কোটিপতি সাংসদরা ভুখা জনতার কি মঙ্গল করতে পারেন?
পলাশ বিশ্বাস
কোটিপতি সাংসদরা ভুখা জনতারকি মঙ্গল করতে পারেন?
পরিসংখ্যাণে প্রকাশ, ষোড়শ লোকসভায় এই ভুখা ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্ব করবেন যাঁরা, সেই ৫৪৩ জন সাংসদের ৮২ শতাংশই কোটিপতি৷
বাজপেয়ী সরকারের কুখ্যাত বিলগ্ণিকরণ মন্ত্রী অরুণ শৌরির প্রত্যাবর্তন হচ্ছে৷ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর পসন্দের অর্থ মন্ত্রী সেই শৌরিই৷
অশণি সংকেত৷
অর্থমনত্রক না হলেও,মন্ত্রিত্বে না ফিরলেও নূতন সরকারের আর্থিকসংস্কার কার্যক্রম চলবে অরুণ শৌরির পথ অবলম্বন করেই,বলা বাহুল্য৷
অমিত শাহ বাংলার ধাঁচে যেভাবে ওবিসি গৌরিকীকরণ করে গো বলয়ে অভূতপূর্ব সোশাল ইন্জিনিয়ারিং করে ওবিসি,দলিত ও সংখ্যালঘ এবং অবশ্যই আদিবাসিদের বহুজন সমাজকে খন্ডিত করে গো বলয়ে গৌরিক সুনামি তুলেছেন,তার বিনিময়ে স্বরাষ্ট্র মন্তর্ক তিনি পেলেও কারুর আপত্তি থাকা উচেত নয়৷
শৌরি শাহ মাণিকজোড়ের রাজত্বে আচ্ছে দিন কেমন আসছে,তা ক্রমশঃ প্রকাশ্য৷
বলা হচ্ছিল,মুক্ত বাজারি অর্থব্যবস্থার সৌজন্যে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে অসংবৈধানিক করপোরেট ইলিমেন্ট করপোরেট লবি মার্ফত রাজকার্য সম্পাদিত করেছেন গত তেইস বঢর যাবত৷সরকারের রং বদল হলেও মোন্টেক আহলুওয়ালিয়া,স্যাম পিত্রোদা,নন্দন নিলেকণির কর্তৃত্ব কমেনি কখনো৷সংখ্যালঘু সরাকারের রমরমা থাকলেও অবাধ পুঁজিপ্রবাহ ও কালোটাকার আধিপাত্য বহাল রাখতে আইন কাননন বদলাতে কোনো সরকারের এতটুকু অসুবিধা হয় নি৷সব দলের সাংসদরাই যথা রীতি আর্থিক নীতির নিরন্তরতা জারি রেখেছেন৷
মুক্ত বাজার অর্থনীতির খেলা হল উন্নয়নের জিগির তুলে ক্রোনী পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করা এবং অন্তরায় সব প্রতিপক্ষকে নিকেষ করা রাষ্ট্রের কাজ৷সেই কাজটাই গত তেইস বছর অবাধ চলছে জনগণের বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধের মারফত,সংবিধান,সুপ্রীম কোর্ট,আইনের শাসন,গণতন্ত্র,নাগরিক ও মানব অধিকার,পরিবেশ বিসর্জন দিয়ে৷কোটিপতি সাংসদের কিচ্ছুই যায় আসে না৷উন্নয়ন প্রকল্প ও সংস্কারের ফসল মীডিয়া,বুদি্ধজীবী সিভিল সোসাইটির সহ্ঘে বুঝে নিতেি তাঁরা অভুতপূর্ব দক্ষতা হাসিল করেছেন গত সাতাইশ বছরে৷তাই বারম্বার নির্বাচিত হয়েও নিজের কেন্দ্রের মানুষের পক্ষেও সওয়াল করতে অপারগ৷
এরই মধ্যে ক্ষমতার সমান্তর কেন্দ্র হিসাবে রিলায়েন্সের চমকপ্রদ উত্থান৷
ক্ষমতার সেই সমান্তর কেন্দ্র এখন আর সমান্তর থাকছে না৷নিরন্কুশ ক্ষমতা কেন্দ্রে তব্দীল ঐ করপোরেট রাজ,যার ভালো মন্দের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত কোটিপতি সাংসদের স্বার্থ৷সেই স্বার্থ বজায় রেখে ভুখা মানুষের কথা আদৌ কি মনে থাকবে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের,বিবেচ্য ইহাই৷
শেয়ার বাজারে ষাঁড়ের দাপট চলছে৷সবে 25 হাজার ছাড়িয়েছে,ত্রিশ হাজারও ছাড়াবে,আম জনগণের লাভ কতটা হল সেটাই বোঝার৷শেযার বাজারের এই রমরমা বৃদ্ধি দর বাড়িয়ে নেওয়ার তাত্বিক কচকচির মদধ্যে সত্যযুগীণ বৈদিকী সত্য ইহাই৷উল্লেখ্য,বাংলার লাইনে ওবিসি গৌরিকীকরণ করে বহুসংখ্য হিন্দু জনগোছ্টিকে হিন্দুত্বের পতাকা তলে আনার জন্য যে নমো ঝড় শুরু হল,তারই মধ্যে ভারতীয় শেয়ার বাজারে বিদেশী লগ্ণি হয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা৷দেশি কোম্পানীসমূহই নয়,বরং বিদেশী মাল্টিনেশনলদের স্বার্থ দেখাই হবে মাননীয় সাসদের পরম পবিত্র কর্তব্য৷নিজের নির্বাচনী এলাকার কথাও মনে পড়ার কথা নয়৷
আসল কথা হল,কোনো কিছু উত্পাদন না করেই,শেযারবাজার মাধ্যমে টাকা তুলে বিনা নিজের কোনো লগ্ণি করে,বাস্তবে কোনো কিছু না করেই যে লক্ষ লক্ষ কোটি উপার্জন করছে করপোরেট কোম্পানী সমূহ,সেই করপোরেট চাঁদাতেই সব দলের রাজনীতির কারোবার৷সেই কালো ধান্দাতেই হিস্সেদার হয়েই সাংসদরা আজ কোটিপতি আরবপতি৷ জল জমি জঙ্গল জীবিকা ও নাগরিকত্ব থেকে বহুসংখ্য মানুষকে উত্খাত করে যে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্য লুন্ঠন চলছে অবাধ জনগণের বিরুদ্ধে রীতিমত রাষ্ট্রের যুদ্ধ মার্ফত,সেইলুঠের বখেরা সব দলের সাংসদেরই প্রাপ্য৷
ষাট লক্ষ্য মানুষ নোটা মার্ফত নিজের নিজের কেন্দ্রে সব প্রার্থীদেরই খারিজ করেছেন এই নির্বাচনে৷কোলকাতা এবং পশ্চিম বহ্ঘের অনেক কেন্দ্রেই হাজার ভাটারের ভোটে প্রত্যাখ্যাত ঐ সমস্ত অযোগ্য প্রার্তিরাই নির্বাচিত হয়েছেন,যেহেতু নোটার ফল নির্বাচন ফলাফলে কোনো পার্থক্য গড়ে না.সব প্রার্থীর ভোটের চাইতে নোটা বেশি হলেও নির্বাচন নূতনকরে হবে না৷রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে বাধ্য জনগণ এবং ঐ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের স্বার্থ অনুযায়ী সংসদীয় ভূমিকা পালন করেই নিজেরটা বুঝে নিচ্ছেন মাননীয সাংসদরা৷
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এবার নির্বাচিত হয়ে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদি অবশ্য একটি পরিচ্ছন্ন সরকার গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু তাঁর নবনির্বাচিত লোকসভার সদস্যদের অধিকাংশের অতীত রেকর্ড ভাল নয়। রবিবার প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়েছে। খবর এএফপির।
একটি পরিচ্ছন্ন ও দক্ষ সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করে ফেলেছেন। তাঁর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল মন্থর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা। শুক্রবার প্রকাশিত নির্বাচনী ফলে দেখা যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট সুস্পষ্ট ব্যবধানে বিশাল জয় পেয়েছে। ভারতে গত ৩০ বছর পর একটি দল এত বড় ব্যবধানে নির্বাচনে জিতল। কিন্তু বিজেপিসহ নির্বাচনে জয়ী আইনপ্রণেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশে উস্কানি দেয়া রয়েছে এ সব অপরাধের মধ্যে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার নির্বাচিত ১৮৬ সদস্যের বিরুদ্ধে অতীত অপরাধের রেকর্ড পেয়েছে গবেষণা সংস্থা এ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস। বিদায়ী লোকসভায় এমন অভিযোগ ছিল ১৫৮ সদস্যের বিরুদ্ধে। সংস্থাটি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন সরকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে থাকে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট নবনির্বাচিত লোকসভার ২১ শতাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিজেপি সদস্যদের প্রতি ৯ জনে ৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যার এবং প্রতি ১৭ জনে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগে কমিশনের কাছে জমা দেয়া হলফনামার ভিত্তিতে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তা জাগদীপ চোকার। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জেতার সক্ষমতাকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ের মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করেছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা, সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, পরিতাপের বিষয় হলো এ সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সাধারণ মানুষ তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বচ্ছ একটি শাসনব্যবস্থা পাবে না। তাঁর মতে, নির্বাচনে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন দেখা যাবে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণ নয় কেবল অপরাধীদের স্বার্থরক্ষা করবে।
চোকার বলেছেন, এটি শুনতে কৌতুকপ্রদ শোনাবে কিন্তু এটাই বাস্তব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে সাধারণ নির্বাচনে অপরাধের রেকর্ডধারী প্রার্থীদের জয়ী করার অতীতে বহু নজির রয়েছে। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী দলটির প্রধান অঙ্গীকারই ছিল জনগণকে একটি পরিচ্ছন্ন ও দক্ষ সরকার উপহার দেয়া। কংগ্রেস পর পর দুই মেয়াদে এক দশক ক্ষমতায় থাকার পরও দুর্নীতির নানা অভিযোগে লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরেছে। বিশ্লেষকদের মত হলো, ভারতের ভোটাররা সাধারণত অপরাধের রেকর্ড নিয়ে মাথা ঘামায় না, তারা মূলত জাতপাত এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় ভোট দিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভোটারদের কাছে হালে পানি পায় না। কারণ ভোটাররা ধরে নেয় প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করছে।
ফোন করেননি মমতা
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল বিজয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলা নরেন্দ্র মোদিকে বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা অভিনন্দন জানালেও এখনও তা করেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। মোদিও তাঁকে ফোন করেননি, যদিও রবিবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে কথা বলে রাজ্যের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। -খবর ওয়েবসাইট।
নির্বাচনী প্রচারে মোদির সমালোচনা এবং বিজেপিকে আক্রমণ করলেও নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর মোদিকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন লোকসভায় বিজেপি ও কংগ্রেসের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া এআইএডিএমকের নেতা জয়ললিতা। জয়ললিতা অবশ্য তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় মোদিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি, যাঁর সঙ্গে তাঁর 'ঘনিষ্ঠ বন্ধন' রয়েছে। তবে মোদিকে কঠোর আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'বাদর', 'কসাই' ও 'দাঙ্গাবাজ' হিসেবে তাঁকে অভিহিত করেছেন তিনি।
দ্রুততম এসএমএস
দ্রুতগতিতে এসএমএস পাঠিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় বনে গেছে ব্রাজিলের এক কিশোর। মাত্র ১৮.১৯ সেকেন্ডে টাচস্ক্রিন সেটে ২৫ শব্দের অনুচ্ছেদ লিখে গিনেস বুক রেকর্ড গড়েছে ১৬ বছরের মার্সেল ফার্নান্ডেজ। এর আগে দ্রুততম টেক্সট লেখার রেকর্ডটি করা হয়েছিল ১৮.৪৪ সেকেন্ডে। নতুন রেকর্ড গড়তে ফার্নান্ডেজকে যে অনুচ্ছেদটি লিখতে হয়েছিল তা মোটেও সহজ ছিল না। বানান ও দাঁড়ি কমা ঠিক রেখে ১৮.১৯ সেকেন্ডে ফার্নান্ডেজ যা লিখেছে তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, মিঠা পানির মাছেদের মধ্যে ধারাল দাঁতের পিরহানহা গোষ্ঠীর সেরাসালমুস ও পিগোসেনট্রাস হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে হিংস্র মাছ। তবে তারা সাধারণত মানুষদের হামলা করে না। ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরকে ব্রাজিল থেকে নিউইয়র্কে নিয়ে এসেছিল কিবোর্ড অ্যাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্লেসকি। এপ্রিলের ২৫ তারিখে ফ্লেসকি নির্মিত কিবোর্ড অ্যাপেই নতুন এ রেকর্ডটি গড়েন ফার্নান্ডেজ। সে ২০১২ সাল থেকেই অ্যাপ কিবোর্ড ব্যবহার করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তার গড়া রেকর্ডটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস বুক।-ইয়াহু নিউজ
মোদি সব ধর্মের মানুষের নেতা হবেন, আশা ব্রিটিশ মন্ত্রীর
ব্রিটেনের ভারতবিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো শোয়াই বলেছেন, ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এ কথা প্রমাণ করা যে, তিনি সমগ্র ভারতের এবং সব ধর্মের মানুষের প্রধানমন্ত্রী। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের।
শোয়াই টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর মোদির অধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিই তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। তিনি সেই সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
শোয়াই বলেন, মোদি এমন এক ব্যক্তি যার সঙ্গে আমরা অবশ্যই কাজ করতে পারি। তিনি বলেন, মোদিকে তার ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী ভাবমূর্তি পরিত্যাগ করতে হবে। লোকসভায় তাঁর দল যে সংখ্যক আসন পেয়েছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ নির্বাচনে সব ধর্ম ও মতের মানুষই তাঁকে ক্ষমতায় যেতে ভোট দিয়েছেন। এখন প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নেতা হওয়ার গুরু দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত হয়েছে।
শোয়াই স্বীকার করেন যে, মোদির বিরাট বিজয়ে ব্রিটেন বিস্মিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, মোদি অত্যন্ত ভাল করবেন বলে আমাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর প্রতি সমর্থন শক্তিশালী বলে দেখা যায়, যদিও ভারতের কোন কোন অংশে তাঁর প্রতি সমর্থনের অভাব দেখা যায়। যা হোক, ম্যান্ডেটের বিরাটত্বে আমরা বিস্মিত হয়ে পড়ি। এটি এক সর্বসম্মত বিজয়। কংগ্রেস দলের বিপর্যয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে শোয়াই বলেন, কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ভারতীয়রা পরিবর্তন চেয়েছিল এবং তারা বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সেটি দেখিয়েছিল। তিনি আরও বলেন যে, বিজেপি এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কোন একক দলের সরকার সর্বদাই আদর্শ। শোয়াই বলেন, প্রায় তিন দশকের মধ্যে ভারত একক দলের সরকার পাবে, যা সর্বদাই আদর্শ। তিনি আরও বলেন, যে নির্বাচনে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করে, এমন নির্বাচন সর্বদাই ভাল। আমরা ব্রিটেনে কোয়ালিশন গঠন করেছিলাম, কারণ আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি এবং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
Modi keen on MHA, Jaitley MEA, Joshi Defence, Shourie Finance: Sources
CNN-IBN | May 19, 2014 at 06:34pm IST
New Delhi: The Bharatiya Janata Party is holding hectic meetings with the RSS leaders and its allies to chalk out the posts in the Narendra Modi Cabinet. Several BJP leaders are in Delhi to meet Prime Minister-designate Narendra Modi and party chief Rajnath Singh, eyeing berths in the Cabinet.
