পাহাড়ের হাসি, জঙ্গলমহলের হাসির পরিবর্তে আমরা কি দেখতে পারছি ?
বাঙ্গালি কি চিরদিনই অশনি সংকেত চিনতে ভূল করেই যাবে?
তাহলে ওপার বাংলায় যারা বাঙ্গালি জাতিসত্তার পতাকা হাতে নিয়ে যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাঁরা কোন বাঙ্গালি?
'চারদিকে আজ একই আওয়াজ/ একই ধ্বনি শুনি/ কোথায় সেই রাজাকার কাদের মোল্লা/ একাত্তরের খুনি' . . .
আমরা ত যুদ্ধ অপরাধিদেরই পয়দল সৈন্য বাহিনী!
জামাত-এ-ইসলামি সহ যেকোনও সংগঠনকে শাস্তি দিতে যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন করল বাংলাদেশ সংসদ। এর ফলে জামাত-এ-ইসলামি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পথ অনেকটাই খুলে গেল বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের। আইন সংশোধনের খবর পৌঁছতেই ঢাকার রাস্তায় উচ্ছাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনের সংগঠক ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভরতদের অভিযোগ, জামাত সমর্থকেরাই খুন করেছে রাজীবকে।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার বাংলাদেশ সংসদে পাস হয়ে গেল যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন বিল, দুহাজার তেরো। সংশোধিত এই আইন অনুযায়ী এবার থেকে যুদ্ধপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনেরও বিচারের সুযোগ থাকছে। একইসঙ্গে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীর পাশাপাশি সরকারেরও আপিল করার সমান সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে।
এর ফলে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ ইসলামি দল জামাত-এ-ইসলামির যুদ্ধপরাধের বিচার করার পথ খুলল। এতে ভবিষ্যতে জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার রাস্তা মসৃণ হল বলেও মনে করা হচ্ছে।
দিনকয়েক আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও হয়।
এবার সংশোধিত আইনে তাঁর সাজা বাড়ানোর আপিল করার পথও তৈরি হল।
জামাত এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রবিবার সংসদ বয়কট করেছিল। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই পাশ হয়ে যায় এই সংশোধনী বিল। বিল পাশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শাহবাগ স্কোয়ারে আন্দোলনরত হাজার হাজার মানুষ। গত দু সপ্তাহ ধরে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনে সামিল তাঁরা।
অন্যদিকে আজ জামাতের ডাকা বাংলাদেশ বনধে উত্তেজনা এড়াতে তত্পর প্রশাসন।
বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই সংসদ যে কপ্টার-বিতর্কে সরগরম হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করার কাজটা কপ্টার-পর্ব দিয়েই শুরু করতে চাইছে বিজেপি। দলের সভাপতি রাজনাথ সিং বলেছেন, 'কপ্টার-কেলেঙ্কারির যথাযথ তদন্ত হোক। প্রাথমিক তদন্ত হয়ে থাকলে, সে সম্পর্কে আমাদেরও তথ্য দেওয়া উচিত।' বিজেপি-র দাবি, প্রতিরক্ষামন্ত্রক ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত করেছে। অথচ, পুরো বিষয়টিই ঘটেছে সংসদকে অন্ধকারে রেখে।
প্যান্ডোরার বাক্স খুলতেই মিলল কপ্টার ঘুষের সূত্র |
ভেবেছিলেন কম্পিউটার থেকে সব তথ্য মুছে ফেলেছেন। কিন্তু তেমনটা যে হয়নি, যখন টের পেলেন, দেরি হয়ে গিয়েছে। পুলিশের হাতে 'প্যান্ডোরার বাক্স'। ইনি গুইডো হাশকে, কপ্টার-কাণ্ডে মধ্যস্থতাকারী অন্যতম অভিযুক্ত। ইতালির গোয়েন্দারা জানান, হাশকের কম্পিউটারে 'প্যান্ডোরাস বক্স' নামে একটা ড্রাইভ দেখেই সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের। ড্রাইভ খুলতেই কপ্টার দুর্নীতিতে ফিনমেকানিকা কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, ইতালি-লুগানো-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য, এমনকী কোন কোন ভারতীয় মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়েছে, বেরিয়ে এল এমনই সব তথ্য। হাশকের মায়ের বাড়ি থেকে আগেই উদ্ধার হয়েছিল, টাকাপয়সা লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজপত্র। তার পরে হাশকের কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভের ওই তথ্যগুলো, গোয়েন্দাদের অর্ধেক রহস্য সমাধান করে দিয়েছে। ইতালির আদালতে কপ্টার-দুর্নীতির শুনানি চলাকালীন একে একে প্রকাশ্যে আসছে এমনই সব তথ্যপ্রমাণ। আর ৩৬০০ কোটি টাকার চুক্তি করতে ফিনমেকানিকা প্রধান গুইসেপে ওরসি যে ৩৬০ কোটি ঘুষ দিয়েছিলেন, ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠছে তা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কম্পিউটার থেকে সব তথ্য মুছে দিয়ে হাশকে ভাবেন, তাঁকে ধরার সম্ভাবনা নেই। ইতালির সংবাদপত্র লিখেছে, ওরসি-র ভাগ্য এখন 'হাশকের বাক্সে'। কারণ, ওরসিই কপ্টার লেনদেন চুক্তিতে হাশকে-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। যদিও ফিনমেকানিকা-প্রধান এ কথা অস্বীকার করছেন। গোয়েন্দাদের রিপোর্টে ওঠে আরও একটি নাম ক্রিশ্চিয়ান মিশেল, যাঁর বাবার সঙ্গে ৯০'-এর দশকে কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ইতিমধ্যে, ইতালিতে শুরু হওয়া দুর্নীতি-মামলায় ভারতের হয়ে সিবিআই আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আশ্বাস, এতে ইতালির থেকে প্রয়োজনীয় নথি পেতে সুবিধা হবে। সিবিআইয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দলও আগামী কাল ইতালি রওনা দেবে। আজই কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন ৩৬০০ কোটি কপ্টার-দুর্নীতির রিপোর্ট চেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে। কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে যখন দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে, ঠিক সেই সময় দেশে পা রাখছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মূল সংস্থা ফিনমেকানিকা ইতালির হলেও, অগস্তাওয়েস্টল্যান্ড ব্রিটিশ। যে এক ডজন কপ্টারের চুক্তি হয়েছিল ফিনমেকানিকার সঙ্গে, তার মধ্যে তিনটি কপ্টার হাতে পেয়েছে ভারত। এই তিনটিই তৈরি হয়েছে ব্রিটেনে। তাই এই মুহূর্তে ক্যামেরনের দেশে আসা যথেষ্টই উল্লেখযোগ্য। ভারত ইতিমধ্যেই তদন্তে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ব্রিটিশ সরকারকে। প্রাথমিক ভাবে ব্রিটেনের জবাবে কেন্দ্র সন্তুষ্ট না হলেও, ক্যামেরনের ভারত সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারত যখন ক্যামেরনের থেকে তথ্য পাওয়ার আশায়, তখন ভারতে এসে একটা বড়সড় অর্থের চুক্তি বাগাতে চাইছেন ক্যামেরন। শোনা যাচ্ছে, ক্যামেরন চাইছেন ভারতকে অন্তত ১০০টি ইউরোফাইটার জেট বেচতে। গত বছর ফরাসি যুদ্ধবিমান সংস্থা ১০০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল ভারতের সঙ্গে। এ বারে ভারত থেকে সদ্য খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। কোনও মতেই এই সুযোগ হারাতে চান না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। http://www.anandabazar.com/18desh1.html |
নন্দীগ্রামে এবার জমি অধিগ্রহণের নোটিস পাঠাল তৃণমূল সরকার। অভিযোগ উঠেছে, জমি দিতে অনিচ্ছুকদের হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম বাজারে যানজট এড়াতে বাইপাস রাস্তা তৈরি হবে। সেই জন্য প্রায় তিন একর জমি অধিগ্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই জমি অধিগ্রহণের নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নন্দীগ্রাম, গদাইবলবাড়, তারাচাঁদবাড় মৌজার প্রায় ১৪০ জন কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয় অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি দিয়ে দেবার জন্য জোরও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। অনিচ্ছুক কৃষকদের অভিযোগ, প্রশাসন ডেসিমিল প্রতি মাত্র সতের হাজার টাকা দিচ্ছে। যেখানে বাজারদর অনেক বেশি। কৃষকদের দাবি তিন লাখ টাকা প্রতি ডেসিমিল। কৃষকদের অভিযোগ সরকারি প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁদের হুমকি দিচ্ছে খোদ তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারি।
গার্ডেনরিচকাণ্ডে মতবদল করলেন রাজ্যপাল। কিছুদিন আগে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে দোষীদের আড়াল করা নিয়ে মন্তব্য করলেও আজ সায়েন্স সিটি এক অনুষ্ঠানে এসে ভিন্ন মত পোষণ করলেন তিনি। বললেন, পুরমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কিছু হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তা ভাল বলেও মনে করেন এম কে নারায়ণন।
আজ কী বলেন রাজ্যপাল, শুনতে ক্লিক করুন এখানে
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/west-bengal-governor_11487.html
নন্দীগ্রাম নিখোঁজকাণ্ডে ৬৫ জন পলাতক সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে হুলিয়া জারি করেছে হলদিয়া মহকুমা আদালত৷ এদের মধ্যে খেজুরির সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস, বিজন রায়, গড়বেতার তপন ঘোষ, এবং সুকুর আলির নামও রয়েছে৷ ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই হুলিয়া কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ ২০০৭-এর ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে৷ তারপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় এই ৭ জন৷ এঁদের পরিবারের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে হেভিয়াস করপাস মামলা করা হয়৷ তারই ভিত্তিতে আদালত রাজ্য সরকারকে দ্রুত তাঁদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে৷ সিইডি নন্দীগ্রাম নিখোঁজকাণ্ডের তদন্তে নেমে হলদিয়া আদালতে ৮৮ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয়৷ ঘটনায় লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া-সহ কয়েকজন সিপিএম নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়৷ বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/26826-2012-08-10-06-05-59
কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে আগামী ২০ এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় বলেছেন, দুদিনের ধর্মঘটে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে এবং পরিষেবা না পেয়ে দেশের মানুষ নাকাল হবেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি দাওয়া নিয়ে সরকার আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মুল্যবৃদ্ধি রুখতে সরকারের ঔদাসীন্য, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বিলগ্নীকরণ, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সহ একাধিক ইস্যুতে আগামী কুড়ি এবং একুশে ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বামপন্থী-অবামপন্থী মোট এগারোটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। রবিবার ধর্মঘট প্রত্যাহারের আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। দুদিনের এই ধর্মঘটে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিষেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন বলেও মনে করেন তিনি। এই মর্মে এক বার্তায় শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, কৃষিমন্ত্রী শরদ পাওয়ার, অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খারগের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সমস্ত ইস্যুতে শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘটে যাচ্ছে, তার বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যেই কেন্দ্র মেনে নিয়েছে, আর বেশ কয়েকটি ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে। ধর্মঘট যে কোনও অবস্থাতেই প্রত্যাহার করা হবে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, আস্থা নয়, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবিপূরণ করতে হবে সরকারকে।
Mukherjee, however, enjoys constitutional immunity and may not be probed by the CBI over the murky Chopper deal.
Barring Mukherjee, two more key decision makers in the AgustaWestland helicopter deal were Bharat Vir Wanchoo and MK Narayanan, who are now Governors of Goa and West Bengal respectively but they too, owing to the office they hold, enjoy constitutional immunity.
Wanchoo was the director of the Special Protection Group (SPG) while Narayanan was the National Security Advisor then.
In India, where national elections are due next year, the oppositionBharatiya Janata Party (BJP) lambasted the Congress-led government for not acting sooner over the allegations.
An internal defence ministry investigation last year found no foul play in the purchase of the helicopters, destined for use by India's political elite.
Critics say the government did too little to follow up later media disclosures that the Italian investigation linked India's former air chief S.P. "Shashi" Tyagi and three of his cousins to the alleged bribery. Tyagi denies any wrongdoing.
On Thursday, one of the cousins, Sanjeev "Julie" Tyagi, denied allegations in the Italian arrest warrant that he had taken 100,000 euros in cash bribes and introduced company representatives to the air chief on several occasions to discuss the helicopter deal.
ছবি: সবিতা রহমান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম |
গণজাগরণ চত্বর থেকে: 'চারদিকে আজ একই আওয়াজ/ একই ধ্বনি শুনি/ কোথায় সেই রাজাকার কাদের মোল্লা/ একাত্তরের খুনি' . . .
সঙ্গীত শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌসের এমন নানা গানে সোমবার সকাল থেকেই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর। গান গেয়ে সমবেত জনতাকে আরও উদ্দীপ্ত করে তুলছেন তিনি।
কুইন্স কলেজের শিক্ষক জান্নাত চাকরির সময় ম্যানেজ করে প্রতিদিন রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত থাকেন শাহবাগে। কাদের মোল্লার রায়ের দিন ঢাকার বাইরে থাকার পর যাবজ্জীবন শাস্তির কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান জান্নাত।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, "কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হবে এ কথা ভেবে ওইদিন সকাল থেকেই মনটা খুব ভালো ছিলো। আমরা আবার একটি বিজয় মিছিল করবো। কিন্তু রায় ঘোষণার পর স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় যখন শাহবাগের ব্লগারদের অবস্থানের খবর পাই। এর পর পরই শাহবাগে চলে আসি। যেহেতু আমি পেশায় একজন শিক্ষক, তাই ক্লাসের সময়টুকু আমি কর্মস্থলে থাকি। বাকি সময়টা আমাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে কাটাই। আর সেই দাবি হচ্ছে, রাজাকারদের ফাঁসি।"
একাত্তরে বাংলার অনেক নারী রণসংগীতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। তাই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক হতে চান জান্নাত।
তিনি বলেন, "বিধাতার দানেই আমার এ সুর। এই সুরকে গলায় নিয়েই চাই শাহবাগের যুদ্ধে থাকতে।"
''তবে যারা গণজাগরণ চত্বরের যোদ্ধাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য কখনো সফল হবে না। কারণ, যোদ্ধারা কখনো কালো শক্তিকে ভয় পান না।''
তার গানের মাধ্যমেই শাহবাগের গণআন্দোলনে শেষ পর্যন্ত থাকতে চান বলেও জানিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস।
কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের সোমবার ১৪তম দিন। এ আন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ গণআন্দোলনে যোগ দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাগরণ সমাবেশ। উভয় সমাবেশেই যোগ দেয় লাখো জনতা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৩
ইউএম/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর, জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর- eic@banglanews24.com
শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের চলমান গণ-আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম ব্লগার নিহত আহমেদ রাজীব হায়দার স্মরণে নতুন একটি গান তৈরি করেছে গানের দল দূরবীন।
'নতুন মুক্তিসেনা' গানটির সুর করেছেন ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য শহীদ। সংগীতায়োজন করেছেন দূরবীন ব্যান্ডের সদস্যরা।
'জেগে আছি, থাকব জেগে/ বন্ধুরা জেগে থেকো/ তোমরা নতুন মুক্তিসেনা/ রাজীবকেও মনে রেখো/ বলেছি মাকে বিচার না পেয়ে, বাড়ি ফিরব নাকো/ তোমরা নতুন মুক্তিসেনা/ রাজীবকেও মনে রেখো—এমন কথার গানটি লিখেছেন জনি হক।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ায় দূরবীনের স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং হয়েছে।
নতুন গান প্রসঙ্গে শহীদ বললেন, ' শাহবাগ আমার চোখে দেখা তারুণ্যকে অনুপ্রেরণা। আমিও এর সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন কাজকর্মের ফাঁকে শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সময় গান গেয়েছি। হঠাত্ করেই রাজীব হত্যার বিষয়টি দেশের অন্য সবার মতো আমাকেও অনেক ব্যথিত করেছে। তাই রাজীবের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় গানটি তৈরি করেছি।'
শহীদ বলেন, 'গীতিকারের কাছ থেকে গানটি নিয়ে স্টুডিওতে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসেই "নতুন মুক্তিসেনা" গানটির সুর করেছি।' গানটির মিক্সিং ও মাস্টারিং করেছেন দূরবীনের রাফি।
জানা গেছে, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে আজ সোমবার দূরবীনের সদস্যদের সাক্ষাত্কার ও 'নতুন মুক্তিসেনা' গানটি প্রচার হবে।
দূরবীন ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন: শহীদ (কণ্ঠ), আইয়ুব শাহরিয়ার (কণ্ঠ), রাফি (কি-বোর্ড), হূদয় (লিড গিটার), রুবেল (ড্রামস), শাওন (বেজ গিটার)।
পাহাড়ের হাসি, জঙ্গলমহলের হাসির পরিবর্তে আমরা কি দেখতে পারছি ?
