

বুদ্ধদেব- সেই সময় এখন নয়। আগেও বলেছি কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতভেদ মৌলিক। বিজেপির উত্থানতো এই সেদিন হল মন্দির, মসজিদ ভেঙে। ২০০৪ সালে যখন মনমোহন সিং-অটল বিহারী বাজপেয়ীর মধ্যে বেছে নিতে হয়েছিল তখন আমরা কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছিলাম। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য অর্থনীতিতে। বিজেপির সঙ্গে অর্থনীতির সঙ্গে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। 

২৪ ঘণ্টা- নতুন সরকারের বয়স হয়েছে। আপনাদেরই মধ্যে কিছু লোক বলছে যে আপনাদের দলে যেসব অশুদ্ধি ঢুকছিল, মানে বেনোজলের স্রোত যারা হুড় হুড় করে ওদিকে গিয়েছিল তারা বুঝতে পেরেছ এ সরকারে থেকে লাভ নেই। তারা আবার ফিরে আসছে। এতে কি আপনাদের শুদ্ধিকরণে কোথাও ব্যাঘাত ঘটছে?

বুদ্ধদেব- শুদ্ধিকরণ সহজ পথে হবে না। এত বড় দল, আমাদের প্রতিটা জেলা, অঞ্চল সবকিছু ধরে ধরে এগোতে হবে। জেলা কমিটি, স্টেট কমিটি প্রতিটা কমিটিকে এই শুদ্ধিকরণের কাজ করতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া।

২৪ ঘণ্টা- আপনাকে ফেসবুকে একজন দর্শক প্রশ্ন পাঠিয়েছেন, যে আপনারা বলছেন শুদ্ধিকরণ চলছে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে এখনও আপনাদের দলে অনেক অসত্ মুখ দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে রাজা আপনাকে এই প্রশ্ন পাঠিয়েছেন।

বুদ্ধদেব- সারা রাজ্যে অডিট চলছে। শুদ্ধিকরণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সবটা এখনও হয়নি। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। যেমন প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নতুন নিয়ম এনেছি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হবে তার গ্রহণযোগ্যতা। মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তি কীরকম। যদি দেখা যায় প্রার্থী দারুন কাজ করেন কিন্তু তার গ্রহনযোগ্যতা নেই তাহলে তাকে প্রার্থী করা যাবে না। এগুলো করা হচ্ছে যাতে বেনোজল না থাকে। গ্রহণযোগ্যতা সবার প্রথম। বয়স, অন্যান্য বিষয় তার পর আসবে।

২৪ ঘণ্টা- তাহলে কি বলছেন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়?

বুদ্ধদেব- এত বড় পার্টিতে কটাই বা এরকম লোক আছেন।

২৪ ঘণ্টা- এই ব্যাপার নাগরিক সমাজে কিছু ক্ষোভ থাকলেও গ্রামে সেভাবে প্রভাব পড়েনি। গ্রামের মানুষ এখনও সেভাবে স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য মুক্ত নয়।

বুদ্ধদেব- শহর, গ্রাম, দাম্ভিকতা সব নিজের জায়গায় রয়েছে। গ্রাম পরিস্থিতিটা একটু জটিল। যেটা আমাদের খেয়ালে এসেছে যে যারা গ্রামের আসল ক্ষেতমজুর, গরীর কৃষক তাদের মধ্যে কিন্তু এই সমস্যটা নেই। এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে গঞ্জ এলাকায়। যেখানে মহাজনী ঋণ এই জাতীয় বিষয়গুলো ঢুকে পড়েছে। তাদের নিয়েই সমস্যা। 

২৪ ঘণ্টা- অনেকেই বলেন, সিপিআইএম স্কুলের শ্রেষ্ঠ ছাত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...

বুদ্ধদেব- ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে ভাল গুণ কী জানেন? অন্যের ভাল গুণগুলো অনুকরণ করাই ভাল ছাত্রীর লক্ষণ, খারাপ গুণগুলো এড়িয়ে যেতে হয়। তিনি কি পেরেছেন আমাদের ভালগুণগুলো আয়ত্ত করতে। আমাদের দল যা করে গোটা দেশে উদাহরণ তৈরি করেছে সেটা থেকে শিখে রাজ্যকে উপরে নিয়ে যেতে পেরেছেন? এই যে ধান উত্‍পাদেন আমাদের রাজ্য সবার উপরে গিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আর উনি একই জিনিসে রাজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছেন! মমতা যোগ্য ছাত্রী নন। আসলে উনি বাজে ছাত্রী। 

২৪ ঘণ্টা-  এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দীব্যেন্দু পালিত।

দীব্যেন্দু পালিত- নতুন কিছু লিখছেন কি? নাকি রাজনৈতিক চাপে আর সময় পাচ্ছেন না।

বুদ্ধদেব- আপনি ভাল থাকবেন। আসলে সত্যি এখন ক'দিন লিখতে পারিনি। ঠিকই বলেছেন রাজনৈতিক চাপ এত বেশি যে লেখালিখির সময় পাচ্ছি না। দু'টো জিনিস একসঙ্গে হয় না। আসলে চালাকি করে কোনও সত্‍ কাজ হয় না।

২৪ ঘণ্টা- তাহলে আপনার লেখালেখি সম্পূর্ণ বন্ধ?

বুদ্ধদেব- হ্যাঁ। তবে রাতে বই পড়ি। কিন্তু লিখতে পারছি না। আসলে ফাঁকি দিয়ে কোনও কাজ হয় না।

২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট লেখিকা নবনীতা দেবসেন

নবনীতা দেবসেন- এখন তো বইমেলা চলছে। মনে পড়ছে বইমেলায় সেই আগুন লাগার পরদিন আমরা সবাই মিলে রাস্তায় হেঁটেছিলাম তাতে আপনিও ছিলেন। আচ্ছা আপনি কি এবার বইমেলায় গেছেন? 

বুদ্ধদেব- না এখনও বইমেলা যায়নি। বইমেলায় আগুন লাগার ঘটনাটা সত্যিই ভয়ঙ্কর। আপনি ভাল থাকুন। 

২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন আপনার বন্ধু অভিজিত্‍ মুখোপাধ্যায়?

অভিজিত্‍ মুখোপাধ্যায়- আচ্ছা যে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলে, ৬০ দশকে যে স্বপ্নটার কথা খুব বলতে মানে সাম্যবাদ, সমাজকে বদলে ফেলা... এসব কি এতদিন রাজনীতি করার পর, ক্ষমতায় থাকার পর কিছুটা হলেও কি তুমি পারলে?

বুদ্ধদেব- ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে আমরা যা করলাম, তার মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি আমরা।  

২৪ ঘণ্টা- আপনারা যেহেতু রাজনীতির মানুষ তাই বন্ধুদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর বিষয় ছাড়া আলোচনা করেন না 

বুদ্ধদেব- (হেসে) না না, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে এখনও অনেক হালকা বিষয়ে নিয়ে হাসিঠাট্টা করি।

২৪ ঘণ্টা- দার্জিলিং আমাদের রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমন কথা তো মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তো আপনাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ট্যান্ড এক?

বুদ্ধদেব- মিল আছে আবার পার্থক্যও আছে। সুভাষ ঘিসিংয়ের সঙ্গে আমরা যখন চুক্তি করেছিলাম তখন কোথাও পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি ছিল না। কিন্তু এখন তো এসব উঠছে। আসলে বিষয়টা হল সমস্যাটা না বুঝেই কাজ করা হচ্ছে। পাহাড় সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে হবে। 

২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন, পাহাড় হাসছে!

বুদ্ধদেব- আমাদের সময়ে ১৫-২০ বছর তো মানুষ পাহাড়ে ঘুরতে গেছে। তখন তো কোনও সমস্যা ছিল না।  

২৪ ঘণ্টা- আপনি এখন বিরোধী দলে তাই সব ইস্যুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাল দিক কোনটা। মুখ্যমন্ত্রী কিছু তো ভাল করেছেন। আপনাকে একটা কিউ ধরিয়ে দিই। অনেকে বলেন উনি সততার প্রতীক। আপনি কী বলবেন?

বুদ্ধদেব- আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। মমতা সততার প্রতীক আমি মানি না।

২৪ ঘণ্টা- কেন? তার কী কোনও কারণ রয়েছে? 

বুদ্ধদেব- আপনারা তদন্ত করুন। তাঁর পরিবারের কী অবস্থান ছিল, এখন কী অবস্থান হয়েছে। তার তদন্ত হোক। আমার মাপকাঠিতে ওনাকে সততার স্থানে ওনাকে রাখতে পারছি না। সেটা আজ আর গোপন নেই। সেটা ওঁর কাছের মানুষরাও জানেন। 

২৪ ঘণ্টা- এটা তো গুরুতর অভিযোগ। আপনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, পলিটব্যুরো সদস্য। এই অভিযোগটা তো মারাত্মক

বুদ্ধদেব- মমতা সত্‍ হলে আমি খুশি হতাম।

২৮ ঘণ্টা- মমতার সততা নিয়ে আপনি যে কথাগুলো বললেন সেটার বিষয়ে আরও পরিষ্কার করে বলবেন

বুদ্ধদেব- আপনার তদন্ত করুন সব জানতে পারবেন

২৪ ঘণ্টা- পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আপনারা কতটা প্রস্তুত? আপনার নাকি প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছেন না।

বুদ্ধদেব- সমস্যা আছে। বেশ কিছু জেলায় আমাদের দলের স্বাভাবিককাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। তবে মানুষ ওদের আসল রূপটা বুঝতে পারছে। সব দেখে আমাদের পাশে মানুষ ফিরে আসছে। 

২৪ ঘণ্টা-- পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা কঠিন?

বুদ্ধদেব-- চিন্তার বিষয়, সাধারণ মানুষের রায় দিতে যেতে দেবে না। মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এটাকেই সামাল দিতে হবে। 

২৪ ঘণ্টা--সূর্যকান্ত মিশ্র কি দলের চমকপ্রদ আবিষ্কার?

বুদ্ধদেব--কাজ করতে করতে পরিস্থিতি মানুষকে তৈরি করে। 

২৪ ঘণ্টা--নির্বাচনে দলের প্রধান মুখ কি আপনি?

বুদ্ধদেব- প্রধান মুখ তো আপনারা ঠিক করবেন। কয়েকটা মুখ, কয়েকটি মাথা নিয়ে সবটা ঠিক করতে হয়। 

২৪ ঘণ্টা-- আপনার দলের নেতৃত্বে তরুণ মুখের অভাব...

বুদ্ধদেব-- সেটা একটা সমস্যা। আমরা নতুন মুখ আনার চেষ্টা করছি। যাঁরা একটু কথা বলতে পারেন। আমরা বুঝতে পারছি। কিছু বাধা রয়েছে। দলীয় রীতি-প্রথা মেনে চটজলদি সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সেটা আমরা বুঝতে পারছি। 

২৪ ঘণ্টা- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় সম্পর্কে রেটিং কী? আপনাকে যদি নম্বর দিতে বলা হয় তাহলে ১০-এ কত দেবেন?

বুদ্ধদেব- আমি কিছু দিতে পারছি না।

২৪ ঘণ্টা- তার মানে শূন্য দেবেন?