Senior leaders Arun Jaitley and Sushma Swaraj as well as close Modi aide Amit Shah met the two leaders on Monday. Yogi Adityanath, Varun Gandhi and Gopinath Munde also met Rajnath Singh on Monday.
Sources say that Rajnath Singh may just remain the party President for some more time and not join the Cabinet immediately. This after a section of the RSS wanted Rajnath Singh to continue as the BJP President.
Sources also say that the Home Ministry remains a crucial portfolio for Modi and that if Rajnath is indeed given the MHA, then internal security will be taken out of the MHA and kept with the Prime Minister's Office.
Sources also say that Modi is keen on bringing in Arun Shourie as the Finance Minister. The Defence Ministry, sources say, could be given to Murli Manohar Joshi. When Modi's oath taking ceremony takes place, the top four ministers will also join in oath taking.
Sources also say that Sushma Swaraj is being asked to look at the Human Resource Development Ministry even as she remains keen on the top four ministries. Arun Jaitley may be inducted as the External Affairs Minister, say sources.
Karia Munda is likely to be given the Lok Sabha Speaker's post while party patriarch LK Advani could be asked to remain as a guiding light for the BJP.
২৭ কোটি ভুখা দেশবাসীর কোটিপতি প্রতিনিধি
এই সময়: দেশের ২২ শতাংশ মানুষের বাস দারিদ্র্যসীমার নীচে৷ গড়পড়তা মাসে ২২৫০ টাকায় সংসার চালান এই দেশেরই ২৭ কোটি মানুষ৷ এঁদের অনেকের স্থায়ী আস্তানা নেই, নেই দুবেলা ভাতের সংস্থানও৷ নরেন্দ্র মোদী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এই জনতার উদ্দেশেই বারবার বলেছিলেন, 'আচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়'৷ সুদিন ফেরানোর আশায় দু'হাত উপুড় করে তাঁর দলকে ভোট দিয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারতের আমজনতা৷ ভোট মিটতেই এ বার সামনে এল নতুন পরিসংখ্যান৷ ষোড়শ লোকসভায় এই ভুখা ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্ব করবেন যাঁরা, সেই ৫৪৩ জন সাংসদের ৮২ শতাংশই কোটিপতি৷
আগামী পাঁচ বছর দেশের ভালো-মন্দ যারা নির্ধারণ করবেন লোকসভার সেই সাংসদদের বা ৪৪২ জনই কোটিপতি৷ বাকি ১৮ শতাংশেরও সম্পত্তির আর্থিক অঙ্ক নেহাত কম নয়৷ বেশির ভাগেরই কোটির কাছকাছি৷ ৫৪৩ জন এমপি-র মধ্যে মাত্র দু'জন আছেন যাদের সম্পত্তির পরিমাণ লাখ টাকার কম৷ শতাংশের হিসাবে এক শতাংশেরও অনেক কম৷ পরিসংখ্যান বলছে, দারিদ্র মুক্তি অভিযানে মোদীর যারা সঙ্গী হবেন সেই বিজেপিরও ৮৪ শতাংশই কোটিপতি এমপি৷ এমনকি, এ রাজ্য থেকে তৃণমূলের যে ৩৪ জন এ বার সাংসদ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ২১ জনই কোটিপতি৷ আবার তৃণমূলেরই ঝাড়গ্রামের বিজয়ী প্রার্থী উমা সোরেন হলেন সেই তিন সাংসদের একজন, যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ সবচেয়ে কম৷
এমন অর্থ বলে বলীয়ান জনপ্রতিনিধিরা কি সত্যিই দরিদ্র ভারতবাসীর যথার্থ জনপ্রতিনিধি হতে পারেন? এ নিয়ে অবশ্য নানা মুনির নানা মত৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কংগ্রেস ও বিজেপি বরাবরই বিত্তশালী অংশ দ্বারা চালিত৷ কিন্ত্ত দারিদ্র দূরীকরণে দুই দলই নানা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ করেছে৷ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার যেমন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করে গিয়েছে, তেমনই অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গ্রামের অর্থনীতি মজবুত করতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা চালু করেছিল৷ গত বছর নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড় বিধানসভা বিজেপি দখলে রাখতে পেরেছে বেশ কয়েকটি 'গরিবি হটাও' প্রকল্পের সুবাদে৷ এ রাজ্যেও তৃণমূলের অভাবনীয় নির্বাচনী সাফল্যের পিছনে দু'টাকা কিলো চাল দেওয়ার প্রকল্প বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল৷
বিগত লোকসভার চিত্র পাশাপাশি রাখলেই দেখা যাচ্ছে, দ্রুত বদলাচ্ছে সংসদের অভ্যন্তরের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব৷ সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে অন্যতম ইস্যু ছিল দারিদ্র দূরীকরণ৷ কিন্ত্ত বাস্তবের ছবিটা হল, দেশের সংসদ দ্রুত কোটিপতিদের দখলে চলে যাচ্ছে৷ পাঁচ বছর আগে, ২০০৯-এর ভোটে যারা সাংসদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ৫৮ শতাংশ৷ পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোটিপতি সাংসদের সংখ্যা ২৪ শতাংশ বেড়ে যাওয়া যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ৷
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, সদিচ্ছাই দারিদ্র দূরীকরণের মূল মন্ত্র৷ আর তার জন্য চাই নীতি ও আদর্শের জোর৷ এই ব্যাপারে বামপন্থীরা বরাবরই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ এই অংশের মতে, ভারতে দারিদ্র্য দূরীকরণে মূল কর্মসূচি হওয়া উচিত ভূমিহীনদের হাতে জমি তুলে দেওয়া৷ সেই কাজটা কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় বামপন্থী সরকার এককালে করেছে৷ যদিও এই দাবিকে নস্যাত্ করে দিচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণে নানা পরিসংখ্যান৷ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্র্য এতটাই প্রকট যে আগের সরকারের মতো বর্তমান সরকারকেও আরও বেশি পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীর তালিকাভুক্ত করতে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই চালাতে হয়৷সম্পত্তিতে প্রথম তিনজনই অন্ধ্রপ্রদেশের৷ তাঁদের একজন বিজেপি৷ বাকি দুজন টিডিপি এবং টিআরএসের টিকিটে জয়ী হয়েছেন৷ টিডিপির টিকিটে গুন্টুর থেকে জয়ী জয়দেব গাল্লা হলেন সবচেয়ে বিত্তশালী সাংসদ৷ তাঁর ঘোষিত সম্পত্তি ৬৮৩ কোটি টাকা৷
শুধু অর্থ বলই নয়, পেশি শক্তিও ক্রমশ গ্রাস করছে ভারতের সংসদকে৷ গত এক বছর ধরে বিচারালয় এবং আদালতের বাইরে চর্চার বিষয় ছিল রাজনীতিকে অপরাধমুক্ত করা৷ নিম্ন আদালতে অভিযুক্ত হয়েও এমপি-এমএলএ হওয়ার যে আইনি রক্ষাকবচ ছিল গত বছর সুপ্রিমকোর্টের রায়ে তা হাতছাড়া হয়েছে রাজনীতিকদের৷ সেই রায়ের জেরেই এ বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী ছিলেন না পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদব৷ কিন্ত্ত সদ্যনির্বাচিত সাংসদদের ৩৪ শতাংশ বা ১৬৬ জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ৷ তাদের মধ্যে ১১২ জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, ডাকাতি এবং ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি-সহ যৌন নির্যাতনের অভিযোগ৷
মোদীতে মজে বাজার, অপেক্ষা বাজেটের
অমিতাভ গুহ সরকার
মোদী মসনদে বসার আগেই বাজার তুঙ্গে। লগ্নিকারীদের আশা 'ষোলো আনা পূর্ণ' হওয়ায় সেনসেক্স ছাপিয়ে গিয়েছে ২৫ হাজারের মাত্রা। উঠেছে সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায়।
শুক্রবার সকাল ৯.৩৬ ছিল মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন প্রথম বারের জন্য মুম্বই সূচক অনায়াসে ২৫ হাজারের বাধা পেরোয়। ঠিক ২৬ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা বেজে ২ মিনিটে সেনসেক্স ছোঁয় ২৫,৩৭৫.৬৩ অঙ্ক, যা এই সূচকের সর্বকালীন উচ্চতা। আগের দিনের তুলনায় ১,৪৭০ পয়েন্ট বেশি। তবে এই উত্থান স্থায়ী হয়নি। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ফেটেছে এই উত্তেজনার বুদ্বুদ। বিজেপি সরকার গড়বে, এই আশায় বাজার যথেষ্টই উপরে উঠেছিল আগের কয়েক দিনে। সেই কারণে আশা পূর্ণ হওয়ায় বাজারের এতটা বেড়ে ওঠার তেমন জোরালো কোনও কারণ ছিল না। ফলে উত্তেজনার রেশ কাটতেই হুড়মুড়িয়ে নামে শেয়ার সূচক। এমনকী, সবুজ ছেড়ে এক সময়ে লালের ঘরেও ঢুকে পড়ে। দিনের শেষে অবশ্য ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স থামে ২৪,১২২ অঙ্কে। ৮০ অঙ্ক বেড়ে নিফ্টি বন্ধ হয় ৭,২০৩ পয়েন্টে। অতি তৎপর লগ্নিকারীরা ক্ষণিকের এই উত্থানকে কাজে লাগিয়ে মোটা মুনাফা করেছেন। তবে হতচকিত বেশির ভাগ মানুষই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি।
এতে অবশ্য হতাশ হওয়ার কারণ নেই। সূচকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই অত্যন্ত আশাবাদী। ১৯৮৪ সালের পর এই প্রথম কোনও একটি দল নিজের জোরেই শক্তিশালী ও স্থায়ী সরকার গড়তে চলেছে, এই কথা মাথায় রেখে ডয়েশ ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে আশা প্রকাশ করেছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেনসেক্স পৌঁছে যেতে পারে ২৮,০০০ অঙ্কে। সপ্তাহের শেষে অনেক বিশ্লেষণ হবে নতুন সরকার ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সোমবার যার প্রতিফলন দেখা যাবে শেয়ার বাজারে। কিছু বিশেষজ্ঞর ধারণা, নতুন 'বুল্' বাজারের সূচনা হল নয়া সরকারকে কেন্দ্র করে। এ বার ছোট লগ্নিকারীদের মনে আস্থা ফিরবে। এঁরা বাজারে বড় মাত্রায় যোগদান করলে সূচক আরও উপরে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাজারের এত খুশির কারণ হল
• শ্লথ এবং বড় আকারের একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নড়বড়ে ইউপিএ সরকারের বিদায়।
• নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার।
• থমকে থাকা আর্থিক সংস্কারের গতি পাওয়ার সম্ভাবনা।
• শিল্পে প্রাণ ফেরার আশা।
• বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
• সরকারি সংস্থায় বিলগ্নিকরণ গতি পাওয়ার সম্ভাবনা।
তবে মোদী ম্যাজিক যত দ্রুত বাজারকে তুলেছে, ততটাই দ্রুত গতিতে ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে কিনা, সে সম্পর্কে কিন্তু যথেষ্ট সংশয় আছে। মনে রাখতে হবে, গুজরাত এবং ভারত এক নয়। দেশের সমস্যা নানাবিধ। বাজারকে চাঙ্গা রাখতে হলে বিদেশি লগ্নি ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন অবিলম্বে অর্থনীতির হাল ফেরানো। বিদেশি লগ্নিকারীরা চাইবে, কার্যভার গ্রহণ করেই সরকার সংস্কারের পথে নামুক। কমিয়ে আনুক ভর্তুকি। শুরু হোক বিলগ্নিকরণ। দৃঢ় পদক্ষেপ করা হোক মূল্যবৃদ্ধি কমানোর জন্য।
সরকার এই সব ব্যাপারে কী ভাবে এগোবে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাবে তাদের প্রথম পূর্ণাঙ্গে বাজেটে। অর্থ দফতর কার হাতে দেওয়া হয়, সে দিকেও নজর থাকবে। এল নিনো-সহ কিছু ব্যাপারে আশঙ্কা থাকায় মাঝেমধ্যে সূচক পড়তেও পারে। এমনিতে এত উঁচু বাজারে বিক্রির একটা চাপ থাকবেই। থাকবে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব। অর্থাৎ চাঙ্গা ভাব বজায় থাকলেও, এই জায়গা থেকে বাজার একনাগাড়ে উঠবে বলে মনে হয় না। শিল্প এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকার কী কী পদক্ষেপ করে, তা-ই মাঝারি মেয়াদে বাজারকে দিশা দেখাবে। কার্যভার গ্রহণের পক্ষে সময়টা খুব খারাপ নয়। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের কিছু পদক্ষেপের সুফল সবে ফলতে শুরু করেছে। রফতানি বেড়েছে। কমছে আমদানি। 'ব্রিকস' দেশগুলির মধ্যে ভারত ফের উপরের দিকে উঠে এসেছে। বিদেশি লগ্নি বাড়ায় কমেছে ডলারের দর। ফলে কমবে আমদানির খরচ।
বাজেট পেশ না হওয়া পর্যন্ত নতুন লগ্নির ক্ষেত্রে একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে সকলকে। যে সব শিল্পকে সরকার বেশি গুরুত্ব দেবে বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে থাকবে পরিকাঠামো, ব্যাঙ্কিং, তেল-গ্যাস, রেল, বন্দর ইত্যাদি। এরই মধ্যে সুপারিশ এসেছে ব্যাঙ্কিং শিল্পে বিলগ্নিকরণের জন্য। এর প্রভাবে হঠাৎই অনেকটা বেড়েছে প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম। ডলারের দাম অনেকটা কমায় উপকৃত হবে আমদানি-নির্ভর বিভিন্ন শিল্প। একই কারণে নামছে সোনার দামও।
বাজেট থেকে শিল্প যেমন নতুন কিছু আশা করছে, তেমনই আশা করছে সাধারণ মানুষ। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো নিয়ে অতীতে অনেক কথা বলেছে ভারতীয় জনতা দল। ক্ষমতা হাতে আসায় এ বার তারা কী করে, তা দেখার জন্য আগ্রহী সকলে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো সংশোধন ছাড়া বাজার স্বল্প মেয়াদে চাঙ্গা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধি উঁচুতে থাকায় আশু সুদ কমার সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না। নতুন সরকারের অধীনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ নিয়ে কী পদক্ষেপ করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবে ঋণের বাজার।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্কারের আশা জুলাই বাজেটে