বাঙ্গালি কি চিরদিনই অশনি সংকেত চিনতে ভূল করেই যাবে?
তাহলে ওপার বাংলায় যারা বাঙ্গালি জাতিসত্তার পতাকা হাতে নিয়ে যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাঁরা কোন বাঙ্গালি?
আমরা ত যুদ্ধ অপরাধিদেরই পয়দল সৈন্য বাহিনী!
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ফের সুর চড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। পাহাড় স্তব্ধ করে দিতে আবারও বনধের ডাক। মার্চের ১৪ , ১৫, ২১ ও ২২ তারিখ পাহাড়ের তিনটি মহকুমায় বনধ হবে বলে ঘোষণা করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
কালিম্পংয়ে জনসভায় এ কথা জানিয়েছেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। পাশপাশি, মার্চের ৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত পাহাড়ের সব সরকারি অফিসে কাজ বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন জিটিএ চেয়ারম্যান।
রবিবার বাঁকুড়ার তালডাংরায় মহামিছিল করল সিপিআইএম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই এই মিছিলের আয়োজন বলে জানিয়েছেন সিপিআইএম নেতারা। বৃষ্টি ও ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করেই মিছিলে পা মেলালেন সিপিআইএমের নেতা-কর্মী-সমর্থক। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে রবিবার বাঁকুড়ার তালডাংরায় জনসভা করার কথা ছিল সিপিআইএমের। প্রথমে এই সভার অনুমতি দিলেও পরে একেবারে শেষমুহুর্তে মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার কারণে জনসভায় মাইক ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয় প্রশাসন।
শেষপর্যন্ত তাই জনসভার পরিবর্তে মহামিছিলের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিআইএম। তালডাংরা তিন মাথা মোড় থেকে এই মিছিল শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব ছিলেন সিপিআইএম নেতারা। প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বলে সিপিআইএম নেতৃত্ব জানান।
ঢাকায় শাহবাগ আন্দোলনের ১৩ দিনে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
প্রতুল-সুমন-সলিলদের সুরেই চলছে শাহবাগ প্রাঙ্গণের লড়াই |
জয়ন্ত ঘোষাল • ঢাকা |
শাহবাগ থেকে বলছি। দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কিন্তু তাতে নিভে যায়নি বসন্তের দ্রোহের আগুন। মানুষ আর মানুষ। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট-ব্লগ-ফেসবুক ছড়াছড়ি এই দেশে। আর এই আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য এই নবীন প্রজন্মের আন্দোলন হয়তো এখনও সরকার বিরোধী নয়, কিন্তু আন্দোলনকারীরা বার বার আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘোষণা করেছেন, এ আন্দোলনে দলীয় রাজনীতির ঠাঁই নেই। শাহবাগের নেত্রী লাকির চেহারাটা নেহাতই সাদামাটা, উঠে এসেছেন এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই গণনেত্রীকে দেখলে মনে পড়তেই পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। বলছেন, "আমরা ৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলন দেখিনি। কিন্তু ৭১-এর যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে মুজিবর রহমান যে একটা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, সেটা তো ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের মানুষ বিপথগামী হবেন কেন? যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের ফাঁসি দেওয়ার মধ্যে দিয়ে একটা নতুন অভিমুখ রচনা হতে পারে।" রূপসী বাংলা হোটেল থেকে হেঁটে যাচ্ছি শাহবাগের দিকে। মনে হচ্ছে যে অদৃশ্য জাদুতে দেশটা হঠাৎই যেন বদলে গিয়েছে। এত দিনের পরিচিত শাহবাগ স্কোয়ার হয়ে উঠেছে 'স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বর', বাঙালির চেতনার মিনার। |
রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
তারুণ্যের দেশপ্রেমের ডাক, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির ডাক মিলেমিশে একাকার এই গণজাগরণ মঞ্চে। যদিও হলুদ বসন্তের বৃষ্টিতে এখন কালো রঙের দাপট! প্রত্যেকের মাথায় কালো ফেট্টি, হাতে কালো ব্যান্ড দু'দিন আগে মৌলবাদীদের হাতে খুন হয়ে যাওয়া তাঁদের সাথী রাজীব হায়দরকে মনে করে। চারিদিক পোস্টারে ছয়লাপ '২১ ফেব্রুয়ারি অমর হোক'। জাতীয় পতাকার রঙের নানা রকমের টুপি-কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে। সবুজের মধ্যে লাল সূর্য। মনে পড়ে গেল, ৯/১১-পর নিউ ইয়র্কে দেখেছিলাম এ ভাবেই রাস্তায় শত শত জাতীয় পতাকা বিক্রি হতে। কাল রাজীবের মরদেহ যখন চত্বরে এসেছিল, মানবসমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে এগিয়ে চলেছিল, লাউড স্পিকারে বাজছিল প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের খোলা গলার গান, 'সব মরণ নয় সমান'। কলকাতা থেকে কবীর সুমন শাহবাগ আন্দোলনের 'শহিদ' রাজীবকে নিয়ে গান বেঁধে পাঠিয়েছেন, বেজেছে তা-ও। এ ছাড়া বিভিন্ন কণ্ঠে ফিরে ফিরে এসেছেন সলিল চৌধুরী, '...তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা'। জাতীয় পতাকার পাশাপাশি এখানে কালো রঙের টি শার্ট বিক্রি হচ্ছে, বুকে লেখা, 'রাজাকারের ফাঁসি চাই/অন্য কোনও বিচার নাই।' সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। জাতীয় সংসদে হইহই করে পাশ হয়েছে 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন সংশোধন বিল', যাতে ব্যক্তির পাশাপাশি জামাতে ইসলামির মতো সংগঠনকেও তোলা যাবে কাঠগড়ায়। কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়ে সরকারও উচ্চ আদালতে যেতে পারবে। এই শাহবাগ আসলে ছিল মোগল বাদশাদের হাইকোর্ট এলাকা। সেখানে তারা রচনা করেছিলেন বাগান, আজ যার নাম সোহরাবর্দি উদ্যান। সেই বাগান নেই, কিন্তু রয়েছে সার সার ফুলের দোকান। সকালে ফুল কেনাবেচা হয়। সেই দোকানগুলি থেকে আন্দোলনকারীরা গোলাপ ফুল কিনে একে অন্য জনের বুকে গেঁথে দিচ্ছেন। স্থানীয় ব্যাপারী আফাজুদ্দিন বললেন, "প্রচুর টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে গত কয়েক দিনে।" মাথায় 'একুশ' লেখা ফুলের মুকুটও লাগাচ্ছেন অনেকেই। ছেলেমেয়েদের মুখের উল্কি, আল্পনায় লেখা'ফাঁসি চাই'। এক জন অন্য জনের পিঠে পোস্টার সেঁটে দিলেন, তাতে লেখা'আমাদের ধমনীতে শহিদের রক্ত।' এক জন হাঁপানির রুগি এসেছেন ইনহেলার-এর ভরসায়! এসেছেন শিশু কোলে মা। ভাইবোন হাত ধরাধরি করে প্রতিবাদে মুখর। এক জন যুদ্ধাপরাধী শাহবাগের সন্নিকটে মুজিবর রহমানের নামাঙ্কিত ওই হাসপাতালেই আছেন। তার বাইরে উত্তাল স্লোগান 'এ প্রজন্ম যুদ্ধ দেখেনি, রাজাকারেরাও যুদ্ধ দেখেনি। সময় এখন যুদ্ধ দেখিয়ে দেওয়ার'। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই বিশাল জমায়েতের একটা অর্থনীতিও আছে। খেটে খাওয়া মানুষ যেন মেলা বসিয়ে দিয়েছেন এখানে। চাল গুঁড়ো করে চুলো বানিয়ে রাত জেগে পিঠে তৈরি হয়েছে। চলছে অবিরাম বিক্রি। বিএনপি-র খালেদা জিয়া আজ ঢাকায় জনসভা করেছেন। বিএনপিও সুকৌশলে আজ এই আন্দোলনকারীদের সমর্থন করেছে। নিহত রাজীবের খুনিদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, জামাত নেতারা খালেদার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও, খালেদা তাদের সময় দিচ্ছেন না। আসলে রাজীব হত্যার পর জনমত এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, তার শরিক না হয়ে উপায় নেই কারওরই। তবে জামাতের তাণ্ডব চলছেই। ঢাকায় ক্যাডারদের জড়ো করছে জামাত-শিবির। নেতাদের মুক্তির দাবিতে কাল দেশজুড়ে হরতাল ডেকেছে তারা। সেই হরতাল ব্যর্থ করার ডাক দেওয়া হয়েছে শাহবাগ থেকে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সব দোকানপাট খুলে রাখা হবে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, স্কুল কলেজও খোলা থাকবে। পরিবহণ মালিক সমিতিও সর্বত্র বাস চালানোর কথা জানিয়েছে। রাতেই ঢাকার সর্বত্র বিজিবি-র আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মানুষ তৈরি, সরকারও প্রস্তুত শক্ত হাতে হরতাল মোকাবিলায়। এই অভূতপূর্ব জমায়েতের সাক্ষী থাকলেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে, সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। ফিরে আসার সময় বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির সঙ্গে নৈশভোজে তিনি দ্বিধাহীন ভাবে বললেন, "এই রকম গণজাগরণ অভাবনীয়!" হাসিনাও আজ ভারতের প্রশংসা করেছেন ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের কথা তুলে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকার সময় বাংলাদেশের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল, আজ তার প্রথম কিস্তিটা দিয়েছেন খুরশিদ। পদ্মার সেতু শেষ পর্যন্ত ভারতের টাকা দিয়ে করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নেতৃত্ব। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও না কোনও ভাবে ভারতের ভূমিকাটাও উঠে এসেছে। শাহবাগ থেকে বইমেলা হাঁটা পথ। আর একটু এগোলেই শেখ মুজিবর রহমানের স্বাধীনতার আগের বক্তৃতা-প্রাঙ্গণ। যারা এখানে আসছেন, তিনটিতেই যাচ্ছেন। বইমেলায় এক প্রকাশক অবশ্য অভিযোগ করলেন, "আপনারা ভারতীয় সাংবাদিক। আমাদের যত বড় আন্দোলনই হোক, ভারতের কাগজে তার প্রচার দেখি না। অথচ মিশর বা সিরিয়ায় কিছু হলে ফলাও করে ছাপেন।" তাঁর প্রশ্ন, "আমাদের ব্যাপারে এত কার্পণ্য কেন?" হাঁটতে হাঁটতে হোটেল ফেরার সময় একটাই কথা মনে হচ্ছিল। গোটা পৃথিবী জুড়ে নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজ এক গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক পৃথিবী গড়তে লড়াই করে চলেছেন। আন্দোলনের এই বিশ্বায়নে বাংলাদেশও আজ নিজেকে যুক্ত করে নিল। http://www.anandabazar.com/18bdesh2.html |
কলকাতা: কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা জোড়া ধর্মঘটের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে পুরোদমে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জোর করে বনধ করলে তা অপরাধমূলক কাজ হিসাবে গণ্য করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার জনসভা থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি৷ এদিন আমতলায় এক সরকারি অনুষ্ঠান থেকে নিজের কট্টর বনধ-বিরোধী মনোভাব জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, বনধ ব্যর্থ করতে হবে৷ জোর করে কেউ বনধ করলে তাঁকে অপরাধমূলক কাজ বলে গণ্য করবে সরকার, সেইমতো শাস্তি হবে৷ বনধে দোকান-বাজার খুলতে রাখতে গিয়ে কিংবা গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনও ক্ষতি হলে সরকার তার ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও ফের জানান তিনি৷ বনধ-বিরোধী মানুষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, বনধের দিন পাহারাদারের ভূমিকায় থাকবেন তিনি৷ বলেছেন, আমি পাহারাদার, বনধ করতে দেব না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আঁচ পাওয়া গিয়েছে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের নির্দেশিকাতেও৷ ২০ ও ২১ তারিখ ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীরা দফতরে হাজির না হলে কোনওরকম ছুটি মঞ্জুর হবে না, এই মর্মে সোমবার এক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, সব সরকারি দফতরে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও কেউ যদি দফতরে অনুপস্থিত থাকেন এবং ছুটির ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে না পারেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ধর্মঘটের দিন জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সব জেলাতেও নিরাপত্তার সব রকমের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মহাকরণ থেকে৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূল সরকারের দু'বছর কাটতে চললেও এখনও পর্যন্ত বড় শিল্প অধরা৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে বনধ-অবরোধের রাজনীতির বিরোধিতায় আরও সুর চড়িয়ে নিজের শিল্প-বান্ধব ভাবমূর্তিই তুলে ধরার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33694-2013-02-18-13-57-03
বেনজির স্মরণ। মোমবাতির আলোয় নিহত সহকর্মী তাপস চৌধুরীকে স্মরণ করলেন কলকাতা পুলিসের কর্মীরা। বহু প্রতিবাদ আন্দোলনের সাক্ষী মেট্রো চ্যানেলের স্মরণসভায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গে হাজির ছিলেন কর্মরত বহু পুলিস কর্মীও। কলকাতা পুলিসের ইতিহাসে এই প্রথমবার।
সহকর্মী তাপস চৌধুরী খুনের ঘটনায় বারো জনকে গ্রেফতার করার পরও কলকাতা পুলিসের ওপর ভরসা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের নেতাকে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তদন্তভারও। পুলিসকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। সেই ক্ষোভ আর শোকের সাক্ষী রইল রবিবারের মেট্রো চ্যানেল। নজিরবিহীনভাবে সহকর্মী তাপস চৌধুরীর স্মরণসভায় আয়োজন করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিস কর্মীরা। প্রাক্তনদের সঙ্গে শোকে সামিল বহু কর্মরত পুলিসকর্মীও। মোমের আলোয় সহকর্মীকে স্মরণ করলেন, সমবেদনা জানালেন তাপস চৌধুরীর পরিবার পরিজনদের ।
পোষাকে রয়েছেন। তাই এগোতে পারলেন না অনেকেই। এগোতে পারলেন না রুজিরুটির স্বার্থে। সহকর্মীর শোক বিহ্বল করলেও, বাহিনীর শৃঙ্খলায় হাতে-পায়ে-মনে বেড়ি। তাই থাকতে হল নির্লিপ্ত। কিন্তু চোখে মুখে ঝরে পড়ে সমবেদনা। একটু দূর থেকেই তাপস চৌধুরীকে স্মরণ করলেন কর্মরত পুলিস আধিকারিকরা। কেউ বা একটু এগিয়ে এলেন।
বন্দুকের ব্যবহার অজানা নয় কারোরই কাছে। জানেন, কখন, কেন আর কীভাবে গুলি চালাতে হয়। তবু দেখেছেন, নিরস্ত্র সহকর্মীকে লুটিয়ে পড়তে। কেউ চোখের সামনে, কেউ বা টিভির পর্দায়। সে দৃশ্যে বুকের মধ্যে দলা পাকিয়েছে বেদনা, জমাট বেঁধেছে ক্ষোভ। তবু উর্দির শৃঙ্খলায় বন্দি সকলেই। দূর থেকেই সহকর্মীকে শ্রদ্ধা জানালেন। কেউ বা একটু এগিয়ে এলেন। চাকরির তোয়াক্কা না করেই প্রশ্ন তুললেন, বারোই ফেব্রুয়ারি কেন পুলিস ছিল নিরস্ত্র, আর দুষ্কৃতীর হাতে বন্দুক?