বুদ্ধদেব- হুঁ, একেবারে শূন্য

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 1

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 2


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 3

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 4

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 5


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 6


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 7

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/buddhadev-b

অবস্থা ও ব্যবস্থা     


আজ বাংলাদেশে উত্তেজনার অভাব নাই, সুতরাং উত্তেজনার ভার কাহাকেও লইতে হইবে না। উপদেশেরও যে বিশেষ প্রয়োজন আছে তাহা আমি মনে করি না। বসন্তকালের ঝড়ে যখন রাশি রাশি আমের বোল ঝরিয়া পড়ে তখন সে বোলগুলি কেবলই মাটি হয়, তাহা হইতে গাছ বাহির হইবার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তেমনি দেখা গেছে, সংসারে উপদেশের বোল অজস্র বৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু অনেক স্থলেই তাহা হইতে অঙ্কুর বাহির হয় না, সমস্ত মাটি হইতে থাকে।

 

তবু ইহা নিঃসন্দেহ যে, যখন বোল ঝরিতে আরম্ভ করে তখন বুঝিতে হইবে ফল ফলিবার সময় সুদূরে নাই। আমাদের দেশেও কিছুদিন হইতে বলা হইতেছিল যে, নিজের দেশের অভাবমোচন দেশের লোকের চেষ্টার দ্বারাই সম্ভবপর, দেশের লোকই দেশের চরম অবলম্বন, বিদেশী কদাচ নহে, ইত্যাদি। নানা মুখ হইতে এই-যে বোলগুলি ঝরিতে আরম্ভ হইয়াছিল তাহা উপস্থিতমত মাটি হইতেছিল সন্দেহ নাই, কিন্তু ভূমিকে নিশ্চয়ই উর্বরা করিতেছিল এবং একটা সফলতার সময় যে আসিতেছে তাহারও সূচনা করিয়াছিল।

 

অবশেষে আজ বিধাতা তীব্র উত্তাপে একটি উপদেশ স্বয়ং পাকাইয়া তুলিয়াছেন। দেশ গতকল্য যে-সকল কথা কর্ণপাত করিবার যোগ্য বলিয়া বিবেচনা করে নাই আজ তাহা অতি অনায়াসেই চিরন্তন সত্যের ন্যায় গ্রহণ করিতেছে। নিজেরা যে এক হইতে হইবে, পরের দ্বারস্থ হইবার জন্য নহে, নিজেদের কাজ করিবার জন্য, এ কথা আজ আমরা একদিনেই অতি সহজেই যেন অনুভব করিতেছি-- বিধাতার বাণীকে অগ্রাহ্য করিবার জো নাই।

 

অতএব, আমার মুখে আজ উত্তেজনা ও উপদেশ অনাবশ্যক হইয়াছে-- ইতিহাসকে যিনি অমোঘ ইঙ্গিতের দ্বারা চালনা করেন তাঁহার অগ্নিময় তর্জনী আজ দেশের সকলের চক্ষের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়াছে।

 

এখন এই সময়টাকে বৃথা নষ্ট হইতে দিতে পারি না। কপালক্রমে অনেক ধোঁওয়ার পরে ভিজা কাঠ যদি ধরিয়া থাকে, তবে তাহা পুড়িয়া ছাই হওয়ার পূর্বে রান্না চড়াইতে হইবে; শুধু শুধু শূন্য চুলায় আগুনে খোঁচার উপর খোঁচা দিতে থাকিলে আমোদ হইতে পারে, কিন্তু তাহাতে ছাই হওয়ার কালটাও নিকটে অগ্রসর হয় এবং অন্নের আশা সুদূরবর্তী হইতে থাকে। বঙ্গব্যবচ্ছেদের প্রস্তাবে যখন সমস্ত দেশের লোকের ভাবনাকে একসঙ্গে জাগাইয়া তুলিয়াছে তখন কেবলমাত্র সাময়িক উত্তেজনায় আত্মবিস্মৃত না হইয়া কতকগুলি গোড়াকার কথা স্পষ্টরূপে ভাবিয়া লইতে হইবে।

 

প্রথম কথা এই যে, আমরা স্বদেশের হিতসাধন সম্বন্ধে নিজের কাছে যে-সকল আশা করি না পরের কাছ হইতে সে-সকল আশা করিতেছিলাম। এমন অবস্থায় নিরাশ হওয়াই স্বাভাবিক এবং তাহাই মঙ্গলকর। নিরাশ হইবার মতো আঘাত বারবার পাইয়াছি, কিন্তু চেতনা হয় নাই। এবারে ঈশ্বরের প্রসাদে আর-একটা আঘাত পাইয়াছি, চেতনা হইয়াছে কি না তাহার প্রমাণ পরে পাওয়া যাইবে।

 

"আমাদিগকে তোমরা সম্মান দাও, তোমরা শক্তি দাও, তোমরা নিজের সমান অধিকার দাও'-- এই-যে সকল দাবি আমরা বিদেশী রাজার কাছে নিঃসংকোচে উপস্থিত করিয়াছি ইহার মূলে একটা বিশ্বাস আমাদের মনে ছিল। আমরা কেতাব পড়িয়া নিশ্চয় স্থির করিয়াছিলাম যে, মানুষমাত্রেরই অধিকার সমান এই সাম্যনীতি আমাদের রাজার জাতির।

 

কিন্তু সাম্যনীতি সেইখানেই খাটে যেখানে সাম্য আছে। যেখানে আমারও শক্তি আছে তোমার শক্তি সেখানে সাম্যনীতি অবলম্বন করে। য়ুরোপীয়ের প্রতি য়ুরোপীয়ের মনোহর সাম্যনীতি দেখিতে পাই; তাহা দেখিয়া আশান্বিত হইয়া উঠা অক্ষমের লুব্ধতামাত্র। অশক্তের প্রতি শক্ত যদি সাম্যনীতি অবলম্বন করে তবে সেই প্রশ্রয় কি অশক্তের পক্ষে কোনোমতে শ্রেয়স্কর হইতে পারে? সে প্রশ্রয় কি অশক্তের পক্ষে সম্মানকর? অতএব, সাম্যের দরবার করিবার পূর্বে সাম্যের চেষ্টা করাই মনুষ্যমাত্রের কর্তব্য। তাহার অন্যথা করা কাপুরুষতা।

 

ইহা আমরা স্পষ্ট দেখিয়াছি, যে-সকল জাতি ইংরেজের সঙ্গে বর্ণে ধর্মে প্রথায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র তাহাদিগকে ইঁহারা নিজের পার্শ্বে স্বচ্ছন্দবিহারের স্থান দিয়াছেন এমন ইঁহাদের ইতিহাসে কোথাও নাই। এমন-কি, তাহারা ইঁহাদের সংঘর্ষে লোপ পাইয়াছে ও পাইতেছে এমন প্রমাণ যথেষ্ট আছে। একবার চিন্তা করিয়া দেখো, ভারতবর্ষের রাজাদের যখন স্বাধীন ক্ষমতা ছিল তখন তাঁহারা বিদেশের অপরিচিত লোকমণ্ডলীকে স্বরাজ্যে বসবাসের কিরূপ স্বচ্ছন্দ অধিকার দিয়াছিলেন-- তাহার প্রমাণ পার্শিজাতি। ইহারা গোহত্যা প্রভৃতি দুই-একটি বিষয়ে হিন্দুদের বিধিনিষেধ মানিয়া, নিজের ধর্ম সমাজ অক্ষুণ্ন রাখিয়া, নিজের স্বাতন্ত্র্য কোনো অংশে বিসর্জন না দিয়া, হিন্দুদের অতিথিরূপে প্রতিবেশিরূপে প্রভূত উন্নতি লাভ করিয়া আসিয়াছে, রাজা বা জনসমাজের হস্তে পরাজিত বলিয়া উৎপীড়ন সহ্য করে নাই। ইহার সহিত ইংরেজ উপনিবেশগুলির ব্যবহার তুলনা করিয়া দেখিলে পূর্বদেশের এবং পশ্চিমদেশের সাম্যবাদের প্রভেদটা আলোচনা করিবার সুযোগ হইবে।

 

সম্প্রতি দক্ষিণ-আফ্রিকায় বিলাতি উপনিবেশীদের একটি সভা বসিয়াছিল, তাহার বিবরণ হয়তো অনেকে স্টেট্‌স্‌ম্যান-পত্রে পড়িয়া থাকিবেন। তাঁহারা একবাক্যে সকলে স্থির করিয়াছেন যে, এশিয়ার লোকদিগকে তাঁহারা কোনোপ্রকারেই আশ্রয় দিবেন না। ব্যবসায় অথবা বাসের জন্য তাহাদিগকে ঘরভাড়া দেওয়া হইবে না, যদি কেহ দেয় তাহার প্রতি বিশেষরূপ অসন্তোষ প্রকাশ করিতে হইবে। বর্তমানে যে-সকল বাড়ি এশিয়ার লোকদিগকে ভাড়া দেওয়া হইয়াছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলেই তাহা ছাড়াইয়া লওয়া হইবে। যে-সকল হৌস ঐশিয়দিগকে কোনোপ্রকারে সাহায্য করে, খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকেরগণ যাহাতে তাহাদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে, তাহার চেষ্টা করিতে হইবে। যাহাতে এই নিয়মগুলি পালিত হয় এবং যাহাতে সভ্যগণ ঐশিয় দোকানদার বা মহাজনদের কাছ হইতে কিছু না কেনে বা তাহাদিগকে কোনোপ্রকার সাহায্য না করে, সেজন্য একটা টভফভরতশদন অড়ড়ষদভতঢ়ভষশবা চৌকিদার-দল বাঁধিতে হইবে। সভায় বক্তৃতাকালে একজন সভ্য প্রশ্ন করিয়াছিলেন যে, আমাদের শহরের মধ্যে ঐশিয় ব্যবসায়ীদিগকে যেমন করিয়া আড্ডা গাড়িতে দেওয়া হইয়াছে, এমন কি ইংলণ্ডের কোনো শহরে দেওয়া সম্ভব হইত? ইহার উত্তরে এক ব্যক্তি কহিল, না, সেখানে তাহাদিগকে "লিঞ্চ' করা হইত। শ্রোতাদের মধ্যে একজন বলিয়াছিল, এখানেও কুলিদিগকে "লিঞ্চ' করাই শ্রেয়।

 

এশিয়ার প্রতি য়ুরোপের মনোভাবের এই যে-সকল লক্ষণ দেখা যাইতেছে ইহা লইয়া আমরা যেন অবোধের মতো উত্তেজিত হইতে না থাকি। এগুলি স্তব্ধভাবে বিচার করিয়া দেখিবার বিষয়। যাহা স্বভাবতই ঘটিতেছে, যাহা বাস্তবিকই সত্য, তাহা লইয়া রাগারাগি করিয়া কোনো ফল দেখি না। কিন্তু তাহার সঙ্গে যদি ঘর করিতে হয় তবে প্রকৃত অবস্থাটা ভুল বুঝিলে কাজ চলিবে না। ইহা স্পষ্ট দেখা যায় যে, এশিয়াকে য়ুরোপ কেবলমাত্র পৃথক বলিয়া জ্ঞান করে না, তাহাকে হেয় বলিয়াই জানে।

 

এ সম্বন্ধে য়ুরোপের সঙ্গে আমাদের একটা প্রভেদ আছে। আমরা যাহাকে হেয় জ্ঞানও করি, নিজের গণ্ডির মধ্যে তাহার যে গৌরব আছে সেটুকু আমরা অস্বীকার করি না। সে তাহার নিজের মণ্ডলীতে স্বাধীন; তাহার ধর্ম, তাহার আচার, তাহার বিধিব্যবস্থার মধ্যে তাহার স্বতন্ত্র সার্থকতা আছে; আমার মণ্ডলী আমার পক্ষে যেমন তাহার মণ্ডলী তাহার পক্ষে ঠিক সেইরূপ-- এ কথা আমরা কখনো ভুলি না। এইজন্য যে-সকল জাতিকে আমরা অনার্য বলিয়া ঘৃণাও করি, নিজের শ্রেষ্ঠতার অভিমানে আমরা তাহাদিগকে বিলুপ্ত করিবার চেষ্টা করি না। এই কারণে আমাদের সমাজের মাঝখানেই হাড়ি ডোম চণ্ডাল স্বস্থানে আপন প্রাধান্য রক্ষা করিয়াই চিরদিন বজায় আছে।

 

পশুদিগকে আমরা নিকৃষ্ট জীব বলিয়াই জানি, কিন্তু তবু বলিয়াছি, আমরাও আছি, তাহারাও থাক; বলিয়াছি, প্রাণীহত্যা করিয়া আহার করাটা, "প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং, নিবৃত্তিস্তু মহাফলা'-- সেটা একটা প্রবৃত্তি, কিন্তু নিবৃত্তিটাই ভালো। য়ুরোপ বলে, জন্তুকে খাইবার অধিকার ঈশ্বর আমাদিগকে দান করিয়াছেন। য়ুরোপের শ্রেষ্ঠতার অভিমান ইতরকে যে কেবল ঘৃণা করে তাহা নহে, তাহাকে নষ্ট করিবার বেলা ঈশ্বরকে নিজের দলভুক্ত করিতে কুণ্ঠিত হয় না।

 

য়ুরোপের শ্রেষ্ঠতা নিজেকে জাহির করা এবং বজায় রাখাকেই চরম কর্তব্য বলিয়া জানে। অন্যকে রক্ষা করা যদি তাহার সঙ্গে সম্পূর্ণ খাপ খাইয়া যায় তবেই অন্যের পক্ষে বাঁচোয়া, যে অংশে লেশমাত্র খাপ না খাইবে সে অংশে দয়ামায়া বাছবিচার নাই। হাতের কাছে ইহার যে দুই-একটা প্রমাণ আছে তাহারই উল্লেখ করিতেছি।

 