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোট যুদ্ধ শেষ৷ এ বার রাজ্যপাট পুনর্গঠনে কোন পথে নরেন্দ্র মোদী হাঁটেন সেই দিকেই সকলের নজর৷ নতুন সরকারের থেকে প্রত্যাশাও এখন গগনচুম্বী৷ কিন্ত্ত, মোদীর কাছে 'করণীয়' তালিকা যত লম্বা ঠিক ততটাই কম আর্থিক ও রাজস্ব নীতির পরিবর্তন করার সুযোগ৷ তবে, মোদীর প্রথম চ্যালেঞ্জ মন্ত্রীসভা গঠন৷ বিনিয়োগকারী থেকে শিল্পমহল সকলেই তাকিয়ে কারা কারা থাকছেন নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায়, কে কোন মন্ত্রকের দায়িত্ব পাচ্ছেন, ক'জন মন্ত্রী থাকছেন নতুন মন্ত্রীসভায়, সেই দিকে৷ এ সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী৷ তারপরই মন্ত্রীসভা ঠিক হয়ে যাবে৷ 'টিম মোদী'কে আপাতত অনেকগুলি কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে৷ যেমন,
১) রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে একটি সুষম বাজেট পেশ করা:
বস্ত্তত, জুলাই মাসে বাজেট পেশই হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম কৃতীত্ব পরীক্ষা৷ শিল্পমহল, বিনিয়োগকারী এবং আপামর জনগণ সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছে৷ বাজেটে সাধারণ মানুষ খুঁজবেন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ বিনিয়োগকারীরা দেখবেন, অদূর ভবিষ্যতে রাজকোষ ঘাটতিকে সরকার বাস্তবিক নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে কি না৷ শিল্পমহল তাকিয়ে থাকবে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কী কী নতুন ব্যবস্থা ও নীতি নেওয়া হচ্ছে সেই দিকে৷
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজকোষ ঘাটতি জাতীয় উত্পাদনের ৪.৬ শতাংশে বেঁধে রাখতে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বছর শেষে প্রায় ৭৭,০০০ কোটি টাকার ব্যয়বরাদ্দ ছাঁটাই এবং প্রায় ৯৫,০০০ কোটি টাকার ভর্তুকি বোঝা নতুন সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন৷ এই অবস্থায় নতুন সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় এসে রাজকোষ ঘাটতি কমানোর জন্য যথেষ্ট সংযমী হওয়া সহজ হবে না৷ কেননা, কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় দেশের মোট জাতীয় উত্পাদনের ১১ শতাংশ এবং সেদিক থেকে বিচার করলে কেন্দ্রীয় ব্যয় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ অন্যদিকে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির, বিশেষ করে জ্বালানি খাতে, বোঝাও বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে বেশিদিন বহন করে যাওয়া সরকারের পক্ষে কঠিন৷
ঠিক তেমনি, রাজস্ব আদায় বাড়ানোও নতুন সরকারের পক্ষে বিশেষ অসুবিধাজনক৷ কারণ, দুর্বল অর্থনীতি৷ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার গত দু'দশকে সবচেয়ে কম হয়েছে এবং তা ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণ এখনও স্পষ্ট নয়৷ গোদের উপর বিষফোঁড়া হল মূল্যবৃদ্ধির চড়া হার যা গত দু'বছর ধরে কমতেই চাইছে না৷ মোট কথা, রাজকোষ ঘাটতি ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখার যে হিসাব অন্তবর্তী বাজেটে চিদম্বরম পেশ করেছিলেন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেই লক্ষ্যে পৌঁছন মোদী সরকারের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব হবে৷
২) বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি কমানো:
সোনার আমদানির উপর বাধানিষেধ আরোপ করে বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি অনেকটা বাগে পেরেছেন চিদম্বরম৷ কিন্ত্ত, এতে দেশে সোনার চোরাচালান বেড়েছে এবং অলঙ্কারের রপ্তানি কমেছে৷ ক্ষমতায় এলে সোনা আমদানির উপর বাধানিষেধ পর্যালোচনা করে দেখার অঙ্গীকার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল৷ বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জাতীয় উত্পাদনের ২ শতাংশে নেমে আসবে আশা করে অনেকেই মনে করছেন মোদী সরকার সোনার উপর বাধানিষেধ শিথিল করবেন৷ তাছাড়া, ডলারের সাপেক্ষে টাকার বিনিময় দরও এখন এগারো মাসের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে৷ কিন্ত্ত, মুসকিল হল গত দু'মাস ধরে দেশের মোট রপ্তানিও কমছে৷ বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি কমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল শেয়ার বাজারে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসা৷ কিন্ত্ত, এই বিনিয়োগ যে কোনও সময় চলে যেতে পারে৷
৩) মূল্যবৃদ্ধি ও এল নিনোর মোকাবিলা:
নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে কঠিনতম যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সেটা হল মূল্যবৃদ্ধি৷ গত দু'বছর ধরে পণ্যের খুচরো দরে মূল্যবৃদ্ধি আট শতাংশের নীচে নামার কোনও প্রবণতাই দেখাচ্ছে না৷ বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি৷ তার উপর, আবহাওয়া দপ্তর এ বছর এল নিনোর প্রভাবে কম বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছে৷ এল নিনোর জন্য কৃষি উত্পাদন কম হলে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়বে৷ তবে, আশার কথা এই যে গত খারিফ এবং রবি মরশুম মিলিয়ে রেকর্ড খাদ্যশস্যের উত্পাদন হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক৷ ১০.৬৩ কোটি টন ধান ও ৯.৫৯ কোটি টন গম উত্পাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ২০১৩-১৪ সালের তুলনায় এই উত্পাদন যথাক্রমে ১০ লক্ষ টন এবং ২০ লক্ষ টন বেশি৷ নিসন্দেহে মোদী সরকারের জন্য এটা সুখবর৷ তবে, মূল্যবৃদ্ধির হার না কমলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও সুদের হার কমাবে না৷ সে ক্ষেত্রে, শিল্প বিনিয়োগকে চাঙ্গা করার জন্য মোদীর প্রয়াস ফলদায়ী নাও হতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে ফের একটা সংঘাতের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে৷
৪) বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো:
মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন করলে দেশে শিল্পবিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে আসবে এবং লগ্নি বাড়বে এই ধারনার পেছনে কাজ করছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারনা, মোদীর পক্ষে তাঁর গুজরাট মডেল গোটা দেশে প্রয়োগ করা সহজ নয়৷ কেননা, শিল্প প্রকল্পগুলিকে মঞ্জুরী দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যগুলিরও অনেক ক্ষমতা৷ ক্রেডিট সুইস সংস্থার মতে, আটকে থাকা প্রকল্পগুলির মধ্যে কেবলমাত্র এক-চতুর্থাংশই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ৷ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় সাত লক্ষ কোটি টাকা লগ্নিমূল্যের ৫২৪টি বড় শিল্প প্রকল্প আটকা পড়েছে বিভিন্ন সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায়৷
উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় একগুচ্ছ আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে৷ এর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয়গুলি হল: ১) পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি):
জিএসটি হল এ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর সংস্কার৷ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় করের বদলে গোটা দেশজুড়ে পরোক্ষ করের একই হার প্রচলন করাই এই সংস্কারের লক্ষ্য৷ কিন্ত্ত, দীর্ঘদিন ধরে একাধিক রাজ্যের অসম্মতিতে জিএসটি প্রবর্তন করা যায়নি৷ বিদায়ী দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের অভিযোগ ছিল, প্রধানত দু'টি বিজেপি-শাসিত রাজ্যের বিরোধিতার ফলেই এ দেশে জিএসটি প্রবর্তন করা যায়নি৷ অর্থনীতিবিদদের হিসাব, জিএসটি চালু হলে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার একলাফে ২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে যাবে৷ অর্থাত্, জিএসটি চালু হলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে পৌঁছবে৷ যদিও বিজেপি নির্বাচনী প্রচারে বলে এসেছে, ক্ষমতায় এলে তারা জিএসটি চালু করবে, এটাই এখন দেখার কীভাবে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকার অসম্মত রাজ্যগুলিকে জিএসটি চালু করার ব্যাপারে রাজি করান৷
২) বেসরকারিকরণ:
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার শিল্প ও পরিষেবার বেসরকারিকরণের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগী হবে বলেই সকলে ঐক্যমত৷ বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের বিষয়টিতে পূর্বতন এনডিএ সরকার যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল অনেককেই এখন সেই নীতিরই পুনরাবৃত্তি হবে বলে অনুমান করছেন৷ গত শুক্রবার শেয়ার বাজারের বিপুল উত্থানের পিছনে এটাও একটা বড় কারণ৷ রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের পথেই মোদী সরকার হাঁটবে বলে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
৩) ভর্তুকি:
রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাদ্য, জ্বালানি, সার প্রভৃতি পণ্যে দেয় সরকারি ভর্তুকি কমিয়ে আনাই হবে মোদী সরকারের কাছে অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ৷ তাই, ভর্তুকির ক্ষেত্রে সংস্কারের পথে হাঁটতেই হবে মোদী সরকারকে৷ ভর্তুকিবাবদ প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারকে জাতীয় আয়ের ২.২ শতাংশ খরচ করতে হয়৷ নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি বলেছে যে তাদের সরকার আর্থিক সংযম এবং নিয়মানুবর্তীতার পথেই হাঁটবে৷ ভর্তুকির বরাদ্দ কমিয়ে সেই অর্থ যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করাই হবে ভর্তুকি সংস্কারের মূল লক্ষ্য৷
৪) শ্রম আইন:
কর্মসংস্থান বাড়াতে শ্রম আইন পরিবর্তনের পক্ষে বিজেপি৷ নির্বাচনী ইস্তাহরেই তারা বলেছে, প্রতি বছর এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করতে, বিশেষ করে শিল্পক্ষেত্রে, শ্রম আইনের পরিবর্তন করা হবে৷ কিন্ত্ত, এই আইন পরিবর্তন নানান রাজনৈতিক বাধার সন্মুখীন হতে বাধ্য৷
৫) প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম:
এ বছর জানুয়ারি মাসে ইউপিএ সরকার দেশে উত্পাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নির্ধারণের জন্য নতুন ফর্মুলা প্রচলন করে এবং সেই অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ করার কথা ঘোষণা করে৷ কিন্ত্ত, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায়, নির্বাচন কমিশন গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা আপাতত স্থগিত করে দেন৷ আশা করা যায়, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে দাম নির্ধারণের ওই ফর্মুলা পুনর্বিবেচনা করবে৷
http://eisamay.indiatimes.com/business/looking-forward-to-the-july-budget/articleshow/35332921.cms
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধন জোগাতে বিলগ্নিকরণই ভরসা
অমিতাভ গুহ
জীবনের একমাত্র স্থায়ী বিষয় হল পরিবর্তন৷ ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন, কর্মস্থল ও জাতীয় ক্ষেত্রে-সর্বত্র এটা খাটে৷ জনতার রায়ে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে চলেছে এনডিএ৷ কিন্ত্ত এই যে ক্ষমতার পালাবদল এটা কিন্ত্ত সহজ নয়৷ খুব একটা ঈর্ষাযোগ্যও নয়৷ কারণ দেশের সামগ্রিক এবং তৃণমূল স্তরে সরকারের সামনে এখন বেশ কিছু প্রতিকূলতা রয়েছে৷ এটা সত্যি যে, অর্থনীতিতে কিছু পুনরুজ্জীবন বা সংবাদ মাধ্যমের পরিভাষায় 'সবুজ সঙ্কেত' মিলছে৷ গত সরকারের শেষদিকে নেওয়া কিছু নিয়ন্ত্রণকারী পদক্ষেপর সুফল এটা৷ পাশাপাশি, বিদেশি লগ্নির কল্যাণও বটে৷ কিন্ত্ত বাস্তব চিত্র হল, এই সবুজ সঙ্কেতগুলি খুবই নড়বড়ে৷ এর থেকে জোরদার মজবুত অর্থনৈতিক মহীরুহের আশা এখনই করা যাচ্ছে না৷ সত্যি বলতে গেলে বর্তমানের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী নীতি-নিয়মের ফাঁস৷ এই প্রবণতাকে বদলাতে হলে নীতিগত ও কাঠামোগত ভাবে বহু পরিবর্তন প্রয়োজন৷ এ বার সেই পরিবর্তনের সুফল তৃণমূল স্তরে পৌঁছতে একটা সময় লাগবে৷ তবে অচলাবস্থা কাটবে৷ এই প্রসঙ্গে আমি খালি আর্থিক ক্ষেত্রের কথা বলব৷ তার মধ্যেও মূলত ব্যাঙ্কিং৷ কারণ ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রই শিল্প ও জিডিপির উত্থানে সরাসরি যুক্ত৷
