Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Monday, April 15, 2013

জসীমউদ্‌দীনের সোজন বাদিয়ার ঘাট মনে পড়ে?পক্ষ প্রতিপক্ষ কোনো পক্ষই বাংলাদেশে ধর্মোন্মাদী জামাতি মৌলবাদের নিশানায় বিপর্যস্ত সংখ্যালঘূদের হয়ে একটি কথাও বলছেন না। সবচাইতে খারাপ অবস্থা বাংলার বহুজন সমাজের, যারা পক্ষ প্রতিপক্ষের রাজনীতিতে বিভক্ত এবং যাদের নিজস্ব কোনো পরিচিতি বা কন্ঠস্বরও নেই।ইদানিং তাঁরা আবার এর ভূতপূর্ব রিপাব্লিকান জামাতির নেতৃত্বে মোদীর প্রধানণমন্ত্রিত্বের জন্য যজ্ঞ মহাযক্ষ করা নেতৃত্বের অন্তর্গত বাংলায় বহুজনসমাজের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।করপোরেট রাজনীতির বখরা পেতে ধর্মান্ধ গুড়ের হাঁড়িতে মাছি ভন ভন করছে।স্বাগত বাংলা ১৪২০। পলাশ বিশ্বাস

 জসীমউদ্‌দীনের সোজন বাদিয়ার ঘাট  মনে পড়ে?

  1. সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নীরব সাম্প্রদায়িকতা - বাঁধ ভাঙার আওয়াজ

    ১. বাসে উঠলো এক নারী। মাথায় সিঁদুর দেখে সহজেই বোঝা যায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী। বাসে ওঠার পর হেল্পার হাক ছাড়লো, মহিলা সীট ছাড়েন, দিদিকে বসতে দেন। এই পর্যন্ত শুনলে মনে হবে এখানে সাম্প্রদায়িকতা কোথায়? সে তো খারাপ কিছু বলে নি। কিন্তু ভাষার ক্ষেত্রে শব্দের চেয়ে কথা বলার টোন এবং বডি...
  2. প্রসঙ্গঃ সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের বীজ ধর্মের ভেতরেই প্রথিত ...

    সকল জাতিগোষ্ঠী, দেশ, দেশের জনগনই নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দাবী করে। এমনকি পাকিস্তান, সৌদী আরব, ইজরাইলের মত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রও নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দাবী করে, ভারতও করে। অসাম্প্রদায়িক দাবী করে তাদের দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতার খবর লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু শাক কখনও দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।

পক্ষ প্রতিপক্ষ কোনো পক্ষই বাংলাদেশে ধর্মোন্মাদী জামাতি মৌলবাদের নিশানায় বিপর্যস্ত সংখ্যালঘূদের হয়ে একটি কথাও বলছেন না। সবচাইতে খারাপ অবস্থা বাংলার বহুজন সমাজের, যারা পক্ষ প্রতিপক্ষের রাজনীতিতে বিভক্ত এবং যাদের নিজস্ব কোনো পরিচিতি  বা কন্ঠস্বরও নেই।ইদানিং তাঁরা আবার এর ভূতপূর্ব রিপাব্লিকান জামাতির নেতৃত্বে মোদীর প্রধানণমন্ত্রিত্বের জন্য যজ্ঞ মহাযক্ষ করা নেতৃত্বের অন্তর্গত বাংলায় বহুজনসমাজের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।করপোরেট রাজনীতির বখরা পেতে  ধর্মান্ধ গুড়ের হাঁড়িতে মাছি ভন ভন করছেস্বাগত বাংলা  ১৪২০

পলাশ বিশ্বাস

নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের সিংপুর বাজার সংলগ্ন একটি পতিত জমিতে নববর্ষ পালন উপলক্ষে রবিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বাউল গানের আসরে হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৯জন। 

গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন - নূরু (২৫), দীন ইসলাম (২৪), মফিজ আলী (৬০), আকরাম হোসেন (৩৫), আলতু (৩২) ও রিয়াজুল ইসলাম (১৮)। বাকীদের প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। অভিযোগে পাওয়া গেছে, সিংপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম ও একই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন মৃধার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতে বাউল গান চলাকালে হারুন মৃধার চাচাত ভাই সারোয়ার মঞ্চে উঠে পড়লে আবুল হাশিমের পক্ষের ও আয়োজক কমিটির লোকজন তাকে জোর পূর্বক মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়। এ সময় সারোয়ারের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। রাত সাড়ে দশটার দিকে হারুন মৃধার পক্ষের লোকজন দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ মঞ্চ ঘেরাও করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এসময় গুলিতে ও হুড়োহুড়িতে অন্তত ২০ জন আহত হয়। মেলার কয়েকটি দোকানে লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশদল নিয়ে নিকলী থানার ওসি এ . কে. এম মাহবুবুল আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গতকাল সোমবার বিকাল ৬ টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে থানা সূত্রে জানা যায়।

স্বাগত বাংলা  ১৪২০।ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাঙালি জাতি সত্তার শপথ নিয়ে জেগে উঠেছে নূতন বাংলাদেশ।কিন্তু পরিবর্তনে উচ্ছসিত এই বঙ্গে ধর্মান্ধ জাতীয়তার পতাকা পতপত করে উড়ছে।দ্বিচারিতার ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ধর্ম।বালাদেশে ক্ষমতাদখলের রাজনীতির ফলে বিপন্ন এক কোটির বেশি সংখ্যালঘু মানুষের কথা ভাবছে না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ধর্মান্ধ রাজনৈতিক সমীকরণ মাথায় রেখেই।ঠিক যেমন সরকার গড়ার তাগিদে ধর্ম নিরপেক্ষতার সঙ্গে আপোস করা হবে না। নরেন্দ্র মোদী ইস্যুতে বিজেপিকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। দিল্লিতে জনতা দল ইউনাইটেডের জাতীয় পরিষদের বৈঠক শেষে আজ বক্তব্য রাখেন তিনি।অথচ রামন্দির আন্দোলন নূতন করে শুরু করার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করছেন না ধর্মনিরপেক্ষতার সিপাহসালাররা।উপরন্তু নীতীশ কুমারের এই বিদ্রোহের ফলে আবার লালকৃষ্ণ আডবাণীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ে ফিরে আসা সম্ভব হল, যিনি বলেই দিয়েছেন যে রাম মন্দির আন্দোলন বা বাবরি বিধ্বংস নিয়ে অনুশোচনার প্রশ্নই ওঠে না, ইহা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।নীতীশ কুমার বা ধর্নিরপেক্ষ ব্রিগেডের আডয়ানীর প্রধানমন্ত্রিত্বে কোনো আপত্তি নেই।প্রসঙ্গতঃ উল্লেখনীয় বাবরি বিধ্বংস মামলায় আডয়ানী প্রধান অভিযুক্ত এবং গুজরাত গণসংহার যে রামমন্দির আন্দোলনেরই পরিণতি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এই বাংলার বুকে নরেন্দ্র মোদী দিদির হয়ে বক্তৃতা করে গেলেন, অথচ ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম পরিধানে মুসলমনদের উদ্ধারে ব্যস্ত আমাদের অতি প্রিয় দিদি রামমন্দির আন্দোলনের বিরুদ্ধে বা নরেন্দ্র মোদী বা আডয়ানী বা বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধীদের, রজাকরদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না। বামপন্থীরা সমান ধর্মনিরপেক্ষ।সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে।পক্ষ প্রতিপক্ষ কোনো পক্ষই বাংলাদেশে ধর্মোন্মাদী জামাতি মৌলবাদের নিশানায় বিপর্যস্ত সংখ্যালঘূদের হয়ে একটি কথাও বলছেন না। সবচাইতে খারাপ অবস্থা বাংলার বহুজন সমাজের, যারা পক্ষ প্রতিপক্ষের রাজনীতিতে বিভক্ত এবং যাদের নিজস্ব কোনো পরিচিতি  বা কন্ঠস্বরও নেই।ইদানিং তাঁরা আবার এর ভূতপূর্ব রিপাব্লিকান জামাতির নেতৃত্বে মোদীর প্রধানণমন্ত্রিত্বের জন্য যজ্ঞ মহাযক্ষ করা নেতৃত্বের অন্তর্গত বাংলায় বহুজনসমাজের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।করপোরেট রাজনীতির বখরা পেতে  ধর্মান্ধ গুড়ের হাঁড়িতে মাছি ভন ভন করছে

আজ রোববার বাংলা নববর্ষে সারা দেশে তিন মিনিট 'সম্প্রীতি বন্ধন'-এর ডাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পাঁচটা ৩৩ মিনিট পর্যন্ত তিন মিনিট যে যেখানে থাকুন, পাশের মানুষের হাত ধরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে মঞ্চ।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সব অপশক্তির বিরুদ্ধে সারা দেশে জ্বালানো হবে মঙ্গলপ্রদীপ। গণজাগরণ মঞ্চ এ কর্মসূচির নাম দিয়েছে 'আলোকের এই ঝর্নাধারায়'।

 মোমবাতি জ্বালিয়েও এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া যাবে। 

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে সাংবাদিকদের কাছে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে নারী, পুরুষ, শিশু সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

নববর্ষের দিন আজ সকাল ছয়টায় গণজাগরণ মঞ্চ রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দেবে। পরে সকাল নয়টায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবে তারা। বিকেল চারটার দিকে শুরু হবে মঞ্চের মূল অনুষ্ঠান। 

ফটিকছড়িতে তাণ্ডবের ঘটনায় নিহত তিনজনকে 'শহীদ' আখ্যায়িত করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, 'শহীদদের কসম খেয়ে বলছি, এ আন্দোলন আরও বেগবান হবে। আরও তীব্রভাবে আন্দোলন সবখানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।' 

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ফটিকছড়ির ঘটনায় আবার প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াত-শিবির চক্র কতটা ভয়ংকর। তারা মসজিদ ও মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। হরতালবিরোধী মিছিলের ওপর হামলা চালিয়েছে। একাত্তরের মতোই তারা এ বর্বরতায় নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের যে দাবি তোলা হচ্ছে, তার যৌক্তিকতা আবার প্রমাণিত হলো।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কোনো অন্যায় দাবির কাছে শেখ হাসিনা মাথানত করবেন না। 

ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান খান, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাসদের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মীর আক্তার হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুকুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহকারে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।


উনিশের চৌকাঠ টপকিয়ে আজ বাংলা চোদ্দশ সাল কুড়ির দোরগোড়া ছুঁল। সদ্য তারুণ্যের উচ্ছলতায় ভরপুর ১৪২০। গত বছরের জীর্ণ-পুরাতনকে ভাসিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার বার্তা নিয়ে এল বছরের প্রথম দিন। পয়লা বৈশাখ। 

এমনিতে বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডারের অস্তিত্ব হাতে গোনা কয়েকটা দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার মধ্যে বছরের প্রথম দিন মানে পয়লা বৈশাখ এখনও কিন্তু বেশ রসে বসেই বিরাজ করছে। 

শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে বছরের প্রথম দিনটার ক্রেজ যে শুধুই উর্দ্ধগামী গড়িয়াহাট আর হাতিবাগানের চৈত্র সেলের মার্কেটে গোঁতাগুঁতি ভিড় তারই জানান দেয়। নিয়ম করে বছরের প্রথম দিনটায় নতুন পোষাকে কারও কার্পণ্য নেই। বহাল তবিয়তে বজায় আছে হালখাতার খাওয়া দাওয়া। দোকানে দোকানে লক্ষ্মী-গণেশ পুজো। 
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পদ্ধতিতাটা কিঞ্চিৎ বদলিয়ে এসএমএস আর ফেসবুকে মুখাপেক্ষী। তবে মাছ আর সবজি বাজারে আগুন দামের ছোঁয়ায় হাত পুড়িয়ে আজ বাঙালি হেঁসেলে কিন্তু ভুরিভোজের আয়োজন। হেঁসেল যদি ক্লান্ত হয়, কুছ পরোয়া নেহি। রেস্তোরাঁ গুলো আজকের জন্য পুরো বাঙালি। কলকাতার এদিক ওদিক সেদিকের সব রেস্তোরাঁ একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঙালি খাবারের পসোরা সাজিয়েছে। 

পয়লা বৈশাখ মানে কিন্তু শুধু খাওয়া দাওয়া আর নতুন পোষাক নয়। নতুন বইও। নতুন গানও পিছিয়ে থাকে না। 

১৪১৯-এর শেষ ভাগ টুকু বড়বেশি অশান্তির ঝড় তুলেছিল বাঙালির জীবনে। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে। সব অশুভকে দূরে সরিয়ে নতুন বছর সবার খুব ভাল কাটুক। শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা। সবার জন্য। 


রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের শেষ।  এই স্লোগ্নানকে সামনে রেখে নতুন বছরকে বরণ করে নিল বাংলাদেশ। রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ তৈরির ডাক দিলেন দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় পা মেলালেন আট থেকে আশি সকলেই। 

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। নতুন বছরের সকালে দলমত নির্বিশেষে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ছিল এই দাবি। প্রতিবারের মতোই  সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল অনুষ্ঠানটি শুরু রাজধানীর রমনা বটমূলে। ছায়ানটের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠান হাজির হয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ছাপিয়ে উঠল সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিরোধের আহ্বান। 
 
বর্ষবরণের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামিল হলেন লক্ষ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে হোটেল রূপসী হয়ে ফের চারুকলাতেই শেষ হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় নজর কাড়ে প্রতিবাদী স্লোগানের ফেস্টুন, কারো হাতে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকা।শোভাযাত্রায় একেবারে সামনে ছিল যুদ্ধপরাধীদের প্রতীক বিশালকায় এক দানব। ভিনদেশী দানবদের দেশছাড়া করার আওয়াজ উঠল শোভাযাত্রা থেকে।


শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের সঙ্গেই পা মেলান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, চারুকলা  ডিন সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। শোভাযাত্রা ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিস।


দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে সশস্ত্র বাহিনী তাদের শপথ অনুযায়ী কাজ করবে। কোনো ধরনের অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডকে তারা প্রশ্রয় দেবে না। আজ সোমবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে এ কথা বলেছেন তিন বাহিনীর প্রধানেরা। 
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা-পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বগুড়ায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংবিধান সমুন্নত রাখার পক্ষে মত দেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা। 
সংসদ ভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনী-প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনী-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব, বিমানবাহিনী-প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবিধান ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখেই আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। 
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ বগুড়ার এক জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছিলেন, দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে সেনাবাহিনী বসে থাকবে না। 
বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বগুড়ায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা উসকানিমূলক। তিনি সংবিধান-পরিপন্থী কাজ করেছেন। এ সময় কমিটির অন্য সদস্যরাও খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করেন। 
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানান কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, 'শাহবাগের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া থেকে হেফাজতে ইসলামের সৃষ্টি হয়েছে। জাগরণ মঞ্চের কথামতো পতাকা উঠেছে, স্কুল-কলেজ চলেছে। যেন তারা পাল্টা সরকারব্যবস্থা তৈরি করেছে। এসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক হতে পারে না। তাদের সঙ্গে নাস্তিক ব্লগাররা যোগ দিয়েছে।' 
তবে এরশাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে কমিটির অন্য সদস্যরা দ্বিমত পোষণ করেন। এরশাদের বক্তব্যের জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, 'ইসলামের হেফাজত করেন স্বয়ং আল্লাহ। কোনো মানুষ ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না। তাদের এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? ইসলাম নিয়ে যদি কেউ বিচলিত হন, তবে ধরে নিতে হবে তার ইমানের শক্তি দুর্বল।'
এ বিষয়ে ইদ্রিস আলী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, 'কমিটি বলেছে, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে, সেটা "আমার দেশ" পত্রিকা করেছে। তারা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। সারা দেশের ব্লগারের সংখ্যা তো হাতেগোনা। এদের মধ্যে সবাই তো আর নাস্তিক নয়। সুতরাং ঢালাওভাবে শাহবাগ আন্দোলন বা ব্লগারদের দোষ দেওয়াটা অন্যায়।'
এ সময় কমিটির সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে খাবার ও পানি সরবরাহের কারণ জানতে চান। এর ব্যাখ্যায় এরশাদ কমিটিকে বলেন, 'ওরা তো জামায়াত না। মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওদের পানি আর খাবার সরবরাহ করেছি। তা ছাড়া, আমিও তো একটা দল করি। জনমত সৃষ্টির জন্য আমাকে কাজটি করতে হয়েছে। আমি না করলে অন্য কেউ তো সেই সুযোগ নিয়ে ফেলত। সুতরাং, আমি পানি সরবরাহ করে কোনো ক্ষতি করিনি।' তিনি আরও বলেন, 'আমি সরকারের সঙ্গে আছি, সরকারের সঙ্গে থাকব।' 
সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, বৈঠকে সরকার উত্খাতের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত পলাতক ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য এইচ এম এরশাদ, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মঞ্জুর কাদের কোরাইশী এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি এম এ মান্নান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।



প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'বাংলাদেশ হবে রাজাকার, আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা অর্জন করবে। যেটা আমাদের নবী করিম (সা.) তাঁর মদিনা সনদ ও বিদায় হজে বলে গেছেন, ঠিক সেভাবেই এ দেশ চলবে।'
গতকাল শনিবার গণভবনে দলের পাবনা জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা উপস্থাপনের এক দিন পর প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'অনেকে নির্বাচন কীভাবে হবে, তার ফর্মুলা দিচ্ছেন। হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। ওটা চলে গেছে। আমরা সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় গণতন্ত্র সুসংহত করেছি। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখানে আছে, সেখানে নির্বাচন কীভাবে হয়? এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, যাতে কেউ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে না পারে।'
বিরোধী দলের আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'উনি মনে করেন, কয়েকটা লাশ ফেললে আর্মি এসে উনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এত মানুষের প্রাণ নেওয়ার পরিকল্পনা কেন? ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের আগে নিরাপত্তা ছাড়াই বিরোধীদলীয় নেত্রী তাঁর সেনানিবাসের বাসা থেকে বেরিয়ে যান। উনি যেটা ঘটাতে চেয়েছিলেন, আমরা সেটা ঠেকিয়েছি। তবে, আমরা অনেক মেধাবী অফিসারদের হারিয়েছি।'
২০০১ সালে বিএনপি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'সেবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান লতিফুর রহমানের বাসায় বৈঠক হয়। আমার সঙ্গে ছিলেন জিল্লুর রহমান সাহেব। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন মান্নান ভূঁইয়া সাহেব। আমেরিকার পক্ষে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। আমি চলে এলাম। উনি থেকে গেলেন। মুচলেকা দিয়ে আসলেন।'
মানুষের বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা নয়। হরতাল দিয়ে মানুষ মারার অধিকার কে দিয়েছে?' তিনি আরও বলেন, 'মানুষেরও তো সহ্যের সীমা আছে? যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আপনারা মানুষ হত্যা করবেন, আর আমরা বসে থাকব? এখন যদি বিরোধীদলীয় নেতাদের বাড়ি-গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, তাহলে কোথায় যাবেন?' ফটিকছড়িতে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে হরতালবিরোধী মিছিলে হামলার সমালোচনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, হেফাজতে ইসলাম মহাসমাবেশ শেষে ঢাকায় অবস্থান না করায় খালেদা জিয়া খুশি হতে পারেননি। হেফাজতকে পানি-খাবার সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছেন তিনি। হেফাজত কেন ঢাকায় অবস্থান করে তাঁকে ক্ষমতায় বসাল না। নাখোশ হয়ে তিনি দলীয় নেতাদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের যেসব দাবি মেনে নেওয়ার মতো, তা মানা হবে। তবে ধর্মের নামে ধর্মের অপব্যবহার সহ্য করা হবে না। কোনো ধর্মকে হেয় করা বা নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কোনো ধরনের কটূক্তি বরদাশত করা হবে না।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ।


বঙ্গাব্দ ১৪১৯ সনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সারা দেশে চলছে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। চট্টগ্রাম শ�

বঙ্গাব্দ ১৪১৯ সনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সারা দেশে চলছে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। চট্টগ্রাম শহরের সিআরবি এলাকার শিরীষতলায় গতকাল বিকেলে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা

ছবি: প্রথম আলো

কায়মনে বাঙালি হওয়ার প্রেরণা নিয়ে আবার এল বৈশাখ। তবে এবার এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ। সাম্প্রদায়িকতা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মুখে বাঙালির সব কৃতি, গৌরব নিয়েও কেমন যেন উৎকণ্ঠা চলছে। তবে এসব ছাপিয়েই আজ রোববার উৎসবের রঙে সাজবে বাংলাদেশ। স্বাগত জানাবে ১৪২০ বঙ্গাব্দকে। 
আপন জাতিসত্তার গৌরব ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের চেতনা নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে প্রবাসী বাঙালিরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করবেন আজ।
ঢাকায় বৈশাখী উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকাল নয়টায়। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান প্রতীক বিশাল আকারের একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসেবে মিছিলে বহন করা হবে এ মুষ্টিবদ্ধ হাত। ঐক্য ও সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে থাকবে যশোর অঞ্চলের শোলার পাখির আদলে তৈরি করা যুগল পাখি। বিদ্রোহী ষাঁড়ের প্রতিকৃতি থাকবে বাঙালির আপসহীন সংগ্রামের রূপক হিসেবে। 



এ ছাড়া সম্প্রতি প্রয়াত শিল্পী মরণ চাঁদ পালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শোভাযাত্রায় রাখা হবে পোড়ামাটির রিকশার আদলে তৈরি একটি কাঠামো। আর কয়েক হাজার ত্রিমাত্রিক মুখোশ, পাখি, ফুল এসব তো থাকবেই। চারুকলার আয়োজন অবশ্য গতকাল সন্ধ্যা থেকেই বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির গানের আসরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অভাবিত উন্নতির এই সময়ে বিশ্ব এখন বাস্তবিকই এক অভিন্ন গ্রাম। প্রতিনিয়তই রূপান্তর ঘটছে সংস্কৃতির। তা সত্ত্বেও হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গর্বে গরীয়ান বাঙালি আপন কৃষ্টির শিকড়কে আঁকড়ে ধরে বিশ্বসভায় মিলিত হতে সচেষ্ট। সেই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিকা অনুসরণ করতে হয়। তবে বাঙালি তার নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকে একেবারে বিসর্জন দেয়নি। নানা ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে নিজেদের বর্ষপঞ্জি। বিশেষ করে নববর্ষকে রূপায়িত করে তুলেছে জাতির জীবনের প্রধানতম সর্বজনীন উৎসব হিসেবে। নানা কারণে ধূমায়মান হয়ে ওঠা ভেদবুদ্ধি ঘুচিয়ে, নতুন বছরের নব প্রভাতের আলো অন্তরে জাগিয়ে তুলবে মহামিলনের আকুলতা। নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। 
প্রতিবারের মতোই রাজধানী ঢাকা আজ পরিণত হবে উৎসবের নগরে। লাল-সাদা নকশার পরিধেয় পাবে প্রাধান্য। নারীর কবরীতে থাকবে তাজা ফুলের মালা, হাতে বেলোয়ারি কাচের চুড়ি। ক্লান্ত শিশুটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাবা রঙিন কাগজের চরকি, ঢোকাল, পাখি অথবা টুমটুমি গাড়ি কিংবা নারকেল মালার ছোট্ট একতারা কিনবেন। ঢোল-ঢাগরার বাদ্য, বাঁশির প্যাঁ-পুঁ, অগণিত কণ্ঠস্বর আর গানের সুরের কলরোলে এক মহা আনন্দের ঐকতান ভেসে যাবে বৈশাখী দমকা হাওয়ায়।
নগরজুড়ে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন থাকবে অজস্র। নগরজীবনে বৈশাখবরণের সূচনা করেছিল ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট, রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে। এবারও তারা সেই প্রভাতি অনুষ্ঠান করবে ওই প্রাচীন মহিরুহের ছায়াচ্ছন্ন তলায়। সকাল ছয়টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রবাদন দিয়ে শুরু হবে তাদের পরিবেশনা। 
এ ছাড়া সংগীত সংগঠন সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে ভোর সাড়ে পাঁচটায় হাজার কণ্ঠের গান দিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে। সুরের ধারার এ আয়োজন অবশ্য গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে। গতকাল ছিল বর্ষশেষ উপলক্ষে সংগীতানুষ্ঠান। এ ছাড়া সকালে শিশু একাডেমীর সামনের নারকেল বীথি চত্বরে গানের অনুষ্ঠান করবে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। ধানমন্ডি লেকের পাশে সকাল থেকেই শুরু হবে ইউডার (ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ) বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। 
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উৎসব হবে বিকেল সাড়ে চারটায় রবীন্দ্রসরোবর চত্বরে। বাংলা একাডেমী মাঠে সকাল থেকেই শুরু হবে বিসিকের ডিজাইন সেন্টারের আয়োজনে সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্য নিয়ে বৈশাখী মেলা।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল ও প্রথম আলোর আয়োজনে গতকাল রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আঁকা হয় 'বৈশাখী আলপনা'। 
আজকের বৈশাখী উৎসবের প্রধান কেন্দ্র রমনা-শাহবাগ-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। মনে রাখতে হবে, মহানগর পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হলেও রমনা উদ্যান ছাড়াতে হবে বিকেল পাঁচটার মধ্যে আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ফিরতে হবে সাতটার মধ্যেই। 
বাণী: বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক বাণীতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, 'অমিত সম্ভাবনা নিয়ে সমাগত নতুন দিনটি জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বের সব বাঙালিকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, 'পয়লা বৈশাখে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা আমাদের জাতিসত্তাকে আরও বিকশিত করবে এবং সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও সব অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শক্তি জোগাবে।'


বাঙালির পোয়া বারো, ঠিক হালখাতার সময়ে সোনার দাম কমল বৈশাখের পয়লায় তিন স্বস্তি৷ একই দিনে দাম কমল সোনা এবং পেট্রোলের৷ পাশাপাশি, ৩ বছরের রেকর্ড ভাঙল নিম্নগামী মূদ্রাস্ফীতির হার৷



বিয়ের মরসুমের আগে সুখবর৷ গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফের কমল সোনার দাম৷ ১২ এপ্রিল কলকাতায় ১০ গ্রাম গয়নার সোনার দাম ছিল ২৯,৮০০ টাকা৷ পরের দিন তা কমে দাঁড়ায় ২৮,২০০ টাকা৷ সোমবার অর্থাত্‍ নববর্ষের দিন আরও ৪৫০ টাকা কমে ১০ গ্রাম সোনার দাম হয় ২৭,৭৫০ টাকা৷ 
কিন্তু হঠাত্ কেন নিম্নমুখী সোনালি স্বপ্নের বাজার দর? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারের সোনার দাম কমা ও আগাম লেনদেনের প্রভাবেই দাম পড়ছে৷ 
সোনা আমদানি করতে খরচ হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা৷ কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, সোনার আমদানি কমুক৷ সেই লক্ষ্যেই সোনার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করার কথা বাজেটে ঘোষণা করেন চিদম্বরম৷ পাশাপাশি, ঘোষণা করেন, ৫০ হাজার টাকার বেশি মূল্যের সোনায় গয়না কিনতে হলে প্যান কার্ড দেখাতেই হবে৷ 
বিশেষজ্ঞদের মত, এই সব পদক্ষেপের জেরে দেশীয় বাজারে সোনার চাহিদা কমেছে৷ তা দখে আগাম লেনদেনের বাজারে অনেকেই আর সোনায় লগ্নি করার ঝুঁকি নিচ্ছেন না৷ এর জেরেই দাম কমছে৷ 
কেন্দ্র মনে করছে, তাদের নেওয়া পদক্ষেপের জেরে সোনার আমদানি কমবে, ফলে চাহিদাও কমবে৷ হলুদ ধাতুর আমদানি কমলে বিদেশি মুদ্রার খরচ কমবে৷ এর জেরে, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট বা আমদানি আর রফতানির ফারাকটাও কমবে৷ তাতে চাঙ্গা হবে হবে অর্থনীতি৷ 
এদিকে, মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দিয়ে লিটার প্রতি ১ টাকা দাম কমল পেট্রোলের৷ সোমবার মাঝরাত থেকে কলকাতায় পেট্রোলের দাম দাঁড়াল লিটার প্রতি ৭৩ টাকা ৪৮ পয়সা৷ অন্যদিকে, সবজির দাম কমায় কমল মুদ্রাস্ফীতির হার৷ মার্চ মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে দাঁড়াল ৫.৯৬ শতাংশে৷ যা গত ৩ বছরে সর্বনিম্ন৷


অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়
আসিফুর রহমান সাগর
অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বানের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করলো বাংলা নববর্ষ। ১৪২০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উত্সবে মেতে উঠেছিল সারা দেশ। গত রবিবার ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়ে যায়। দেশ জুড়ে মানবতা বিরোধীদের অপতত্পরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতায় পুরো জাতি হাঁপিয়ে উঠেছিল। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সমস্ত গ্লানি ধুয়ে-মুছে অগ্নিস্নানে শুদ্ধ করার বারতা নিয়ে এসেছে বৈশাখ। সারাদিন ধরে নানা আনন্দ আয়োজনে অংশ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিলেন শুভবুদ্ধির অগণিত মানুষ।

জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় দিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতেছিল সবাই। প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয়ে। গানে, কবিতায়, নৃত্যে, শোভাযাত্রায় সবার জন্য মঙ্গল প্রত্যাশা করলেন দেশের মানুষ। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথাই ফুটে উঠেছিল সার্থকভাবে।

অশুভ শক্তির রক্তচক্ষু, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেড়াজাল ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি উত্সবমুখর বাঙালিকে। তারা এসেছেন দলে দলে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মত মানুষের স্রোত আছড়ে পড়েছিল রমনা বটমূলের ছায়ানটের অনুষ্ঠানে। মানুষ ছড়িয়ে পড়েছিল শাহবাগ, রমনা, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, বনানী, গুলশান, উত্তরা, মিরপুরসহ আশেপাশের অনুষ্ঠান স্থলগুলোতে। চড়া রোদ উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে লাখ লাখ মানুষ মিলেছে এই প্রাণের উত্সবে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে- মানুষের সে াত কেবলই বেড়েছে। সবার চোখে ছিল বাংলা মায়ের প্রতি ভালোবাসার ছবি, কণ্ঠে ছিল অশুভ শক্তি বিনাশী গান।

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ঢাকার রাজপথে বসেছিল প্রাণের মেলা। প্রত্যুষে বৈশাখী উত্সব ও বর্ষবরণকে উপলক্ষ করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে লাখো নর-নারী-শিশু। সোনারগাঁও হোটেল থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে চানখাঁরপুল, সায়েন্স ল্যাব থেকে মত্স্য ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পথে পথে, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভেসে গিয়েছিল বাঙালির প্রাণের জোয়ারে। বেইলি রোড এলাকা, বারিধারা, গুলশান, উত্তরাতেও ছিল খণ্ড খণ্ড অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন। এসব মেলায় চলেছে কেনাকাটা ও পান্তা খাওয়ার ধুম। চিরকালের বাঙালি এখন শহরবাসী হয়েও ভুলে যায়নি তাদের ঐতিহ্য। মেয়েরা এসেছে খোঁপায় ফুল আর ঐতিহ্যবাহী লাল-পেড়ে সাদা শাড়ি পরে। ছেলেরাও পাঞ্জাবি, ফতুয়া, লোকজ মোটিফের টি-শার্ট পরে বৈশাখী আমেজে সেজেছে। শিশুরাও কম যায়নি। টুকটুকে ঠোঁটে, পায়ে আলতা মেখে শাড়ি পরে বা পাঞ্জাবিতে তারাও মেতে ওঠে বৈশাখী আনন্দে। মনের রংয়ের সঙ্গে শরীরকে রাঙিয়ে তুলতে শহর জুড়ে ব্যস্ত ছিল চারুকলার শিক্ষার্থীরা। রং-তুলির আলতো পরশে তারা গালে এঁকে দিয়েছে আলপনা।

ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রমনার বটমূলে যথারীতি ছিল ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুরমূর্ছনায় শুরু হয় আয়োজন। পার্শ্ববর্তী শিশুপার্কের নারিকেল বীথিতে ছিল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর বিভিন্ন পার্কে ছিল বৈশাখের প্রভাতী অনুষ্ঠানের অসংখ্য আয়োজন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার আয়োজনে হাজার শিল্পী একসঙ্গে গেয়ে উঠেছিলেন গান। বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশিরাও। এদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, হল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা।

বৈশাখ বরণের আয়োজন সন্ধ্যার পরেও ছিল জমজমাট। চারুকলা ইন্সটিটিউট ছাড়াও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন লাখো মানুষ। পুরো নগরীতে উত্সবের আমেজ ছড়িয়ে পড়লে নগরী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ যানজট। অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে মাইলের পর মাইল মানুষকে পায়ে হেঁটে ঘরে পৌঁছাতে হয়েছে।

বৈশাখ বরণের একটা বড় আকর্ষণ ছিল রাস্তার ওপরে নানা হস্তশিল্পের মেলা। মাটির তৈরি নানা জিনিস, কাঠের খেলনা ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন অসংখ্য বিক্রেতা। বাংলামোটর মোড় থেকে দক্ষিণে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে দিনভর চলে বেচাকেনা। বর্ষবরণের সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা আনন্দ আয়োজনের পাশাপাশি ছিল পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

রক্ত লোলুপ দানবের ঠোঁটের ফাঁকে বেরিয়ে এসেছে দাঁত, মাথায় রক্তলাল শিং; বিশালাকার কালো সেই দানবের হাতও রক্তাক্ত। বুকে অপশক্তির পরিচয় চিহ্ন। তার পেছনেই বিশালাকার এক সরীসৃপ। ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ থেকে ছুঁড়ছে আগুন। ষাট ফুট লম্বা দেহটা চলছে এঁকেবেঁকে। স্বাধীন বাংলার সবকিছু যেন সে নষ্ট করে দিতে চায়। বাঙালির রক্তপিপাসু এসব দানবকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই 'মঙ্গল শোভাযাত্রায়' বাঙালি বরণ করেছে বাংলা ১৪২০ সনকে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম ছিল 'রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ'।

প্রতিবারের মতো এবারো পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে শোভাযাত্রায় যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। কারো হাতে বাঘের মুখোশ, কারো হাতে হাতপাখা, কেউবা নিয়েছেন একতারা-দোতারা। বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাক-ঢোল আর বাঁশি বাজিয়ে এগিয়ে চলে রাজপথ ধরে। হাতির পিঠে তীরধনুক নিয়ে সওয়ার যোদ্ধা, শোলার পাখি, রিকশায় সওয়ার টেপা পুতুল, রোষে উন্মত্ত ষাঁড়, বিশালদেহী 'রাজাকার' আর শান্তির পায়রার প্রতীক নিয়ে বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রায় যোগ দেন আবালবৃদ্ধবনিতা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য সহিদ আখতার হুসাইন, চারকলা অনুষদের ডিন সৈয়দ আবুল বারক আলভি, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া অংশ নেন এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রার নিরাপত্তা দিতে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন। চারুকলা থেকে শুরু হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা গিয়ে আবার ফিরতি পথে টিএসসি হয়ে চারুকলায় এসে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা।

মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম আয়োজক সুমন বৈদ্য বলেন, তরুণ প্রজন্মসহ সবার দাবি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ। সেই দাবিকেই শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রূপকের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমরা বাঙালির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।

হাজার কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ 

গানে গানে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে সুরের ধারা ও চ্যানেল আই। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবার ভোর থেকে সুরের ধারার হাজারো শিল্পীর কণ্ঠে ছিল বৈশাখের আবাহনী গান। ভোরে সেতার ও সরোদ বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনের ফাঁকে ছিল একক সঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশনা। বৈশাখী কথনে অংশ নেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও সুরের ধারার সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম, লালন কন্যা ফরিদা পারভীন, সৈয়দ আবদুল হাদী, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, চন্দনা মজুমদার, কুমার বিশ্বজিত্, আইয়ুব বাচ্চু, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, লিলি ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পী। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাহিদুর কবির লিটন, রেবা সরকার, জহির আলীম, অনিমা মুক্তি, এনামুল হক, লীনা তাপসী, ছায়া কর্মকার, ইয়াকুব আলী, শিমু দে, অভিক দেব, আদৃতা আনোয়ার, হিমাদ্রী শেখর, স্বপন বিশ্বাস, রোকাইয়া হাসিনা, শাহনাজ নাসরীন, আজিজুর রহমান, সরওয়ার হোসেন. সুমাইয়া ইমাম, ফাহিম হোসেন, কৃষ্ণ আচার্য্য, মফিজুর রহমান, স্বাতী সরকার, প্রান্তিকা সরকার প্রমুখ।

বাংলা একাডেমীঃ নববর্ষ বক্তৃতা ও লোকজ মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমী। নজরুল মঞ্চে একাডেমীর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় 'এসো হে বৈশাখ' এবং 'তোরা সব জয়ধ্বনি কর' গানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। নববর্ষ বক্তৃতা প্রদান করেন ড. করুনাময় গোস্বামী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান। সাংস্কৃতিক পর্বে নৃত্যগীত পরিবেশন করে শিশু একাডেমী এবং পল্লবী ডান্স সেন্টার। গাজী আবদুল হাকিম বাঁশি এবং দশরথ দাশ দেশি ঢোল বাজিয়ে শোনান। রবীন্দ্র মঞ্চে ছিল ওসমান গণি ও তার দলের ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা।

এদিকে, নববর্ষ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে হরাসকৃত মূল্যে একাডেমী প্রকাশিত বইয়ের আড়ং। বিসিক ও বাংলা একাডেমীর যৌথ আয়োজনে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।

শিল্পকলা একাডেমীঃ 'বত্সরের আবর্জনা দহূর হয়ে যাক, এসো হে বৈশাখ' স্লোগান নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমী। একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিত্ কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সাংস্কৃতিক পর্বে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে রনতা শিল্পী গোষ্ঠী, পঞ্চভাস্বর ও শিল্পকলা একাডেমী। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমীর নৃত্য রেপাটরি গ্রুপ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন খান, ঝর্ণা সরকার, আহকামউল্লাহ ও মাহিদুল ইসলাম। একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুজিত মোস্তফা, ফারহানা আক্তার, সুমন চৌধুরী, সালমা আকবর, ইলোরা আহমেদ, রোকেয়া আক্তার, মলিনা, তিমির রায়, জমশের আলী দেওয়ান, প্রশান্ত শিকদার, অনিমা মুক্তি গোমেজ প্রমুখ। 

জাতীয় জাদুঘরঃ জাতীয় জাদুঘর এবং 'প্রত্যয় ও প্রতিপালক'র যৌথ উদ্যোগে জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে লোক সঙ্গীতানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত বাউল শিল্পীরা। দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় 'প্রত্যয় প্রতিপালক ও লোকনাট্য দল (বনানী)'। 

ঋষিজ শিল্প গোষ্ঠীঃ শিশুপার্কের প্রবেশ দ্বার সংলগ্ন নারকেল বিথী চত্বরে ঋষিজের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন। একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে ফকির আলমগীর।

এছাড়া, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে লোকজ সঙ্গীত আসরের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এখানে পরিবেশিত গান, নাচ ও পুঁথিপাঠ।

এদিকে, রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উড়ানো হয়েছে রং-বেরংয়ের বেলুন। পালকিতে চড়েছেন বর-কনে। হাতে হাতে ছিল 'এসো হে বৈশাখ' লেখা সম্বলিত বরণডালা। প্রশাসক নজরুল ইসলামসহ সংস্থার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

ক্লাব সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য নববর্ষের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটেও ছিল বর্ণিল আয়োজন। এই আয়োজনে সদস্যরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাগর বাউল, সুমি শবনম, ক্লোজআপ তারকা রাফাতসহ অনেকে। আয়োজনের এক পর্যায়ে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি শাহেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও উদযাপন কমিটির আহবায়ক ইলিয়াস হোসেন। 

বাংলালিংক—ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, যশোর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা এবং সিলেটে একযোগে উত্সবের আয়োজন করে। দুপুর থেকে রাত অবধি কনসার্টের আয়োজন করে ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সরগম ললিতকলা একাডেমী, শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে।

রূপসী বাংলা, হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সি, সারিনা, পূর্বাণী, গ্রান্ড আজাদ, সুন্দরবন, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, খাজানা রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন অভিজাত হোটেল, ক্লাব ও রেস্তোরাঁতেও ছিল পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজন।

সরকার বুঝতে পারছে না পরিণতি কি ভয়াবহ হবে :খালেদা জিয়া
ইত্তেফাক রিপোর্ট
দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পরিবারকে হয়রানি না করার জন্য সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এই সরকার পাগল হয়ে গেছে। তারা বুঝতে পারছে না এর পরিণতি কি ভয়াবহ হবে।

গত রবিবার রাতে গুলশানে মাহমুদুর রহমানের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়া কথা বলেন। রাত ৮টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ওই বাসায় অবস্থান করেন তিনি।

মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে আমার দেশ পত্রিকা কিভাবে চলছে, নতুন করে তার বৃদ্ধা মা মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে কি ধরনের সাজানো মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এসব জানতে চান খালেদা জিয়া। 

এ সময় মাহমুদুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাহমুদুর রহমানের মায়ের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্টে এ ধরনের মামলা হতে পারে না। কারণ পত্রিকার ডিক্লারেশন দেয়ার সময় প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী পত্রিকা কোথায় ছাপানো হবে তার অনুমতি দেয়া হয়; কিন্তু ওই প্রেসে কোনো সমস্যা হলে চলমান পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্য ছাপাখানায় ছাপানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হয়। আমার দেশ পত্রিকার পক্ষ থেকেও জেলা প্রশাসককে সময় মতো অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তাদের আবেদন গ্রহণ করেছে। সব কিছু শুনে খালেদা জিয়া বলেন, এ ক্ষেত্রে মাহমুদুর রহমানের মায়ের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তা হতে পারে না। এ ধরনের মামলা জাতির জন্য কলঙ্কজনক। 

এসময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মাহমুদুর রহমানের মা মাহমুদা বেগম, স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদ, বড় বোন আফরোজা খান রিতা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল আমার দেশ কার্যালয় থেকে পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ওই দিনই আদালতে হাজির করে তাকে তিনটি মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তিনি বর্তমানে ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। 

নেতাকর্মীদের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন 

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ সারাদিন পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাটিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তার দিনের প্রথম প্রহর কাটে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে আসেন তার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। তাদের সঙ্গে বৈশাখ উদযাপন করেন তিনি।

সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও মহিলা দল কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন খালেদা জিয়া। সংগীত শিল্পী বেবি নাজনীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে 'মা' বলে সম্বোধন করেন খালেদা জিয়াকে। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য ও গান পরিবেশন করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা। এছাড়া লাঠিখেলার মতো কিছু লোকজ অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন খালেদা জিয়া।