বাঙালি যে একদিন এমন জাহাজ তৈরি করিতে পারিত যাহা দেখিয়া ইংরেজ ঈর্ষা অনুভব করিয়াছে, আজ বাঙালির ছেলে তাহা স্বপ্নেও জানে না। ইংরেজ যে কেমন করিয়া এই জাহাজ-নির্মাণের বিদ্যা বিশেষ চেষ্টায় বাংলাদেশ হইতে বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছে তাহা শ্রীযুক্ত সখারাম গনেশ দেউস্কর মহাশয়ের "দেশের কথা' -নামক বইখানি পড়িলে সকলে জানিতে পারিবেন। একটা জাতিকে, যে-কোনো দিকেই হউক, একেবারে অক্ষম পঙ্গু করিয়া দিতে এই সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতাবাদী কোনো সংকোচ অনুভব করে নাই।

 

ইংরেজ আজ সমস্ত ভারতবর্ষকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করিয়া দিয়াছে, অথচ ইহার নিদারুণতা তাহারা অন্তরের মধ্যে একবার অনুভব করে নাই। ভারতবর্ষ একটি ছোটো দেশ নহে, একটি মহাদেশবিশেষ। এই বৃহৎ দেশের সমস্ত অধিবাসীকে চিরদিনের জন্য পুরুষানুক্রমে অস্ত্রধারণে অনভ্যস্ত, আত্মরক্ষায় অসমর্থ করিয়া তোলা যে কতবড়ো অধর্ম, যাহারা এক কালে মৃত্যুভয়হীন বীরজাতি ছিল তাহাদিগকে সামান্য একটা হিংস্র পশুর নিকট শঙ্কিত নিরুপায় করিয়া রাখা যে কিরূপ বীভৎস অন্যায়, সে চিন্তা ইহাদিগকে কিছুমাত্র পীড়া দেয় না। এখানে ধর্মের দোহাই একেবারেই নিষ্ফল-- কারণ, জগতে অ্যাংলোস্যাক্‌সন জাতির মাহাত্ম্যকে বিস্তৃত ও সুরক্ষিত করাই ইহারা চরম ধর্ম জানে, সেজন্য ভারতবাসীকে যদি অস্ত্রত্যাগ করিয়া এই পৃথিবীতলে চিরদিনের মতো নির্জীব নিঃসহায় পৌরুষবিহীন হইতে হয় তবে সে পক্ষে তাহাদের কোনো দয়ামায়া নাই।

 

অ্যাংলোস্যাক্‌সন যে শক্তিকে সকলের চেয়ে পূজা করে, ভারতবর্ষ হইতে সেই শক্তিকে প্রত্যহ সে অপহরণ করিয়া এ দেশকে উত্তরোত্তর নিজের কাছে অধিকতর হেয় করিয়া তুলিতেছে, আমাদিগকে ভীরু বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে-- অথচ একবার চিন্তা করিয়া দেখে না, এই ভীরুতাকে জন্ম দিয়া তাহাদের দলবদ্ধ ভীরুতা পশ্চাতে দাঁড়াইয়া আছে।

 

অতএব অনেক দিন হইতে ইহা দেখা যাইতেছে যে, অ্যাংলোস্যাক্‌সন মহিমাকে সম্পূর্ণ নিরুপদ্রব করিবার পক্ষে দূরতম ব্যাঘাতটি যদি আমাদের দেশের পক্ষে মহত্তম দুর্মূল্য বস্তুও হয়, তবে তাহাকে দলিয়া সমভূমি করিয়া দিতে ইহারা বিচারমাত্র করে না।

 

এই সত্যটি ক্রমে ক্রমে ভিতরে ভিতরে আমাদের কাছেও স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে বলিয়াই আজ গবর্মেন্টের প্রত্যেক নড়াচড়ায় আমাদের হৃৎকম্প উপস্থিত হইতেছে, তাঁহারা মুখের কথায় যতই আশ্বাস দিতেছেন আমাদের সন্দেহ ততই বাড়িয়া উঠিতেছে।

 

কিন্তু আমাদের পক্ষে অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, আমাদের সন্দেহেরও অন্ত নাই, আমাদের নির্ভরেরও সীমা নাই। বিশ্বাসও করিব না, প্রার্থনাও করিব। যদি জিজ্ঞাসা করা যায় এমন করিয়া সময় নষ্ট করিতেছে কেন, তবে উত্তর পাইবে, এক দলের দয়া না যদি হয় তো আর-এক দলের দয়া হইতে পারে। প্রাতঃকালে যদি অনুগ্রহ না পাওয়া যায় তো, যথেষ্ট অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিলে সন্ধ্যাকালে অনুগ্রহ পাওয়া যাইতে পারে। রাজা তো আমাদের একটি নয়, এইজন্য বারবার সহস্রবার তাড়া খাইলেও আমাদের আশা কোনোক্রমেই মরিতে চায় না-- এমনি আমাদের মুশকিল হইয়াছে।

 

কথাটা ঠিক। আমাদের একজন রাজা নহে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভারতবর্ষের ভাগ্যে একটা অপূর্ব ব্যাপার ঘটিয়াছে। একটি বিদেশী জাতি আমাদের উপরে রাজত্ব করিতেছে, একজন বিদেশী রাজা নহে। একটি দূরবর্তী সমগ্র জাতির কর্তৃত্বভার আমাদিগকে বহন করিতে হইতেছে। ভিক্ষাবৃত্তির পক্ষে এই অবস্থাটাই কি এত অনুকূল? প্রবাদ আছে যে, ভাগের মা গঙ্গা পায় না, ভাগের কুপোষ্যই কি মাছের মুড়া এবং দুধের সর পায়?

 

অবিশ্বাস করিবার একটা শক্তি মানুষের পক্ষে অবশ্যপ্রয়োজনীয়। ইহা কেবল একটা নেতিভাবক গুণ নহে, ইহা কর্তৃভাবক। মনুষ্যত্বকে রক্ষা করিতে হইলে এই অবিশ্বাসের ক্ষমতাকে নিজের শক্তির দ্বারা খাড়া করিয়া রাখিতে হয়। যিনি বিজ্ঞানচর্চায় প্রবৃত্ত তাঁহাকে অনেক জনশ্রুতি, অনেক প্রমাণহীন প্রচলিত ধারণাকে অবিশ্বাসের জোরে খেদাইয়া রাখিতে হয়, নহিলে তাঁহার বিজ্ঞান পণ্ড হইয়া যায়। যিনি কর্ম করিতে চান অবিশ্বাসের নিড়ানির দ্বারা তাঁহাকে কর্মক্ষেত্র নিষ্কণ্টক রাখিতে হয়। এই-যে অবিশ্বাস ইহা অন্যের উপরে অবজ্ঞা বা ঈর্ষাবশত নহে; নিজের বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি, নিজের কর্তব্যসাধনার প্রতি সম্মানবশত।

 

আমাদের দেশে ইংরেজ-রাজনীতিতে অবিশ্বাস যে কিরূপ প্রবল সতর্কতার সঙ্গে কাজ করিতেছে এবং সেই অবিশ্বাস যে কিরূপ নির্মমভাবে আপনার লক্ষ্যসাধন করিতেছে তাহা পূর্বেই বলিয়াছি। উচ্চ ধর্মনীতির নহে, কিন্তু সাধারণ রাজনীতির দিক দিয়া দেখিলে এই কঠিন অটল অবিশ্বাসের জন্য ইংরেজকে দোষ দেওয়া যায় না। ঐক্যের যে কী শক্তি, কী মাহাত্ম্য, তাহা ইংরেজ আমাদের চেয়ে ভালো করিয়াই জানে। ইংরেজ জানে, ঐক্যের অনুভূতির মধ্যে কেবল একটা শক্তিমাত্র নহে, পরন্তু এমন একটা আনন্দ আছে যে, সেই অনুভূতির আবেগে মানুষ সমস্ত দুঃখ ও ক্ষতি তুচ্ছ করিয়া অসাধ্যসাধনে প্রবৃত্ত হয়। ইংরেজ আমাদের চেয়ে ভালো করিয়াই জানে যে, ক্ষমতা-অনুভূতির স্ফূর্তি মানুষকে কিরূপ একটা প্রেরণা দান করে। উচ্চ অধিকার লাভ করিয়া রক্ষা করিতে পারিলে সেইখানেই তাহা আমাদিগকে থাকিতে দেয় না-- উচ্চতর অধিকারলাভের জন্য আমাদের সমস্ত প্রকৃতি উন্মুখ হইয়া উঠে। আমাদের শক্তি নাই, আমরা পারি না, এই মোহই সকলের চেয়ে ভয়ংকর মোহ। যে ব্যক্তি ক্ষমতাপ্রয়োগের অধিকার পায় নাই সে আপনার শক্তির স্বাদ জানে না; সে নিজেই নিজের পরম শত্রু। সে জানে যে আমি অক্ষম, এবং এইরূপ জানাই তাহার দারুণ দুর্বলতার কারণ। এরূপ অবস্থায় ইংরেজ যে আমাদের মধ্যে ঐক্যবন্ধনে পোলিটিকাল হিসাবে আনন্দবোধ করিবে না, আমাদের হাতে উচ্চ অধিকার দিয়া আমাদের ক্ষমতার অনুভূতিকে উত্তরোত্তর সবল করিয়া তুলিবার জন্য আগ্রহ অনুভব করিবে না, এ কথা বুঝিতে অধিক মননশক্তির প্রয়োজন হয় না। আমাদের দেশে যে-সকল পোলিটিকাল প্রার্থনাসভা স্থাপিত হইয়াছে তাহারা যদি ভিক্ষুকের রীতিতেই ভিক্ষা করিত তাহা হইলেও হয়তো মাঝে মাঝে দরখাস্ত মঞ্জুর হইত-- কিন্তু তাহারা গর্জন করিয়া ভিক্ষা করে, তাহারা দেশবিদেশের লোক একত্র করিয়া ভিক্ষা করে, তাহারা ভিক্ষাবৃত্তিকে একটা শক্তি করিয়া তুলিতে চেষ্টা করে, সুতরাং এই শক্তিকে প্রশ্রয় দিতে ইংরেজ রাজা সাহস করে না। ইহার প্রার্থনা পূরণ করিলেই ইহার শক্তির স্পর্ধাকে লালন করা হয়, এইজন্য ইংরেজ-রাজনীতি আড়ম্বরসহকারে ইহার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়া ইহার গর্বকে খর্ব করিয়া রাখিতে চায়। এমন অবস্থায় এই-সকল পোলিটিকাল সভা কৃতকার্যতার বল লাভ করিতে পারে না; একত্র হইবার যে শক্তি তাহা ক্ষণকালের জন্য পায় বটে, কিন্তু সেই শক্তিকে একটা যথার্থ সার্থকতার দিকে প্রয়োগ করিবার যে স্ফূর্তি তাহা পায় না। সুতরাং নিষ্ফল চেষ্টায় প্রবৃত্ত শক্তি, ডিম্ব হইতে অকালে জাত অরুণের মতো পঙ্গু হইয়াই থাকে-- সে কেবল রথেই জোড়া থাকিবার উমেদার হইয়া থাকে, তাহার নিজের উড়িবার কোনো উদ্যম থাকে না।

 

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ভারতবর্ষের পলিটিক্সে অবিশ্বাসনীতি রাজার তরফে অত্যন্ত সুদৃঢ়, অথচ আমাদের তরফে তাহা একান্ত শিথিল। আমরা একই কালে অবিশ্বাস প্রকাশ করি, কিন্তু বিশ্বাসের বন্ধন ছেদন করি না। ইহাকেই বলে ওরিয়েন্টাল-- এইখানেই পাশ্চাত্যদের সঙ্গে আমাদের প্রভেদ। য়ুরোপ কায়মনবাক্যে অবিশ্বাস করিতে জানে-- আর, ষোলো-আনা অবিশ্বাসকে জাগাইয়া রাখিবার যে কঠিন শক্তি তাহা আমাদের নাই, আমরা ভুলিয়া নিশ্চিন্ত হইতে চাই, আমরা কোনোক্রমে বিশ্বাস করিতে পারিলে বাঁচি। যাহা অনাবশ্যক তাহাকেও রক্ষা করিবার,যাহা অশ্রদ্ধেয় তাহাকেও গ্রহণ করিবার, যাহা প্রতিকূল তাহাকেও অঙ্গীভূত করিবার জন্য আমরা চিরদিন প্রস্তুত হইয়া আছি।

 

য়ুরোপ যাহা-কিছু পাইয়াছে তাহা বিরোধ করিয়াই পাইয়াছে, আমাদের যাহা-কিছু সম্পত্তি তাহা বিশ্বাসের ধন। এখন বিরোধপরায়ণ জাতির সহিত বিশ্বাসপরায়ণ জাতির বোঝাপড়া মুশকিল হইয়াছে। স্বভাববিশ্বাসীকে শ্রদ্ধাই করে না।