সার্বিক ভাবে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র নিয়ে যদি আলোচনা করি তা হলে দেখা যাবে, কম-বেশি সব ব্যাঙ্কেরই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ এবং মুনাফার অঙ্ক মোটেই দৃষ্টিনন্দন নয়৷ এর জন্য একাধিক কারণ রয়েছে৷ তবে সারমর্ম হল ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র মোটেই ভালো নেই৷ নবনির্বাচিত সরকারের প্রথম চিন্তার কারণ হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন জোগাতে বিভিন্ন সম্পদ সংরক্ষণ৷ ব্যাসেল-থ্রি নিয়ম মানতে আপাতত মোট ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ৪.১৫ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন৷ এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানা বিক্রির তেমন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি৷ এনডিএ সরকারকে কিন্ত্ত এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ কারণ মুনাফার যা হাল তাতে নিজস্ব পুঁজি জোগাড়ে বাইরের দিকে সহায়তা চাইতেই হবে ব্যাঙ্কগুলিকে৷ এর পর রয়েছে অনাদায়ী ঋণ৷ সমগ্র অর্থনীতি কেমন রয়েছে, তার ইঙ্গিতবাহী এই বিপুল পরিমাণে বেড়ে চলা অনাদায়ী ঋণের বহর৷ এখন জাতীয় অর্থনীতির যা অভিমুখ তাতে অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে
খুব বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায় না৷ এর পর রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি৷ আমাদের নেতা-মন্ত্রীরা আর্থিক বৃদ্ধির উপর বরাবর জোর দিতে বলেছেন৷ যার জন্য সুদের হার কমানো আবশ্যিক৷ কিন্ত্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধিকে যে মাত্রায় নামাতে চায়, আর এখন মূল্যবৃদ্ধি যে স্তরে রয়েছে, তাতে সুদের হার কমবে বলে আশা করা মূর্খামি৷ আমার মতে, তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত৷ কারণ রাজনৈতিক স্তর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর কোনও চাপ এলে বাজারে কিন্ত্ত সংশয় সৃষ্টি হবে৷
এর পর আসি ঋণ পুনর্গঠনে৷ মূলত পরিকাঠামো ক্ষেত্রের ঋণ পুনর্গঠন হয়৷ এই অবস্থা পরিবর্তনে পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি নিয়ে সরকারের আরও একটু বাস্তবোচিত নীতি নেওয়া উচিত৷ বহু প্রকল্প থমকে রয়েছে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র না পাওয়ায়৷ তাই পরিবেশ-ছাড়পত্রে দ্রুত অনুমোদন প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বিদ্যুতের জন্য কয়লা সরবহরাহ এবং সড়ক ক্ষেত্রে সরকারের নজর প্রয়োজন৷ পরিকাঠামো-গত ঋণ যদি পুনর্গঠন করতে হয়, তা হলে এই ক্ষেত্রকে বিপুল হারে ঋণ দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ব্যাঙ্ককে৷
এর পাশাপাশি, দক্ষতা বাড়াতে 'হোল্ডিং কোম্পানি' নিয়ে ধারণা বদলাতে সত্ত্বর আইন দরকার৷ সংসদে ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন আইন সংশোধন প্রয়োজন৷ এমনকী স্টেট ব্যাঙ্কেরও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে নিজেদের ব্যবসার ধরন পাল্টানো উচিত৷ কিন্ত্ত আধুনিক ব্যবসার শর্তপূরণে ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত খরচ এবং কর্মী পিছু খরচ বাড়তেই থাকবে৷ যার জেরে লাভের খাতা কিন্ত্ত যে কে সেই থাকার সম্ভাবনাই বেশি৷
সম্প্রতি নায়ক কমিটির রিপোর্টটি বর্তমান ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র সম্পর্কে খুবই প্রাসঙ্গিক৷ আমি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে থাকার সুবাদে ডিরেক্টর এবং ব্যাঙ্কের বোর্ড সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল৷ তাই ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর এবং বোর্ড প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার ব্যাপারে আমি নায়ক কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে সহমত৷ সম্প্রতি ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ঘটনাতেই আমাদের এই ডিরেক্টর নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে চোখ খুলে দিয়েছে৷ ব্যাঙ্কের যে কোনও ভুল বা খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য দায় স্বীকার করতে পারা পেশাদার বোর্ড দরকার৷ তাই আমার মনে হয় না, শুধু মূলধন ঢাললেই ব্যাঙ্কের ব্যবসা চড়চড় করে বাড়তে থাকে৷ একটা প্রতিষ্ঠান তখনই ভালো কাজ করতে পারবে যখন তাতে দক্ষ ও পেশাদার বোর্ড বা পরিচালন সমিতি থাকবে৷ নিম্নমুখী বৃদ্ধিকে বিপরীত মুখে চালিত করতে এনডিএ সরকারের কাছে একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে ইস্তাহারে সর্বত্রই মানুষকে বিপুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি৷ কিন্ত্ত সরকারে বসে শুধু বৃদ্ধির বুলি আওড়ালে খুব কঠিন একটা লড়াইয়ের মুখে পড়বে এনডিএ৷ অবশ্যই এই সরকারকে কাজ করতে যথেষ্ট সময় দিতে হবে আমাদের৷ কারণ অর্থনীতি কোনও জাদুবলে বদলে যায় না, সত্ পরিকল্পনা এবং রূপায়ণই অর্থনীতিকে সঠিক খাতে নিয়ে যেতে পারে৷
(লেখক সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের নন-এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ হায়দরাবাদের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর)
http://eisamay.indiatimes.com/business/financial-strategy-of-banks/articleshow/35332551.cms?
দ্রুত সিদ্ধান্তের আশা শিল্পমহলের
বৃদ্ধি , সুশাসন এবং অর্থনীতির নতুন দিশা চেয়ে এ বার নির্বাচনে কোটি কোটি দেশবাসী ভোট দিয়েছিলেন৷ ভোটের ফলাফলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে৷ নতুন সরকার কর্মসংস্থান , পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা দেবে এই আশাতেই ভোটদাতারা বুক বেঁধেছেন৷ এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক৷ ভারতীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি যথেষ্ট শক্তিশালী৷ এর উপর ভর করেই চলতি অর্থবর্ষে জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ছয় শতাংশে পৌঁছোতে পারে৷ তবে , এর জন্য শক্তিশালী এবং প্রত্যয়ী পদক্ষেপের প্রয়োজন৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার ১০০ দিনের মধ্যেই তাদের কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত৷
তবে , নতুন সরকারের যাত্রাপথ মোটেই মসৃন নয়৷ বহু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে৷ এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য , খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ৷ খুচরো পণ্যের , বিশেষত খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিরন্তর বেড়ে চলেছে৷ এর উপর রয়েছে এল নিনোর আশঙ্কা৷ এল নিনোর প্রভাব থেকে বাঁচতে সরকারকে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে৷ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গত ছয় মাসে ব্যাঙ্কের সুদের হার তিন বার বাড়ানো হয়েছে৷ সুদের হার বাড়ায় একদিকে যেমন ক্রেতা চাহিদা মার খাচ্ছে , অন্যদিকে শিল্প সংস্থাগুলিও নতুন বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে৷
আর্থিক সংহতিকরণের উপর নতুন সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে৷ টানা দু'বছর ধরে দেশের শিল্পোত্পাদন , বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রের বৃদ্ধি নিম্নমুখী৷ মুলধনী দ্রব্য এবং ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও কমেছে৷ নতুন সরকারকে এই বিষয়গুলির উপর নজর দিতে হবে৷ এই মুহূর্তে কর্মসংস্থান দেশের অন্যতম বড় চিন্তার কারণ৷ প্রতি বছর ১ কোটি থেকে ১ .২ কোটি কাজের উপযোগী লোক তৈরি হচ্ছে৷ একই সঙ্গে কৃষি ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের উত্পাদন , নির্মাণ এবং পরিষেবা ক্ষেত্রের মতো শিল্পক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ নতুন সরকারকে প্রতি বছর ন্যূনতম দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কর্মসংস্থান , বিনিয়োগের আবহ তৈরি ও বৃদ্ধির গতি ফিরিয়ে আনার বহু উপকরণ রয়েছে৷
নতুন সরকারকে প্রতিটি উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে৷ প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে সরকারকে তাদের কাজের ভবিষ্যত্ রূপরেখা নির্ধারণ করতে হবে৷ আর্থিক ক্ষেত্রের যে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি দীর্ঘদিন ধরে পাস করা হয়নি , নতুন সরকার সেই বিলগুলি দ্রুত পাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের আশা৷ নতুন নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী দল , রাজ্য সরকার এবং শিল্প মহলের সঙ্গে নতুন সরকার হাতে হাত মিলিয়ে চললে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব৷ সবার সঙ্গে আলোচনা করার পরেই নীতি চড়ান্ত করা হবে বলেই আমাদের আশা৷ প্রশাসনিক , আইনি এবং নিয়ামক ব্যবস্থার সংস্কার দ্রুত শুরু করা দরকার৷ পণ্য ও পরিষেবা করের বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে এবং সরকার সেটা করবে বলেই শিল্পমহলের বিশ্বাস৷ দেশের বড় শিল্প প্রকল্পগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দিতে পূর্বতন সরকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা এবং প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপ তৈরি করেছিল৷ এই দুই বিভাগই যাতে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে দিকে নতুন সরকারকে নজর দিতে হবে৷ থমকে থাকা প্রকল্পগুলি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে ক্রেতা চাহিদা বাড়বে৷ যা নতুন বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে৷ নতুন সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা৷ সেটা করতে গেলে সরকারকে ভর্তুকির বোঝা কমাতে হবে৷ সেই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে৷ কর ছাড়ের পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷
পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচও বাড়ানো দরকার৷ বর্তমানে মোট খরচের মাত্র ১২ শতাংশ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়৷ সবার আগে দরকার বিদ্যুত্ এবং সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া দরকার৷ প্রকল্প রূপায়ণে আরও স্বচ্ছতা আনতে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের উপর জোর দিতে হবে৷ জমি অধিগ্রহণ এবং অন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মিললে নিলামের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ভার অন্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে৷ বিনিয়োগের উপর কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ১০০ কোটি থেকে কমিয়ে ১০ কোটি টাকা করতে পারে মোদী সরকার৷ দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের জন্য সস্তার আবাসন প্রকল্প রূপায়িত করতে কর ছাড় , কম সুদে ঋণ দেওয়া এবং স্ট্যাম্প ডিউটি কমানোর বিষয়গুলি বিবেচনা করা দরকার৷ শিক্ষা এবং কারিগরি দক্ষতাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে৷ ২০২২ সালের মধ্যে দেশের ৫০ কোটি লোকের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে৷ কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গোটা দেশে আরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে৷
কর ব্যবস্থার সংস্কারেই বাড়বে আদায়
সুস্মিতা বসু ও কপিল বসু
জাতীয় উত্পাদনের নিরিখে প্রত্যক্ষ কর আদায় গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে কমেছে৷ ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে দেশের প্রত্যক্ষ কর আদায় ছিল জাতীয় উত্পাদনের ৬.৬৭ শতাংশ৷ কিন্ত্ত, ২০১১-১২ অর্থবর্ষে তা কমে জাতীয় উত্পাদনের ৫.৫১ শতাংশ হয়েছে (সূত্র: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক, রাজস্ব দপ্তর)৷ প্রত্যক্ষ কর আদায়ের এই নিম্নমুখী অভিমুখ পরিবর্তনই নতুন সরকারের সামনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি করদাতা যাতে নির্ধারিত কর প্রদান করে সরকারের প্রত্যক্ষ কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে৷ করদাতাদের উত্সাহিত করতে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে হবে দেশের নব নির্বাচিত সরকারকে৷