বরিশালে ব্যাপক আয়োজনে বর্ষবরণ
বরিশাল অফিস
রাখি বন্ধন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এখানে বাংলা বর্ষবরণ করা হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় বিএম স্কুল মাঠে প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়। উদীচীর শিল্পীরা এসো হে বৈশাখ এসো এসো... গানটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়। সকাল ৮টায় রাখি বন্ধন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হয়। এরপর চারুকলা বিদ্যালয়ের আয়োজনে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হারুনুর রশিদ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মিলিত হবার পর সংগঠনগুলো নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ, কুমির, হাতি, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে, ঢাক ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, বর্ণিল পোশাকে নারী, পুরুষ ও শিশুরা অংশগ্রহণ করে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় পান্তা ইলিশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

বরিশাল প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সৈকত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে প্রেস ক্লাব ভবনে বৈশাখ বরণের লক্ষ্যে পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়। 

এছাড়াও চারুকলা বিদ্যালয় সিটি কলেজ মাঠে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও দেশজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। খেলাঘর ও প্রান্তিক সঙ্গীত বিদ্যালয় আয়োজন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। উদীচী শিল্পগোষ্ঠী বিএম স্কুল মাঠে আয়োজন করেছে তিন দিনের মেলা। অপরদিকে চাঁদেরহাট আমানতগঞ্জ টিবি হাসপাতাল মাঠে তিনদিনের মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা মুক্তিযোদ্ধা পার্কে ১০ দিনব্যাপী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এসব অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৬শ পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের ২০টি ভ্রাম্যমাণ টিম টহলরত ছিলো।


জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, 'হেফাজতে ইসলাম নিয়ে খালেদা জিয়া কি বলেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি হেফাজতের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিংবা ধ্বংসাত্মক কোনো কাজ করবে না।' গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য এরশাদ এসব কথা বলেন।

বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধানগণ বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতিতে শপথ অনুযায়ী সংবিধান সংরক্ষণ করবে। তারা বলেন, সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে সশস্ত্র বাহিনী কখনও পিছপা হবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম ইদ্রিস আলী সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বৈঠকে উত্তপ্ত কথাবার্তা হয়। গতকালের বৈঠকে আলোচনার জন্য তিনটি বিষয় পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। এগুলো হচ্ছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও রায় কার্যকর এবং হেফাজতে ইসলাম।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কমিটির সভাপতি বলেন, সবকিছু নিয়ে কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেছেন। আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। কমিটির সদস্যদের আলোচনা তারা প্রত্যেকে শুনেছেন। তারা তাদের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন দেশের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী অনুগত থেকে দায়িত্ব পালন করবে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ গত মাসের শেষ সপ্তাহে বগুড়ায় বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্যও স্থান পায়। কমিটির সদস্যরা বলেছেন, দেশ পরিচালনা করছে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী নিয়ে বগুড়ায় উস্কানিমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

সূত্র জানায়, আলোচনার এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া বলেন, দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা ও সংবিধান সংরক্ষণ করার বিষয়ে সেনাবাহিনী অঙ্গীরাবদ্ধ। সেনা প্রধানের পর বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামূল বারী ও নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব একই রকম বক্তব্য রাখেন। 

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে বিরোধী দলের হরতালসহ হেফাজতে ইসলামের গত ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি, তাদের ঘোষিত দাবি, বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশ এবং আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ হেফাজতে ইসলামের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম নিয়ে খালেদা জিয়া কি বলেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি হেফাজতের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিংবা ধ্বংসাত্মক কোন কাজ করবে না।' এরশাদের এ ধরনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন উপস্থিত কমিটির অপর সদস্যরা।

সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের পক্ষ নিয়ে এরশাদ বক্তব্য রাখার পর কমিটির সদস্যরা বিরোধিতার পাশাপাশি প্রশ্ন রাখেন, পবিত্র কোরআনের কোন জায়গায় হেফাজতে ইসলামের কথা রয়েছে? এরশাদ এ প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি এম এ মান্নান বলেন, 'অনেক রাজনৈতিক দল সংবিধানে সংযোজন ও বিয়োজন করে হাজার বছরের বাঙ্গালীর সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করেছে। আপনি (এরশাদকে ইঙ্গিত করে) জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।'

এরপরই এরশাদ বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী কোন ইসলামী দল নয়। জামায়াতের সাথে কোন মুসলমান বা মুসলিম গোষ্ঠী কিংবা দলের কোন সম্পর্ক নেই।' এরশাদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের ডা. ইমরান কে যে তার নির্দেশ মানতে হবে? গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে হেফাজতে ইসলাম তৈরি হয়েছে।' পহেলা বৈশাখে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রারও সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আমি দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছি। চিঠির বিষয় হচ্ছে কি পন্থায় নির্বাচন হবে সে সম্পর্কে। তাদের সংলাপে আমি নিজে উপস্থিত থাকবো।'

কমিটির সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ইসলাম ধর্মের হেফাজতকারী একমাত্র আল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম নয়। যাদের ঈমান দুর্বল তারা মনে করে ইসলামের হেফাজত করবে হেফাজতে ইসলাম। যারা হেফাজতে ইসলামের কথা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ঈমানের দুর্বলতায় বিচলিত হয়ে উন্মাদনা সৃষ্টি এবং ইসলাম হেফাজত করার দায়িত্ব তাদেরকে কে দিয়েছে? 

সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বলেছেন, বর্তমানে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণ সম্ভব। সদস্যরা মনে করেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যাবে। তবে তারা যে কোনোভাবেই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যেন চালু থাকে সেদিকে নজর রাখার বিষয়ে সুপারিশ করেন।

কমিটির আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েও গতকালের বৈঠকে আলোচনা করা হয়। কমিটির সদস্যরা গত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সরকার উত্খাতের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত পলাতক ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন।

কমিটির সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মঞ্জুর কাদের কোরাইশীও বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 মনে পড়ে?

জসীম উদ্দীন গ্রাম-বাংলার লোক-জীবনের নিপুণ ভাষ্যকার। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখহাসি-কান্নাপ্রেম-বিরহ বিশ্বস্ততার সাথে উঠে আসে তার কাব্যে। তাতে জড়িয়ে থাকে শান্ত-স্নিগ্ধ অনুভূতিমালা। নাগরিক জীবনের যন্ত্র ও যান্ত্রিকতায় যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের জন্য তাই জসীম উদ্দীনের কাব্য স্বস্তিও এক পরম নির্ভরতা। 'সোজন বাদিয়ার ঘাট' শুধুমাত্র সোজন-দুলীর প্রেমোপাখ্যান নয়। সমকালীন সমাজের এক গভীর সংকট সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপকে নিপুণভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেখানে সাম্প্রদায়িকতা পরাজিত হয় মানবিক আকাঙক্ষার কাছে।

দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের উদ্যোগ
হরতাল শেষে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নয়া কর্মসূচি
ইত্তেফাক রিপোর্ট
হেফাজতে ইসলামের বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে দেশব্যাপী গড়ে তোলা হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি। এ লক্ষ্যে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে গতকাল হরতাল পালনকারী প্রগতিশীল ২৩ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

হেফাজতে ইসলামের ঢাকামুখী লংমার্চ প্রতিহত ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে হরতাল শেষে গতকাল নতুন কর্মসূচি দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ২৩টি প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠন। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি মিলনায়তনে হরতাল-পরবর্তী এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রায় মাসব্যাপী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। তিনি বলেন, যখন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে একটি তালেবানি, জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করে চলেছে তখন দেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাদের প্রতিহত করাই জয়ের একমাত্র পথ।

সম্মেলনে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মঞ্চের আগামী এক মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : আজ ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা, উপজেলা, নগর, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো এবং ১১ এপ্রিল ঢাকায় আন্দোলনরত শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা এবং কেন্দ্রীয় ও ঢাকা জেলা জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে আগামী পহেলা বৈশাখ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আবাহনের মধ্য দিয়ে পালনের অনুরোধ জানানো হয় এবং আগামী ৩ মে ঢাকায় জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির মহাসম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন তিনি।

সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, কবি মুহাম্মদ সামাদ, জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট প্রমুখ।

এ সময় নাসির উদ্দিন ইউসুফ হরতাল সফল করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ স্বতস্ফূর্ত, হরতাল একটি মাইলফলক। হেফাজতে ইসলাম গণজাগরণ মঞ্চ এবং প্রগতিশীল সংগঠনের হরতালকারীদের 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়েছে। হরতালের সমর্থন দিয়ে দেশবাসী তাদের জবাব দিয়েছে। সেইসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ব্যর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিকালে, দুঃসময়ে সারাদেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেছে হরতালে। হরতাল ব্যাপকভাবে সফল করার জন্য শ্রমিক-পেশাজীবী-ছাত্র-বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।' তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি পূরণ করা হলে এ জাতি মৃত জাতিতে পরিণত হবে। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে নিয়ে আমরা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।'

এ সময় উপস্থিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, 'শনিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে হেফাজতের মিছিল থেকে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। আমাদের তরুণ কর্মীরা মানবঢাল বানিয়ে এর প্রতিরোধ না করলে আমাকে ও মুনতাসীর মামুনকে তারা মেরে ফেলত। তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের ২০ কর্মী আহত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামের মওদুদীর ইসলাম আমরা চাই না। আমাদের ইসলাম শান্তির ইসলাম, মানবতার ইসলাম।' তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম তাদের লংমার্চে মাইক ব্যবহার না করাসহ সরকারের কাছে যেসব শর্ত মানার কথা বলেছিল তার কোনোটাই তারা মানেনি। তারা প্রতারণা করেছে। তাদের ১৩ দফা মানা হলে এ দেশ তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।'

নমুদের কালো মেয়ে


ইতল বেতল ফুলের বনে ফুল ঝুর ঝুর করেরে ভাই।
ফুল ঝুর ঝুর করে ;
দেখে এলাম কালো মেয়ে গদাই নমুর ঘরে।
ধানের আগায় ধানের ছড়া, তাহার পরে টিয়া,
নমুর মেয়ে গা মাজে রোজ তারির পাখা দিয়া,
দুর্বাবনে রাখলে তারে দুর্বাতে যায় মিশে,
মেঘের খাটে শুইয়ে দিলে খুঁজে না পাই দিশে।
লাউয়ের ডগায় লাউয়ের পাতা, রৌদ্রেতে যায় ঊনে,
গা-ভরা তার সোহাগ দোলে তারির লতা বুনে।
যে পথ দিয়ে যায় চলে সে, যে পথ দিয়ে আসে,
সে পথ দিয়ে মেঘ চলে যায়, বিজলী বরণ হাসে।
বনের মাঝে বনের লতা, পাতায় পাতায় ফুল,
সেও জানে না নমু মেয়ের শ্যামল শোভার তুল।
যে মেঘের জড়িয়ে ধরে হাসে রামের ধনু,
রঙিন শাড়ী হাসে যে তার জড়িয়ে সেই তনু।

গায়ে তাহার গয়না নাহি, হাতে কাচের চুড়ি;
দুই পায়েতে কাঁসার খাড়ু, বাজছে ঘুরি ঘুরি।
এতেই তারে মানিয়েছে যা তুলনা নেই তার;
যে দেখে সে অমনি বলে, দেখে লই আরবার।
সোনা রুপার গয়না তাহার পরিয়ে দিলে গায়,
বাড়ত না রুপ, অপমানই করতে হত তায়।
ছিপছিপে তার পাতলা গঠন, হাত চোখ মুখ কান,
দুলছে হেলছে মেলছে গায়ে গয়না শতখান ।

হ্যাচড়া পুজোর ছড়ার মত ফুরফুরিয়ে ঘোরে
হেথায় হোথায় যথায় তথায় মনের খুশীর ভরে।
বেথুল তুলে, ফুল কুড়িয়ে, বেঙ্গে ফলের ডাল,
সারাটি গাঁও টহল দিয়ে কাটে তাহার কাল।
পুুতুল আছে অনেকগুলো, বিয়ের গাহি গান,
নিমন্ত্রণে লোক ডাকি সে হয় যে লবেজান।
এসব কাজে সোজন তাহার সবার চেয়ে সেরা,
ছমির শেখের ভাজন বেটা, বাবরি মাথায় ঘেরা।
কোন বনেতে কটার বাসার বাড়ছে ছোট ছানা,
ডাহুক কোথায় ডিম পাড়ে তার নখের আগায় জানা।
সবার সেরা আমের আঁটির গড়তে জানে বাঁশী,
উঁচু ডালে পাকা কুলটি পাড়তে পারে হাসি।
বাঁশের পাতায় নথ গড়ায়ে গাবের গাঁথি হার,
অনেক কালই জয় করেছে শিশু মনটি তার।

নীড়

গড়াই নদীর তীরে,
কুটিরখানিরে লতা-পাতা-ফুল মায়ায় রয়েছে ঘিরে।
বাতাসে হেলিয়া, আলোতে খেলিয়া সন্ধ্যা সকালে ফুটি,
উঠানের কোণে বুনো ফুলগুলি হেসে হয় কুটি কুটি।
মাচানের পরে সীম-লতা আর লাউ কুমড়ার ঝাড়,
আড়া-আড়ি করি দোলায় দোলায় ফুল ফল যত যার।
তল দিয়ে তার লাল নটেশাক মেলিছে রঙের ঢেউ,
লাল শাড়ীখানি রোদ দিয়ে গেছে এ বাড়ির বধূ কেউ।
মাঝে মাঝে সেথা এঁদো ডোবা হতে ছোট ছোট ছানা লয়ে,
ডাহুক মেয়েরা বেড়াইতে আসে গানে গানে কথা কয়ে!
গাছের শাখায় বনের পাখিরা নির্ভয়ে গান ধরে,
এখনো তাহারা বোঝেনি হেথায় মানুষ বসত করে।

মটরের ডাল, মসুরের ডাল, কালিজিড়া আর ধনে,
লঙ্কা-মরিচ রোদে শুখাইছে উঠানেতে সযতনে।
লঙ্কার রঙ মসুরের রঙ, মটরের রঙ আর,
জিড়া ও ধনের রঙের পাশেতে আলপনা আঁকা কার।
যেন একখানি সুখের কাহিনী নানান আখরে ভরি,
এ বাড়ির যত আনন্দ হাসি আঁকা জীবন- করি।
সাঁঝ সকালের রঙিন মেঘেরা এখানে বেড়াতে এসে,
কিছুখন যেন থামিয়া রয়েছে এ বাড়িরে ভালবেসে।
সামনে তাহার ছোট ঘরখানি ময়ূর পাখির মত,
চালার দুখানা পাখনা মেলিয়া তারি ধ্যানে আছে রত।
কুটিরখানির একধারে বন, শ্যাম-ঘন ছায়াতলে,
মহা-রহস্য লুকাইয়া বুকে সাজিছে নানান ছলে।
বনের দেবতা মানুষের ভয়ে ছাড়ি ভূমি সমতল,
সেথায় মেলিছে অতি চুপি চুটি সৃষ্টির কৌশল;
লতা-পাতা ফুল ফলের ভাষায় পাখিদের বুনো সুরে।
তারি বুকখানি সারা বন বেড়ি ফিরিতেছে সদা ঘুরে।
ইহার পাশেতে ছোট গেহ-খনি, এ বনের বন-রাণী,
বনের খেলায় হয়রান হয়ে শিথিল বসনখানি;
ইহার ছায়ায় মেলিয়া ধরিয়া শুয়ে ঘুম যাবে বলে,
মনের মতন করিয়া ইহারে গড়িয়াছে নানা ছলে।