 

যাহাই হউক, চিরন্তন প্রকৃতিবশত আমাদের ব্যবহারে যাহাই প্রকাশ পাউক, ইংরেজ রাজা স্বভাবতই যে আমাদের ঐক্যের সহায় নহেন, আমাদের ক্ষমতালাভের অনুকূল নহেন, এ কথা আমাদের মনকে অধিকার করিয়াছে। সেইজন্যই য়ুনিভার্সিটি-সংশোধন বঙ্গব্যবচ্ছেদ প্রভৃতি গবর্মেন্টের ব্যবস্থাগুলিকে আমাদের শক্তি খর্ব করিবার সংকল্প বলিয়া কল্পনা করিয়াছি।

 

এমনতরো সন্দিগ্ধ অবস্থার স্বাভাবিক গতি হওয়া উচিত-- আমাদের স্বদেশহিতকর সমস্ত চেষ্টাকে নিজের দিকে ফিরাইয়া আনা। আমাদের অবিশ্বাসের মধ্যে এইটুকুই আমাদের লাভের বিষয়। পরের নিকট আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাকে বদ্ধ করিয়া রাখিলে কেবল যে ফল পাওয়া যায় না তাহা নহে, তাহাতে আমাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত আত্মশক্তির মাহাত্ম্য চিরদিনের জন্য নষ্ট হইয়া যায়। এইটেই আমাদিগকে বিশেষ করিয়া মনে রাখিতে হইবে। ইংরেজ আমাদের প্রার্থনাপূরণ করিবে না, অতএব আমরা তাহাদের কাছে যাইব না-- এ সুবুদ্ধিটা লজ্জাকর। বস্তুত এই কথাই আমাদের মনে রাখিতে হইবে, অধিকাংশ স্থলেই প্রার্থনাপূরণটাই আমাদের লোকসান। নিজের চেষ্টার দ্বারা যতটুকু ফল পাই তাহাতে ফলও পাওয়া যায়, শক্তিও পাওয়া যায়, সোনাও পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে পরশপাথরও পাওয়া যায়। পরের দ্বার রুদ্ধ হইয়াছে বলিয়াই ভিক্ষাবৃত্তি হইতে যদি নিরস্ত হইতে হয়, পৌরুষবশত, মনুষ্যত্ববশত, নিজের প্রতি, নিজের অন্তর্যামী পুরুষের প্রতি সম্মানবশত যদি না হয়, তবে এই ভিক্ষাবৈরাগ্যের প্রতি আমি কোনো ভরসা রাখি না।

 

বস্তুত, ইংরেজের উপর রাগ করিয়া নিজের দেশের উপর হঠাৎ অত্যন্ত মনোযোগ দিতে আরম্ভ করা কেমন-- যেমন স্বামীর উপরে অভিমান করিয়া সবেগে বাপের বাড়ি যাওয়া। সে বেগের হ্রাস হইতে বেশিক্ষণ লাগে না, আবার দ্বিগুণ আগ্রহে সেই শ্বশুরবাড়িতেই ফিরিতে হয়। দেশের প্রতি আমাদের যে-সকল কর্তব্য আজ আমরা স্থির করিয়াছি সে যদি দেশের প্রতি প্রীতির উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয় তবেই তাহার গৌরব এবং স্থায়িত্ব, ইংরেজের প্রতি রাগের যদি তাহার নির্ভর হয় তবে তাহার উপরে ভরসা রাখা বড়ো কঠিন। ডাক্তার অসম্ভব ভিজিট বাড়াইয়াছে বলিয়া তাহার উপরে রাগ করিয়া যদি শরীর ভালো করিতে চেষ্টা করি তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু শরীরের প্রতি মমতা করিয়া যদি এ কাজে প্রবৃত্ত হই তবেই কাজটা যথার্থভাবে সম্পন্ন হইবার এবং উৎসাহ স্থায়ীভাবে রক্ষিত হইবার সম্ভাবনা থাকে।

 

তবে কিনা, যেমন ঘড়ির কল কোনো-একটা আকস্মিক বাধায় বন্ধ হইয়া থাকিলে তাহাকে প্রথমে একটা নাড়া দেওয়া যায়, তাহার পরেই সে আর দ্বিতীয় ঝাঁকানির অপেক্ষা না করিয়া নিজের দমেই নিজে চলিতে থাকে-- তেমনি স্বদেশের প্রতি কর্তব্যপরতাও হয়তো আমাদের সমাজে একটা বড়োরকমের ঝাঁকানির অপেক্ষায় ছিল-- হয়তো স্বদেশের প্রতি স্বভাবসিদ্ধ প্রীতি এই ঝাঁকানির পর হইতে নিজের আভ্যন্তরিক শক্তিতেই আবার কিছুকাল সহজে চলিতে থাকিবে। অতএব এই ঝাঁকানিটা যাহাতে আমাদের মনের উপরে বেশ রীতিমত লাগে সে পক্ষেও আমাদিগকে সচেষ্ট হইতে হইবে। যদি সাময়িক আন্দোলনের সাহায্যে আমাদের নিত্য জীবনীক্রিয়া সজাগ হইয়া উঠে তবে এই সুযোগটা ছাড়িয়া দেওয়া কিছু নয়।

 

এখন তবে কথা এই যে, আমাদের দেশে বঙ্গব্যবচ্ছেদের আক্ষেপে আমরা যথাসম্ভব বিলাতি জিনিস কেনা বন্ধ করিয়া দেশী জিনিস কিনিবার জন্য যে সংকল্প করিয়াছি সেই সংকল্পটিকে স্তব্ধভাবে, গভীরভাবে, স্থায়ী মঙ্গলের উপরে স্থাপিত করিতে হইবে। আমি আমাদের এই বর্তমান উদ্‌যোগটির সম্বন্ধে যদি আনন্দ অনুভব করি তবে তাহার কারণ এ নয় যে তাহাতে ইংরেজের ক্ষতি হইবে, তাহার কারণ সম্পূর্ণভাবে এও নহে যে তাহাতে আমাদের দেশী ব্যবসায়ীদের লাভ হইবে-- এ-সমস্ত লাভক্ষতি নানা বাহিরের অবস্থার উপরে নির্ভর করে-- সে-সমস্ত সূক্ষ্ণভাবে বিচার করিয়া দেখা আমার ক্ষমতায় নাই। আমি আমাদের অন্তরের লাভের দিকটা দেখিতেছি। আমি দেখিতেছি, আমরা যদি সর্বদা সচেষ্ট হইয়া দেশী জিনিস ব্যবহার করিতে প্রবৃত্ত হই, যে জিনিসটা দেশী নহে, তাহার ব্যবহারে বাধ্য হইতে হইলে যদি কষ্ট অনুভব করিতে থাকি, দেশী জিনিস ব্যবহারের গতিকে যদি কতকটা পরিমাণে আরাম ও আড়ম্বর হইতে বঞ্চিত হইতে হয়, যদি সেজন্য মাঝে মাঝে স্বদলের উপহাস ও নিন্দা সহ্য করিতে প্রস্তুত হই, তবে স্বদেশ আমাদের হৃদয়কে অধিকার করিতে পারিবে। এই উপলক্ষে আমাদের চিত্ত সর্বদা স্বদেশের অভিমুখ হইয়া থাকিবে। আমরা ত্যাগের দ্বারা দুঃখস্বীকারের দ্বারা আপন দেশকে যথার্থভাবে আপনার করিয়া লইব। আমাদের আরাম বিলাস আত্মসুখতৃপ্তি আমাদিগকে প্রত্যহ স্বদেশ হইতে দূরে লইয়া যাইতেছিল, প্রত্যহ আমাদিগকে পরবশ করিয়া লোকহিতব্রতের জন্য অক্ষম করিতেছিল-- আজ আমরা সকলে মিলিয়া যদি নিজের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় দেশের দিকে তাকাইয়া ঐশ্বর্যের আড়ম্বর ও আরামের অভ্যাস কিছু পরিমাণও পরিত্যাগ করিতে পারি, তবে সেই ত্যাগের ঐক্য দ্বারা আমরা পরস্পর নিকটবর্তী হইয়া দেশকে বলিষ্ঠ করিতে পারিব। দেশী জিনিস ব্যবহার করার ইহাই যথার্থ সার্থকতা-- ইহা দেশের পূজা, ইহা একটি মহান সংকল্পের নিকটে আত্মনিবেদন।

 

এইরূপে কোনো একটা কর্মের দ্বারা, কাঠিন্যের দ্বারা, ত্যাগের দ্বারা আত্মনিবেদনের জন্য আমাদের অন্তঃকরণ নিশ্চয়ই অপেক্ষা করিয়া আছে-- আমরা কেবলমাত্র সভা ডাকিয়া, কথা কহিয়া, আবেদন করিয়া নিশ্চয়ই তৃপ্তিলাভ করি নাই। কখনো ভ্রমেও মনে করি নাই ইহার দ্বারাই আমাদের জীবন সার্থক হইতেছে। ইহার দ্বারা আমরা নিজের একটা শক্তি উপলব্ধি করিতে পারি নাই; ইহা আমাদের চিত্তকে, আমাদের পূজার ব্যগ্রতাকে, আমাদের সুখদুঃখনিরপেক্ষ ফলাফলবিচারবিহীন আত্মদানের ব্যাকুলতাকে দুর্নিবার বেগে বাহিরে আকর্ষণ করিয়া আনিতে পারে নাই। কি আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তির প্রকৃতিতে, কি জাতির প্রকৃতিতে, কোনো-একটি মহা-আহ্বানে আপনাকে নিঃশেষে বাহিরে নিবেদন করিবার জন্য প্রতীক্ষা অন্তরের অন্তরে বাস করিতেছে-- সেখানে আমাদের দৃষ্টি পড়ে বা না পড়ে তাহার নির্বাণহীন প্রদীপ জ্বলিতেছেই। যখন কোনো বৃহৎ আকর্ষণে আমরা আপনাদের আরামের, আপনাদের স্বার্থের গহ্বর ছাড়িয়া আপনাকে যেন আপনার বাহিরে প্রবলভাবে সমর্পণ করিতে পারি তখন আমাদের ভয় থাকে না, দ্বিধা থাকে না, তখনই আমরা আমাদের অন্তর্নিহিত অদ্ভুত শক্তিকে উপলব্ধি করিতে পারি-- নিজেকে আর দীনহীন দুর্বল বলিয়া মনে হয় না। এইরূপে নিজের অন্তরের শক্তিকে এবং সেই শক্তির যোগে বৃহৎ বাহিরের শক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করাই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের এবং জাতিগত সত্তার একমাত্র চরিতার্থতা।

 