তবে, নতুন ব্যবস্থা চালুর আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা অবশ্যই মাথায় রাখা দরকার৷ গত কয়েক অর্থবর্ষ ধরে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি মন্দাক্রান্ত৷ ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে দেশের জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার ৮.৫৯ শতাংশ ছিল৷ কিন্ত্ত, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে তা কমে ৪.৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ কাজেই দেশের শিল্পক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ কর আদায় যাতে কোনও মতে ব্যাহত না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ আর এই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাই নতুন সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ৷ গত বছরে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া একটি রিপোর্ট পেশ করে৷ ওই রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ায় দেশের প্রায় ২.৪২ লক্ষ কোটি টাকার ফান্ড অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ বিভিন্ন আদালতে কর সম্পর্কিত বিবাদে এই পরিমাণ অর্থ আটকে থাকায় সিএজি এবং অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির কাছে ভত্র্সিত হতে হচ্ছে কর দপ্তরকে৷ সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে আইনি প্রক্রিয়ার দ্রুত সমাধান করে ওই অর্থ ব্যবহার্য করে তোলাও নতুন সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ৷
দ্বৈত করের বিষয়টি নিয়েও নতুন সরকারকে ভাবনা চিন্তা করতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে স্থায়ী আবাস, বাসস্থান এবং নাগরিকত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হতে পারে নব নির্বাচিত সরকারকে৷ স্থায়ী বাসস্থান এবং নাগরিকত্বের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত আয়ের সূত্র নিয়ে তৈরি হওয়া সংশয় দূর করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তাও নতুন সরকারকে ঠিক করতে হতে পারে৷ কর আদায় সুনিশ্চিত করতে এই ধরণের অনিশ্চয়তা এবং অসঙ্গতির মোকাবিলা করে বিকল্প কী ব্যবস্থা নতুন সরকার নিচ্ছে তা দেখতে হবে৷ প্রত্যক্ষ কর বিধিকে দিনের আলো দেখানো নতুন সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ৷
বর্ধিত মূল্যবৃদ্ধি এবং নিম্নমুখী সুদের হারের জাঁতাকলে পিশতে থাকা প্রতিটি করদাতারই নতুন সরকারের কাছে একটি প্রত্যাশা অবশ্যই থাকবে৷ আর তা হল, করের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া৷ কাজেই নতুন সরকার নিয়মিত বেতনের বাইরে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভাতাকে করমুক্ত করার পাশাপাশি কর ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে কর ব্যবস্থা সরলীকরণের কথা ভাবতে পারে৷ প্রবীণ নাগরিকরাও তাদের সুদ বাবদ আয় ও লভ্যাংশের উপর কর ছাড়ের প্রত্যাশা করতে পারে৷ অন্যদিকে, পরিকাঠামো নির্মাণ, আবাসন এবং এর সঙ্গে যুক্ত শিল্প সংস্থাগুলি তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে ও সংশ্লিষ্ট শিল্প ক্ষেত্রের বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন সরকারের কাছে অতিরিক্ত কর ছাড়ের প্রত্যাশা করতে পারে৷ এ সবেরই মোকাবিলা করতে হবে কেন্দ্রের নব নির্বাচিত সরকারকে৷ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিদের মতো বিশেষ করদাতাদের অতিরিক্ত কর ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নতুন সরকার বিবেচনা করতে পারে৷ জেনারেল অ্যান্টি অ্যাভয়ডেন্স নিয়ম মেনে যে দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে সেগুলির সঙ্গে পুরোনো প্রক্রিয়া বজায় রাখাই উচিত্৷ এটিকে কর আদায়ের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার না করাই শ্রেয়৷ ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনে দেশের শিল্প সংস্থাগুলির সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে খরচের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা লাগু করতে আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য পৃথক কর ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে৷ একই সঙ্গে হিসাব বহির্ভুত কালো টাকার আদান-প্রদান এবং কর ফাঁকি রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে৷ কাজেই ভারসাম্য বজায় রাখতে একদিকে জনমোহিনী নীতি ও অন্যদিকে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর মতো জটিল কাজ করতে হবে নতুন সরকারকে৷ পরোক্ষ কর আদায়ের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল দেশে পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থার প্রচলণ৷ দেশের শিল্প সংস্থাগুলি এর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অধীর প্রতিক্ষায় রয়েছে৷ আট বছর আগে প্রথম ঘোষিত হলেও পণ্য ও পরিষেবা কর এখনও লাগু করা সম্ভব হয়নি৷ এই নতুন কর ব্যবস্থা শুধু যে সরকারকে তার পরোক্ষ কর আদায় ও রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করবে তাই নয় আর্থিক ঘাটতি কমাতেও সাহায্য করবে৷ একই সঙ্গে সরল ও স্বচ্ছ পরোক্ষ কর কাঠামো তৈরিতেও সাহায্য করবে৷
পণ্য ও পরিষেবা করের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক, বিক্রয় কর প্রভৃতিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷ তবে, আমদানি শুল্ককে পণ্য ও পরিষেবা করের আওতার বাইরে রাখা হবে৷ ভারতে পণ্য ও পরিষেবা করের বিবর্তন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে গোটা দেশ বিষয়টি নিয়ে উত্সাহী হলেও দেশের বড় রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষেত্রকে আড়াল করে রাখতে এর বিরোধীতা করে এসেছে৷ পণ্য ও পরিষেবা কর একটি যৌথ উদ্যোগ৷ বিষয়টিকে পারস্পরিক বিশ্বাসের মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে পরস্পরের যোগ্যতাকে সম্মান দিতে হবে৷ নতুন সরকার এই উদ্দেশ্য পূরণে সফল হবে বলেই আশা৷
কাজেই নতুন সরকারের হাতে এ মুহূর্তে প্রকৃত ভারসাম্য বজায় রেখে বর্ধিত আর্থিক ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং দেশের প্রতিটি বর্গের ব্যক্তির আশা-আকাঙ্খা পূরণের গুরুদায়িত্ব রয়েছে৷
(সুস্মিতা বসু প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্সের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর এবং কপিল বসু সংস্থার ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটরি সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার)
http://eisamay.indiatimes.com/business/reformation-of-tax-system/articleshow/35332185.cms?
মন্ত্রিসভা গঠনে মোদির ম্যারাথন বৈঠক, নানান জল্পনা
অরুণ জেটলি অর্থ, রাজনাথ প্রতিরক্ষা, সুষমা স্বরাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেতে পারেন ॥ আদভানি স্পীকার হচ্ছেন কিনা স্পষ্ট নয়
কাওসার রহমান, নয়াদিল্লী থেকে ॥ ঘনিয়ে আসছে শপথের দিন। সম্ভবত আগামী বৃহস্পতি অথবা শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। স্বাভাবিকভাবেই সরকার গঠন নিয়ে বিজেপির তৎপরতা এখন তুঙ্গে। এরই মধ্যে ম্যারাথনগতিতে মন্ত্রিসভার খসড়া তৈরি করেছেন মোদি। স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার মোদি কার কাঁধে তুলে দেবেন, তা নিয়েই জোর জল্পনা চলছে দলের ভেতরে। দফতর নিয়ে নানা অঙ্ক কষে এবং কাজের অভিজ্ঞতা দেখে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে আলোচনা করেই মোদি মন্ত্রিসভা ঠিক করছেন। তবে মন্ত্রিসভা গঠনের কাজে তাড়াহুড়ো করতে চান না তিনি। প্রয়োজনে শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রীদের দফতর ঠিক করা হবে।
দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভোটের আগে দলের নেতৃত্বের ভেতর যেটুকু ভুল বোঝাবুঝি ছিল তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় উল্লসিত সঙ্ঘ এখন যে পরামর্শ দিচ্ছে, তা নিয়েও চিন্তিত মোদি। আবার মন্ত্রিসভায় কাকে কাকে ঠাঁই দেবেন, কাকে কোন পদ দেবেন, তা নিয়ে দফায় দফায় রাজধানী দিল্লীতে বৈঠকের পর বৈঠক করছেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংসহ বিজেপি নেতৃবৃন্দের।
অর্থমন্ত্রী পদে মোদির প্রথম পছন্দ অরুণ জেটলি। তাঁর স্বচ্ছ, শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখেই গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব দিতে চাইছেন মোদি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং। তবে তাঁকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করার ভাবনাও রয়েছে মোদির মাথায়। সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দলের শীর্ষ নেত্রী সুষমা স্বরাজকে দেয়া হতে পারে। প্রথমে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য সুষমাকে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিদেশের দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক থাকায় মোদিকে নতুন করে তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদের কথা ভাবতে হচ্ছে। মন্ত্রী হতে পারেন সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিংও।
পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল থেকে বিজেপির টিকেটে বিজয়ী বাবুল সুপ্রিয়র মন্ত্রী হওয়া এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। যুবকল্যাণ দফতর বা সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদে তাঁকে দেখা যেতে পারে। দার্জিলিংয়ের সাংসদ এএস আহলুয়ালিয়াকেও ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে বিজেপির লৌহপুরুষ লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে মোদি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও লোকসভার স্পীকার পদের দায়িত্ব আদভানিকে দেবেন কিনা, তা স্পষ্ট করেননি। দলের ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে, আদভানি স্পীকার হতে রাজি থাকলেও মোদি চাইছেন না।
এ নিয়ে সোমবার সকালে মোদির বাড়িতে বৈঠক করেন অরুণ জেটলি ও অমিত শাহ। রাজনাথের বাড়ি যান বরুণ গান্ধী, উমা ভারতী, জগদম্বিকা এবং আর কে সিং। মোদির মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে এখন দিনরাত মোদি-রাজনাথের বাড়িতে ভিড় করছেন দলের ছোটবড় নেতারা। তবে মোদি নিজের স্বেচ্ছাচারী ভাবমূর্তি বদলে সঙ্ঘ পরিবার ও দলের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভা গঠনের খসড়া তৈরি করছেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে জোরকদমে চলছে রাষ্ট্রপতি ভবন সাফ করার কাজ। তুমুল ব্যস্ততা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়েও। নরেন্দ্র মোদির কাজ করার ধরন, তাঁর কাজের সময়, অফিসে তাঁর পছন্দের জিনিস, সবকিছু নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন আমলারা। একই অবস্থা বিদেশ মন্ত্রণালয়ের দফতরেও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে কী নীতি গ্রহণ করবেন অথবা এবার আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, তা স্পষ্ট না জানা পর্যন্ত বিদেশ মন্ত্রণালয়ের আমলাদের স্বস্তি নেই। আমেরিকা মোদিকে ভিসা দেয়ার অনুমতি এখনও পর্যন্ত না দিলেও বিজেপির জয়ের পরই তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তাঁরা দুজনই শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি যথাক্রমে মোদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও তৎপর। রামমন্দির, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেয়া, সবার জন্য এক আইনের অভিন্ন দেওয়ানী বিধির ব্যাপারে সঙ্ঘ চাপ দেয়া শুরু করে দিয়েছে। সঙ্ঘও যুক্তি দেখাতে শুরু করেছেÑ এনডিএ শরিকরা আপত্তি তুলে চাপ দেবে এমন অবস্থা আর নেই। ফলে এবারই সুযোগ রয়েছে এই তিনটি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের। সঙ্ঘ এ কথাও বলছে, বিজেপির সমর্থনে এই বিপুল জনমত তা রামমন্দির, অভিন্ন দেওয়ানী বিধি, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারÑ এ সব দাবির কারণেই। এর মধ্যেই রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দফতর কেশবকুঞ্জে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে বিজেপি নেতাদের। ভিড় নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরেও। আরএসএস নেতারা অবশ্য বারবারই বলার চেষ্টা করছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারে তাঁরা নাক গলাবে না। তবে প্রয়োজনে পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতে রাজি!