পুলিসের চাকরির অলিখিত শর্ত ওঁদের কারোরই অজানা নয়। অজানা অলিগলিতে লুকিয়ে থাকে মৃত্যু। বহুবারই মুখোমুখি হতে হয়। সেই শর্ত মেনে নিয়েছেন ওঁরা। মানতে পারছেন না সেই শর্ত, যা সংবিধানে লেখা নেই। যা ট্রেনিংয়ে শেখানো হয় না।
উর্দির বাধ্যবাধ্যকতা মাথায় রেখেই রবিবার সন্ধেয় মেট্রো চ্যানেলে তাপস চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান কর্তব্যরত বহু পুলিসকর্মী। তাঁদের অনেকেই ছিলেন সাদা পোশাকে। যাঁরা আসতে পারলেন না তাঁরা একটু দূর থেকেই স্মরণ করলেন। তবে মন থেকে হয়ত দূরে থাকলেন না সহকর্মীর থেকে।
আগামী ৬ মাস রাজ্যে সমস্ত কলেজে নির্বাচন স্থগিত রাখার আর্জি জানাল রাজ্য সরকার। সোমবার মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই কথা জানান।
আগামী ৬ মাস নির্বাচন বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল কলেজে বোর্ড পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সহ বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে যেহেতু ব্যাপক পুলিসি নিরাপত্তার প্রয়োজন, সেই কারণে নির্বাচন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে না। কোনও নির্দিষ্ট ঘটনা নয়, রাজ্য জুড়ে ছাত্র নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্যই এই আর্জি বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর ফলে গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজ সহ সব কলেজেই নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেল। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত পুরোনো ছাত্র সংসদই পরিবর্তন হবে না।
তবে মন্ত্রীর যুক্তি মানতে নারাজ শিক্ষা মহলের একাংশও। তাঁদের দাবি প্রায় দশকের উপর সময় ধরে প্রতি বছর এই সময়েই বিভিন্ন কলেজে নির্বাচন হয়ে থাকে। মাদ্রাসা, মাধ্যমিক সহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও একই সময়ে হয়। তাঁদের প্রশ্ন তবে কি শিক্ষামন্ত্রী এ কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন যে বর্তমানে কলেজ নির্বাচন আদতে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই হয়ে ওঠায় ব্যাপক পুলিস বাহিনী ছাড়া উপায় নেই? তবে কি পরীক্ষা সামাল দিতে গিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা একপ্রকার প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়? উঠছে সে প্রশ্নও।
গুড়িয়া কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ঘটনার সিআইডি তদন্তে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এজন্য রাজ্যকেও তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের মতে ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। তাই সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআইয়ের হাতে আজই সমস্ত নথিপত্র তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সংসদ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আবাসিক গুড়িয়া। পরে হোমেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। চব্বিশ ঘণ্টার খবরে সেই ঘটনা সামনে আসে। এরপর সামনে আসে আরও দুই আবাসিকের মৃত্যুর খবর। সিআইডি এতদিন ঘটনার তদন্ত করলেও, তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে অসন্তুষ্ট কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
দাবি মতো তোলা মেলেনি। সে জন্যই এক ঠিকাদারকে প্রচণ্ড মারধরের পর গুলি করে পালাল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিংয়ের রবীন্দ্রপল্লিতে। আহত ঠিকাদার সুমিত ঘোষকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের রাস্তা তৈরির ঠিকা নিয়েছিলেন সুমিতবাবু। তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা তোলা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করেন সুমিত ঘোষ। এরপরই রবিবার রাতে তাঁকে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির সোহেল আড়ির নাম করে ডেকে নিয়ে যায় বেশ কয়েকজন। বাইরে গেলেই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। দুই রাউন্ড গুলিও করা হয় বলে জানা গেছে। যদিও সুমিত ঘোষের গুলি লাগেনি। ক্যানিং হাসপাতালে চিকিত্সার পর তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জমি-সমস্যার কারণে বড় শিল্পের আশাই করছে না রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টা সৌগত রায় তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন রবিবার। তৃণমূলের এই সাংসদ প্রথমে কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভা ও পরে সাংবাদিকদের কাছেও কবুল করলেন বড় শিল্প আসবে না ধরে নিয়েই রাজ্যের নয়া শিল্পনীতি তৈরির সুপারিশ করেছেন তিনি।
সৌগতবাবুর বক্তব্য, এ রাজ্যে জমির যা চরিত্র এবং রাজ্য সরকার যেহেতু জমি অধিগ্রহণের বিরোধী, তাই বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে জমি পাওয়া সমস্যার। সে কারণেই তিনি খসড়া শিল্পনীতিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই ছোট ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বড় শিল্প ছাড়া সেই সব শিল্প কী ভাবে বাঁচবে, সে প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। কারণ, বড় শিল্পের সহযোগী ও অনুসারী শিল্প হিসেবেই বেড়ে ওঠে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুচ্ছ। আবার তাদের উপরে নির্ভরতা থাকে বড় শিল্পগুলিরও।
শিল্পে গত কয়েক দশকের খরা কাটাতে বাম আমলের শেষ দফায় উদ্যোগী হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তৎপর হয়েছিলেন রাজ্যে বড় শিল্প আনতে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বড় শিল্পের উপর নির্ভরতার বিরুদ্ধে সরব। হস্তশিল্প মেলা হোক বা বেঙ্গল লিডস, সর্বত্রই বড় শিল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, শিল্পের গণ্ডিতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন কলা-শিল্প কিংবা উৎসবকেও! তাঁর দাবি, সব ক্ষেত্রেই মূল বিষয় হল কর্মসংস্থান। যা বড় শিল্প না থাকলেও ছোট ও মাঝারি বা কলা-শিল্পের মাধ্যমেও হয়। এবং বেশিই হয়।
এটা স্পষ্ট যে মমতার ওই অবস্থান ও তাঁর শিল্প উপদেষ্টার এ দিনের বক্তব্যের পিছনে রয়েছে তাঁদের জমি-ভাবনা। বা আরও সরাসরি বললে জমি-রাজনীতি। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে তৃণমূল। কিন্তু রাজ্যে জমির যা চরিত্র তাতে বড় শিল্পের পক্ষে বিপুল সংখ্যক জমি মালিকের সঙ্গে কথা বলে বড় জমি কেনা যে প্রায় অসম্ভব, শিল্পগোষ্ঠীগুলি তা ভাল করেই জানে। এ রাজ্যে নিজেরা জমি কিনে প্রকল্প গড়তে গিয়ে দীর্ঘদিনের চেষ্টাতেও পুরো জমি জোগাড় করতে না পারার অভিজ্ঞতা হয়েছে বেশ কয়েকটি শিল্পসংস্থার। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দল ও সরকারের বাধ্যবাধকতাই যে রাজ্যে বড় শিল্প স্থাপনের অন্তরায় রবিবার সৌগতবাবুর কথাতেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এ দিন।
সৌগতবাবু অবশ্য তুলেছেন রাজ্যের ঘনবসতি ও কৃষির প্রসঙ্গও। তাঁর কথায়, "পশ্চিমবঙ্গে যে রকম জমির অভাব তাতে বড় শিল্প গড়তে গেলে জমি পেতে অসুবিধা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বাইরে অনুর্বর জমি পাওয়া মুশকিল। আর আমরা শিল্পের জন্য উর্বর কৃষিজমি নেওয়ার বিরোধী। সিঙ্গুরে যে ভাবে উর্বর জমিতে টাটাদের কারখানা হচ্ছিল, তা ঠিক নয়। তা ছাড়া জমিও শিল্প সংস্থাকেই কিনতে হবে। জোর করে জমি নেওয়া হবে না। এটা তো ঘোষিত নীতি।" সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কের প্রাথমিক হিসেবও বলছে, ওই কয়েকটি জেলায় এক লপ্তে কিছুটা বেশি জমি আছে। তবে তা-ও বড় শিল্পের জন্য যথেষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতির জন্য সৌগতবাবু তাঁর সুপারিশে ছোট ও মাঝারি (এমএসএমই) শিল্পের পক্ষে সওয়াল করেছেন। বলেন, "এমএসএমই-র উপরেই জোর দিতে হবে আমাদের। তাতে বেশি লোকের কাজ হবে। জমির সমস্যাও অনেকটা কমবে।" জমির প্রশ্নটা তত বড় নয়, এমন কিছু শিল্পে জোর দেওয়ার কথাও বলেন সৌগতবাবু, "যেমন পর্যটন, যেটা মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে, তথ্য প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তির মতো নতুন নতুন ক্ষেত্র।"
কিন্তু শিল্পমহলের মতে, রাজ্যের সার্বিক বিকাশের জন্য বড় ও ছোট-মাঝারি শিল্পের মধ্যে গাঁটছড়া জরুরি। তাদের পারস্পরিক নির্ভরতাই আর্থিক বিকাশের সূত্র। বস্তুত, সে কথা মাথায় রেখেই হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যালস-কে ঘিরে সার্বিক শিল্পাঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। ওই জমানার শেষ দিকে পুরুলিয়ায় একই ভাবে তিনটি বড় ইস্পাত প্রকল্পকে ঘিরে ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য শিল্প তালুক তৈরির জন্যও অনেক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সিঙ্গুর পরবর্তী পর্বেও শিল্পনোনয়ন নিগম প্রায় আট হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। নিজেরা জমি অধিগ্রহণের বিরোধী হলেও শিল্পের জন্য সৌগতবাবুর দাওয়াই কিন্ত রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম বা দফতরগুলির হাতে থাকা ওই সব অধিগৃহীত জমিই।
সেই সব জমিতেও বড় শিল্প না হলে যে ছোট ও মাঝারি শিল্পের বিপদ বাড়বে, তার বড় উদাহরণ ফাউন্ড্রি শিল্প। এক সময় এ রাজ্যের ফাউন্ড্রি শিল্পের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছিল। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রি কংগ্রেস-এর অনুষ্ঠানে শিল্পকর্তারা বলেছিলেন, এই মাঝারি শিল্পের উন্নতির জন্য প্রয়োজন গাড়ি, ট্র্যাক্টর ও রাস্তার বাইরে চলার উপযোগী বড় ধরনের গাড়ির শিল্প। ফাউন্ড্রি শিল্পের বিকাশ চাইলে এ রাজ্যেও ওই ধরনের বড় শিল্প জরুরি।
নির্বাচনী ইস্তাহারে তৃণমূল রাজ্যে অনেকগুলি শিল্পগুচ্ছ (ক্লাস্টার) গড়ার কথা বলেছিল। কিন্ত বড় শিল্প না থাকলে সেগুলির ভবিষ্যতই বা কী দাঁড়াবে, শিল্পমহল তা নিয়ে সংশয়ে।
সৌগতবাবু জানিয়েছেন, তিনি সার্বিক ভাবে একটি পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম ও তার জন্য তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যকে।
কনভেনশনে সৌগত বাবু ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে আপত্তির কথা ফের উল্লেখ করেন। তাঁদের দাবি, ওয়ালমার্টের মতো সংস্থা এ দেশে পা রাখলে দেশের লাভ নেই। বরং ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে।
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33671-2013-02-18-04-15-09
পশ্চিমবঙ্গে জমির আন্দোলনে গুলির অভিযোগ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায় কয়লা উত্তোলন শিল্প গড়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ে পুলিশের গুলিতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য পুলিশ গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছে যে গ্রামবাসীদের ছোঁড়া তীর ও পাথরের আঘাতে ২৭ জন পুলিশ-কর্মী আহত হয়েছেন।
বীরভূমের দুবরাজপুরে কয়লা উত্তোলন শিল্পের জন্য নেওয়া জমির বদলে বাসিন্দারা জমির জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করছিলেন।
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসে গতবছর।
এর আগে বামফ্রন্ট সরকার নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের ওপর গুলি চালিয়ে একদিনেই অন্তত ১৪ জন কৃষককে হত্যা করেছিল।
বীরভূম জেলার দুবরাজপুরে আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন মহিলাসহ অন্তত ৫ জন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গুলি চালানোর আগে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসও ছোঁড়ে।
কিন্তু সংখ্যায় প্রচুর বেশি হওয়ায় মারমুখী গ্রামবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ বাহিনী।
গ্রামবাসীদের ছোঁড়া তীর ও পাথরের আঘাতে কয়েকজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারসহ ২৭ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করলেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদের ব্যানার্জী কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেন যে পুলিশ গুলি চালায়নি।
স্থানীয় ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা জয়দীপ মজুমদার স্বরাষ্ট্র সচিবের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলছেন যে গুলি চালিয়েছে পুলিশই।
পুলিশ যদি গুলি না চালিয়ে থাকে তাহলে কে গুলি চালালো, সেটা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি।
সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দুবরাজপুরের লোবা গ্রামে কয়লা উত্তোলনের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল।
ওই জমির জন্য যে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজী হয়েছিল কয়লা উত্তোলক সংস্থাটি, কিন্তু গ্রামবাসীরা আরও বেশি টাকা দাবি করেন।
তারপর থেকে সেখানে ভূমি রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়। একটি কয়লা উত্তোলন যন্ত্র আটকে রাখেন বাসিন্দারা। ওই যন্ত্র উদ্ধারের জন্য আদালতের নির্দেশেই আজ পুলিশ ওই গ্রামে গিয়েছিল।
তবে ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা মি. মজুমদার বলছেন যে কয়লা উত্তোলন শিল্পে তাঁদের আপত্তি নেই যদি বাড়তি ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও চাকরি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপরে পুলিশের গুলি চালনা ও ১৪ জন কৃষকের মৃত্যু নিয়ে বছর পাঁচেক আগে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।
তারও আগে সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও পুলিশী নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল।
ওই দুটি আন্দোলনেরই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
এখন তাঁর সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধেই গ্রামবাসীদের ওপরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল।
নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন জায়গাতেই জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলেছে আর জমি অধিগ্রহণের এই জটিলতার ফলে রাজ্যে নতুন কোনও বড় শিল্প স্থাপিত হয়নি।
এর জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকেই দোষ দিয়ে থাকে শিল্প-বাণিজ্য মহল।
http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2012/11/121106_mrk_wb_land_clash.shtml
জমি নিয়ে জালিয়াতি, সেও সেই নন্দীগ্রামে |
আনন্দ মণ্ডল • নন্দীগ্রাম |