নিশ্চয় জানি, এই বিপুল সার্থকতার জন্য আমরা সকলেই অপেক্ষা করিয়া আছি। ইহারই অভাবে আমাদের সমস্ত দেশকে বিষাদে আচ্ছন্ন ও অবসাদে ভারাক্রান্ত করিয়া রাখিয়াছে। ইহারই অভাবে আমাদের মজ্জাগত দৌর্বল্য যায় না, আমাদের পরস্পরের মধ্যে অনৈক্য ঘোচে না, আমাদের আত্মাভিমানের চপলতা কিছুতেই দূর হয় না। ইহারই অভাবে আমরা দুঃখ বহন করিতে, বিলাস ত্যাগ করিতে, ক্ষতি স্বীকার করিতে অসম্মত। ইহারই অভাবে আমরা প্রাণটাকে ভয়মুগ্ধ শিশুর ধাত্রীর মতো একান্ত আগ্রহে আঁকড়িয়া ধরিয়া আছি, মৃত্যুকে নিঃশঙ্ক বীর্যের সহিত বরণ করিতে পারিতেছি না। যিনি আমাদের দেশের দেবতা, যিনি আমাদের পিতামহদের সহিত আমাদিগকে এক সূত্রে বাঁধিয়াছেন, যিনি আমাদের সন্তানের মধ্যে আমাদের সাধনাকে সিদ্ধিদান করিবার পথ মুক্ত করিতেছেন, যিনি আমাদের এই সূর্যালোকদীপ্ত নীলাকাশের নিম্নে যুগে যুগে সকলকে একত্র করিয়া এক বিশেষ বাণীর দ্বারা আমাদের সকলের চিত্তকে এক বিশেষ ভাবে উদ্‌বোধিত করিতেছেন, আমাদের চিরপরিচিত ছায়ালোকবিচিত্র অরণ্য-প্রান্তর-শস্যক্ষেত্র যাঁহার বিশেষ মূর্তিকে পুরুষানুক্রমে আমাদের চক্ষের সম্মুখে প্রকাশমান করিয়া রাখিয়াছে, আমাদের পুণ্যনদীসকল যাঁহার পাদোদকরূপে আমাদের গৃহের দ্বারে দ্বারে প্রবাহিত হইয়া যাইতেছে, যিনি জাতিনির্বিশেষে হিন্দু-মুসলমান-খ্রীস্টানকে এক মহাযজ্ঞে আহ্বান করিয়া পাশে পাশে বসাইয়া সকলেরই অন্নের থালায় স্বহস্তে পরিবেশন করিয়া আসিতেছেন, দেশের অন্তর্যামী সেই দেবতাকে, আমাদের সেই চিরন্তন অধিপতিকে এখনো আমরা সহজে প্রত্যক্ষ করিতে পারি নাই। যদি অকস্মাৎ কোনো বৃহৎ ঘটনায়, কোনো মহান আবেগের ঝড়ে পর্দা একবার একটু উড়িয়া যায় তবে এই দেবাধিষ্ঠিত দেশের মধ্যে হঠাৎ দেখিতে পাইব, আমরা কেহই স্বতন্ত্র নহি, বিচ্ছিন্ন নহি-- দেখিতে পাইব, যিনি যুগযুগান্তর হইতে আমাদিগকে এই সমুদ্রবিধৌত হিমাদ্রি-অধিরাজিত উদার দেশের মধ্যে এক ধনধান্য, এক সুখদুঃখ, এক বিরাট প্রকৃতির মাঝখানে রাখিয়া নিরন্তর এক করিয়া তুলিতেছেন, সেই দেশের দেবতা দুর্জেয়, তাঁহাকে কোনোদিন কেহই অধীন করে নাই, তিনি ইংরেজি স্কুলের ছাত্র নহেন, তিনি ইংরেজ রাজার প্রজা নহেন, আমাদের বহুতর দুর্গতি তাঁহাকে স্পর্শও করিতে পারে নাই, তিনি প্রবল, তিনি চিরজাগ্রত-- ইঁহার এই সহজমুক্ত স্বরূপ দেখিতে পাইলে তখনই আনন্দের প্রাচুর্যবেগে আমরা অনায়াসেই পূজা করিব, ত্যাগ করিব, আত্মসমর্পণ করিব, কোনো উপদেশের অপেক্ষা থাকিবে না। তখন দুর্গম পথকে পরিহার করিব না, তখন পরের প্রসাদকেই জাতীয় উন্নতিলাভের চরম সম্বল মনে করাকে পরিহাস করিব এবং অপমানের মূল্যে আশু ফললাভের উঞ্ছবৃত্তিকে অন্তরের সহিত অবজ্ঞা করিতে পারিব।

 

আজ একটি আকস্মিক ঘটনায় সমস্ত বাঙালিকে একই বেদনায় আঘাত করাতে আমরা যেন ক্ষণকালের জন্যও আমাদের এই স্বদেশের অন্তর্যামী দেবতার আভাস পাইয়াছি। সেইজন্য, যাহারা কোনোদিন চিন্তা করিত না তাহারা চিন্তা করিতেছে, যাহারা পরিহাস করিত তাহারা স্তব্ধ হইয়াছে, যাহারা কোনো মহান সংকল্পের দিকে তাকাইয়া কোনোরূপ ত্যাগস্বীকার করিতে জানিত না তাহারাও যেন কিছু অসুবিধা ভোগ করিবার জন্য উদ্যম অনুভব করিতেছে এবং যাহারা প্রত্যেক কথাতেই পরের দ্বারে ছুটিতে ব্যগ্র হইয়া উঠিত তাহারাও কিঞ্চিৎ দ্বিধার সহিত নিজের শক্তি সন্ধান করিতেছে।

 

একবার এই আশ্চর্য ব্যাপারটা ভালো করিয়া মনের মধ্যে অনুভব করিয়া দেখুন। ইতিপূর্বে রাজার কোনো অপ্রিয় ব্যবহারে বা কোনো অনভিমত আইনে আঘাত পাইয়া আমরা অনেকবার অনেক কলকৌশল, অনেক কোলাহল, অনেক সভা আহ্বান করিয়াছি; কিন্তু আমাদের অন্তঃকরণ বল পায় নাই, আমরা নিজের চেষ্টাকে নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি নাই, এইজন্য সহস্র অত্যুক্তিদ্বারাও রাজার প্রত্যয় আকর্ষণ করিতে পারি নাই, দেশের ঔদাসীন্য দূর করিতে পারি নাই। আজ আসন্ন বঙ্গবিভাগের উদ্‌যোগ বাঙালির পক্ষে পরম শোকের কারণ হইলেও এই শোক আমাদিগকে নিরুপায় অবসাদে অভিভূত করে নাই। বস্তুত, বেদনার মধ্যে আমরা একটা আনন্দই অনুভব করিতেছি। আনন্দের কারণ, এই বেদনার মধ্যে আমরা নিজেকে অনুভব করিতেছি-- পরকে খুঁজিয়া বেড়াইতেছি না। আনন্দের কারণ, আমরা আভাস পাইয়াছি আমাদের নিজের একটা শক্তি আছে-- সেই শক্তির প্রভাবে আজ আমরা ত্যাগ করিবার, দুঃখ ভোগ করিবার পরম অধিকার লাভ করিয়াছি। আজ আমাদের বালকেরাও বলিতেছে, পরিত্যাগ করো বিদেশের বেশভূষা, বিদেশের বিলাস পরিহার করো-- সে কথা শুনিয়া বৃদ্ধেরাও তাহাদিগকে ভর্ৎসনা করিতেছে না, বিজ্ঞেরাও তাহাদিগকে পরিহাস করিতেছে না; এই কথা নিঃসঙ্কোচে বলিবার এবং এই কথা নিস্তব্ধ হইয়া শুনিবার বল আমরা কোথা হইতে পাইলাম? সুখেই হউক আর দুঃখেই হউক, সম্পদেই হউক আর বিপদেই হউক, হৃদয়ে হৃদয়ে যথার্থভাবে মিলন হইলেই যাঁহার আবির্ভাব আর মুহূর্তকাল গোপন থাকে না তিনি আমাদিগকে বিপদের দিনে এই বল দিয়াছেন, দুঃখের দিনে এই আনন্দ দিয়াছেন। আজ দুর্যোগের রাত্রে যে বিদ্যুতের আলোক চকিত হইতেছে সেই আলোকে যদি আমরা রাজপ্রাসাদের সচিবদেরই মুখমণ্ডল দেখিতে থাকিতাম, তবে আমাদের অন্তরের এই উদার উদ্যমটুকু কখনোই থাকিত না। এই আলোকে আমাদের দেবালয়ের দেবতাকে, আমাদের ঐক্যাধিষ্ঠাত্রী অভয়াকে দেখিতেছি-- সেইজন্যই আজ আমাদের উৎসাহ এমন সজীব হইয়া উঠিল। সম্পদের দিনে নহে, কিন্তু সংকটের দিনেই বাংলাদেশ আপন হৃদয়ের মধ্যে এই প্রাণ লাভ করিল। ইহাতেই বুঝিতে হইবে, ঈশ্বরের শক্তি যে কেবল সম্ভবের পথ দিয়াই কাজ করে তাহা নহে; ইহাতেই বুঝিতে হইবে, দুর্বলেরও বল আছে, দরিদ্রেরও সম্পদ আছে এবং দুর্ভাগ্যকেই সৌভাগ্য করিয়া তুলিতে পারেন যিনি সেই জাগ্রত পুরুষ কেবল আমাদের জাগরণের প্রতীক্ষায় নিস্তব্ধ আছেন। তাঁহার অনুশাসন এ নয় যে, গবর্মেন্ট তোমাদের মানচিত্রের মাঝখানে যে-একটা কৃত্রিম রেখা টানিয়া দিতেছেন তোমরা তাঁহাদিগকে বলিয়া কহিয়া, কাঁদিয়া কাটিয়া, বিলাতি জিনিস কেনা রহিত করিয়া, বিলাতে টেলিগ্রাম ও দূত পাঠাইয়া, তাঁহাদের অনুগ্রহে সেই রেখা মুছিয়া লও। তাঁহার অনুশাসন এই যে, বাংলার মাঝখানে যে রাজাই যতগুলি রেখাই টানিয়া দিন, তোমাদিগকে এক থাকিতে হইবে-- আবেদন-নিবেদনের জোরে নয়, নিজের শক্তিতে এক থাকিতে হইবে, নিজের প্রেমে এক থাকিতে হইবে। রাজার দ্বারা বঙ্গবিভাগ ঘটিতেও পারে, নাও ঘটিতে পারে-- তাহাতে অতিমাত্র বিষণ্ন বা উল্লসিত হইয়ো না-- তোমরা যে আজ একই আকাঙক্ষা অনুভব করিতেছ ইহাতেই আনন্দিত হও এবং সেই আকাঙক্ষা তৃপ্তির জন্য সকলের মনে যে একই উদ্যম জন্মিয়াছে ইহার দ্বারাই সার্থকতা লাভ করো।

 

অতএব, এখন কিছুদিনের জন্য কেবল মাত্র একটা হৃদয়ের আন্দোলন ভোগ করিয়া এই শুভ সুযোগকে নষ্ট করিয়া ফেলিলে চলিবে না। আপনাকে সংবরণ করিয়া, সংযত করিয়া, এই আবেগকে নিত্য করিতে হইবে। আমাদের যে ঐক্যকে একটা আঘাতের সাহায্যে দেশের আদ্যন্তমধ্যে আমরা একসঙ্গে সকলে অনুভব করিয়াছি-- আমরা হিন্দু-মুসলমান, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, স্ত্রীলোক ও পুরুষ সকলেই বাঙালি বলিয়া যে এক বাংলার বেদনা অনুভব করিতে পারিয়াছি-- আঘাতের কারণ দূর হইলেই বা বিস্মৃত হইলেই সেই ঐক্যের চেতনা যদি দূর হইয়া যায় তবে আমাদের মতো দুর্ভাগা আর কেহ নাই। এখন হইতে আমাদের ঐক্যকে নানা উপলক্ষে নানা আকারে স্বীকার ও সম্মান করিতে হইবে। এখন হইতে আমরা হিন্দু ও মুসলমান, শহরবাসী ও পল্লীবাসী, পূর্ব ও পশ্চিম, পরস্পরের দৃঢ়বদ্ধ করতলের বন্ধন প্রতিক্ষণে অনুভব করিতে থাকিব। বিচ্ছেদে প্রেমকে ঘনিষ্ঠ করে; বিচ্ছেদের ব্যবধানের মধ্য দিয়া যে প্রবল মিলন সংঘটিত হইতে থাকে তাহা সচেষ্ট, জাগ্রত, বৈদ্যুত শক্তিতে পরিপূর্ণ। ঈশ্বরের ইচ্ছায় যদি আমাদের বঙ্গভূমি রাজকীয় ব্যবসায় বিচ্ছিন্নই হয়, তবে সেই বিচ্ছেদবেদনার উত্তেজনায় আমাদিগকে সামাজিক সদ্ভাবে আরো দৃঢ়রূপে মিলিত হইতে হইবে, আমাদিগকে নিজের চেষ্টায় ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে-- সেই চেষ্টার উদ্রেকই আমাদের পরম লাভ।

 

কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে সাধারণভাবে এ কথা বলিলে চলিবে না। মিলন কেমন করিয়া ঘটিতে পারে? একত্রে মিলিয়া কাজ করিলেই মিলন ঘটে, তাহা ছাড়া যথার্থ মিলনের আর-কোনো উপায় নাই।

 

দেশের কার্য বলিতে আর ভুল বুঝিলে চলিবে না-- এখন সেদিন নাই-- আমি যাহা বলিতেছি তাহার অর্থ এই, সাধ্যমত নিজেদের অভাব মোচন করা, নিজেদের কর্তব্য নিজে সাধন করা।

 

এই অভিপ্রায়টি মনে রাখিয়া দেশের কর্মশক্তিকে একটি বিশেষ কর্তৃসভার মধ্যে বদ্ধ করিতে হইবে। অন্তত একজন হিন্দু ও একজন মুসলমানকে আমরা এই সভার অধিনায়ক করিব-- তাঁহাদের নিকটে নিজেকে সম্পূর্ণ অধীন, সম্পূর্ণ নত করিয়া রাখিব; তাঁহাদিগকে কর দান করিব; তাঁহাদের আদেশ পালন করিব; নির্বিচারে তাঁহাদের শাসন মানিয়া চলিব; তাঁহাদিগকে সম্মান করিয়া আমাদের দেশকে সম্মানিত করিব।

 