এ প্রসঙ্গে জয়পুরে সঙ্ঘের জাতীয় মুখপাত্র রাম মাধব বলেছেন, 'আরএসএসের হাতে কোন রিমোট কন্ট্রোল নেই। বিজেপি নেতারাও বলছেন, মন্ত্রিসভা গঠনে আরএসএসের কোন ভূমিকা নেই। দলের সাংসদ, নেতাদের আচরণ থেকে অবশ্য অন্যরকম সঙ্কেত মিলছে। মোদি সরকারে কারা মন্ত্রী হবেন, তার চাবিকাঠি রয়েছে সঙ্ঘের হাতেই।'
এ ব্যাপারে রাম মাধব বলেন, সঙ্ঘ কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সামাজিক সংগঠন। আমরা কেন্দ্রে সরকার গঠনে বা তার কাজকর্মে নাক গলাতে চাই না। আমাদের হাতে কোন রিমোট কন্ট্রোলও নেই। রামমন্দির গঠন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া নিয়ে মাধবের মন্তব্য, বিজেপি উপযুক্ত সময়ে এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আরএসএস রাজনীতিতে নেই জানিয়েও মাধব বলেছেন, মোদির এমন বিপুল জয়ের জন্য তাঁরা কোন প্রশংসা কুড়োতে না চাইলেও গোটা দেশে ভোটের হার প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধির কৃতিত্ব তাঁদেরই।
তিনি বলেন, 'সঙ্ঘের কাজ শেষ। আমরা আবার ফিরে যাব জাতি ও সমাজ গঠন, চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব উন্নয়নের কাজে। আমরা না, এবার জনগণকেই দায়িত্ব নিয়ে মোদি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।'
তবে মোদি ক্ষমতায় এসে অগ্নিমূল্যের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাবেন কিনা, তা জানতে মুখিয়ে আছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের এ প্রত্যাশা মোদি কিভাবে সামলান এখন সেটাই দেখার বিষয়।
ধনী ও দাগি সাংসদদের লোকসভা
লোকসভায় দাগি সাংসদের সংখ্যা সর্বাধিক হতে চলেছে এবারই। একই সঙ্গে সবচেয়ে ধনী লোকসভারও স্বীকৃতি পাবে এ ষোড়শ লোকসভাই। সাংসদদের এক-তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে যেমন ফৌজদারী মামলা ঝুলছে, তেমনি তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির নিরিখে এবারের লোকসভাই এ যাবতকালে সবচেয়ে ধনী। এর মধ্যে ধনীতম সাংসদ হলেন টিডিপির জয়দেব গাল্লা। তাঁর সম্পত্তির মূল্য ৬৮৩ কোটি টাকা। সবচেয়ে দরিদ্র সাংসদ তৃণমূলের উমা সোরেন। ভোটের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতেই উঠে এসেছে এ সব তথ্য।
সে সব তথ্যÑপরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) জানাচ্ছে, সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন যাঁরা, তাঁদের ৩৪ শতাংশই দাগি আসামি। নানা ধরনের ফৌজদারী মামলা চলছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে ৩০ শতাংশ দাগি ছিল লোকসভায়। ২০০৯ সালে ছিল ২৪ শতাংশ। সেই সংখ্যাটাই বেড়ে এবার ৩৪ শতাংশ। গড়ে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন সাংসদ দাগি। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) চার সাংসদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধেই মামলা ঝুলছে। ১৮ আসন জিতেছে শিবসেনা। এর মধ্যে ১৪ জনই দাগি। এনসিপির পাঁচজন সাংসদের মধ্যে দাগি চারজন। হবু শাসক দল বিজেপির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। দাগিদের মধ্যে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের সাংসদরাই সংখ্যায় এগিয়ে।
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির নিরিখেও এবারের লোকসভা সবচেয়ে ধনী। ৮২ শতাংশ সাংসদ কোটিপতি। ২০০৪ সালে কোটিপতি ছিল ৫৮ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ৩০ শতাংশ। সবচেয়ে ধনী হলেন টিডিপি, টিআরএস এবং ওয়াইএসআরসিপির সাংসদরা। কংগ্রেস সাংসদদের গড় সম্পত্তির আর্থিক মূল্য ১৬ কোটি টাকা। বিজেপি সাংসদদের সম্পত্তির গড় ১১ কোটি টাকা। এদিক থেকে সিপিএম সাংসদরা অনেকটাই দরিদ্র। তাদের গড় সম্পত্তির অর্থমূল্য মাত্র ৭৯ লাখ টাকা।
যে লোকসভায় জয়ের চেয়ে পরাজয়ের তালিকা দীর্ঘ
লোকসভা ভোটে জয়-পরাজয়ের হিসেবনিকেশের পর এবার ভিভিআইপি নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হেভিওয়েট বাবা কিংবা হেভিওয়েট মায়ের মুখ কি উজ্জ্বল করতে পারলেন সন্তানরা? সারাদেশে যেখানে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪৪টি ধরে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস, সেখানে দলের বহু নেতা-মন্ত্রীর ছেলেমেয়েরাই নাম ডুবিয়েছে। কয়েকজন অবশ্য মুখ রেখেছেন তাদের বাবা-মায়ের। শুধু কংগ্রেসই নয়, ব্যর্থতার তালিকায় রয়েছেন অন্য দলের প্রার্থীরাও।
তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে জয়ের তালিকা থেকে পরাজয়ের তালিকাই দীর্ঘ। পরাজিতদের মধ্যে যাঁরা উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন- শচীন পাইলট, কার্তি চিদম্বরম, সন্দীপ দীক্ষিত, মিলিন্দ দেওরা, প্রিয়া দত্ত এবং জিতিন প্রসাদ। আর বিজয়ীরা হলেনÑ অভিজিত মুখোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দীপেন্দ্র হুডা ও সুস্মিতা দেব।
প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেশ পাইলটের ছেলে শচীন দাঁড়িয়েছিলেন রাজস্থানের আজমীর থেকে। হেরেছেন বিজেপির সানওয়ার লাল জাটের কাছে। তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা আসনে প্রার্থী অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তিকে হারিয়েছেন এআইএডিএমকের সেনথিলনাথন পিআর। পূর্ব দিল্লী আসনে বিজেপির মাহিশ গিরির কাছে পরাজিত হয়েছেন শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ। দক্ষিণ-মুম্বাই আসন থেকে শিবসেনার অরবিন্দ সাওয়ান্তের কাছে পরাজিত হয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলি দেওরার ছেলে মিলিন্দ। মুম্বাইয়ের উত্তর-মধ্য আসনে বিজেপির প্রয়াত নেতা প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনমের কাছে হেরে গেছেন অভিনেতা সুনীল দত্তের মেয়ে প্রিয়া। উত্তরপ্রদেশের ধাউরহড়া আসনে পরাজিত হয়েছেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদের ছেলে জিতিন প্রসাদ। এ ছাড়াও হেরেছেন হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী বংশীলালের নাতনি শ্রুতি চৌধুরী।
কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য দলের যাঁরা হেরেছেন তাঁরা হলেন- লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে আরজেডির মিসা ভারতী। বিহারের পাটলিপুত্রে তাঁকে হারিয়েছেন বিজেপির রামকৃপাল যাদব। কর্নাটকের চিক্কাবল্লাপুর আসনে পরাজিত হয়েছেন জনতা দল (সেক্যুলার) প্রধান এইচডি দেবগৌড়ার ছেলে এইচডি কুমারস্বামী। শিমোগা আসনে হেরেছেন কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এস বঙ্গারাপ্পার মেয়ে গীতা শিবরাজকুমার। হরিয়ানায় ভজনলালের ছেলে হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের (এইচজেসি) কুলদীপ বিষ্ণুকে পরাজিত করেছেন ওমপ্রকাশ চৌতালার ছেলে জাতীয় লোকদলের দুষ্মন্ত। ছত্তিশগড়ে বস্তার আসনে হেরেছেন সালওয়া জুড়ুম নেতা মহেন্দ্র কর্মার ছেলে দীপক। উত্তরপ্রদেশের মথুরা আসনে বিজেপির হেমা মালিনীর কাছে হেরেছেন অসামরিক পরিবহনমন্ত্রী অজিত সিংয়ের ছেলে জয়ন্ত চৌধুরী।
কংগ্রেসের 'হেভিওয়েট' নেতা-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাঁরা জিতেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রাষ্ট্রপতিপুত্র। পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গীপুর আসন থেকে জিতেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিত। উত্তরপ্রদেশের আমেথি থেকে জিতেছেন সোনিয়াপুত্র রাহুল। মধ্যপ্রদেশের গুনা থেকে জয়ী হয়েছেন মাধব রাও সিন্ধিয়ার ছেলে জ্যোতিরাদিত্য, অসমের কালিয়াবোর থেকে তরুণ গগৈয়ের পুত্র গৌরব, রোহটাক থেকে ভূপিন্দর সিং হুডার ছেলে দীপেন্দ্র ও শিলচর থেকে সন্তোষ মোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা।
কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য দলের যাঁরা জিতেছেন তাঁরা হলেন- মানেকাপুত্র বরুণ (বিজেপি), যশবন্ত সিনহার ছেলে জয়ন্ত (বিজেপি), রমন সিংয়ের ছেলে অভিষেক (বিজেপি), বসুন্ধরা রাজের ছেলে দুষ্মন্ত (বিজেপি), কল্যাণ সিংয়ের ছেলে রাজবীর (বিজেপি), সাহেব সিং ভার্মার ছেলে পরবেশ (বিজেপি), রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ (এলজেপি) ও শরদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে (এনসিপি)।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
অমিত শাহ: মোদির তুরুপের তাস
তাঁকে উত্তর প্রদেশে পাঠানো হয়েছিল একটি 'মিশন' নিয়ে: ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হয়ে রাজ্যটি জয় করতে হবে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সুচারুভাবে তা পালনও করেছেন যা ভূমিকা রেখেছে বিজেপির বিশাল জয়ে৷ অচেনা-অজানা ওই বিশাল রাজ্যে এত বড় কাজ কীভাবে করলেন অমিত শাহ, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই৷
৪৯ বছর বয়সী বিজেপি নেতা অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারণায় দলটির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির ডান হাত হিসেবে কাজ করেছেন৷ মোদি তাঁর নিজ হাতে গড়া অমিত শাহকে সমর্থনের দীর্ঘ খরায় আক্রান্ত উত্তর প্রদেশে পাঠানোর পর তিনি বিস্তর বিতর্কের সূত্রপাত করেন৷ নির্বাচনী প্রচারণার সময় নানা বেফাঁস মন্তব্য করে শিরোনাম হন অমিত৷
জাতপাত নিয়ে রাজনৈতিক দিক দিয়ে চরমভাবে বিভক্ত উত্তর প্রদেশে সব শ্রেণির মানুষের কাছে আবেদন আছে, এমন কোনো নেতাই বিজেপির ছিল না৷ অমিত শাহ নিজেও ছিলেন সেখানে একেবারে অপরিচিত মুখ৷ তার ওপর রাজ্যের ৪২ শতাংশ ভোটই যাদব-মুসলিম-জাঠ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ অমিতের ভাষায়, সেখানে হাত দেওয়ার উপায় ছিল না৷ তিনি বলেন, 'অতীতের নির্বাচনগুলোর সময় সমাজবাদী পার্টি (এসপি) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থন অর্জন করতে পেরেছিল৷ আমরা বিগত চারটি নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বদলীয় কৌশলগত জোট দেখেছি৷'
এই পরিস্থিতিতেও উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভোট প্রায় তিন গুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন অমিত শাহ৷ ২০১২ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে দলটি যেখানে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে এবার লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি৷ মোট ৮০টি আসনের মধ্যে ৬০টিরও বেশি এখন বিজেপির ঝুলিতে৷
উত্তর প্রদেশে বিজেপির এই অসাধারণ ফলের পেছনে কাজ করেছে অমিত শাহর দক্ষ হাতে দলীয় নির্বাচন কার্যক্রম তদারক করা৷ তিনি রাজ্য নেতাদের কায়েমি স্বার্থ উপেক্ষা করে মেধা, জাতপাতের সমন্বয় ও প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় বিচেনায় নিয়ে দলীয় টিকিট বিতরণ করতে সক্ষম হন৷
রাজনৈতিক দূরদির্শতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিং ও জ্যেষ্ঠ নেতা অরুণ জেটলিরও অত্যন্ত আস্থাভাজন৷ রাজনাথ মোদির মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্বে অমিত শাহকে দেখা যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে৷ হিন্দুস্তান টাইমস৷
মোদির মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে জল্পনা
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে | ২০ মে ২০১৪, মঙ্গলবার, ১০:৫৫
Share on facebookShare on twitterShare on emailShare on printMore Sharing Services0
মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে নরেন্দ্র মোদি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। সোমবার দিনভর তিনি নয়া দিল্লির গুজরাট ভবনে বসে অমিত শাহ, অরুণ জেটলি প্রমুখ কোর গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে মন্ত্রিসভার খসড়া তালিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাতে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করেছেন। মোদি চাইছেন সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা গঠন করতে। তাই আদবানি বা মুরলী মনোহর যোশীর মতো প্রবীণদের বাড়িতে যাচ্ছেন। ছোট-বড় নেতাদের গুজরাট ভবনে ডেকে আলোচনা করছেন। রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন সুষমা স্বরাজ, গোপীনাথ মুণ্ডে, বরুণ গান্ধী, উমা ভারতী, যোগী আদিত্যনাথ প্রমুখ। দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি রোববার প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেছেন। তার পরামর্শ চেয়েছেন। সম্পর্ক ভাল না হওয়া সত্ত্বেও মোদি তার বাড়ি ছুটে গিয়ে নতুন বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার জন্য যথাযোগ্য পদের ব্যবস্থা করাটা মোদির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। অটল বিহারী বাজপায়ীর আমলে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আদবানি। স্বভাবতই মোদির অধীনে মন্ত্রী হওয়া তার কাছে অস্বস্তিকর। বরং স্পিকারের মতো সাংবধানিক পদই সম্মানজনক হবে। কিন্তু দলের একটা অংশের আশঙ্কা, তাকে স্পিকার করলে কংগ্রেস তাকে ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে বেগ পেতে পারে মোদি সরকারই। একই সঙ্গে আরএসএস নেতাদের সঙ্গেও মোদি কথা বলেছেন। যদিও আরএসএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে তারা নাক গলাবে না। তবুও সংঘ পরিবারের নেতাদের পরামর্শ নেয়া একরকম বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। আর তাই সোমবার সারা দিনই বিজেপির অনেক নেতাই আরএসএস অফিসে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খসড়া মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণও পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে মঙ্গলবার বিজেপির সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মোদিকে নেতা নির্বাচন করার পরই ছবিটি স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা তৈরির জট না খুলতে পারা গেলে অল্প কয়েকজনকে নিয়েই আগামী ২৪শে মে একাদশীর দিন মোদি শপথ নিতে পারেন। মন্ত্রিসভার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও অর্থ। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এই চারজনই হন নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য। তাই মোদি অনেক ভেবেচিন্তে এই চার পদে নিয়োগ দিতে চাইছেন এমন ব্যক্তিদের, যাদের সঙ্গে মোদির কাজ করতে অসুবিধা হবে না। সেক্ষেত্রে আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রকে বিগত লোকসভার বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজের নাম শোনা গেলেও আদবানি'র ঘনিষ্ঠ এই নেত্রীকে মোদি মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে আটকে রাখতে চান। সুষমা নানা ইস্যুতে মোদির বিরোধিতা করেছেন। আবার দলের এই সদস্যকে মামুলি মন্ত্রক দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ফল ঘোষণার পর সুষমার বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজনাথ সিং। সেই বৈঠকে সুষমা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাকে সম্মানজনক পদ দিলেই তিনি রাজি হবেন মন্ত্রিসভায় থাকতে। চার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের একটি তিনি চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে মোদি ঘনিষ্ঠ অরুণ জেটলি নির্বাচনে না জিতলেও মোদি তাকে মন্ত্রিসভায় রাখতে চান। প্রথমে শোনা গিযেছিল কোন টেকনোক্র্যাটকে পাওয়া না গেলে তাকে অর্থমন্ত্রী করা হতে পারে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে জেটলিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। দলের সভাপতি রাজনাথ সিংকে দলের দায়িত্বেই রেখে দেয়া হবে নাকি মন্ত্রিসভায় তাকে দু'নম্বর ব্যক্তির মর্যাদায় রাখা হবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। দলের সভাপতি মনোনয়নের বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেক ভাবনা- চিন্তা চলছে সঙ পরিবারে। বাজপায়ী মন্ত্রিসভার টেলিকম মন্ত্রী অরুণ শৌরি অনেক দিন দলের কাছ থেকে দুরে সরে থাকলেও তাকে মন্ত্রী করার ভাবনা চিন্তা চলছে। দলের সাবেক সভাপতি নীতিন গড়গড়িকেও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া নিয়ে কথা চলছে। মুসলিম মুখ হিসেবে রাজ্যসভার সদস্য নকভিকে মন্ত্রী করা হবে বলে একরকম ঠিক হযে রযেছে। মন্ত্রী করা হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বাবুল সুপ্রিয় ও এস এস আলওয়ালিয়াকেও। উত্তরপ্রদেশে ছত্রভঙ্গ বিজেপিকে একজোট করে অমিত শাহ যে সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তার পুরস্কার হিসেবে মোদি তার জন্য বড় ভূমিকার কথা ভেবেছেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে চার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর একজন হতে পারেন অমিত শাহ। মন্ত্রী হিসেবে অনেক নতুন মুখের কথাও ভেবেছেন মোদি।