সে ঘরের মাঝে দুটি পা মেলিয়া বসিয়া একটি মেয়ে ,
পিছনে তাহার কালো চুলগুলি মাটিতে পড়েছে বেয়ে।
দুটি হাতে ধরি রঙিন শিকায় রচনা করিছে ফুল,
বাতাসে সরিয়া মুখে উড়িতেছে কভু দু একটি চুল।
কুপিত হইয়া চুলেরে সরাতে ছিড়িছে হাতের সূতো,
চোখ ঘুরাইয়া সুতোরে শাসায় করিয়া রাগের ছুতো।
তারপর শেষে আপনার মনে আপনি উঠিছে হাসি,
আরো সরু সরু ফুল ফুটিতেছে শিকার জালেতে আসি।
কালো মুখখানি, বন-লতা পাতা আদর করিয়া তায়,
তাহাদের গার যত রঙ যেন মেখেছে তাহার গায়।
বনের দুলালী ভাবিয়া ভাবিয়া বনের শ্যামল কায়া;
জানে না, কখন ছড়ায়েছে তার অঙ্গে বনের ছায়া।
আপনার মনে শিকা বুনাইছে, ঘরের দুখানা চাল,
দুখানা রঙিন ডানায় তাহারে করিয়াছে আবডাল।
আটনের গায়ে সুন্দীবেতের হইয়াছে কারুকাজ
বাজারের সাথে পরদা বাঁধন মেলে প্রজাপতি সাজ।
ফুস্যির সাথে রাঙতা জড়ায়ে গোখুরা বাঁধনে আঁটি,
উলু ছোন দিয়ে ছাইয়াছে ঘর বিছায়ে শীতল পাটি।
মাঝে মাঝে আছে তারকা বাঁধন, তারার মতন জ্বলে,
রুয়ার গোড়ায় খুব ধরে ধরে ফুলকাটা শতদলে।
তারি গায় গায় সিদুরের গুড়ো, হলুদের গুড়ো দিয়ে,
এমনি করিয়া রাঙায়েছে যেন ফুলেরা উঠেছে জিয়ে।
একপাশে আশে ফুলচাং ভাল বলা যায়নাক ত্বরা।
তার সাথে বাঁধা কেলী কদম্ব ফুল-ঝুরি শিকা আর,
আসমান-তারা শিকার রঙেতে সব রঙ মানে হার।
শিকায় ঝুলানো চিনের বাসন, নানান রঙের শিশি,
বাতাসের সাথে হেলিছে দুলিছে রঙে রঙে দিবানিশি।
তাহার নীচেতে মাদুর বিছায়ে মেয়েটি বসিয়া একা,
রঙিন শিকার বাঁধনে বাঁধনে রচিছে ফুলের লেখা।

মাথার উপরে আটনে ছাটনে বেতের নানান কাজ,
ফুলচাং আর শিকাগুলি ভরি দুলিতেছে নানা সাজ।
বনের শাখায় পাখিদের গান, উঠানে লতার ঝাড়
সবগুলো মিলে নির্জ্জনে যেন মহিমা রচিছে তার।
মেয়েটি কিন্তু জানে না এ সব, শিকায় তুলিছে ফুল,
অতি মিহি সুরে গান সে গাহিছে মাঝে মাঝে করি ভুল।
বিদেশী তাহার স্বামীর সহিত গভীর রাতের কালে,
পাশা খেলাইতে ভানুর নয়ন জড়াল ঘুমের জালে।

ঘুমের ঢুলুনী, ঘুমের ভুলুনী-সকালে ধরিয়া তায়,
পাল্কীর মাঝে বসাইয়া দিয়া পাঠাল স্বামীর গাঁয়।
ঘুমে ঢুলু আঁখি, পাল্কী দোলায় চৈতন হল তার,
চৈতন হয়ে দেখে সে ত আজ নহে কাছে বাপ-মার।
এত দরদের মা-ধন ভানুর কোথায় রহিল হায়,
মহিষ মানত করিত তাহার কাঁটা যে ফুটিলে পায়।
হাতের কাঁকনে আঁচড় লাগিলে যেত যে সোনারু বাড়ি,
এমন বাপেরে কোন দেশে ভানু আসিয়াছে আজ ছাড়ি।
কোথা সোহাগের ভাই-বউ তার মেহেদী মুছিলে হায়,
সাপন সীথার সিদুর লইত ঘষিতে ভানুর পায়।
কোথা আদরের মৈফল-ভাই ভানুর আঁচল ছাড়ি,
কি করে আজিকে দিবস কাটিছে একা খেলাঘরে তারি।

এমনি করিয়া বিনায়ে বিনায়ে মেয়েটি করিছে গান,
দূরে বন পথে বউ কথা কও পাখি ডেকে হয়রান।
সেই ডাক আরো নিকটে আসিল, পাশের ধঞ্চে-খেতে
তারপর এলো তেঁতুলতলায় কুটিরের কিনারেতে
মেয়েটি খানিক শিকা তোলা রাখি অধরেতে হাসি আঁকি,
পাখিটিরে সে যে রাগাইয়া দিল বউ কথা কও ডাকি।
তারপর শেষে আগের মতই শিকায় বসাল মন,
ঘরের বেড়ার অতি কাছাকাছি পাখি ডাকে ঘন ঘন।
এবার সে হল আরও মনোযোগী, শিকা তোলা ছাড়া আর,
তার কাছে আজ লোপ পেয়ে গেছে সব কিছু দুনিয়ার।
দোরের নিকট ডাকিল এবার বউ কথা কও পাখি,
বউ কথা কও, বউ কথা কও, বারেক ফিরাও আঁখি।
বউ মিটি মিটি হাসে আর তার শিকায় যে ফুল তোলে,
মুখপোড়া পাখি এবার তাহার কানে কানে কথা বলে।
যাও ছাড়-লাগে, এবার বুঝিনু বউ তবে কথা কয়,
আমি ভেবেছিনু সব বউ বুঝি পাখির মতন হয়।
হয়ত এমনি পাখির মতন এ ডাল ও ডাল করি,
বই কথা কও ডাকিয়া ডাকিয়া জনম যাইবে হরি,
হতভাগা পাখি! সাধিয়া সাধিয়া কাঁদিয়া পাবে না কূল,
মুখপোড়া বউ সারাদিন বসি শিকায় তুলিবে ফুল।
ইস্যিরে মোর কথার নাগর! বলি ও কি করা হয়,
এখনি আবার কুঠার নিলে যে, বসিতে মন না লয়?
তুমি এইবার ভাত বাড় মোর, একটু খানিক পরে,
চেলা কাঠগুলো ফাঁড়িয়া এখনি আসিতেছি ঝট করে।

কখনো হবে না, আগে তুমি বস, বউটি তখন উঠি,
ডালায় করিয়া হুড়ুমের মোয়া লইয়া আসিল ছুটি।
একপাশে দিল তিলের পাটালী নারিকেল লাড়ু আর
ফুল লতা আঁকা ক্ষীরের তক্তি দিল তারে খাইবার।
কাঁসার গেলাসে ভরে দিল জল, মাজা ঘষা ফুরফুরে
ঘরের যা কিছু মুখ দেখে বুঝি তার মাঝে ছায়া পূরে।
হাতেতে লইয়া ময়ূরের পাখা বউটি বসিল পাশে,
বলিল, এসব সাজায়ে রাখিনু কোন দেবতার আশে?
তুমিও এসো না! হিন্দুর মেয়ে মুসলমানের সনে
খাইতে বসিয়া জাত খোয়াইব তাই ভাবিয়াছ মনে?
নিজেরই জাতিটা খোয়াই তাহলেবড় গম্ভীর হয়ে,
টপটপ করে যা ছিল সোজন পুরিল অধরালয়ে।

বউ ততখনে কলিকার পরে ঘন ঘন ফুঁক পাড়ি,
ফুলকি আগুন ছড়াইতেছিল দুটি ঠোট গোলকরি।
দুএক টুকরো ওড়া ছাই এসে লাগছিল চোখে মুখে,
ঘটছিল সেথা রূপান্তর যে বুঝি না দুখে কি সুখে।
ফুঁক দিতে দিতে দুটি গাল তার উঠছিল ফুলে ফুলে,
ছেলেটি সেদিকে চেয়ে চেয়ে তার হাত ধোয়া গেল ভুলে।
মেয়ে এবার টের পেয়ে গেছে, কলকে মাটিতে রাখি,
ফিরিয়া বসিল ছেলেটির পানে ঘুরায়ে দুইটি আঁখি।

তারপর শেষে শিকা হাতে লয়ে বুনাতে বসিল ত্বরা,
মেলি বাম পাশে দুটি পাও তাতে মেহেদীর রঙ ভরা।
নীলাম্বরীর নীল সায়রেতে রক্ত কমল দুটি,
প্রথমভোরের বাতাস পাইয়া এখনি উঠিছে ফুটি।
ছেলেটি সেদিক অনিমেষ চেয়ে, মেয়েটি পাইয়া টের,
শাড়ীর আঁচলে চরণ দুইটি ঢাকিয়া লইল ফের।

ছেলেটি এবার ব্যস্ত হইয়া কুঠার লইল করে,
এখনি সে যেন ছুটিয়া যাইবে চেলা ফাড়িবার তরে।
বউটি তখন পার আবরণ একটু লইল খুলি,
কি যেন খুঁজিতে ছেলেটি আসিয়া বসিল আবার ভুলি।
এবার বউটি ঢাকিল দুপাও শাড়ীর আঁচল দিয়ে,
ছেলেটি সজোরে কলকে রাখিয়া টানিল হুকোটি নিয়ে।
খালি দিনরাত শিকা ভাঙাইবে? হুকোয় ভরেছ জল?
কটার মতন গন্ধ ইহার একেবারে অবিকল।
এক্ষুণি জল ভরিণু হুকায়। দেখ! রাগায়ো না মোরে,
নৈচা আজিকে শিক পুড়াইয়া দিয়েছিলে সাফ করে?
কটর কটর শব্দ না যেন মুন্ড হতেছে মোর,
রান্নাঘরেতে কেন এ দুপুরে দিয়ে দাও নাই দোর?
এখনি খুলিলে? কথায় কথায় কথা কর কাটাকাটি,
রাগি যদি তবে টের পেয়ে যাবে বলিয়া দিলাম খাঁটি!

মিছেমিছি যদি রাগিতেই সখ, বেশ রাগ কর তবে,
আমার কি তাতে, তোমারি চক্ষু রক্ত বরণ হবে।
রাগিবই তবে? আচ্ছা দাঁড়াও মজাটা দেখিয়া লও,
যখন তখন ইচ্ছা মাফিক যা খুশী আমারে কও!
এইবার দেখ! না! না! তবে আর রাগিয়া কি মোর হবে,
আমি ত তোমার কেউ কেটা নই খবর টবার লবে?

বউটি বসিয়াশিকা ভাঙাইতেছে, আর হাসিতেছে খালি,
প্রতিদিন সে ত বহুবার শোনে এমনি মিষ্ট গালি।


পলায়ন

নমুর পাড়ায় বিবাহের গানে আকাশ বাতাস
উঠিয়াছে আজি ভরি,
থাকিয়া থাকিয়া হইতেছে উলু, ঢোল ও সানাই
বাজিতেছে গলা ধরি।
রামের আজিকে বিবাহ হইবে, রামের মায়ের
নাহি অবসর মোটে;
সোনার বরণ সীতারে বরিতে কোনখানে আজ
দূর্বা ত নাহি জোটে।
কোথায় রহিল সোনার ময়ূর, গগনের পথে
যাওরে উড়াল দিয়া,
মালঞ্চঘেরা মালিনীর বাগ হইতে গো তুমি
দূর্বা যে আনো গিয়া।

এমনি করিয়া গেঁয়ো মেয়েদের করুণ সুরের
গানের লহরী পরে,
কত সীতা আর রাম লক্ষণ বিবাহ করিল
দূর অতীতের ঘরে।
কেউ বা সাজায় বিয়েরে কনেরে, কেউ রাঁধে রাড়ে
ব্যস্ত হইয়া বড়,
গদাই নমুর বাড়িখানি যেন ছেলেমেয়েদের
কলরবে নড় নড়।
দূর গাঁর পাশে বনের কিনারে দুজন কাহারা
ফিস্ ফিস্ কথা কয়!
বিবাহ বাড়ির এত সমারোহ সেদিকে কাহারো
ভ্রক্ষেপ নাহি হায়!