আমি জানি, আমার এই প্রস্তাবকে আমাদের বিবেচক ব্যক্তিগণ অসম্ভব বলিয়া উড়াইয়া দিবেন। যাহা নিতান্তই সহজ, যাহাতে দুঃখ নাই, ত্যাগ নাই, অথচ আড়ম্বর আছে, উদ্দীপনা আছে, তাহা ছাড়া আর-কিছুকেই আমাদের স্বাদেশিকগণ সাধ্য বলিয়া গণ্যই করেন না। কিন্তু সম্প্রতি নাকি বাংলায় একটা দেশব্যাপী ক্ষোভ জন্মিয়াছে, সেইজন্যই আমি বিরক্ত ও বিদ্রূপ উদ্রেকের আশঙ্কা পরিত্যাগ করিয়া আমার প্রস্তাবটি সকলের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি এবং আশ্বস্ত করিবার জন্য একটা ঐতিহাসিক নজিরও এখানে উদ্‌ধৃত করিতেছি। আমি যে বিবরণটি পাঠ করিতে উদ্যত হইয়াছি তাহা রুশীয় গবর্মেন্টের অধীনস্থ বাহ্লীক প্রদেশীয়। ইহা কিছুকাল পূর্বে স্টেট্‌স্‌ম্যান পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল। সেই বাহ্লীক প্রদেশে জর্জীয় আর্মানিগণ যে চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছে তাহা যে কেন আমাদের পক্ষে দৃষ্টান্তস্বরূপ হইবে না তাহা জানি না। সেখানে "সকার্‌ট্‌ভেলিস্টি' নামধারী একটি জর্জীয় "ন্যাশনালিস্ট' সম্প্রদায় গঠিত হইয়াছে-- ইঁহারা "কার্স' প্রদেশে প্রত্যেক গ্রাম্য জিলায় স্বদেশীয় বিচারকদের দ্বারা গোপন বিচারশালা স্থাপন করিয়া রাজকীয় বিচারালয়কে নিষ্প্রভ করিয়া দিয়াছেন--

 

The peasants aver that these secret courts work with much greater expedition, accuracy and fairness than the Crown Courts, and that the Judges have the invaluable characteristic of incorruptibility। The Drozhakisti, or Armenian Nationalist party, had previously established a similar system of justice in the rural districts of the province of Erwan and more than that, they had practically supplanted the whole of the government system of rural administration and were employing agricultural experts, teachers and physicians of thier own choosing। It has long been a matter of notoriety that ever since the suppression of Armenian schools by the Rassian minister of Education, Delyanoff, who by the way was himself an Armenian, the Armenian population of the Caucasus has maintained clandestine national schools of its own।

 

আমি কেবল এই বৃত্তান্তটি উদাহরণস্বরূপে উদ্‌ধৃত করিয়াছি-- অর্থাৎ ইহার মধ্যে এইটুকুই দ্রষ্টব্য যে, স্বদেশের কর্মভার দেশের লোকের নিজেদের গ্রহণ করিবার চেষ্টা একটা পাগলামি নহে-- বস্তুত, দেশের হিতেচ্ছু ব্যক্তিদের এইরূপ চেষ্টাই একমাত্র স্বাভাবিক।

 

আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিতলোক যে গবর্মেন্টের চাকরিতে মাথা বিকাইয়া রাখিয়াছেন, ইহার শোচনীয়তা কি আমরা চিন্তা করিব না? কেবল চাকরির পথ আরো প্রশস্ত করিয়া দিবার জন্য প্রার্থনা করিব? চাকরির খাতিরে আমাদের দুর্বলতা কতদূর বাড়িতেছে তাহা কি আমরা জানি না? আমরা মনিবকে খুশি করিবার জন্য গুপ্তচরের কাজ করিতেছি, মাতৃভূমির বিরুদ্ধে হাত তুলিতেছি এবং যে মনিব আমাদের প্রতি অশ্রদ্ধা করে তাহাকে পৌরুষক্ষয়কর অপমানজনক আদেশও প্রফুল্লমুখে পালন করিতেছি-- এই চাকরি আরো বিস্তার করিতে হইবে? দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করিতে হইবে। আমরা যদি স্বদেশের কর্মভার নিজে গ্রহণ করিতাম তবে গবর্মেন্টের আপিস রাক্ষসের মতো আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকদিগকে কি এমন নিঃশেষে গ্রাস করিত? আবেদনের দ্বারা সরকারের চাকরি নহে, পৌরুষের দ্বারা স্বদেশের কর্মক্ষেত্র বিস্তার করিতে হইবে। যাহাতে আমাদের ডাক্তার, আমাদের শিক্ষক, আমাদের এঞ্জিনিয়ারগণ দেশের অধীন থাকিয়া দেশের কাজেই আপনার যোগ্যতার স্ফূর্তিসাধন করিতে পারেন আমাদিগকে তাহার ব্যবস্থা করিতেই হইবে। নতুবা আমাদের যে কী শক্তি আছে তাহার পরিচয়ই আমরা পাইব না। তা ছাড়া, এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে যে, সেবার অভ্যাসের দ্বারাই প্রীতির উপচয় হয়; যদি আমরা শিক্ষিতগণ এমন কোথাও কাজ করিতাম যেখানে দেশের কাজ করিতেছি এই ধারণা সর্বদা স্পষ্টরূপে জাগ্রত থাকিত, তবে দেশকে ভালোবাসো-- এ কথা নীতিশাস্ত্রের সাহায্যে উপদেশ দিতে হইত না। তবে এক দিকে যোগ্যতার অভিমান করা, অন্য দিকে প্রত্যেক অভাবের জন্য পরের সাহায্যের প্রার্থী হওয়া, এমনতরো অদ্ভুত অশ্রদ্ধাকর আচরণে আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইত না-- দেশের শিক্ষা স্বাধীন হইত এবং শিক্ষিত সমাজের শক্তি বন্ধনমুক্ত হইত।

 

জর্জীয়গণ, আর্মানিগণ প্রবল জাতি নহে-- ইহারা যে-সকল কাজ প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজে করিতেছে আমরা কি সেই-সকল কাজেরই জন্য দরবার করিতে দৌড়াই না? কৃষিতত্ত্বপারদর্শীদের লইয়া আমরাও কি আমাদের দেশের কৃষির উন্নতিতে প্রবৃত্ত হইতে পারিতাম না? আমাদের ডাক্তার লইয়া আমাদের দেশের স্বাস্থ্যবিধান-চেষ্টা কি আমাদের পক্ষে অসম্ভব? আমাদের পল্লীর শিক্ষাভার কি আমরা গ্রহণ করিতে পারি না? যাহাতে মামলা-মকদ্দমায় লোকের চরিত্র ও সম্বল নষ্ট না হইয়া সহজ বিচারপ্রণালীতে সালিস-নিষ্পত্তি দেশে চলে তাহার ব্যবস্থা করা কি আমাদের সাধ্যাতীত? সমস্তই সম্ভব হয়, যদি আমাদের এই-সকল স্বদেশী চেষ্টাকে যথার্থভাবে প্রয়োগ করিবার জন্য একটা দল বাঁধিতে পারি। এই দল, এই কর্তৃসভা আমাদিগকে স্থাপন করিতেই হইবে-- নতুবা বলিব, আজ আমরা যে-একটা উত্তেজনা প্রকাশ করিতেছি তাহা মাদকতা মাত্র, তাহার অবসানে অবসাদের পঙ্কশয্যায় লুণ্ঠন করিতে হইবে।

 

একটা কথা আমাদিগকে ভালো করিয়া বুঝিতে হইবে যে, পরের প্রদত্ত অধিকার আমাদের জাতীয় সম্পদ্‌রূপে গণ্য হইতে পারে না-- বরঞ্চ তাহার বিপরীত। দৃষ্টান্তস্বরূপে একবার পঞ্চায়েৎবিধির কথা ভাবিয়া দেখুন। একসময় পঞ্চায়েৎ আমাদের দেশের জিনিস ছিল, এখন পঞ্চায়েৎ গবর্মেন্টের আফিসে-গড়া জিনিস হইতে চলিল। যদি ফল বিচার করা যায় তবে এই দুই পঞ্চায়েতের প্রকৃতি একেবারে পরস্পরের বিপরীত বলিয়াই প্রতীত হইবে। যে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা গ্রামের লোকের স্বতঃপ্রদত্ত নহে, যাহা গবর্মেন্টের দত্ত, তাহা বাহিরের জিনিস হওয়াতেই গ্রামের বক্ষে একটা অশান্তির মতো চাপিয়া বসিবে-- তাহা ঈর্ষার সৃষ্টি করিবে-- এই পঞ্চায়েৎপদ লাভ করিবার জন্য অযোগ্য লোকে এমন-সকল চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইবে যাহাতে বিরোধ জন্মিতে থাকিবে-- পঞ্চায়েৎ ম্যাজিস্ট্রেটবর্গকেই স্বপক্ষ এবং গ্রামকে অপর পক্ষ বলিয়া জানিবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বাহবা পাইবার জন্য গোপনে অথবা প্রকাশ্যে গ্রামের বিশ্বাসভঙ্গ করিবে-- ইহারা গ্রামের লোক হইয়া গ্রামের চরের কাজ করিতে বাধ্য হইবে এবং যে পঞ্চায়েৎ এ দেশে গ্রামের বলস্বরূপ ছিল সেই পঞ্চায়েৎই গ্রামের দুর্বলতার কারণ হইবে। ভারতবর্ষের যে-সকল গ্রামে এখনো গ্রাম্য পঞ্চায়েতের প্রভাব বর্তমান আছে, যে পঞ্চায়েৎ কালক্রমে শিক্ষার বিস্তার ও অবস্থার পরিবর্তন-অনুসারে স্বভাবতই স্বাদেশিক পঞ্চায়েতে পরিণত হইতে পারিত, যে-গ্রাম্যপঞ্চায়েৎগণ একদিন স্বদেশের সাধারণ কার্যে পরস্পরের মধ্যে যোগ বাঁধিয়া দাঁড়াইবে এমন আশা করা যাইত-- সেই-সকল গ্রামের পঞ্চায়েৎগণের মধ্যে একবার যদি গবর্মেন্টের বেনো জল প্রবেশ করে, তবে পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েতত্ব চিরদিনের মতো ঘুচিল। দেশের জিনিস হইয়া তাহারা যে কাজ করিত গবর্মেন্টের জিনিস হইয়া তাহার সম্পূর্ণ উলটারকম কাজ করিবে।

 

ইহা হইতে আমাদিগকে বুঝিতে হইবে, দেশের হাত হইতে আমরা যে ক্ষমতা পাই তাহার প্রকৃতি একরকম, আর পরের হাত হইতে যাহা পাই তাহার প্রকৃতি সম্পূর্ণ অন্যরকম হইবেই। কারণ, মূল্য না দিয়া কোনো জিনিস আমরা পাইতেই পারি না। সুতরাং দেশের কাছ হইতে আমরা যাহা পাইব সেজন্য দেশের কাছেই আপনাকে বিকাইতে হইবে-- পরের কাছ হইতে যাহা পাইব সেজন্য পরের কাছে না বিকাইয়া উপায় নাই। এইরূপ বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ যদি পরের কাছে মাগিয়া লইতে হয় তবে শিক্ষাকে পরের গোলামি করিতেই হইবে-- যাহা স্বাভাবিক, তাহার জন্য আমরা বৃথা চীৎকার করিয়া মরি কেন?