কংগ্রেসের নেতৃত্ব গান্ধী পরিবারের হাতেই
ভারতের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল কংগ্রেসের নেতৃত্ব সেই গান্ধী পরিবারের হাতেই রয়ে গেল। গতকাল দল থেকে সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেন। কিন্তু তা মেনে নেয়নি দলের কার্যনির্বাহী কমিটি। লোকসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর গতকাল দিল্লির ২৪ আকবর রোডে বসে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। স্থানীয় সময় বিকাল চারটার দিকে শুরু হওয়া এ সভায় নির্বাচনে দলের দুর্দশার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেন সোনিয়া। তার পথ অনুসরণ করেন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তার ছেলে রাহুল গান্ধী। কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটি দলের ভার তাদের ওপরই ন্যস্ত করে। বলে, এত বড় দায়িত্ব পালনের মতো কেউ নেই তাদের মাঝে। তারা আহ্বান জানান দলের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য পদক্ষেপ নিতে। এক পর্যায়ে সোনিয়া গান্ধী দলকে পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। আগে থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে সোনিয়া ও রাহুল ওই বৈঠকে পদত্যাগ করতে পারেন। গতকাল বৈঠকে সাদা কোর্তা ও জিন্সের প্যান্ট পরে হাজির হন রাহুল গান্ধী। বসেন মা সোনিয়ার ডান পাশে। আর সোনিয়া বসেন সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ডান পাশে। এতে সোনিয়ার মুখে সামান্য হাসি দেখা গেলেও রাহুল ছিলেন গম্ভীর। তাকে হাসতে দেখা যায়নি। দলের পার্লামেন্টারিয়ান ও সিনিয়র নেতা কমল নাথ বলেছেন, দলের ভিতর শুধু গণতন্ত্র থাকলে তা পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতির ইতি ঘটাতে পারে। তাই কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের জন্য অবশ্যই নির্বাচন হবে। বৈঠকের শুরুতে ২৪ আকবর রোডের বাইরে এক দল তরুণ কংগ্রেসকর্মী রাহুল গান্ধীর পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দল আনন্দ-উল্লাস করতে পারেনি। কমল নাথ একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, এ ব্যর্থতার জন্য কেন শুধু একা রাহুলকে দায়ী করা হচ্ছে? তার পদত্যাগ করা উচিত নয়। গত শুক্রবার প্রকাশিত লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যায় ৫৪৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেস মাত্র ৪৪ আসন পেয়েছে। ৩০ বছরের মধ্যে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করছে। নতুন পার্লামেন্টে এখন বিরোধী দল কে হবে, কিভাবে হবে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কারণ, যে কংগ্রেস গত ১০টি বছর সরকার পরিচালনা করেছে তাদের অবস্থা এতই শোচনীয় যে তারা বিরোধী দলে বসার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি।
নরেন্দ্র মোদির ধন্যবাদে বাংলাদেশ নেই
অভিনন্দন জানানোয় বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল টুইটারে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের প্রতি ধন্যবাদ জানালেও বাংলাদেশের নাম নেই। শুক্রবারে প্রকাশিত লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও তাকে অভিনন্দন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। প্রত্যুত্তরে নরেন্দ্র মোদি জাপান, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি নেপালের নাম উল্লেখ করে গতকাল ওই সব দেশের নেতাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে কথা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি'কে ধন্যবাদ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন শুভকামনার জন্য তাকে ধন্যবাদ। ফিজি'র প্রধানমন্ত্রী ভোরেক বাইনিমারামা'র প্রতিও তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রেজয়, জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকোব জুমা, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, নেপালের প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব, প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই, তিব্বতের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাই লামার প্রতি। কিন্তু বাংলাদেশের কথা একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjQyMTI=&sMw==
কোন্ দিকে কেন্দ্র বামপন্থীদের থাকা-না-থাকার পার্থক্য দেখা যাচ্ছে
শান্তনু দে
বেপরোয়া বেসরকারীকরণ না হলেও অ্যাজেন্ডায় ফিরে এসেছে বিলগ্নীকরণ। পুরোদমে সংস্কার আবার ফিরে এসেছে আলোচনায়।
সাড়ে ছ'বছর আগে মে মাসের এক মধ্যাহ্নে রাস্তায় রক্তস্নান, 'ব্লাড বাথ অন দি স্ট্রিট' দেখেছিল মিডিয়া। বামপন্থীরা ৬১। বামপন্থীদের ছাড়া সেদিন নতুন সরকার গঠন ছিল অসম্ভব। সেদিন শুরুতেই বিলগ্নীকরণ মন্ত্রক তুলে দিতে বলেছিলেন হরকিষাণ সিং সুরজিৎ। এ বি বর্ধন বলেছিলেন 'ভাড় মে যায়ে উয়ো মন্ত্রক (বিলগ্নীকরণ), আওর উনকা মন্ত্রী (অরুণ শৌরি)।' জাহান্নামে যাক ওই মন্ত্রক, আর তার মন্ত্রী।
প্রথম ইউ পি এ সরকার। বামপন্থীদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। সবরকম চেষ্টা চালিয়েও বিলগ্নীকরণ করতে পারেনি। এগোতে পারেনি এক ইঞ্চিও। শ্রমিকদের জঙ্গী মেজাজ, ধর্মঘটের শক্ত জমিতে বামপন্থীদের জোরালো প্রতিবাদের মুখে শেষে দিল্লিকে পিছু হটতে হয়। ভেল, নালকো, নেভেলি লিগনাইটের বিলগ্নীর প্যাকেজ গুটিয়ে দিতে হয়। ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিলগ্নী হবে না নবরত্ন সংস্থাগুলিতে।
এখনও ইউ পি এ সরকার। তবে দ্বিতীয়। এখন বামপন্থীরা নেই। যখন ছিলেন, তখন ছিল সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচী। এখন পুরোদস্তুর নয়া উদার কর্মসূচী। বামপন্থীদের সঙ্গে চার বছর দেড় মাস। বিদায় বেলায় প্রধানমন্ত্রীর গলায় স্বস্তি, তিনি বড়জোর ছিলেন 'বামপন্থীদের একজন ক্রীতদাস মাত্র।' নিশ্চিতভাবেই বামপন্থীদের লড়াইয়ের সততার প্রতি একটি বড় 'সার্টিফিকেট'।
'দাসত্বমুক্ত' সরকারে যথারীতি বিলগ্নীকরণ, সংস্কার ফের অ্যাজেন্ডায়।
বামপন্থীরা ৬১। সংসদে আমজনতার কণ্ঠস্বর। বামপন্থীরা মানে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হিম্মত। ৬১ কেন, একজন সাংসদ না থাকলেও, এই প্রতিবাদে সমান দায়বদ্ধ। বিলক্ষণ জানে ওয়াশিংটন। আরও জানিয়েছে উইকিলিকসে তথ্য ফাঁস। বামপন্থীরা মানে, আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজিকে অবাধে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিপদে বাধা। নীতি বদলের লড়াই। পেনশন ব্যবস্থার বেসরকারীকরণের লক্ষ্যে পি এফ আর ডি এইচ বিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারী অংশীদারিত্বের পরিমাণ ৫১শতাংশের নিচে নামিয়ে রাখতে ব্যাঙ্ক শিল্প বেসরকারীকরণ বিল, আই আর ডি এ-তে বিদেশী পুঁজির অংশীদারিত্ব ২৬থেকে বাড়িয়ে ৪৯শতাংশ করার বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে-বাইরে তুমুল লড়াই। আটকে ছিল সবকিছু।
বামপন্থীরা মানে, একশ দিনের কাজ জোর করে আদায়। নয়া উদার নীতির পথ পুরোপুরি পরিত্যাগ না করলেও, বামপন্থীদের চাপে সরকার নিতে বাধ্য হয় কিছু কল্যাণকর কর্মসূচী। এই সময়েই অরণ্যের অধিকার প্রদান আইন। এই সময়েই গার্হস্থ্য হিংসা-বিরোধী আইন। এবং এই সময়েই তথ্যের অধিকার আইন। বামপন্থীদের চাপেই অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ড. অর্জুন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে গঠন করে 'ন্যাশনাল কমিশন অব এন্টারপ্রাইজেস ইন দি আন-অর্গানাইজড সেক্টর'।
বামপন্থীদের কারণেই আটকে যায় খুচরো ব্যবসায় ১০০শতাংশ বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশ। বামপন্থীদের জন্যই আটকে থাকে পেটেন্ট আইন সংশোধন।
দ্বিতীয় ইউ পি এ। কংগ্রেস বৃহত্তম দল। কিন্তু পায়নি সংখ্যাগরিষ্ঠতা। বামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরকার এখন মুক্ত। দৃশ্যতই বেপরোয়া। স্বাভাবিক। শরিক তৃণমূলের মতো দল। প্রথম, দ্বিতীয় — দুই ইউ পি এ সরকারের মধ্যে তাই বিপুল পার্থক্য। বামপন্থীদের সমর্থনে সরকার থাকাকালীন যা পারেনি, এখন সেগুলি করতে কোনও বাধা নেই।
পেট্রোলের দামের ওপর তুলে নেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণ। এখন দাম ঠিক করছে বাজার। নিট ফল, ছ'মাসে ছ'বার দামবৃদ্ধি। লাইনে আছে ডিজেল। বাজার এখন ফাটকাবাজদের হাতে। বড় ট্রেডিং কোম্পানিসহ মজুতদাররা করছে বিপুল অঙ্কের মুনাফা। অন্যদিকে চড়া দামের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন লুট হচ্ছে সাধারণ মানুষের রোজগার। আশ্বাস, প্রতিশ্রুতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ ঘোষণা ছাড়া সরকার নির্বিকার।
শুরু হয়ে গিয়েছে বিলগ্নী। প্রথমে ২৫হাজার কোটি টাকা। এবারে লক্ষ্যমাত্রা ৪০হাজার কোটি টাকা। নবরত্ন, মিনিরত্ন — আছে সবই। এখন লাইনে শতদ্রু জল বিদ্যুৎ নিগম, ই আই এল, এন এম ডি সি, এন এইচ পি সি, এন টি পি সি, আর ই সি এবং কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড। লাইনে দাঁড়িয়ে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন, ম্যাঙ্গানিজ ওর লিমিটেড, শিপিং কর্পোরেশন, হিন্দুস্থান কপার। পাইপলাইনে আই ও সি, ও এন জি সি এবং সেইল। সস্তায় রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের হাতে।
পাশাপাশি, জীবন বীমা সংশোধনী বিল, বীমা আইন সংশোধনী বিলের প্রশ্নে মরিয়া সরকার। দুয়েরই লক্ষ্য বীমা ক্ষেত্রকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া। যাতে এরকম স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে অনায়াসে ঢুকতে পারে দেশী-বিদেশী পুঁজি। শেষ বাজেটে সরকার ঘোষণা করেছে, ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রে যাতে অবাধে বেসরকারী পুঁজি ঢুকতে পারে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বস্তুত, বড় শিল্পগোষ্ঠীকে নতুন ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক খোলার জন্য সুপারিশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মানে, মানুষের সঞ্চয় চলে যাবে বেসরকারী হাতে, বিদেশীদের হাতে। চাপের মুখে পড়বে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। চাপের মুখে পড়বেন গরিব মানুষ। কৃষকরা। সেইসঙ্গেই খুচরো ব্যবসায় ১০০শতাংশ বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশের লক্ষ্যে চলছে জোর তৎপরতা। সঙ্গে শিক্ষায় বেসরকারীকরণ।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=700#sthash.jXE3hKCC.dpuf
সংস্কার নিয়ে দিশাহীন বিজেপি
By Swaroop Kulavi
Saturday, 06 October 2012 03:24 AM
মনমোহন সিংহের সরকার যে ভাবে সংস্কারের ঝড় তুলেছে, তাতে এখন উভয়সঙ্কটে বিজেপি নেতৃত্ব।
দলের মধ্যে অরুণ জেটলি থেকে অরুণ শৌরি, এমনকী সভাপতি নিতিন গডকড়ী নিজেও খুচরো বিক্রি, বিমা, পেনশন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির জঙ্গি বিরোধিতার বিপক্ষে। জেটলি-শৌরিরা এর মধ্যে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন, সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতা আজ আমজনতার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনমোহন সিংহ যে পথে হাঁটছেন, তাকে কিন্তু মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকেই সমর্থন করছে। ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজ প্রায় পঁচিশ কোটির। এদের মধ্যে বিজেপির একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক আছে, যারা নিতিন গডকড়ীদের সংস্কারমুখী হিসেবেই দেখতে চায়। আর রয়েছে শিল্পমহল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকেই বিজেপি সংস্কারমুখী। সেই কথা মাথায় রেখে আজ তাদের সংস্কারের সমর্থনে দাঁড়াতে আবেদন জানিয়েছে বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম এবং সিআইআই।
দলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, শুধু কংগ্রেস বিরোধিতার জন্যই সংস্কারের বিরোধিতা করলে এদের সমর্থন হারাবে দল। তা ছাড়া বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যও কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে, যে দক্ষতার জন্য দরকার আর্থিক সংস্কার। যেমন সঙ্ঘকে তুষ্ট রাখতে নরেন্দ্র মোদী মনমোহন সরকারের বিরোধিতা করলেও ভাল ভাবেই জানেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করলে রাজ্যে যে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছেন তিনি, তা আটকে যাবে। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার সময়কে পিছনে ফেলে এখন তিনি উন্নয়নমুখী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ডাকেই গুজরাতকে বেছে নেন রতন টাটা। মোদীর চেষ্টাতেই গুজরাতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে অটো-হাব, যেখানে শুধু ন্যানো নয়, মারুতি, পুজোর মতো গাড়ি কারখানাও আসতে চাইছে। দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের নিয়ে নিয়মিত সম্মেলন করেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহও ক্ষমতায় রয়েছেন উন্নয়নমুখী কাজের জন্য। হিন্দুত্ববাদী প্রচারের জন্য নয়।
সঙ্ঘের কাছে তাই জেটলি-শৌরিদের বক্তব্য, তাঁরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সংস্কারের জঙ্গি বিরোধিতায় নামেন, তাতে বিজেপির লোকসানই বেশি হবে। তাঁদের মতের শরিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাজনাথ সিংহ থেকে পীযুষ গোয়েল, অনেকেই। শুধু তাই নয়, দলের একটা অংশের মত, ইদানীং আরএসএস যে বিজেপির উপরে কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করছে, তা ঠেকাতে সংস্কারকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দলের অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন, হিন্দুত্ববাদ আঁকড়ে থেকে দলের আর কোনও লাভ নেই।
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিই এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। এখন সুশাসন এবং সংস্কারকে ধরে নতুন পথে চলতে হবে। তা হলে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিজেপি সরকার, সেই লাভ কেন্দ্রেও তারা তুলতে পারবে।
সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত কিন্তু চাইছেন নতুন করে স্বদেশি আন্দোলন। নাগপুরের সদর দফতর থেকে তাঁর সেই বার্তা দিল্লি আসার পর উৎসাহিত লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। তাঁরা এখন মনে করছেন, মমতার দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বিজেপির উচিত এখনই রাজ্যওয়াড়ি আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া। যে দলে আছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহাও।
নিট ফল, চরমে উঠেছে বিজেপির কোন্দল। দলীয় নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলতে না পারায় তৈরি হয়েছে দিশাহীনতা।
বিজেপি নেতাদের অনেকেই অবাক যশবন্ত সিনহার পরিবর্তনে। এনডিএ আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিমার বেসরকারিকরণে প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন যশবন্ত। তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিল আরএসএস। দলের সভাপতি কুশাভাও ঠাকরে সঙ্ঘ এবং যশবন্ত সিনহার ঝগড়া মেটাতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী আডবাণীর। বিজেপির এক সংস্কারপন্থী শীর্ষ নেতার মন্তব্য, সে দিনের সংস্কারবাদী যশবন্ত সিনহা আজ যেন মেধা পাটকর আর অরুন্ধতী রায় হয়ে উঠেছেন!