সোজন, আমার বিবাহ আজিকে, এই দেখ আমি
হলুদে করিয়া স্নান,
লাল-চেলী আর শাঁখা সিন্দুর আলতার রাগে
সাজিয়েছি দেহখান।
তোমারে আজিকে ডাকিয়াছি কেন, নিকটে আসিয়া
শুন তবে কান পাতি,
এই সাজে আজ বাহির যেথা যায় আঁখি,
তুমি হবে মোর সাথী।

কি কথা শুনালে অবুঝ! এখনো ভাল ও মন্দ
বুঝিতে পারনি হায়,
কাঞ্চাবাঁশের কঞ্চিরে আজি যেদিকে বাঁকাও
সেদিকে বাঁকিয়ে যায়।

আমার জীবনে শিশুকাল হতে তোমারে ছাড়িয়া
বুঝি নাই আর কারে,
আমরা দুজনে একসাথে রব, এই কথা তুমি
বলিয়াছ বারে বারে।
এক বোঁটে মোরা দুটি ফুল ছিনু একটিরে তার
ছিঁড়ে নেয় আর জনে;
সে ফুলেরে তুমি কাড়িয়া লবে না? কোন কথা আজ
কহে না তোমার মনে?
ভাবিবার আর অবসর নাহি, বনের আঁধারে
মিশিয়াছে পথখানি,
দুটি হাত ধরে সেই পথে আজ, যত জোরে পার
মোরে নিয়ে চল টানি।
এখনি আমারে খুঁজিতে বাহির হইবে ক্ষিপ্ত
যত না নমুর পাল,
তার আগে মোরা বন ছাড়াইয়া পার হয়ে যাব
কুমার নদীর খাল।
সেথা আছে ঘোর অতসীর বন, পাতায় পাতায়
ঢাকা তার পথগুলি,
তারি মাঝ দিয়া চলে যাব মোরা, সাধ্য কাহার
সে পথের দেখে ধুলি।

হায় দুলী! তুমি এখনো অবুঝ, বুদ্ধি-সুদ্ধি
কখন বা হবে হায়,
এ পথের কিবা পরিণাম তুমি ভাবিয়া আজিকে
দেখিয়াছ কভু তায়?
আজ হোক কিবা কাল হোক, মোরা ধরা পড়ে যাব
যে কোন অশুভক্ষণে,
তখন মোদের কি হবে উপায়, এই সব তুমি
ভেবে কি দেখেছ মনে?
তোমারে লইয়া উধাও হইব, তারপর যবে
ক্ষিপ্ত নমুর দল,
মোর গাঁয়ে যেয়ে লাফায়ে পড়িবে দাদ নিতে এর
লইয়া পশুর বল;
তখন তাদের কি হবে উপায়? অসহায় তারা
না না, তুমি ফিরে যাও!
যদি ভালবাস, লক্ষ্মী মেয়েটি, মোর কথা রাখ,
নয় মোর মাথা খাও।

নিজেরি স্বার্থ দেখিলে সোজন, তোমার গেরামে
ভাইবন্ধুরা আছে,
তাদের কি হবে! তোমার কি হবে! মোর কথা তুমি
ভেবে না দেখিলে পাছে?
এই ছিল মনে, তবে কেন মোর শিশুকালখানি
তোমার কাহিনী দিয়া,
এমন করিয়া জড়াইয়াছিলে ঘটনার পর
ঘটনারে উলটিয়া?
আমার জীবনে তোমারে ছাড়িয়া কিছু ভাবিবারে
অবসর জুটে নাই,
আজকে তোমারে জনমের মত ছাড়িয়া হেথায়
কি করে যে আমি যাই!
তোমার তরুতে আমি ছিনু লতা, শাখা দোলাইয়া
বাতাস করেছ যারে,
আজি কোন প্রাণে বিগানার দেশে, বিগানার হাতে
বনবাস দিবে তারে?
শিশুকাল হতে যত কথা তুমি সন্ধ্যা সকালে
শুনায়েছ মোর কানে,
তারা ফুল হয়ে, তারা ফল হয়ে পরাণ লতারে
জড়ায়েছে তোমা পানে।
আজি সে কথারে কি করিয়া ভুলি? সোজন! সোজন!
মানুষ পাষাণ নয়!
পাষাণ হইলে আঘাতে ফাটিয়া চৌচির হত
পরাণ কি তাহা হয়?
ছাঁচিপান দিয়ে ঠোঁটেরে রাঙালে, তখনি তা মোছে
ঠোঁটেরি হাসির ঘায়,
কথার লেখা যে মেহেদির দাগ-যত মুছি তাহা
তত ভাল পড়া যায়।
নিজেরি স্বার্থ দেখিলে আজিকে, বুঝিলে না এই
অসহায় বালিকার,
দীর্ঘজীবন কি করে কাটিবে তাহারি সঙ্গে,
কিছু নাহি জানি যার।
মন সে ত নহে কুমড়ার ফালি, যাহারে তাহারে
কাটিয়া বিলান যায়,
তোমারে যা দেছি, অপরে ত যবে জোর করে চাবে
কি হবে উপায় হায়!
জানি, আজি জানি আমারে ছাড়িতে তোমার মনেতে
জাগিবে কতেক ব্যথা,
তবু সে ব্যথারে সহিওগো তুমি, শেষ এ মিনতি,
করিও না অন্যথা।
আমার মনেতে আশ্বাস রবে, একদিন তুমি
ভুলিতে পারিবে মোরে,
সেই দিন যেন দূরে নাহি রয়, এ আশিস আমি,
করে যাই বুক ভরে।
এইখানে মোরা দুইজনে মিলি গাড়িয়াছিলাম
বটপাকুড়ের চারা,
নতুন পাতার লহর মেলিয়া, এ ওরে ধরিয়া
বাতাসে দুলিছে তারা!
সরু ঘট ভরি জল এনে মোরা প্রতি সন্ধ্যায়
ঢালিয়া এদের গোড়ে
আমাদের ভালবাসারে আমরা দেখিতে পেতাম
ইহাদের শাখা পরে।
সামনে দাঁড়ায়ে মাগিতাম বর-এদেরি মতন
যেন এ জীবন দুটি,
শাখায় জড়ায়ে, পাতায় জড়ায়ে এ ওরে লইয়া
সামনেতে যায় ছুটি।
এ গাছের আর কোন প্রয়োজন? এসো দুইজনে
ফেলে যাই উপাড়িয়া,
নতুবা ইহারা আর কোনো দিনে এই সব কথা
দিবে মনে করাইয়া।
ওইখানে মোরা কদমের ডাল টানিয়া বাঁধিয়া
আম্রশাখার সনে,
দুইজনে বসি ঠিক করিতাম, কেবা হবে রব,
কেবা হবে তার কনে।
আম্রশাখার মুকুল হইলে, কদম গাছেরে
করিয়া তাহার বর,
মহাসমারোহে বিবাহ দিতাম মোরা দুইজনে
সারাটি দিবসভর।
আবার যখন মেঘলার দিনে কদম্ব শাখা
হাসিত ফুলের ভারে,
কত গান গেয়ে বিবাহ দিতাম আমের গাছের
নববধূ করি তারে।
বরণের ডালা মাথায় করিয়া পথে পথে ঘুরে
মিহি সুরে গান গেয়ে
তুমি যেতে যবে তাহাদের কাছে, আঁচল তোমার
লুটাত জমিন ছেয়ে।

দুইজনে মিলে কহিতাম, যদি মোদের জীবন
দুই দিকে যেতে চায়,
বাহুর বাঁধন বাঁধিয়া রাখিব, যেমনি আমরা
বেঁধেছি এ দুজনায়।
আজিকে দুলালী, বাহুর বাঁধন হইল যদিবা
স্বেচ্ছায় খুলে দিতে,
এদেরো বাঁধন খুলে দেই, যেন এই সব কথা
কভু নাহি আনে চিতে।
সোজন! সোজন! তার আগে তুমি, যে লতার বাঁধ
ছিঁড়িলে আজিকে হাসি,
এই তরুতলে, সেই লতা দিয়ে আমারো গলায়
পরাইয়ে যাও ফাঁসি।
কালকে যখন আমার খবর শুধাবে সবারে
হতভাগা বাপ-মায়,
কহিও তাদের, গহন বনের নিদারুণ বাঘে
ধরিয়া খেয়েছে তায়।
যেই হাতে তুমি উপাড়ি ফেলিবে শিশু বয়সের
বট-পাকুড়ের চারা,
সেই হাতে এসো ছুরি দিয়ে তুমি আমারো গলায়
ছুটাও লহুর ধারা।
কালকে যখন গাঁয়ের লোকেরা হতভাগিনীর
পুছিবে খবর এসে,
কহিও, দারুণ সাপের কামড়ে মরিয়াছে সে যে
গভীর বনের দেশে।
কহিও অভাগী ঝালী না বিষের লাড়ু বানাইয়া
খাইয়াছে নিজ হাতে;
আপনার ভরা ডুবায়েছে সে যে অথই গভীর
কূলহীন দরিয়াতে।

ছোট বয়সের সেই দুলী তুমি এত কথা আজ
শিখিয়াছ বলিবারে,
হায় আমি কেন সায়রে ভাসানু দেবতার ফুল-
সরলা এ বালিকারে!
আমি জানিতাম, তোমার লাগিয়া তুষের অনলে
দহিবে আমারি হিয়া,
এ পোড়া প্রেমের সকল যাতনা নিয়ে যাব আমি
মোর বুকে জ্বালাইয়া।
এ মোর কপাল শুধু ত পোড়েনি তোমারো আঁচলে
লেগেছে আগুন তার;
হায় অভাগিনী, এর হাত হতে এ জনমে তব
নাহি আর নিস্তার!
তবু যদি পার মোরে ক্ষমা কোরো, তোমার ব্যথার
আমি একা অপরাধী;
সব তার আমি পূরণ করিব, রোজ কেয়ামতে
দাঁড়াইও হয়ে বাদী।
আজকে আমারে ক্ষমা করে যাও, সুদীর্ঘ এই
জীবনের পরপারে-
সুদীর্ঘ পথে বয়ে নিয়ে যেয়ো আপন বুকের
বেবুঝ এ বেদনাবে।

সেদিন দেখিবে হাসিয়া সোজন খর দোজখের
আতসের বাসখানি,
গায়ে জড়াইয়া অগ্নির যত তীব্র দাহন
বক্ষে লইবে টানি।
আজিকে আমরে ক্ষমা করে যাও, আগে বুঝি নাই
নিজেরে বাঁধিতে হায়,
তোমার লতারে জড়ায়েছি আমি, শাখা বাহুহীন
শুকনো তরুন গায়।
কে আমারে আজ বলে দিবে দুলী, কি করিলে আমি
আপনারে সাথে নিয়ে,
এ পরিণামের সকল বেদনা নিয়ে যেতে পারি
কারে নাহি ভাগ দিয়ে।
ওই শুন, দূরে ওঠে কোলাহল, নমুরা সকলে
আসিছে এদিন পানে,
হয়ত এখনি আমাদের তারা দেখিতে পাইবে
এইভাবে এইখানে।

সোজন! সোজন! তোমরা পুরুষ, তোমারে দেখিয়া
কেউ নাহি কিছু কবে,
ভাবিয়া দেখেছ, এইভাবে যদি তারা মোরে পায়,
কিবা পরিণাম হবে?
তোমরা পুরুষ-সমুখে পিছনে যে দিকেই যাও,
চারিদেকে খোলা পথ,
আমরা যে নারী, সমুখ ছাড়িয়া যেদিকেতে যাব,
বাধাঘেরা পর্ব্বত।
তুমি যাবে যাও, বারণ করিতে আজিকার দিনে
সাধ্য আমার নাই,
মোরে দিয়ে গেলে কলঙ্কভার, মোর পথে যেন
আমি তা বহিয়া যাই,
তুমি যাবে যাও, আজিকার দিনে এই কথাগুলি
শুনে যাও শুধু কানে,
জীবনের যত ফুল নিয়ে গেলে, কন্টক তরু
বাড়ায়ে আমার পানে।
বিবাহের বধূ পালায়ে এসেছি, নমুরা আসিয়া
এখনি খুঁজিয়া পাবে,
তারপর তারা আমারে ঘিরিয়া অনেক কাহিনী
রটাবে নানানভাবে।
মোর জীবনের সুদীর্ঘ দিনে সেই সব কথা
চোরকাঁটা হয়ে হায়,
উঠিতে বসিতে পলে পলে আসি নব নবরূপে
জড়াবে সারাটি গায়।
তবু তুমি যাও, আমি নিয়ে গেনু এ পরিনামের
যত গাঁথা ফুল-মালা।
ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর মোরে, আকাশ সায়রে
তোমার চাঁদের গায়,
আমি এসেছিনু, মোর জীবনের যত কলঙ্ক
মাখাইয়া দিতে হায়!
সে পাপের যত শাসি-রে আমি আপনার হাতে
নীরবে বহিয়া যাই,
আজ হতে তুমি মনেতে ভাবিও, দুলী বলে পথে
কারে কভু দেখ নাই।

সোঁতের শেহলা, ভেসে চলে যাই, দেখা হয়েছিল
তোমার নদীর কূলে,
জীবনেতে আছে বহুসুখ হাসি, তার মাঝে তুমি
সে কথা যাইও ভুলে।
যাইবার কালে জনমের মত শেষ পদধূলি
লয়ে যাই তবে শিরে,
আশিস্ করিও, সেই ধূলি যেন শত ব্যথা মাঝে
রহে অভাগীরে ঘিরে।
সাক্ষী থাকিও দরদের মাতা, সাক্ষী থাকিও
হে বনের গাছপালা-
সোজন আমার প্রাণের সোয়ামী, সোজন আমার
গলার ফুলের মালা।
সাক্ষী থাকিও চন্দ্র-সূর্য, সাক্ষী থাকিও-
আকাশের যত তারা,
ইহকালে আর পরকালে মোর কেহ কোথা নাই,
কেবল সোজন ছাড়া।
সাক্ষী থাকিও গলার এ হার, সাক্ষী থাকিও
বাপ-ভাই যতজন
সোজন আমার পরাণের পতি, সোজন আমার
মনের অধিক মন।
সাক্ষী থাকিও সীথার সিদুর, সাক্ষী থাকিও
হাতের দুগাছি শাঁখা,
সোজনের কাছ হইতে পেলাম এ জনমে আমি
সব চেয়ে বড় দাগা।

দুলী! দুলী! তবে ফিরে এসো তুমি, চল দুইজনে
যেদিকে চরণ যায়,
আপন কপাল আপনার হাতে যে ভাঙিতে চাহে,
কে পারে ফিরাতে তায়।
ভেবে না দেখিলে, মোর সাথে গেলে কত দুখ তুমি
পাইবে জনম ভরি,
পথে পথে আছে কত কন্টক, পায়েতে বিঁধিবে
তোমারে আঘাত করি।
দুপুরে জ্বলিবে ভানুর কিরণ, উনিয়া যাইবে
তোমার সোনার লতা,
ক্ষুধার সময়ে অন্ন অভাবে কমল বরণ
মুখে সরিবে না কথা।
রাতের বেলায় গহন বনেতে পাতার শয়নে
যখন ঘুমায়ে রবে,
শিয়রে শোসাবে কাল অজগর, ব্যাঘ্র ডাকিবে
পাশেতে ভীষণ রবে।
পথেতে চলিতে বেতের শীষায় আঁচল জড়াবে,
ছিঁড়িবে গায়ের চাম,
সোনার অঙ্গ কাটিয়া কাটিয়া ঝরিয়া পড়িবে
লহুধারা অবিরাম।

সেদিন তোমার এই পথ হতে ফিরিয়া আসিতে
সাধ হবে না আর,
এই পথে যার এক পাও চলে, তারা চলে যায়
লক্ষ যোজন পার।
এত আদরের বাপ-মা সেদিন বেগানা হইবে
মহা-শত্রুর চেয়ে,
আপনার জন তোমারে বধিতে যেখানে সেখানে
ফিরিবে সদাই ধেয়ে।
সাপের বাঘের তরেতে এ পথে রহিবে সদাই
যত না শঙ্কাভরে,
তার চেয়ে শত শঙ্কা আকুলহইবে যে তুমি,
বাপ-ভাইদের ডরে।
লোকালয়ে আর ফিরিতে পাবে না, বনের যত না
হিংস্র পশুর সনে,
দিনেরে ছাপায়ে, রাতের ছাপায়ে রহিতে হইবে
অতীব সঙ্গোপনে।
খুব ভাল করে ভেবে দেখ তুমি, এখনো রয়েছে
ফিরিবার বসর,
শুধু নিমিষের ভুলের লাগিয়া কাঁদিবে যে তুমি,
সারাটি জনমভর।

অনেক ভাবিয়া দেখেছি সোজন, তুমি যেথা রবে,
সকল জগতখানি
শত্রু হইয়া দাঁড়ায় যদিবা, আমি ত তাদেরে
তৃণসম নাহি মানি।
গহন বনেতে রাতের বেলায় যখন ডাকিবে
হিংস্র পশুর পাল,
তোমার অঙ্গে অঙ্গ জড়ায়ে রহিব যে আমি,
নীরবে সারাটি কাল।
পথে যেতে যেতে ক্লান্ত হইয়া এলায়ে পড়িবে
অলস এ দেহখানি,
ওই চাঁদমুখ হেরিয়া তখন শত উৎসাহ
বুকেতে আনিব টানি।
বৃষ্টির দিনে পথের কিনারে মাথার কেশেতে
রচিয়া কুটির খানি,
তোমারে তাহার মাঝেতে শোয়ারে সাজাব যে আমি
বনের কুসুম আনি।
ক্ষুধা পেলে তুমি উচু ডালে উঠি থোপায় থোপায়
পাড়িয়া আনিও ফল,
নল ভেঙে আমি জল খাওয়াইব, বন-পথে যেতে
যদি পায়ে লাগে ব্যথা,
গানের সুরেতে শুনাইবে আমি শ্রানি- নাশিতে
সে শিশুকালের কথা।
তুমি যেথা যাবে সেখানে বন্ধু! শিশু বয়সের
দিয়ে যত ভালবাসা,
বাবুই পাখির মত উচু ডালে অতি সযতনে
রচিব সুখের বাসা।
দূরের শব্দ নিকটে আসিছে, কথা কহিবার
আর অবসর নাই,
রাতের আঁধারে চল এই পথে, আমরা দুজনে
বন-ছায়ে মিশে যাই।

সাক্ষী থাকিও আল্লা-রসুল, সাক্ষী থাকিও
যত পীর আউলিয়া
এই হতভাগী বালিকারে আমি বিপদের পথে
চলিলাম আজি নিয়া।
সাক্ষী থাকিও চন্দ্র-সূর্য! সাক্ষী থাকিও
আকাশের যত তারা,
আজিকার এই গহন রাতের অন্ধকারেতে
হইলাম ঘরছাড়া।
সাক্ষী থাকিও খোদার আরশ, সাক্ষী থাকিও
নবীর কোরানখানি,
ঘর ছাড়াইয়া, বাড়ি ছাড়াইয়া কে আজ আমারে
কোথা লয়ে যায় টানি।
সাক্ষী থাকিও শিশূলতলীর যত লোকজন
যত ভাই-বোন সবে,
এ জনমে আর সোজনের সনে কভু কোনখানে
কারো নাহি দেখা হবে।
জনমের মত ছেড়ে চলে যাই শিশু বয়সের
শিমূলতলীর গ্রাম,
এখানেতে আর কোনদিন যেন নাহি কহে কহে
সোজন-দুলীর নাম।

সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে মহাসমাবেশের একাংশ

সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে মহাসমাবেশের একাংশ

ছবি: প্রথম আলো

১৩ দফা দাবি না মানলে আওয়ামী লীগ সরকারকেই লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। গতকাল শনিবার সিলেটে বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তৃতায় নেতারা বলেন, ১৩ দফা মেনে নিন। নইলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না, আর আসতেও পারবেন না।
নগরের কেন্দ্রস্থল কোর্ট পয়েন্টে বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে মহাসমাবেশ। হেফাজতে ইসলাম সিলেটের সভাপতি মুহিবুল হক গাছবাড়ির সভাপতিত্বে মহাসমবেশে সিলেট বিভাগের চার জেলার অর্ধশতাধিক নেতা বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ১৩ দফা দাবির ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। ব্লাসফেমি শব্দটি ১৩ দফা দাবির কোথাও উল্লেখ নেই। সেখানে বলা হয়েছে খোদায় বিদ্রোহী, ইসলাম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করতে হবে। 
হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলার সভাপতি মুহিবুল হক গাছবাড়ির সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, শায়খ জিয়া উদ্দিন, মাওলানা আবদুল বাসিত বরকতপুরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম আলীপুরী, মাহমুদুল হক, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, আল্লামা রশীদ রহমান, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, মাওলানা জুবের আহমদ আনসারী, সাবেক সাংসদ শাহীনূর পাশা চৌধুরী, শফি উদ্দিন প্রমুখ। 
আমাদের ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে গতকাল হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বক্তারা সরকারের বিরুদ্ধে কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের পৃষ্ঠপোকতার অভিযোগ এনে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইত্তেফাকুর উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর আয়োজনে শহরতলির খাকডহর বাইপাস মোড়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সমাবেশ চলে। 
সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলী আহম্মদ বলেন, দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ৫ মে থেকে কঠোর আন্দোলন করা হবে। দাবি না মানলে এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না। 
মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মজলিশে আলেমার সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা ফয়জুর রহমান প্রমুখ।

সাম্প্রদায়িকতা চিরদিনের জন্য দূর করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ২৭-০৩-২০১৩

সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, 'আমি শুধু তরুণদের বলছি, সাম্প্রদায়িকতা এই বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য দূর করতে হবে। একজন হিন্দুর প্রতি আক্রমণ এলে প্রতিবাদ করতে হবে, বৌদ্ধের প্রতি আক্রমণ এলে প্রতিবাদ করতে হবে, খ্রিষ্টানের প্রতি আক্রমণ এলে প্রতিবাদ করতে হবে, চাকমাদের প্রতি আক্রমণ এলে প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ, সবাইকে নিয়েই এই দেশ। এই দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন থাকবে না। সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে সে জায়গা থেকে লড়ে যেতে হবে।' 
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হতে থাকেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় মহাসমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তরুণদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রচার করা হয়। 
তরুণদের প্রতি প্রবীণদের চাওয়া সম্পর্কে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, 'আমরা সব সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে আসছিলাম। দেশকে আবর্জনামুক্ত করার জন্য এই বিচার চেয়েছিলাম। যারা নৃশংসভাবে মুক্তিযুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, গণহত্যা করেছে, মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, সেটা জানাতে চেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তরুণদের ভালোবাসা তৈরির জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম। আমাদের সেই চাওয়া পূরণ হতে চলেছে। কিন্তু এখন যেটা পেলাম, তরুণদের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখতে পেলাম, সেটা দেখে আমি মুগ্ধ, যারপরনাই আনন্দিত। এই তরুণেরা মাঠে নেমেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।' 
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সুশান্ত কুমার দাস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও নির্দেশনা পরিচালক মো. জামালউদ্দিন ভুঁইয়া, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মইনুদ্দিন আহমদ জালাল, আবদুল করিম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিরণ মাহমুদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। 
এদিকে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মাসব্যাপী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোভাযাত্রা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রচারপত্র বিলি করবেন। ১৯ এপ্রিল খাদিমনগর চা-বাগানে চা-শ্রমিক সমাবেশ। ১ মে গণজাগরণ মঞ্চে শ্রমিক-ছাত্র-জনতার মহাসমাবেশ। এসব কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণসংযোগ চালানো হবে।

http://www.prothom-alo.com/detail/news/339844


সাম্প্রদায়িকতা নয় আধিপত্যবাদ

150 বার পঠিত

সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে এমন এক ধরনের মনোভাব যা এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধনে উব্দুদ্ধ করে। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিক প্রস্তুতি সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ, পরিচয় অথবা বিরুদ্ধতা থেকে সৃষ্ট নয়। ব্যক্তিবিশেষ এক্ষেত্রে গৌণ, মুখ্য হল সম্প্রদায়। সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ এক জাতীয় আনুগত্যের গুরুত্ব থাকে অন্যদিকে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ কাজ করে । কিন্তু কথা হচ্ছে কোন ধর্মই কি সাম্প্রদায়িকতা সমর্থন করে?

ধর্ম আসলে কি? এর উদ্দেশ্যই বা কি? পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট নিয়মে তাদের জীবন চক্র পার করে। যার ব্যত্যয় ঘটানোর ক্ষমতা দৃশ্যত মানুষ ছাড়া আর কারোরই নেই। আর তাই মানুষের জীবনকে পরিশীলিত করতে। অন্যের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতেই কতগুলি বিধিবিধান আরোপিত হয়েছে যাকে আমরা ধর্ম বলি। পৃথিবীতে যতগুলি ধর্ম বিদ্যমান তার কোনটিই অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য ক্ষতিকারক নয়।

সমস্যা হল আমরা ধর্মী‍য় জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী নই। জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্ম নিয়ে কাটিয়ে দেই একটি জনম। একবার উকি দিয়েও দেখিনা কি লেখা আছে আমাদের অবশ্য পালনীয় গ্রন্থে। একবার চেষ্টা করিনা এর মর্মোদ্ধারের। ফলে অন্ধকারেই থেকে যাই আমার ধর্ম সম্পর্কে। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে কিছু স্বার্থান্বেষী ধর্ম ব্যবসায়ী।

ধর্ম মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষকে জিঘাংসার হাত থেকে রক্ষা করে। একমাত্র ধর্মই পারে মানুষকে অমানুষ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে। পৃথিবীকে আজো বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে ধর্ম প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। কোন ধর্মই গায়ের জোরে বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। এবং কোন ধর্ম প্রচারকই একে সমর্থন করেননি বরং তারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বারবার

বিশ্বে নানা সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পূর্বাপর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়; যদিও এই দাঙ্গাগুলি ধর্মের দোহাই দিয়ে ঘটানো হয়েছে এবং একে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপদান করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসল কলকাঠি যারা নাড়ছেন তারা এমন কোন ধর্মভীরু নন। এমনকি অনেকেরই নিজ ধর্মাচারের প্রতি রয়েছেন চরম উদাসীনতা। অথচ এই সব দাঙ্গায় তারাই থাকেন নেতৃত্বে। এই দাঙ্গাসমূহ যে কোন ধর্মীয় আনুগত্যের কারণে নয় তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এটাকে আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না বলে, বলতে পারি আধিপত্য বাদের দাঙ্গা। ধর্মকে আশ্রয় করে আধিপত্য কায়েম করাই এই সব দাঙ্গার মূল লক্ষ। যা বিংশ শতাব্দীতে এসে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে মাত্র। যার নিকট উদাহরণ। মোঃ আলী জিন্নাহ, যিনি ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতি করছেন ঠিকই কিন্তু নিজে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেন না। শোনা যায় তিনি নিজে ছিলেন নাস্তিক। মোটকথা এর মূলে ধর্মীয় আদর্শ কাজ করে না, কাজ করে স্বার্থের সংঘাত।

সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে যে শব্দটি চলে আসে তা হল মৌলবাদ। মৌলবাদ শব্দটি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের অনুবাদ। যার সাধারণ অর্থ হল মূলজাত। এখানে মূল শব্দটি দ্বারা ধর্ম বোঝানো হচ্ছে। মজার ব্যাপার হল যে ধর্মকে কেন্দ্র করে এর উৎপত্তি সে ধর্মটি কিন্তু ইসলাম নয়, সেটি হল খ্রিস্টধর্ম। খ্রিস্টান জগতে এই মৌলবাদ নিয়ে তর্কের শুরু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যা বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে  চালু ছিল। তর্কটি একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে।

প্রশ্নটি হলো: "বাইবেলে যা লেখা আছে সে সব আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে মান্য করতে হবে, নাকি পরিবর্তিত পৃথিবীর বাস্তব প্রেক্ষাপট ও মানব ইতিহাসের অগ্রগতির নিরিখে এবং যুক্তিবাদ প্রয়োগ করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর মান্য করতে হবে?" স্বাভাবিকভাবেই মৌলবাদীরা আক্ষরিক অর্থের সব কিছু গ্রহণ করতে আগ্রহী। মোডারেটরা বাস্তব প্রেক্ষাপট এবং যুক্তিবাদ প্রয়োগ করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর মানতে আগ্রহী। দ্বন্দ্বটা এখানেই। কিন্তু এটা ত ঠিক যে, সব ধর্মেরই কিছু মূল নির্দেশনা থাকে। আর তাকে বাদ দিলে ঐ ধর্মটিই হয়ে পড়ে অস্তিত্বহীন। সে হিসেবে যে কোন ধর্মীয় অনুসারীই মৌলবাদী। পবিত্র কুরআন এর বঙ্গানুবাদ পড়েই কেউ ইসলামী অনুশাসন সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করতে পারবেন না। তা লাভ করতে হলে তাকে সহি হাদিস গ্রন্থ, ইজমা, কিয়াস সম্পর্কেও সম্যক ধারনা রাখতে হবে। এটা কষ্টসাধ্য হওয়ায় আমরা এ পথে হাটি না। অন্ধকারে থাকি ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কে। এই সুযোগে বর্তমান পৃথিবীতে মৌলবাদ একটি নতুন ধারনা তৈরি করেছে। বা বলা যায় মৌলবাদকে এখন একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি এমনই এক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে যার উভয় পাশই সমান ধারালো। আর তাই একে ব্যাবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক রূপে, বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারে, এমনকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রয়াসে। আর তাই এর প্রায়োগিকতা স্থান কাল ভেদে ভিন্নতর। কিন্তু উদ্দেশ্য একই।

উদাহরণ স্বরুপঃ

ভারতের আসামে মুসলমান ও দক্ষিণ ভারতীয় লোকদের বিরুদ্ধে যে দাঙ্গাটি হয়েছিল তাকে শুধু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না বলে একে আঞ্চলিকতা বাদী দাঙ্গা বলাই যুক্তিযুক্ত। এর উদ্দেশ্য ছিল মূলত আসামের বাংলাভাষী জনগণকে বাংলাদেশী বলে আখ্যায়িত করে তাদের আসাম থেকে বিতারন। অথচ প্রচার করা হলো এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ৪৭ এর দেশভাগের পর থেকেই ভারতে হিন্দু-মুসলিম এবং শিখদের মধ্যে বহুবার জাতিগত দাঙ্গা হয়েছে। ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উল্লেখযোগ্য। এ সব দাঙ্গায় কয়েক হাজার মুসলমান নিহত হয়। এ দাঙ্গাগুলো কি শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে হয়েছে? মোটেই তা নয়? এর পেছনে কাজ করেছে আধিপত্যবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। আর তাই এই দাঙ্গাগুলো দমনে কখনোই প্রশাসন তাৎক্ষনিক উদ্যোগ নেয়না। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বদাই ব্যর্থ হয়, এমনকি পরবর্তীতেও দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়না। এ দৃশ্যটি বিশ্বের সকল ভূখণ্ডে একইভাবে প্রতিফলিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে রামুতে সংগঠিত বৌদ্ধধর্মাবলম্বিদের উপর যে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছে তাঁর পোস্টমর্টেম করলে নতুন কোন তথ্য বেড়িয়ে আসবে না। এখানেও একই ধরনের কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

১। ফেসবুকে নিত্য এমন অনেক ছবি আপলোড করা হয়। সেটা নিয়েই যদি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত তাহলে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এমনটি হওয়ার কথা। তাছাড়া ঐ অঞ্চলে কতজন লোক ফেসবুক ব্যাবহার করে তা সহজেই অনুমেয়।

২। এটা যদি শুধুমাত্র ধর্মীয় উগ্রবাদীদেরই কাজ হবে তাহলে প্রশ্ন হল তারা এতটা সু পরিকল্পিতভাবে কাজটি কি করে করতে পারল? তারা গান পাউডারই বা পেল কোথায়? আর সিমেন্টের ব্লগগুলিই বা কোথা থেকে এলো?

৩। বৌদ্ধ ধর্মগুরু বলছেন গত পঞ্চাশ বছরেও তারা এভাবে আক্রান্ত হননি। অর্থাৎ ১৯৭১ এও তারা এভাবে আক্রান্ত হননি। তাছাড়া সবাই জানে এরা একটি অহিংস সম্প্রদায়। এদেরকে কেন বেছে নেয়া হল?

৪। পুলিশ সব ঘটনা ঘটার পরেই উপস্থিত হন এটা নতুন নয়। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি কাজে যে ব্যস্ত থাকেন বোধকরি তারা তা নিজেরাও জানেন না। কিন্তু তাই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিমহোদয় ঘুরে আসার পরেই আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিবে এটাই স্বাভাবিক।

৫। যারা মন্দির ভাঙ্গার ফুটেজগুলো দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন। তাদের কার্যকলাপে খুব কি ধর্মীয় উন্মাদনা চোখে পড়েছে? নাকি এখানে লুটপাটের চিত্রই বেশি ফুটে উঠেছে?

এমনি হাজার প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে যেতেই একে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। আর যদি তাই হয় তাহলে এই ঘটনাটি এ জাতির জন্য এক অমোচনীয় কালিমা হয়েই থেকে যাবে। নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের কণ্ঠে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বরই ঝংকৃত হয়েছে। একই হতাশা সবার মনে। এটা নিয়ে কি রাজনীতি করা শোভন? বিরোধীদলের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হল। তারা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে রিপোর্ট দিয়ে দিলেন। যা বললেন, তা নতুন কিছু নয়। শোনা যায় তারা এই রিপোর্ট প্রভু-মহাপ্রভুদের দরবারেও পেশ করেছেন। এতে প্রশ্ন বেড়েই চলে, সমাধান মেলে না।

সমাধান মিলবে তখনই যখন আমরা প্রকৃতপক্ষেই চাইব সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে আধিপত্যবাদি, লুণ্ঠনকারীদের দমন করতে। আর যদি একে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে সযত্নে রেখে দেই তা হয়ত একদিন এ দেশটিকেই নরককুণ্ড বানিয়ে ছাড়বে। যার হাত থেকে কারোই রেহাই মিলবে না। প্রয়োজন এই নাশকতার সাথে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং সুষ্ঠ বিচারিক প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সেইসাথে আমাদের খুব দ্রুতই ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রতিটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। ধর্মীয় জ্ঞানের অপ্রতুলতা এবং ভুল শিক্ষা বা অর্ধ শিক্ষাই ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির প্রধান কারণ। যাকে সব সময় সব দেশেই স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাবহার করে আসছে।

kmgmehadi@yahoo.com

http://www.bodlejaobodledao.com/archives/27863


  1. সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সমাবেশ - প্রথম আলো

    Mar 17, 2013 – বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ ১৫ মার্চ কাছারি মোড়া স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র জাফর আলম। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা এস এম গিয়াস ...
  2. ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শিবিরের বিক্ষোভ সমাবেশ ...

    Jan 27, 2013 – নাটোর সংবাদদাতা : দেশব্যাপী ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ  শিবিরের আটককৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গত বৃহস্পতিবার সকালে নাটোর জেলা শিবিরের উদ্যোগে শহরের মাদরাসা মোড় এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের ...
  3. **শেষের খবর** » শীর্ষ সংবাদ » হরতালে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ...

    shesherkhobor.com/2013/03/.../হরতালে-সন্ত্রাস--নৈরাজ...
    Mar 18, 2013 – মহেশপুর(ঝিনাইদহ)উপজেলা সংবাদদাতা। OLYMPUS DIGITAL CAMERA. হরতালে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মহেশপুরে সামাজিক সংগঠন সমূহ সম্মিলিত ভাবে শহরে মানববন্ধন করেছে। সোমবার সকাল ১০টায় বনিক সমিতি,মাদ্রাসা শিÿক সমিতি,মাধ্যমিক শিÿক সমিতি,প্রাথমিক শিÿক সমিতি,মটর শ্রমিক ইউনিয়ন,অটোটেম্পু মালিক শ্রমিক ...
  4. কিশোরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ...

    Nov 11, 2012 – কিশোরগঞ্জ: সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদেকিশোরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
  5. কিশোরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ...

    Nov 11, 2012 – সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
  6. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের ...

    islamicnews24.net/শিক্ষাঙ্গনে-সন্ত্রাস--ন/ - Bangladesh
    ইসলামিকনিউজ রিপোর্ট, ১৭ সেপ্টেম্বর: দেশের বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অব্যাহত হত্যা,সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভর্তি বানিজ্য, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি  সরকারের নির্লজ্জ দলীয়করণেরপ্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকালে রাজধানীতে পৃথক দুটি বিােভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা ...
  7. সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে চাঁদপুরে আ'লীগের বিক্ষোভ সমাবেশ ...

    Feb 16, 2013 – চাঁদপুর প্রতিনিধি :: দেশব্যাপী জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চাঁদপুর জেলা আ'লীগ শনিবার বিকেলে শহরের শপথ চত্ত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তারা জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিহতে পাড়া. মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তারা আগামী সোমবারের ...
  8. ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হবিগঞ্জে ...

    Nov 26, 2012 – ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল। দলীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- জেলা ছাত্রদল ঃ হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে ...
  9. ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শিবিরের বিক্ষোভ

    ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর: দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অব্যাহত হত্যা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভর্তি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি  সরকারের দলীয়করণের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সোমবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর খিলগাঁও থেকে ঢাকা মহানগরী পূর্ব  দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা একটি ...
  10. হরতালের নামে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য  সাম্প্রদায়িক হামলার ...

    Mar 4, 2013 – জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য  সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আজ ৪ মার্চ সোমবার মিছিল  সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেন সিপিবি-বাসদ জোট। সিপিবি-বাসদ জোটের প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ জামাত-শিবিরের তা-বের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, জামাত-শিবির '৭১ সালের মতো গণহত্যা ...

    1. দেশব্যাপী জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে ...

      আলী হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি- দেশব্যাপী জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য  বিশৃংখলারপ্রতিবাদে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবীতে লক্ষ্মীপুরে বুধবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ...
    2. ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মিছিল। | Facebook

      Facebook is a social utility that connects people with friends and others who work, study and live around them. People use Facebook to keep up with friends, upload an unlimited number of photos, post links and videos, and learn more about the people they meet.
    3. ছাত্রলীগের অব্যাহত হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ছাত্রদলের ৩ ...

      নিজস্ব প্রতিবেদক, ২২ নভেম্বর:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অব্যাহত হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে তিনদিনের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন সংগঠনটির সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
    4. ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হত্যা, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ভর্তি

      হোম :: শীর্ষ সংবাদ :: ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হত্যা, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ভর্তি বাণিজ্যেরপ্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ... সম্প্রতি ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দলাদলিতে শিক্ষার্থী হত্যা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি  ভর্তি বাণিজ্যের প্রতিবাদেমোমেনশাহী শহরে এক বিক্ষোভ ...
    5. সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ শহীদ মিনারে আওয়ামী - দৈনিক আজাদী

      Dec 11, 2012 – দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ  হরতালের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদে আজ দুপুর ২ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর-দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সভায় মহানগর উত্তর  দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ...
    6. দেশব্যাপী ছাত্রলীগের হত্যা-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, ভর্তি ...

      shibirctg11southkattoli.wordpress.com/.../দেশব্যাপী-ছাত্রল...
      Oct 13, 2012 – দেশব্যাপী ছাত্রলীগের হত্যা-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল. দেশব্যাপী ছাত্রলীগের হত্যা-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদেইসলামী ...
    7. জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে ...

      Nov 17, 2012 – রুমন চক্রবর্ত্তী, কিশোরগঞ্জ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ শুক্রবার দুপুরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। পরিষদের সভানেত্রী অধ্যক্ষ গোলশান আরা বেগমের নেতৃত্বে শহরের কালীবাড়ি সড়কে আয়োজিত ...
    8. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাবি শিবিরের বিক্ষোভ

      Sep 17, 2012 – বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অব্যাহত হত্যা,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ, ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি  নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল  সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ...
    9. ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জকিগঞ্জে ছাত্র শিবিরের ...

      Jan 24, 2013 – জকিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদেগতকাল দুপুর ০২ টায় জকিগঞ্জের বাবুর বাজারে ছাত্র শিবির মিছিল সমাবেশ করেছে। উপজেলা দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাসানুল বান্নার পরিচালনায় এবং উত্তর শাখার সভাপতি মো: শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা উত্তর শাখার ...
    10. জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও যুদ্ধাপরাধীদের ...

      banglanews.com.bd/.../5984-জামায়াত-শিবিরের-সন্ত্রা...
      Feb 25, 2013 – আবদুল মালেক; ভোলা প্রতিনিধিঃ দেশব্যাপী জামায়াত- শিবিরের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে ভোলার বোরহানউদ্দিনে আ'লীগের উদ্দ্...

      জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ফরিদপুরে আ.লীগের বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল. ফরিদপুর, ৮ নভেম্বর।। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে জেলা আওয়ামলীগের উদ্যোগে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ...

No comments:

मैं नास्तिक क्यों हूं# Necessity of Atheism#!Genetics Bharat Teertha

হে মোর চিত্ত, Prey for Humanity!

मनुस्मृति नस्ली राजकाज राजनीति में OBC Trump Card और जयभीम कामरेड

Gorkhaland again?আত্মঘাতী বাঙালি আবার বিভাজন বিপর্যয়ের মুখোমুখি!

हिंदुत्व की राजनीति का मुकाबला हिंदुत्व की राजनीति से नहीं किया जा सकता।

In conversation with Palash Biswas

Palash Biswas On Unique Identity No1.mpg

Save the Universities!

RSS might replace Gandhi with Ambedkar on currency notes!

जैसे जर्मनी में सिर्फ हिटलर को बोलने की आजादी थी,आज सिर्फ मंकी बातों की आजादी है।

#BEEFGATEঅন্ধকার বৃত্তান্তঃ হত্যার রাজনীতি

अलविदा पत्रकारिता,अब कोई प्रतिक्रिया नहीं! पलाश विश्वास

ভালোবাসার মুখ,প্রতিবাদের মুখ মন্দাক্রান্তার পাশে আছি,যে মেয়েটি আজও লিখতে পারছেঃ আমাক ধর্ষণ করবে?

Palash Biswas on BAMCEF UNIFICATION!

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS ON NEPALI SENTIMENT, GORKHALAND, KUMAON AND GARHWAL ETC.and BAMCEF UNIFICATION! Published on Mar 19, 2013 The Himalayan Voice Cambridge, Massachusetts United States of America

BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Imminent Massive earthquake in the Himalayas

Palash Biswas on Citizenship Amendment Act

Mr. PALASH BISWAS DELIVERING SPEECH AT BAMCEF PROGRAM AT NAGPUR ON 17 & 18 SEPTEMBER 2003 Sub:- CITIZENSHIP AMENDMENT ACT 2003 http://youtu.be/zGDfsLzxTXo

Tweet Please

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS BLASTS INDIANS THAT CLAIM BUDDHA WAS BORN IN INDIA

THE HIMALAYAN TALK: INDIAN GOVERNMENT FOOD SECURITY PROGRAM RISKIER

http://youtu.be/NrcmNEjaN8c The government of India has announced food security program ahead of elections in 2014. We discussed the issue with Palash Biswas in Kolkata today. http://youtu.be/NrcmNEjaN8c Ahead of Elections, India's Cabinet Approves Food Security Program ______________________________________________________ By JIM YARDLEY http://india.blogs.nytimes.com/2013/07/04/indias-cabinet-passes-food-security-law/

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES RAM MANDIR

Published on 10 Apr 2013 Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya. http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICAL OF BAMCEF LEADERSHIP

[Palash Biswas, one of the BAMCEF leaders and editors for Indian Express spoke to us from Kolkata today and criticized BAMCEF leadership in New Delhi, which according to him, is messing up with Nepalese indigenous peoples also. He also flayed MP Jay Narayan Prasad Nishad, who recently offered a Puja in his New Delhi home for Narendra Modi's victory in 2014.]

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS CRITICIZES GOVT FOR WORLD`S BIGGEST BLACK OUT

THE HIMALAYAN TALK: PALSH BISWAS FLAYS SOUTH ASIAN GOVERNM

Palash Biswas, lashed out those 1% people in the government in New Delhi for failure of delivery and creating hosts of problems everywhere in South Asia. http://youtu.be/lD2_V7CB2Is

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS LASHES OUT KATHMANDU INT'L 'MULVASI' CONFERENCE

अहिले भर्खर कोलकता भारतमा हामीले पलाश विश्वाससंग काठमाडौँमा आज भै रहेको अन्तर्राष्ट्रिय मूलवासी सम्मेलनको बारेमा कुराकानी गर्यौ । उहाले भन्नु भयो सो सम्मेलन 'नेपालको आदिवासी जनजातिहरुको आन्दोलनलाई कम्जोर बनाउने षडयन्त्र हो।' http://youtu.be/j8GXlmSBbbk