 

দৃষ্টান্তস্বরূপ আর-একটা কথা বলি। মহাজনেরা চাষিদের অধিক সুদে কর্জ দিয়া তাহাদের সর্বনাশ করিতেছে, আমরা প্রার্থনা ছাড়া অন্য উপায় জানি না-- অতএব গবর্মেন্টকেই অথবা বিদেশী মহাজনদিগকে যদি আমরা বলি যে, তোমরা অল্প সুদে আমাদের গ্রামে গ্রামে কৃষি-ব্যাঙ্ক স্থাপন করো, তবে নিজে খদ্দের ডাকিয়া আনিয়া আমাদের দেশের চাষিদিগকে নিঃশেষে পরের হাতে বিকাইয়া দেওয়া হয় না? যাহারা যথার্থই দেশের বল, দেশের সম্পদ, তাহাদের প্রত্যেকটিতে কি পরের হাতে এমনি করিয়া বাঁধা রাখিতে হইবে? আমরা যে পরিমাণেই দেশের কাজ পরকে দিয়া করাইব সেই পরিমাণেই আমরা নিজের শক্তিকেই বিকাইতে থাকিব, দেশকে স্বেচ্ছাকৃত অধীনতাপাশে উত্তরোত্তর অধিকতর বাঁধিতে থাকিব-- এ কথা কি বুঝা এতই কঠিন? পরের প্রদত্ত ক্ষমতা আমাদের পক্ষে উপস্থিত সুবিধার কারণ যেমনই হউক তাহা আমাদের পক্ষে ছদ্মবেশী অভিসম্পাত, এ কথা স্বীকার করিতে আমাদের যত বিলম্ব হইবে আমাদের মোহজাল ততই দুশ্ছেদ্য হইয়া উঠিতে থাকিবে।

 

অতএব, আর দ্বিধা না করিয়া আমাদের গ্রামের স্বকীয় শাসনকার্য আমাদিগকে নিজের হাতে লইতেই হইবে। সরকারি পঞ্চায়েতের মুষ্টি আমাদের পল্লীর কণ্ঠে দৃঢ় হইবার পূর্বেই আমাদের নিজের পল্লী-পঞ্চায়েৎকে জাগাইয়া তুলিতে হইবে। চাষিকে আমরাই রক্ষা করিব, তাহার সন্তানদিগকে আমরাই শিক্ষা দিব, কৃষির উন্নতি আমরাই সাধন করিব, গ্রামের স্বাস্থ্য আমরাই বিধান করিব এবং সর্বনেশে মামলার হাত হইতে আমাদের জমিদার ও প্রজাদিগকে আমরাই বাঁচাইব। এ সম্বন্ধে রাজার সাহায্য লইবার কল্পনাও যেন আমাদের মাথায় না আসে-- কারণ, এ স্থলে সাহায্য লইবার অর্থই দুর্বলের স্বাধীন অধিকারের মধ্যে প্রবলকে ডাকিয়া আনিয়া বসানো।

 

একবার বিবেচনা করিয়া দেখিবেন, বিদেশী শাসনকালে বাংলাদেশে যদি এমন কোনো জিনিসের সৃষ্টি হইয়া থাকে যাহা লইয়া বাঙালি যথার্থ গৌরব করিতে পারে, তাহা বাংলা সাহিত্য। তাহার একটা প্রধান কারণ, বাংলা সাহিত্য সরকারের নেমক খায় নাই। পূর্বে প্রত্যেক বাংলা বই সরকার তিনখানি করিয়া কিনিতেন শুনিতে পাই এখন মূল্য দেওয়া বন্ধ করিয়াছেন। ভালোই করিয়াছেন। গবর্মেন্টের উপাধি-পুরস্কার-প্রসাদের প্রলোভন বাংলা সাহিত্যের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারে নাই বলিয়াই, এই সাহিত্য বাঙালির স্বাধীন আনন্দ-উৎস হইতে উৎসারিত বলিয়াই আমরা এই সাহিত্যের মধ্য হইতে এমন বল পাইতেছি। হয়তো গণনায় বাংলাভাষায় উচ্চশ্রেণীর গ্রন্থ-সংখ্যা অধিক না হইতে পারে, হয়তো বিষয়বৈচিত্র্যে এ সাহিত্য অন্যান্য সম্পৎশালী সাহিত্যের সহিত তুলনীয় নহে, কিন্তু তবু ইহাকে আমরা বর্তমান অসম্পূর্ণতা অতিক্রম করিয়া বড়ো করিয়া দেখিতে পাই-- কারণ, ইহা আমাদের নিজের শক্তি হইতে, নিজের অন্তরের মধ্য হইতে উদ্ভূত হইতেছে। এ ক্ষীণ হউক, দীন হউক, এ রাজার প্রশয়ের প্রত্যাশী নহে-- আমাদের প্রাণ ইহাকে প্রাণ জোগাইতেছে। অপর পক্ষে, আমাদের স্কুল-বইগুলির প্রতি ন্যূনাধিক পরিমাণে অনেক দিন হইতেই সরকারের গুরুহস্তের ভার পড়িয়াছে, এই রাজপ্রাসাদের প্রভাবে এই বইগুলির কিরূপ শ্রী বাহির হইতেছে তাহা কাহারো অগোচর নাই।

 

এই-যে স্বাধীন বাংলা সাহিত্য যাহার মধ্যে বাঙালি নিজের প্রকৃত শক্তি যথার্থভাবে অনুভব করিয়াছে, এই সাহিত্যই নাড়ীজালের মতো বাংলার পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণকে এক বন্ধনে বাঁধিয়াছে; তাহার মধ্যে এক চেতনা, এক প্রাণ সঞ্চার করিয়া রাখিতেছে; যদি আমাদের দেশে স্বদেশীসভাস্থাপন হয় তবে বাংলা সাহিত্যের অভাবমোচন, বাংলা সাহিত্যের পুষ্টিসাধন সভ্যগণের একটি বিশেষ কার্য হইবে। বাংলা ভাষা অবলম্বন করিয়া ইতিহাস বিজ্ঞান অর্থনীতি প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে দেশে জ্ঞানবিস্তারের চেষ্টা তাঁহাদিগকে করিতে হইবে। ইহা নিশ্চয় জানিতে হইবে যে, বাংলা সাহিত্য যত উন্নত সতেজ, যতই সম্পূর্ণ হইবে, ততই এই সাহিত্যই বাঙালি জাতিকে এক করিয়া ধারণ করিবার অনশ্বর আধার হইবে। বৈষ্ণবের গান, কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরাম দাসের মহাভারত আজ পর্যন্ত এই কাজ করিয়া আসিয়াছে।

 

আমি জানি, সমস্ত বাংলাদেশ এক মুহূর্তে একত্র হইয়া আপনার নায়ক নির্বাচনপূর্বক আপনার কাজে প্রবৃত্ত হইবে, এমন আশা করা যায় না। এখন আর বাদবিবাদ তর্কবিতর্ক না করিয়া আমরা যে-কয়জনেই উৎসাহ অনুভব করি, প্রয়োজন স্বীকার করি, সেই পাঁচ-দশজনেই মিলিয়া আমরা, আপনাদের অধিনায়ক নির্বাচন করিব, তাঁহার নিয়োগক্রমে জীবনযাত্রা নিয়মিত করিব, কর্তব্য পালন করিব, এবং সাধ্যমতে আপনার পরিবার প্রতিবেশী ও পল্লীকে লইয়া সুখ-স্বাস্থ্য-শিক্ষাবিধান সম্বন্ধে একটি স্বকীয় শাসনজাল বিস্তার করিব। এই প্রত্যেক দলের নিজের পাঠশালা, পুস্তকালয়, ব্যায়ামাগার, ব্যবহার্য দ্রব্যাদির বিক্রয়ভাণ্ডার (কো-অপারেটিভ স্টোর), ঔষধালয়, সঞ্চয় ব্যাঙ্ক, সালিস-নিষ্পত্তির সভা ও নির্দোষ আমোদের মিলনগৃহ থাকিবে।

 

এমনি করিয়া যদি আপাতত খণ্ড খণ্ড ভাবে দেশের নানা স্থানে এইরূপ এক-একটি কর্তৃসভা স্থাপিত হইতে থাকে, তবে, ক্রমে একদিন এই-সমস্ত খণ্ডসভাগুলিকে যোগসূত্রে এক করিয়া তুলিয়া একটি বিশ্ববঙ্গপ্রতিনিধিসভা প্রতিষ্ঠিত হইতে পারিবে।

 

আমরা এই সময়ে এই উপলক্ষে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎকে বাংলার ঐক্যসাধনযজ্ঞে বিশেষভাবে আহ্বান করিতেছি। তাঁহারা পরের দিকে না তাকাইয়া, নিজেকে পরের কাছে প্রচার না করিয়া, নিজের সাধ্যমত স্বদেশের পরিচয়লাভ ও তাহার জ্ঞানভাণ্ডারপূরণ করিতেছেন। এই পরিষৎকে জেলায় জেলায় আপনার শাখাসভা স্থাপন করিতে হইবে, এবং পর্যায়ক্রমে এক-একটি জেলায় গিয়া পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন সম্পন্ন করিতে হইবে। আমাদের চিন্তার ঐক্য, ভাবের ঐক্য, ভাষার ঐক্য, সাহিত্যের ঐক্য সম্বন্ধে সমস্ত দেশকে সচেতন করিবার, এই ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে আপন স্বাধীন কর্তব্য পালন করিবার ভার সাহিত্য-পরিষৎ গ্রহণ করিয়াছেন। এখন সময় উপস্থিত হইয়াছে-- এখন সমস্ত দেশকে নিজের আনুকূল্যে আহ্বান করিবার জন্য তাঁহাদিগকে সচেষ্ট হইতে হইবে।

 

যখন দেখা যাইতেছে বাহির হইতে আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা নিয়ত সতর্ক রহিয়াছে তখন তাহার প্রতিকারের  জন্য নানারূপে কেবলই দল বাঁধিবার দিকে আমাদের সমস্ত চেষ্টাকে নিযুক্ত করিতে হইবে।

 

যে গুণে মানুষকে একত্র করে তাহার মধ্যে একটা প্রধান গুণ বাধ্যতা। কেবলই অন্যকে খাটো করিবার চেষ্টা, তাহার ত্রুটি ধরা, নিজেকে কাহারো চেয়ে ন্যূন মনে না করা, নিজের একটা মত অনাদৃত হইলেই অথবা নিজের একটুখানি সুবিধার ব্যাঘাত হইলেই দল ছাড়িয়া আসিয়া তাহার বিরুদ্ধাচরণ করিবার প্রয়াস-- এইগুলিই সেই শয়তানের প্রদত্ত বিষ যাহা মানুষকে বিশ্লিষ্ট করিয়া দেয়, যজ্ঞ নষ্ট করে। ঐক্যরক্ষার জন্য আমাদিগকে অযোগ্যের কর্তৃত্বও স্বীকার করিতে হইবে-- ইহাতে মহান্‌ সংকল্পের নিকট নত হওয়া হয়, অযোগ্যতার নিকট নহে। বাঙালিকে ক্ষুদ্র আত্মাভিমান দমন করিয়া নানারূপে বাধ্যতার চর্চা করিতে হইবে, নিজে প্রধান হইবার চেষ্টা মন হইতে সম্পূর্ণরূপে দূর করিয়া অন্যকে প্রধান করিবার চেষ্টা করিতে হইবে। সর্বদাই অন্যকে সন্দেহ করিয়া, অবিশ্বাস করিয়া, উপহাস করিয়া, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় না দিয়া, বরঞ্চ নম্রভাবে বিনা বাক্যব্যয়ে ঠকিবার জন্যও প্রস্তুত হইতে হইবে। সম্প্রতি এই কঠিন সাধনা আমাদের সম্মুখে রহিয়াছে-- আপনকে খর্ব করিয়া আপনাদিগকে বড়ো করিবার এই সাধনা, খর্বকে বিসর্জন দিয়া গৌরবকে আশ্রয় করিবার এই সাধনা-- ইহা যখন আমাদের সিদ্ধ হইবে তখন আমরা সর্বপ্রকার কর্তৃত্বের যথার্থ যোগ্য হইব। ইহাও নিশ্চিত, যথার্থ যোগ্যতাকে পৃথিবীতে কোনো শক্তিই প্রতিরোধ করিতে পারে না। আমরা যখন কর্তৃত্বের ক্ষমতা লাভ করিব তখন আমরা দাসত্ব করিব না-- তা আমাদের প্রভু যত বড়োই প্রবল হউন। জল যখন জমিয়া কঠিন হয় তখন সে লোহার পাইপকেও ফাটাইয়া ফেলে। আজ আমরা জলের মতো তরল আছি, যন্ত্রীর ইচ্ছামত যন্ত্রের তাড়নায় লোহার কলের মধ্যে শত শত শাখাপ্রশাখায় ধাবিত হইতেছি-- জমাট বাঁধিবার শক্তি জন্মিলেই লোহার বাঁধনকে হার মানিতেই হইবে।

 