দলের এই প্রবল দিশাহীনতার মধ্যে যশবন্ত সিনহা আমেরিকায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। আডবাণীও গত রাতে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ রাতে দিল্লি এসেছেন গডকড়ী। কাল বাকি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তিনি ভবিষ্যতের রূপরেখা ঠিক করবেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গডকড়ী কিন্তু বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিরোধিতা করে নিজে মুখ খোলেননি। কোনও শীর্ষ নেতাকে দিয়ে বিবৃতিও দেওয়াননি। সংসদে বিল এলে বিজেপি কী করবে, সে প্রশ্নেও নেতারা শর্তসাপেক্ষে সমর্থনের কথা বলেছেন।
কিন্তু সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিজেপি নেতৃত্ব কি পারবেন দলকে সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতার পথে নিয়ে যেতে?
সঙ্ঘপ্রধানের বার্তা আসার পরে আডবাণীরা, যাঁরা কংগ্রেস বিরোধিতাকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাঁদের যুক্তি, বিজেপি যতই সংস্কারপন্থী হোক, বিরোধী হিসেবে ভোটপ্রচারের সময় সংস্কারকে হাতিয়ার করা কখনওই সম্ভব নয়। এনডিএ আমলে বিলগ্নিকরণের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস জোর দেয় সামাজিক দায়বদ্ধতায় আর নেহরুবাদী সমাজতন্ত্রে। তাই আডবাণীর প্রস্তাব, ভোটের আগে সংস্কার বিরোধিতার লাইন নিলে জনতার মন মিলবে। এনডিএ-র সম্প্রসারণেও অদূর ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে।
বিজেপির মধ্যে আরএসএসের দাপট এখনও বেশি। তাই অনেকে মনে করছেন, জেটলি-শৌরি নন, যশবন্ত সিনহার লাইনই হবে পার্টি লাইন। কিন্তু অরুণ জেটলি দলের মধ্যে সংখ্যালঘু হলেও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি শীতকালীন অধিবেশনের আগে বিজেপির সংস্কার-বিরোধী প্রচারে রাশ টানতে তৎপর।
এখন প্রশ্ন, দিশাহীন বিজেপিতে কি সেই রাশ টানা সম্ভব হবে?
রাজনীতি চান না উন্নয়ন নিয়ে, মমতাকে সাহায্যে তৈরি মোদী
জয়ন্ত ঘোষাল
আগামী বছর কলকাতা পুরসভা নির্বাচন এবং ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিজেপিকেই প্রধান রাজনৈতিক বিকল্প করে তোলার চেষ্টা চালাবেন তিনি। কিন্তু তার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করতে চান ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই কারণে মমতাকে রাজধানীতে আসার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি।
আজ গুজরাত ভবনে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে আনন্দবাজারকে মোদী বলেন, "৩৪ বছরে সিপিএম কেন্দ্রের থেকে যে সহায়তা পায়নি, গত তিন বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সাহায্য পাননি, আমি পশ্চিমবঙ্গকে তার থেকে বেশি সহায়তা দিতে চাই। উন্নয়ন নিয়ে কোনও রাজনীতি নয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের ভিতরে জটিলতা নিরসনের জন্য আলোচনা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।"
মোদী এ দিন জানান, প্রত্যেকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই তিনি সুসম্পর্ক চান। যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত গঠন সহজ করতে এই সাংবিধানিক সম্পর্কের হৃত মর্যাদা ফেরাতে তিনি আগ্রহী। নির্বাচনী প্রচারের সময়ও মোদী এক বার বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নটা তিনি করতে চান রাজ্যের মানুষের জন্য। এটা কোনও দল বা সরকারের ব্যাপার নয়। তৃণমূল এবং বিজেপির রাজনৈতিক বিরোধ যা-ই থাকুক, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি আপস করবেন না। প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে যাওয়ার প্রাক্কালেও সেই অবস্থান বদল করেননি মোদী।
"৩৪ বছরে সিপিএম যে সহায়তা পায়নি, গত তিন বছরে মমতাও যা চেয়ে পাননি, পশ্চিমবঙ্গকে আমি তার থেকে বেশি সাহায্য করতে চাই।" নরেন্দ্র মোদী |
প্রশ্ন হচ্ছে, ভাবী প্রধানমন্ত্রী মমতাকে 'রাজনৈতিক ভাবে অস্পৃশ্য' বলে মনে না করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কি তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত?
মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির বিপুল জয়ের পর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ পর্যন্ত বলেছেন, মানুষের দেওয়া এই জনাদেশকে সম্মান করা উচিত। মমতা কিন্তু এখনও পর্যন্ত মোদীকে শুভেচ্ছা জানাননি। যে আমেরিকা এই সে দিনও মোদীকে ভিসা দিতে রাজি ছিল না, তার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন! কিন্তু মমতা জানাননি। তবে এও ঠিক, এই জয়ের পর মোদীর বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও বিবৃতিও দেননি মমতা।
অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, এই সরকার বর্বর এবং অসভ্যের সরকার। এই সরকারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখব না। কিছু দিনের মধ্যেই সিপিএম বুঝতে পারে, ভারতের মতো একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বয়কট করে কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকার চালাতে পারেন না। নির্বাচন কমিশন দ্বারা স্বীকৃত একটি দল, নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জেতা একটি দল, সংসদে জোরালো উপস্থিতি নিয়ে থাকা একটি দল যখন সরকার গড়ে, তখন তাকে সম্পূর্ণ বয়কট করে কোনও রাজ্য সরকার চলতে পারে না। তত্কালীন উপমুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রথমেই সেটি বুঝেছিলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই বেশ কিছু দিন পর বুদ্ধবাবুকে সঙ্গে নিয়ে তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিবাবু। বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আডবাণীর আলাপও করিয়ে দেন তিনি। তার পর থেকে আডবাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলতেন বুদ্ধবাবু। মতাদর্শগত বিরোধ থাকলেও নীতিগত এবং সাংবিধানিক সম্পর্ককে কখনওই মলিন হতে দেননি। উল্টে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বুদ্ধবাবুর চাপে আডবাণী বেশ কিছু বেনজির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক বার তো গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (গেল) যাতে হলদিয়া ছেড়ে গুজরাতে চলে না যায়, সে জন্য বুদ্ধবাবুর অনুরোধে নিজে ময়দানে নামেন আডবাণী। বুদ্ধবাবুকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বসে তত্কালীন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী রাম নায়েক ও 'গেল'-এর অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় গুজরাতে নয়, হলদিয়াতেই থাকবে 'গেল'। এটা সম্ভব হয়েছিল বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আডবাণীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্যই।
রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগোনোর পথে হেঁটেছেন আরও অনেক মুখ্যমন্ত্রীই। এ বারের নির্বাচনেই পুরনো বন্ধুত্ব ভুলে মোদীর সঙ্গে তরজায় মেতেছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। কিন্তু ভোট মিটতেই কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করার কথা বলেছেন তিনি। তার পরেই আজ মোদী নিজে ফোন করেন জয়ললিতাকে। দু'জনের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কথাও হয়েছে।
প্রশ্ন হল, মমতা কী করবেন?
বাজপেয়ী জমানায় কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন মমতা। বাজপেয়ীকে চাপ দিয়ে প্রমোদ মহাজন এবং সুধীন্দ্র কুলকার্নির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বেঙ্গল প্যাকেজ ঘোষণা করিয়েছিলেন। ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে তত্কালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রমোদ মহাজন সেই প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। একদা রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা, মাসুল সমীকরণ নীতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল সিপিএম। মমতাও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের সঙ্গে কম সংঘাতে যাননি।
এখন মোদী যুগে মমতা কি প্রাক্-নির্বাচনী রাজনৈতিক বিবাদকে পাশে সরিয়ে রেখে উন্নয়ন ও প্রশাসনের প্রশ্নে মোদী সরকারের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করবেন? মোদী চাইলেও মমতা তাতে কী ভাবে সাড়া দেবেন? এই প্রশ্নের জবাবে মমতা এখনও নিরুত্তর। প্রসঙ্গত এ দিনই মমতার অবস্থানের সমালোচনা করে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, "মমতারও উচিত ছিল জয়ললিতার মতো কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তা দেওয়া।" একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, "পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে যে ভাবে মোদীজিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে পরিবেশ বিষিয়ে দিয়েছেন, তাতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।"
অথচ মোদীর তরফে সম্পর্কটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না বলেই জানিয়েছেন বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতা। বিজ্ঞান ভবনে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মোদী, মমতা দু'জনেই। সেখানে মমতার সঙ্গে নিজে গিয়ে কথা বলেন মোদী। ২০১২ সালে গুজরাত নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মমতাকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মোদী। অখিলেশ যাদব ও পঞ্জাবে প্রকাশ সিংহ বাদলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠালেও মোদীর শপথে কিন্তু কাউকে পাঠাননি মমতা। তার পরেও মোদী পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু মমতা আগ্রহী ছিলেন না। সেই কারণে মোদী পশ্চিমবঙ্গে গেলেও মমতার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। বৈঠক না করলেও মোদী কলকাতায় গিয়ে মমতার প্রশংসাই করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সিপিএম ৩৪ বছরে যে গর্ত তৈরি করেছে, তা বোজানো এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। গুজরাতে কংগ্রেসের তৈরি করা গর্ত ভরাট করতে তাঁর দশ বছর লেগেছে। মমতার আরও বেশি সময় দরকার। উত্তরপ্রদেশে গিয়েও তিনি বলেছিলেন, মুলায়ম-মায়াবতী যে কারণে কংগ্রেসকে সমর্থন করেন, সেই বাধ্যবাধকতা মমতার নেই। যদিও পরের দিকে নির্বাচনী প্রচারে মমতা সম্পর্কে অবস্থান বদল করেন মোদী। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, মমতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন না। জানার পর মত বদল হয়েছে।
মোদী এবং মমতার তরজা এ বারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এক অন্য রকম পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সিপিএম তিন বছরে যা পারেনি, মোদী তা-ই করতে পেরেছেন। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই বাধিয়ে সেটিকে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেন তিনি। এ বারের ভোটে মোদী পশ্চিমবঙ্গে মানুষের কাছে এই প্রত্যাশাও তৈরি করেছেন, তিনি সারদা কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করাবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মোদী বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে এ ব্যাপারে তদন্ত চালিয়ে সত্য উদ্ঘাটিত করবেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, মোদী সরকারের পক্ষে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তকে লঘু করে ফেলার সম্ভাবনা নেই। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল, যাতে এই তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে না করানো হয়। এখন মমতা কী করেন, সেটাই দেখার। মোদীর অনুরোধ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য যাই থাকুক, মমতা যেন বয়কটের রাজনীতির পথে না হেঁটে আলোচনার টেবিলে বসে কথা বলার রাজনীতির পথেই এগোন। মোদীর কথায়, "আশা করি, উন্নয়ন নিয়ে কোনও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা হবে না।"
No comments:
Post a Comment