রেলের প্রকল্পে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তিতে 'খাস' হয়ে গিয়েছিল জমি। 'ভূমিহারা' হিসাবে ভুয়ো দাবি প্রতিষ্ঠা করে রেলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ এবং মূলত চাকরি হাসিলের চেষ্টায় অবৈধ ভাবে সেই খাসজমিই কেনাবেচা হয়েছে। জমি নিয়ে এ হেন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে জমি-রক্ষা আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রামে। 'অবৈধ' এই জমি কেনা-বেচায় ভূমি-দফতরের ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। জালিয়াতিতে জড়িয়েছে শাসক তৃণমূলের একাংশের নাম। যদিও 'অনিয়ম' নিয়ে সরবও হয়েছে তৃণমূলেরই অন্য অংশ। ২০০৯-এ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তমলুক-দিঘা রেলপথের দেশপ্রাণ স্টেশন (বাজকুল) থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির ঘোষণা করেন। ২০১০-এর ৩০ জানুয়ারি মমতা স্বয়ং নন্দীগ্রামে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। ১২১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে ১৮০ একর জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেল। ওই বছরই ডিসেম্বরে ফের এক দফা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জমির প্লট নম্বর, পরিমাণ, মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে তা 'খাস' ঘোষণা করা হয়। রেল-প্রকল্পে জমি দিলে ক্ষতিপূরণ হিসাবে বাড়তি দাম ছাড়াও ভূমিহারা পরিবার-পিছু এক জনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন রেলমন্ত্রী। মূলত এই চাকরির আশ্বাসই নন্দীগ্রামে রেল-প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ মসৃণ করেছে। আবার এই 'প্যাকেজ'ই জমি-জালিয়াতিরও কারণ হয়েছে বলে মনে করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। রেল-প্রকল্পের জন্য 'খাস' ঘোষণার পরেও গত ৫ অগস্ট নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ঘোলপুকুরিয়া মৌজার (জেএল নং ১৩৪) ৪১০৬ নম্বর দাগের জলাজমির ১ ডেসিমেল করে অংশ কেনেন ১৪ জন। যাঁদের কেউ কেউ এমনকী চণ্ডীপুর, কাঁথিরও বাসিন্দা। একই দিনে নামমাত্র পরিমাণ জমি ১৪ জন কেনার সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সনাক্তকারী ছিলেন মাত্র এক জনই! তার পরেও ব্লক ভূমি-দফতর ওই ১৪ জনের নামে জমি রেকর্ড করে। যার সুযোগ নিয়ে ওই ১৪ জন নিজেদের 'ভূমিহারা' দাবি করে রেলের কাছে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দরখাস্তও করেন। একই মৌজায় ৪২১৯ দাগে ২ জন, ৪২১২ দাগে এক জন ১ ডেসিমেল করে জমির ক্রেতা হিসাবে গত ১৯ অগস্ট ফের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। ৪২০৭ দাগেও ৭ জন এ ভাবে রেজিস্ট্রেশন করান। অধিগ্রহণ বিজ্ঞপ্তির আগে যাঁরা জমির স্বত্বভোগী ছিলেন, ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জনের চাকরির আশ্বাসেই তাঁরা রেলকে জমি দিতে সম্মত হন। তার পরে জমি 'খাস' হয়। সেই 'খাসজমি'রই অংশ ফের 'রায়তি' দেখিয়ে যাঁরা বিক্রি করেছেন, তাঁরাও জড়িয়ে জালিয়াতিতে। ভূমি-দফতরের 'বাস্তঘুঘু'দের যোগসাজশ ছাড়া যে অবৈধ এই কেনাবেচা করা সম্ভব নয়, তা একান্তে মানছেন দফতরেরই একাধিক আধিকারিক। নন্দীগ্রামের অ্যাডিশনাল সাব-রেজিস্ট্রার সুমন বসুর বক্তব্য, "আইন অনুযায়ী অধিগৃহীত খাসজমি কেনাবেচা যায় না। এমনটা হলে তা অবৈধ। যদি প্রমাণ হয় ওই জমি আগেই অধিগৃহীত হয়েছে, তা হলে নতুন রেজিস্ট্রেশন বৈধ হবে না।" পাশাপাশি তাঁর সংশয়, "রেল-প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত খাসজমির তালিকা (নিজের আইনে রেল সরাসরিই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে) ভূমি-দফতরের হাতে না এলে অবশ্য স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে কেউ রেজিস্ট্রেশন করাতেও পারেন।" রেল সূত্রের অবশ্য দাবি, জমির দাগ নম্বর, মালিকানা, পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য ভূমি-দফতরই দিয়েছে। তাই জমি 'খাস' হওয়ার বিষয়টি কোনও ভাবেই ওই দফতরের অজ্ঞাত নয়। এ ব্যাপারে ভূমি-দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তা, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ভূমি-রাজস্ব আধিকারিক অমিতাভ বিশ্বাস মুখ খুলতেই চাননি। 'অনিয়ম' নিয়ে অবশ্য সরব হয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ব্লক নেতা মহাদেব বাগ। তাঁর বক্তব্য, "রেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে অবৈধ জমি কেনা-বেচায় একটি চক্র জড়িত। আমাদের দলেরও কেউ কেউ যুক্ত। প্রশাসনের একাংশের ভূমিকাও সন্দেহজনক। দল ও সরকারের উচ্চ-মহলে বিষয়টি জানিয়েছি।" মহাদেববাবু যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছেন, তাঁদের অন্যতম তৃণমূলেরই সদ্য-প্রাক্তন ব্লক যুব-সভাপতি পরিতোষ জানা। তিনি নিজে খাস হওয়া জমির ১ ডেসিমেল কিনেছেন। অন্য কয়েক জনকেও কিনতে 'উৎসাহিত' করেছেন। তাঁর স্বীকারোক্তি, "গরিব মানুষ। ভেবেছিলাম রেলের চাকরি পেলে সংসারটা বাঁচবে। ভূমি দফতরও তো রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। তবে নিয়মে আটকালে মাথা পেতেই নেব।" পরিতোষবাবুর ইঙ্গিত, আরও কয়েক জনের 'পরামর্শ' রয়েছে এই কাজে। সেই 'পরামর্শদাতা' এবং ভূমি দফতরের 'বাস্তুঘুঘু'দের চিহ্নিত করার দায় প্রশাসনেরই। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না জানিয়ে জেলাশাসক রাজীব কুমারের বক্তব্য, "নিশ্চয়ই খোঁজ নেব। অধিগৃহীত খাসজমি কেনাবেচা যায় না। এমনটা হয়ে থাকলে তা অবশ্যই অবৈধ।" http://www.anandabazar.com/archive/1111203/3med1.html জমি অধিগ্রহণ নীতিই বামফ্রন্ট বিপর্যয়ের কারণ: প্রকাশ কারাত তিনি জানান, রাজ্যের প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক স্তরে ত্রুটি ছিল। তার মতে, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তা করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। দলীয় কর্মীরাও সাধারণ মানুষের থেকে বেশ কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বলে তার দাবি। তিনি বলেন, আগের কয়েকটি নির্বাচনে খারাপ ফলের পরেও তা থেকে শিক্ষা নেয়নি তৎকালীন বাম সরকার ও রাজ্য বাম নেতৃত্ব। তবে তিনি এও বলেন, মানুষ শুধুমাত্র পরিবর্তনের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। অন্য কোন ইস্যু এখানে পরিবর্তন ঘটায়নি। মানুষ পরিবর্তন চাওয়ার কারণেই নির্বাচনে বামেদের বিপর্যয় হয়েছে। তার মতে, এই পরিবর্তনের ধারনা সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির থেকেই মানুষের মনে এসেছে। এদিকে রাজনৈতিক মহলের ধারনা, আজ এই বার্তা দিয়ে রাজ্যে নির্বাচনে বিপর্যয়ের জন্য নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার ও রাজ্য বাম নেতাদেরকেই দায়ী করলেন প্রকাশ কারাত। কলকাতা: জমি নিয়ে পার্টির অবস্থানকেই চ্যালেঞ্জ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ ঘিরে লাগাতার আন্দোলনের ধাক্কায় পরিবর্তনের ঝড়ে ভেঙে পড়ে রাজ্যের বাম দুর্গ৷ ২০১১-র বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর বিজয়ওয়াড়ায় বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও উঠে আসে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে৷ সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে বুদ্ধদেবকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান কারাটরা৷ দলের সেই অবস্থানকেই এবার কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে তাঁর স্পষ্ট মত, আগে দিল্লিতে নতুন আইন হোক৷ তারপর বিজয়ওয়াড়া দলিলের পর্যালোচনা৷ তিনি মনে করেন না, শিল্পপতিরা নিজেরা জমি কিনে শিল্প করবেন৷ পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি-নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের হাতে বেশি ক্ষমতা না থাকলে দৌরাত্ম্য বাড়বে জমি মাফিয়াদের৷ সম্প্রতি বিভিন্ন জনসভাতেও সরকারের জমিনীতির সমালোচনায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন এবিপি আনন্দর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারেও তিনি বলেন, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে শিল্পপতিরা হাত গুটিয়ে নেবেন৷ সেক্ষেত্রে জমি মাফিয়াদের দাপট বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে৷ বুদ্ধদেবের দাবি, তাঁর ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর রাজ্যে একটিও নতুন শিল্প হয়নি৷ কটাক্ষ করে বলেন, এভাবে চললে পাঁচ বছর পর রাজ্যের যা চেহারা হবে তাতে সারা দেশ হাসবে৷ http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33299-2013-02-06-12-30-20 |
আজও কাঁদছে নন্দীগ্রাম
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে বুদ্ধদেবের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি রাজ্যের
আনন্দবাজার – শুক্র, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনায় রাজ্যের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকাও খতিয়ে দেখুক সিবিআই। প্রয়োজনে তাঁকেও জেরা করা হোক। একইসঙ্গে তত্কালীন পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজন পদস্থ কর্তার বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করেছে রাজ্য। এই মর্মে সিবিআইকে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর।
২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি চালনার অভিযোগ ওঠে। এরপর হলদি নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই।
যদিও, সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এর আগে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজ্য। এবার নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় রাজ্যের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে সিবিআই-কে চিঠি দিল রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি নন্দীগ্রামকাণ্ডে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিককে জেরার অনুমতি চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দেয় সিবিআই। উত্তরে দেওয়া স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা পাল্টা চিঠিতে লেখা হয়েছে, তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই নন্দীগ্রামে পুলিশ পাঠান। সেক্ষেই তাঁকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও জেরা করা হোক।
রাজ্য যে সিবিআইয়ের তদন্তে আদৌ খুশি নয়, তা চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে। ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে বামেরা। রাজনৈতিক মহলের মতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএমকে অস্বস্তিতে ফেলতেই নন্দীগ্রামের পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাইছে শাসকদল।
সিঙুর , নন্দীগ্রাম - বামপন্থী বর্বরতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ
পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী শাসিত পুঁজিবাদী সরকার রাজধানী কলকাতার অনতিদূরের গ্রামীন এলাকা সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের নিরস্ত্র শোষিত জনতা ও কৃষি শ্রমিকদের ওপর জঘণ্য আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। রাজ্যের বতর্মান সরকার গায়ের জোরে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করছে তথাকথিত 'শিল্পায়ন' এবং স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার জন্য যার প্রধান উদ্দেশ্য হল পুঁজিপতিদের শ্রমিকশ্রেণিকে ইচ্ছামত শোষন করার উপযুক্ত বিশেষ সুবিধা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করা। সিঙুর এবং নন্দীগ্রামের মানুষ এই জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এমতাবস্থায় রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ও সি পি আই (এম) [1]-র ক্যাডার বাহিনীর 'পবিত্র' জোট আন্দোলনকারীদের ওপর ভয়ংকরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিনা প্ররোচনায় গত ১৪ই মার্চ এই পবিত্র জোট নিরস্ত্র শিশু, বৃদ্ধ মহিলা এবং পুরুষের ওপর নিবির্চারে গুলি চালিয়েছে, নারীদের ওপর যৌন নিযার্তন করেছে, শিশুদের পযন্ত রেহাই দেয় নি-খবরে প্রকাশ তাদেরকে নির্মমভাবে ধর থেকে মাথা ছিঁড়ে মেরে ফেলা হয়েছে। শত শত মানুষ আহত, নিহতের সংখ্যা এখনও সঠিক জানা যায় নি কারণ ওই পবিত্র জোট সেসব লাশ গায়েব ক'রে দিয়েছে। এই ভয়ংকর পাশবিক সন্ত্রাস যেকোন সুস্থ স্বাভাবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের মনে ভীষণ ঘৃণার উদ্রেক না করেই পারেনা। আসলে এই ঘৃণা প্রকাশের কোন ভাষা আমাদের জানা নেই।
এই সংগ্রামী মানুষজনের মধ্যে এখানকার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বাম দল সি পি আই (এম) তথা বামফ্রন্ট সরকারের প্রতি হয়তো কিছু ভ্রান্ত প্রত্যাশা ছিল যে তারা সংগ্রামী মানুষের কথা শুনবে এবং তাদের দাবী মেনে নেবে। বিশেষত: যখন এই সি পি আই (এম ) দল অবিরাম পশ্চিম বঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মর্যাদা তথা জীবনযাপনের মান উন্নয়নের কথা সুনিশ্চিত করার কথা বলে চলে এবং বলতে গর্ব বোধ করে। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল মানে পুঁজির বাম ডান দলগুলোও এই প্রত্যাশাতেই ইন্ধন যুগিয়েছে এবং তাদের এই অস্তিত্ব রক্ষার মরীয়া চেষ্টাকে নিজেদের সংসদীয় ক্ষমতা দখলের এবং রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজে লাগাচ্ছে। বিপরীতে বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের কাজ বতর্মান ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপনের এই ক্রমবধর্মান সংকটের মূল কারণ, পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থাটার আসল স্বরূপ উদ্ঘাটিত করা, শ্রমিক শ্রেণি তথা অন্যান্য শোষিত অংশের শ্রেণি-সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি এবং লক্ষ্য সম্বন্ধে সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা।
স্ট্যালিনিস্ট বর্বরতার ঘৃণ্য স্বরূপের সুস্পষ্ট প্রকাশ :
সি পি আই এম বলে গ্রামের গরীব মানুষের জন্য তারা যথেষ্ট করেছে, তাদের "অধিকার" দিয়েছে, ভূমিসংস্কারের প্রবর্তক তারাই; হ্যাঁ, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমি সংস্কারের কমর্সুচীকে যথাসম্ভব রূপায়িত করেছে, হয়তো অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় একটু ভালোভাবেই-তবে স্বভাবতই এসব করার কারণ তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান ঘাঁটি অর্থাৎ গ্রামের মেহনতী মানুষকে নিজের পক্ষে রাখাই। বলতে গেলে গ্রামের ওপর ভিত্তি করেই এত বছর ধরে এরা সরকারে থাকতে পেরেছে। স্বভাবতই এতকাল ক্ষমতায় থাকার ফলে তাদের স্পর্ধা বা ঔদ্ধত্যও বাড়াবাড়িরকমের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
যাহোক বতর্মানে তারা আবিষ্কার করেছে যে 'তাদের' সাধের পশ্চিমবঙ্গ নাকি ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে শিল্পায়নের ব্যাপারে বেশ পিছিয়ে পড়েছে! অতএব কোন কিছুর তোয়াক্কা নাকরেই সাত তাড়াতাড়ি 'দেশি/বিদেশি' পুঁজি টানার তোড়জোর শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্পকেন্দ্র বা নগরায়ণ যাই হোক তার জন্য লাগে জমি। ফলে তাদের জমি 'দখলের' নয়া লড়াই ---- সরকারী আইনের মুখে ঝামা ঘষে, রাজনৈতিক মস্তান বাহিনী/ মাফিয়া নামিয়ে, সন্ত্রাস সৃষ্টি ক'রে, একথায় যেনতেনপ্রকারেণ বাম সরকার জমি কেড়ে নেওয়ার প্রয়াসে নেমে পড়েছে। আর তারই ফল হ'ল এই নারকীয় হত্যালীলা-যা গুজরাটে আরএস এসের মুসলিম নিধন যজ্ঞের কথা অথবা কংগ্রেসীদের ১৯৭১-র রাডিক্যাল লেফটিস্টদের খতম করার ইতিহাস বা ১৯৮৪-র শিখ নিধনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এব্যাপারে এরা চীনের কমরেড 'দোসরের' কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছে যারা অনেককাল আগেই চীনের চাষীদের দুদর্শাকে পুঁজি ক'রে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে আর তারপর সেই চাষীদের ওপরই নিপীড়নের স্ট্রীম রোলার চালিয়েছে 'শিল্পায়নে'র খাতিরে! একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক কালে দ্রুত 'শিল্পায়ন'-র রাষ্ট্রীয় নীতির ফলে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কৃষকের সরকার বিরোধী আন্দোলন বর্বরোচিতোভাবে দমন করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, গত কয়েক বছরে চীনে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষের প্রায় ৯০,০০০ প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। এথেকে বোঝা যায়, রাডিক্যাল, অতিউগ্রসহ সবরকমের বামপন্থীরা পুঁজির দক্ষিণ অংশের মতই পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমস্তরকমের অমানবিক কাযর্কলাপ করতে পারে, পারে মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে।
অনেকেই ভাবেন সিপিএম দীর্ঘকাল সরকারে থাকার জন্যই এমন পচনশীল , দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু বতর্মান অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এটা সত্য মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের আলোয় বিচার করলে ব্যাপারটা অন্যরকম: প্রকৃতপক্ষে সিপিআই (এম), সিপিআইএম (এল), সিপিআই এবং অন্যান্য স্ট্যালিনিস্ট, মাওয়িস্ট ট্রটস্কাইট পার্টিগুলো আসলে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সেই সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ধারা যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রলেতারিয়েতের আন্তর্জাতিকতা এবং বিপ্লবী লাইন বর্জন ক'রে পুঁজিবাদী শিবিরে যোগদান করেছিল, আর জার্মানে ১৯১৯-র বিপ্লবের প্রয়াসকে ধ্বংস করেছিল। এরাই খুন করেছিল বিশ্ব বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা রোজা লুক্সেমবার্গ, কার্ল লিবনেখট্ আর লিও যোগিসেসের মত কম্যুনিস্টদের। যে তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিপ্লবের অগ্রণী নেতৃত্ব দেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এরাই স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সেই আন্তর্জাতিককে প্রতিবিপ্লবের আখরাতে পরিণত করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কসবাদের নামে এই গভীরতম প্রতিবিপ্লব বিশ্ব প্রলেতারিয়েতকে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয়, তাকে পর্যুদস্ত করেছিল রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবেও। এই প্রতিবিপ্লব প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামের সমস্ত ঐতিহাসিক শিক্ষা, তার তাত্ত্বিক হাতিয়ার, তার সংগঠন সবকিছুকেই লোপাট ক'রে দিয়েছিল। এরা মার্কসবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং স্ববিরোধী বিষয়কেই মার্কসবাদ হিসেবে উপস্থিত করেছিল। এককথায়, এরা মার্কসবাদের কবর খনক ছাড়া কিছুই নয়। স্ট্যালিন নিয়ন্ত্রিত বলসেভিক পার্টি বা মাও নিয়ন্ত্রিত সিপিসি বা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য অফিসিয়্যাল কম্যুনিস্ট পার্টিগুলো আসলে সম্পূর্ণরূপে অধঃপতিত প্রতিবিপ্লবী দল যদিও এরাই প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী পার্টি হিসেবে নিজেদের জাহির করেছে। এই স্ট্যালিনিয় প্রতিবিপ্লবী ধারা সারা বিশ্বে শ্রমিকশ্রেণির কাছে ইতিহাসের সবথেকে বড় এই মিথ্যা প্রচার করেছে যে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যদিও রাশিয়ায় যা ছিল তা সবথেকে বেশি দমনপীড়ণ এবং শোষনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এক বিশেষ ধরণের রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ছাড়া কিছুই নয়।
মার্কসীয় তত্ত্ব অনুযায়ী এক দেশে সমাজতন্ত্র কখনোই হতে পারে না।
পরন্তু এই প্রতিবিপ্লবী পার্টিগুলোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শ্রমিকশ্রেণিকে ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার শ্লোগান দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেছিল। শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক বিপ্লবী লাইন হ'ল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণি কোন পক্ষেই যোগ দিতে পারেনা, বরং লেনিন যেমন বলেছিলেন তাদের কাজ হ'ল পৃথিবীর প্রতিটি দেশের পুঁজিবাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্রতর করা। এরা তার সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিকতার নীতির বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের পক্ষ নিয়েছিল।
ফ্যাসিস্টদের মতই এরা এবং এদের 'গণতান্ত্রিক' সাম্রাজ্যবাদী জোটসহ সকলেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তথা শোষিত মানুষের মৃত্যুর জন্য সমান পরিমাণে দায়ী। জন্মের প্রায় শুরু থেকেই উপরোক্ত প্রতিবিপ্লবীধারার অবস্থানগুলোই সিপিআই (যার থেকেই পরে সিপিআই (এম)-র জন্ম)-র ভিত্তি। সেদিক থেকে বলা যায় এদের শ্রমিকশ্রেণির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস শুরু ১৯৩০-র দশক থেকেই। শ্রমিক শ্রেণির ঐতিহাসিক পরাজয়ের সেই সময় থেকেই এইসব রাজনৈতিক দলগুলো মাকর্সবাদের নামে মাকর্সবাদকে কবরে পাঠানোর কাজই ক'রে চলেছে এবং পুঁজির সবথেকে নির্ভরযোগ্য রক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। এদের এই প্রতিবিপ্লবী শ্রমিকশ্রেণি বিরোধী চরিত্র নগ্নভাবে উদ্ঘাটিত হতে অনেক সময় লেগেছে: এর প্রধাণ কারণ ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় জুড়ে এই গভীরতম প্রতিবিপ্লবী ধারার প্রভাব--- ঐতিহাসিক কারণেই শ্রমিকশ্রেণির ওপর এদের নিয়ন্ত্রণ ছিল ---কেননা পরাজয়ের কালে শ্রমিকেরা এদেরকেই তাদের স্বার্থরক্ষাকারী দল হিসেবে মনে করত, তাদের মতাদর্শগতভাবে বন্ধ্যা ক'রে রেখেছিল এইসব দলগুলো। কিন্তু ইতিহাসের নিজস্ব নিয়মে, শ্রমিকশ্রেণির বর্তমান শ্রেণিসংঘর্ষের নতুন পর্যায়ে, যখন তাদের সংগ্রামী মনোভাব এবং শ্রেণি সচেতনতা অর্জনের প্রয়াস ক্রমবর্ধমান এবং ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদ যখন সারা পৃথিবীতেই স্থায়ীভাবে তীব্রতর সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে তখন এই প্রতিবিপ্লবী শক্তি নিজেদের ভেতরকার আসল কুৎসিত, ঘৃণ্য এবং পুতিগন্ধময় চেহারাটা আর আড়াল করতে পারছে না, তাদের নখ দাঁত বেড়িয়ে পড়ছে শোষিত মানুষের , বিশেষতঃ শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে, শুধু ভারতেই নয়, সারা পৃথিবীতেই।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা গ্রুপগুলো কি কৃষিতে যুক্ত মানুষগুলোর প্রকৃত বন্ধু?
সিপি আই এম-র এই দমন-পীড়ণ অতিবাম, দক্ষিণসহ সব বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোর কাছে বিরাট রাজনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে-এমনকি, ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট্রের অন্যান্য শরিকদলগুলোও এই ফাঁকে তাদের বড় শরিককে সব রকমে একঘরে করা, নস্যাৎ করা এবং তার ভেতর দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য সুনিশ্চিত করতে চাইছে। এদের মধ্যে কে কত বেশি চাষীভাইদের বন্ধু তা প্রমান করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সিপিএমকে ভিলেন প্রমাণ করতে এরা মরীয়া। এরা চিৎকার করছে---- সিপিএম চাষীদের ওপর ফ্যাসিবাদী নিপীড়ণ চালিয়েছে। অতএব, 'ফ্যাসিস্ট' সিপিএমের বিরুদ্ধে এ্যান্টিফ্যাসিস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট গড়ার প্রয়াস! এরা বোঝাতে চাইছে তারাই একমাত্র আগমার্কা গণতান্ত্রিক দল! আর এইভাবে এরা শ্রমিকশ্রেণি তথা শোষিত মানুষকে আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নিজেদের 'গণতান্ত্রিক' পতাকাতলে আনতে চাইছে। লেফ্টিস্ট পার্টিগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে এরা তাদের ক্ষমতায় আসার পুঁজি করতে চাইছে। এরা এই সত্যটাকে আড়াল করতে চাইছে যে সরকারে গেলে এরাও একইরকম বা তার চাইতে বেশি পরিমাণেই দমন-পীড়ণের আশ্রয় নেবে কেননা শোষিত মানুষ, বিশেষতঃ শ্রমিকশ্রেণির জীবন-জীবিকার ওপর ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইকে ঠান্ডা করা তাদেরও কাজ। এটা তাদের শুভইচ্ছার ওপর নির্ভর নয়, বরং, যত গণতান্ত্রিক বলেই তারা নিজেদের দাবি করুক, আসলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে এটা তারা করতে বাধ্য কারণ এরা সকলেই পুঁজির বাম কিংবা ডান হাত ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের বুঝতে হবে বর্তমানে পুঁজিবাদ টিকে থাকতে পারে শুধুমাত্র শ্রমিকশ্রেণিসহ অন্যান্য শোষিত মানুষের ওপর তার শোষন তীব্র থেকে তীব্রতর করার মধ্যে দিয়েই।
বিরোধীরা বলছে এই বর্বর সিপিআইএমকে গদীচ্যূত করলেই সব সমস্যার সমাধান। পুলিশ-ক্যাডার জোটের হাতে নিহত মানুষগুলোর প্রতি তারা আমাদের দৃষ্টি আবদ্ধ রাখতে চাইছে। এঘটনা সত্যিই অসহনীয়, কিন্তু আমরা কি ভুলে যাব গত দুতিন বছরে এই ভারতেই ২০ থেকে ৩০ হাজার চাষী আত্মহত্যা করেছে- বিশেষ ক'রে সেইসব জায়গায় যেখানে কৃষি অত্যন্ত উন্নত, ফলে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দারুনভাবে অন্বিত। এদের জমি কেড়ে নেওয়া হয় নি, জমির মালিকানা থাকা সত্ত্বেও তারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। বিশ্ব-পুঁজিবাদের কোন্ বস্তুগত পরিস্থিতির চাপে এই অবস্থা হল একথা তারা কেউ বলছে না, বরং তার বিপরীতে একটা ভুল ধারণা মাথায় ঢোকাতে চাইছে যে নন্দীগ্রামের এই ঘটনাটা যেন বা পৃথিবীর পুঁজিবাদের সংকটের বাইরে, এটা শুধুমাত্র কোন্ সরকার ক্ষমতায় আছে তার ওপর নির্ভর; এককথায় যেনতেন প্রকারে, রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করা, আর সর্বোপরি গদীটি দখল করা এদের মূল লক্ষ্য: এদের কাছে এই বর্বরতা, এই মৃত্যু, শোষিতমানুষের মরীয়া হয়ে বাঁচার চেষ্টা সবই হল সেই লক্ষ্য পূরণের সহায়ক হাতিয়ারমাত্র।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আক্রমণ:
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে প্রাক-পুঁজিবাদী পণ্য-উৎপাদন ও বিনীময় ব্যবস্থার গর্ভ থেকে। আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশের পথে লক্ষ লক্ষ খুদে উৎপাদক এবং চাষী তাদের জমি অথবা উৎপাদনের উপায় গুলো থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। বাস্তবত, পুঁজিবাদ টিকে থাকতে পারে প্রাক-পুঁজিবাদী ধরণের উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোকে ক্রমাগত আত্মসাৎ করেই। এইসব খুদে মালিক ও উৎপাদকেরা পুঁজিবাদী উৎপাদিকা শক্তির বিপুল তেজের সামনে খড়কুটোর মত ভেসে যায়: সস্তা পণ্যের বিপরীতে তাদের পুরোণো ধরণের উৎপাদন বাজারে কোন জায়গাই করতে পারে না-ফলে তাদের পুরোণো জীবনযাপনের ধরণ বজায় রাখাও ক্রমাগত অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুঁজিবাদী বিকাশের বিপুল জোয়ারের সময় এই সব উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মানুষদের পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া সম্ভব ছিল।
কিন্তু বতর্মানে পুঁজিবাদ নিজেই একটা জরাগ্রস্ত, বাতিল ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তার সংকট এখন আর আকস্মিক নয়, বরং তা একটা স্থায়ী এবং ক্রমবর্ধমান রূপ লাভ করেছে। এ পর্যায়ে পুঁজিবাদ লক্ষ লক্ষ মানুষকে তার নিজের উৎপাদন ব্যবস্থার বাইরে বের ক'রে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে, অসংখ্য মানুষ ক্রমাগত আরো বেশি দুর্দশা, বেকারি, অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। মানুষকে ভবঘুরেতে পরিণত ক'রে দিচ্ছে এই সিস্টেম।
যে কোন উপায়ে লাভের অংক বাড়ানোই পুঁজিবাদের মূলমন্ত্র। পুঁজির ডান বাম সব দল বা গোষ্ঠীর কাজ শেষবিচারে এই প্রচেষ্টাকেই সফল ক'রে তোলা। তবে এই কাজ যত অসম্ভব বা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে, তত বেশি বেশি ক'রে পুঁজিপতিদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সেইসব সেক্টরগুলো নিয়ে মারমার কাটকাট প্রতিযোগিতা চলছে যেসব সেক্টরে টাকা ঢাললে সবথেকে বেশি এবং সবথেকে তাড়াতাড়ি লাভ হবে। আর একারণেই শিল্প-ক্ষেত্রগুলোর স্থান বদল (relocation) এবং আউটসোর্সিং এত গতি পাচ্ছে। ইউরোপীয় এবং আমেরিকান পুঁজিপতিরা তাদের উৎপাদন পদ্ধতির কিছুটা বা পুরোপুরি স্থানান্তরিত করছে বা তাদের অনেক কাজই আউটসোর্শ করছে সেইখানে যেখানে যথেষ্ট সস্তায় যথেষ্ট দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাবে। এই হল বতর্মানে চীন এবং ভারতের 'আশ্চর্য্য' উন্নতির ভেতরের কারণ। পচে যাওয়া পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থার মধ্যে এই 'শিল্পায়ন'-র জন্যই এখন জমি দরকার। রিয়েল এস্টেটের বাড় বাড়ন্ত এরই ভিত্তিতে এবং শুধু চীন ভারত নয়, সারা বিশ্বেই এই বিজনেস এখন দ্রুত গতি লাভ করেছে। অতীতের 'স্বর্ণ-তৃষা'র মত এখন ' ভূমি-তৃষা' সারা ভারতে মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়েছে-জমির দাম বাড়ছে অবিশ্বাস্য হারে। জমি নিয়ে ফাটকা কারবার চলছে দ্রুততার সঙ্গে প্রচুর লাভ তুলে আনার জন্য। কৃষকদের পক্ষে তাদের জীবিকার ওপর এই আপাত অদৃশ্য পুঁজিবাদী আক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব। ঐতিহাসিক ভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া মৃত্যুপথযাত্রী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চলমান অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই লক্ষ লক্ষ কৃষক জমি হারাচ্ছে এবং হারাবে।
তাছাড়া, গ্রামীন অর্থনীতি পুরোপুরি বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আত্মীকৃত হয়ে গেছে। বাজার-অক্টোপাশ সমস্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে তার সহস্র পাশে বেঁধে দমবন্ধ ক'রে দিচ্ছে, হাজার হাজার খুদে চাষীর জীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, আশাহীন হয়ে পড়ছে এই সুবিপুল এবং মূলত নিয়ন্ত্রণহীন বিশ্ব তথা জাতীয় বাজারের প্রচন্ড চাপের মুখে। এই পরিস্থিতি তাদের আত্মহত্যা অথবা জমি বিক্রির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলতঃ যেভাবেই হোক কৃষকদের জীবন জীবিকার চলতি উপায় বজায় রাখার কোন উপায় আজ আর খোলা নেই। যতদিন এই পুঁজিবাদ টিকে আছে ততদিন বুর্জোয়াদের নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জমি নেওয়ার এই প্রক্রিয়া রোধ করা সম্ভব নয়। যত ভালো স্বপ্নই তারা দেখাক বা দেখুক না কেন, কোন রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দল একে আটকাতে পারবে না।
ভুয়ো বিকল্প
সরকার এবং বিরোধী দল সকলেই কতকগুলো ভুয়ো বিকল্প হাজির করেছে। বামফ্রন্ট সরকার বলছে 'শিল্পায়ন'-র মাধ্যমে যারা জমি দিচ্ছে বা যারা জমির ওপর ভিত্তি ক'রে জীবিকা করে তারা সকলেই অন্নসংস্থানের সুযোগ পাবে। এটা নির্জলা মিথ্যা। বেশিদিনের কথা নয়, সিপিআইএম নিজেই বলেছে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক গ্রোথ আসলে কার্মসংস্থানহীন গ্রোথ। এটা সত্যি। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা উল্টো হবে কোন্ ম্যাজিকে? বিরোধীরা বলছে চাষীদের হাত থেকে জমি কেড়ে না নিলেই প্রবলেম সলভ্ড্-কিন্তু আমরা আমাদের বিশ্লেষণে দেখিয়েছি পুঁজিবাদের আজকের এই সংকটের মুখে একথা হানড্রেড পারসেন্ট ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়। এই জঘণ্য মিথ্যাচার ক'রে এরা চাষীদের প্রাকপুঁজিবাদী জীবনধারণের অনিশ্চয়তার গাড্ডাতেই রেখে দিতে চাইছে যাতে ক'রে প্রয়োজন মত তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলী দেওয়া যায়। আসলে এই ব্যবস্থার মধ্যে কোন সমাধান আজ আর নেই।
সমাধানের একমাত্র রাস্তা
ওইসব মিথ্যে বিকল্পগুলোর কোনটাই সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। বাম সরকার পাল্টে ডান বা অতিবাম তথাকথিত ভীষণ 'গণতান্ত্রিক' সরকার এনেও কোন সমাধান সম্ভব নয়। ভীষণরকম রাডিক্যাল উপায়ে (যথা মাওয়িস্ট) লাঙল যার জমি তার ক'রে জমিকে হাজার টুকরো ক'রে অসংখ্য ক্ষুদ্র মালিকানা তৈরি করাটাও কোন সমাধান নয়-এটা বাস্তবে প্রমাণিত। আসলে, এই ভয়ংকর অবস্থার জন্য দায়ী যে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তাকে উচ্ছেদ করাটাই হল আজকের একমাত্র কর্তব্য। এই কাজ করতে না পারলে মানব প্রজাতির অস্তিত্বই আরো বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই আজ যারা পুঁজির বাম ডান সবরকম দলের বাইরে দাঁড়িয়ে, নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা যাঁরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন, যাঁরা নন্দীগ্রামের মত এই নিদারুণ অমানবিক ঘটনায় গভীরভাবে ব্যথিত তাঁদের চিন্তা করা দরকার সঠিক বিকল্পটা অর্থাৎ বিশ্বপুঁজিবাদের ধ্বংস সাধন। আর একমাত্র বিশ্ব-শ্রমিকশ্রেণিই পারে একাজে নেতৃত্ব দিতে এবং এই কাজকে সফলভাবে সমাধা করতে। এখানেই নিহিত আছে শ্রমিকশ্রেণিসহ সমস্ত শোষিত অংশের মুক্তির চাবিকাঠি। অতএব সমস্ত শোষিত মানুষের, বিপ্লবী শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই, কেননা প্রকৃত সমাধানের পথে একমাত্র শ্রমিকশ্রেণিই তাদের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট (আইসিসি)
২০শে মার্চ, ২০০৭[1] বতর্মানে ভারতের প্রাধান্য বিস্তারকারী স্ট্যালিনিস্ট পার্টি
অশ্রু মোছাতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
|
আজও কেঁদে চলেছেন নন্দীগ্রামের সোমা বেরা৷ নভেম্বরে 2007-এ তাঁর প্রাত্তুন সৈনিক স্বামীকে বন্দুকের সামনে মুখে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সিপিএমের হার্মাদরা৷ আদিত্য এখনও নিখোঁজ৷ আদিত্য বেরার মতই নিখোঁজ আরও ছয় জন৷ আশঙ্কা, আদিত্যবাবুকে হত্যা করে সাগরের মোহনায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ খেজুরি থেকে গ্রেফ৲তার অজিত বর-সহ কয়েকজন সিপিএম কর্মী গোয়েন্দাদের জেরাতেই এমন কথাই স্বীকার করেছে৷ তবু, স্বামী ফিরবেন এই আশায় শাঁখা-সিঁদূর মোছেন নি সোমা৷ সাত নিখোঁজের পরিবার হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেছেন৷
কাঁদছেন মালতী জানাও৷ 2008-এর মে মাসে পঞ্চায়েত ভোটের দিন সশস্ত্র হার্মাদরা তাকে তাড়া করে৷ দু-কিলোমিটার দৌড়নোর পর পরে গেলে তাকে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গলে৷ তারপর চলে গণধর্ষণ৷ রত্তুাত্তু অবস্থায় তাঁকে পাঁচ ঘন্টা পর উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ হাইকোর্ট নন্দীগ্রামের হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেও মালতী তা পায় নি, পাবে না৷
সেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল রাধারানি আড়ির৷ একবার 2007-এর 14 মার্চ আরেকবার সেই বছরেরই নভেম্বরে সিপিএমের পরিচিত কর্মীরা তাকে ধর্ষণ করে৷ কেমিক্যাল হাবে জমি দখলের জন্য ধর্ষণ৷ দু-বারই রাধারানি সে-কথা প্রকাশ্যে বলে দেন৷ তবু পান নি ক্ষতিপূরণ৷ আজও তাঁর চোখের জল শুকোয় নি৷
বার অ্যাসোশিয়েসনের দায়ের করা মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছিল আইনের কোনও ধারাতেই 14 মার্চের গুলিবর্ষণকে ন্যায্য বলা যায় না৷ সরাসরি 'অসাংবিধানিক' আখ্যা দিয়ে নিহতদের নিকটাত্মীয়কে পাঁচ লক্ষ টাকা, ধর্ষিতাদের দু-লক্ষ টাকা এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা হিসাবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল৷ সেই সঙ্গে সাতজন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে৷ সরকার 13 জন নিহত, তিনজন ধর্ষিতা ও 159 জন গুলিবিদ্ধকে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছিল৷ পান নি রাধারাণি আড়ি বা হৈমবতী হালদাররা৷
নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা শহিদ-জননী ফিরোজা বিবি দাবি করলেন, "অনেকে পেলেও ক্ষতিপূরণ সবাই পান নি৷ নর্মদা শীট পেয়েছে কি না জানি না, তবে রাধারানি পেয়েছেন৷" সাংসদ তথা নন্দীগ্রামে ভূমি উচেছদ প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রধান সৈনিক শুভেন্দু অধিকারী জানালেন, "সরকারি ক্ষতিপূরণ রাধারানি এখনও পান নি৷ তবে, দল তাকে অন্যভাবে সাহায্য করেছে৷"
রোগা কালো বৃদ্ধা নর্মদা শীট নন্দীগ্রামের মুখ৷ একসময় সিপিএম করতেন, তাই তেসরা জানুয়ারির রাতে বা 14 মার্চে যারা চটি পায়ে পুলিশের সঙ্গে এসেছিল, তারা যে সিপিএমের লক্ষ্মণ শেঠের হার্মাদ, তা জানিয়ে দেন নর্মদা৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে লড়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন৷ নন্দীগ্রামের সন্তানদের রত্তেু লাল সোনাচূড়ার মোড়ে এই বৃদ্ধা ছোট্ট একটি পানগুমটি করে পেট চালান৷
পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি এবং এপিডিআর-এর মার্চ 2011-র সমীক্ষায় প্রকাশ, আরও পাঁচ ধর্ষিতা এবং 160 জন আহত ক্ষতিপূরণে বঞ্চিত৷ 14 মার্চের পরেই নন্দীগ্রামে চিকিৎসা দিতে ছুটে যাওয়া এনজিওদের তথ্য অনুযায়ী, আরও 287 জনের নাম ক্ষতিপূরণের সরকারি তালিকায় নেই৷
ফিরোজা বিবি বলছিলেন, "আমরা তো শুরু থেকেই সব হতাহতের ও অত্যাচারিতাদের জন্যেই ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি৷ দাবি করছি, দোষী পুলিশ আর তাদের সঙ্গী 'চটি পরা পুলিশ' সিপিএমের হার্মাদদের শাস্তি হোক৷ যে প্রিয়জনরা গেছে, তারা আর ফিরবে না৷ কিন্তু, দোষীদের শাস্তি না হলে মন কী করে শান্ত হবে?"
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, অধিকাংশ ধর্ষিতাকেই সময় থাকতে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করানো যায় নি৷ তাই, ধর্ষণ প্রমাণ করা কঠিন৷ তালিকায় থাকা পাঁচজনের বাইরে আরও 47 জনের তালিকা আমরা দিয়েছি৷ এদের অনেকেই যৌননিগ্রহের শিকার৷ ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁরা আদালতে গেছেন৷"
মালতী জানা ক্ষতিপূরণযোগ্য নন, কারণ তিনি ধর্ষিতা 2008-এ৷ আদালতের আদেশ শুধু 2007, 14মার্চের ঘটনা প্রসঙ্গে৷ আদালতের আদেশ না থাকুক, তবু মালতীর মত আন্দোলনে নামা অত্যাচারিতদের আশা ছিল – তাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী অন্তত হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতে তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবেন! 'দিদি তো বিষমদ খেয়ে মৃতদের জন্যেও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন, শেখ আসলাম বললেন, "শুধু আমরাই বঞ্চিত৷"
নন্দীগ্রামের আন্দোলনের জোয়ারে ভেসেই পরিবর্তনকামীরা রাইটার্সে৷ তাই নন্দীগ্রামের আশা ছিল নতুন সরকারের উপর৷ নন্দীগ্রামের আন্দোলন ভাঙতে একের পর এর মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল সিপিএম আর সরকার৷ তাই ভোটের সময় অনেক নেতা-কর্মীকে কারাগারে বা পলাতক থাকতে হয়েছে৷ আশা ছিল,ক্ষমতায় এসে তাদের প্রিয় 'দিদি' সেই সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবেন৷ ফিরোজা বিবির হিসাবে "প্রায়5000 নন্দীগ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা ঝুলছে৷ কারও কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সংখ্যা 75-এর মত৷ থানা, আদালতে হাজিরা দিয়েই যেতে হচেছ৷ আমরা জেনেছিলাম, নতুন সরকার সে-সব মামলা তুলে নেবে৷ কই?"
শুভেন্দু অধিকারীর হিসাবে, "মোট মামলার সংখ্যা প্রায় 1300-র মত৷ এর মধ্যে মাত্র 20টি মামলা এ-পর্যন্ত প্রত্যাহূত, বাকিগুলি ঝুলছে৷ মাত্র 350-400 মামলা প্রত্যাহার করে হলেই সমস্যা মিটে যায়৷ বাকিগুলি এমনিতেই বাতিল হতে চলেছে৷" তিনি আশাবাদী, "মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন৷ নিশ্চয়ই কিছু করবেন৷"
এই আশা জাগিয়েই মুখ্যমন্ত্রী একটি রিভিউ কামিটি গড়েছিলেন৷ তাদের উপর দায়িত্ব ছিল মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার এবং বন্দিমুত্তিুর বিষয়ে সুপারিশ করার৷ অন্তর্বর্তী একটি রিপোর্ট জমাও দিয়েছিল সেই কমিটি৷ সেই রিপোর্টে দু-জন মাওবাদী বন্দি সহ 52 জনকে মুত্তিুর এবং সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ ছিল৷ যাদের মুত্তিুর সুপারিশ ছিল, তাঁরা সবাই মুত্তিু পান নি,পেয়েছেন উত্তরবঙ্গের কামতাপুরী আন্দোলন আর কেএলও-র জঙ্গিরা৷ সিঙ্গুরের 130টি মামলার মধ্যে 87টি প্রত্যাহূত হয়েছে৷ এ-বছর 13 মার্চ পর্যন্ত সেখানে নন্দীগ্রামের প্রত্যাহূত মামলার সংখ্যা মাত্র 20টি৷ ইতিমধ্যে সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, ভেঙে দেওয়াও হয়েছে৷ কমিটির অবশ্য কেবল সুপারিশ করারই ক্ষমতা ছিল, সরকার সেই সুপারিশ মানবে, এমন বাধ্যবাধকতা ছিল না৷
অবশেষে 14 মার্চের পঞ্চম বর্ষপূর্তির দিনে নন্দীগ্রামের মানুষের একটি আশা পূরণ হল৷ মুখ্যমন্তত্রী এদিন সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা করলেন নন্দীগ্রামে৷ নতুন সরকার আসার পর এই নিয়ে তিনটি মাত্র সদর্থক পদক্ষেপ পেল নন্দীগ্রাম৷ মামলা প্রত্যাহার ছাড়া দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ বাতিল করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল আগের রাজ্য সরকার৷ মমতার সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করেছে৷ এ-ছাড়া, নভেম্বরে পুলিশের মদতে সিপিএমের হার্মাদদের দিয়ে'অপারেশন সূযোর্দয়'-এর তদন্তের দাবি মেনে সিআইডি তদন্ত হয়েছে৷ লক্ষ্মণ শেঠ সহ 88 জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে৷
সেই সিআইডি তদন্ত নিয়েও বর্তমান সরকারের কাজ প্রশ্নের মুখে৷ সাত নভেম্বর গোকুলনগরের করপাড়ায় অপারেশন সূযোর্দয় প্রতিরোধের চতুর্থ বার্ষিকীর সভায় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকেই প্রকাশ্যে সেই অভিযোগ জানাতে হয়েছে৷ তাঁর অভিযোগ, পুলিশের একাংশ তদন্তকে প্রভাবিত করার কৌশল নিয়েছে৷ শুভেন্দু বলেন, "সিআইডি-র তদন্তকারী দলের স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট দেবাশিস বড়াল 14 মার্চে গোকুলনগরে পুলিশের গুলিবর্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ তদন্তকারী দলের সাব-ইন্সপেক্টর রথীন বক্সি তখন ছিলেন ওসি পদমর্যাদার৷ খেজুরির জননী ইটভাটা থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন৷"
এর ফলেই উঠে এসেছে অনেক প্রশ্ন৷ কে বা কারা এই অফিসারদের নিয়ে তদন্তের টিম গড়লেন? কেন এদেরকেই যোগ্য বলে বিবেচনা করা হল? এই অফিসারেরা নন্দীগ্রামের ইদানিংকার ঘটনায় জড়িত কিনা,দেখা হয়নি কেন? সেটা তো দেখারই কথা৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যে সাতজন আইপিএস অফিসারকে হাইকোর্ট শাস্তির সুপারিশ করেছে, তার মধ্যেই দেবাশিস বড়ালের নামও আছে৷ তাকেই দেওয়া হল তদন্তের ভার! যার শাস্তি হওয়ার কথা, তাঁর পদোন্নতিই হল কী করে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সদ্যপ্রকাশিত 'মাই আনফরেগেটেবল মেমোয়ার্স'-এ 34 পৃষ্ঠা জুড়ে নন্দীগ্রামে 14 মার্চের ঘটনাবলির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন, কবে কোথায় বৈঠক করে এই হামলার রূপরেখা তৈরি থেকে শুরু করে কতগুলি সেক্টরে ভাগ করে কার কার নেতৃত্বে সেই অভিযান হয়, তার বর্ণনা দিয়েছেন৷ আর, দেবাশিস বড়ালের নেতৃত্বে তদন্তের আদেশপত্রে তিনিই স্বাক্ষর করলেন?!
এমন প্রশ্নের সুযোগ তো আছেই৷ নন্দীগ্রামবাসীর আশা ছিল,প্রথমেই না হলেও প্রথম দিকেই মুখ্যমন্ত্রী দিদি একবার আসবেন, শহিদবেদিতে পুষ্পার্ঘয দেবেন৷ তাদের রত্তেুই রাইটার্সের পথ সুগম হয়েছে৷ কিন্তু, তা হল না৷ ক্ষমতায় আসার পর দশ মাসে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেশ কয়েকবার গেছেন পাহাড়ে, জঙ্গলমহলে৷ সিঙ্গুরেও গেছেন৷ কিন্তু তাঁর পদধূলি পড়েনি তাঁরই বর্ণিত তীর্থভূমিতে৷ নভেম্বরের হামলা প্রতিরোধের বার্ষিকীতে তাঁকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিল নন্দীগ্রাম৷ না গিয়ে টেলিফোনে দশ মিনিটের ভাষণ দেন৷ সেই মঞ্চ থেকেই ভূমি উচেছদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা শেখ খুশনবী বাধ্য হয়েই প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ করেন৷ সমাবেশের মানুষদের বলতে শোনা যায়, 'এদিনও এলেন না!' মনে পড়ে, রাইটার্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া রাধারানি আড়ির কথা৷ তাঁকে রাইটার্সে ঢুকতেই দেওয়া হয় নি৷ অগত্যা, 'অবারিত দ্বার'মুখ্যমন্ত্রীর কালিঘাটের বাড়িতে তিনি গেলে সেখান থেকে কার্যত গলাধাক্কা দিয়ে দলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন বলেছিলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় নেই৷'
এবার 14 মার্চেও মুখ্যমন্ত্রী না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সেখানে যেতে বলেন৷ এই শিল্পমন্ত্রীই নন্দীগ্রাম-লাগোয়া নয়াচরকে ফের সালেমদেরই 'ফ্রন্টম্যান' প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন৷ সালেম-প্রসূনদের বিরুদ্ধেই ছিল নন্দীগ্রামের বিদ্রোহ! প্রতিবাদ ছিল সেজ-এর বিরুদ্ধে৷ শিল্পমন্ত্রী ইনফোসিস-কে সেজের সব শর্তই দিতে রাজি৷ ফলে, মমতার 'তীর্থভূমি' 'নন্দী মা' নন্দীগ্রাম ভেবেছে ... তবে কী... তবে কী...?
শেষ পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত তমলুক এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক যদি ঋণ অনাদায়ে কৃষকের বন্ধকী সম্পত্তি ক্রোক করার নোটিস জারি করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরত্তিুর কারণ না হলে মমতা এবারও যেতেন না৷ এ-কারণেই তিনি 14 মার্চেই বিধানসভার অধিবেশন ডাকার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ রাজ্যপালের স্বাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তি প্রচারিতও হয়েছিল৷ পরে, দলের বিধায়কদের ক্ষোভ সামলাতে বাজেট অধিবেশন এক দিন পিছিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনতে চান৷ এটা জানতে পেরেই নন্দীগ্রামে ফিরছে সেই হার্মাদরা,যাদের বিরুদ্ধে ফঁুসছে নন্দীগ্রাম৷ ফিরেছেন গড়চক্রবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রাত্তুন প্রধান সমেরন বিবি, যিনি জমি অধিগ্রহণের নোটিস ঝোলাতেই আন্দোলনের সূত্রপাত৷ সমেরন একা নন, ফিরেছেন শয়ে শয়ে৷ পরিচিত 'হার্মাদ' নির্বেশ মাল এখনও সাংবাদিকদের সামনেই আঙ্গুল তুলে হুমকি দেন৷ তারা বুক ফুলিয়েই ঘোরেন, আর মিথ্যা মামলায় ফেঁসে আন্দোলনকারীরা পালিয়ে বেড়ান৷
ইতিমধ্যে খুন হয়েছেন তৃণমূলের নিশিকান্ত মণ্ডল, সিপিএমের নেতা হয়েও যিনি সিপিআইকে সঙ্গে নিয়ে জমিদখলের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন গড়েন৷ তার হত্যার পিছনে দলের কারও কারও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ 'লাল গেঞ্জির উপর সবুজ জামা গায়ে দিয়ে' অনেকে নাকি দলে ঢুকে গোষ্ঠীবাজিতে লিপ্ত৷ মন্তব্যে নারাজ ফিরোজা বিবি বললেন, "যা শুনেছেন, তার সবটা অসত্য নয়, এটুকু বলতে পারি৷"
প্রশ্ন সিবিআই-র ভূমিকা নিয়েও৷ সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহারের পরও পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে এখনও পদক্ষেপ নেয় নি সিবিআই৷ অথচ, অভিযুত্তু আইপিএস অরুণ গুপ্তা, গঞ্জি অনিল শ্রীনিবাস,এন রমেশবাবু, তন্ময় রায়চৌধুরি, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস বড়াল এবং শ্যাম সিং-রা বহাল তবিয়তেই৷ ফিরোজা বিবির কথার প্রতিধবনি তাই সবার মুখে– এরা শাস্তি না পেলে নন্দীগ্রামে শান্তি ফিরবে কী করে? শোনা যাচেছ, এদের শাস্তি রুখতে মহাকরণেও সক্রিয় অনেকেই৷
এই সময়ে অবশেষে নন্দীগ্রাম গেলেন মুখ্যমন্ত্রী, কিছু সদর্থক ঘোষণাও করলেন৷ হয়তো কিছুটা স্বস্তি,কিন্তু চোখের জল রয়েই গেল৷ যাঁদের পদধূলিতে একসময় নন্দীগ্রাম 'ধন্য' মনে করত, ভবিষ্যতে যেন তাদের দেখে নিজেদের 'পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় প্রতিদিন' বলে না ভাবেন, সেটাই দেখার৷
নন্দীগ্রাম গণহত্যা
নন্দীগ্রাম গণহত্যা পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে সংঘটিত একটি গণহত্যামূলক হিংসাত্মক ঘটনা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়াশহরের নিকটস্থ নন্দীগ্রামে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইন্দোনেশীয় সালেম গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড বা সেজ) গঠন করার উদ্দেশ্যে ১০,০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে স্থানীয় মানুষেরা প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন দমনের জন্য সরকার চার হাজারেরও বেশি সশস্ত্র পুলিশের একটি বাহিনী ওই অঞ্চলে প্রেরণ করে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সংঘাত বাধলে পুলিশের গুলিতে চোদ্দো জন গ্রামবাসী নিহত হন।
নন্দীগ্রাম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। একটি বিশেষ সেজ নীতির আওতায় এই অঞ্চলে সরকার ইন্দোনেশিয়ার সালেম গোষ্ঠীকে[১][২][৩] একটি কেমিক্যাল হাব গঠন করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই সেজ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা গ্রামের সঙ্গে প্রশাসনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং গ্রামে প্রবেশের সব রাস্তা কেটে দেওয়া হয়। কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশিত হয় ফলস অ্যালার্ম স্পার্কস ক্ল্যাশ (ভ্রান্ত সতর্কবার্তায় ছড়িয়ে পড়ল বিবাদ) শিরোনামে। ওই সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে, যে গ্রাম পঞ্চায়েত সভায় নন্দীগ্রামের জমি অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি আসলে ছিল নন্দীগ্রামকে "পরিচ্ছন্ন গ্রাম" ঘোষণার সভা (যার অর্থ, উক্ত গ্রামের সব বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার বর্তমান)। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় নন্দীগ্রামেভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির (বিইউপিসি) প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার জন্য। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ কমপক্ষে তিন হাজার সশস্ত্র পুলিশ অপারেশন চালায় নন্দীগ্রামে। এই অভিযানের খবর কোনোভাবে বিইউপিসির কর্ণগোচর হয় এবং তাঁরা প্রায় ২০০০ গ্রামবাসীকে নিয়ে একটি পাল্টা প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন মহিলা ও শিশুরা। এই সংঘাতে প্রাণ হারান চোদ্দোজন গ্রামবাসী। নিহতদের একজনের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হয় সে মাওবাদী দলের নেতা ছিল। তবে ইদানীং সিবিআই তদন্তে সিপিআই(এম) দলের বিরুদ্ধে কোন প্রমান তারা দাখিল করতে পারেনি বলে তৃনমুল দলের পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্ত দলের সমালোচনা করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]পটভূমি
নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব গড়ার বরাত পেয়েছিল সালেম গোষ্ঠী। ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর ঘনিষ্ঠ সুদোনো সালেম ছিলেন এই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাবটির জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪,০০০ একর বা ৫৭ বর্গকিলোমিটার জমি। মোট ২৯টি মৌজা নিয়ে এই কেমিক্যাল হাব গড়ে ওঠার কথা ছিল। এর মধ্যে ২৭টি মৌজাই ছিল নন্দীগ্রামে।[৪] জেলার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) সাংসদ প্রবোধ পান্ডা জানিয়েছিলেন, যে জমিটি অধিগৃহীত হতে চলেছে তা বহুফসলি জমি এবং সেই জমি অধিগৃহীত হলে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।[৪]স্বাভাবিক কারণেই তাই জমি ও জীবিকা হারানোর ভয়ে এলাকার কৃষিজীবী দরিদ্র মানুষ অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট হন।[৫] এই গ্রামবাসীদের মধ্যে কেবলমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাই নয়, বরং শাসক সিপিআই(এম)-এর কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। তাঁরা সকলেইভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি (বিইউপিসি) নামক এক নবগঠিত সংগঠনের যৌথ ব্যানারে আন্দোলনে সামিল হন।[৬]
ইতঃপূর্বে বামফ্রন্ট সরকারের অন্যান্য শরিক দলগুলি, এমনকি সিপিআই(এম)-এর ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাও এই প্রকল্পের সাফল্যের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।[৭] কিন্তু রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের সমর্থনে জানান যে নয়টি রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার পর তাঁরা এই কেমিক্যাল হাব গঠনের সুযোগ পেয়েছেন।[৮] নিকটবর্তী হলদিয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্প ও তৈল সংশোধনাগার থাকার কারণে কাঁচামাল সরবরাহের সুবিধার দিকটি মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার নন্দীগ্রামকে কেমিক্যাল হাবের জন্য উপযুক্ত মনে করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিপিআই(এম)-এর দাবি অনুযায়ী, হলদিয়ার পূর্বোক্ত প্রকল্পগুলি এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানে সক্ষম হয়েছিল।[৯]
একাধিক উচ্চপর্যায়ের প্রকল্পের জন্য সালিম গোষ্ঠীকে মোট ৩৫,০০০ একর (১৪০ বর্গ কিলোমিটার) জমি দেওয়ার কথা হয়।[১০] পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের সঙ্গে ৫০:৫০ শেয়ারে যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়াও একটি ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ মিটার প্রশস্ত ইস্টার্ন লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ে ও হলদিয়া ও নন্দীগ্রামকে সংযোগকারী হলদি নদীর উপর একটি চার লেনের সড়কসেতু নির্মানেরও পরিকল্পনাও গৃহীত হয়। প্রস্তাবিত সেতুটির হলদিয়া ও নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত সেজ-এর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করার কথা ছিল।[১১] বারাসাত-রায়চক এক্সপ্রেসওয়ে ও রায়চক-কুকড়াহাটি সেতুর দ্বারা হলদিয়ার সঙ্গে ৩৪ নং জাতীয় সড়ককে যুক্ত করার কথাও ছিল।
তবে সালেম গোষ্ঠীকে এক্সপ্রেসওয়ের বরাত দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও ছিল বিতর্কিত।[১২] কারণ, কার্যকারিতা সমীক্ষা[১৩] সহ এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজগুলি করার বরাত এর আগে দেওয়া হয় স্বনামধন্য জাপান ইন্টারন্যাশানাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জেআইসিএ)-কে।[১৪] মুখ্যমন্ত্রী সর্বসমক্ষে প্রকল্পটি ঘোষণার আগে পর্যন্ত জেআইসিএ-কে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।[১৫]
হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি তারিখে জমি অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পর্ষদের চেয়ারম্যান হলদিয়ার স্থানীয় সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। যদিও পরে মুখ্যমন্ত্রী মৌখিকভাবে[১৬] জানিয়েছিলেন যে তিনি এই নোটিশের ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। কিন্তু কোনো পরবর্তী নোটিশ জারি করে উক্ত নোটিশটি খারিজ করা হয়নি। অনেক পরে সিপিআই(এম)-এর ইংরেজি মুখপত্র পিপলস ডেইলি-র ১৮ নভেম্বর, ২০০৭ সংখ্যায় লেখা হয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কেমিক্যাল হাব নন্দীগ্রামে হবে না ; হবে হুগলির মোহনার কাছে অবস্থিত নয়াচর নামে একটি জনবিরল নদীচরে। যাই হোক, প্রস্তাবিত হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণের ইস্যুতে নন্দীগ্রাম অশান্ত হয়ে ওঠে। এদিকে জমি হারানোর ভয়ে গ্রামবাসীরা সন্ত্রস্ত হয়ে আন্দোলনে সামিল হন। রাস্তাঘাট খুঁড়ে, সংযোগকারী তার কেটে ফেলে নন্দীগ্রামকে জমি অধিগ্রহণ সহ সকল প্রকার সরকারি হস্তক্ষেপরহিত এক মুক্তাঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়।[১৭]
[সম্পাদনা]ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি
"ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরক্ষা কমিটি" (বিইউপিসি) নন্দীগ্রামের সেজ-বিরোধী কৃষক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় যৌথ সংগঠন। ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি এই অঞ্চলের তিনটি সেজ-বিরোধী সংগঠন যৌথভাবে আন্দোলন পরিচালনার লক্ষে একত্রিত হয়ে এই কমিটি গড়ে তোলেন। যে তিনটি সংগঠন নিয়ে বিইউপিসি গঠিত হয়, সেগুলি হল ২০০৬ সালের অগস্ট মাসে এসইউসিআই ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত 'কৃষক উচ্ছেদ বিরোধী ও জনস্বার্থ রক্ষা কমিটি', সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত 'কৃষি জমি রক্ষা কমিটি' এবং জামাত-এ-উলেমা-এ-হিন্দ ও পিসিসি, সিপিআই(এমএল) প্রতিষ্ঠিত 'গণ উন্নয়ণ ও জন অধিকার সংগ্রাম সমিতি'।[১৮][১৯] বিইউপিসি-র আহ্বায়ক ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শিশির অধিকারী[২০] ও যুগ্মসচিব ছিলেন এসইউসিআই নেতা নন্দ পাত্র।[২১]
[সম্পাদনা]২০০৭ সালের ১৪ মার্চের ঘটনা
প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় নন্দীগ্রামে বিইউপিসি-র প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ৩০০০ পুলিশ সমন্বিত এক বিশাল বাহিনীর অভিযান চালানো হয়। সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশের ইউনিফর্মে সজ্জিত একদল সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সিপিআইএম ক্যাডার।[২২] যদিও অভিযানের সংবাদ জানাজানি হওয়ায় বিইউপিসি-ও প্রায় ২০০০ গ্রামবাসীকে একত্রিত করে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলে। যাদের সম্মুখভাগে রাখা হয় মহিলা ও শিশুদের। এই প্রতিরোধ বাহিনীর উপর পুলিশ গুলি চালালে অন্তত পক্ষে চোদ্দো জনের মৃত্যু হয়।[২৩]
এই গণহত্যা সংগঠনের অব্যবহিত পরেই চিকিৎসকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তমলুকের জেলা হাসপাতাল ও পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল পরিদর্শন করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।[২৪]
সিপিআইএম-এর ক্যাডাররা গ্রামে ঢোকার পথে "চেকপোস্ট" বসিয়ে সাংবাদিকদের গতি রুদ্ধ করেন।[২৫] অল্প কয়েকজন সাংবাদিকই মূল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরেছিলেন। একটি নিউজ চ্যানেলের দুই সাংবাদিককে সাময়িকভাবে অপহরণও করা হয়।[২৬]
ঘটনার ভয়াবহতায় সমগ্র রাজ্য স্তম্ভিত হয়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চাশজন মৃত বলে দাবি করে। বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক রেভোলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টি সদস্য তথা পুর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীও জানান ৫০টি দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে কত জন মারা গিয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না।[২৭] এর প্রতিক্রিয়ায় অঞ্চলের মানুষ সিপিআইএম সমর্থকদের ও তাদের পরিবারবর্গকে এলাকা থেকে বের করে দিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে থাকে। ১৪ মার্চের সংঘর্ষের এক সপ্তাহ পর দ্য হিন্দু পত্রিকার হিসেব অনুযায়ী দেখা যায় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ভয়ে প্রায় ৩৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থী শিবিরে।[২৮]
সিপিআইএম অবশ্য হিংসা ছড়ানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ বিরোধী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিকেই দায়ী করে। তারা অভিযোগ করে কমিটি শরণার্থী শিবিরে আক্রমণ চালানোয় তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।[২৯]
নন্দীগ্রামে নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনার সূত্রপাত হয় ২৯ এপ্রিল। ফলে পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনকে নিয়োগ করা হয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।[৩০] কলকাতা থেকে বিদ্বজ্জন ও নাট্যব্যক্তিত্বদের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যের নানা জায়গা থেকে সংগৃহীত ত্রাণসামগ্রী নন্দীগ্রামে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে সিপিআইএম-এর ক্যাডারবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়।[৩১]
নন্দীগ্রামের এই গণহত্যা ভারতের বামপন্থীদের কার্যকলাপ নিয়ে একটি বিরাট বিতর্কের জন্ম দেয়।[৩২] কারণ, যুক্তরাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে যে বুলেটগুলি উদ্ধার করে, তা পুলিশের ব্যবহার্য বুলেট নয়। এই ধরনের বুলেটের বহুল ব্যবহার দেখা যায় কেবলমাত্র অপরাধ দুনিয়াতেই।[৩৩]
[সম্পাদনা]প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে নন্দীগ্রামে রাজ্য সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যকে "স্বতঃপ্রবৃত্ত গ্রাহ্যতা" বা suo moto cognisance ধরে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (সিবিআই) তদন্তের কাজে নিয়োগ করেন।[৩৪] যদিও পরে সিবিআইকেও ঠিকমতো তদন্ত করতে না পারায় জন্য দোষারোপ করা হয়।[৩৫]
ভূতপূর্ব মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল র্যাম্জি ক্লার্ক নন্দীগ্রামের ঘটনাকে বর্ণনা করেন "বর্বরোচিত ও গ্রহণ অযোগ্য" বলে। তিনি তাঁর বক্তব্যে সিপিআইএম চালিত বামফ্রন্ট সরকারের নীতিকে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ চালিত মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে তুলনা করেন।[৩৬][৩৭] তিনি সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (এসইউসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই অঞ্চল ঘুরে দেখেন এবং সকল স্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের নন্দীগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলে প্রসারিত দলীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান করেন।[৩৮]
প্রবীন সিপিআইএম নেতা ও প্রাক্তন বামফ্রন্ট অর্থমন্ত্রী ডক্টর অশোক মিত্র সরকার ও তাঁর দলের সমালোচনা করে বলেন যে নন্দীগ্রামের ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ রাখলে আমৃত্যু তিনি বিবেকের কাছে অপরাধবোধে বিদ্ধ হবেন। তিনি বলেন, সিপিআইএম নেতৃবৃন্দ লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন। আর পার্টিও পরিণত হয়েছে সমাজবিরোধীদের দ্বারা চালিত তোষামোদকারী ও ভাঁড়েদের খোলা মাঠে।[৩৯]
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, পার্টির গঠনযন্ত্র পরিণত হয়েছে "এমন এক অর্থনৈতিক নীতি কার্যকর করার তরবারিতে যেটি সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত জটিল সমস্যাগুলির জন্ম দিচ্ছে।" [৪০]
বিশিষ্ট ঔপণ্যাসিক তথা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে বর্বরোচিত বলে মনে করেন।[৪১] সমাজসেবী মেধা পাটকর ২০০৬ সালের ৭ ডিসেম্বরেই জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে নন্দীগ্রাম ঘুরে যান।[৪২] পরে ১৪ মার্চের গণহত্যার পর অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ম্যাগসেসে ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিকমহাশ্বেতা দেবী, বুকার পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, চিত্র-পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলী মিত্র ও বিভাস চক্রবর্তী, চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন, সংগীতশিল্পী কবীর সুমন প্রমুখ।
এরপরে সিপিআইএম সর্বসমক্ষে ঘোষণা করে, নন্দীগ্রামে অধিবাসীদের সম্মতি ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। প্রস্তাবিত সেজটির রূপায়নও এই পুলিশ অভিযানের ফলে স্থগিত করে দেওয়া হয়।[৪৩] যদিও স্থানীয়, জেলা ও রাজ্য প্রশাসন বলতে থাকে যে নন্দীগ্রামেই প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। পুর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীও সিপিআইএম-এর বিরোধিতা করে বলেন, সেই দল নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেজ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।[৪৪]
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের ১৪ মার্চের অভিযানের শেষ পরাজয়টি ঘটে কলকাতা হাইকোর্টে। ২০০৭ সালের ১৬ নভেম্বর বিচারপতি এস এস নিঝ্ঝর ও বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের এক যৌথ বেঞ্চ ঘোষণা করেন,
" | ১৪ মার্চ, ২০০৭ তারিখে পুলিশ বিভাগ নন্দীগ্রামে যে গুলিচালনার ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও আইনের কোনো ধারা অনুসারে বিধিবদ্ধ নয়।... সার্বভৌম প্রতিবাদের ক্ষেত্রে পুলিশের এই কাজকে ছত্রছায়া দান বা যথাযথ বলে বিবেচনা করা চলে না।... এই কাজ অপরাধী কার্যক্রম বিধির কোনো ধারা বা ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন অথবা ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশন দ্বারা সমর্থিত নয়।... আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই মর্মে নির্দেশ দিচ্ছি ১৪ মার্চ, ২০০৭ রারিখে পুলিশের গুলিচালনায় মৃতের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গকে প্রতিক্ষেত্রে অবিলম্বে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিক।... আমরা রাজ্য সরকারকে এই ঘটনায় ব্যক্তিদেরও অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি এবং সেই ক্ষতিপূরণের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকার কম হওয়া উচিত নয়।... এছাড়াও আমরা রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছি, যাঁরা এই ঘটনায় ধর্ষিতা হয়েছেন তাঁদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে প্রত্যেককে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। | " |
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সকল রাজ্যবাসীকে জোর করে উৎখাত ও অঞ্চলছাড়া করার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। যাঁরা হিংসাত্মক ঘটনার প্রেক্ষিতে জমি থেকে উৎখাত হচ্ছেন তাঁরাও জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাদ্য, আশ্রয়, জল ও শৌচালয় পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষার সুযোগ এবং তারই সঙ্গে নিঃশর্ত প্রত্যাবর্তন, পুণরায় বসতিস্থাপন ও সমন্বয়ের অধিকার লাভে বঞ্চিত হচ্ছেন।[৪৫]
[সম্পাদনা]স্থান পরিবর্তন
এই রক্তক্ষয়ী হিংসাত্মক ঘটনার পরে জমি অধিগ্রহণ বিতর্ক নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (এসইউসিআই) প্রভৃতি বিরোধী দল ও আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভৃতি বাম শরিক দলগুলির ক্রমাগত চাপে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৩ সেপ্টেম্বর কেমিক্যাল হাবের স্থান হিসেবে সরকারের নতুন পছন্দের জায়গার কথা ঘোষণা করেন। এই জায়গাটি হলদিয়া থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নয়াচর নামে একটি জনবিরল দ্বীপে অবস্থিত।[৪৬][৪৭]
[সম্পাদনা]২০০৭ সালের নভেম্বর মাসের হিংসাত্মক ঘটনা
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি যাঁদের গ্রাম ছাড়া করেছিল, তাঁরা গ্রামে ফিরতে শুরু করলেই নন্দীগ্রামে নতুন করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেজ প্রকল্প বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও বিইউপিসি নন্দীগ্রামকে কার্যত মুক্তাঞ্চল করেই রেখে দেয়। এই সময় শাসকদলের ক্যাডারদের সঙ্গে বিইউপিসি-র ক্যাডাররা সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে আবার হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই প্রত্যাবর্তনকে গণমাধ্যম ব্যাখ্যা করেছিল সিপিআইএম-এর নন্দীগ্রাম "পুনর্দখল" হিসেবে।[৪৮] বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায়, রাজ্য প্রশাসনকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রেখে পার্টির পক্ষ থেকে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। পার্টি এই অভিযানের শুধু প্রশংসাই করেনি, পার্টি চেয়ারম্যান একে "নতুন সূর্যোদয়" ও মুখ্যমন্ত্রী এটিকে "ওদের ইঁটের বদলে পাটকেল ছোঁড়া" বলে বর্ণনা করেন।[৪৯] শেষ মন্তব্যটি প্রাথমিকভাবে সম্ভবত মাওবাদীদের উদ্দেশ্য করে করা হয়, যাঁরা, সিপিআইএম-এর দাবি অনুযায়ী, নন্দীগ্রামে সক্রিয় ছিল। কিন্তু সরকার এই দাবি সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।[৫০] ঘটনাটিকে "লাল সন্ত্রাস"-এর অন্যতম বলে বর্ণনা করা হয়।[৫১] ভারতের মানবাধিকার কমিশনকে লিখিত একটি বার্তায় মেধা পাটকর বলেন, নন্দীগ্রামের এই সংঘর্ষ পরিস্থিতি ওই অঞ্চলে হাজার হাজার সিপিআইএম ক্যাডারদের অবস্থানের কারণেই বজায় আছে। পুলিশ অফিসাররা ওই অঞ্চলে উপস্থিত আছেন বটে, কিন্তু তাঁরাও নন্দীগ্রাম আক্রমণের কর্মসূচিটি সমর্থন করছেন।[৫২]
এই নতুন ঘটনার পর জাতীয় স্তরে প্রতিবাদ শুরু হয়।[৫৩] ১২ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নন্দীগ্রামের পরিস্থিতির উপর একটি তথ্যগত রিপোর্ট পেশ করতে বলে।[৫৪] চিত্রপরিচালক অপর্ণা সেন ও ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রতিবাদে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসববয়কট করেন।[৫৫] অপর্ণা সেন বলেন, "নন্দীগ্রাম কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে রক্তপাত ঘটছে। সিপিএম এখনও সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হতে পারে, কিন্তু রাজ্যটা আমাদের।" [৫৫]
ভারতের সংসদ নন্দীগ্রামের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। সিপিআইএম ও বিরোধীদলের সংসদদের মধ্যে দুই দিন বিবাদ ও অচলাবস্থা চলার পর ২১ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় ছেঁটে এই নিয়ে আলোচনা হয়। ইউপিএ সদস্য সহ সব দল গণহত্যার বিরুদ্ধে সমগ্র জাতির ধিক্কারকে সমর্থন করলে সিপিআইএম একঘরে হয়ে পড়ে।[৫৬]
[সম্পাদনা]২০০৮ সালের হিংসাত্মক ঘটনা
২০০৮ সালের মে মাসে আবার ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি ও সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষ থেকেই অপর পক্ষের দিকে ব্যাপক বোমাবাজি ও গুলি ছোঁড়া হয়।[৫৭]
৫ মে সিপিআইএম-এর মিছিলে যেতে অনিচ্ছুক তিন মহিলার শ্লীলতাহানি ঘটানো হয়।[৫৮][৫৯] এর বিরুদ্ধে ব্যাপক রাজনৈতিক ও নাগরিক বিক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়।[৬০][৬১] সিপিআইএম নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করে একে অপপ্রচারমূলক প্রচারাভিযান বলে বর্ণনা করে।[৫৯].
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং অপর্ণা সেন সহ বিদ্বজ্জন সমাজের এক প্রতিনিধি দল দুটি পৃথক প্রেস বক্তব্যে দাবি করেন নন্দীগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। কারণ, এই সন্ত্রাসের পরিমণ্ডলে ভোট হলে তা আদৌ শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হবে না।[৬২]
[সম্পাদনা]২০০৮ সালের নির্বাচন
[সম্পাদনা]পঞ্চায়েত নির্বাচন
নন্দীগ্রামের ভোটাররা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে সরকারি শিল্পায়ন নীতি এবং অন্যান্য সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে সমর্থন করলেন না। ১১ মে, ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৫৩টি আসনের মধ্যে ৩৫টি দখল করে নিল। যা বামশাসিত পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনা। এর আগে ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ৫১টির মধ্যে মাত্র দুটি আসন জিতেছিল। ভোটের ফল দাঁড়ায়:তৃণমূল কংগ্রেস – ৩৫, এসইউসিআই – ১, সিপিআইএম – ১৪, সিপিআই – ২ ও ডিএসপি – ১। নন্দীগ্রাম ১ ও নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের চারটি কেন্দ্রে কেমিক্যাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। এই চারটি আসনেই একজন হেভিওয়েট নেতা সহ সব সিপিআইএম প্রার্থীরা তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের হাতে পরাস্ত হন। তৃণমূল সমর্থিত বিইউপিসি নেতা শেখ সুফিয়ান সিপিআইএম প্রার্থী অশোক জানাকে তেরো হাজারেরও বেশি ভোটে হারান। অন্যদিকে অপর তৃণমূল নেতা পীযূষ ভূঁইয়া সিপিআইএম জোনাল কমিটি সেক্রেটারি অশোক বেরাকে একুশ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাস্ত করেন।[৬৩]
[সম্পাদনা]বিধানসভা উপনির্বাচন
তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরোজা বিবি বিধানসভা উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থী পরমানন্দ ভারতীতে ৩৯,৫৫১ ভোটের ব্যবধানে পরাস্ত করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য ফিরোজা বিবির কিশোর পুত্র ২০০৭ সালের ১৪ মার্চে নন্দীগ্রাম গণহত্যায় নিহত হয়েছিল।[৬৪], [৬৫]
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
- আবাহলালি বেসএমজনডোলো, দক্ষিণ আফ্রিকা
- ইজেডএলএন, মেক্সিকো
- ফানমি লাভালাস, হাইতি
- হোমলেস ওয়ার্কার্স মুভমেন্ট, ব্রাজিল
- ল্যান্ডলেস পিপলস মুভমেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকা
- ল্যান্ডলেস ওয়ার্কার্স মুভমেন্ট, ব্রাজিল
- নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, ভারত
- পশ্চিম অন্তরীপ উচ্ছেদ-বিরোধী প্রচারাভিযান, দক্ষিণ আফ্রিকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ For more information on the Salim Group please see Sudono Salim
- ↑ Asia Week
- ↑ Far Easter Economic Review October 1998
- ↑ ৪.০ ৪.১ The Telegraph, 4 January 2007
- ↑ The Statesman, 15 November 2006
- ↑ The Statesman, 7 January 2007 Nandigram forms anti-landgrab front
- ↑ Tehelka.com, August 26 2006
- ↑ The Statesman
- ↑ CPI (M) org
- ↑ One India 16 June 2006
- ↑ The Hindu Business Line, 1 August 2006
- ↑ The Telegraph, 03 August 2006 Double-deal bridge ache
- ↑ JICA
- ↑ JICA For more information on JICA visit the JICA website
- ↑ The Indian Express, 09 September 2006
- ↑ The Hindu January 10, 2007
- ↑ Sub-Inspector killed in Nandigram, The Hindu February 08, 2007
- ↑ Microsoft Word - full report_wtfig
- ↑ Nandigram: Scare still looms large
- ↑ Peace returns to Nandigram, Khejuri after war-like situation
- ↑ The Statesman
- ↑ The Telegraph
- ↑ "Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid"। The Telegraph। 15 March 2007. Retrieved 2007-03-15।
- ↑ Medical Team Report from Nandigram with names, locations, and injuries - April 5.
- ↑ The Times of India 15 March 2007 Nandigram: Mediapersons roughed up by CPM activists
- ↑ Tara TV
- ↑ Nandigram turns Blood Red
- ↑ The Hindu : National : Nandigram victims narrate their tales of woe
- ↑ nandigram
- ↑ Zee News
- ↑ Sify
- ↑ "Nandigram and the deformations of the Indian left"। International Socialism। 2 July 2007।
- ↑ BBC
- ↑ The Statesman
- ↑ The Statesman
- ↑ Nandigram people's struggle "heroic" : Clark
- ↑ Nandigram says 'No!' to Dow's chemical hub
- ↑ Ramsey Clark's visit to Nandigram
- ↑ Dr. Ashok Mitra (Former Left Front Finance Minister) on Nandigram
- ↑ Indian Express
- ↑ Daily India
- ↑ India eNews.com 7 December 2006
- ↑ The Statesman
- ↑ WB PWD Minister against CPI(M)
- ↑ Report on Nandigram by Amnesty International: Urgent need to address large scale human rights abuses during Nandigram recapture
- ↑ Nandigram Chemical hub shifted
- ↑ Nandigram will remain a black mark
- ↑ [১]
- ↑ NDTV November 14, 2007
- ↑ Sify.com November 13, 2007
- ↑ "Red terror continues Nandigram's bylanes"।
- ↑ "NHRC sends notice to Chief Secretary, West Bengal, on Nandigram incidents: investigation team of the Commission to visit the area"।
- ↑ Nandigram | Top News
- ↑ National Human Rights Commission
- ↑ ৫৫.০ ৫৫.১ "CPM cadres kill 3 in Nandigram"।
- ↑ Lok Sabha to discuss Nandigram today
- ↑ Fresh violence in Nandigram, two injured. The Times of India. 5 May 2008.
- ↑ CPM mob strips woman in Nandigram, probe on. The Times of India. 7 May 2008.
- ↑ ৫৯.০ ৫৯.১ Women activists blame CPM of beating in Nandigram. Economic Times. 7 May 2008.
- ↑ CID probe ordered into stripping of women at Nandigram. Sify News. 7 May 2008.
- ↑ Intellectuals Meet West Bengal Poll Panel Over Nandigram. News Post India. 7 May 2008.
- ↑ Fresh attempt to cut off Nandigram.The Hindu. 7 May 2007
- ↑ [২]. The Statesman.
- ↑ Nandigram nightmare continues for CPM, Trinamool wins Assembly bypoll
- ↑ Trinamool Congress wins Nandigram assembly by-election
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- Most comprehensive database on "Nandigarm" at Sanhati
- "Nandigram" photos, links to videos, reports - a comprehensive archive at Counterviews
- Nandigram links, photos, videos and regular updates from Sacred Media Cow
- Nandigram Information - facts, details, accounts - updated regularly
- Nandigram Documentary by Medical Service Centre
- Lessons from Nandigram : What Next
- Arundhathi Roy says CM used Taslima to shift focus from Nandigram
- Sara Flounders member of the Workers World Party secretariat speaks of her experience after visiting Nandigram
- Nandigram Movement Timeline
No comments:
Post a Comment