আমাদের নিজের দিকে যদি সম্পূর্ণ ফিরিয়া দাঁড়াইতে পারি, তবে নৈরাশ্যের লেশমাত্র কারণ দেখি না। বাহিরের কিছুতে আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন করিবে, এ কথা আমরা কোনোমতেই স্বীকার করিব না। কৃত্রিম বিচ্ছেদ যখন মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইবে তখনই আমরা সচেতনভাবে অনুভর করিব যে, বাংলার পূর্ব-পশ্চিমকে চিরকাল একই জাহ্নবী তাঁহার বহু বাহুপাশে বাঁধিয়াছেন; একই ব্রহ্মপুত্র তাঁহার প্রসারিত আলিঙ্গনে গ্রহণ করিয়াছেন; এই পূর্ব-পশ্চিম, হৃৎপিণ্ডের দক্ষিণ-বাম অংশের ন্যায়, একই পুরাতন রক্তস্রোতে সমস্ত বঙ্গদেশের শিরা-উপশিরায় প্রাণবিধান করিয়া আসিয়াছে; এই পূর্ব-পশ্চিম, জননীর বাম-দক্ষিণ স্তনের ন্যায়, চিরদিন বাঙালির সন্তানকে পালন করিয়াছে। আমাদের কিছুতেই পৃথক করিতে পারে এ ভয় যদি আমাদের জন্মে তবে সে ভয়ের কারণ নিশ্চয়ই আমাদেরই মধ্যে আছে এবং তাহার প্রতিকার আমাদের নিজের চেষ্টা ছাড়া আর-কোনো কৃত্রিম উপায়ের দ্বারা হইতে পারে না। কর্তৃপক্ষ আমাদের একটা-কিছু করিলেন বা না করিলেন বলিয়াই যদি আমাদের সকল দিকে সর্বনাশ হইয়া গেল বলিয়া আশঙ্কা করি, তবে কোনো কৌশললব্ধ সুযোগে কোনো প্রার্থনালব্ধ অনুগ্রহে আমাদিগকে অধিক দিন রক্ষা করিতে পারিবে না। ঈশ্বর আমাদের নিজের হাতে যাহা দিয়াছেন তাহার দিকে যদি তাকাইয়া দেখি তবে দেখিব, তাহা যথেষ্ট এবং তাহাই যথার্থ। মাটির নীচে যদি বা তিনি আমাদের জন্য গুপ্তধন না দিয়া থাকেন, তবু আমাদের মাটির মধ্যে সেই শক্তিটুকু দিয়াছেন যাহাতে বিধিমত কর্ষণ করিলে ফললাভ হইতে কখনোই বঞ্চিত হইব না। বাহির হইতে সুবিধা এবং সম্মান যখন হাত বাড়াইলেই পাওয়া যাইবে না, তখনই ঘরের মধ্যে যে চিরসহিষ্ণু চিরন্তন প্রেম লক্ষ্মীছাড়াদের গৃহপ্রত্যাবর্তনের জন্য গোধূলির অন্ধকারে পথ তাকাইয়া আছে তাহার মূল্য বুঝিব। তখন মাতৃভাষায় ভ্রাতৃগণের সহিত সুখদুঃখ-লাভক্ষতি আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিতে পারিব-- এবং সেই শুভদিন যখন আসিবে তখনই ব্রিটিশ শাসনকে বলিব ধন্য; তখনই অনুভব করিব বিদেশীর এই রাজত্ব বিধাতারই মঙ্গলবিধান। আমরা যাচিত ও অযাচিত যে-কোনো অনুগ্রহ পাইয়াছি তাহা যেন ক্রমে আমাদের অঞ্জলি হইতে স্খলিত হইয়া পড়ে এবং তাহা যেন স্বচেষ্টায় নিজে অর্জন করিয়া লইবার অবকাশ পাই। আমরা প্রশ্রয় চাহি না-- প্রতিকূলতার দ্বারাই আমাদের শক্তির উদ্‌বোধন হইবে। আমাদের নিদ্রার সহায়তা কেহ করিয়ো না-- আরাম আমাদের জন্য নহে, পরবশতার অহিফেনের মাত্রা প্রতিদিন আর বাড়িতে দিয়ো না -- বিধাতার রুদ্রমূর্তিই আজ আমাদের পরিত্রাণ। জগতে জড়কে সচেতন করিয়া তুলিবার একইমাত্র উপায় আছে-- আঘাত অপমান ও অভাব, সমাদর্শ নহে, সহায়তা নহে, সুভিক্ষা নহে।

 

  আশ্বিন ১৩১২


দেশভাগ কি আরও কম রক্তস্নাত হতে পারতো? # রামচন্দ্র গুহ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:৪৪ |

'দেশভাগ কি এড়ানো যেত না?' এটাই নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত ও সমাধানহীন প্রশ্ন। ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে সব রকমের ভারতীয়দের মধ্য থেকে এই প্রশ্ন বারবার উচ্চারিত হয়েছে এবং এর সব রকমের উত্তরও দেয়া হয়েছে। আরও একটি গুরুত্ববহ প্রশ্ন যা এখনও কমবেশি উচ্চারিত হয় তা হলো '১৯৪৬ বা পরবর্তীকালে দেশভাগ যদি অমোচনীয়ই হয়ে থাকে তবে তা আরও কম প্রাণক্ষয়ের মধ্য দিয়ে হতে পারতো না?'
১৯৪৭ এর ফেব্র"য়ারিতে লন্ডনের লেবার সরকারে ঘোষণা দেয়, তারা ১৯৪৮ এর জুনের মধ্যে ভারত ছাড়বে। তিনমাস পর নতুন ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন প্রায় নাটকীয় ভাবে ভারত ত্যাগের সময় সংপ্তি করে আগস্ট ১৯৪৭-এ এগিয়ে আনেন। তার দরবারি জীবনীকার ফিলিপ জিয়েগলার এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিক দিক তুলে ধরেছেন, 'যখনই দেশভাগের নীতি গৃহীত হয়েছে, তখনই বোঝা গেছে সাম্প্রদায়িকতা এখন মুক্তভাবে ঘৃণার উদ্গীরণ ঘটাবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের দীর্ঘকালীন অপেক্ষা সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোকেই উৎসাহিত করবে, উদ্বেগ ও হানাহানি বিস্তৃত হবে। আজ এটা পাঞ্জাবে, কাল বাংলা কিংবা হায়দরাবাদে অথবা উপমহাদেশের অগণন সমাজের যে কোনো স্থানে ঘটতে পারে। এটা ঘটতে পারে সেখানেই, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবস্থান করছে। দুই শত বা দুই হাজার মৃত্যু সেখানে দুই মিলিয়ন বা বিশ মিলিয়নে পরিণত হতে পারে।
১৯৮৫ সালে জিয়েগলার জীবনীটি লিখলেও বাস্তবতা হলো, দেশবিভাগের মূল্য হিসাবে এক মিলিয়ন মৃতদেহ গুনতে হয়েছিল। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে, এটা ছিল আরও বেশি। প্রায় দুই মিলিয়নের কাছাকাছি। যেভাবে পরিকল্পিত হয়েছিল, সেভাবে সেই জুন ১৯৪৮-এ ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করলে এই সংখ্যা কততে দাঁড়াতো? মাউন্টব্যাটেনের কাজের একটি আক্রমণাত্বক সমালোচনায় অ্যান্ড্রিউ রবার্টস তাকে নমনীয়তা ও দোদুল্যমানতার জন্য অভিযুক্ত করেছেনÑ
'যখনই শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলার সময় এসেছে, তখনই মাউন্টব্যাটেন মেরুদণ্ডহীনের পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন'Ñ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কার্যকর হস্তক্ষেপ করার অনিচ্ছায়, আরও স্পষ্ট করে বললে পাঞ্জাব সীমান্ত বাহিনীকে কাজে না লাগিয়ে এবং একে বিমান বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট না করে। জিয়েগলারের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েও রবার্টস মনে করেন 'তাড়াহুড়ার প্রত্যাহার' তবু 'কিছু কম প্রাণক্ষয় সম্ভব করে তুলেছে।
মাউন্টব্যাটেনের কর্মকর্তারা তাকে আগেই হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল, পাঞ্জাবই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সেখানে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হতে পারে। কিন্তু সময় যখন এলো তখন দাঙ্গা দমনে যথেষ্ট সৈন্য মোতায়েন করা হলো না। এর পেছনে ছিল একটাই কারণ, শাসক ব্রিটিশরা চলে যাচ্ছে এ ঘোষণা জনসম্মুখে প্রচারিত হলে তারা আক্রমণের শিকার হবে। এই ভয় তাদের মনে গেঁড়ে বসেছিল। এই ধারণাটি বহুলভাবে ব্রিটিশ কর্মকর্তা, জাজক, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল। ১৯৪৬ এর গ্রীষ্মে একজন তরুণ ব্রিটিশ কর্মকর্তা তার পরিবারের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছিল সে কোন দৃষ্টিতে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগকে দেখছে, 'ঘটনা শুরুর পূর্বে পুরো দেশটাই ভাবগতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে গেছে (যা আমাদের ছড়ানো-ছিটানো ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীকে সবখান থেকে উচ্ছেদ করতে সক্ষম)। কিন্তু যখন তা সত্যিই ঘটতে শুরু করবে তখন তা হিন্দু-মুসলমানদের সাম্প্রদায়িকতার বাইপ্রোডাক্টে পরিণত হবে।'
শেষ দিনগুলোতে শাসকের নীতিই ছিলÑ সর্বাগ্রে ব্রিটিশ জীবনের সুরা নিশ্চিত করা। ১৯৪৭ সালের ফেব্র"য়ারিতে বেঙ্গলের গভর্নর স্যার ফ্রেডরিক বারোজ বলেছিলেন, 'ব্রিটিশ মতা প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণার পর তার প্রথম পদক্ষেপ হবে...সেনাসদস্যদের সতর্ক রাখা এবং জনতা সহিংস হওয়ার আগেই যথাসম্ভব কম সময়ে ছড়ানো-ছিটানো ইউরোপীয়দের একত্রিত করা।' 
কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৪৭-এর গ্রীষ্মে একজন শ্বেতকায় নারী বা পুরুষই ছিল ভারতের সবচেয়ে নিরাপদ লোক। তাদের হত্যা করে কারও কোনও ফায়দা হতো না। কিন্তু তাদের কল্পনাপ্রসূত নিরাপত্তাহীনতার কারণে অন্য স্থানে দাঙ্গা প্রতিরোধে নিয়োজিত না রেখে ইউরোপীয় আবাসগুলোর পাশে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।
নিজেদের সুরার নীতি থেকে স্বাধীনতার তারিখ ঘোষণার পর পর্র্যন্ত পাঞ্জাব সীমান্ত চিহ্নিতকরণও বন্ধ রাখা হয়েছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর স্যার ইউয়ান্স জেনকিনস নিশ্চিত ছিলেন, নির্ধারিত হওয়ার পরই সীমান্ত সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হবেÑ এতে ডিস্ট্রিক্ট অফিসাররা ডমিনিয়নের পাকিস্তানি নাগরিকদের পাকিস্তানে এবং ভারতীয়দের ভারতে রাখতে সম হবেন। অন্যদিকে সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে একত্রিত করা হচ্ছিল, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে। সীমান্তরেখা চিহ্নিতকরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ ৯ আগস্টেই প্রস্তুত ছিলেন। তারপরও পনের আগস্টের পরই ঘোষণা দিতে চেয়েছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। ভাইসরয়ের তরফে দেরির কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা ছিল অদ্ভূত, 'প্রশ্নহীনভাবে বলা চলে, আগেই যদি এটা প্রকাশিত হতো তবে ব্রিটিশদেরকেই এ অপ্রতিরোধ্য ফলের দায় বহন করতে হতো।' এতদসঙ্গে ' এর প্রকাশনা স্থগিত হওয়ায় ব্রিটিশদের ওপর কম বিক্ষোভ প্রদর্শিত হবে।' অর্থাৎ স্থানীয় পুলিশের ওপরই দেশভাগ এবং স্বাধীনতা জনিত ভয়ংকর পরিস্থিতির দায় চাপাও।
রীতি অনুসারে, ইতিহাস সেভাবেই লেখা উচিত যেভাবে তা ঘটেছে, সেভাবে নয় যেভাবে ঘটা উচিত ছিল। আরও বর্ধিত সময়ের কলেবরে একবছর সময় হাতে নিয়ে যদি ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে দেশত্যাগের ঘোষণা দেয়া হতো তবে কি তা কম বেদনাদায়ক হতো? পাঞ্জাব সীমান্তে বেশি সংখ্যক সক্রিয় সেনা মোতায়েন করলে এবং র‌্যাডকিফের সীমান্ত রেখা চিহ্নিতকরণের ঘোষণা আগেভাগে দিলে কি পাঞ্জাবে কম রক্তপাত হতো? হয়তো, হয়তো নয়। 
পাঞ্জাবের একজন কর্মকর্তা অক্সফোর্ডের এক সমাজকর্মীকে যা বলেছিলেন তা-ই হয়তো ব্রিটিশ রাজের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে মোক্ষম এপিটাফ, 'তোমরা ব্রিটিশরা পরিচ্ছন্ন লেনদেনে বিশ্বাস করো। তোমরা ভারত ত্যাগ করেছিলে একে সেই গোলযোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে দিয়ে ঠিক যে অবস্থায় একে পেয়েছিলে তোমরা।' 
সূত্র : দি হিন্দু
অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

'দশ বছর পরে কেউ মোদীর নাম উল্লেখ করবে না'

No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk